Flickr

Sunday, 30 May 2010

সংবাদপত্রকে নসিহত করার পুরনো তরীকা

সংবাদপত্রকে নসিহত করার পুরনো তরীকা
তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ সম্পাদক ও সাংবাদিকদের প্রতি সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে কিছু নসিহত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভিত্তিহীন কোন সংবাদ পরিবেশন করবেন না।' তার মতে, ‘কোন কোন পত্রিকা এমন ভিত্তিহীন খবর পরিবেশন করে, যা দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব।'
তথ্যমন্ত্রী হিসেবে এসব কথা বলা হয়তো তার দাফতরিক কাজেরই অংশ। অতীতের তথ্যমন্ত্রীরাও কম-বেশী সংবাদপত্রকে নসিহত করার ট্রাডিশন এস্তেমাল করেছেন কম-বেশি। আমরা যতোদূর জানি, বর্তমান তথ্যমন্ত্রীর সাংবাদিকতার একটা অতীত ইতিহাস আছে। সেই সুবাদে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবেরও সদস্য। সংগত কারণেই এ ধরনের একজন ব্যক্তির তথ্যমন্ত্রী হওয়ায় পেশাজীবী সাংবাদিকদের স্বস্তি পাবার কথা। বিশেষ করে মিডিয়া বান্ধব একজন তথ্যমন্ত্রী থাকার সুবাদে মিডিয়ার সাথে তথ্যমন্ত্রণালয় তথা সরকারের একটা সুখকর সম্পর্ক তৈরি হবার প্রত্যাশা স্বাভাবিকভাবেই সঞ্চারিত হতে পারে। তবে বর্তমান সরকারের এক বছরের শাসন-সংস্কৃতি, বিশেষ করে তথ্যমন্ত্রণালয়ের দিক থেকে সংবাদপত্রের প্রতি একটা সার্বজনীন গণতান্ত্রিক ও সুষম আচরণ প্রত্যাশিত ছিল, তার বদলে নগ্ন দলবাজির বিভেদাত্মক নীতির প্রতিফলন দেখা গেছে। এটা শুধু ভিন্নমতের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ প্রদর্শনেই নয়, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ রাষ্ট্র-সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানাদিতে বিরোধীদল বা ভিন্নমতের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ না জানানোর অশোভন আচরণেও প্রতিফলিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের সাথে যতোগুলো মতবিনিময় সভা হয়েছে, তাতে বিরোধী মতের সম্পাদকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যদিও এ সরকারের আমলে অতীতের ধারাবাহিকতায় ‘তথ্য অধিকার আইন' পাস হয়েছে। এছাড়াও গণতান্ত্রিক সমাজে জনগণের নির্বাচিত সরকারের নীতি-নির্ধারকরা সাংবাদিকদের তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করতে পারেন না। ভিন্ন মতের মিডিয়ায় সরকারের কোন ক্রোড়পত্র প্রদান করা হয় না। একইভাবে সরকারি বলয়ের বাইরের মিডিয়াগুলোকে সরকারি বিজ্ঞাপন-সংকোচন নীতির ফাঁদে ফেলে এসব মিডিয়ার আর্থিক বুনিয়াদ ধ্বংস করা হচ্ছে। ভিন্নমতের মিডিয়ার প্রকাশিত রিপোর্টের বস্তুনিষ্ঠতা ও সত্যাসত্য যাচাইয়ের আগেই সরকার তার নির্বাহী ক্ষমতার দাপটে একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুই ডজন মামলা দায়ের করার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। মানহানির মামলায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সমনজারী না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সরকারের বশংবদ না হবার কারণে এ আইন তাদের বেলায় প্রযোজ্য না করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে সরকার।

তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার অভিভাবকত্ব কতটা পালন করছেন, সে প্রশ্ন উহ্য রেখেও আমরা বলতে চাই, তথ্যমন্ত্রী কথায় ও কাজে সাংবাদিকদের মাঝেও একটা ভেদরেখা তৈরিতে বেশ সফল হয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের একজন শপথগ্রহণকারী মন্ত্রী যখন দলীয় রাজনৈতিক ক্যাডারের ভূমিকা নিতে উৎসাহী হয়ে উঠেন, তখন তার কাছে কেউ সংবাদিকতার বস্তুনিষ্ঠতার নসিহত শুনতে চাইবে না। অতীতেও যে সব রাজনীতিক সাংবাদিকতার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় আলোকিত করতে এসেছিলেন, তাদের প্রায় সবাই ফ্লপ করেছেন। এ ধরনের তথ্যমন্ত্রীদের কারণে বরং সংবাদপত্রের সাথে সরকারের দূরত্ব বেশি তৈরি হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বিভক্তি ও বিভেদ নিয়েও কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেছেন, সাংবাদিকদের মধ্যে এত বিভক্তি সাংবাদিক সমাজের জন্য ক্ষতিকারক। তিনি সাংবাদিক সমাজে বিদ্যমান সকল ভেদাভেদ দূর করার শপথ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। এই ইতিবাচক অবস্থানকে আমরা সাধুবাদ জানিয়েও বলতে চাই যে, মৌলিক ইস্যুতে সাংবাদিকরা বিভক্ত নন। সাংবাদিকদের মধ্যে যতোটুকু বিভক্তি দৃশ্যমান তার পেছনে রাজনীতির বিভক্তিই দায়ী। বিগত সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে আসলে সাংবাদিকদের একাংশ পেশাগত অবস্থান ছেড়ে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কালোব্যাজ ধারণ করে প্রতিবাদ জানানোর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্রপাত করেন। এখান থেকেই সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ ইউনিয়নের বিভক্তির সূত্রপাত এবং ঐ কালোব্যাজধারী সাংবাদিক নেতাকে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার বিদেশে প্রেস মিনিস্টার করে পাঠিয়েছিলেন। এর আগে ‘দৈনিক মিল্লাত'-- পত্রিকার প্রকাশনার ওপর স্বৈরশাসক এরশাদ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ ইউনিয়ন সারাদেশে সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এবং দেশব্যাপী সকল সংবাদপত্র এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করলেও আওয়ামী লীগের তদানীন্তন দলীয় ‘মুখপত্র' বাংলার বাণী ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত নাকচ করে তাদের প্রকাশনা অব্যাহত রাখে। ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত ও গঠনতন্ত্র লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে কিছু সাংবাদিক রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ইউনিয়নের বিভক্তিকে অনিবার্য করে। এসব সাংবাদিকরা বাকশাল সরকারের সংবাদপত্র নিধনে ১৬ জুনকে ‘কালো দিবস' হিসেবেও পালন করেন না। সুতরাং সাংবাদিকতার পেশাদারীত্বের চেয়ে যারা রাজনৈতিক অবস্থানকে বড়ো করে দেখেন, তাদের কাছে বিভেদই কাম্য। তবে সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ড আন্দোলন ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে সাংবাদিকদের বৃহত্তর ঐক্যও দৃশ্যমান। সাংবাদিকদের রাজনৈতিক ভাড়াটে বানানোর চেষ্টা না করলে সাংবাদিকদের বিভেদ সহজেই দূর হতে পারে।

তথ্যমন্ত্রী শক্তিশালী গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত করতে এবং সমাজের সর্বস্তরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি ভারসাম্য সমাজ গড়তে গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব কথার বস্তুনিষ্ঠতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রক সরকার যখন বিরোধী দল নির্মূল করে একটা ভারসাম্যহীন ও নৈরাজ্যকর সমাজ তৈরি করে ফেলেছে, সেখানে মিডিয়া কোনভাবেই সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার একক দায় বহন করতে পারে না। সরকারের স্বচ্ছতা থাকলে প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের জন্য সাংবাদিককে হত্যার চেষ্টা করা এবং সম্পাদক ও রিপোর্টারের বিরুদ্ধে দুই ডজন মামলা হতে পারে না। এসব মামলা লড়তে এটর্নী জেনারেল অফিসে নগ্নভাবে লিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের একটা নমুনা প্রদর্শন করেছেন। কোন রিপোর্ট তথ্যনিষ্ঠ না হলে বা ভিত্তিহীন হলে তার প্রতিবাদ ছাপার পরও সাংবাদিকের ওপর শারীরিক আঘাত হানা এবং সম্পাদক-প্রকাশক-রিপোর্টারের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সিরিজ মামলা করা হলে বুঝতে হবে প্রকাশিত রিপোর্টের সত্যতা আছে। যা প্রকাশিত হোক, অন্যপক্ষ তা চায় না। এ অবস্থায় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা কে করবে? আলোচ্য বিতর্কিত রিপোর্টের বিষয়বস্তু নিয়ে সরকারের তদন্তের ফলাফল আজ পর্যন্ত মিডিয়াকে জানানো হয়নি।
এদিকে একটি সংসদীয় কমিটি সরকারের কাছে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে নয়া নিবর্তনমূলক আইন-বিধি প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন। এ থেকে মিডিয়ার স্বাধীনতার প্রতি সরকারের মনোভাবের কিছু নমুনা পাওয়া যায়। উদ্দেশ্যমূলক ও বানোয়াট রিপোর্ট কখনও পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা পায় না। সুতরাং মিডিয়া তার পাঠক-গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখা ও নীতিগত কারণেই বস্তুনিষ্ঠতা অনুসরণ করবে। যারা এটা করতে ব্যর্থ হবে, তারা হারিয়ে যাবে। সুতরাং সরকারের মন্ত্রীদের নসিহত ছাড়াই মিডিয়া সতর্ক ও বস্তুনিষ্ঠ- হতে বাধ্য। তবে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পথে সরকারকে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়। এটা সাংবাদিক ও গণতান্ত্রিক সমাজের অর্জন।

Wednesday, 12 May 2010

পোশাক খাতের অস্থিরতা প্রসঙ্গ

পোশাক খাতের অস্থিরতা প্রসঙ্গ
প্রধানমন্ত্রী কোন রাখ-ঢাক না করেই বলেছেন, ‘পোশাক খাতে সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে রয়েছে এই খাতেরই তৃতীয় পক্ষের হাত। ওই ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে আমি ইতোমধ্যেই জেনেছি।' রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সম্প্রতি ‘মে দিবসের' আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গুরুতর অভিযোগটি উত্থাপন করেছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অভিযোগটি তুলেছেন, তাতে নিশ্চয়ই উপযুক্ত ও প্রামাণ্য তথ্যসূত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই খোলামেলা একটি স্পর্শকাতর ইস্যু উত্থাপন করেছেন। তবে এই সাথে আরও একটি প্রশ্ন আসে। তা হচ্ছে, কারা পোশাক শিল্পে নাশকতা ও অস্থিরতার পেছনে সক্রিয় রয়েছে, তাদের সম্পর্কে সরকারের কাছে যদি উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ থাকে, তাহলে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী একশ্রেণীর পোশাক শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুললেন? প্রধানমন্ত্রীর এই গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়বে এবং সরকারের সাথে তাদের দূরত্ব বৃদ্ধি পাবারও সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের সূত্র ধরে আরও বলেছেন, ‘তৃতীয় পক্ষটি' তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে কঠোর পরিশ্রম করা ঐসব পোশাক শ্রমিককে ব্যবহার করছে। আর্থিক সুবিধা পাবার কথা বলে তাদের উস্কানি দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আমি ঐ কায়েমী স্বার্থবাদীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কয়েকজনের নাম ইতোমধ্যেই তাঁর হাতে এসেছে। সব তথ্য পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঐ ব্যক্তিদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পে ভাংচুরের ঘটনায় মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শ্রমিকরা লাভবান হয় না। তৃতীয় পক্ষ লাভবান হলেও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর এই একতরফা অভিযোগের ব্যাপারে পোশাক শিল্প মালিক সমিতির কোন প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে নাশকতা, নৈরাজ্য ও অস্থিরতা যখন গোটা পোশাক শিল্প খাতকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিতে শুরু করেছে, তখন সরকার প্রধানের কণ্ঠে এই শিল্পে লুক্কায়িত ‘তৃতীয় পক্ষকে' স্কেপগোট বানানোর যে অশুভ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা এই শিল্পের ঐক্য ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। অথচ কোন শিল্প মালিকই শিল্পের নিরাপত্তা হানিকর কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারে না। কেননা পাগলেও নিজের পায়ে কুড়াল মেরে সর্বনাশ ডেকে আনবে না। প্রধানমন্ত্রী যদি গোয়েন্দা সূত্রে সত্যি কোন তথ্য পেয়ে থাকেন, তবে সে সব তথ্যও যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করা দরকার। কেননা দলীয়করণের বিভ্রান্ত এবং দুর্নীতির পংকে নিমজ্জিত প্রশাসন ও সরকারের সংস্থাগুলোর অধিকাংশ কর্মকর্তাই নিজেদেগর মতলবে সরকারকে বিভ্রান্তমূলক ও মনগড়া তথ্য দিয়ে থাকে বলে ভুরিভুরি প্রমাণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগটির ধরণ এবং তার ইংগিত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তিনি পোশাক শিল্পের অস্থিরতার পেছনে বিরোধী দলের হাত থাকার কথা বলতে চাইছেন। অথচ বর্তমানে যারা বিরোধী দলীয় অবস্থানে, তারা যখন সরকারে ছিল, তখনও পোশাক শিল্পে মোটাদাগে ভাংচুর, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ঘটেছে। এসব নাশকতা ও নৈরাজ্যের পেছনে পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত মালিক-শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট নিজস্ব সমস্যার চেয়ে ঠুন্কো অজুহাতে নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনাই বেশি দেখা গেছে। পোশাক শিল্পে অস্থিরতা ও নাশকতা সৃষ্টির ওপর এ পর্যন্ত মিডিয়া, শ্রমিক-মালিকদের সংগঠনসমূহ এবং বিভিন্ন গবেষণা সংস্থাসমূহ যেসব তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের রফতানিমুখি তৈরি পোশাক শিল্পের বিশ্ববাজার দখলে নেবার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের কয়েকটি প্রতিদ্বনদ্বী দেশ তাদের এজেন্ট প্রোভোকিটিয়ারদের মাধ্যমে নাশকতা নৈরাজ্য সৃষ্টির পেছনে মদদ দিয়ে থাকে। কিছু এনজিও নামধারী মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশেষ কয়েকটি দূতাবাস ও পোশাক শিল্পে অস্থিরতায় ইন্ধন দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। রূঢ় হলেও সত্যি যে, আমাদের রফতানিমুখি পোশাক শিল্পের প্রধান প্রতিদ্বনদ্বী হচ্ছে প্রতিবেশী ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে নেতিবাচক লবী করা এবং মিডিয়া, মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিও'র মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর পেছনে প্রতিবেশী দেশটির শক্তিশালী লবী সক্রিয় বলে পোশাক মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করা হলেও রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে এর কোন কার্যকর প্রতিকার করা সম্ভব হয়নি। পোশাক শিল্পের বিরাজমান শান্তি ও স্থিতি রক্ষা, মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক অবকাঠামোগত সহায়তায় সরকারের ভূমিকা হতাশাজনক। চট্টগ্রাম বন্দরের বিরাজমান ব্যবহারিক ক্ষমতা ও সুবিধাদি যেখানে জাতীয় রফতানি চাহিদা মিটাতে পারছে না, সেখানে সরকার ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতে যাচ্ছে। এর ফলে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প রফতানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বায়ারদের কাছে পণ্য পাঠাতে বিলম্ব ও বিঘ্ন ঘটলে বায়াররা বাংলাদেশকে ত্যাগ করে বিকল্প সূত্র থেকে তৈরি পোশাক নেবে। ভারত এই সুযোগটাই সৃষ্টি করতে চাইছে। পোশাক শিল্পে শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা সুরক্ষায় মালিক পক্ষের দাবি শিল্প পুলিশ এখনও প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। পোশাক শিল্প মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার দাবি জানানো হলে অর্থমন্ত্রী তা রূঢ়ভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। এদিকে এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, বিদ্যুতের লোডশেডিং-এর কারণে পোশাক শিল্প মালিকরা জেনারেটর চালিয়ে কারখানার উৎপাদন সচল রাখায় প্রতি মাসে বাড়তি দু'হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছেন। সংকটে জর্জরিত পোশাক শিল্পের সমস্যা চিহ্নিত করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা না করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্লেইম গেম চালু করা এবং অদৃশ্য শত্রুর ওপর দায় চাপানোর এই অশুভ প্রবণতা বাংলাদেশের বিকাশমান তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিদ্বনদ্বী মহলকেই আশ্বস্ত করবে। সরকার সব ব্যাপারেই রাজনীতির সমীকরণ ও বিরোধী দলকে স্কেপগোট বানিয়ে সমস্যাকে আরও জটিল করবে। গার্মেন্টস শিল্পকে শিল্প হিসেবে না দেখে এর মালিক পক্ষের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে মূল্যায়ন না করে অর্থনীতি-বাণিজ্যকে রাজনীতিকীকরণ করতে শুরু করেছে। এই অশুভ প্রবণতা পরিহার করে সরকারের উচিত হবে মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয় করে সংকট নিরসনে আন্তরিকভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter