Flickr

Saturday, 3 December 2011

সন্ত্রাসীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না

Posted by   on

সন্ত্রাসীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই চরমপন্থীদের আশ্রয়স্থল, ঘাঁটি ও অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। কখনো কখনো তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ে, কখনো কখনো কিছুটা কমে। তবে কখনোই অপতৎপরতা নিঃশেষ হয়ে যায় না। অন্তত ১২টি চরমপন্থী সংগঠন এ অঞ্চলে তৎপর রয়েছে। রাজনৈতিক দর্শন হিসেবে কমিউনিজম বা মাওবাদ পরিত্যক্ত হলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় কমিউনিজম বা মাওবাদের নামে এসব সংগঠন হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছে। এদের ভয় ও অত্যাচারে কখনো কখনো মানুষ দিশেহারা ও অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।
আইন-শৃক্মখলা বাহিনী যখন তৎপর হয়, অভিযান চালায়, তখন তাদের অনেকে আত্মগোপন করে, অনেকে দেশের অন্যত্র কিংবা সীমান্তের ওপারে পালিয়ে যায়। আইনশৃক্মখলা বাহিনীর তৎপরতা ও অভিযান স্তিমিত হয়ে গেলে আবার তারা ফিরে আসে। এভাবে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে বছরের পর বছর ধরে।
গত ছয় বছর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, গণপিটুনি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রায় পাঁচশ' চরমপন্থী ও গ্রুপ লিডার নিহত হলেও পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি ঘটেনি। অস্ত্র স্থানান্তরিত হয়েছে। নতুন গ্রুপ লিডার ও ক্যাডারের জন্ম হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষ নিহত গ্রুপ লিডারদের স্ত্রীরা সামনে চলে এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, চরমপন্থীরা রাজনৈতিক শেল্টারও পাচ্ছে।
অস্ত্র সংগ্রহের পাশাপাশি চরমপন্থী সংগঠনগুলো ‘ক্যাডার' সংগ্রহেও তৎপর হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে তারা বেকার যুবক এবং বিশেষত মহিলাদেরই প্রাধান্য দিচ্ছে। এপারের চরমপন্থীদের সাথে ওপারের মাওবাদীদের একটা সম্পর্ক বরাবরই রয়েছে। তারা পরস্পরের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
বিপদাপদে তারা একে অপরকে আশ্রয় ও সহযোগিতা দিয়ে থাকে। নীতি-পদ্ধতির অনুসরণ ও পরস্পরের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। ওপারের মাওবাদীরা তাদের তৎপরতায় মহিলা ক্যাডারদের অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করছে। এপারের চরমপন্থীরাও তাদের অনুসরণে মহিলা ক্যাডার সংগ্রহ ও ব্যবহারে প্রাধান্য দিচ্ছে। মেহেরপুরের রিক্তার ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর বিষয়টি প্রথমে নজরে এলেও পরে কুষ্টিয়ার অাঁখি, রানী, চুমকি, চম্পা, নাসরিন, কনা, পাবনার মোর্শেদা, যশোরের হাফিজা, মেহেরপুরের জ্যোৎস্না প্রমুখ মহিলা ক্যাডার আটক হওয়ার ঘটনায় প্রমাণিত হয়, চরমপন্থী গ্রুপগুলোর মধ্যে মহিলা ক্যাডারের সংখ্যা এখন দেড় শতাধিক, দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়ছে।
চরমপন্থীদের সঙ্গে ওপারের মাওবাদীদের সম্পর্ক আছে, নৌদস্যু ও বনদস্যুদের সঙ্গে মিতালী আছে, আছে তাদের অস্ত্রের নির্ভরযোগ্য উৎস। এই সঙ্গে আছে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়। এমতাবস্থায় চরমপন্থীদের দৌরাত্ম্য ও হুমকি থেকে এ অঞ্চলকে মুক্ত করা যে অত্যন্ত কঠিন, তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং নেপালে মাওবাদীদের হত্যা, সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক তৎপরতার কথা কারো অজানা নেই। আমাদের দেশের জন্য বিশেষভাবে বিচলিত হওয়ার বিষয় এই যে, ওপারের মাওবাদীদের সঙ্গে এপারের চরমপন্থীদের সম্পর্ক ও সহযোগিতা ক্রমাগত বাড়ছে।
র‌্যাব-পুলিশের অভিযানের মধ্য দিয়েও বেশ কিছুদিন স্তিমিত থাকার পর বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের আন্ডার ওয়ার্ল্ড আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যে চরমপন্থীরা হত্যা করে বিগত দিনের ন্যায় হত্যার দায় স্বীকার করে লিফলেট বিতরণ করেছে। চরমপন্থীদের নামে মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি চলছে অহরহ। চাঁদা না দিলে শিল্পপতিদের বাড়িতে বোমা হামলা হচ্ছে। জীবন ভয়ে চরমপন্থীদের তাই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ লাখ লাখ টাকা প্রতিনিয়ত চাঁদা দিচ্ছে। এত কিছুর পর র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দারা যেন সন্ত্রাসের লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর জনপদ হিসেবে খ্যাত খুরনার নাম কোনভাবেই মোছা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ ও নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করছে তারা। অস্ত্রের উৎস ভারত। এপার ও ওপারের মধ্যে চোরাচালানিদের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে তারা অস্ত্র সংগ্রহ করছে। অস্ত্র যে ব্যাপক হারে ভারত থেকে আসছে, তার প্রমাণ গত দেড় বছরে সহস্রাধিক অস্ত্র উদ্ধার। গত এপ্রিলে যশোরের চাচড়া থেকে পিস্তল ও গুলী উদ্ধার করা হয়। ক'দিন আগে যশোর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি ভারতীয় পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এভাবে প্রায়ই ভারতীয় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে।
চলতি বছরের ৬ মাসে শুধু খুলনায় শতাধিক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে প্রায় ৩০টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। সব মিলিয়ে চরমপন্থীরা এখন বেপরোয়া। বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল জুড়ে কোনো বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়নি। এসব হত্যাকান্ডের সাথে কিশোর সন্ত্রাসীরা বিশেষভাবে জড়িত বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে।
টপটেরর বা ‘দাদা'রা অনেকেই ক্রসফায়ারে খতম বা অব্যাহত অভিযানে দেশছাড়া। চরমপন্থী অস্ত্রবাজ ও খুনিদের একটি অংশ এখন জেলের ঘানি টানছে। তবুও হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, সন্ত্রাসবাদ থামেনি। কারণ, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রণ এখন কিশোর সন্ত্রাসীদের হাতে। ডনদের কাছাকাছি থেকে এরা দেখেছে হত্যাযজ্ঞ ও সমাজকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়ার সব অভিনব কলাকৌশল। অস্ত্র হাতেই এরা কথিত নিষিদ্ধ পার্টির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রেণী শত্রু খতমের নামে পাখির মতো গুলী করে হত্যা করেছে রাজনীতিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী ও সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে। দিন দুপুরে জীবনবাজি রেখে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে এনে তুলে দিয়েছে ডনদের হাতে।
আজ তাদেরই সময়ের প্রয়োজনে দলের কান্ডারি হিসেবে সর্বময় দায়-দায়িত্ব তুলে নিয়েছে এরা। চাঁদাবাজি, হুমকি, হত্যা, বোমাবাজি প্রভৃতি অপরাধের বিষয়ে চরমপন্থীদের মুখপাত্র হিসেবে কিশোর সন্ত্রাসীরা এখন লাইমলাইটে।
জানা গেছে, খুলনা মহানগরীসহ বৃহত্তর খুলনার ৩ জেলায় এই কিশোর সন্ত্রাসীরা আন্ডার ওয়ার্ল্ডকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।
এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের জন্য র‌্যাব-পুলিশ প্রতিনিয়ত ঢিলেঢালা হলেও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের ওপর র‌্যাব, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি শুরু করেছে। র‌্যাব-পুলিশ কৌশলগত কারণে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে চাইছে না।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter