Flickr

Monday, 5 October 2015

মুক্তমনায়

Posted by   on

১) ছোটবেলায় আমার বিজ্ঞান বিষয়টি খুব ভাল লাগত। আমার মনে আছে ক্লাস ফাইভে আলো যে সোজা পথে চলে তার একটি প্রমান আমাদের পড়ানো হয়েছিল। খুব মজা পেয়েছিলাম পড়ে। কোন বস্তুর ভেতর দিয়ে আলো চলতে না পারলে তার ছায়া তৈরী হয়। এসব আরকি। আমি তখন আমার স্যারকে প্রশ্ন করেছিলাম যে, আকাশে অনেক কৃত্রিম উপগ্রহ আছে, ওসবের ছায়া কেন দেখা যায়না। অথবা, দিনের বেলা গাছের ছায়া রাতের মত অন্ধকার হয়না কেন? আমার এসব পাগল মার্কা প্রশ্ন শুনে স্যার বলেছিল বড় হও। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা কর। সব জানতে পারবে। যদিও অনেক মন খারাপ হয়েছিল কিন্তু এখন মনে হয় স্যার সেসময় ঠিক ই ছিল।

 ২) আমার স্যারের একটি ক্লাসের লেকচারের কথা মনে পড়ে গেল এখন। তিনি আমাদের “Water supply Engineering” কোর্সটি পড়াতেন। একসময় তিনি একটি প্রজেক্ট সম্পর্কে কিছু কথা বলেন। আফ্রিকায় একটি দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নত্ত জীবন যাপনের জন্য কিছু পরামর্শক নিযোগ দেয়া হল। তারা দেখলো যে স্থানীয় নারীদের প্রতিদিন ৮/১০ মাইল হেটে পানি আনতে যেতে হয়। তাই তারা অনেক বড় খাল কেটে পানির ব্যবস্থা করল। তাদের স্বাস্থ্যসমত পায়খানার ব্যবস্থা করা হল। কিছুদিন পড়ে সেই এলাকার মানুষের মধ্যে অনেক কলহ শুরু হল। সমস্যার মূল কারন অনুসন্ঝানে বেরিয়ে এল যে, আগে তারা একসাথে গ্রামের সব মহিলার পানি আনতে যেতো। যাওয়া আসার পথে অনেক সুযোগ থাকতো একে অন্যের সাথে গল্প করার। কিন্তু পানির ব্যবস্থা করাতে সে সুযোগ নষ্ঠ হয়েছে। তার সাথে তাদের প্রতিদিনের অনেক সময় বেচে গেছে। তাই তারা একে অন্যের সাথে কলহ শুরু করে। ভাবতেই অবাক লাগে, তাই না। কিন্তু তার থেকেও আবাক হয়েছিলাম এর প্রতিকার পদক্ষেপ নিয়ে। তাদের পায়খানা একটি আরেকটির সাথে লাগানো। যেমনটি দেখা যায় বিভিন্ন পাবলিক টয়লেটে। সেই সকল পায়খানায় মাঝে একটি করে জানালা করে দেওয়া হল। যেন একজন আরেকজনের সাথে কথা বলতে পারে। অদ্ভুত তাইনা।

 ৩) আমাদের দেশে যে কত ভন্ড বিজ্ঞানী বের হয় তার শেষ নাই। একসময় দেখলাম যে একজন শক্তিকে মাল্টিপ্লাই করার দাবি তুলল। সে একটা ডিভাইস তৈরী করল এবং সেটিকে চালিয়ে দেখালো। কিছু সংখ্যক লাইট ফ্যান চালালো আর বলল যে সে শক্তিকে মাল্টিপ্লাই করতে পারে। সে পত্র পত্রিকাতে কাভারেজ পেলো। বিস্ময় বালক হিসেবে বিবেচিত হল। মজার বিষয় হল যে পল্লী উনয়ন বোর্ডের ইন্জিনিয়ার ও সরকারী কলেজের পদার্থ বিভাগের শিক্ষকরা তার ভুলটি ধরতে ব্যর্থ হল। সেই ভন্ড সে সুযোগে অনেক মানুষের কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিল।

 ৪) আমার কয়েকটি জিনিস ভাবতে খুব খারাপ লাগে। যেমন ধরুন, মাদ্রাসাকে ধর্মীয় শিক্ষালয় বানানো। এর সঠিক কারনটি এখন পর্যন্ত আমার বোধগম্য হলনা। এ নিয়ে google মামার কাছে গিয়ে দেখি এটি একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ হল বিদ্যালয়। সোজা সাপ্টা হিসাবে জ্ঞান চর্চা করার স্থান। কিছু মানুষ কৌশলে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য একে কিভাবে দেখা শুরু করল ভাবতে অবাক লাগে।

 এবারে আসা যাক মূল সমস্যা গুলিকে নিয়ে। আমরা আমাদের চিন্তাকে ততটুকু বিকাশিত করতে পারি যতটুকু করা সম্ভব। ছোট বাচ্চার পক্ষে যেমন আলোর ধর্ম বোঝা সম্ভব না তেমনি ১/২ বছর মাদ্রাসাতে পড়ে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ঠিকনা। বিষয়টি মুক্তমনাদের ক্ষেত্রেও প্রযোয্য।

 সমাজের মানুষ কতটুকু মানসিক ভাবে অগ্রসর সেটিকে মাথায় নেয়া প্রয়োজন। না হলে টেসলার মত বিজ্ঞানী হলেও লাভ নেই। কারন সেই সকল জ্ঞান এসকল সমাজের মানুষের ধারন করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
ভন্ড পীর অনেক দেখি আজকের সমাজে। তার সাথে ভন্ড মুক্তমনাও আছে। মুখে বলেল ই মুক্তমনা হওয়া যায়না। শুধু ইসলাম কে গালিগালাজ ই মুক্তমনা নয়। বাংলাদেশে এখনো বিদ্যালয়ে স্বরসতি পূজা হয়। এ কুসংস্কার নিয়ে মুক্তমনায় কোন লেখা পেলামনা।

 অনেকে ধর্মকে পুজি করে ব্যবস্যা করে আর অনেকে মুক্তমনার নামে ব্যবস্যা করে। আমাদের দেশে বিজ্ঞানী আর মুক্তমনার মধ্যে সর্ম্পকটা ঠিক হজম হলনা।

শেষে কয়েকটা কথা বলতে চাই। বাক স্বাধীনতার জন্যে যে বাক শালীনতা বর্জন করতে হবে তা কিন্তু বলা হয়নি। ব্যাপারটা এমনভাবে লক্ষ্য করি। কোন ছেলের ইভটিজিং বাক স্বাধীনতার মধ্যে কি পড়ে? কারন এতে করে বাক শালীনতা ব্যহত হচ্ছে, তাই না।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter