Flickr

Sunday, 13 July 2014

কাণ্ডজ্ঞানহীন একটা বক্তব্য

Posted by   on

কাণ্ডজ্ঞানহীন একটা বক্তব্য
রাজনীতি ব্যক্তি জীবনে, জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনীতি জীবনের সুখ-দুঃখ এবং জাতীয় উন্নতি ও অবনতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতির কারণেই আমরা এখন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। রাজনীতির কারণেই আমরা আবার আশাহত হই। বর্তমানে দেশে যে মন্দ রাজনীতি চলছে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের দৌরাত্ম্য যেভাবে বাড়ছে তাতে দেশের জনগণ রাজনীতিবিদদের ওপর বিরক্ত। অনেকেই বলছেন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সংস্কার না হলে, রাজনীতিতে মেধাসম্পন্ন নতুন রাজনীতিবিদদের আগমন না ঘটলে বর্তমান দুরবস্থা থেকে মুক্তি নেই। বিরাজমান নেতৃত্বের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠলে মানুষ তো নতুনের আগমন চাইবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই নতুন ‘কাংখিত’ হবে তো? অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, শুধু নতুন চেহারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যদি না সেই চেহারার মধ্যে গুণগত পরিবর্তনের সামর্থ্য না থাকে। নতুন চেহারা যদি পুরাতন কথাই বলে এবং আচরণে পুরাতনদেরই প্রতিভূ হয়ে ওঠে, তাহলে তেমন নতুন দিয়ে কোনো নতুন অভিযাত্রা সম্ভব হবে কী?
পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমরা নতুন নেতৃত্বের প্রতি আশাবাদী হতে চাই। তবে আশাবাদী হওয়ার মতো ভিত্তি তো রচনা করতে হবে নতুনদেরই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তেমন শুভ লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। নইলে ‘সুচিন্তা ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত সেমিনারে নতুন প্রজন্মের অন্যতম নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এমন বক্তব্য রাখবেন কেন? সেমিনারে জয় ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানের কঠোর সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, একটি রাজনৈতিক দল আছে যারা ‘জয় বাংলা’ বলতে লজ্জা পায়। তারা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলে। জিন্দাবাদ উর্দু ও পাকিস্তানী শব্দ। জিন্দাবাদ শ্লোগান প্রদানকারীদের পাকিস্তানী এজেন্ট আখ্যায়িত করে তাদের পাকিস্তানে বসবাসের পরামর্শ দেন তিনি। আমরা জানি, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষ থাকে। প্রতিপক্ষের সাথে আচরণ ও মোকাবিলার ধরন থেকে রাজনীতিবিদদের মান উপলব্ধি করা যায়। যে রাজনীতিবিদ তথ্যভিত্তিক কথা বলেন, প্রতিপক্ষের যৌক্তিক সমালোচনা করেন, তিনি জনমনে স্থান করে নিতে পারেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের সমালোচনায় যদি অযৌক্তিক বক্তব্য এবং বিদ্বেষ ও বেপরোয়া মনোভাব প্রকাশ পায় তাতে সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদের ইমেজ নষ্ট হয় এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষতির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ব্লেম গেমের বর্তমান রাজনৈতিক বাতাবরণে আমরা নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের কাছে ওই ধরনের অনাকাংখিত আচরণ আশা করি না। আমরা জানি, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিভিন্ন দল থাকে, দলগুলোর শ্লোগান এক রকম হয় না। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ পছন্দ মতো শ্লোগান বাছাই করে এবং তাতে বৈচিত্র্যই লক্ষ্য করা যায়। এখন কোনো দল যদি জয় বাংলা শ্লোগান পছন্দ করে তাহলে অন্যদেরও সেই শ্লোগান বেছে নিতে হবে রাজনীতিতে এমন কোনো কথা নেই। সব দলেরই শ্লোগান, কর্মসূচি ও কর্মনীতি যদি একই রকম হয়ে যায়, তাহলে তো আলাদা আলাদা দল করার আর প্রয়োজন থাকে না। গণতন্ত্রের এই মূল কথাটি আমাদের নতুন প্রজন্মের নেতাদের উপলব্ধি করতে হবে।
সেমিনারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘জিন্দাবাদ’ শব্দটি উর্দু ও পাকিস্তানী শব্দ। আসলে কি তা-ই? বাংলা অভিধান একটু ঘেঁটে নিলে তিনিও দেখতে পাবেন ‘জিন্দাবাদ’ মূলত একটি ফারসি শব্দ। এই শব্দ উর্দু ভাষায় যেমন ব্যবহৃত হয়, ঠিক তেমনি ব্যবহৃত হয় বাংলা ভাষায়ও। তাই জিন্দাবাদকে উর্দু ও পাকিস্তানী শব্দ বলে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা তথ্যভিত্তিক নয়। বাংলা ভাষা সম্পর্কে যারা আগ্রহ রাখেন, তারা এ বিষয়টি ভালো করেই জানেন যে, এ ভাষায় দেশী ভাষার সাথে যুক্ত হয়ে গেছে আরবি, উর্দু, ফারসি, ইংরেজি, সংস্কৃত ও পর্তুগীজসহ অন্যান্য ভাষার বিপুল শব্দরাজি। বিদেশী ভাষার শব্দগুলো এখন বাংলা ভাষারই শব্দ হয়ে গেছে এবং এভাবেই আমাদের ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে এবং ভাষার প্রকাশ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভাষার যথাযথ প্রয়োগ। তাই প্রিয় স্বদেশের দীর্ঘায়ু কামনা করে কোনো দল বা ব্যক্তি যদি ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ বলেন, তাতে বাংলা ভাষার অপপ্রয়োগ হয় না। ভাষার ব্যবহার প্রয়োগসিদ্ধ হলে তাতে কারো আপত্তি করার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে না। তাই কেউ ‘জিন্দাবাদ’ বললে তাকে পাকিস্তান যেতে হবে কেন? এমন বক্তব্যে যুক্তির বদলে বিদ্বেষ ভাবটাই প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় দেশী ভাষার সাথে সাথে প্রচুর আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু প্রচলিত এই শব্দগুলো ব্যবহার করার কারণে কি বাংলাদেশের জনগণকে বিভিন্ন দেশে চলে যেতে হবে? আমাদের কবি-সাহিত্যিকরা তাদের রচনায় যৌক্তিক কারণেই বিদেশী ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। আর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তো তাঁর লেখায় প্রচুর আরবি, ফারসি ও উর্দু শব্দ ব্যবহার করেছেন। এতে তাঁর রচনার প্রসাদগুণ বহুলাংশে বেড়েছে এবং বাংলা ভাষাও সমৃদ্ধ হয়েছে। ফলে আমাদের জাতীয় কবি নিন্দিত হননি বরং সবার কাছে হয়েছেন নন্দিত। বিষয়টি আমাদের নতুন প্রজন্মের নেতারা উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter