Flickr

Sunday, 5 April 2015

মানুষের আতঙ্ক দূর করতে হবে

Posted by   on

মানুষের আতঙ্ক দূর করতে হবে
‘সাতক্ষীরায় বিরোধী দলের ওপর দমন অভিযান’ শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে দৈনিক সংগ্রামে। ৪ এপ্রিল মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, আতঙ্কে আছে সাতক্ষীরার মানুষ। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চলছে হয়রানি ও নির্যাতন। সরকারদলীয় লোকজন পুলিশকে ব্যবহার করে বিরোধী দল দমনে মেতে উঠেছে। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। একই সাথে চলছে গ্রেফতার বাণিজ্য। এমনকি আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী-সমর্থকের সাথে ব্যবসায়িক লেনদেনে বাকবিত-া হলেও প্রতিপক্ষকে জেলের ঘানি টানতে হচ্ছে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। তিনি রড-সিমেন্টের ব্যবসা করেন। তার একমাত্র ছেলে নাইমুল ইসলামকে নিরাপদে রাখতে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় পাঠানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাইফুল বললেন, ‘ছেলের বয়স ৩০ বছর। কখন কার সঙ্গে দেখে ওকেও পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। তারপর দেখা যাবে পায়ে গুলী খেয়ে পড়ে আছে’। সাতক্ষীরার এমন পরিবেশকে স্বাভাবিক পরিবেশ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
আমরা জানি, যে কোনো দেশের সরকারের প্রধান দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং শান্তিময় পরিবেশ রক্ষা। এ কাজ করতে গেলে প্রয়োজন হয় সুশাসন। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে অনুরাগ ও বিরাগের ঊর্ধ্বে থেকে প্রশাসন ও পুলিশকে আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখতে হয়। কিন্তু সাতক্ষীরায় তেমন পরিবেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতে হলে তো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হয়। ঢালাওভাবে কোনো দল বা বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে দমন অভিযানকে আইনানুগ কাজ বলে বিবেচনা করা যায় না। পুলিশ ও প্রশাসনের এমন কাজকে সরকার প্রশ্রয় দিলে তার ফল হয় মারাত্মক। সাতক্ষীরায় এখন যে শুধু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপরই জুলুম-নির্যাতন চলছে তা নয়, সাধারণ মানুষও এখন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফলে আতঙ্কের এক জনপদে পরিণত হয়েছে সাতক্ষীরা। আতঙ্ক সৃষ্টি তো পুলিশ, প্রশাসন কিংবা সরকারের কাজ হতে পারে না। বরং আতঙ্কের পরিবেশ দূর করে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাই সরকারের দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্বে সহযোগিতা করাই পুলিশ ও প্রশাসনের কাজ।
সাতক্ষীরা জনপদে এখন একদিকে বিরাজ করছে হরতাল-অবরোধে নাশকতার আশঙ্কা, অন্যদিকে পুলিশী অভিযানে গ্রেফতার ও নির্যাতন ভীতি। রাজনীতিবিদরা তো এলাকায় থাকছেন না, কিন্তু গ্রেফতার আতঙ্কে দিন যাপন করতে হচ্ছে জেলার হাজার হাজার মানুষকে। তাদের অনেকেই এখন ঘর-বাড়ি ছাড়া। রাজনৈতিক সহিংসতা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গত দুই বছরে সাতক্ষীরা জেলায় নিহত হয়েছেন ৫৭ জন, গুম হয়েছেন ৫ জন। আর সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশী অভিযানে পায়ে গুলীবিদ্ধ হন ২৪ জন। গুলীবিদ্ধ দু’জনের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। বাকিদের পক্ষেও স্বাভাবিক চলাফেরা সম্ভব হচ্ছে না। সাতক্ষীরায় পুলিশ ও প্রশাসনের যে রণমূর্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের চিত্র হতে পারে না। সভ্য দেশে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে পুলিশ ও প্রশাসন কিভাবে কাজ করে তা আমরা জানি। কিন্তু সাতক্ষীরায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনায় পুলিশ যেন পেশাগত বিবেচনায় কাজ করার বদলে বিশেষ মহলের অনুকূলে অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ করে চলেছেন। ফলে পুলিশের বিরাগের কারণে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা এখন ঘর বাড়ি ছাড়া। আর সাধারণ মানুষের বসবাস এক আতঙ্কজনক পরিবেশে। এমন পরিস্থিতির অবসান প্রয়োজন। সরকার তার সাংবিধানিক দায়-দায়িত্ব ও নির্বাচনী অঙ্গীকারের বিষয়গুলো বিবেচনায় আনলে সাতক্ষীরার পরিবেশ স্বাভাবিক হতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উচিত হবে গণতান্ত্রিক চেতনাকে সমুন্নত রেখে নিজেদের কর্মকা-কে মূল্যায়ন করা। এর মধ্যেই রয়েছে সবার কল্যাণ।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter