Flickr

Wednesday, 2 September 2009

দখল ও দূষণ মুক্ত হোক

Posted by   on

একটি শহরের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে লেকের অবদান অপরিসীম। ঢাকার বুকেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কয়েকটি লেক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে লেকগুলোর দখল ও দূষণের মাত্রাও তীব্রভাবে বেড়ে চলেছে। দখলের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না রাজধানীর লেকগুলো। গুলশান লেকের বেশ কিছু জায়গায়ই ইতোমধ্যে দখল হয়ে গেছে। জায়গা দখল করে বহুতল ভবন, টিনশেড ঘর, বসত্মি তৈরি করা হয়েছে।
বিপুল জনসংখ্যার নগরী ঢাকা। পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা কারণে ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। প্রশস্ত রাস্তা নেই, খেলার মাঠ নেই, উদ্যান নেই, প্রয়োজনীয় জলাশয় নেই। নদী-নালা সব দখলদূষণে পরিত্যক্ত প্রায়। এ অবস্থায় এখানে জীবন ধারণ করাই কঠিন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া আমাদের টিকে থাকা দায়। এ কারণে নিজেদের স্বার্থেই রাজধানীর জলাশয়গুলো বাঁচিয়ে রাখার কোনো বিকল্প নেই। আমরা যদি দখলদারিত্বে মেতে থাকি তাহলে এই অবিমৃষ্যকারিতার পরিণাম কী হবে একবার ভেবে দেখা দরকার।

  
ভূমি আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়া ভূমিদস্যুরা যাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় সরকারি সম্পত্তি জবরদখল করার সুযোগ না পায়, সেই লক্ষ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইনের যুগোপযোগী সংস্কার সাধনের পাশাপাশি অপরাধীদের বিচার ও কঠোর শাস্তি বিধান ছাড়া এই অনাচার হতে দেশ মুক্ত হবে না। এ জন্য দখলদারিত্ব বন্ধে রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দখলের প্রশ্নে কোন আপস বা নতি স্বীকারের সুযোগ নেই। অনিয়ম, দুর্নীতি সহ্য করাও হবে আত্মঘাতী। দখলদাররা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তারা সংখ্যায় কম। গুটিকয়েক মানুষের স্বার্থ হাসিলের জন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। গুলশান লেক পুনরুদ্ধারে সর্বশক্তি নিয়োগ করা হবে, আমরা তেমনটাই প্রত্যাশা করি।
 রাজধানীর প্রাকৃতিক পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে কয়েক বছর আগে লেকগুলো সংস্কারের মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। লেক খনন, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু মহাপরিকল্পনা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যে উৎসাহ কাজ করে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তার দেখা পাওয়া ভার। রাজধানীর লেকগুলোর অন্যতম উত্তরা লেক। এ লেকটির আধুনিকীকরণের ৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প সরকার ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ধানম-ি লেক আধুনিকায়নে নেয়া ২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ এখন রয়েছে চলমান অবস্থায়। গুলশান-বারিধারা লেকের আধুনিকায়নে ৪১০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু কোনো কাজেরই সমন্বয় নেই। সিটি করপোরেশন, রাজউক এবং ওয়াসার মধ্যে কাজের সমন্বয় না থাকায় এ খাতে ব্যয়িত কোটি কোটি টাকা ভেস্তে যেতে পারে_ এমন আশঙ্কাও কম নয়। রাজধানীর প্রাকৃতিক লেকগুলো বাঁচাতে হলে দখল ও দূষণের আগ্রাসন বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। দূষণের হাত থেকে রক্ষার বদলে রাজধানীর বর্জ্যের একটা বড় অংশ পড়ছে লেকগুলোতে। সবক'টি লেকের পানি এতই বিবর্ণ ও দুর্গন্ধ যে, সেগুলো মূলত মশক উৎপাদনের কারখানা হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে।

 ধানম-ি লেকের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা দীর্ঘ সময়েও সংস্কার করা হচ্ছে না। প্লাস্টিকের বোতল, ফোম, ছেঁড়া ময়লা জুতাসহ অন্যান্য দ্রব্য লেকের পানিতে ভাসতে দেখা যায় প্রতিনিয়ত। উত্তরার ৩, ৫, ৭ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের সংযোগস্থলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকটি উত্তরা মডেল টাউনের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। বর্তমানে লেকটি দূষণাক্রান্ত। লেকটির কিছু অংশে যুক্ত হয়েছে স্যুয়ারেজ লাইন, নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। ঢাকার লেকগুলোর একটি গুলশান-বারিধারা লেক। লেকটি প্রাকৃতিকভাবে ড্রেনেজ সিস্টেমের কাজ করে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও আইনের আওতায় ২০০১ সালে লেকটিকে পরিবেশগতভাবে নাজুক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

 রাজধানীর তিনটি প্রধান লেকসহ সব জলাধার সংরক্ষণে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। দেড় কোটি মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে দূষণ ও দখলের কবল থেকে নদী, খাল ও লেকের সংরক্ষণে শুধু আইনগত পদক্ষেপ নয়, সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তোলা দরকার।


No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter