Flickr

Tuesday, 6 December 2011

মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ

Posted by   on

মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ প্রসঙ্গে
দেশব্যাপী সন্ত্রাস নৈরাজ্য দুর্নীতি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এবং অব্যাহত অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে সরকারি ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে মানুষ যখন দীর্ঘদিন ধরে যোগ্যতা, দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা ও নিঃস্বার্থতার মানদন্ডে মন্ত্রিসভার পুনর্গঠন ও রদবদলের জন্য প্রতীক্ষা করছিলেন তখন সরকার তার মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন। বলাবাহুল্য দীর্ঘদিন ধরেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই অযোগ্যতা, অদক্ষতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগ অনুযায়ী মন্ত্রিসভায় এমন অনেক মন্ত্রী আছেন যাদের কৃতিত্বের মাত্রা যেমন শূন্যের কোঠায় আবার এমন মন্ত্রীও আছেন যারা তাদের পদ পদবীর অপব্যবহার করে অনিয়ম দুর্নীতির পাহাড় গড়ার অপদৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। অনেকে আবার অতি কথনের যেমন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন, তেমনি এটাও দেখা গেছে যে এক মন্ত্রী যা বলছেন আরেক মন্ত্রীর বক্তব্যে তার ঠিক উল্টো কথাও বেরিয়ে আসছে। সামগ্রিক বিশ্লেষণে এটাও প্রতীয়মান হয় যে, সার্বিকভাবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। তাদের অনেকেই এমন সব বিষয়ে বক্তব্য রাখেন যা তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত।
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম যখন মন্ত্রিসভা গঠন করেন তখন এই সভায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অজ্ঞাত অখ্যাত ব্যক্তিদের অনেকেই এতে অন্তর্ভুক্ত হতে দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিস্মিত হয়েছিলেন এবং এই নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহে অনেক কথা বার্তা হয়েছে। তখন ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে এই মর্মে সাফাই গাওয়া হয়েছিল যে, দলটি তরুণদের মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব দিয়ে দলে পরিবর্তন ও গতিশীলতা আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং এর সাথে সাথে পুরাতনদের মধ্যে অনিয়ম দুর্নীতির যে প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় অনভিজ্ঞ ও তরুণ মন্ত্রীরা তা থেকে মুক্ত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা গঠনের পাশাপাশি একটি উপদেষ্টা সভাও গঠন করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখা গেল যে মন্ত্রিসভার কিছু তরুণ সদস্যের পাশাপাশি প্রবীণ উপদেষ্টাদের যোগ্যতা ও ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আবার এই প্রশ্নটিও প্রকট হয়ে দেখা দেয় যে, মন্ত্রীরা নয় উপদেষ্টারাই দেশ চালাচ্ছেন যাদের দেশ ও দেশবাসীর সমস্যা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই, এমনকি উপদেষ্টাদের কোন কোন সদস্য বিদেশী স্বার্থের ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করার অভিযোগ উঠে। ক্ষমতাসীন দলের কোন কোন এমপি পার্লামেন্টে এই অভিযোগও তুলেছেন যে, মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি রয়েছে। এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট এমপির মানসিক ভারসাম্যহীনতার প্রশ্ন তুলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হলেও গত প্রায় তিন বছরে এই মন্ত্রিসভার কার্যাবলী দেশবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কিছু কিছু মন্ত্রীর দুর্নীতি ও অপকীর্তি দেশ বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ তথা ভাব-মর্যাদাকেও ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ উঠেছে। একজন মন্ত্রীর দুর্নীতির দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বিশ্বব্যাংক, জাইকা, আইডিবির মত আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। ঐ মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সুশীল সমাজের তরফ থেকে ঈদের দিনে ঈদ অনুষ্ঠান বর্জন করে শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘটও পালন করা হয়েছে। দেশের মহাসড়কসমূহের দূরবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের ন্যায় ঐ সরকারের আমলে বাসমালিকরা ধর্মঘট পালন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমপিরাই পার্লামেন্টেও সরকারের সমালোচনা করেছেন কিন্তু এতে কোন ফল হয়নি। বরং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতারা দলীয় মন্ত্রীদের দুর্নীতির সমালোচনা করে শত্রুদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। দেশের মানুষ এতে হতবাক হয়েছে। তারা আরো হতবাক হচ্ছে এজন্য যে, মন্ত্রিসভা এমনসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যার সাথে বাস্তব অর্থে জনগণের স্বার্থের সংশ্লিষ্টতা নেই বললেই চলে। অনেকে এও বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক উপদেশ দেয়ার মত ব্যক্তি বা মন্ত্রী কেবিনেটে নেই অথবা থাকলেও তাদের সাহস নেই। ফলে সরকার তার নির্বাচনী ওয়াদা ভুলে গিয়ে এমন সব কর্মতৎপরতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছেন যাতে মনে হচ্ছে যে, বাংলাদেশের বুকে এই সরকারই শেষ সরকার এবং তাদের পর আর কোন সরকার আসবে না। রাজনৈতিক দলন-নিপীড়ন, একনায়কসূলভ আচরণ এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিদ্বনদ্বী দলসমূহকে নিশ্চিহ্নকরণের প্রবণতা এবং দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে প্রতিবেশীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া প্রভৃতি এরই অংশ। আমরা এর নিন্দা জানাই।
মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে সরকার বাবু সুরঞ্জিত দাসগুপ্ত এবং ওবায়দুল কাদেরকে কেবিনেটে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ডা. হাসান মাহমুদকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী করেছেন। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে পর্যবেক্ষণযোগ্য বলে মনে করি। নতুন যে দু'জনকে মন্ত্রী করা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে এই দু'জন সরকারের মন্ত্রীদের কিছু কিছু কাজের সমালোচনা করতেন। তাদের মন্ত্রী করার ফলে তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যায় কিনা তা দেখার বিষয়। সরকারের অভ্যন্তরে থেকে সরকারের অথবা তা কোন অর্গানের সমালোচনা করা কৃতিত্বের বিষয় নয়। বরং যারা সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেন এবং নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সেবা তৎপরতাকে শক্তিশালী ও শানিত করে দেশের মানুষের উপকার করতে পারেন তারাই স্বার্থক বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে তাতে সরকার দৈনিক প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ধার করে দেশ পরিচালনায় বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থায় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করে ব্যয়ের পরিসর আরও বৃদ্ধি করার মধ্যে আমরা কোন দূরদর্শীতা দেখতে পাই না। বরং সরকারের উচিত ছিল অথর্ব ও অযোগ্য এবং দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়ে অভিজ্ঞ, নিষ্ঠাবান এবং সৎ ব্যক্তিদের তাতে অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু তা হয়নি। এই অবস্থায় সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত কি পরিণাম বয়ে আনে তা দেখার জন্যই আমরা অপেক্ষা করতে চাই।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter