বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী উৎসবে যদি গ্রেনেড আতঙ্কের উপরে যৌনাতঙ্ক প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় তা’হলেই তো কেল্লা ফতে। আর জমজমাট বৈশাখী মেলাও হবে না আবার ইসলামী খেলাফতও কায়েম হবার পথও সুগম হবে। এই ধরনের কাজ কারবার নির্বিঘ্নে করে যারা পার পেয়ে যায় তারাই দেশের আসল প্রভু? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছড়ানো হিজাব যদি দেশশুদ্ধ মেয়েদের ওপর চাপানো যায় তা’হলে কারা দেশ প্রভু? পথেঘাটে উৎসবে সভায় যদি মেয়েদের দাবড়ে, খামচে জামা কাপড় ছিড়ে মজা লুটা যায় বিনা বাধায় তা’হলে দেশ চালাচ্ছে কারা? পুলিশ যদি বলে এখনো বিবস্ত্র হয়’নি নারী; তা’হলে কোন দেশে বাস করে নারী? রাষ্ট্র কি বিবস্ত্র নারী দেখার পর বলবে মেয়েরা সামলে চলে না তাই এমন হয়; আমরা কি করব তখন? বেশিরভাগ মেয়েরা কবে বুঝবে পুরুষ সমর্থিত ধর্মের দেশে যৌনসন্ত্রাস কেন হয় নির্বিঘ্নে? কবে শিখবে নিজকে তুলে ধরতে হলে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ ছাড়া উপায় নেই? কবে জানবে অধিকার আদায় করে নিতে হয়? পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় নারীদের ওপর পরিকল্পিত মৌলবাদী যৌন সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। গত দু দিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখা নানান তথ্য দেখেশুনে বিশ্লেষণ করে মনে হয়েছে বাঙালির প্রানের উৎসব’কে অনৈসলামিক বলে দেশের সংস্কৃতিকে ত্রাসের সাগরে ডুবিয়ে দেবার জন্যই করা হয়েছে এসব।
সহজ সরল আনন্দোচ্ছল উৎফুল্ল রঙ্গপ্রিয় বাঙালি মানুষ। দেশ বিভাগের পর ক্রমান্বয়ে বাংলা হয়ে গেল আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। যদিও এর আগেই এলো আরবী প্রভাব। যে বাঙালি ছিল বাঙালি তিনি হয়ে গেলেন মোসলমান বাঙালি। তবু বাঙলা সংস্কৃতি আপন গতিতে প্রানের আবেগে ক্রমান্বয়ে হোল শক্তিশালী। দেশ স্বাধীনতার পর স্বাধীন বাঙালির প্রানের উৎসবগুলো আবার সগর্ব চর্চায় ফিরে পেলো বাঙালি। কিন্তু সেই কুচক্রী প্রতিক্রিয়াশীল খুনে বদমাশরা; যারা ৭১’এ খুন ধর্ষণ করেছিলো নিরীহ মা বোনেদের; তারা আবার দেশ দখল করলো মাত্র চার বছরেই। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার উচ্চারণ নিষিদ্ধ হয়ে গেল। প্রায় দু যুগ লেগে গেল ছদ্মবেশী দেশপ্রেমিক খুনেদের হাত থেকে বেরুতে সেই সহজ সরল আনন্দোচ্ছল উৎফুল্ল রঙ্গপ্রিয় বাঙালির। কিন্তু মুক্তি নেই, হেরে যাওয়া প্রতিক্রিয়াশীল জামাত শিবির আর তাদের দোসররা এখন ধর্মের আবরণে বাংলাদেশের মানুষদের টুপি হিজাব পরিয়েছে। আর কারা পরছে সে’সব? সেই আমাদের সহজ সরল আনন্দোচ্ছল উৎফুল্ল রঙ্গপ্রিয় বাঙালি মানুষ। স্বেচ্ছায় না’কি আনমনে? চাপে পড়ে না’কি আনন্দে? তা’হলে তাদের স্ত্রী, কন্যা সন্তানদের ওপর যে যৌন সন্ত্রাস হয়েছে তা’কি দাঁড়ি, টুপি হিজাব হালাল পন্থী না’কি বাঙালির প্রানের আবেগ পরিপন্থী? কি জবাব তাদের? এবার কোন পথ ঠিক পথ? মেহেদী রঞ্জিত হিজাব মন্ডিত আরবি যৌন সন্ত্রাসের শরিয়া পথ না’কি হাজার বছরের প্রানের দাবির সহজ সুন্দর বাঙালি সংস্কৃতির পথ?
বাংলাদেশের মেয়েরা এখন বিদ্যান; স্বাবলম্বী, উপার্জনক্ষম এবং পরিবার প্রধানও বটে। দেশটি যখন নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রচন্ড শক্তিশালী হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে দেশের শত্রুগুলো আবার শুরু করেছে নতুন তান্ডব। শুরু করেছে বাংলাদেশের মেয়েদের ঘরে পুরে যৌনদাসী বানাবার অপচেষ্টা। ওদের হিরো শফি মোল্লার মত ফতোয়াবাজরা, ওরা হয়েছে দেশের চোখের মনি। কিন্তু চিন্তার ব্যপার তেতুল শফি কিন্তু কোরান থেকে বুঝে শুনেই বলেছে, মেয়েদের ঘরে থাকবার কথা, তেতুল তেতুল কারণ বলেছে, আরো বলেছে পুরুষের মনোযোগ আকর্ষণ না করবার কথা, পর্দার কথা। আরো নানা ফতোয়াবাজ কোরান ঘেঁটেই বলেছে নারীদের ছোট করা আরো নানান ভয়ঙ্কর কথা। কিন্তু অন্যদিকে আবার সেই আমাদের সহজ সরল আনন্দোচ্ছল উৎফুল্ল রঙ্গপ্রিয় বাঙালি মানুষ তাদের স্ত্রী কন্যাদের বড় করছে হিজাবি বিদ্যালয়, আয় রুজির কার্য্যক্ষেত্র এবং বিউটি পার্লারে যেতে দিয়ে। আবার বৈশাখী মেলাতেও যেতে দিতে হচ্ছে প্রানের টানে। কি অদ্ভুত বাঙালি মুসলমান।
আজকের মা বাবা আর গুরুজনদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা হেফাজতে শফিদের পথ ধরে সফিপন্থী হয়ে নিরাপদ ইতর হবে; তাদের সন্তানদেরও নুরানী নির্দেশ মোতাবেক ঘরকুনো যৌনদাসী তেতুল বানাবে না’কি সন্তানদের বিদ্যাশিক্ষা অর্জন করে খোলামনে মুক্তবিশ্বে বড় হতে দেবে। কথায় কথায় আলহামদুলিল্লা বলবে না’কি ভালো আছি; আপনি কেমন আছেন ধরনের স্বাভাবিক কথা বলবে। তারা কি ওই সব যৌন সন্ত্রাসকে হালাল এবং ঠিক’ই আছে বলবে না’কি সুস্থ আচরণ করে বলবে এইসব চলবে না। সুস্থ ভাবনানির্ভর সিদ্ধান্ত না নিলে ধর্মের ওয়ান ওয়ে সুড়ঙ্গে সেঁধিয়ে গেলে ওখান থেকে বের হওয়া মুশকিল। প্রায় অসম্ভব। তাই বাঁচতে হলে গড্ডালিকা প্রভাবে গা ভাসাবার আগে, বাংলাদেশকে ফাকিস্তান আফগানিস্তান আইসিস বানাবার আগে আজকের মা বাবা সমাজকে, নারীকে মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে; প্রজন্মকে সাহায্য করতে হবে প্রতিবাদ করতে। মেয়েদের দিতে হবে স্বাধীনতা, সম্মান এবং যথাযথ নিরাপত্তা। এটা সমাজকে করতে হবে। কঠোর আইন ও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণ প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করুন। বিচার; কঠোর আইন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পথ ছাড়বেন না। সু-নাগরিক, প্রয়োজনে সারা দেশের নারী এক হয়ে হুঙ্কার ছাড়ুন। নারী নির্যাতন, যৌন নিপীড়নের বিচারের জন্য নতুন কঠোর আইন না হওয়া পর্যন্ত নিজের রাস্তা ছাড়বেন না। নিজেদের অধিকার নিজেদের আদায় করে নিতে হবে। সরকার, পুলিশ বা রাষ্ট্রের সময় কোথায়? ওদের সময় যায় গদি বাঁচাতে; নাগরিক সেবার সময় তাদের নেই।
No comments:
Write comments