এ ধরনের খুনের ঘটনা দেশের সামাজিক অস্থিরতারও একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে বলে আমাদের ধারণা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় দেশে অপরাধমূলক কর্মকা-ের বৃদ্ধি ঘটছে।
সাত হাজার টাকার বিনিময়ে সিলেটে এক রাজমিস্ত্রিকে খুন করেছে ভাড়াটে খুনিচক্র। এ খুনের ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক রোম্মান নামের এক ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে ৪ জন মিলে এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মিডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীসহ সারা দেশে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভাড়াটে খুনিরা। তারা গুলি করে বা ধারাল অস্ত্রের সাহায্যে হত্যার পর লাশ যেখানে-সেখানে ফেলে রাখছে। শুধু তা-ই নয়, লাশ টুকরা টুকরা করে ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। গত ২ জুন গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে মায়ের প্রেমিককে টাকার বিনিময়ে হত্যা করায় এক প্রবাসী ছেলে। এ খুনের ঘটনা তখন দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এ হত্যাকা-ের মামলায় গ্রেপ্তার দুই যুবক টাকার বিনিময়ে হত্যাকা-ের কথা স্বীকার করেন। এ ধরনের খুনের ঘটনা বৃদ্ধি সামাজিক অস্থিরতারই লক্ষণ। পাশাপাশি মানুষ যে ক্রমেই হৃদয়হীন, যন্ত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে তারও প্রমাণ মেলে। নানা সমস্যা-সঙ্কটের মধ্যে এ ধরনের হত্যাকা-ে শুধু দেশের মানুষই আতঙ্কিত নয়, ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকেও।
চলতি বছরের প্রথমদিকে সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকা-, চিকিৎসক নিতাই হত্যাকা-সহ নিজগৃহে যেসব খুনের ঘটনা ঘটে তার সঙ্গে ভাড়াটে খুনিরা সংশ্লিষ্ট বলে পুলিশ ধারণা করেছিল। এছাড়া গত জুন মাসে সারা দেশে এ ধরনের হত্যাকা- বৃদ্ধি পেলে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যদের ভাড়াটে খুনিদের গ্রেপ্তারে আভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে। কিন্তু বাস্তবতা, এখনো ভাড়াটে খুনিদের হত্যাকা- বন্ধ হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এসব ভাড়াটে খুনির হাতে নির্মম খুনের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ছাত্র ও নারী। আবার অনেকের পরিচয় দীর্ঘদিনেও মেলেনি। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে উঠে এসেছে, ভাড়াটে খুনিরা নিম্ন ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর এবং বেশিরভাগই মাদকাসক্ত হওয়ায় তারা খুন করতে দ্বিধা করে না। রাজনৈতিক বৈরিতা, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক কলহ, নারীঘটিত বিষয়, মাদক ও এলাকার আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসায়িক শত্রুতা ছায়াও বিভিন্ন কারণে এসব ভাড়াটে খুনিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। হত্যাকা-ের প্রকারভেদে নূ্যনতম এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকার চুক্তিতে খুনিরা তাদের কাজ করে থাকে। সন্দেহভাজন ভাড়াটে খুনিদের ওপর গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ নজরদারি থাকলেও এসব সন্ত্রাসী নানা কৌশল অবলম্বন করে একের পর এক হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। আর বিনষ্ট হচ্ছে সামাজিক পরিবেশ।
দেশে যে হারে খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক, আমরা ক্রমেই এক অস্থিতিশীল পরিবেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অথচ একটি গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে এমনটি কারো কাম্য হতে পারে। এ ধরনের খুনের ঘটনা দেশের সামাজিক অস্থিরতারও একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে বলে আমাদের ধারণা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় দেশে অপরাধমূলক কর্মকা-ের বৃদ্ধি ঘটছে। আইনি দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো অপরাধমূলক কাজে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ জন্য আইনি ফাঁকফোকর ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সমভাবে দায়ী। দেশে নেতিবাচক কর্মকা- বৃদ্ধি পেলে সরকারকে দোষারোপ করা হবে এটিই স্বাভাবিক। ফলে এসব ব্যাপারে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভাড়াটে খুনিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া যারা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের শান্তি বিনষ্ট করতে উদ্যত তাদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। হত্যাকা- রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো সক্রিয় হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
No comments:
Write comments