এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাগলা ঘোড়া কেউ থামাতে পারছে না। প্রতিবছর সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল বৃদ্ধি করছে সেখানে এত বাড়িভাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ বসবাস করবে কীভাবে? সরকারের বা উচ্চ মহলের এ ব্যাপারে কোনো প্রকারের তদারকি নেই। যা উপার্জন করা হয় সব বাড়িভাড়া পরিশোধেই ব্যয় হয়ে যায়। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। এর ওপর রয়েছে ছেলেমেয়েদের পড়[ালেখার খরচ। সুতরাং এ পরিস্থিতির নিরসন হওয়া জরুরি।
এক বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি খুব আক্ষেপ করে বলেছিলেন, 'বাড়িওয়ালারা হচ্ছেন স্রষ্টার খুব কাছাকাছির মানুষ তাই তারা মালিক'। ভাড়াটিয়াদের দুঃখ-কষ্ট, অসহায়ত্ব, জ্বালাযন্ত্রণা বাড়িওয়ালারা মনে হয় খুব আনন্দচিত্তে উপভোগ করে থাকেন। স্রষ্টা পৃথিবীতে মানুষকে বসবাসের সুযোগ দিয়েছেন আর বলেছেন, ইবাদত বন্দেগি করতে, তাতেই তিনি ভীষণ খুশি। তিনি কখনো বসবাসের জন্য ভাড়া নেন না পক্ষান্তরে বাড়িওয়ালারা সালামও নেবেন সালামিও (ভাড়াও) নেবেন। যে কোনো ব্যাপারে তাদের অন্য রকমের এক চিত্র লক্ষ্য করা যায় মানে ভাড়াটিয়াদের ভাড়া নিয়ে (অর্থ উপার্জন করে) তারা রাজার হালে চলছেন অথচ ভাড়াটিয়ারা তাদের কাছে প্রকৃতপক্ষে মানুষ বলে পরিগণিত হন না। প্রচলিত আইন, বিচার, দেশ, জাতি, সংবিধান, বিধাতা, রোজ কিয়ামত, বেহেস্ত-দোজগ, ন্যায়, নীতি, আদর্শ কোনোটাই তাদের টলাতে পারে না। দেখা যায় বাড়িওয়ালার থাকার বাসাটা সাধারণত দোতলায় নিজের মতো করে স্বর্গরাজ্য প্রস্তুত করা হয় যেখানে সর্বদা পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে আলাদা পানির লাইন (গরম-ঠা-ার ব্যবস্থা), কখনো কখনো আলাদা বিদ্যুৎ লাইন (বিদ্যুতের দুই লাইন সংযোজন বা জেনারেটর বা আইপিএস বা সৌরবিদ্যুৎ) থাকে অথচ ভাড়াটিয়াদের পানির কোনো নিশ্চয়তা নেই। কাপড় খুলে গোসলের জন্য দাঁড়ানোর পর পানি নেই। কী করার? প্রস্রাব, পায়খানা করার পানি থাকে না। কখনো কখনো খাবার পানি পর্যন্ত তারা দেন না। তার মানে সব সুযোগ-সুবিধা থেকে সর্বদা বঞ্চিত করেও হঠাৎ করে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমান ঢাকা শহরের নাগরিক জীবনের সব থেকে বড় সমস্যা বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি। এ ব্যাপারে বাড়িওয়ালারা সরকার, প্রশাসন, বাড়ি ভাড়ার আইন (জবহঃ ঈড়হঃৎড়ষ ঙৎফরহধহপব), মানবতা কোনো কিছুই তোয়াক্কা করেন না। যখন-তখন ইচ্ছামতো বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকেন। এক জরিপে দেখা গেছে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার ৮৩ শতাংশ বাসিন্দা ভাড়া বাসায় বসবাস করে থাকেন। এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর পক্ষে সরকার-প্রশাসন কখনো স্বতন্ত্রভাবে অবস্থান করেন না। বাড়ির মালিকদের রোষানল থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রচলিত আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। ফলে ভাড়াটিয়ারা বাধ্য হয়ে জিম্মিদশাকে বরণ করে দিনের পর দিন বসবাস করে চলেছেন। তাদের দৈনন্দিন উপার্জনের সিংহভাগ ভাড়া দিতে ব্যয় করছেন।
আমাদের দেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়ার যে নিয়মকানুন রয়েছে তা কোনো বাাড়িওয়ালা সাধারণত পালন করেন না। ভাড়াটিয়ারা কিছু বলতে গেলে মালিক বলেন, থাকলে থাকো না পোষালে বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যাও। তোমরা ছেড়ে দিলে আরো দু'তিন হাজার টাকা বেশি ভাড়ায় আমরা ভাড়া দিতে পারব। আইনে থাকলেও ভাড়ার রশিদ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেয়া হয় না। বাড়িওয়ালারা ঠিকঠাকমতো সরকারকে ট্যাক্স দেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কারণ রশিদ দিলে ভাড়াটিয়ার কাছে একটা প্রমাণ থাকে। এসব বিবেচনায় আগের দিনের জমিদারদের থেকেও এখনকার বাড়িওয়ালারা বেশি নির্যাতন করে থাকেন। ভাড়াটিয়ারা যেন তাদের গলগ্রহ হয়ে থাকছেন। যে কোনো অজুহাতে বাড়িওয়ালা ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আর নতুন ভাড়াটিয়া এলে তো কথায় নেই (আগে যে ভাড়াটিয়া যে ভাড়ায় থাকতেন যদি তিনি বাসা না ছেড়ে দিতেন তাহলে হয়তো বৃদ্ধি করা হতো না কিন্তু বাসা ছেড়ে দেয়াতে বাড়িওয়ালার পোয়া বারো)।
সরকার, প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রক এ ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব কর্তব্যকে কোনো দিনই সঠিকভাবে বাড়িওয়ালাদের ওপর প্রয়োগ করছে না। বাড়িওয়ালারা ধনী শ্রেণীর তাই আইনতো সর্বদা ধনীদেরই লালন করে থাকে। গরিব-দুঃখী না খেয়ে মরলে তাদের কী এমন আসে যায়। সরকার যারা পরিচালনা করেন তারাওতো বাড়িওয়ালা (ধনী, মন্ত্রী, সাংসদ, ব্যবসায়ী-হয়তো ভাড়া দিয়ে থাকতে হয় না)। কোনো কোনো বাড়ির মালিক বছরে দু-তিনবারও বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকেন। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য অধিকতর সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার সর্বশেষ ১৯৯১ সালে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেন যা ১৯৯১ সালের ৩নং আইন নামে পরিচিত। এ আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে-'এ আইনের বিধান সাপেক্ষে, কোনো বাড়ির ভাড়া মানসম্মত ভাড়ার অধিক বৃদ্ধি করা হলে ওই অধিক ভাড়া, কোনো চুক্তিতে ভিন্নরূপ কিছু থাকা সত্ত্বেও আদায়যোগ্য হবে না।' এ ব্যাপারে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের নিকট আবেদন করা যাবে। এসব আইন শুধু বই-পুস্তকে সীমাবদ্ধ। বাড়িওয়ালার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে ভাড়াটিয়া কী টিকতে পারবেন? আইন না জানায় অনেক বাড়িওয়ালা মনে করেন ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া চুক্তি না করলে খুব সহজে যে কোনো কারণ দেখিয়ে উচ্ছেদ করা যাবে কিন্তু এ ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হয়ে থাকে। ভাড়াটিয়ারা হয়তো বাড়তি ঝামেলার কারণে অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না তাই বাড়িওয়ালারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। বাড়িওয়ালা ট্যাক্স ফাঁকি দিতে রশিদ দেন না এ ব্যাপারে ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে নালিশ করতে পারেন। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন '৯১ এর ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক, বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে, কোনো বাড়ির মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করবেন এবং এমনভাবে তা নির্ধারিত করবেন যেন তার বার্ষিক পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থিরকৃত ওই বাড়ির বাজার মূল্যের ১৫ ভাগের সমান হয় (অবাস্তব আইন)। আমাদের মনে হয় ১৫ ধারার এ বিধি অবিলম্বে পরিবর্তন করা উচিত। কারণ রাজধানী ঢাকা শহরের একটি ছোট ফ্ল্যাটের মূল্য এখন ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। সে ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের ১৫ ভাগ ভাড়া নিধারণ করা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? আর বাড়ির বাজার মূল্যে ১৫ ভাগ অর্থের পরিমাণ অতি অস্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হতে বাধ্য। জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চমহলের আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়াদের বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা অতি জরুরি।
সাধারণ নিয়ম হলো যে কোনো বাড়ি ভাড়া দেয়ার সময় অবশ্যই ২৫০ টাকার স্ট্যাম্পে একটা পরস্পরের (মালিক-ভাড়াটিয়া) সই সংবলিত চুক্তিপত্র হবে। এ চুক্তিপত্র কমপক্ষে তিন বছরের জন্য কার্যকর থাকবে (তিন বছর পর পর নবায়নযোগ্য)। বাড়ি ছাড়তে হলে বাড়িওয়ালাকে গ্রহণযোগ্য উপযুক্ত কারণ দর্শায়ে নূ্যনতম দুই মাসের সময় দিতে হবে। বাড়িওয়ালা চুক্তি অনুযায়ী তিন বছর বা নূ্যনতম দুই বছর পর মূল ভাড়ার (প্রথম ভাড়া নেয়ার সময় সাব্যস্ত ভাড়া) সর্বোচ্চ দশভাগের বেশি বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারবেন না। উল্লেখ্য, ভাড়াটিয়ার থেকে বাড়িওয়ালার দায়িত্ব কর্তব্য বেশি কারণ সরকার ইচ্ছা করলে (প্রচলিত নিয়মানুযায়ী) যে কোনো সময় বাড়ির ভাড়া এবং অগ্রিম গ্রহণ সম্পর্কে বা ভাড়ার রশিদ প্রদান সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে পারেন। ভাড়াটিয়ার নিকট থেকে এক মাসের অধিক ভাড়ার টাকা অগ্রিম হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। ভাড়াটিয়া যদি বাড়ি ভাড়া প্রতি মাসে ঠিকঠাকমতো পরিশোধ করেন তাহলে তাকে বাড়িওয়ালা কোনো প্রকারের দায়ী করতে পারেন না। ভাড়াটিয়া চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করেন বা প্রতি মাসের ভাড়া তৎপরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করেন অথবা ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রকের কাছে জমা করতে থাকেন সে ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাগলা ঘোড়া কেউ থামাতে পারছে না। প্রতিবছর সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বিল বৃদ্ধি করছে সেখানে এত বাড়ি ভাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ বসবাস করবে কীভাবে? সরকারের বা উচ্চ মহলের এ ব্যাপারে কোনো প্রকারের তদারকি নেই। যা উপার্জন করা হয় সব বাড়িভাড়া পরিশোধেই ব্যয় হয়ে যায়। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে। এর ওপর রয়েছে ছেলে-মেয়েদের পড়[ালেখার খরচ। সুতরাং এ পরিস্থিতির নিরসন হওয়া জরুরি।
আমাদের দেশে বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়াদের মাঝে নানা প্রকারের বিরোধ লেগেই থাকে। এ বিরোধ যেন অন্তরের এ বিরোধ যেন বড় কষ্টের। স্বাধীনতার এত বছর পরেও সংখ্যা গরিষ্ঠ জনগণ ভাড়াটিয়া কেন নাগরিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত তা জানার অধিকার আমাদের রয়েছে। শান্তিপ্রিয় মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়। তারা বসবাসের স্থানে কখনো মনমালিন্য সৃষ্টি করতে চান না। বর্তমান বাড়িওয়ালারা যেভাবে সুকৌশলে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে ভাড়াটিয়াদের নির্যাতন করছেন তা আসলেই আমানবিক, প্রকারন্ত্রে বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনও বটে। আমরা দেশের নাগরিক হিসেবে অবিলম্বে এর শান্তিপূর্ণ সমাধান কামনা করছি।
Thursday, 22 March 2012
Thursday, 8 March 2012

শিক্ষাঙ্গনে রক্তপাত
সরকার চেষ্টা করলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারে। সে জন্য প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তন করতে হবে।
মেধা বিকাশের সর্বোচ্চ পীঠস্থান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু দুঃখজনক যে প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে এসে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এসব ন্যক্কারজনক কর্মকা-ের জন্য অসুস্থ ছাত্ররাজনীতিকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ছাত্ররা আধিপত্য বজায় রাখতে অহেতুক সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় যে শিক্ষার্থীদের হাতে বইয়ের বদলে অস্ত্র শোভা পাচ্ছে। যা আমাদের জন্য সত্যিকারের লজ্জার বিষয়। আমরা লক্ষ্য করছি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কারণে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হওয়ার ঘটনা এ অসন্তোষের ধারাবাহিক ঘটনা এবং আমাদের অসুস্থ রাজনীতির ফল বলেই আমরা মনে করি। ছাত্ররা লেখাপড়া ছেড়ে কেন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত হবে_ এ বিষয়টি সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি দেশের মূলধারার রাজনীতির বাইপ্রডাক্ট হলেও একসময় ছাত্ররাজনীতির গৌরব ছিল। আমাদের জাতীয় আন্দোলন-সংগ্রাম ও বিভিন্ন দাবি আদায়ে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু দেশের মূল রাজনীতি নানা কারণে দূষিত ও দুর্বৃত্তায়িত হয়ে পড়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ছাত্ররাজনীতিতে। আর এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। কাজেই মূলধারার রাজনীতি ঠিক না হলে বাইপ্রডাক্ট ঠিক হবে, এমনটি আশা করা বাতুলতা মাত্র। মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যায়, রাজনৈতিক দলের দোহাই দিয়ে ছাত্ররা টেন্ডার-সন্ত্রাস, আবাসিক হল দখল, ভর্তি বাণিজ্য, রাজনৈতিক সন্ত্রাস ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি নিজ দলের ছাত্রদের ওপর তারা চালাচ্ছে অকথ্য নির্যাতন। কখনো খুন করছে নিজ দলের ছাত্রদের। যত দিন যাচ্ছে ততই এ প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- কখনো সমর্থনযোগ্য ঘটনা নয়। আমরা এ কলামের মাধ্যমে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের বারবার বলে আসছি শিক্ষাঙ্গনগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে। কিন্তু সরকার, রাজনৈতিক দল বা কেউই কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
তথ্য অনুযায়ী আধিপত্যের রাজনীতির জের ধরে সংঘর্ষের কারণে গত ২৪ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ জন শিক্ষার্থী খুন হয়েছেন। এসব হত্যাকা-ের পর তদন্ত কমিটিও গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মামলাও করা হয় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু হত্যাকা-ে জড়িতরা শাস্তি পেয়েছে এমন দৃষ্টান্ত নেই। কিন্তু এমনটি কেন ঘটবে? আমরা মনে করি, অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন তার উপযুক্ত শাস্তির বিধান করা দরকার। কোনো ছাত্র 'সন্ত্রাসী' দোষী প্রমাণিত হওয়ার পরও শাস্তি না পেলে সন্ত্রাস দূর হবে না। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের হোতাদের খুঁজে বের করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমরা লক্ষ্য করি রাজনৈতিক দলগুলো অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। কিন্তু বহিষ্কার কোনো সমস্যার সমাধান নয় এটি রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে।
আমরা মনে করি সরকার চেষ্টা করলে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারে। সে জন্য প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তন করতে হবে। 'ছাত্ররাজনীতি' সম্পর্কে আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন দরকার। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং দেশে ছাত্ররাজনীতির সমৃদ্ধ ইতিহাস পুনরুদ্ধার করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। ছাত্রসমাজ থেকে সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন করা সরকারের একটি পবিত্র দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।
Subscribe to:
Posts (Atom)