Flickr

Thursday, 30 September 2010

হিংসা-বিদ্বেষ ও চরিত্রহননের রাজনীতি কাম্য নয়

হিংসা-বিদ্বেষ ও চরিত্রহননের রাজনীতি কাম্য নয়
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটলে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন হবে না-এমন বক্তব্যের সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। কিন্তু এতে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কিছুমাত্র উন্নয়ন হয়েছে কী? উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত বিষয় হলেও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেন ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাপনী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির আসবাবপত্র ও মালামাল বিষয়ে যে বক্তব্য পেশ করেছেন, তাকে চরম মিথ্যাচার ও ইতরবিশেষ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী একদলীয় সংসদে কুৎসিত মিথ্যাচারের মাধ্যমে চরিত্রহনন ও অন্যকে নিপীড়ন করে আনন্দ লাভের স্যাডিস্ট মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
গণতন্ত্রের নামে মুখে ফেনা তোলা হলেও বাস্তব আচরণে যে আমাদের নেতানেত্রীরা তেমন গণতান্ত্রিক নন সে কথা দেশের জনগণ জানে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পরস্পরের চরিত্র হননে ও বাক্যবাণে জর্জরিত করার ক্ষেত্রে যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না, বরং অন্ধকারই যেন ঘনিয়ে আসছে। রাজনীতিবিদরা এখন আর রাজনৈতিক দলের দর্শন, কর্মসূচি ও কর্মতৎপরতার আলোচনা-সমালোচনার বদলে অন্দরমহলে ঢোকার ক্ষেত্রে বেশি উৎসাহবোধ করছেন। কার কয়টা টিভি-ফ্রিজ আছে, সোফা-কার্পেট আছে তার হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। রাজনীতিবিদরা এখন পরস্পরের বাড়ি-ঘরের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে আয়কর বিভাগকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, প্রবীণ ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের চরিত্র হননে অতি নোংরা ভাষাও ব্যবহার করা হচ্ছে। কাউকে বলা হচ্ছে ফেনসিডিলখোর, কাউকে বা মদখোর। আর সংসদের মতো পবিত্র জায়গায়ও শব্দ চয়নে আমাদের এমপিরা সচেতন নন। যে কারণে স্বয়ং স্পিকার বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘সংসদে কিছু সদস্যের ভাষায় আমিও লজ্জা পাই।'
আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সংসদে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যে ভাষায় কথা বলছেন তা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক রাজনীতি, যার পূর্বশর্তই হলো পরমতসহিষ্ণুতা। কিন্তু এখন পরমতসহিষ্ণুতার অভাব এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, কেউ কাউকে সহ্যই করতে পারছে না। ফলে মতবিনিময়ও সম্ভব হচ্ছে না। মতবিনিময় সম্ভব না হলে জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে কেমন করে? ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালনেই এখন উৎসাহী হয়ে পড়েছেন। এতে শুধু যে হিংসা-বিদ্বেষই বাড়ছে তা নয়, পরস্পর পরস্পরের চরিত্র হননেও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন চিত্রকে অশনি সংকেত হিসেবেই বিবেচনা করতে হয়। এ ব্যাপারে আমরা দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এবং বলতে চাই, হিংসা-বিদ্বেষ ও চরিত্রহননের এই পথ কল্যাণের পথ নয়, রাজনীতিরও পথ নয়। এ পথ মূলত ধ্বংস ও ক্ষতির পথ। এখন রাজনীতিবিদদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোন পথে চলবেন।

Monday, 27 September 2010

একটি কবিতায় তুমি আমি পর্ব ১

একটি কবিতায় তুমি আমি পর্ব ১



(ফেসবুকে দুইজন মানুষের কথোপকথন নিয়ে লেখা একটি কবিতায় তুমি আমি। কবিতার সব পঙক্তি জীবন্ত। প্রতিদিনের কথোপকথন নিয়ে পর্ব ভিত্তিক এই লেখা আপনাদের ভালো লাগবে আশা করি। ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ নারী ও পুরুষের মাঝে কাব্যকথায় এই কথোপকথন। এই পাশে আছি আমি, ঐ পাশে আছেন কলকাতার কবি মোনালিসা।)

আমি:
সমস্ত শরীরে তোমার কোলাহল গেছে মিশে,
ত্রিমাত্রিক নিশিতে অভিলাষী জ্যোৎস্নায় কিছু চাই,
দিতে পারো নির্ঘুম দুটো শিকারি চোখ,
কিংবা গোপন কর আমার কিছুটা নিঃশ্বাস।
আরও দিতে পারো সন্ধায় গোধূলি মাখা নিপীড়ন।

কবি মোনালিসা :
তুমিও দিতে পারো দুঃসহ জ্বালার,
অভিপ্রায় ঘটিত যাতনাময় দিনরাত্রির কাব্য,
উপহারে দোষ দেবো না।
নষ্ট চাঁদ বাঁকা চোখে হাসে কারুকার্যময় হাসি।
এই তো সেদিন কিভাবে কেটে গেল দিনযাপনের ঘ্রাণ।
মূত হয়ে ওঠে প্রতীকি প্রেম।

আমি:
এই ভাবে প্রেম যাবে আর কতোকাল,
আর কতটুকু হলে পরিপূর্ণ জীবন?
মিথ্যে নয়, ওগো মিথ্যে নয়,
তোমার হরিণ চোখে নেমে এসেছে জ্যোৎস্না
চাঁদের পরাজয়ে বেসামাল নিশ্চুপ ঠোঁটের কোণ।

আমাদের সারাটি দিনরাত্রি ভেঙে ভেঙে
মিলনের শেষে ক্লান্ত জলবিন্দু আবারো অপেক্ষায়,
শান্ত বাতাসে নিশ্বাস নিয়ে ভাষাহীন ছন্দে,
ওরা খেলতে শিখে গেছে তোমার আমার ছায়ায়।

তোমার আমার করতল ছুঁয়ে বিশ্বাসী প্রলয়,
কাঁকন বাজে কতোটা তপ্ত সুখে!
প্রেম চিনতে চিনতে বর্ষণ ফুরাবে ব্যস্ত আকাশের নিচে,
অন্তরের মোহন বাঁশিতে গন্তব্যহীন সুর,
সতীর্থ স্রোত জেগেছে আজ উত্তাল তৃষ্ণার্ত বুকে।

ভালোবাসা আছে তাই,
আজো জেগে আছে দুটো চোখ,
ভালোবাসা আছে তাই,
শত কালবৈশাখীতেও মেঘ ঢেকেছে শোক।

কবি মোনালিসা :
ভালোবাসা আছে তাই
তুমি আমি বেচে আছি অনেকটাকাল ।
এখন তোমার অঙ্গীকারে মন ভরে যায়।
তবুও কি বিস্মৃত হওয়া যায়.....
কেউ কথা রাখে না।
অন্তত রাখতে চায় না।
যদিও কখন বা মনে পড়ে

আমি:
তোমার আশকারা পেয়েছে আমার হস্ত যুগল
ইচ্ছে করে ঘূর্ণির মতো ধেয়ে যায় বার বার,
অন্ধের মতো হাতড়ে খুঁজি,
তুমি আমি একাকার হই,
গোলাপে গোলাপে,পাপড়ির ঘ্রাণে।
এতো চুপ কেন?
তুমি কি বুঝনা আমার শরীরের কাব্য?

কবি মোনালিসা :
বুঝতে চেয়ে বার বার পিছিয়েছি এ ঘোর ঘনঘোরে
দিনযাপনের বিষাদলগ্নে ক্লান্তিতে মূহ্যমান
সেদিন ছিল শ্রাবণ মাস।
ধারায় ধারায় সিক্ত বিছানা বালিশ
তক্তোপোশ স্মৃতির অতলে ডুবে যাওয়া তারা মাস কাল
বছরের পর বছর
আজো কি আমি একা নই প্রিয়?
আজো কারো কাব্যে উচ্চারিত হই আমি।
সেদিন কত দূর ।
অন্তিমলগ্নে বিদায়সম্ভাষণে
আসি ছোট্ট শব্দে কি শ্লেষ!
রোদনভরা বাক্য !

আমি:
এতোদিন একা একা খেলেছি পরাজিত প্রেম,
কঠিন পাথর শুনিয়েছে লাল নীল সন্ধ্যার গল্প,
তোমার গান বুকে নিয়ে একলা ফিরেছি কতোদিন!
ধূপের মেলায় পার করেছি সোনালী একলা প্রহর।

কবি মোনালিসা :
একটা মেয়ে যার সত্যই একটা মন ছিল।
যার পায়ে ছিল সরষে।
যার পায়ে ফুল ফোটায় অনুর্বর ভূমি।
যার দুটি ইচ্ছে ডানা ছিল...
যার সত্যি কথা বলতে একটুও বুক কাঁপত না।
স্বপ্ন দেখত দুর্বার
প্রেমের কবিতায় মুখ গুজে কাটত প্রহর।
সেই ক্ষণে প্রেম দিয়েছিলে তুমি।

আমি:
প্রহর! সোনালি প্রহর, রুপালিপ্রহর
আজো প্রহর খুজে বেড়ায় তোমার লাল টিপে,
কখনও তোমার গোধুলি রাঙা ঠোটে,
চিবুকের নিজর্নতায়,

কবি মোনালিসা :
যেদিন তোমার অবাধ্য প্রেমকথায়....
উজ্জীবিত আমি প্রিয় ভুলে যাই নিয়মের বেড়াজাল।
খুজে ফিরি জীবনের আস্বাদ।
জীবনের তাল, লয়, ছন্দ
আজো খুঁজে তোমার উষ্ণতা।

সান্ধ্য বিকেলের আড্ডায়।
তমসাঘন রাত্রির বেড়াজাল ভেঙ্গে নতুন ভোরে......
বেহিসেবি আমি।

আমি:
সকাল দুপুর বিকাল নিশ্চুপ সন্ধ্যা
তুমি বয়ে চলো শরীরময়।
আমার বনে হন্যে হয়ে ঘোরে তোমার শ্বাস প্রশ্বাস,
আমি তোমার কবি হতে চেয়েছি,
চেয়েছি তুমি কাব্য হও,
তোমার বুকে ফুলেল আঁচড় কেটে লিখব
প্রথম পুরুষ হওয়ার গল্প।

যে কাব্য তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি
আজো অপেক্ষা করি তোমার সীমান্তে দাঁড়িয়ে।

কবি মোনালিসা :
আমি আকাশ হব।
আমি সহস্র বারিধারায় স্নাত গাছ।
অজস্র ভালোবাসায় লিখব এক নতুন ইতিহাস।
আমি নদী হবো মুক্ত বহমান।
সমস্ত ক্লান্তি গ্লাণির পলি নিয়ে,গড়ব.....
তোমার অবয়ব অসমান।
আমি তোমার কবিতা হব
তোমার বুকের অনুচ্চারিত শব্দ।
তোমার নিজস্বে ছন্দে ঠাসা কথামালায় রব।

আমি:
এইবার এলে, থামব না,
অধর ছুঁয়ে পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে,
যে ভালোবাসা, প্রথম বেসেছিলে,
বুকের মাঝে পুষ্পবানে জেগে তুলব
আমার পৌরষ।

কবি মোনালিসা :
আমি ঘটমান বর্তমান,
আমি আবার মানুষ হব নিরভেজাল দায়িত্ববান।
আমারও কিছু স্বপ্ন আছে
ইচ্ছের ও কিছু দাপট আছে সুতীব্র বাসনা।

আমি:
আমার বেলা অবেলায় যতটা এলোমেলো পথ,
যেতে যেতে নিভে গেল অস্তপারের সন্ধ্যাতারা,
সূর্য ডোবার গোপন বিরহে কেঁদে উঠে করাল দুপুর,
রাষ্ট্র জেনেছে নির্মমতায়, নাগরিক স্তব্ধে নির্বাক শহর।

কবি মোনালিসা :
ভাবনারা আসে একলা কথা বলে।
তারা বড় নিবিড়। ক্লান্ত ঘন রাত্রির কথা
খুনসুটিতে ভরা নদীর গোপন কথা।
দু:খভরা।হয় নাকো শেষ।
দিন যদি হয় শেষ র ইবে কি তার রেশ।
ভাবনারা একলা কথা বলে নিজস্ব নিয়মে চলে।

আমি:
দিন আমার গেয়ে যায় অবেলার গান,
শুন্যতা আমার, তোমার শাড়ির আচলে লুকায়,
তুমি একলা নও, এই আমি তোমার আচলে,
আর লুকাবো না,
আমি হব তোমার কাজল রেখা চোখ।
তোমার জলে স্নান হবে, শুদ্ধ হব,
তোমার গানে ছন্দ হবে, রুদ্ধ হব।

কবি মোনালিসা :
কালের খেয়ালে খেয়ালি স্বপ্ন সবকিছু বাধাধরা ।
নিয়মে বন্দী।
তবুও কি তুমি দেবে ধরা আপন খেয়ালে।

আমি:
আজ ঘুম নেই চোখে,
তাই স্বপ্নরা পালিয়ে বেড়ায়,
আমি ভিজিয়ে রেখেছি ভাবনার দরজা,
একটু কড়া নেড়ে দেখ,
আমাকে পেতে পার আপন খেয়ালে।
খুব ইচ্ছে হয় দুই হাত ছুঁই
খুব ইচ্ছে হয় ব্যবধান শুন্য করি,
তুমি কোন স্বপনের দ্বারে,
কেন আড়াল কর নিজেকে,
আঁচল পেতে দাও,
ওখানেই বসত হবে আমার।


কবি মোনালিসা :
মালায় গাথা যে ফুলগুলো দিয়েছিলে একদিন
আজ তা শুকিয়ে আমসি এর পর কি হবে নতুন ভোর?

আমি:
তুমি আমি প্রতিদিন নতুন ভোর
নতুন আকাশ, নতুন মেঘ।
নব ধারা, নব জল।
আমাদের প্রেম প্রতিদিন নতুন হয়,
প্রতিদিন ইচ্ছে করে তোমাকে প্রেম নিবেদন করি।
তুমি আজ বুঝতে পারো, ভালবাসা কি?
উত্তরের হাওয়ায় কালে ভাদ্রে গোলাপ হয়,
চুল শুকাও ভোরের আলোয় গোলাপ পরিয়ে দেব।

কবি মোনালিসা :
আমি জানি কাব্য করে,
আর কাটবে না দিন কাল।
তুমি আবার আসবে ফিরে এই তীরে,
যেথায় নৌকাটি ঠিক বাধা আছে,
ভেসে যায়নি ভরা জোয়ারে

ভাবনারা একলা কথা বলে।
শিশির ভেজা সকালবেলায় । প্রলয়দোলায়।

আমি:
প্রনয় হোক শত প্রলয়ের মাঝে,
জানি, রাঙাবে দুই ঠোট,
সকাল বেলার সাজে।
আমার সকাল,তোমার সকাল
দুই হৃদয়ের মাঝে।

Friday, 10 September 2010

আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং সংঘাতের পথে বাংলাদেশ


আদর্শিক বা সাংস্কৃতিক আধিপত্যের পথ ধরেই আসে রাজনৈতিক আধিপত্য। একবার আদর্শিক বা সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলে রাজনৈতিক আধিপত্য-স্থাপনে শত্রুপক্ষের কাছে যুদ্ধ-লড়াটা তখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের স্ট্রাটেজী ছিল অন্যদেশের অভ্যন্তরে নিজেদের সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক দ্বীপ গড়া। তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তানসহ অধিকাংশ মুসলিম সে দ্বীপগুলো হলো ক্যান্টনমেন্ট, অফিসপাড়া, আদালত, পতিতালয় ও ব্যাংকিং সেক্টর। এগুলোর সীমান্ত পাশ্চাত্য চেতনা ও মূল্যবোধের সাথে একাকার। ইসলামের হারাম-হালালের বিধান এসব জাগায় অচল। তারাই এখন পাশ্চাত্যের কাফের শক্তির একনিষ্ঠ মিত্র। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তাই আজ নিজ দেশে হাজার হাজার মুসলমান হত্যা করছে অতিশয় আনন্দ-চিত্তে। তুরস্কে দেশের সৈনিকরাই স্কুলের মেয়েদের মাথায় রুমাল বাঁধতে দিতেও রাজি নয়। মিসরে এরা রাজি নয় ইসলামপন্থীদের রাজনীতির ময়দানে আসতে দিতে। এখন পাশ্চাত্যের সেকুলারিস্টগণ সেরূপ অভিন্ন দ্বীপ গড়ছে রাজনীতির অঙ্গনেও। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ হলো তাদের সে অভয় দ্বীপ। একজন পশ্চিমা দুর্বৃত্ত ব্যভিচারি বাংলাদেশের পতিতালয়ে বা মদের আসরে যে সমাদরটি পায় সেটি তো চেতনাগত অভিন্নতার কারণেই। তেমনি এক অভিন্নতার কারণেই ভারতীয় নেতারাও অতি আপনজন রূপে গৃহীত হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আসরে। আর ভারতের সাথে আওয়ামী লীগের সে গভীর সম্পর্কটি নতুন বিষয় নয়। ভারত বাংলাদেশের জন্য নেপালে যাওয়ার জন্য ২০-৩০ মাইলের করিডোর দিতে রাজি ছিল না, অথচ বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে ৫০০ মাইলের করিডোর চায়। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভূটানে যাওয়ার করিডোর বাংলাদেশের যতটা অপরিহার্য সেরূপ অবস্থা ভারতের জন্য নয়। ভারত তার পূর্বাঞ্চলে যেতে পারে তার নিজ ভূমির মধ্য দিয়ে। অথচ এরপরও ভারত চাপ দিচ্ছে সে করিডোর আদায়ে এবং আওয়ামী লীগ সেটি বিবেচনাও করছে।
আওয়ামী লীগের বিজয়ে প্রতিবারেই বিপর্যয় এসেছে নানাভাবে। প্রচন্ড বিপর্যয় এসেছে সেনাবাহিনীর উপরও। মুজিব আমলে সেনাবাহিনীর চেয়ে বেশী গুরুত্ব পেয়েছিল রক্ষিবাহিনী। আওয়ামী লীগের এবারের বিজয়ে দেশের রাজধানীতে নিহত হলো ৫৭ জন সেনা অফিসার। শত্রুতা সৃষ্টি হলো এবং অবিশ্বাস বাড়লো সেনাবাহিনী ও বিডিআরের মাঝে। পিলখানার রক্ত শুকালেও মনের মাঝে যে বিভক্তি ও ঘৃণা সৃষ্টি হলো সেটি কি দূর হবার? এতে কি দেশের প্রতিরক্ষা মজবুতি পায়? এখন কথা উঠছে বিডিআরের বিলুপ্তির। সরকার ভাবছে, বিডিআরের নাম ও লেবাস পাল্টিয়ে আরেকটি বাহিনী গড়ার। সরকারের ধারণা, সমস্যা শুধু বিডিআর নামটি ও পোশাকটি নিয়ে। ভাবটা যেন, ফাইলপত্র ও অফিস আদালতের গা থেকে ‘বিডিআর' নামটি বা তাদের লেবাসটি উঠে গিয়ে সেনা-অফিসারদের বুকে গুলী চালিয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সমাধান খুঁজছে ‘বিডিআর' নামটি ও তার লেবাসটি বিলুপ্তির মাঝে।
দুর্যোগ নেমেছে দেশের শিক্ষাঙ্গনেও। চরদখলের ন্যায় সেখানে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর। শুধু ভিসি বা প্রিন্সিপালের অফিসেই নয়, দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবাসিক হলগুলোর সিটগুলোর উপরও। আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর অনুমতি ছাড়া সেখানে কেউ থাকতে পারবে না। দলীয় নিয়ন্ত্রণ আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও। লাশ হচ্ছে ছাত্ররা। ব্যাপক অবনতি ঘটেছে আইন-শৃক্মখলার। বাড়ছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও খুনখারাবী। একই রূপে হাত পড়েছে দেশের কৃষি ও শিল্পাঙ্গনেও। সরকারের বাণিজ্যনীতির কারণে ভারত থেকে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় নিম্মমানের সস্তা পণ্য। ফলে বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। কিছুদিন আগে তাই বাংলাদেশের কৃষকগণ বাজার না পেয়ে রাস্তার উপর তাদের দুধ ঢেলেছে। সে ছবি টিভিতে দেখানো হয়েছে। দেশে বন্ধ হচ্ছে নিজস্ব সূতা তৈরীর কারখানা। হাত পড়েছে দেশের তাঁতীদের গায়েও। মুজিবামলেও এমনটিই ঘটেছিল। তখনও দেশী কারখানায় তালা লাগানো শুরু হয়েছিল। আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল বহু পাটের গুদাম। বাজারে প্লাবন এসেছিল তখন ভারতীয় পণ্যের। শিল্প-কৃষি-বাণিজ্য এভাবে একের পর এক বিধ্বস্ত বা বেদখল হলে কি সে দেশের জনগণের কাছে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা থাকে? কথা হলো এভাবে কি একটি দেশের প্রতিষ্ঠা বাড়ে? বাড়ে কি সম্মান?
দেশের বিপর্যয় বাড়াতে আওয়ামী লীগ আরেকটি আত্মঘাতী পথও বেছে নিয়েছে। আর সেটি হলো রাজনৈতিক বিভক্তি ও ঘৃণার রাজনীতির। ইতিহাস থেকে খুঁজে খুঁজে তারা বিভক্তির সূত্র গুলো রাজনৈতিক ময়দানে নিয়ে আসছে। যুদ্ধ-অপরাধের মত ৩৮ বছরেরও পুরনো বিষয়কে তারা রাজনীতিতে টেনে আনছে। যারা ক'দিন আগে দিনদুপুরে নিহত ৫৭ জন সেনা-অফিসার হত্যার একটি সুষ্ঠু বিচার করতে হিমসিম খাচ্ছে, এবং এখন কোন আশার আলো দেখাতে পারছে না তারা আবার ৩৮ বছর পুরনো অপরাধের বিচার করবে। কান্ডজ্ঞান আছে এমন কোন ব্যক্তি কি সেটি বিশ্বাস করতে পারে? শেখ মুজিবের ২০ টাকা মণ দরে চাল খাওয়ানো বা শেখ হাসিনার প্রতি পরিবারে একজনের চাকরিদানের ন্যায় নির্বাচনী ওয়াদার মতই এটি এক প্রকান্ড মিথ্যাচার। বিচার শুধু গলাবাজিতে হয় না, চাক্ষুষ প্রমাণ ও সাক্ষী-সাবুদও হাজির করতে হয়। অপরাধী কি অপরাধী রূপে প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের। এবং বিচারকে গ্রহণযোগ্য করতে না পারলে নিজেদের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও যে আঁস্তাকুড়ে পড়বে সে খেয়াল কি তাদের আছে? ঘৃণার রাজনীতির শিকার হয়েছেন শেখ মুজিব নিজে ও তার পরিবার। সিরাজ সিকদারের হত্যার পর সংসদে তিনি ঘৃণা ও দম্ভ ভরে বলেছেন, ‘‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’’ কিন্তু সে কথা বলার পর তিনিও বেশী দিন বাঁচেননি। সিরাজ সিকদারের ন্যায় তিনিও লাশ হয়েছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ অতীতের ইতিহাস থেকে কোন শিক্ষাই নেয়নি। তারা রাজনীতিতে জোয়ার দেখেছে ভাটাও দেখেছে। ভাটার সময় মুজিবের লাশ সিড়িতে পড়ে থাকলেও সে লাশ কেউ তুলতে এগোয়নি। ঘৃণা পেট্রোলের চেয়েও বিস্ফোরক। একবার সেটি ছড়িয়ে পড়লে সহজে সেটি থামে না। লক্ষ লক্ষ মানুষকে সেটি সাথে নিয়ে যায়।।ইউরোপ এক সময় এ ঘৃণার কারণে দারুণভাবে বিধ্বস্ত ও জনশূন্য হয়েছিল। তাই তারা নানা জাতিতে বিভক্ত ইউরোপকে এখন এক করতে ব্যস্ত। আরেকটি ধ্বংসযজ্ঞ তারা এড়াতে চায়। ইতিহাস থেকে যারা শিক্ষা নেয় তাদের আচরণটি এমনই হয়। আজকের ইরাক হলো আরেক দৃষ্টান্ত। অতিশয় ঘৃণার কারণে মানুষ সেখানে নিজেই পরিণত হচ্ছে বোমায়। ফেটে পড়ছে রাজপথে, মসজিদে ও বাজারে। পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের সেখানে মৃত্যু ঘটেছে। আরেক উদাহরণ আলজিরিয়া।
রাজনীতি হলো একতা ও সম্প্রীতি গড়ার নীতি। একমাত্র সে পথেই রাষ্ট্র সামনে এগোয়। দেশবাসীও নিজেদের মধ্যে সংহতি খুঁজে পায়। তাই যেদেশে রাজনীতি পরিপক্কতা পায় সেদেশের রাজনীতিতে একতা ও সম্প্রীতি গুরুত্ব পায়। এবং লোপ পায সংঘাত। হ্রাস পায় দল-উপদলের সংখ্যা। অন্য ভাষা, অন্য এলাকা ও অন্য নগরের মানুষকে রাজনৈতিক কর্মীরা তখন আপন করতে শেখে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা সে পথে চলতে রাজী নয়। শুরু থেকে ঘৃণা ও বিচ্ছিন্নতাই তাদের রাজনীতির মূল পুঁজি। মশামাছি যেমন নর্দমার নোংরা পানিতে বেঁচে থাকে, তেমনি এরাও বাঁচে ঘৃণার স্তূপে শিকড় ঢুকিয়ে। ফলে একতা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির চর্চা তাদের হাতে বাড়বেই বা কেমনে? পাকিস্তান আমলে অবাঙ্গালীদের ঘৃণা করাই ছিল তাদের রাজনীতির মূল পুঁজি, যোগ্যতা নয়। তাদের যোগ্যতা তো আজও ইতিহাস। মানুষ সেটি মুজিব আমলে যেমন স্বচোখে দেখেছে তেমনি আজও দেখছে। তাদের এখনকার ঘৃণা দেশের ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া সাম্প্রতিক নির্বাচনী বিজয় প্রচন্ডভাবে তাদেরকে দাম্ভিকও করেছে। এতে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। পেট্রোল ছিটানোর ন্যায় তারা শুধু ঘৃণাই ছড়িয়ে যাচ্ছে। লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে মুসল্লি হত্যা, যাত্রীভরা বাসে পেট্রোল বোমা মারা বা ইসলামপন্থিদের নির্মূলের হুমকি দেয়া-সে ঘৃণার রাজনীতিরই ফসল। কিন্তু ভুলে যাচ্ছে, ঘৃণার যে বীজগুলি তারা অবিরাম ছিটাচ্ছে এক সময় তা ফলবান বিশাল বৃক্ষে পরিণত হবে এবং সে বিষবৃক্ষে শান্তি নয়, একমাত্র ঘৃণার বোমাই ফলবে। আর ঘৃণার সে বোমাগুলো একবার ফাটা শুরু করলে তাদের রাজনীতিই শুধু অসম্ভব হবে না, হাত পড়বে তাদের অস্তিত্ত্বেও। সংঘাতটি আরো রক্তাক্ত হওয়ার নিশ্চিত কারণ হলো, এ পক্ষের কাছে সেটি পবিত্র জিহাদে পরিণত হবে। দেশ তখন আরেক ইরাক, আরেক আফগানিস্তান বা আলজিরিয়ায় পরিণত হবে। আওয়ামী লীগ কি জেনে-বুঝে দেশকে সে দিকেই ধাবিত করছে?
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter