Flickr

Friday, 10 September 2010

আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং সংঘাতের পথে বাংলাদেশ

Posted by   on


আদর্শিক বা সাংস্কৃতিক আধিপত্যের পথ ধরেই আসে রাজনৈতিক আধিপত্য। একবার আদর্শিক বা সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলে রাজনৈতিক আধিপত্য-স্থাপনে শত্রুপক্ষের কাছে যুদ্ধ-লড়াটা তখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের স্ট্রাটেজী ছিল অন্যদেশের অভ্যন্তরে নিজেদের সাংস্কৃতিক ও আদর্শিক দ্বীপ গড়া। তুরস্ক, মিশর, পাকিস্তানসহ অধিকাংশ মুসলিম সে দ্বীপগুলো হলো ক্যান্টনমেন্ট, অফিসপাড়া, আদালত, পতিতালয় ও ব্যাংকিং সেক্টর। এগুলোর সীমান্ত পাশ্চাত্য চেতনা ও মূল্যবোধের সাথে একাকার। ইসলামের হারাম-হালালের বিধান এসব জাগায় অচল। তারাই এখন পাশ্চাত্যের কাফের শক্তির একনিষ্ঠ মিত্র। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী তাই আজ নিজ দেশে হাজার হাজার মুসলমান হত্যা করছে অতিশয় আনন্দ-চিত্তে। তুরস্কে দেশের সৈনিকরাই স্কুলের মেয়েদের মাথায় রুমাল বাঁধতে দিতেও রাজি নয়। মিসরে এরা রাজি নয় ইসলামপন্থীদের রাজনীতির ময়দানে আসতে দিতে। এখন পাশ্চাত্যের সেকুলারিস্টগণ সেরূপ অভিন্ন দ্বীপ গড়ছে রাজনীতির অঙ্গনেও। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ হলো তাদের সে অভয় দ্বীপ। একজন পশ্চিমা দুর্বৃত্ত ব্যভিচারি বাংলাদেশের পতিতালয়ে বা মদের আসরে যে সমাদরটি পায় সেটি তো চেতনাগত অভিন্নতার কারণেই। তেমনি এক অভিন্নতার কারণেই ভারতীয় নেতারাও অতি আপনজন রূপে গৃহীত হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আসরে। আর ভারতের সাথে আওয়ামী লীগের সে গভীর সম্পর্কটি নতুন বিষয় নয়। ভারত বাংলাদেশের জন্য নেপালে যাওয়ার জন্য ২০-৩০ মাইলের করিডোর দিতে রাজি ছিল না, অথচ বাংলাদেশের মাঝখান দিয়ে ৫০০ মাইলের করিডোর চায়। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভূটানে যাওয়ার করিডোর বাংলাদেশের যতটা অপরিহার্য সেরূপ অবস্থা ভারতের জন্য নয়। ভারত তার পূর্বাঞ্চলে যেতে পারে তার নিজ ভূমির মধ্য দিয়ে। অথচ এরপরও ভারত চাপ দিচ্ছে সে করিডোর আদায়ে এবং আওয়ামী লীগ সেটি বিবেচনাও করছে।
আওয়ামী লীগের বিজয়ে প্রতিবারেই বিপর্যয় এসেছে নানাভাবে। প্রচন্ড বিপর্যয় এসেছে সেনাবাহিনীর উপরও। মুজিব আমলে সেনাবাহিনীর চেয়ে বেশী গুরুত্ব পেয়েছিল রক্ষিবাহিনী। আওয়ামী লীগের এবারের বিজয়ে দেশের রাজধানীতে নিহত হলো ৫৭ জন সেনা অফিসার। শত্রুতা সৃষ্টি হলো এবং অবিশ্বাস বাড়লো সেনাবাহিনী ও বিডিআরের মাঝে। পিলখানার রক্ত শুকালেও মনের মাঝে যে বিভক্তি ও ঘৃণা সৃষ্টি হলো সেটি কি দূর হবার? এতে কি দেশের প্রতিরক্ষা মজবুতি পায়? এখন কথা উঠছে বিডিআরের বিলুপ্তির। সরকার ভাবছে, বিডিআরের নাম ও লেবাস পাল্টিয়ে আরেকটি বাহিনী গড়ার। সরকারের ধারণা, সমস্যা শুধু বিডিআর নামটি ও পোশাকটি নিয়ে। ভাবটা যেন, ফাইলপত্র ও অফিস আদালতের গা থেকে ‘বিডিআর' নামটি বা তাদের লেবাসটি উঠে গিয়ে সেনা-অফিসারদের বুকে গুলী চালিয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ সমাধান খুঁজছে ‘বিডিআর' নামটি ও তার লেবাসটি বিলুপ্তির মাঝে।
দুর্যোগ নেমেছে দেশের শিক্ষাঙ্গনেও। চরদখলের ন্যায় সেখানে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর। শুধু ভিসি বা প্রিন্সিপালের অফিসেই নয়, দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবাসিক হলগুলোর সিটগুলোর উপরও। আওয়ামী ক্যাডার বাহিনীর অনুমতি ছাড়া সেখানে কেউ থাকতে পারবে না। দলীয় নিয়ন্ত্রণ আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও। লাশ হচ্ছে ছাত্ররা। ব্যাপক অবনতি ঘটেছে আইন-শৃক্মখলার। বাড়ছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও খুনখারাবী। একই রূপে হাত পড়েছে দেশের কৃষি ও শিল্পাঙ্গনেও। সরকারের বাণিজ্যনীতির কারণে ভারত থেকে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় নিম্মমানের সস্তা পণ্য। ফলে বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। কিছুদিন আগে তাই বাংলাদেশের কৃষকগণ বাজার না পেয়ে রাস্তার উপর তাদের দুধ ঢেলেছে। সে ছবি টিভিতে দেখানো হয়েছে। দেশে বন্ধ হচ্ছে নিজস্ব সূতা তৈরীর কারখানা। হাত পড়েছে দেশের তাঁতীদের গায়েও। মুজিবামলেও এমনটিই ঘটেছিল। তখনও দেশী কারখানায় তালা লাগানো শুরু হয়েছিল। আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল বহু পাটের গুদাম। বাজারে প্লাবন এসেছিল তখন ভারতীয় পণ্যের। শিল্প-কৃষি-বাণিজ্য এভাবে একের পর এক বিধ্বস্ত বা বেদখল হলে কি সে দেশের জনগণের কাছে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা থাকে? কথা হলো এভাবে কি একটি দেশের প্রতিষ্ঠা বাড়ে? বাড়ে কি সম্মান?
দেশের বিপর্যয় বাড়াতে আওয়ামী লীগ আরেকটি আত্মঘাতী পথও বেছে নিয়েছে। আর সেটি হলো রাজনৈতিক বিভক্তি ও ঘৃণার রাজনীতির। ইতিহাস থেকে খুঁজে খুঁজে তারা বিভক্তির সূত্র গুলো রাজনৈতিক ময়দানে নিয়ে আসছে। যুদ্ধ-অপরাধের মত ৩৮ বছরেরও পুরনো বিষয়কে তারা রাজনীতিতে টেনে আনছে। যারা ক'দিন আগে দিনদুপুরে নিহত ৫৭ জন সেনা-অফিসার হত্যার একটি সুষ্ঠু বিচার করতে হিমসিম খাচ্ছে, এবং এখন কোন আশার আলো দেখাতে পারছে না তারা আবার ৩৮ বছর পুরনো অপরাধের বিচার করবে। কান্ডজ্ঞান আছে এমন কোন ব্যক্তি কি সেটি বিশ্বাস করতে পারে? শেখ মুজিবের ২০ টাকা মণ দরে চাল খাওয়ানো বা শেখ হাসিনার প্রতি পরিবারে একজনের চাকরিদানের ন্যায় নির্বাচনী ওয়াদার মতই এটি এক প্রকান্ড মিথ্যাচার। বিচার শুধু গলাবাজিতে হয় না, চাক্ষুষ প্রমাণ ও সাক্ষী-সাবুদও হাজির করতে হয়। অপরাধী কি অপরাধী রূপে প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের। এবং বিচারকে গ্রহণযোগ্য করতে না পারলে নিজেদের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও যে আঁস্তাকুড়ে পড়বে সে খেয়াল কি তাদের আছে? ঘৃণার রাজনীতির শিকার হয়েছেন শেখ মুজিব নিজে ও তার পরিবার। সিরাজ সিকদারের হত্যার পর সংসদে তিনি ঘৃণা ও দম্ভ ভরে বলেছেন, ‘‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’’ কিন্তু সে কথা বলার পর তিনিও বেশী দিন বাঁচেননি। সিরাজ সিকদারের ন্যায় তিনিও লাশ হয়েছেন। কিন্তু মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ অতীতের ইতিহাস থেকে কোন শিক্ষাই নেয়নি। তারা রাজনীতিতে জোয়ার দেখেছে ভাটাও দেখেছে। ভাটার সময় মুজিবের লাশ সিড়িতে পড়ে থাকলেও সে লাশ কেউ তুলতে এগোয়নি। ঘৃণা পেট্রোলের চেয়েও বিস্ফোরক। একবার সেটি ছড়িয়ে পড়লে সহজে সেটি থামে না। লক্ষ লক্ষ মানুষকে সেটি সাথে নিয়ে যায়।।ইউরোপ এক সময় এ ঘৃণার কারণে দারুণভাবে বিধ্বস্ত ও জনশূন্য হয়েছিল। তাই তারা নানা জাতিতে বিভক্ত ইউরোপকে এখন এক করতে ব্যস্ত। আরেকটি ধ্বংসযজ্ঞ তারা এড়াতে চায়। ইতিহাস থেকে যারা শিক্ষা নেয় তাদের আচরণটি এমনই হয়। আজকের ইরাক হলো আরেক দৃষ্টান্ত। অতিশয় ঘৃণার কারণে মানুষ সেখানে নিজেই পরিণত হচ্ছে বোমায়। ফেটে পড়ছে রাজপথে, মসজিদে ও বাজারে। পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের সেখানে মৃত্যু ঘটেছে। আরেক উদাহরণ আলজিরিয়া।
রাজনীতি হলো একতা ও সম্প্রীতি গড়ার নীতি। একমাত্র সে পথেই রাষ্ট্র সামনে এগোয়। দেশবাসীও নিজেদের মধ্যে সংহতি খুঁজে পায়। তাই যেদেশে রাজনীতি পরিপক্কতা পায় সেদেশের রাজনীতিতে একতা ও সম্প্রীতি গুরুত্ব পায়। এবং লোপ পায সংঘাত। হ্রাস পায় দল-উপদলের সংখ্যা। অন্য ভাষা, অন্য এলাকা ও অন্য নগরের মানুষকে রাজনৈতিক কর্মীরা তখন আপন করতে শেখে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা সে পথে চলতে রাজী নয়। শুরু থেকে ঘৃণা ও বিচ্ছিন্নতাই তাদের রাজনীতির মূল পুঁজি। মশামাছি যেমন নর্দমার নোংরা পানিতে বেঁচে থাকে, তেমনি এরাও বাঁচে ঘৃণার স্তূপে শিকড় ঢুকিয়ে। ফলে একতা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির চর্চা তাদের হাতে বাড়বেই বা কেমনে? পাকিস্তান আমলে অবাঙ্গালীদের ঘৃণা করাই ছিল তাদের রাজনীতির মূল পুঁজি, যোগ্যতা নয়। তাদের যোগ্যতা তো আজও ইতিহাস। মানুষ সেটি মুজিব আমলে যেমন স্বচোখে দেখেছে তেমনি আজও দেখছে। তাদের এখনকার ঘৃণা দেশের ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে। তাছাড়া সাম্প্রতিক নির্বাচনী বিজয় প্রচন্ডভাবে তাদেরকে দাম্ভিকও করেছে। এতে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। পেট্রোল ছিটানোর ন্যায় তারা শুধু ঘৃণাই ছড়িয়ে যাচ্ছে। লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে মুসল্লি হত্যা, যাত্রীভরা বাসে পেট্রোল বোমা মারা বা ইসলামপন্থিদের নির্মূলের হুমকি দেয়া-সে ঘৃণার রাজনীতিরই ফসল। কিন্তু ভুলে যাচ্ছে, ঘৃণার যে বীজগুলি তারা অবিরাম ছিটাচ্ছে এক সময় তা ফলবান বিশাল বৃক্ষে পরিণত হবে এবং সে বিষবৃক্ষে শান্তি নয়, একমাত্র ঘৃণার বোমাই ফলবে। আর ঘৃণার সে বোমাগুলো একবার ফাটা শুরু করলে তাদের রাজনীতিই শুধু অসম্ভব হবে না, হাত পড়বে তাদের অস্তিত্ত্বেও। সংঘাতটি আরো রক্তাক্ত হওয়ার নিশ্চিত কারণ হলো, এ পক্ষের কাছে সেটি পবিত্র জিহাদে পরিণত হবে। দেশ তখন আরেক ইরাক, আরেক আফগানিস্তান বা আলজিরিয়ায় পরিণত হবে। আওয়ামী লীগ কি জেনে-বুঝে দেশকে সে দিকেই ধাবিত করছে?

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter