Flickr

Tuesday, 19 February 2013

সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু

 প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার, শোকের। জন্ম নিলেই মরতে হবে একথা চিরসত্য। কিন্তু অপঘাত বা দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে তা মেনে নেয়া যায় না। অথচ এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। পত্রিকার পাতা খুললে প্রতিদিন আমাদের দেখতে হয় করুণ মৃত্যুর সব খবর। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় দু'টি করুণ মৃত্যুর খবরে আমরা দারুণভাবে ব্যথিত হয়েছি। রাজধানীর মিরপুরে মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হতে গিয়ে স্টাফবাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে সিদ্রাতুল মুনতাহা নামে ৯ বছরের এক শিশু। অপর ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহে। এ ঘটনায় বাসের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে সিএনজির পাঁচ আরোহী নিহত হন। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না এসব দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় পড়ে লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে গত বছর মীরসরাই ট্রাজেডিতে ৪৪ শিক্ষার্থী ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে ফুটপাতের ঘুমন্ত মানুষ কিংবা সরকারের উচ্চপর্যায়ের আমলা কেউই রেহাই পাচ্ছে না। 'একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না' এসব সস্নোগানেও সচেতনতা বৃদ্ধি হচ্ছে না চালকের। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো- আর কতদিন এ করুণ মৃত্যু আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে। এর হাত থেকে পরিত্রাণের কী কোনো পথই নেই?

প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সতর্ক হওয়ার এবং এ থেকে মুক্তি পাওয়ার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ঘটনার পর কয়েকদিন এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়, মানববন্ধন, মিছিল-মিটিং চলে, আবার কিছুদিন পরে আমরা সবাই এসব ঘটনা ভুলে যাই। একজন মানুষের মৃত্যুর কারণে একটি পরিবারকে সারাজীবন এ মৃত্যুর যন্ত্রনা বয়ে বেড়াতে হয়। আর অবহেলা না করে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব মহলের উচিত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া।

 সকালে মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছিল সিদ্রাতুল মুনতাহা। মিরপুর ১৪ নাম্বারে রাস্তা পারাপারের সময় মিল্কভিটা কোম্পানির একটি স্টাফবাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিতা-মাতার সামনে সন্তানের করুণ মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনা পৃথিবীতে আর কি থাকতে পারে। এ ঘটনায় বাসের চালককে আটক করে মিরপুর এলাকার বাসিন্দারা ঘাতক চালকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে। ময়মনসিংহের দুর্ঘটনাটিও ঘটে চালকের বেপরোয়া গতিতে বাস চালানোর কারণে। এ দুটো দুর্ঘটনা প্রমাণ করে, গাড়ি চালকদের কেউ সচেতন ছিল না। ফলে অকালে হারিয়ে গেল শিশু সিদ্রাসহ ছয়টি তরতাজা প্রাণ। সড়ক দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ ও করণীয় বিষয় নিয়ে আমাদের দেশে কম আলোচনা হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গৃহীত পদক্ষেপ তেমন কোনো কাজে আসেনি। সড়ক দুর্ঘটনা সম্পূর্ণ রোধ করা কখনোই সম্ভব নয়, তবে দায়িত্বশীল সব মহলের আন্তরিক উদ্যোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করাও অসম্ভব নয়।

 সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকের অদক্ষতা ও অসচেতনতাকে দায়ী করা হয়। একজন চালকের অবর্তমানে তার সহকারীদের দায়িত্ব দেয়াও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। আবার চালকদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও গাড়ি চালনায় অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। এছাড়া ট্রাফিক আইন না মানা, রাস্তার স্বল্পতা ও অপরিকল্পিত রাস্তা তৈরি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, গাড়ির নিয়মিত পরিচর্যার অভাব, গাড়ি বের করার আগে সতর্কতামূলক পরীক্ষাগুলো না করেই গাড়ি রাস্তায় নামানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনাকে এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রত্যেক মানুষেরই স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা থাকা উচিত। সুতরাং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের বাস্তবসম্মত বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter