Flickr

Tuesday, 23 September 2008

প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা ও সচেতন করুন

কোনো ব্যক্তি যদি জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হয়ে বা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বা অপচিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ার দরুন স্থায়ীভাবে আংশিক অথবা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম হয়, তবে তাকে প্রতিবন্ধী বলে ধরা হয়।
সাধারণত প্রতিবন্ধিতাকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা_ শারীরিক, দৃষ্টি, বাক, শ্রবণ, বুদ্ধি ও বহুমুখী প্রতিবন্ধী। একসময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ঘরের কোণেই বসে থাকত। পরিবার বের হতে নিষেধ করত। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগের সঙ্গে সঙ্গে ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শিখেছে মানুষ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও বলতে শিখেছে_ 'থাকব নাকো বদ্ধঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে।' তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নিজেদের চলাচলের জন্য বিভিন্ন সহায়ক উপাদান বা উপকরণ ব্যবহার করে। তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার জন্য লাঠি, বাঁশ ও কাঠের বস্তু, পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিরা পিঁড়েসহ নানা বস্তু ব্যবহার করে সহায়ক উপকরণ হিসেবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বাঁশের লাঠি ব্যবহার করত। এতে কিছুটা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা চলাচলে স্বাধীনতা ভোগ করলেও পুরোপুরি একা স্বাধীনভাবে চলাফেরার জন্য উপযোগী নয়।
  
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার জন্য আধুনিক সহায়ক উপকরণ ব্যবহারের বিকল্প নেই। কারণ আধুনিককালে গবেষণা চালিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। সহায়ক উপকরণ ব্যবহারকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানুষ সহজেই চিহ্নিত করতে পারে। ফলে বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে। সহায়ক উপকরণগুলো হচ্ছে হুইল চেয়ার, লো ট্রলি, ট্রাই সাইকেল, ক্র্যাচ, হুইট ক্যান, লং লেগ ব্রাশ, ব্রাশ, ক্যালিপার, হিয়ারিং এইড এবং চশমা প্রধান।
আমরা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হাতে সাদা ছড়ি দেখে বুঝতে সক্ষম হই। কানে হিয়ারিং এইড ব্যবহার করা দেখে বুঝি শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা। হুইল চেয়ার, লো ট্রলি, ওয়াকিং ফ্রেম, ক্র্যাচ ব্যবহার করা দেখে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা উপলব্ধি করতে পারি সহজেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী রয়েছে। তাদের অধিকাংশই সহায়ক উপকরণ ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন নয়। এতে প্রায়ই রাস্তাঘাটে দেখা যায়, অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধী হামাগুড়ি দিয়ে চলাচল করে। অনেকে লাঠির ওপর ভর করে চলাফেরা করে। অনেক প্রতিবন্ধী স্কুল-কলেজে যেতে পারে না সহায়ক উপকরণ ব্যবহার না করার জন্য, যা দেখলে কোমল হৃদয়ে মর্মাঘাত হয়। কারণ তারা মানুষ। তাদের রয়েছে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। হয়তো তারা জানে না সহায়ক উপকরণ কোথায় পাওয়া যায়, নতুবা কেনার সামর্থ্য নেই। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অত্যাধুনিক সহায়ক উপকরণ তৈরি করছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়ক উপকরণ সুলভ মূল্যে কেনা যেতে পারে।
যেমন হুইট ক্যান বা সাদা ছড়ি ১২০ থেকে ১৬০, হুইল চেয়ার ৭ হাজার থেকে ১৫ হাজার, ট্রাই সাইকেল ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার, লো ট্রলি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার, ওয়াকিং ফ্রেম ১ হাজার থেকে ১৫শ টাকা, ক্র্যাচ ৫০০ থেকে ৭৫০, এলবো ক্র্যাচ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত দাম নিয়ে থাকে।
আমাদের দেশে অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি, শিল্পপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রবাসী রয়েছেন। তারা অযথা অনেক টাকা খরচ করেন। তাদের এলাকায় অনেক গরিব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে, যারা একটি সহায়ক উপকরণের অভাবে ঘরের কোণে বদ্ধ খাঁচায় বন্দি হয়ে প্রহর গুনছে। তাদের উপযোগী সহায়ক উপকরণ উপহারস্বরূপ দেয়া হলে মুক্তভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম হবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পাবে। আর্থ-সামাজিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
বিত্তবানদের সহযোগিতায় একটি সহায়ক উপকরণ পাল্টে দিতে পারে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবনের মোড়।
বিষয়টির প্রতি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter