Flickr

Monday, 4 April 2011

আদালতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত

Posted by   on

আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে রাজনীতিবিদরা দলীয় এজেন্ডা প্রকারান্তরে পাস করিয়ে নিচ্ছেন বলে চিন্তাশীল মহলের অভিমত। যে রাজনীতিবিদরা দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে সদা ব্যস্ত প্রহর কাটিয়ে ‘জেল-জুলুম-জরিমানা' সহ্য করেও রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে প্রাণপাত করছেন- তাদেরই একটি গোষ্ঠীর ধীশক্তির প্রকট অভাবে আদালতের রায়ে আবার জাতি দ্বিধা কিংবা ত্রিধা বিভক্তির বিষবা বহন করছে, তাহলে জাতি হিসেবে কিভাবে আমরা এগুতে পারবো? রাজনীতিতে প্রতিদ্বনদ্বীকে কোণ্ঠাসা কিংবা উচ্ছেদ করতে গিয়ে দেশকেই তারা কোণঠাসা কিংবা অন্ধকার আবর্তে ঠেলে দিচ্ছেন। প্রজ্ঞা আর ধীশক্তির অভাবে আমরা জাতিকে বহুধা বিভক্ত করেছি-সুবিধা হয়েছে স্বাধীনতা বিনাশী বহিঃশক্তির। জনগণ কেনই জানি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃক্মখলার মারাত্মক অবনতি, অব্যাহত নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং, গ্যাস ও বিদ্যুতের সীমাহীন সঙ্কট, প্রতিবেশী বৃহৎ শক্তির ৫৬টি অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে মরুকরণ প্রক্রিয়ায় ধ্বংসসহ বহুমুখি সমস্যা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় যেখানে দরকার ছিল ইস্পাত কঠিন ঐক্য- সেখানে অর্বাচিনতায় ও চিরস্থায়ী ক্ষমতাসীন থাকার আহাম্মকি চিন্তায় একটি গোষ্ঠী দেশকে অন্ধকার আবর্তে ঠেলে দিচ্ছে। অশ্রুতিপূর্ব দলীয়করণে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এ চক্র দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখন আদালতকে বেছে নিয়েছে। এতে করে ‘ ঘোড়ার আগে গাড়ি, না গাড়ির আগে ঘোড়া' তারা বুঝতে চাইছে না। উচ্চতম আদালতের নির্দেশনায় দেশের সংবিধান এখন মুদ্রিত হয়ে আছে। কোন্ সংবিধানে দেশ চলছে- তা নির্ধারণ করতে পারছে না সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। পার্লামেন্ট এখন বরেণ্য নেতাদের গালাগালি আর খিস্তিখেউড়ের আস্তানায় পর্যবসিত হয়েছে। বিরোধী দল না থাকলে যেন সরকারি দল পার্লামেন্টে স্বস্তি পায়। যে কর্নেল তাহের ১৯৭৫ সালে সেনাবাহিনীতে ‘সৈনিক সংস্থা' গঠন করে সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা করেছিল এবং জনশ্রুতি রয়েছে যে, তাতে প্রায় ২০ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিল- সে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেলের সেনা আদালতে রায় বাতিল করেছে মাননীয় হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ। সেনা আদালতের রায় কিংবা কোর্ট মার্শালের বিচার মাননীয় হাইকোর্ট কিংবা সুপ্রিমকোর্ট বাতিল করার ক্ষমতা রাখে কি না, তা একমাত্র আইন বিশেষজ্ঞ কিংবা সংবিধান বিশেষজ্ঞরাই বলতে পারেন। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, ‘‘কর্নেল তাহের ও তার সহকর্মীদের বিচার ছিল লোক দেখানো প্রহসনের নাটক।
বিচারের জন্য নকল ট্রাইব্যুনাল গঠন, বিচার প্রক্রিয়া ও সাজা অবৈধ ও বাতিল করা হলো, তাহেরকে যে আইনে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়,- সে আইনে মৃত্যুদন্ডের বিধান ছিল না।' সামরিক আদালতের তৎকালীন বিচারক আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়। আদালত বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় জেনারেল জিয়া ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলিমের সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা- তাও খতিয়ে দেখতে সরকারকে নির্দেশ দেন। বর্ণিত রায়টি আওয়ামী লীগকে ‘একেত ছাই, তাতে আবার দখিনা বাতাস'-এর মত প্রাপ্তি যোগ ঘটিয়েছে। যে দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে নিম্নতর কর্মীদের একমাত্র আরাধ্য কর্মই হচ্ছে প্রতিপক্ষের মুন্ডুপাত ও নেতাদের চরিত্র হনন করা, সেখানে বর্ণিত রায়ে তাদের উজ্জীবিত করবে জেনারেল জিয়ার নামকে চিরস্থায়ীভাবে ভূলুণ্ঠিত করতে। দলীয়করণের বিষবা আচ্ছাদিত দলটির কাছ থেকে ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণ কেনই জানি দুর্বোধ্য মনে হয়। রাজনৈতিক নিপীড়ন ও নিশ্চিহ্নকরণের ক্ষেত্রে ‘বিশ্বরেকর্ড' প্রাপ্তি খুব দূরে বলে মনে হয় না। সমাজতন্ত্রকরণের দাবিতে কর্নেল (অবঃ) তাহের যদি সেনাবাহিনীতে সেনাবিদ্রোহ ঘটিয়ে ২০ বা ততোধিক সেনা কর্মকর্তা হত্যা করে জাতীয় বীর বা শহীদের মর্যাদা পায়- তবে ৭৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে বিভিন্ন দাবিতে বিডিআর সিপাহীদের বিদ্রোহের বিচার কি ভবিষ্যতে প্রশ্নবোধক হয়ে দেখা দিতে পারে না? মহাজোটীয় শরীকদের খুশী করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনরা দেশের স্বার্থ ও ভবিষ্যৎকে কেনই বারে বারে বিতর্কিত করে দেশীয় ভবিষ্যৎকে সঙ্কটাপন্ন করছেন, তা কিন্তু ভেবে দেখার সময় এসেছে। আদতে বিদেশী প্রভুদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এবং ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে দেশের সুস্থিরতা ও ভবিষ্যৎকে আমলে আনা হচ্ছে না। নেতৃত্বের দেউলিয়াপনাই আজ জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ভেঙ্গে-চুড়ে খান্খান্ করে দিচ্ছে। যুবসমাজ অধিকাংশ আজ মাদকাসক্ত হয়ে নৈতিকতার অতলান্তে হাবুডুবু খাচ্ছে। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে যুবসমাজকে টেন্ডারবাজী-দখলবাজী-রাহাজানীর হোলিখেলায় মাতিয়ে রাখা হয়েছে, যেন প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ন্যূনতম হুমকি সৃষ্টি না হয়। দলীয়করণের নগ্ন ছোবলে আজ প্রশাসন, আইন-আদালত, আইন-শৃক্মখলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসহ প্রজাতন্ত্রের প্রায় প্রতিটি বিভাগই জরাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতির কড়াল গ্রাসে সবই যেন নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অশ্রুতিপূর্ব আইন হচ্ছে যে, বিশেষ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও কোন মামলা করা যাবে না। এ যেন ‘জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুর হাসি'র মত সকলকে প্রতিকারহীন পতনকে সহাস্য বদনে অবলোকন করতে হবে। ক্ষুধাক্লিষ্ট ও নিপীড়িত জনগণ এ অনাচার সহ্য করলেও অনাগত ভবিষ্যৎ কিন্তু কাউকে ক্ষমা করবে না। ইতিহাস সে সাক্ষ্যই দেয়। মধ্যপ্রাচ্যের ও উপসাগরীয় অঞ্চলের স্বতঃস্ফূর্ত গণ-বিদ্রোহ স্বৈরাচারীদের আপাতঃ নির্মোহতায় কিন্তু মর্মান্তিক পতনের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। সময় থাকতে সে উপলব্ধি প্রতিকারের পথ বাতলে দেবে নচেৎ ‘অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ' থাকবে না।
২.
পবিত্র কুরআন বিরোধী জাতীয় নারী নীতি, বিতর্কিত শিক্ষা নীতি ও ফতোয়া বিরোধী রায় বাতিলের দাবিতে ‘ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি' আগামী ৪ঠা এপ্রিল দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। এ হরতালে পীর মাশায়েখ ও ইসলামী দলসমূহ তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী গত ২৭ মার্চ বগুড়ায় উত্তর বঙ্গের ১৬ জেলার প্রতিনিধি সম্মেলনে কুরআন বিরোধী শিক্ষানীতি, নারীনীতি, ফতোয়া বিরোধী বাতিলসহ বায়তুল মোকাররমের খতিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির অপসারণের দাবির পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তিনি বলেন, সরকার কুরআন বিরোধী নীতি মালা স্থগিত করলে আলেমরাও আন্দোলন স্থগিত করবে। ইতোপূর্বেও উল্লিখিত দাবিতে পীর-মাশায়েখ ওলামা পরিষদ বরেণ্য আলেমে দ্বীন, সাপ্তাহিক মদিনা সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের নেতৃত্বে দেশব্যাপী ‘হরতাল' আহবান করলে সরকারি প্রতারণামূলক আশ্বাসে সে হরতাল ও আন্দোলন স্থগিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে সরকারি প্রতিনিধি দলটি ন্যক্কারজনকভাবে দাবি পূরণের আশ্বাস থেকে সম্পূর্ণ পশ্চাদাপসরণ করলে পীর মাশায়েখ ওলামারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি আহত হরতাল ও ইসলাম পন্থীদের নৈতিক সমর্থন আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বর্তমান ধর্ম নিরপেক্ষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হলে দেশের ইসলামী দলসমূহ, মাদরাসা ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইসলামী ব্যাংক বীমাসমূহ ক্রমাগত সরকারি রোষানলে জর্জরিত হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিবসহ ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজির মত প্রতিষ্ঠানে ‘কবর-পূজারী'দের সরকারি নির্দেশে নিয়োগ দেয়া হয়েছে কয়েকমাস পূর্বে ইসলামী ফাউন্ডেশনের ডিজির উপস্থিতিতে ইমামদের এক কর্মাশালায় আমেরিকার ব্যালে নৃত্য শিল্পীদের ‘ব্যালে ড্যান্স' প্রদর্শনিও ডিজি শামিম আফজালের করমর্দনের সচিত্র ছবি পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হওয়ায় দেশব্যাপী বিষ্ময় ও বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল, ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও ইসলামকে হেয় করতে মনে হয় এক সুদূর প্রসারী চক্রান্তের জাল বিছিয়েছে সরকারি দলে ঘাপটি মারা একটি চক্র। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ‘কওমী মাদরাসাগুলোকে জঙ্গি তৈরির প্রজনন কেন্দ্র' হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন, ধর্মভীরু মুসলমানদের সুদবিহীন বিনিয়োগ ও জমাদানের প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকসমূহকে জঙ্গি অর্থায়নের পীঠস্থান হিসেবে বহুবার চিহ্নিত করেছে ক্ষমতাসীনরা। দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধী মামলায় চার্জশীট ব্যতিরেকেই প্রায় ৮ মাস যাবৎ জেলখানায় আটকে রাখা হয়েছে যা নিতান্তই মানবতাবিরোধী। যেখানে সরকারি দুর্নীতি প্রকল্পের অপরাধে দেশের বরেণ্য পত্রিকা সম্পাদককে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রিমান্ডের নামে গোপন সেলে উলঙ্গ করে অত্যাচার করা হয়-সে প্রশাসন আর ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে আর যাই হোক ন্যায় বিচার আশা করা যায় না। জাতীয় প্রেসক্লাবে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আহুত দলীয় কর্মসূচিতে পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ শান্তির ধর্ম ইসলামকে এজিদের বংশধরদের হাত থেকে রক্ষার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামের গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, ড. হাসান মাহমুদের উক্তিতে শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয়, ডিজি শরীফ শামিম আফজালকে সরকার নিয়োগ দেয়ার পর থেকে সীমাহীন দুর্নীতি, দলীয়করণ ও আমেরিকান ব্যালে নৃত্য শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে ইসলামের কোন গবেষণা তারা চালাচ্ছেন, এ ব্যাখ্যা উনি দেবেন কি? যে নারী নীতিতে ‘সিড ও সনদ' বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২,৩,৯,১৩ ও ১৬ ধারায় ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকার সরকার করেছে সেখানে কোন ইসলাম বাস্তবায়ন ক্ষমতাসীনরা করে যাচ্ছেন তার বিস্তৃত ব্যাখ্যা ও বিবৃতি দরকার হয়ে পড়েছে, প্রয়োজনে সরকারি বুদ্ধিজীবী ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্য সমন্বয়ে কমিটি ও ওলামা-মাশায়েখ উন্মুক্ত বিতর্কের আয়োজন করতে হবে। নচেৎ ইসলাম প্রিয় জনতার উদ্বেগ উৎকণ্ঠার নিরসন হবে না। জেদ ও কঠোরতা সমস্যাকে জটিল থেকে জটিলতর করবে। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের এগিয়ে আসতে হবে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter