Flickr

Wednesday, 12 May 2010

পোশাক খাতের অস্থিরতা প্রসঙ্গ

Posted by   on

পোশাক খাতের অস্থিরতা প্রসঙ্গ
প্রধানমন্ত্রী কোন রাখ-ঢাক না করেই বলেছেন, ‘পোশাক খাতে সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে রয়েছে এই খাতেরই তৃতীয় পক্ষের হাত। ওই ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে আমি ইতোমধ্যেই জেনেছি।' রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সম্প্রতি ‘মে দিবসের' আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গুরুতর অভিযোগটি উত্থাপন করেছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অভিযোগটি তুলেছেন, তাতে নিশ্চয়ই উপযুক্ত ও প্রামাণ্য তথ্যসূত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই খোলামেলা একটি স্পর্শকাতর ইস্যু উত্থাপন করেছেন। তবে এই সাথে আরও একটি প্রশ্ন আসে। তা হচ্ছে, কারা পোশাক শিল্পে নাশকতা ও অস্থিরতার পেছনে সক্রিয় রয়েছে, তাদের সম্পর্কে সরকারের কাছে যদি উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ থাকে, তাহলে কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী একশ্রেণীর পোশাক শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুললেন? প্রধানমন্ত্রীর এই গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়বে এবং সরকারের সাথে তাদের দূরত্ব বৃদ্ধি পাবারও সুযোগ তৈরি হবে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের সূত্র ধরে আরও বলেছেন, ‘তৃতীয় পক্ষটি' তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে কঠোর পরিশ্রম করা ঐসব পোশাক শ্রমিককে ব্যবহার করছে। আর্থিক সুবিধা পাবার কথা বলে তাদের উস্কানি দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আমি ঐ কায়েমী স্বার্থবাদীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছি। কয়েকজনের নাম ইতোমধ্যেই তাঁর হাতে এসেছে। সব তথ্য পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঐ ব্যক্তিদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছেন। তিনি বলেন, পোশাক শিল্পে ভাংচুরের ঘটনায় মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শ্রমিকরা লাভবান হয় না। তৃতীয় পক্ষ লাভবান হলেও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর এই একতরফা অভিযোগের ব্যাপারে পোশাক শিল্প মালিক সমিতির কোন প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। তবে নাশকতা, নৈরাজ্য ও অস্থিরতা যখন গোটা পোশাক শিল্প খাতকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিতে শুরু করেছে, তখন সরকার প্রধানের কণ্ঠে এই শিল্পে লুক্কায়িত ‘তৃতীয় পক্ষকে' স্কেপগোট বানানোর যে অশুভ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা এই শিল্পের ঐক্য ও স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। অথচ কোন শিল্প মালিকই শিল্পের নিরাপত্তা হানিকর কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারে না। কেননা পাগলেও নিজের পায়ে কুড়াল মেরে সর্বনাশ ডেকে আনবে না। প্রধানমন্ত্রী যদি গোয়েন্দা সূত্রে সত্যি কোন তথ্য পেয়ে থাকেন, তবে সে সব তথ্যও যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করা দরকার। কেননা দলীয়করণের বিভ্রান্ত এবং দুর্নীতির পংকে নিমজ্জিত প্রশাসন ও সরকারের সংস্থাগুলোর অধিকাংশ কর্মকর্তাই নিজেদেগর মতলবে সরকারকে বিভ্রান্তমূলক ও মনগড়া তথ্য দিয়ে থাকে বলে ভুরিভুরি প্রমাণ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগটির ধরণ এবং তার ইংগিত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, তিনি পোশাক শিল্পের অস্থিরতার পেছনে বিরোধী দলের হাত থাকার কথা বলতে চাইছেন। অথচ বর্তমানে যারা বিরোধী দলীয় অবস্থানে, তারা যখন সরকারে ছিল, তখনও পোশাক শিল্পে মোটাদাগে ভাংচুর, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ঘটেছে। এসব নাশকতা ও নৈরাজ্যের পেছনে পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত মালিক-শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট নিজস্ব সমস্যার চেয়ে ঠুন্কো অজুহাতে নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনাই বেশি দেখা গেছে। পোশাক শিল্পে অস্থিরতা ও নাশকতা সৃষ্টির ওপর এ পর্যন্ত মিডিয়া, শ্রমিক-মালিকদের সংগঠনসমূহ এবং বিভিন্ন গবেষণা সংস্থাসমূহ যেসব তদন্ত কার্যক্রম চালিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের রফতানিমুখি তৈরি পোশাক শিল্পের বিশ্ববাজার দখলে নেবার লক্ষ্যে এ অঞ্চলের কয়েকটি প্রতিদ্বনদ্বী দেশ তাদের এজেন্ট প্রোভোকিটিয়ারদের মাধ্যমে নাশকতা নৈরাজ্য সৃষ্টির পেছনে মদদ দিয়ে থাকে। কিছু এনজিও নামধারী মানবাধিকার সংগঠন এবং বিশেষ কয়েকটি দূতাবাস ও পোশাক শিল্পে অস্থিরতায় ইন্ধন দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। রূঢ় হলেও সত্যি যে, আমাদের রফতানিমুখি পোশাক শিল্পের প্রধান প্রতিদ্বনদ্বী হচ্ছে প্রতিবেশী ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে নেতিবাচক লবী করা এবং মিডিয়া, মানবাধিকার সংগঠন ও এনজিও'র মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর পেছনে প্রতিবেশী দেশটির শক্তিশালী লবী সক্রিয় বলে পোশাক মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করা হলেও রাষ্ট্র ও সরকারের পক্ষ থেকে এর কোন কার্যকর প্রতিকার করা সম্ভব হয়নি। পোশাক শিল্পের বিরাজমান শান্তি ও স্থিতি রক্ষা, মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক অবকাঠামোগত সহায়তায় সরকারের ভূমিকা হতাশাজনক। চট্টগ্রাম বন্দরের বিরাজমান ব্যবহারিক ক্ষমতা ও সুবিধাদি যেখানে জাতীয় রফতানি চাহিদা মিটাতে পারছে না, সেখানে সরকার ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিতে যাচ্ছে। এর ফলে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প রফতানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বায়ারদের কাছে পণ্য পাঠাতে বিলম্ব ও বিঘ্ন ঘটলে বায়াররা বাংলাদেশকে ত্যাগ করে বিকল্প সূত্র থেকে তৈরি পোশাক নেবে। ভারত এই সুযোগটাই সৃষ্টি করতে চাইছে। পোশাক শিল্পে শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা সুরক্ষায় মালিক পক্ষের দাবি শিল্প পুলিশ এখনও প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। পোশাক শিল্প মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার দাবি জানানো হলে অর্থমন্ত্রী তা রূঢ়ভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। এদিকে এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, বিদ্যুতের লোডশেডিং-এর কারণে পোশাক শিল্প মালিকরা জেনারেটর চালিয়ে কারখানার উৎপাদন সচল রাখায় প্রতি মাসে বাড়তি দু'হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছেন। সংকটে জর্জরিত পোশাক শিল্পের সমস্যা চিহ্নিত করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা না করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ব্লেইম গেম চালু করা এবং অদৃশ্য শত্রুর ওপর দায় চাপানোর এই অশুভ প্রবণতা বাংলাদেশের বিকাশমান তৈরি পোশাক শিল্পের প্রতিদ্বনদ্বী মহলকেই আশ্বস্ত করবে। সরকার সব ব্যাপারেই রাজনীতির সমীকরণ ও বিরোধী দলকে স্কেপগোট বানিয়ে সমস্যাকে আরও জটিল করবে। গার্মেন্টস শিল্পকে শিল্প হিসেবে না দেখে এর মালিক পক্ষের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে মূল্যায়ন না করে অর্থনীতি-বাণিজ্যকে রাজনীতিকীকরণ করতে শুরু করেছে। এই অশুভ প্রবণতা পরিহার করে সরকারের উচিত হবে মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয় করে সংকট নিরসনে আন্তরিকভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter