আমাদের দেশটা স্বাধীন হয়েছে বটে, কিন্তু এর সামাজিক, অর্থনৈতিক মুক্তি তো দূরের কথা, যে নতুন মন-মানসিকতা মুক্তিযুদ্ধ শেষে একটা দেশে আসার কথা তার ধারেকাছে দিয়েও যেতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ পেলে তাতে যে পরিবর্তন আসার কথা তা তো হয়নিই, বরং পুরনো সেই বৃটিশ থেকে পাকিস্তানি আমলে যা যেমন চলছিল যেন অনেকটাই তেমনি রয়ে গেছে। দেশের জমিন পাল্টায়নি তবে দখলদার পাকিস্তানিদের পরাজিত করে দেশমাতৃকাকে পুনরুদ্ধার করেছি। কিন্তু ওদের ফেলে যাওয়া আইনকানুন, ফাইলপত্র সবাই তুলে নিয়েছি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে।
ঢাকা বিপর্যস্ত। জনজীবন বিপন্ন। গরম, অতিষ্ঠ গরমে। প্রাণ আইঢাই করছিল সারাক্ষণ। মাঝেমধ্যে দখিনা বাতাস বইছিল। কিন্তু ওই বাতাস তো সবখানে ঢোকে না। রাজধানী শহর তো দালান কোঠায় ভরা। বস্তিও আছে বেশ। বস্তি তো আর অট্টালিকায় হয় না, সে যে ঘিঞ্জি কুঁড়েঘরের মতো ঘরবাড়ির মহল্লা। কোনোটা ঝুপড়ি, আবার কোনোটা ছোট ছোট খোপের দালান। বহু আগে দখল করা জায়গায় ঘর তুলেছে মালিকরা কেবলমাত্র ঝি, বুয়া, ঠেলাচালক, রিকশাওয়ালা, মুটে-মজুর, কুলি কিংবা পিয়ন-দারোয়ানদের জন্য। এসব বাড়িঘরে একটা কামরায় মা-বাবা, ভাইবোন এমন কি পুত্রবধূ কিংবা জামাইদেরও নিয়ে বাস করতে হয় সেসব বস্তিতে। কুলায় না যা রোজগার করে তাতে। করপোরেশনের ঝাড়ুদার-ঝাড়ুদারনি, (পরিষ্কারকর্মী বলে যাদের জাতে তোলার মহানুভবতা দেখিয়েছে সরকার কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষ) তারাও বাসিন্দা হন এসব বস্তিতে।
আমাদের দেশটা স্বাধীন হয়েছে বটে, কিন্তু এর সামাজিক, অর্থনৈতিক মুক্তি তো দূরের কথা, যে নতুন মন-মানসিকতা মুক্তিযুদ্ধ শেষে একটা দেশে আসার কথা তার ধারেকাছে দিয়েও যেতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ পেলে তাতে যে পরিবর্তন আসার কথা তা তো হয়নিই, বরং পুরনো সেই বৃটিশ থেকে পাকিস্তানি আমলে যা যেমন চলছিল যেন অনেকটাই তেমনি রয়ে গেছে। দেশের জমিন পাল্টায়নি তবে দখলদার পাকিস্তানিদের পরাজিত করে দেশমাতৃকাকে পুনরুদ্ধার করেছি। কিন্তু ওদের ফেলে যাওয়া আইনকানুন, ফাইলপত্র সবাই তুলে নিয়েছি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে।
সংবিধান পেয়েছি বটে মুক্তিযুদ্ধের সস্নোগানে কিন্তু তাকে বদলে ফেলেছেন জিয়া আর এরশাদ দুই আর্মি জেনারেল। সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তারা তাদের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া ট্রেনিং বাস্তবায়িত করতেই ব্যস্ত। আবার মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেননি পাকিস্তানিদের সঙ্গেই থাকতে ভালোবেসেছিল তিনিও যেমন, এমনি রাজনৈতিক উত্তরাধিকারে সমৃদ্ধ হয়ে একাত্তরে বন্দিজীবন যাপন করে আরেকজনও কোনো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পরিবর্তন আনতে পারেননি। সেই সঙ্গে অবশ্য সমর কর্মকর্তা এরশাদ সাহেবও মিলেছেন রাজনীতির ক্ষেত্রে।
এরা যারা দেশটাকে শাসন করছেন কালে কালে, আমলে আমলে তাদের কথার ফুলঝুরিতে জনগণ-দেশবাসী অতিষ্ঠ। প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভেসে যায় দেশটাই। শুনলে মনে হয় যেন বাংলাদেশটা সোনায় মোড়ানো। কেবল একজন আরেকজনকে দোষারোপ করেন অপরাজনীতির, নোংরামির অথচ নিজেরা সিদ্ধহস্ত ওই ব্যাপারেও সংসদীয় রাজনীতির এমনি ধারা। আমাদের পাশের পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনকে তুলোধুনো করে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কংগ্রেস ঘরকে ছেড়ে এসেছিলেন তাকেই সঙ্গে নিয়ে প্রভুদের হুকুমে এক হয়ে বামফ্রন্ট বিশেষ করে সিপিএমকে পরাজিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনী অভিযানে নেমে গেলেন প্রতিশ্রুতির পাহাড় তৈরি করলেন। কিন্তু কি দেখছি মমতার কর্মকা-। যে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তিনি কমিউনিস্ট বিরোধিতার মাধ্যমে মার্কিনি মদদ পেয়েছিলেন তার সেই দাবি পূরণে সব প্রতিশ্রুতি গিলে খাচ্ছেন। তাই জনগণ আজ রুষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের স্খলিত এক গুরু বুদ্ধিজীবী_ যারা মনে মনে নিজেদের জনগণের দাবির সমর্থক বলে ভাবেন, তেমন লেখক, চিত্রকর, নাট্যাভিনেতা-নির্দেশক, গায়ক, চলচ্চিত্রকার প্রমুখ মমতার প্রতি যে মমত্ব দান করেছিলেন তারাও মুখ ফেরাতে শুরু করেছেন। গিয়েছিলেন কেন মমতার বাগাড়ম্বরের পেছনে, সেটা অনেকেরই প্রশ্ন। যাকগে ওদের কথা, আমরা যে প্রতিশ্রুতি দি, তা কি আদৌ পূরণ করার চেষ্টা করি? যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ১৪ দল আর এরশাদদের নিয়ে গড়া মহাজোট, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর চার বছর চলছে সেসব নির্বাচনকালে দেয়া ও ছাপানো প্রতিশ্রুতি কি পরিপূর্ণভাবে পালন করতে পেরেছেন মহাজোট সরকার? আমার মনে হয় মানুষকে বা ভোটদাতা মানুষদের নিজেদের প্রতি প্রলুব্ধ করাটাই তখন উদ্দেশ্য থাকে। 'আগে তো জিতি, পরে দেখা যাবে' এমন মনোভাবই কাজ করে তখন। তাই ক্ষমতায় চড়ে বসেন আর সেই প্রতিশ্রুতি, ঐক্য, অঙ্গীকার_ কোনো কিছুই কেউ মনে রাখে না। তখন ক্ষমতাসীনরা ভাবেন, আমরা ক্ষমতার অধিকারী, এখন যা করব তাই জনসাধারণ সবাইকে মানতে হবেই। খানিকটা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কাজ করেন বটে কিন্তু বেশিরভাগই নিজেদের খামখেয়ালিপনার বহিঃপ্রকাশ কিংবা ক্ষমতার দাপট হিসেবে প্রতিভাত হতে থাকে। যার জাঁতাকলে পিষ্ট হন সাধারণ মানুষ।...ক্ষমতায় যাওয়ার পর রাজনীতিকরা যখন আমলাদের হাতে পড়েন তখন আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাঁচ এবং আইন-কানুন-রীতি-পদ্ধতিগত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বাঁধা পড়ে যান। ফলে নির্বাচনের আগে উদারভাবে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। তখন কিন্তু আমলাদের কারসাজিতে রাজনীতিবিদ বা সংসদ সদস্যদের প্রতিশ্রুতি অনেকটা গিলে খেতে হয়। এমন পরিস্থিতি পড়লে রাজনীতিবিদ মন্ত্রিবর্গ আমলাদের ওপরই নির্ভর করতে বাধ্য হন। ফলে রাজনীতিকরা ক্ষমতা হাতে পেয়ে সবকিছু 'লেজে গোবরে' করে ফেলেন। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে যে কোনো সরকারকে আমলাতন্ত্র নির্ভরতা কমিয়ে জনকল্যাণের চিন্তায় নিবেদিত হতে হবে। অবশ্যই দলীয় প্রাধান্য দেখা চলবে না। নিজেকে জনগণের দুঃখ-কষ্টের অংশীদার ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণ মানুষের কথা মনে রাখতে হবে, কিন্তু নির্বাচিত ব্যক্তির ক্ষমতা কিংবা বিত্তের নিরিখে নয়, মানুষের প্রয়োজন চিন্তা করে। তারপর সরকারকে ভাবতে হবে কিভাবে জনগণের এই দুর্দশা দূর করা যায়।
বিরোধী দলে থাকলে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আশ্চর্য আচরণ দেশবাসীকে কিছুটা বিস্মিত করে। এখন যেমন দেখছি বিরোধী দলের 'কীর্তিনাশা' ভূমিকা। তারা সরকারের যা কিছু দেখছেন তারই বিরুদ্ধে কথা বলছেন গলা উঁচিয়ে। যে সিদ্ধান্তই নিক সরকার তা যদি তাদের পছন্দ না হয় তবে তার বিরোধিতাই নয় 'মুখের অমৃতবাণী'তে যেন ক্ষমতাসীনদের গায়ের চামরাই তুলে নেবে। প্রতি মুহূর্তে সরকারের সমালোচনা তো আছেই, তার সঙ্গে মাঝে মধ্যেই সরকারকে ফেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। ঠিক আছে, দিন। কিন্তু সেই সঙ্গে বিরোধী বা ক্ষমতা প্রত্যাশী দল হিসেবে দেশ ও দশের পক্ষে কল্যাণকর কাজগুলোও তো করতে পারেন। তা না করে যেসব কা-কারখানা করছেন এ দেশের দুই প্রধান দল, যা মানুষের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণ বাধ্য হয়ে এদের দুজনকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করছেন। হতাশ হয়ে বিরুদ্ধে যাচ্ছেন আবার অন্যদলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনছেন। এতে কি দেশের কোনো উন্নতি হচ্ছে, না ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা প্রত্যাশীদের সুযোগ-সুবিধা বেড়ে যাচ্ছে? নাকি ওদের বিত্তবৈভব বেড়ে যাচ্ছে মানুষের চেয়ে।
আজ যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের মধ্যে প্রধান শরিক হলো আওয়ামী লীগ। শক্তিশালী প্রবল রাজনৈতিক দল। জনপ্রিয় বলে দাবি করেন। তাদের নেতৃত্বে যে ১৪ দল এবং পরে এরশাদের অনুপ্রবেশ অথবা দলে ভিড়িয়ে যে মহাজোট গঠন করে যে বিপুল সম্ভাবনার আশ্বাস জনগণকে দেয়া হয়েছিল আজ তার কি অবস্থা? যে এরশাদকে দলে ভিড়িয়ে নির্বাচনী এবং সংসদীয় শক্তি বৃদ্ধি করার কৌশল অবলম্বন করেছিল আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দল আপত্তি করেছিল তাই আজ ফলপ্রসূ হচ্ছে। এরশাদের জীবন সায়াহ্নে আরেকবার রাষ্ট্রের নিয়ন্তা হওয়ার খায়েশ এবং আবদার শুনতে পাচ্ছি তা কি মহাজোট অনৈক্যের ঈঙ্গিতই করছে না। এরশাদ তো একা নির্বাচন করতে ঘোষণা দিয়েছে একাধিকার। তার বিরুদ্ধে যে মামলা সেটা অবশ্য আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলের হাতে তাকে কাজ করার হাতিয়ার। অনেক মামলা তো খতম করে মুক্ত হয়ে গেছেন জেনারেল এরশাদ। তারপরও বুঝি আছে মামলা, তার জন্য আবার এরশাদই পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিয়ে হাসিনাকে তোষামোদ করে বলছেন আপনিই পারবেন। কথা বলার সময় গলার উচ্চস্বর শ্রোতাদের কি বোঝার সুযোগ দেয়? একবার এদিক, একবার ওদিক_ এই যে 'দোদেল বান্দা'র মতো আচরণ এসব কি জনগণের কোনো উন্নতি, কল্যাণ বয়ে আনতে পারে? নাকি ব্যক্তি স্বার্থ কেবল সার্ভ করে?
সরকারের মধ্যে কেন এমন দৈন্যদশা যে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিদিনই খালেদা জিয়া বা তার বিএনপি দলের কটূক্তির জবাব দিতে হবে? এমন কেউ কি নেই এর জবাব দেয়ার মতো। প্রধানমন্ত্রী কেন অন্য কাউকে দিয়ে বিরোধী দলের জবাব দেয়ান না। প্রধানমন্ত্রী তো সরকার প্রধান, তার পক্ষে কি এতটা নিচে নামা উচিত। অবশ্য দুএকজন যে বলেন না, তা নয়। কিন্তু তার তো ওজন থাকতে হবে, গলাবাজি, বাকোয়াস অথবা বিরোধিতার জন্য সব বললে তো হবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ কথা ঠিক অনেক কিছুই আপনার সরকার করেছে, যা অন্যরা এতদিনেও করতে পারেনি। কিন্তু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার আশ্বাস ছিল। তা কিন্তু হয়নি। বাজার প্রচ- গরম। নানা পণ্যের কী যে দাম! সহ্য করা যায় না। যে পণ্য এই মাটিতেই জন্মায়, এ দেশেরই বীজে তার কেন এত দাম? অথচ উৎপাদক পর্যায়ের গরিব মানুষ ন্যায্যমূল্য পান না। ফরিয়া-দালাল, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, সিন্ডিকেট নামক বিষবৃক্ষের উৎপাতে মুনাফা লোভের শিকারে পরিণত হচ্ছেন দেশবাসী। এই সিন্ডিকেট কিংবা অসৎ ব্যবসায়ীদের মুনাফাখোরী মানসিকতা কি নির্মূল করার দায়িত্ব সরকারের নয়? এ ব্যাপারে আপনারা কেন জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক সরকার হয়েও ব্যর্থ হচ্ছেন? এই সঙ্কট সমাধানে যদি আত্মপ্রত্যয় না থাকে আত্মজিজ্ঞাসা করুন নিজেদেরই কেন করতে পারছেন না। আমদানিকারকরা ট্রাকের ভাড়া তেলের দাম এমনকি পথে পথে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলে এগুলো কি সরকারেরই নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নয়? পুলিশ কি করে? যদি সর্ষেই ভূত থাকে তবে সারাবেন কি করে? এ কথা তো কেবল এখন প্রযোজ্য নয়, সব আমলেই একই যন্ত্রণা। কিন্তু মানুষের দুর্ভোগ যত সময় যাচ্ছে ততই বাড়ছে। এর কি কোনো সমাধান নেই। এই তো সেদিন আমাদের মান্যবর অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে জিনিসের দাম অনেক কম।... কথাটা সত্যি। কিন্তু অন্য দেশের তুলনায় আমাদের আয় কত, এ তো তিনিই জানেন।
জ্বালানির দাম বাড়ছে, বিদেশে বেড়েছে বলে। কিন্তু পেয়ারা কি জ্বালানিতে ফলে, তবে এর দাম এ তো বেশি কেন? তরিতরকারির কথা ছেড়েই দিলাম, এমনকি চালের দামের কথা ছেড়েই দিলাম। আমরা ধন ধান্যে পুষ্প ভরা দেশ, কিন্তু চালের ঘাটতি পূরণে কেন অন্যের কাছে হাত পাততে হয়। যে ভিয়েতনাম মার্কিনি নাপাম বোমায় বিষাক্ত মাটিতে পরিণত হয়েছিল তার উৎপাদন ক্ষমতা এত বাড়ল কি করে আমাদের পরে পরাধীনতার নাগপাশ মুক্ত হয়ে। যদি বলি আমাদের দেশপ্রেমের অভাব। তবে অনেকে ধৃষ্টতা মনে করবেন। যদি দেশপ্রেম থাক তো তবে কেন আমাদের মুক্তির ৪০ বছর পরও কাঁদতে হয়? হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক উত্থান-পতনের কারণেই এমন ঘটছে। তাহলে কি প্রশ্ন করা যায় না, কেন এমন হলো? মুক্তিযুদ্ধের শেষে যে দেশ আমরা চেয়েছিলাম তা পেলাম না কেন? বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তিন বছর কিছু দিতে পারবেন না, সেটা তো জনগণও মেনে নিয়েছিলেন। কারণ দেশ তো যুদ্ধবিধ্বস্ত। কিন্তু যে জনগণ মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেছেন বুকের পাজরে লড়াই করে সেই মানুষকে কেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি এবং পরাশক্তিকে মেনে নিতে হয়েছিল? তাইতো দেখি যে আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধকে ধ্বংস করতে নৌবহর পাঠিয়েছিল বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়কে ঠেকাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছিল ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতা, মুক্তিফৌজের অদম্য দেশপ্রেম ও প্রবল যুদ্ধজয়ের আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করে নিপীড়িত মানুষের ঐক্যে যে মুক্তিযুদ্ধ জয় করেছি সেই রক্তোৎপল অর্জন এই বাংলাদেশ কেন আজ বিপন্ন ওই সাম্রাজ্যবাদী নেকড়ের কূটকৌশলী থাবায়?
তেল, গ্যাস আমাদের সম্পদ। আমরাই যোগ্য এবং দক্ষ এ উত্তোলনে। কেন বিদেশিদের ডাকা হচ্ছে? যে সহযোগিতাটুকু নেয়া দরকার তার বেশি কেন আনছি? কয়লা নিয়ে একই কেলেঙ্কারি। এসব জায়গায়ও মার্কিনি স্বার্থ জড়িত? জনগণ যেখানে উত্তোলন পদ্ধতি নিয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করছেন, জান বিসর্জন দিতেও তারা প্রস্তুত তবে কেন সরকারের উপদেষ্টা সেটা চাইছেন না। তারা সেই সম্পদ অপহরণকারী মার্কিনিদেরই ডেকে আনছেন? দেখছেন তো পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থ জোগান দেয়ার আশ্বাস তাদের ছিল। বাংলাদেশও আশান্বিত হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অজুহাতে অর্থায়ন না করার পথ বেছে নিয়েছে। আমরা কি এতদিন পর বুঝতে পারছি বিশ্বব্যাংক কিভাবে কব্জা করতে চায় আমাদের? যা তাজউদ্দীন আহমদ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেই বুঝতে পেরেছিলেন?
দেশে কী ঘটছে? আমেরিকার দূত আন্ডার সেক্রেটারি বা কর্তাব্যক্তি যেই আসুক দেশে তারা আওয়ামী লীগ, বিএনপির দুই নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এবারে তো জেনারেল এরশাদের সঙ্গেও দেখা করেছেন। ওরা যা বলছে তাই কি শুনতে হবে? যুদ্ধাপরাধীর বিচার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ হওয়া চাই। দুই দলের আলোচনা চান ওরা। দেখলাম তারই বোধহয় প্রভাবে বিএনপি সরকারের সঙ্গে বসতে রাজি। এটা করতে হবে, ওটা এভাবে করুন ডিকটেট করছে মার্কিনিরা। কেন? আমরা কি ওদের কথায় ওঠবস করব? সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ না দিলে কি আমরা দক্ষ সৈনিক হতে পারি না? মার্কিনি দক্ষতা আমাদের দরকার নেই।
এসব আবহাওয়ায় প্রকৃতির সঙ্গে তথাকথিত রাজনীতি গরম হয়ে উঠছে। কারণ ২০১৩-তে নির্বাচন। বিরোধী দল তিন বছর সংসদে কদিন ছিল দেশের মানুষের জন্য কি করেছে? কেবল মাঠ গরম করলেই চলবে না।
No comments:
Write comments