Flickr

Thursday, 30 September 2010

হিংসা-বিদ্বেষ ও চরিত্রহননের রাজনীতি কাম্য নয়

Posted by   on

হিংসা-বিদ্বেষ ও চরিত্রহননের রাজনীতি কাম্য নয়
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ না ঘটলে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন হবে না-এমন বক্তব্যের সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। কিন্তু এতে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কিছুমাত্র উন্নয়ন হয়েছে কী? উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত বিষয় হলেও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যেন ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাপনী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির আসবাবপত্র ও মালামাল বিষয়ে যে বক্তব্য পেশ করেছেন, তাকে চরম মিথ্যাচার ও ইতরবিশেষ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী একদলীয় সংসদে কুৎসিত মিথ্যাচারের মাধ্যমে চরিত্রহনন ও অন্যকে নিপীড়ন করে আনন্দ লাভের স্যাডিস্ট মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
গণতন্ত্রের নামে মুখে ফেনা তোলা হলেও বাস্তব আচরণে যে আমাদের নেতানেত্রীরা তেমন গণতান্ত্রিক নন সে কথা দেশের জনগণ জানে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পরস্পরের চরিত্র হননে ও বাক্যবাণে জর্জরিত করার ক্ষেত্রে যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে আশার আলো দেখা যাচ্ছে না, বরং অন্ধকারই যেন ঘনিয়ে আসছে। রাজনীতিবিদরা এখন আর রাজনৈতিক দলের দর্শন, কর্মসূচি ও কর্মতৎপরতার আলোচনা-সমালোচনার বদলে অন্দরমহলে ঢোকার ক্ষেত্রে বেশি উৎসাহবোধ করছেন। কার কয়টা টিভি-ফ্রিজ আছে, সোফা-কার্পেট আছে তার হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে। রাজনীতিবিদরা এখন পরস্পরের বাড়ি-ঘরের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে আয়কর বিভাগকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, প্রবীণ ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের চরিত্র হননে অতি নোংরা ভাষাও ব্যবহার করা হচ্ছে। কাউকে বলা হচ্ছে ফেনসিডিলখোর, কাউকে বা মদখোর। আর সংসদের মতো পবিত্র জায়গায়ও শব্দ চয়নে আমাদের এমপিরা সচেতন নন। যে কারণে স্বয়ং স্পিকার বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘সংসদে কিছু সদস্যের ভাষায় আমিও লজ্জা পাই।'
আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সংসদে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যে ভাষায় কথা বলছেন তা জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক রাজনীতি, যার পূর্বশর্তই হলো পরমতসহিষ্ণুতা। কিন্তু এখন পরমতসহিষ্ণুতার অভাব এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে, কেউ কাউকে সহ্যই করতে পারছে না। ফলে মতবিনিময়ও সম্ভব হচ্ছে না। মতবিনিময় সম্ভব না হলে জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে কেমন করে? ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বদলে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালনেই এখন উৎসাহী হয়ে পড়েছেন। এতে শুধু যে হিংসা-বিদ্বেষই বাড়ছে তা নয়, পরস্পর পরস্পরের চরিত্র হননেও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন চিত্রকে অশনি সংকেত হিসেবেই বিবেচনা করতে হয়। এ ব্যাপারে আমরা দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এবং বলতে চাই, হিংসা-বিদ্বেষ ও চরিত্রহননের এই পথ কল্যাণের পথ নয়, রাজনীতিরও পথ নয়। এ পথ মূলত ধ্বংস ও ক্ষতির পথ। এখন রাজনীতিবিদদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোন পথে চলবেন।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter