‘উইকিলিক্স'-নতুন করে তথ্য দিয়েছে : ‘বাংলাদেশকে চাপে রাখতে ২০০৫ সালের সার্ক-শীর্ষ সম্মেলন পন্ড করেছে ভারত।' কার্যত: সার্ক এখন একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান ছাড়া কিছুই নয়। এর কার্যকারিতা আনুষ্ঠানিকতা ও আঞ্চলিক পিকনিকে পর্যবসিত হয়েছে। ভারত এটাই চেয়েছে।
আঞ্চলিক রাজনীতিতে সার্বভৌম সমতার ভারসাম্য আনয়ন করে একটা সুষম ও অর্থবহ আঞ্চলিক উন্নয়ন-সহযোগিতার ধারা সূচনা করার জন্যই প্রেসিডেন্ট জিয়া সার্ক-এর স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে সার্ক-স্বপ্নের বিকৃতি নিয়েই এটা ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। শুরুতেই সার্ক-সনদ থেকে দ্বি-পাক্ষিক বিরোধীয় বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়। এতে ভারতের ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। ভারত কাশ্মীর ইস্যু থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পানি ও সীমান্ত সমস্যাকেও একইভাবে দ্বি-পাক্ষিকতার বৃত্তে বন্দী করে রেখেছে। তবে ইতোমধ্যেই ভারত সার্ক-এর বৃত্ত থেকে সরে এসে উপ-আঞ্চলিক জোটের ধারায় বাংলাদেশকে বেঁধে ফেলায় সফল হয়েছে। উইকিলিকস-তথ্য দিয়েছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষদিকে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকার সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেবার ঘোষণা দিয়ে দিল্লী বাংলাদেশের ওপর তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থে চাপ প্রয়োগের কৌশল বাস্তবায়ন করেছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং খ্যাতিমান কূটনীতিক শাহ কিবরিয়ার হত্যাকান্ডসহ জোট সরকারকে বিব্রতকারী ও দেশের ইমেজ বিনষ্টকারী বেশ কিছু হত্যা ও বোমা-সন্ত্রাসের ধারাবাহিক পরিস্থিতি তৈরি করে সার্ক-শীর্ষ-সম্মেলন বানচালের পরিকল্পনাও এর পাশাপাশি বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। বাংলাদেশের ভেতর থেকেও আওয়ামী বলয়ের ভারতপ্রেমিকরা সরাসরি সার্ক-সম্মেলন অনুষ্ঠানের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নেই বলে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে। সেটা ভারতের পরিকল্পনাকে আরও বেগবান ও যুক্তিসিদ্ধ করেছে। নেপালের জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং ঢাকায় তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে যুক্তি দেখিয়ে সার্ক-শীর্ষ সম্মেলন বানচাল করে ভারত।
উইকিলিকস্-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে ভারতবিরোধী প্রচারণা, টাটার বিনিয়োগে অনাগ্রহ, ভারতকে ট্রানজিট-করিডোর-সমুদ্রবন্দর ইত্যাদি দিতে অস্বীকৃতির কারণে ক্ষুব্ধ ভারত বাংলাদেশ সরকারকে এর মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চেয়েছিল। বিশেষ করে ভারত তার নিজের নিরাপত্তা-সংকটকে বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের ইনসার্জেন্সী দমন এবং তথাকথিত জঙ্গি নির্মূলে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে যে যৌথ অভিযান পরিচালনার ছক এঁকেছিল, জোট সরকার জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের নিরিখে তা নাকচ করে আসছিল। এরই পটভূমিতে ভারতের সাথে ওই সময় সম্পর্কটা শীতলতার তলানীতে এসে পড়েছিল। ১/১১-এর সেনাসমর্থিত সরকারের ব্যবস্থাপনায় ইঙ্গ-মার্কিন অক্ষের অনুমোদন নিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির নীল নকশায় অনুষ্ঠিত পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-মহাজোটের নিরঙ্কুশ সংখ্যাধিক্যে ক্ষমতায় আসার পর ভারত বাংলাদেশের কাছে যা কিছু চেয়ে আসছিল, তার একশ' ভাগের চেয়েও বেশি পেয়ে গেছে। দায়বদ্ধতা ও কৃতজ্ঞতার নজরানা হিসেবে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার মহা আয়োজন করে দিল্লীতে গিয়ে দেবতার চরণে উজাড় করে সব উপঢৌকন দিয়ে এসেছে। কদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ভারতপ্রেমে দিওয়ানা হয়ে রাখঢাকের বালাই না করে বলে ফেলেছেন যে, ট্রানজিটের বিনিময়ে ভারতের কাছে অর্থ চাওয়া একটা ‘অসভ্যতা'। ‘প্রভুর' কাছে এমন ‘অসভ্য' দাবি তারা তুলতে পারছেন না। অথচ আওয়ামী ঘরানার ভারতবান্ধব ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা এতদিন বলে এসেছেন যে, ট্রানজিটের বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে বিপুলভাবে অর্থনৈতিক মুনাফা পাবে। আর এ অর্থে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। কিন্তু ভারত কোন শুল্ক ছাড়াই ট্রানজিটের নামে চারশ কিলোমিটার পথ ব্যবহার করছে।
সার্ক-সম্মেলন বানচাল করার ভারতীয় দুরভিসন্ধি ফাঁস করে উইকিলিক্স যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু' সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। ভারত সরকার বা তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিবাদ জানায়নি। উল্লেখ্য, দিল্লী ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয় এসব তথ্য ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব তথ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নিলম ডিয়ো, পরিচালক তরনজিত সন্ধুর সাথে মার্কিন কূটনীতিকদের কথোপকথনের রেকর্ড উদ্ধৃত করা হয়েছে। উইকিলিক্স জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশে বোমা বিস্ফোরণের কারণে সার্ক সম্মেলন বাতিল করা হয়নি। বরং বাংলাদেশে ভারত বিরোধী প্রচারণা তখন বেশ জোরেশোরে চলছিল এবং টাটার বিনিয়োগ বিষয়েও বাংলাদেশ বেঁকে বসেছিল। এসব কারণে বাংলাদেশকে বার্তা দেয়ার দরকার ছিল।' উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা সফরে আসা মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব জন গ্যাস্টরাইটের সাথে ভারতের কূটনৈতিক যোগসাজশে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি যুথবদ্ধ কৌশল নেয়া হয়। তারা বাংলাদেশকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চাপে রাখে। এ সময় মার্কিন ও ভারতীয বলয়ের সুশীল এনজিওচক্র সুশাসনের মুলো ঝুলিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। সার্ক সম্মেলন বাতিলে সফল ভারতীয় কূটনীতিকরা মার্কিন কূটনীতিকদের সাথে এমন সব কথাবার্তা বলেছেন, তাতে বাংলাদেশের প্রতি তাচ্ছিল্য ও ঔদ্ধত্যের পরিচয় পাওয়া যায়।
সার্ক-সম্মেলন বাতিল করার ফলে বাংলাদেশে সৃষ্ট ক্ষোভ ও হতাশাকে নয়াদিল্লী বাংলাদেশের প্রাপ্য বলেই মনে করেছে এবং এটা নিরসনে তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি। বরং ভারতের স্বার্থ আদায়ের পথে অন্তরায় জোট সরকারকে দুর্বল ও কলংকিত করার কৌশল নিয়ে তারা পরবর্তী সংবিধান- নির্ধারিত নির্বাচনে যাতে পুনর্নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে না পারে, তার নীলনকশা প্রণয়ন করতে থাকে। ১/১১-এর কুশীলবরাও জানতেন, ভারতের শক্তিশালী ও বাংলাদেশের সর্বাত্মক পর্যায়ে সক্রিয় সর্বত্রগামী গোয়েন্দা সংস্থাটি বাংলাদেশের সংবিধান নির্ধারিত নির্বাচন বানচাল করার সিদ্ধান্তে কাজ করছে। জাতীয় সেনাবাহিনী বা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক গোয়েন্দা সংস্থা এই জাতিদ্রোহী ও রাষ্ট্রঘাতী বৈদেশিক অন্তর্ঘাত প্রতিরোধের বদলে তাদের মার্সিনারী হিসেবে কাজ করেছে। চারদলীয় জোট এই ভয়ঙ্কর অন্তর্ঘাত রুঁখে দিতে পারেনি বলেই ১/১১ উত্তর বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার, তাঁর পুত্রদের ওপর সীমাহীন বর্বর নির্যাতন, তাঁকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর একটি নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সম্ভাব্য ক্ষমতায় ফিরে আসাকে ভারত অশনি সংকেত বলেই মনে করেছে। ভারতীয় কূটনীতিক নিলম ডিয়ো তাই মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব জন গ্যাস্টরাইটকে বলেছেন, ‘বিএনপি আবারো ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচনে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।'
বাংলাদেশের নির্বাচন মনিটরিংয়ের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আড়াই কোটি ডলারের ফান্ডের সাথে মার্কন যুক্তরাষ্ট্র আরো এক কোটি ডলার ফান্ড দিয়েছে। তার মানে হলো, বাংলাদেশকে এটি বোঝানো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর নজর রাখছে। বাংলাদেশে ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নিলম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর কথা বলেছেন গ্যাস্টরাইটকে। বাংলাদেশ বিষয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করার আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন নিলম।'
উল্লেখ্য, চারদলীয় জোট সরকারের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভোটারতালিকা সংশোধনসহ নির্বাচন সংস্কারের একটা রূপরেখা প্রণয়ন করে ‘উত্তম' নির্বাচন উপহার দেবার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করতে চাইলে সরকার তাতে অনুমতি না দেয়ায় এ মহলটি সরকারের বিরুদ্ধে নানা অন্তর্ঘাত চালাতে থাকে। ১/১১-এর পর সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আইডি কার্ডসহ নয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন এই চক্রের পরিকল্পনারই বাস্তবায়ন। ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেয়ার প্রয়োজন ব্যাখ্যা করে ভারতের অপর কূটনীতিক তরণজিত বলেছেন : ‘ভারতের জন্য যে সব বিষয় উদ্বেগজনক' সে বিষয়গুলো বাংলাদেশ উপেক্ষা করলে তা বাংলাদেশের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে'- এ বার্তাটিই তারা বাংলাদেশকে দিতে চেয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক ট্র্যাজেডি হচ্ছে এই যে, ওয়াশিংটন ঢাকার সাথে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রসত্তার দ্বি-পাক্ষিক চলমান ধারা উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে দিল্লীর আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী চক্রের পুতুল হিসেবে ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে ভারতের গ্যাস পাইপ লাইন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গ্যাস ভারতকে দিয়ে ভারতের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার ভারতীয় পলিসি পারস্যু করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ সহ অন্যান্য দাতা সংস্থাকেও কাজে লাগানো হয়েছে। ভারত যেন ইরান থেকে গ্যাস না নিয়ে বাংলাদেশের গ্যাস মজুদকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে চীন ও ইরানের ব্যাপারে মার্কিন ভীতি নিরসন করে ওয়াশিংটনের এ নিয়ে যথেষ্ট মাথাব্যথা ছিল। তবে মার্কিন রাজনীতির এই বৈশ্বিক সমীকরণ বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশ্যা এবং জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে ভারতের মতো একটি আঞ্চলিক পরাশক্তির কাছে জিম্মি করে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে পঙ্গু করার সাম্রাজ্যবাদী জুয়াখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা দৃশ্যত বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এবং পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া-টিক্কার গণহত্যাকে সমর্থন ও মদদ দিয়েছে। তবে সামগ্রিক ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একাত্তরে মার্কিন ভূমিকা দ্বৈত ও রহস্যচারিতার বাতাবরণে অস্পষ্ট ছিল। কার্যত মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি, আবার পাকিস্তানের জন্যও ত্রাতার ভূমিকা পালন করেনি। যদিও তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত মহাসাগরে তাদের সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়ে পাকিস্তানকে এপ্রিল ফুল জানিয়েছে। মার্কিন প্রশাসন চাইলে একাত্তরের ২৫ মার্চের আগেই মুজিব-ভুট্টো-ইয়াহিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক নিত্তি করে দিতে পারতো। তারা তা চায়নি। তবে ভারতের কবল থেকে শেখ মুজিবকে ছিনিয়ে নিয়ে মার্কিন এস্টাবলিশমেন্ট শেখ মুজিবকে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হেফাজতে রাখার ব্যবস্থা করে দেয়।
পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্কের চড়াই-উৎরাই এবং বিশ্বাসভঙ্গের পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের সাথেও অসম্মানজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ চালিয়েছে। ২০০৫ সালের ১৩ এপ্রিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটন একটি তারবার্তা পাঠানো হয়। ঐ তারবার্তার নম্বর ৩০৬৯৭। তাতে ঢাকায় সফররত মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব জন গ্যাস্টরাইটের সাথে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নিলম ডিয়োর কথোপকথন সূত্র উল্লেখ করে উইকিলিকস লিখেছে : ‘দিল্লীর আগ্রহে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট নজরদারি করছে এবং বাংলাদেশের সাথে এক সাথে কাজ করার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে বোঝাতে চাচ্ছি, তাদের বিষয়ে আমরা যথেষ্ট মনযোগি। সহকারী সচিব ক্রিস্টিনা রোকার ১৮ এপ্রিল, ২০০৫ ঢাকা সফর করার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য তাদের সামনে একটি মুলো ঝুলানোর নীতি নিয়ে কাজ করছি।’’ নিলমের মতে, অনেক বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে অভিন্ন বার্তা পাঠিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলার বিষয়ে উভয় দেশই বাংলাদেশকে অব্যাহত ছবক দান করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের অব্যাহত অনঢ় ভূমিকা তাদেরকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। এক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণের আইকন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে পর্যন্ত মার্কিনীরা ভারতের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে পাঠিয়ে ইন্দো-মার্কিন অক্ষের পক্ষে ওকালতি করিয়েছে। ভারতকে কেন্দ্র করে অভিন্ন আর্থ-রাজনৈতিক বলয়ে বাংলাদেশের সত্তা বিলোপের ফর্মুলা ফেরিওয়ালা হিসেবে প্রফেসর ইউনূসও দৌড়-ঝাঁপ করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরকে তিনি ভারতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক যুদ্ধ ঘোষণায় মার্কিন সরকার ক্ষুব্ধ হয়েছে। এ নিয়ে সম্পর্কের অবনতির হুমকিও এসেছে। এবারে নয়াদিল্লী কেন এ ব্যাপারে মার্কিনীদের নিবৃত্ত করতে পারছে না, সে প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে। শেখ হাসিনা বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে দেশ রক্ষার বদলে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিহিংসা থেকে প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করায় তিনি জনমতের সমর্থন পাননি। বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদীদের মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু রেখে ভারত-মার্কিন অক্ষের নীল-নকশায় বাংলাদেশকে জিম্মি করে প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্রোধের উপশম করতে চাইছেন।
আমেরিকানরা ভারতের পৌরহিত্যে পাতানো নির্বাচনে যাদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে, তাদের গণতান্ত্রিক মানদন্ড ও সুশাসনের ধরনটা কেমন, তা এখনও উপলব্ধি করতে পেরেছে কিনা, আমরা জানি না। ভারত যখন আমেরিকানদের বোঝাতে চেয়েছে যে, বাংলাদেশ তালেবানদের দখলে চলে যাবার আগে দিল্লীর সাথে মিলে ওয়াশিংটনকে একটা হিল্লা করতে হবে। ওয়াশিংটন তখন এর স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে দিল্লীর কাছে। দিল্লীর-কূটনীতিকরা তাদের ‘সন্দেহ বাতিকের' ওপর বিশ্বাস করতে বলেছে। এবারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি বললেন, ‘বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে রয়েছে।' সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু দিল্লীর এসাইনমেন্ট অনুযায়ী আওয়ামী লীগ প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী তালেবান-কবলিত রাষ্ট্র বানানোর যে রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মিডিয়া সন্ত্রাস চালিয়েছে, তাকে তারা কীভাবে মুছে ফেলবেন?
ভারতবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের অন্ধ ভারতপ্রীতি, বাংলাদেশের সহায়সম্পদ, কৌশলগত অবস্থান, সমুদ্রবন্দর, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, কৌশল, অর্থনীতি-সংবিধান, তামাম রাষ্ট্রসত্তা ভারতের হাতে তুলে দেয়ার পর ওয়াশিংটনের জন্য বাংলাদেশের আর কি দেবার বাকি থাকতে পারে? বিশেষ করে ভারতের সাথে সন্ধি করার নামে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের এই নষ্ট রাজনীতির অনুঘটক যেখানে খোদ ওয়াশিংটন, সেখানে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ওবামা প্রশাসনের ভাবমূর্তিটা কেমন হতে পারে, সেটা তাদেরই ভেবে দেখতে হবে। জঙ্গিবাদের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে যারা ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে টার্গেট করেছে, যারা মুসলিম মডারেট ডেমোক্রেটিক রাষ্ট্রের পরিচিতির বদলে ডেমোক্রেটিক সেক্যুলার রাষ্ট্র পরিচিতির পালক লাগাতে সংবিধানের খৎনা করার মহাআয়োজনে ব্যস্ত, যারা নারীর অধিকারের সমতা বিধানের জন্য পবিত্র কোরআনের অলংঘনীয় আসমানি ফায়সালা- ইসলামের মীরাসী আইন সংশোধন করে নয়া নারীনীতি প্রবর্তন করেছে, তাদের সাথে ভারত বা আমেরিকার নীতিগত বিরোধ তো হবার কথা নয়। অসম ও ইসলামবিরোধী শিক্ষা ও নারীনীতি বাতিলের দাবিতে ওলামা-মাশায়েখদের আন্দোলনকে পশ্চিমারা বাংলাদেশকে মৌলবাদ ভীতির উপকরণ হিসেবে দেখাতে চাইবে। এ নিয়ে তারা জঙ্গিবাদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা আবারও শুরু করতে যাচ্ছে। বিপুল অর্থ খরচ করে যারা এডিবির তথাকথিত গবেষণাপত্রের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষাকে জঙ্গি তৈরির মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করেছে, তারা বাংলাদেশে একটি সংঘাত দেখতে চায়। এ সংঘাত আমাদেরকে আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিচ্ছিন্ন অথবা যুথবদ্ধ অন্তর্ঘাত থেকে মুক্তির সন্ধান দেবে না। সরকার যাদেরকে তুষ্ট করতে জাতি-রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিনাশী ফাঁদে পা দিয়েছে, তারা আর একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি করবে। সরকারের হয়ত ফিরে আসার পথ তাদের প্রভুরাই রুদ্ধ করে রাখবে। তবে বিরোধীদল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে কোন্ শর্তে নয়া সন্ধি সমীকরণে যাবে, তা-ও এখন নির্ধারণ করতে হবে।
চারদলীয় জোটকে হটিয়ে যারা ১/১১ এর সরকার দিয়ে নতুন ছকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে, তারা সুশাসন, মানবাধিকার, স্বচ্ছতা, সুবিচার এবং গণতান্ত্রিক শাসন কাঠামো পেয়েছে কিনা তা তাদেরই মূল্যায়নের ব্যাপার। তবে বিদেশী নাপিতদের অতি বাড়াবাড়িতে বাংলাদেশের সর্বনাশ হয়েছে, গণতন্ত্রের বদলে জনগণ ফ্যাসীবাদী দুঃশাসনের যাঁতাকলে পড়ে হাঁসফাঁস করছে। এখানেই দুঃখের পাঁচালীর শেষ নয়। জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌম সত্তাও আজ বেহাত হতে চলেছে। আর একটি সূর্যোদয়ের প্রত্যাশা-মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতির কান্ডারীরা যদি কেবল ক্ষমতা হাতবদলের পুরনো বৃত্তে বিচরণ করেন, তাহলে বর্তমান শৃংখলের দায়ও তাদের বহন করতে হবে। জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের ভাবনা স্পষ্টকরণ তাই সময়ের অনিবার্য দাবি। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার গণআন্দোলনের মতো বাংলাদেশের গণআন্দোলনও যাতে সাম্রাজ্যবাদী মুখোশধারীদের হাতে পড়ে বেহাত হয়ে না যায়, এখনই তার হিসেব নিকেশ করতে হবে।
আঞ্চলিক রাজনীতিতে সার্বভৌম সমতার ভারসাম্য আনয়ন করে একটা সুষম ও অর্থবহ আঞ্চলিক উন্নয়ন-সহযোগিতার ধারা সূচনা করার জন্যই প্রেসিডেন্ট জিয়া সার্ক-এর স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে সার্ক-স্বপ্নের বিকৃতি নিয়েই এটা ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। শুরুতেই সার্ক-সনদ থেকে দ্বি-পাক্ষিক বিরোধীয় বিষয়গুলো বাদ দেয়া হয়। এতে ভারতের ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। ভারত কাশ্মীর ইস্যু থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পানি ও সীমান্ত সমস্যাকেও একইভাবে দ্বি-পাক্ষিকতার বৃত্তে বন্দী করে রেখেছে। তবে ইতোমধ্যেই ভারত সার্ক-এর বৃত্ত থেকে সরে এসে উপ-আঞ্চলিক জোটের ধারায় বাংলাদেশকে বেঁধে ফেলায় সফল হয়েছে। উইকিলিকস-তথ্য দিয়েছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষদিকে ২০০৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকার সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেবার ঘোষণা দিয়ে দিল্লী বাংলাদেশের ওপর তার রাষ্ট্রীয় স্বার্থে চাপ প্রয়োগের কৌশল বাস্তবায়ন করেছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী এবং খ্যাতিমান কূটনীতিক শাহ কিবরিয়ার হত্যাকান্ডসহ জোট সরকারকে বিব্রতকারী ও দেশের ইমেজ বিনষ্টকারী বেশ কিছু হত্যা ও বোমা-সন্ত্রাসের ধারাবাহিক পরিস্থিতি তৈরি করে সার্ক-শীর্ষ-সম্মেলন বানচালের পরিকল্পনাও এর পাশাপাশি বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। বাংলাদেশের ভেতর থেকেও আওয়ামী বলয়ের ভারতপ্রেমিকরা সরাসরি সার্ক-সম্মেলন অনুষ্ঠানের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নেই বলে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে। সেটা ভারতের পরিকল্পনাকে আরও বেগবান ও যুক্তিসিদ্ধ করেছে। নেপালের জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং ঢাকায় তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে যুক্তি দেখিয়ে সার্ক-শীর্ষ সম্মেলন বানচাল করে ভারত।
উইকিলিকস্-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে ভারতবিরোধী প্রচারণা, টাটার বিনিয়োগে অনাগ্রহ, ভারতকে ট্রানজিট-করিডোর-সমুদ্রবন্দর ইত্যাদি দিতে অস্বীকৃতির কারণে ক্ষুব্ধ ভারত বাংলাদেশ সরকারকে এর মাধ্যমে একটা বার্তা দিতে চেয়েছিল। বিশেষ করে ভারত তার নিজের নিরাপত্তা-সংকটকে বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের ইনসার্জেন্সী দমন এবং তথাকথিত জঙ্গি নির্মূলে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে যে যৌথ অভিযান পরিচালনার ছক এঁকেছিল, জোট সরকার জাতীয় নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের নিরিখে তা নাকচ করে আসছিল। এরই পটভূমিতে ভারতের সাথে ওই সময় সম্পর্কটা শীতলতার তলানীতে এসে পড়েছিল। ১/১১-এর সেনাসমর্থিত সরকারের ব্যবস্থাপনায় ইঙ্গ-মার্কিন অক্ষের অনুমোদন নিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির নীল নকশায় অনুষ্ঠিত পাতানো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-মহাজোটের নিরঙ্কুশ সংখ্যাধিক্যে ক্ষমতায় আসার পর ভারত বাংলাদেশের কাছে যা কিছু চেয়ে আসছিল, তার একশ' ভাগের চেয়েও বেশি পেয়ে গেছে। দায়বদ্ধতা ও কৃতজ্ঞতার নজরানা হিসেবে শেখ হাসিনার মহাজোট সরকার মহা আয়োজন করে দিল্লীতে গিয়ে দেবতার চরণে উজাড় করে সব উপঢৌকন দিয়ে এসেছে। কদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ভারতপ্রেমে দিওয়ানা হয়ে রাখঢাকের বালাই না করে বলে ফেলেছেন যে, ট্রানজিটের বিনিময়ে ভারতের কাছে অর্থ চাওয়া একটা ‘অসভ্যতা'। ‘প্রভুর' কাছে এমন ‘অসভ্য' দাবি তারা তুলতে পারছেন না। অথচ আওয়ামী ঘরানার ভারতবান্ধব ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা এতদিন বলে এসেছেন যে, ট্রানজিটের বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারত থেকে বিপুলভাবে অর্থনৈতিক মুনাফা পাবে। আর এ অর্থে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে। কিন্তু ভারত কোন শুল্ক ছাড়াই ট্রানজিটের নামে চারশ কিলোমিটার পথ ব্যবহার করছে।
সার্ক-সম্মেলন বানচাল করার ভারতীয় দুরভিসন্ধি ফাঁস করে উইকিলিক্স যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য হিন্দু' সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। ভারত সরকার বা তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিবাদ জানায়নি। উল্লেখ্য, দিল্লী ও ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয় এসব তথ্য ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব তথ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নিলম ডিয়ো, পরিচালক তরনজিত সন্ধুর সাথে মার্কিন কূটনীতিকদের কথোপকথনের রেকর্ড উদ্ধৃত করা হয়েছে। উইকিলিক্স জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশে বোমা বিস্ফোরণের কারণে সার্ক সম্মেলন বাতিল করা হয়নি। বরং বাংলাদেশে ভারত বিরোধী প্রচারণা তখন বেশ জোরেশোরে চলছিল এবং টাটার বিনিয়োগ বিষয়েও বাংলাদেশ বেঁকে বসেছিল। এসব কারণে বাংলাদেশকে বার্তা দেয়ার দরকার ছিল।' উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা সফরে আসা মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব জন গ্যাস্টরাইটের সাথে ভারতের কূটনৈতিক যোগসাজশে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি যুথবদ্ধ কৌশল নেয়া হয়। তারা বাংলাদেশকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চাপে রাখে। এ সময় মার্কিন ও ভারতীয বলয়ের সুশীল এনজিওচক্র সুশাসনের মুলো ঝুলিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে থাকে। সার্ক সম্মেলন বাতিলে সফল ভারতীয় কূটনীতিকরা মার্কিন কূটনীতিকদের সাথে এমন সব কথাবার্তা বলেছেন, তাতে বাংলাদেশের প্রতি তাচ্ছিল্য ও ঔদ্ধত্যের পরিচয় পাওয়া যায়।
সার্ক-সম্মেলন বাতিল করার ফলে বাংলাদেশে সৃষ্ট ক্ষোভ ও হতাশাকে নয়াদিল্লী বাংলাদেশের প্রাপ্য বলেই মনে করেছে এবং এটা নিরসনে তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি। বরং ভারতের স্বার্থ আদায়ের পথে অন্তরায় জোট সরকারকে দুর্বল ও কলংকিত করার কৌশল নিয়ে তারা পরবর্তী সংবিধান- নির্ধারিত নির্বাচনে যাতে পুনর্নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে না পারে, তার নীলনকশা প্রণয়ন করতে থাকে। ১/১১-এর কুশীলবরাও জানতেন, ভারতের শক্তিশালী ও বাংলাদেশের সর্বাত্মক পর্যায়ে সক্রিয় সর্বত্রগামী গোয়েন্দা সংস্থাটি বাংলাদেশের সংবিধান নির্ধারিত নির্বাচন বানচাল করার সিদ্ধান্তে কাজ করছে। জাতীয় সেনাবাহিনী বা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক গোয়েন্দা সংস্থা এই জাতিদ্রোহী ও রাষ্ট্রঘাতী বৈদেশিক অন্তর্ঘাত প্রতিরোধের বদলে তাদের মার্সিনারী হিসেবে কাজ করেছে। চারদলীয় জোট এই ভয়ঙ্কর অন্তর্ঘাত রুঁখে দিতে পারেনি বলেই ১/১১ উত্তর বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার, তাঁর পুত্রদের ওপর সীমাহীন বর্বর নির্যাতন, তাঁকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর একটি নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সম্ভাব্য ক্ষমতায় ফিরে আসাকে ভারত অশনি সংকেত বলেই মনে করেছে। ভারতীয় কূটনীতিক নিলম ডিয়ো তাই মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব জন গ্যাস্টরাইটকে বলেছেন, ‘বিএনপি আবারো ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচনে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।'
বাংলাদেশের নির্বাচন মনিটরিংয়ের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আড়াই কোটি ডলারের ফান্ডের সাথে মার্কন যুক্তরাষ্ট্র আরো এক কোটি ডলার ফান্ড দিয়েছে। তার মানে হলো, বাংলাদেশকে এটি বোঝানো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর নজর রাখছে। বাংলাদেশে ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নিলম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানোর কথা বলেছেন গ্যাস্টরাইটকে। বাংলাদেশ বিষয়ে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করার আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন নিলম।'
উল্লেখ্য, চারদলীয় জোট সরকারের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভোটারতালিকা সংশোধনসহ নির্বাচন সংস্কারের একটা রূপরেখা প্রণয়ন করে ‘উত্তম' নির্বাচন উপহার দেবার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন করতে চাইলে সরকার তাতে অনুমতি না দেয়ায় এ মহলটি সরকারের বিরুদ্ধে নানা অন্তর্ঘাত চালাতে থাকে। ১/১১-এর পর সেনাবাহিনীর মাধ্যমে আইডি কার্ডসহ নয়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন এই চক্রের পরিকল্পনারই বাস্তবায়ন। ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেয়ার প্রয়োজন ব্যাখ্যা করে ভারতের অপর কূটনীতিক তরণজিত বলেছেন : ‘ভারতের জন্য যে সব বিষয় উদ্বেগজনক' সে বিষয়গুলো বাংলাদেশ উপেক্ষা করলে তা বাংলাদেশের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে'- এ বার্তাটিই তারা বাংলাদেশকে দিতে চেয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক ট্র্যাজেডি হচ্ছে এই যে, ওয়াশিংটন ঢাকার সাথে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রসত্তার দ্বি-পাক্ষিক চলমান ধারা উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে দিল্লীর আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী চক্রের পুতুল হিসেবে ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে ভারতের গ্যাস পাইপ লাইন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের গ্যাস ভারতকে দিয়ে ভারতের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার ভারতীয় পলিসি পারস্যু করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ সহ অন্যান্য দাতা সংস্থাকেও কাজে লাগানো হয়েছে। ভারত যেন ইরান থেকে গ্যাস না নিয়ে বাংলাদেশের গ্যাস মজুদকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে চীন ও ইরানের ব্যাপারে মার্কিন ভীতি নিরসন করে ওয়াশিংটনের এ নিয়ে যথেষ্ট মাথাব্যথা ছিল। তবে মার্কিন রাজনীতির এই বৈশ্বিক সমীকরণ বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশ্যা এবং জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে ভারতের মতো একটি আঞ্চলিক পরাশক্তির কাছে জিম্মি করে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে পঙ্গু করার সাম্রাজ্যবাদী জুয়াখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমেরিকা দৃশ্যত বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেয় এবং পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া-টিক্কার গণহত্যাকে সমর্থন ও মদদ দিয়েছে। তবে সামগ্রিক ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একাত্তরে মার্কিন ভূমিকা দ্বৈত ও রহস্যচারিতার বাতাবরণে অস্পষ্ট ছিল। কার্যত মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি, আবার পাকিস্তানের জন্যও ত্রাতার ভূমিকা পালন করেনি। যদিও তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত মহাসাগরে তাদের সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়ে পাকিস্তানকে এপ্রিল ফুল জানিয়েছে। মার্কিন প্রশাসন চাইলে একাত্তরের ২৫ মার্চের আগেই মুজিব-ভুট্টো-ইয়াহিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক নিত্তি করে দিতে পারতো। তারা তা চায়নি। তবে ভারতের কবল থেকে শেখ মুজিবকে ছিনিয়ে নিয়ে মার্কিন এস্টাবলিশমেন্ট শেখ মুজিবকে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হেফাজতে রাখার ব্যবস্থা করে দেয়।
পাকিস্তান-মার্কিন সম্পর্কের চড়াই-উৎরাই এবং বিশ্বাসভঙ্গের পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের সাথেও অসম্মানজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ চালিয়েছে। ২০০৫ সালের ১৩ এপ্রিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটন একটি তারবার্তা পাঠানো হয়। ঐ তারবার্তার নম্বর ৩০৬৯৭। তাতে ঢাকায় সফররত মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্র সচিব জন গ্যাস্টরাইটের সাথে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নিলম ডিয়োর কথোপকথন সূত্র উল্লেখ করে উইকিলিকস লিখেছে : ‘দিল্লীর আগ্রহে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট নজরদারি করছে এবং বাংলাদেশের সাথে এক সাথে কাজ করার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে বোঝাতে চাচ্ছি, তাদের বিষয়ে আমরা যথেষ্ট মনযোগি। সহকারী সচিব ক্রিস্টিনা রোকার ১৮ এপ্রিল, ২০০৫ ঢাকা সফর করার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থা সুসংহত করার জন্য তাদের সামনে একটি মুলো ঝুলানোর নীতি নিয়ে কাজ করছি।’’ নিলমের মতে, অনেক বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে অভিন্ন বার্তা পাঠিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলার বিষয়ে উভয় দেশই বাংলাদেশকে অব্যাহত ছবক দান করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের অব্যাহত অনঢ় ভূমিকা তাদেরকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। এক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণের আইকন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে পর্যন্ত মার্কিনীরা ভারতের পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে পাঠিয়ে ইন্দো-মার্কিন অক্ষের পক্ষে ওকালতি করিয়েছে। ভারতকে কেন্দ্র করে অভিন্ন আর্থ-রাজনৈতিক বলয়ে বাংলাদেশের সত্তা বিলোপের ফর্মুলা ফেরিওয়ালা হিসেবে প্রফেসর ইউনূসও দৌড়-ঝাঁপ করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দরকে তিনি ভারতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক যুদ্ধ ঘোষণায় মার্কিন সরকার ক্ষুব্ধ হয়েছে। এ নিয়ে সম্পর্কের অবনতির হুমকিও এসেছে। এবারে নয়াদিল্লী কেন এ ব্যাপারে মার্কিনীদের নিবৃত্ত করতে পারছে না, সে প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে। শেখ হাসিনা বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে দেশ রক্ষার বদলে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিহিংসা থেকে প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করায় তিনি জনমতের সমর্থন পাননি। বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদীদের মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু রেখে ভারত-মার্কিন অক্ষের নীল-নকশায় বাংলাদেশকে জিম্মি করে প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ক্রোধের উপশম করতে চাইছেন।
আমেরিকানরা ভারতের পৌরহিত্যে পাতানো নির্বাচনে যাদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে, তাদের গণতান্ত্রিক মানদন্ড ও সুশাসনের ধরনটা কেমন, তা এখনও উপলব্ধি করতে পেরেছে কিনা, আমরা জানি না। ভারত যখন আমেরিকানদের বোঝাতে চেয়েছে যে, বাংলাদেশ তালেবানদের দখলে চলে যাবার আগে দিল্লীর সাথে মিলে ওয়াশিংটনকে একটা হিল্লা করতে হবে। ওয়াশিংটন তখন এর স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে দিল্লীর কাছে। দিল্লীর-কূটনীতিকরা তাদের ‘সন্দেহ বাতিকের' ওপর বিশ্বাস করতে বলেছে। এবারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টি বললেন, ‘বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে রয়েছে।' সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু দিল্লীর এসাইনমেন্ট অনুযায়ী আওয়ামী লীগ প্রায় দেড় দশক ধরে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী তালেবান-কবলিত রাষ্ট্র বানানোর যে রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মিডিয়া সন্ত্রাস চালিয়েছে, তাকে তারা কীভাবে মুছে ফেলবেন?
ভারতবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের অন্ধ ভারতপ্রীতি, বাংলাদেশের সহায়সম্পদ, কৌশলগত অবস্থান, সমুদ্রবন্দর, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, কৌশল, অর্থনীতি-সংবিধান, তামাম রাষ্ট্রসত্তা ভারতের হাতে তুলে দেয়ার পর ওয়াশিংটনের জন্য বাংলাদেশের আর কি দেবার বাকি থাকতে পারে? বিশেষ করে ভারতের সাথে সন্ধি করার নামে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের এই নষ্ট রাজনীতির অনুঘটক যেখানে খোদ ওয়াশিংটন, সেখানে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ওবামা প্রশাসনের ভাবমূর্তিটা কেমন হতে পারে, সেটা তাদেরই ভেবে দেখতে হবে। জঙ্গিবাদের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে যারা ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে টার্গেট করেছে, যারা মুসলিম মডারেট ডেমোক্রেটিক রাষ্ট্রের পরিচিতির বদলে ডেমোক্রেটিক সেক্যুলার রাষ্ট্র পরিচিতির পালক লাগাতে সংবিধানের খৎনা করার মহাআয়োজনে ব্যস্ত, যারা নারীর অধিকারের সমতা বিধানের জন্য পবিত্র কোরআনের অলংঘনীয় আসমানি ফায়সালা- ইসলামের মীরাসী আইন সংশোধন করে নয়া নারীনীতি প্রবর্তন করেছে, তাদের সাথে ভারত বা আমেরিকার নীতিগত বিরোধ তো হবার কথা নয়। অসম ও ইসলামবিরোধী শিক্ষা ও নারীনীতি বাতিলের দাবিতে ওলামা-মাশায়েখদের আন্দোলনকে পশ্চিমারা বাংলাদেশকে মৌলবাদ ভীতির উপকরণ হিসেবে দেখাতে চাইবে। এ নিয়ে তারা জঙ্গিবাদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা আবারও শুরু করতে যাচ্ছে। বিপুল অর্থ খরচ করে যারা এডিবির তথাকথিত গবেষণাপত্রের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষাকে জঙ্গি তৈরির মাধ্যম হিসেবে উপস্থাপন করেছে, তারা বাংলাদেশে একটি সংঘাত দেখতে চায়। এ সংঘাত আমাদেরকে আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিচ্ছিন্ন অথবা যুথবদ্ধ অন্তর্ঘাত থেকে মুক্তির সন্ধান দেবে না। সরকার যাদেরকে তুষ্ট করতে জাতি-রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিনাশী ফাঁদে পা দিয়েছে, তারা আর একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি করবে। সরকারের হয়ত ফিরে আসার পথ তাদের প্রভুরাই রুদ্ধ করে রাখবে। তবে বিরোধীদল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে কোন্ শর্তে নয়া সন্ধি সমীকরণে যাবে, তা-ও এখন নির্ধারণ করতে হবে।
চারদলীয় জোটকে হটিয়ে যারা ১/১১ এর সরকার দিয়ে নতুন ছকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে, তারা সুশাসন, মানবাধিকার, স্বচ্ছতা, সুবিচার এবং গণতান্ত্রিক শাসন কাঠামো পেয়েছে কিনা তা তাদেরই মূল্যায়নের ব্যাপার। তবে বিদেশী নাপিতদের অতি বাড়াবাড়িতে বাংলাদেশের সর্বনাশ হয়েছে, গণতন্ত্রের বদলে জনগণ ফ্যাসীবাদী দুঃশাসনের যাঁতাকলে পড়ে হাঁসফাঁস করছে। এখানেই দুঃখের পাঁচালীর শেষ নয়। জাতি-রাষ্ট্রের সার্বভৌম সত্তাও আজ বেহাত হতে চলেছে। আর একটি সূর্যোদয়ের প্রত্যাশা-মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতির কান্ডারীরা যদি কেবল ক্ষমতা হাতবদলের পুরনো বৃত্তে বিচরণ করেন, তাহলে বর্তমান শৃংখলের দায়ও তাদের বহন করতে হবে। জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের ভাবনা স্পষ্টকরণ তাই সময়ের অনিবার্য দাবি। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার গণআন্দোলনের মতো বাংলাদেশের গণআন্দোলনও যাতে সাম্রাজ্যবাদী মুখোশধারীদের হাতে পড়ে বেহাত হয়ে না যায়, এখনই তার হিসেব নিকেশ করতে হবে।
No comments:
Write comments