Flickr

Tuesday, 12 January 2010

দুর্নীতির আর এক রূপ

Posted by   on

দুর্নীতির আর এক রূপ
‘মুজিবনগর সরকারের আত্তীকৃত কর্মচারীদের বয়স কত ছিল?' শিরোনামে একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে ‘দৈনিক সংগ্রামে।' খবরে বলা হয়, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে বিশেষ কোটায় কাস্টমস এবং ইনকাম ট্যাক্সসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনস্ত বিভাগসমূহে যাদেরকে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের বয়স ও এসএসসি পাস বিবেচনা করা, তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা বা মুজিবনগর সরকারে ৮ বছর বয়সে কাজ করার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এডভোকেট ফজলে রাববী মিয়া। ডেপুটি স্পীকার এ ব্যাপারে সংসদ সচিবালয়ের সচিব বরাবর নোটিশ দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
খবরটি সঙ্গত কারণেই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে পত্রিকায়। দেশের মানুষ দুর্নীতির অবসান চায়। সরকারও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদও ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, দুর্নীতি হ্রাসে সমর্থ হচ্ছে না সরকার। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন কোটায় চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা গেছে দুর্নীতির বিস্তার। তাই প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয়েছে সংসদেও। এদিকে আবুল কালাম আজাদের এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় আত্তীকৃত ৪৩ জনের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, সহকারী কর কমিশনার প্রতাপ চন্দ্র পালের জন্ম তারিখ ১/২/৬২, অর্থাৎ '৭১ সালে তার বয়স ছিল ৯ বছর। এই বয়সে কী করে তিনি মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হয়েছিলেন? একইভাবে দেখা যায়, পংকজলাল সরকারের (সহকারী কর কমিশনার, অঞ্চল-৭) জন্ম তারিখ ১০/১০/১৯৬১)। দশ বছরের কম বয়সে কি করে সরকারের কর্মচারী হলেন তিনি। অনুরূপ প্রশ্ন উঠেছে লুৎফর রহমানের ক্ষেত্রেও। যার জন্ম তারিখ ২/৮/১৯৬২। এ তালিকায় বয়সের যোগ্যতা নেই এমন আরো অনেকের নাম রয়েছে। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে ১৯৭১ সালে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর এবং সরকারী কর্মচারী হতে হলে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী যে তালিকা পেশ করেছেন তাতে দেখা গেছে, মুজিবনগর সরকারের কর্মচারী হিসেবে যাদের আত্তীকরণ করা হয়েছে তাদের প্রায় সবারই বয়স ১৬ বছরের নীচে। আর বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, তাদের অনেকেরই তখন বয়স ছিল ৭, ৮, ৯ ও ১০ বছর।
আমরা জানি, মুক্তিযোদ্ধা হওয়া কিংবা সরকারী কর্মচারী হওয়ার বিষয়টি খুবই সম্মানের। এই যোগ্যতার মাধ্যমে দেশ ও জনগণের সেবা করা যায়। কিন্তু যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে যদি তথ্যগোপন করা হয় কিংবা মিথ্যা তথ্য দেয়া হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তো শুরুতেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেলেন। এমন দুর্নীতিবাজ মানুষ আত্মসেবায় পারঙ্গম হতে পারেন কিন্তু তার থেকে দেশ ও জনগণের পাওয়ার কিছু নেই। বরং এসব দুর্নীতিবাজ মানুষ নিজেদের অন্ধকার দিক ঢাকার জন্য সব সময় সক্রিয় ছিল চাটুকারিতায়, তুষ্টিবিধানে ও রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডায়। ফলে কখনো বসের প্রশ্রয়ে, কখনো বা রাজনৈতিক আশ্রয়ে তারা নিজেদের একটি মহল গড়ে তুলেছে। দেশ দুর্নীতির রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি না পাওয়ার এটিও একটি বড় কারণ। এবার তো মুজিবনগর সরকারের কর্মচারীদের তালিকায় দুর্নীতির একটি চিত্র স্পষ্ট হলো। এ ব্যাপারে সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter