Flickr

Sunday, 30 December 2012

টাকার বিনিময়ে খুন

এ ধরনের খুনের ঘটনা দেশের সামাজিক অস্থিরতারও একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে বলে আমাদের ধারণা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় দেশে অপরাধমূলক কর্মকা-ের বৃদ্ধি ঘটছে।

সাত হাজার টাকার বিনিময়ে সিলেটে এক রাজমিস্ত্রিকে খুন করেছে ভাড়াটে খুনিচক্র। এ খুনের ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক রোম্মান নামের এক ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে ৪ জন মিলে এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মিডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীসহ সারা দেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভাড়াটে খুনিরা। তারা গুলি করে বা ধারাল অস্ত্রের সাহায্যে হত্যার পর লাশ যেখানে-সেখানে ফেলে রাখছে। শুধু তা-ই নয়, লাশ টুকরা টুকরা করে ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। গত ২ জুন গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে মায়ের প্রেমিককে টাকার বিনিময়ে হত্যা করায় এক প্রবাসী ছেলে। এ খুনের ঘটনা তখন দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এ হত্যাকা-ের মামলায় গ্রেপ্তার দুই যুবক টাকার বিনিময়ে হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করেন। এ ধরনের খুনের ঘটনা বৃদ্ধি সামাজিক অস্থিরতারই লক্ষণ। পাশাপাশি মানুষ যে ক্রমেই হৃদয়হীন, যন্ত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে তারও প্রমাণ মেলে। নানা সমস্যা-সঙ্কটের মধ্যে এ ধরনের হত্যাকা-ে শুধু দেশের মানুষই আতঙ্কিত নয়, ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকেও।

 চলতি বছরের প্রথমদিকে সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকা-, চিকিৎসক নিতাই হত্যাকা-সহ নিজগৃহে যেসব খুনের ঘটনা ঘটে তার সঙ্গে ভাড়াটে খুনিরা সংশ্লিষ্ট বলে পুলিশ ধারণা করেছিল। এছাড়া গত জুন মাসে সারা দেশে এ ধরনের হত্যাকা- বৃদ্ধি পেলে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যদের ভাড়াটে খুনিদের গ্রেপ্তারে আভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে। কিন্তু বাস্তবতা, এখনো ভাড়াটে খুনিদের হত্যাকা- বন্ধ হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব ভাড়াটে খুনির হাতে নির্মম খুনের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ছাত্র ও নারী। আবার অনেকের পরিচয় দীর্ঘদিনেও মেলেনি। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে উঠে এসেছে, ভাড়াটে খুনিরা নিম্ন ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর এবং বেশিরভাগই মাদকাসক্ত হওয়ায় তারা খুন করতে দ্বিধা করে না। রাজনৈতিক বৈরিতা, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক কলহ, নারীঘটিত বিষয়, মাদক ও এলাকার আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসায়িক শত্রুতা ছায়াও বিভিন্ন কারণে এসব ভাড়াটে খুনিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। হত্যাকা-ের প্রকারভেদে নূ্যনতম এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকার চুক্তিতে খুনিরা তাদের কাজ করে থাকে। সন্দেহভাজন ভাড়াটে খুনিদের ওপর গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারি থাকলেও এসব সন্ত্রাসী নানা কৌশল অবলম্বন করে একের পর এক হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। আর বিনষ্ট হচ্ছে সামাজিক পরিবেশ।
দেশে যে হারে খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক, আমরা ক্রমেই এক অস্থিতিশীল পরিবেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অথচ একটি গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে এমনটি কারো কাম্য হতে পারে। এ ধরনের খুনের ঘটনা দেশের সামাজিক অস্থিরতারও একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে বলে আমাদের ধারণা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় দেশে অপরাধমূলক কর্মকা-ের বৃদ্ধি ঘটছে। আইনি দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো অপরাধমূলক কাজে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ জন্য আইনি ফাঁকফোকর ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সমভাবে দায়ী। দেশে নেতিবাচক কর্মকা- বৃদ্ধি পেলে সরকারকে দোষারোপ করা হবে এটিই স্বাভাবিক। ফলে এসব ব্যাপারে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভাড়াটে খুনিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া যারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের শান্তি বিনষ্ট করতে উদ্যত তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। হত্যাকা- রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো সক্রিয় হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

Thursday, 27 December 2012

সংখ্যালঘু পরিবারের ভিটেমাটি রক্ষা করুন

সংখ্যালঘু পরিবারের ভিটেমাটি রক্ষা করুন
 
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার ৫নং নীলগাছ ইউনিয়নের পাখীমারা গ্রামের হতদরিদ্র মাখন লাল বিশ্বাস ওরফে মাখন লাল বৈরাগীর ভিটেবাড়ি ও গাছপালা দখল করেছে প্রতিবেশী প্রভাবশালী একটি মহল। মাখন লাল এখন ভিটেমাটি রক্ষায় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানালে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে এখন মাখন লালের বাড়িঘর দখল ও গাছপালা কেটে নেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তারা দীর্ঘদিন থেকেই পরিবারটি উচ্ছেদ করে ভিটেমাটি দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। একের পর এক হয়রানি-নির্যাতন করে যাচ্ছে এই সংখ্যালঘু পরিবারটির ওপর। পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না। নতুনভাবে এই পরিবারটিকে ভিটেমাটি থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মাখন লালের পরিবারকে হত্যা করে লাশ গুম করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিবারটি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নির্যাতন সত্ত্বেও ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরে পরিবারটি পড়ে আছে। হতদরিদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি পরিবারের ওপর এ ধরনের নির্যাতন ও ভিটেমাটি দখল করার চেষ্টা খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক। এই পরিবারটিকে রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা

 

Thursday, 13 December 2012

কোটা


সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে দাবি-দাওয়া, আবেদন-নিবেদন করা গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে তা আদায়ে জোর খাটানো বা হুমকি-ধমকি দেওয়া কেবল অগণতান্ত্রিক পন্থাই নয়, রীতিমতো অপরাধ। সম্প্রতি রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে শতভাগ 'বোন কোটা' আদায়ের জন্য হুমকি-ধমকি দিয়েছে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা 'অভিভাবক ফোরাম'। এ ব্যাপারে সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
'বোন কোটা'র অর্থ হচ্ছে, কোনো পরিবারের এক মেয়ে স্কুলের ছাত্রী হলে তার অন্য বোনকেও ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। এ নিয়ম আগে থেকেই ভিকারুননিসা নূন স্কুলে রয়েছে। গতবার বোন কোটা ১ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করা হয়। আর এবার বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০ শতাংশ। অভিভাবক ফোরামের দাবি_ বোন কোটা শতভাগ করতে হবে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের বক্তব্য, তাদের দাবি অনুযায়ী শতভাগ বোন কোটায় যদি ভর্তি করতে হয়, তবে প্রথম শ্রেণীর এক হাজার ৪৪০টি আসনের মধ্যে বোন কোটায় ৭৮১ জনকে ভর্তি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অন্যরা বঞ্চিত হবে। কিন্তু বোন কোটার দাবি জানিয়ে 'অভিভাবক ফোরাম' অধ্যক্ষকে হুমকি দিয়েছে। অধ্যক্ষ শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে রমনা থানায় জিডি করেছেন। পরিস্থিতিও সামাল দিয়েছেন।
ভর্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলের চাপ কেবল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজেই নয়, সব নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর রয়েছে। চালু রয়েছে বিভিন্ন ন্যায্য ও অন্যায্য কোটাপ্রথা।
এ প্রসঙ্গে বলা আবশ্যক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বা চাকরির ক্ষেত্রে অবারিত প্রতিযোগিতাই উৎকৃষ্ট মডেল। নারী, আদিবাসীসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য বিশেষ সুযোগের যৌক্তিকতা অগ্রাহ্য করা যায় না। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখি? অধিকারবঞ্চিত নয়, বরং অধিকারভোগী অগ্রসর অংশ নিয়ম করে কিংবা নিয়মবহির্ভূতভাবে অধিকতর সুযোগ গ্রহণ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ সুযোগ-সুবিধাকে বৈধতা দিতে অন্যায্য ও অযৌক্তিক কোটাপ্রথাও চালু করা হয়েছে। নতুন করে চালুর উদ্যোগও রয়েছে। ইতিপূর্বে রাজধানীর স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে সাংসদদের জন্য কোটা প্রবর্তনের চেষ্টা হয়েছে, নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে সেটি কার্যকর হতে পারেনি। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এমপি-মন্ত্রী-সরকারি কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালীদের অলিখিত কোটা রয়েছে। আইডিয়াল ও ভিকারুননিসায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শতকরা ২ ভাগ কোটা রয়েছে। এটি কোন যুক্তিতে সমর্থনযোগ্য?
অন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও ওই দুই নামি স্কুলে সন্তান ভর্তি করার প্রবল আগ্রহ আছে। আগ্রহ আছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষেরও। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাকরির সুবাদে সে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যদি স্কুলে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয় আর এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে যদি অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুযোগ গ্রহণ করতে থাকেন, তবে গণতন্ত্রের স্থলে এখানে এক ধরনের নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি কায়েম হবে, যা সংবিধান নির্দেশিত সমতাভিত্তিক মানবিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে বড় হুমকি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোটা রয়েছে। যৌক্তিক কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সন্তানদের কোটাপ্রথা বিবেচনা করা যায়; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ক্ষেত্রে তা কেন প্রযোজ্য হবে, এ প্রশ্ন থেকেই যায়।
সবচেয়ে অভিনব মনে হয়েছে, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফ্রি বিদ্যুৎ পাওয়ার বিষয়টি। প্রশ্ন হচ্ছে, উৎপাদিত বিদ্যুতের মালিক কে? জনগণ না বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা? মালিককে দফায় দফায় বর্ধিত বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে, আর তাদের নিয়োজিত কর্মচারীরা নিখরচায় আলোতে ভাসবেন, এ কেমন কথা? ভাবছি, এ নিয়ম সব ক্ষেত্রে চালু হলে কেমন হয়? পেট্রোবাংলার কর্মচারীরা বিনা পয়সায় গ্যাস পাবেন, ওয়াসার কর্মচারীরা বিনা পয়সায় পানি পাবেন, বন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা বিনা পয়সায় কাঠ পাবেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা বিনা পয়সায় চাল-আটা পাবেন, মৎস্য অধিদফতরের কর্মচারীরা বিনা পয়সায় মাছ খাবেন আর জনগণ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে? কী মজার গণতন্ত্র!
চাকরির ক্ষেত্রে কোটাপ্রথাকে আমি অস্বীকার করছি না। আদিবাসী, দলিত, মুক্তিযোদ্ধা ও নারীদের ক্ষেত্রে সঙ্গত কারণেই কোটার যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে তা যেন মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতার দ্বার রুদ্ধ না করে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটার যৌক্তিকতাও অস্বীকার করার জো নেই।
বিসিএস ক্যাডারের ক্ষেত্রে দেখা যায়, শতকরা ৫৫ ভাগ কোটাভিত্তিক আর মেধাভিত্তিক শতকরা ৪৫ ভাগ এবং সরকারি অন্যান্য চাকরিতে কোটাভিত্তিক ৪৫ শতাংশ। বিসিএসের ক্ষেত্রে জেলা কোটা ১০, মহিলা কোটা ১০, আদিবাসী কোটা ৫ এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ ভাগ রাখা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোটার এমন আধিক্য চালু থাকলে প্রশাসনের দক্ষতা কি বাড়িয়ে তোলা সম্ভব? মেধাবী প্রশাসক পেতে কোটার চেয়ে মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগ বাড়ানো উচিত।
বলা প্রয়োজন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকলেও অনেকক্ষেত্রেই তা পূরণ হয় না। এ প্রসঙ্গে আমি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার একটি অভিজ্ঞতার উল্লেখ করতে চাই। ওই এলাকার যুবকরা লন্ডনমুখী হওয়ায় শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোটা শূন্য থেকে যায়। পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা-নোয়াখালী থেকে এসে যুবকরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের সার্টিফিকেট নিয়ে জেলা কোটায় শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি নেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কোটার ক্ষেত্রে ব্যাপার খানিকটা একই রকম।
মুক্তিযোদ্ধাদের বেশিরভাগই গরিব, কারণ ১৯৭১-পূর্ব সময়ে অধিকাংশ ধনী অভিজাত পরিবার পিডিপি-মুসলিম লীগের সমর্থক ছিল। আর মধ্যবিত্ত কৃষকের সন্তানরা স্বাধিকার আন্দোলনে অগ্রণী হয়েছিলেন। একাত্তরের পাক হানাদারদের হামলার মুখে এসব রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্রকর্মী গ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তখন গ্রামের কৃষকের বাড়ি হয়ে ওঠে রাজনৈতিক কর্মীদের আশ্রয়স্থল। অচিরেই কৃষকের গৃহ পরিণত হয় মুক্তিযুদ্ধের দুর্গে। সাহসী কৃষক-ক্ষেতমজুর যুবকরা হালের লাঙল ছেড়ে রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর এসব বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধার মুখে হাসি ফোটেনি, তাদের সুদিনও আসেনি। বরং অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। এই মুক্তিযোদ্ধাদের ক'জনের সন্তানই-বা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়? তাই উচ্চশিক্ষা বঞ্চিত সন্তানের বাবার কাছে বিসিএস ক্যাডার বা সরকারি চাকরিতে কোটার বিশেষ মূল্য নেই। আমার এলাকার অনেক সহযোদ্ধা এসে বলেন, 'ভাই ছেলেটাকে পড়াতে পারিনি। ওর জন্য দারোয়ান বা পিয়নের চাকরির ব্যবস্থা করে দিন।' এটাই বাস্তবতা। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের চাকরির কোটার চেয়ে দরকার ছিল তাদের অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন, যেটি আজ অবধি হলো না। দাবি করা হচ্ছে, তাদের ভাতা দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। অথচ এটি দেশের কর্তাদের একজনের একবেলা চা-নাশতার অর্থও নয়। তাই নাতি-পুতি চাকরি পাবে এমন ঘোষণার চেয়ে তাদের পুনর্বাসনের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা কি দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করা রাষ্ট্রের পক্ষে কঠিন কিছু? যে দেশে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারিতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যায়, সেই দেশের স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের সারথিরা অনাহারে-অর্ধাহারে প্রাণ হারাবে, তা কি মেনে নেওয়া যায়?
এ প্রসঙ্গে আমি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের উক্তি উল্লেখ করতে চাই, 'মুক্তিযোদ্ধাদের কপালে আরও দুঃখ আছে। কিন্তু গৌরবের কথা হলো_ মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন করায় অবদান রেখেছেন, সেটিই তাদের জন্য বড় পাওনা। এই সুযোগ অন্যরা পাননি, বাকি কিছুর জন্য দুঃখ করবেন না।' (১৭ ডিসেম্বর, প্রথম আলো)। আমার মনে হয়, দেশের স্বাধীনতা আনার চেয়ে বড় গৌরবের আর কী হতে পারে? তা সত্ত্বেও রাষ্ট্রের কি কোনো দায় নেই? তবে প্রজন্মান্তরে কোটা ব্যবস্থা কোনো সমাধান নয়। বর্তমানে এমন কোটার টোপ ঝুলিয়ে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কর্তব্যে অবহেলা করা হচ্ছে। আর এই কোটায় লাভবান হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্ষুদ্র অংশ। অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারাও সেই সুযোগ গ্রহণ করছে। এ নিয়ম যদি বংশানুক্রমিকভাবে চালু রাখা হয়, তবে সমাজে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধার স্থানটি প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাই মুক্তিযুদ্ধের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সন্তান পর্যন্তই রাখা যেতে পারে, এর অধিক প্রলম্বিত করার উচিত হবে না।
সমাজের নারী-আদিবাসী-দলিতসহ পিছিয়ে পড়া অংশকে এগিয়ে এনে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে সমতাভিত্তিক ব্যবস্থায় যেতে হবে, সেখানে কোটার আর প্রয়োজন হবে না। তবে আজকের বাস্তবতায় নারী-আদিবাসী-দলিত-মুক্তিযোদ্ধাদের যৌক্তিক কোটা রেখে সকল অযৌক্তিক কোটার বিলোপ খুবই জরুরি। সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য দেওয়া সুযোগে যেন সুবিধাভোগীরা লাভবান না হয়, সেটিই নীতিনির্ধারকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় আনা উচিত।

Monday, 10 December 2012

বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ


চট্টগ্রামবেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ শিক্ষকদের বলা হয় জাতির বিবেক। শিক্ষক সমাজ হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষকই যদি সময়মতো সঠিক বেতন না পান, তখন সঠিক পাঠদান কি সম্ভব? শিক্ষক সমাজ মাথার মণি, তাদের স্কুল ছেড়ে রাজপথে মিছিল করা অশোভন দেখায়। ভারত শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের পর শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়া বন্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার উল্টোটা। এ ছাড়া আমাদের দেশে শিক্ষকতায় সরকারি-বেসরকারি তফাতটা বেশ। সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন দু'জন শিক্ষক। উভয়ই একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কিন্তু এই সরকারি-বেসরকারি অজুহাতে শিক্ষকদের সঙ্গে বেতন-বৈষম্যের বিষয়টি সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। তাই বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করা আবশ্যক।

Sunday, 2 December 2012

মালালার প্রতি ভালোবাসা

মালালার প্রতি ভালোবাসা

পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইকে ৯ অক্টোবর মাথায় গুলি করে তালেবান জঙ্গিরা। সোয়াত উপত্যকায় এই ঘটনার পরই বিদ্যুতের মতো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানের নারী শিক্ষার পক্ষে সোচ্চার কর্মী মালালা। মালালার এ ঘটনায় সবাই তার পক্ষে এগিয়ে এসেছে। ব্রিটেনের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মালালার অবস্থা উন্নতির দিকে। ইতিমধ্যে মালালা দিবস ঘোষণা করেছে। এ উপলক্ষে পাকিস্তান সরকার সেদেশের শিক্ষাবঞ্চিত মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পদক্ষেপও নিয়েছে। দ্রুত সুস্থ হয়ে মালালা নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসুক, নারী শিক্ষা আন্দোলনের কর্মী হিসেবে ভূমিকা রাখুক। মানুষের জন্য কাজ করবে মালালা। তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter