Flickr

Wednesday, 14 November 2012

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ

বাউবির অনার্স আবেদন সহজ হোকবাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ বছর মেয়াদে অনার্স (সম্মান) কোর্স চালুর জন্য সম্প্রতি জাতীয় কয়েকটি পত্রিকায় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেছে কর্তৃপক্ষ। তাতে শুধু ঢাকা কলেজ কেন্দ্র থেকে ফরম সংগ্রহ করে সে কেন্দ্রেই জমা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর কেবল জনতা ব্যাংক ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি ফরমের টাকা জমা দেওয়ার উল্লেখ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, বিভাগীয় শহরে কেন্দ্রের মাধ্যমে এবং ওই ব্যাংকের বিভাগীয় শাখা থেকে ফরম জমা ও গ্রহণ করার সুযোগ দান করুন। তা না হলে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল কেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীদের সম্মান কোর্স পড়ার ইচ্ছা থাকলেও রাজধানী কেন্দ্রে গিয়ে ফরম গ্রহণ ও জমা দান দুরূহ হয়ে পড়বে। দেশের সব এলাকার শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিভাগীয় শহরের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

Tuesday, 6 November 2012

পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী হত্যা চলছে!

পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী হত্যা চলছে!
আজকের লেখার শুরুতেই  উল্লেখ করতে চাই মহান বিজয় দিবসের পূর্বক্ষণে যেভাবে দেশকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল। আজকের প্রেক্ষাপটের সাথে বিশ্লেষণ করলে কোনো তফাত খুঁজে পাওয়া যায় না। কারাগারগুলোতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ স্মরণ করিয়ে দেয় দেশকে মেধা ও বুদ্ধিহীন করার চক্রান্ত চলছে। তাই আজ স্মরণ করছি, সংবাদপত্র বন্ধ, সাংবাদিকের ওপর নির্যাতন, হত্যা ও হামলা মামলার প্রথম শিকার হয় স্বাধীনতার স্থপতি রূপকার স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ‘হক কথা'।  তারই একটা পত্রিকার মালিকানা রাতারাতি পরিবর্তন করে অন্যজনকে মালিক করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি যিনি  রাজপথে থাকলে বলতেন পৃথিবীতে দুটি গোষ্ঠী রয়েছে। একটা শোষক অন্যটা শোষিত আমি শোষিতের পক্ষে কিন্তু ক্ষমতায় গেলে বেমালুম ভুলে যেতেন। ক্ষমতায় গেলে  শোষক হতেন। তারই আচরণ পরবর্তীতে তার অনুসারী কর্তৃক ধারাবাহিকতাভাবে অব্যাহত রয়েছে। আজকে স্বাধীনতার ৪১ বছর পরও সাংবাদিক সমাজকে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায়  হয়রানি, আইন-শৃংখলা  রক্ষাকারী বাহিনী এবং সন্ত্রাসীদের আক্রোশমুক্ত থাকতে দেয়া হচ্ছে না। কালো অর্থের মালিকদের হাতে মিডিয়া তুলে দেয়া হচ্ছে। এর সাথে  যোগ হয়েছে আদালত অবমাননার অভিযোগ! যে আদালত সংবাদের অংশ বিশেষের ওপর নিজের কিংবা শাসকের স্বার্থের বিষয় হলে স্বউদ্যোগে রুল জারি করে কিংবা  পেপার কাটিং বা কারো জবানবন্দীকে স্বাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করে সমাজহিতৈষী দায়িত্বশীলদের নাস্তানাবুদ করে। যাদের বিবেকে একটু দংশন করে না এ মানুষগুলো না থাকলে সমাজ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তাদের কাছে  বস্তুনিষ্ঠ সংবাদকর্মীরা চক্ষুশূল  হবে এটাই স্বাভাবিক! আজকের লেখাটা শুরুর  আগে আদালত কর্তৃক স্বউদ্যোগে সাংবাদিক ও দেশের রাজনীতিবিদদেরসহ সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে  কোনো রুল জারি করছে কিনা পত্রিকার পাতায় খুঁজে না পেয়ে লিখতে বসতেই হলো। যশোর জেলার নওয়া পাড়ার সাত সংবাদকর্মী শিল্প ও বাণিজ্য শহর নওয়া পাড়ায়  হরতালের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হওয়ার বিষয়টি দিয়ে। আক্রান্ত সংবাদকর্মীরা উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের  সাহায্য চেয়েও পাননি।  সন্ত্রাসীরা তাদের কাছ থেকে তিনটি ক্যামেরা ও ক্যাসেট ছিনিয়ে নেয়। হামলায় আহত সংবাদকর্মীরা হলেন,  দেশ টিভির যশোর জেলা প্রতিনিধি আমিনুর  রহমান মামুন,  চ্যানেল আই প্রতিনিধি আকরামুজ্জামান, দিগন্ত টিভির স্টাফ রিপোর্টার তরিকুল ইসলাম তারেক, ক্যামেরাম্যান জুবায়ের আহমেদ, মাছরাঙ্গা টিভির রাহুল রায়, বাংলাভিশনের ক্যামেরাম্যান এসএম ফরহাদ ও স্থানীয় সাংবাদিক আশরাফুল হক মামুদ। এদের মধ্যে দিগন্ত টিভির ক্যামেরাম্যান আহমদকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে  এলোপাতাড়ি সন্ত্রাসীরা পিটানোর  কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৬ মে নড়াইল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সাত সংবাদকর্মীকে আহত করে। ৮ মে ২০১২ কক্সবাজার মডেল থানার পাশেই দৈনিক কক্সবাজার বাণীর অফিসে ৭/৮ জনের একদল তরুণ অস্ত্রসহ প্রবেশ করেই সাংবাদিক আতাহার ইকবাল ও ফরিদুল মোস্তফাকে এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক কক্সবাজার বাণীর প্রধান সম্পাদক আতাহার  ইকবাল এবং সম্পাদক ফরিদুল মোস্তফা খান। মডেল থানা সংলগ্ন এবং প্রত্যক্ষদর্শী  পুলিশ থাকার পরও তাদের আটক না করার পিছনে নিশ্চয়ই কোন রহস্য নিহিত রয়েছে। নড়াইলে  সাত সাংবাদিক আহত করার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার না করা ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা দেয়ায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের অল্প সময়ের মধ্যে হয়তোবা পুরস্কৃত করা হবে। এমন  মন্তব্য বিভিন্ন মহলে শুনা যাচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ  অনুযায়ী সাত সাংবাদিকের ওপর আক্রমণের সময় যশোরের ‘খ' সার্কেল-এর এসপি আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক  পুলিশ ছিল! আর আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা মেইন রোডের পাশে বিভিন্ন গলিতে অবস্থান করছিল।  পুলিশ বেষ্টনির মধ্যেই আওয়ামী লীগের আশ্রিত কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুলের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন যুবক সাংবাদিকদের মারধর করে। এ দুটি সংবাদ পড়ে আমার এক বন্ধুর কলেজ পড়ুয়া ছেলে বললো, কাকু আমরাতো উন্নয়নশীল দেশ-এর নাগরিক! তার ওপর আবার বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির কারণে ঋণ প্রত্যাহার করলো! এমন অবস্থায় পুলিশ বাহিনী বিলুপ্ত করে সন্ত্রাসীদের হাতে জনগণের জানমালের  নিরাপত্তার দায়িত্ব দিলে বোধহয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন পত্রিকা খুললেই খুন, গুম, অপহরণ ও মাদক বিক্রির সংবাদ পড়ে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না! দেশের একমাত্র সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে একটা  কিশোর বাচ্চার মন্তব্য শুনে জানি না সরকার কিংবা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রধান ও এ্যাটর্নি জেনারেল লজ্জা পাবেন কিনা! এমন  সময় আমার দেশ পত্রিকার সিটি এডিটর আবদুল্লাহর বাসায় পুলিশ ঘেরাওয়ের সংবাদ দেখে কোমলমনের বাচ্চাটা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো! বলে  উঠলো পুলিশ বা র‌্যাবের ভিতরে বিশেষ কোন দেশের বাহিনী কাজ করছে কিনা সাংবাদিকদের  অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।  একদম পরিকল্পিতভাবে মেধাসম্পন্ন স্বচ্ছ প্রতিনিধিত্বশীল মানসিকতার  শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, পেশাজীবী, ছাত্রদের চিহ্নিত করে গুম, খুন, হত্যা, অপহরণ, বানোয়াট ও পেইন্ডিং মামলা দেয়া হচ্ছে। দেশ থেকে বুদ্ধিজীবী নিশ্চিহ্ন করার জন্যই কি?  সে আক্ষেপ করে বলতে থাকল, কাকু যখন স্কুলে পড়তাম তখন নেকড়ে বাঘ ফখরুদ্দিন, মঈন উ আহম্মেদ এর ভয়ে এখনকার শাসক দলের অনেকেই ইঁদুরের মত গর্তে আশ্রয় নিয়েছিল।  আবার  কেউ ফখরুদ্দিন- মঈনের সাথে ষড়যন্ত্র করে কারাগারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন রাজনীতিবিদ ও দেশের জন্য কান্ডারী  হিসাবে যে কয়েকজনের আবির্ভাব হয় তার অন্যতম আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত  সম্পাদক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পরিবর্তে যে  শাসক বর্বর আচরণ করে বিচারক মনে করার কারণেই তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে। অথচ পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশ না হওয়ায় বিচার সম্পর্কে জনমনে কি প্রশ্ন জাগতে পারে তারা কি একবারও চিন্তা করে দেখেছেন? দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আবারও নিজেকে জাতিকে দায়বদ্ধ করেছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণমাধ্যমের বিকল্প নাই! ইতোপূর্বে লিখেছিলাম মাহমুদুর রহমান ডেইলী স্টারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের ঐক্যের চেষ্টার সূচনা করলেন। ঘান টানা শেষ হলেই সংগ্রাম এর সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক  বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আবুল আসাদকে গ্রেফতার করা হলো। নির্যাতনের জন্য রিমান্ডে দেয়া হলো। কিন্তু অবশেষে সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে মুক্তি পেলেন।  নিউ এইজ এর সম্পাদক নুরুল কবীর ও বিশেষ প্রতিনিধিও আক্রোশ থেকে রেহাই পায়নি! কিশোর ভাতিজা আবার বললো কাকু আপনার একটা লেখার ঐ অংশ এখনো আমার মনে পড়ে আওয়ামী লীগের সাবেক শাসক আমলের এপিপি  হয়ে ঢাকার আন্তর্জাতিক এযারপোর্টের চোরাচালানের বিষয় মামলা দেখার দায়িত্ব পেয়ে নিজেই  সোনা চোরাকারবারীর সাথে জড়িয়ে পড়ে ঢাকায় আলীশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এমন মানুষ বিচারপতি হলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। তার আক্ষেপের শেষ নাই। আবারো বকবক করতে লাগলো বললো, কাকু এই যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার। যদি তাই হয় তাহলে পুলিশ আর শাসক জোটের সন্ত্রাসীরা  বাধা দেবে কেন? তার এ প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত কোন উত্তর আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব হলো না!  যাই হোক বন্ধুর বাসা থেকে বের হয়ে এক কিশোরের চিন্তা-ভাবনা দেখে মনে হলো মাহমুদুর রহমানদের আত্মত্যাগের সুফল জাতি ভোগ করবে। কারণ শাসকদের মিথ্যাচার পর্দার আড়াল থেকে পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা, খুন, গুম অপহরণ নিয়ে আজকের প্রজন্মের সন্তানরা চিন্তিতই শুধু নয় প্রতিহত করার মানসিকতা পোষণ করছে।  বন্ধুর বাসা থেকে ফিরতে একজন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হলো। তিনি সালাম বিনিময় শেষে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যা মামলা ধামাচাপা পড়ে গেলো কিনা জানতে চাইলেন! তার পর নিজে থেকেই বললেন, ১৯৯৬-২০০১  ঐকমত্যের শাসন আমলে টাইমস, দৈনিক বাংলা, বিচিত্রা বন্ধ ও মালিকানা  পরিবর্তন হলো। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ না করা একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যে ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে গোটা জাতিকে। বিএনপির মহাসচিব ১৮ দলের অন্যতম সমন্বয়ক মির্জা ফখরুল  ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীরসহ ১৮ দলের শীর্ষ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলার পরিবেশ সৃষ্টি করে মামলা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বাসায় পুলিশী তল্লাশি ও আদালতে আশ্রয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টের সকল ফটকে পুলিশ-র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার অবস্থান দেশবাসীকে বিব্রত করে তোলে।  অনেককেই মন্তব্য করতে শুনা গেছে এটাকি বর্বর আদিযুগের জালেমদের রাজত্ব হতে যাচ্ছে! এখনো মানুষের মন্তব্য হাইকোর্ট বেঞ্চের বিভক্ত আদেশ বিব্রত হওয়া আর খারিজ করা কি শাসক দলের  প্রভাবের কারণে ঘটছে। কোন বিচারকের কেউ কেউ মহান পেশার আত্মমর্যাদা পদদলিত করতে প্রভাবিত হচ্ছেন। দেশে যা ঘটছে ২০০৯ সালে বিচার বহির্ভূত ১৫৪, ২০১০ এ ১২৭ জন, ২০১১তে ৮৪ জন কারাগারে নিহত, ২০০৯, ৫০ জন, ২০১০ ৬০ জন, ২০১১, ১০৫ জন।  রাজনৈতিক গুম ২০০৯, ২৫১ জন  ২০১০, ২২০ জন, ২০১১তে ১৩৫ জন। সাংবাদিক  আক্রমণের শিকার ২০০৯তে ১৪৫ জন, ২০১০এ ১৭৮ ও ২০১১ এ ২০৬ জন। এ ছাড়াও আরো অনেক হত্যা নির্যাতন হলেও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে বিচারের সম্মুখীন করার নজির হয় তো বা হাতে গুনে বের করা যাবে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা, সৌদি কূটনীতিক হত্যা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী গুম! শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামকে অপহরণের পর লাশ উদ্ধার হলেও হত্যাকারী চিহ্নিত না হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাদের মন্তব্য হচ্ছে শাসকজোটের পরোক্ষ মদদে হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ মামলার পরিবেশ সৃষ্টি করে ভিন্নমতের স্বচ্ছ, দক্ষ, দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিকদের নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া কিনা? '৭২-৭৫ বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছিল। এবার দুর্নীতির অভিযোগে  বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক পদ্মা সেতুর ঋণ প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে। শাসকচক্রের অজ্ঞাত কারণে দেশে মানবিক, নাগরিক, আইনী, ন্যায় বিচার ও  সাংবিধানিক অধিকার থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে! বিরোধী দলের কর্মসূচীতে  আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় সরকারি দলের ক্যাডারদের অবাধ বিচরণ ও হামলা দেশকে অকার্যকর, মেধাহীন করার ষড়যন্ত্র হিসাবে এখন যত্রতত্র আলোচনা শুরু হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে মেধা ধ্বংসের জন্য সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তালিকা অনুযায়ী প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। বিভিন্ন মহলে জনশ্রুতি আছে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ তালিকায় নাম উঠছে ও চাকরি দিতে সুপারিশপত্রে লেখা হচ্ছে দলীয় স্বার্থে উল্লিখিত প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হোক? এদিকে যুদ্ধাপরাধের ক্যাসেট জনগণ শুনতে চাচ্ছে না বলে বিরোধী দলীয় নেতা ও তার ছেলেরা দুর্নীতির ক্যাসেট বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে! অথচ কালো বিড়ালসহ আটক মালিকদের চরিত্র অপ্রকাশিত রাখতে কত না নাটক করা হচ্ছে! পুলিশ সরকারি দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পাহারা দেয়ায় হত্যা, খুন, গুম, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি প্রতারণা করে অর্থ আদায়ের দায়দায়িত্ব সরকারের ঘাড়েই পড়ে। সম্প্রতি সাবেক ছাত্র নেতা ও সাবেক ভিপি খায়রুল কবীর খোকনকে পুরাতন মামলায় রিমান্ডে নেয়ায় দেশের অস্থিরতা সৃষ্টির পিছনে আত্মঘাতীমূলক চক্রান্ত চলছে কিনা তা নিয়ে জনগণ সমালোচনা করছে! এম ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০ হাজার অজ্ঞাত ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে সুখের খবর সফল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন গুমকারীদের চিহ্নিত ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকে কেউ ব্যর্থ হিসাবে দেখতে চায় না। তাদের  ধারণা ইলিয়াস আলীসহ এ যাবৎ যত গুম হয়েছে সরকারের পরোক্ষ মদদ রয়েছে। অপরদিকে এম ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনা ও ক্রসফায়ার নিয়ে সংবাদ করায় দৈনিক ভোরের ডাক-এর সিনিয়র রিপোর্টার তুহিন সানজিদকে রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে র‌্যাব  ইলেকট্রিক শকসহ নানা ধরনের নির্যাতন করে আবার রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায়। এবারো আল্লাহ পাক আমার দেশ-এর  সিটি এডিটর এম আব্দুল্লাহকে হেফাজত করেন। ইতোপূর্বে তার উপর হামলা করলে পালিয়ে বাঁচেন। আমাদের কষ্টার্জিত অর্থে লালিত ডিবি পুলিশের  পরিদর্শক স্বল্প সময়ের মধ্যে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে  অবস্থিত সচিবালয়ের ভিতরে  বোমা নিক্ষেপ ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সামনে গাড়ি পোড়ানোর সাথে জড়িতদের স্বল্প সময়ের মধ্যে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এতে যাদের আসামী করা হয়েছে তাতে  বিচারকরা  উন্মাদের গল্প ফাদার অপরাধে তদন্ত কর্মকর্তাকে তিরস্কার করবেন  নাকি পর্দার আড়ালে থাকা মুখোশধারীদের পালানোর পথ বন্ধ হবে  তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা  দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই ফোন করে মন্তব্য করে একদিকে রাজনীতিবিদদের সামরিক জান্তা বানিয়ে যুদ্ধাপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের নামে প্রহসন করছে। অপরদিকে বাকি যারা স্বচ্ছ দেশপ্রেমিক আছে তাদের নিষ্ক্রিয় করার ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মত আদর্শবান পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদকে যারা পরিকল্পনাকারী সাজাতে পারে তাদের পক্ষে ভাল কিছু করা সম্ভব এটা বলা কঠিন!  একই সাথে এমকে আনোয়ার এমপি  ও খন্দকার মোশাররফ  হোসেন, ড. কর্নেল (অবঃ) অলি আহম্মেদ এমপি ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) জেনারেল হান্নান শাহ, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সফল মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, পরিচ্ছন্ন দেশপ্রেমিক নেতা রুহুল কবীর রিজভী, আদর্শ সমাজ গড়ার নেতা জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মোঃ মকবুল আহমেদ পরিকল্পনাকারী।  বাস্তবায়নকারীরা হচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী মির্জা আববাস, সাবেক মন্ত্রী বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদকে গদিচ্যুত করতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ছাত্রদের মধ্যে যিনি সিপাহসালারের  ভূমিকা পালন করেন তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির চেয়ারম্যান শেখ  শওকত হোসেন নিলু, সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির স্বনির্ভর সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস দুলু, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীন উদ্দিন  চৌধুরী এ্যানি (এমপি) স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে দেয়া চার্জশিট নিয়ে গত ক'দিন বিভিন্ন জায়গায় রসালো আলাপ জমে উঠেছে। তাদের ভাষায় গত ৩/৪ মাসে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা চাঞ্চল্যকর হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ এমনকি পুলিশের ছত্রছায়ায় থেকে বিরোধীদলের কর্মসূচিতে শাসক দলের ক্যাডাররা হামলা করার পরও তাদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে এ সরকার মেধাহীন সন্ত্রাস নির্ভর রাজনীতি করতে চায় চার্জশিট গোয়েন্দা সংস্থার ডিবিকে অযোগ্য প্রমাণ করছে। ধর্ষণ  প্রায় ২৪ দিন আগে সিলেটের জননন্দিত নেতা এম. ইলিয়াস আলী, সৌদি কূটনৈতিক হত্যা ও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকারীদের যারা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ডিবি অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে গাড়ি পোড়ানো ও  বোমা হামলার পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসাবে চিহ্নিত করতে সফল হয়েছে এটা নাকি পাগলেও বিশ্বাস করবে না? এদিকে রসালো গল্পের মধ্যেই অনেকে দাবি করেন এম, ইলিয়াস আলী গুম, সাগর-রুনি হত্যা ও সৌদি কূটনীতিক হত্যাসহ খুন, গুম, অপহরণ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজীসহ দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের সাথে শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের অভিযুক্ত করে ফেলে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এমন সময় এক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য আমাদের আড্ডায় যোগ দিতে এসে বিপদে পড়ে গেলেন। তার কাছে চার্জশিট সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলো সকলে! তিনি নাম প্রকাশ ও পরিচয় প্রকাশ হবে না এমন শর্তে বললেন, পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির আছে কি? সেই দেশের দুইজন মেধাবী ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার পর আদালতে আবেদন করার পর নিখোঁজ দুই ছাত্রের সন্ধান চাইতে আইজিপিকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিলেন। আর এ্যাটর্নি জেনারেল এই আদেশ স্থগিত করতে আপিল করে স্থগিত করালেন। আমরা কেউ এখন আর স্বাধীন আছি কি?  মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা কূটনৈতিক শিষ্টাচার শুরু করেছে তারও কি কেউ প্রতিবাদ করছে বলেই তিনি বিদায় নিলেন। ঐ কর্মকর্তা  চলে গেলে বিশ্লেষণ করে একটা জায়গায় ঐক্যমত হলো। বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যদি বৃটিশ মার্কিন ভারত ও পরোক্ষভাবে ইসরাইলের ওপর নির্ভর করে ফেলা হয় তাহলে হত্যা, খুন, গুম, অপহরণ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।  জাতীয় নেতৃবৃন্দের নামে এরপর হয়তো চোরাই মামলা দেয়া হবে।  সংবাদকর্মীদের  জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি। পাবে দেশ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে  উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এরশাদুল বারীর বিরুদ্ধে  আরেক শিক্ষক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারীর আবেদন করলে আদালত ১৪ জুন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছে এ আলামত কিসের? এ থেকে মুক্তির জন্য দেশপ্রেমিক সকল রাজনীতিবিদসহ অন্যান্য পেশার সংগঠন ঐক্যবদ্ধ  করে তাবেদার  প্রতিহত করতে ব্যর্থ হলে আমাদের পরাধীনতার জিঞ্জির পরতে হবে। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। সময় থাকতে দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠার জন্য সকলের প্রতি অসহায় সাধারণ নাগরিকের আহবান শুরু হয়েছে। বাংলাদেশর ব্যবসায়ী মহলের হরতালের বিকল্প পথ অনুসন্ধানের দাবির কথা  শুনে সাধারণ মানুষ মন্তব্য করছে মানববন্ধনে সরকারের হুঁশ হয় না। এটা শাসক দলের মন্তব্য তারপরও মানববন্ধনেও পুলিশি বাধা দেয়া হয়।  ব্যবসায়ী মহল যদি হরতাল বন্ধের পথের সন্ধান করতে চান তাহলে প্রথমে তাদের বিবেচনায় নিতে হবে হরতাল বিরোধীদল কেন করছে?  শাসক জোট কর্তৃক যদি হরতাল করতে পরিবেশ সৃষ্টি করে তাহলে শাসক দলকে ঐ আচরণ পরিত্যাগে বাধ্য করতে হবে। বর্তমান বিরোধীদল হরতাল করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালককে সুস্থ অবস্থায়  তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলের যে সমস্ত শীর্ষ নেতাকে সাজানো মামলার আসামী করে অবৈধভাবে আটক করেছে তা থেকে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য।  এছাড়াও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করা থেকে বিরত ও সন্ত্রাসী এবং উপদেষ্টাদের সংযত ভাষায় বক্তব্য দেয়া জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য।  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্র আল মুকাদ্দাস ও মোঃ ওয়ালিউল্লাহ ৩ মাসের অধিক সময়  নিখোঁজ থাকায়। হাইকোর্টে তার সন্ধান চেয়ে আবেদন করলে নিখোঁজ দুই ছাত্রের  সন্ধানের জন্য পুলিশের আইজিপিকে হাইকোর্টে তলব করে। রাষ্ট্রের নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়া পুলিশের আইজিপিকে তলব স্থগিত করতে রাষ্ট্র প্রধানের এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম ও ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ জাহাঙ্গীর শুনানির মাধ্যমে  স্থগিত করে  গোটা দেশের আইন শৃংখলা অবনতির সাথে শাসক জোট জড়িত এটা কেন প্রমাণ করার  উদ্যোগ নেয়া হলে এর সদুত্তর জনগণকে জানানো প্রয়োজন।  তবে আল্লাহ পাক যাদের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলে আরো ভয়াবহ পরিণতির দিকে তারা নিয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালার  নির্দেশ মানলে দেশে ন্যায়বিচার, মানবিক, নাগরিক,  আইনী, সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত হতে পারে।  তা না হলে সন্ত্রাসীর আক্রমণের শিকার হতে হবেই।মুহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন চৌধুরী

Monday, 5 November 2012

অনলাইন গণমাধ্যম আইন বনাম মত প্রকাশের স্বাধীনতা

জর্ডানে সম্প্রতি অনলাইন ভিত্তিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় এমন একটি আইন অনুমোদন করেছেন জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ। এতে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, ইলেকট্রনিক প্রকাশনার জন্য ওয়েবসাইটকে অবশ্যই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এই আইন অনুযায়ী ওয়েবসাইট বন্ধ ও অনলাইনে প্রকাশিত যেকোনো বিষয় কাটছাঁট করার ক্ষমতা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ বা লেখার জন্য প্রকাশিত পাঠক মন্তব্যের জন্য দায়ী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠানের মালিককে আটক করার বিধানও রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ বিধানের সমালোচনা করে বলেছে, সরকার বিরোধী মতাবলম্বী ও সমালোচকদের হেনস্তা করতে এ আইন প্রয়োগ করবে। গণমাধ্যমের কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের তাদের মন্তব্যের জন্য এ আইনের অধীনে অভিযুক্ত করে শাস্তির মুখোমুখি করার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে সংগঠনটি। বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, নতুন এই আইনের কারণে দেশটির প্রায় ৪০০ ওয়েবসাইট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
 জর্ডানের মতো একই কায়দায় বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন মতামতের উপর হস্তক্ষেপ করার পাঁয়তারা চলছে। সরকার অনলাইন গণমাধ্যমগুলোকে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই নীতিমালার আওতায় আনতে চায়। এ জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। চলতি মাসের  ১২ তারিখে কতিপয় অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ডেকে এ তথ্য জানিয়েছেন তথ্যসচিব, প্রস্তাবিত নীতিমালা সরবরাহ করে তাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। খুব দ্রুত ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মতামত দিতে হবে। সভায় তথ্য সচিব বলেন, সরকারি হিসেবে সারা দেশে ২০০ অনলাইন সংবাদপত্র রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম পরিচালনার জন্য দেশে কোন আইন, নীতিমালা ও অধ্যাদেশ নেই। সে কারণে নীতিমালা জরুরি। তিনি জানান, বিভিন্ন   দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আলাদাভাবে আলোচনায় বসা হবে। সরকারি হিসাব মতে দেশে ২শ' অনলাইন গণমাধ্যম থাকলেও মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মাত্র ১১ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন!
কোনো গণমাধ্যমের ওপর সরকারকে নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দন্ডবিধি প্রণয়ন চলতে না পারলেও  অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা তৈরিতে এমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ নীতিমালাকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার বর্তমান সরকারের ঘোষণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও অনলাইনের সঙ্গে যুক্ত সম্পাদকগণ। খসড়ায় বলা হয়েছে, অনলাইন গণমাধ্যমের লাইসেন্স নেয়ার ক্ষেত্রে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। পরে প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকায় লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। ইত্যাদি। মন্ত্রণালয়ের করা নীতিমালয় অসঙ্গতি থাকায় বৈঠকেই এর বিরোধিতা করেন সম্পাদক ও অনলাইন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। তারা জানিয়েছেন, ‘নিয়ন্ত্রণ' আরোপের উদ্দেশ্যে এই নীতিমালা করা হলে দেশের অনলাইন গণমাধ্যমের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। একই সঙ্গে সরকার ‘ডিজিটাল' বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য নিয়েছে এই খসড়া সরকারের এই লক্ষ্যের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সরকার যে পদ্ধতিতে নীতিমালা করতে যাচ্ছে এই পদ্ধতিটিই ভুল। নীতিমালা করার আগে যারা এই অনলাইন গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত তাদের সঙ্গে আলোচনা করে মতামত নিয়ে খসড়া তৈরি করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে খসড়া করে তার ওপর মতামত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স নেয়া এবং নবায়নের জন্য যে পরিমাণ অর্থের কথা বলা হয়েছে তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ আরোপের মতোই।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এমন সময় সরকার হঠাৎ করে অনলাইনের ওপর ক্ষেপে গেল কেন? তাড়াহুড় করে দ্রুত সময়ের মধ্যে অনলাইন পরিচালক/সম্পাদকদের পরামর্শ দিতে বলা হলো কেন? এই অসম অবাস্তব নীতিমালা তৈরি করতে গিয়েই কিন্তু সরকার ধরা খেয়ে গেছে। একথা না বললেও চলে যে,  গত কয়েক বছরে সরকার সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে অনলাইন গণমাধ্যম ও কমিউনিটিগুলোতে। অনলাইনে খুব দ্রুত জনমত গড়ে উঠছে। কারো মতে, বস্তাভর্তি টাকার গোপন রহস্য যাতে উদঘাটিত হতে না পারে অথবা কালো বিড়াল সাদা করতেই অনলাইন গণমাধ্যম বন্ধ করার ফ্যাসিবাদী উদ্যোগ! সোনার ছেলেদের বেপরোয়া টেন্ডারবাজি আর অস্ত্রের মহড়ার সচিত্র প্রতিবেদন জনসম্মুখে মুহূর্তেই উপস্থাপন করা হচ্ছে, তাই এদের মুখটা বন্ধ করার জন্য এখনই উদ্যোগ নেবার সঠিক সময়। সরকারি হিসাবে সারা দেশে ২ শতাধিক অনলাইন সংবাদপত্র রয়েছে। যাদের অনেকেই ‘ডিজিটাল কারচুপি'র অন্তরায় হবে সম্ভবত এই জন্যই সময়মতোই ব্যবস্থা আর শায়েস্তা! সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা সম্পর্কে ঘোষণাটি আসার পর থেকে এ যাবত ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইনে যেসব মন্তব্য বিশ্লেষণ আমার নজরে পড়েছে, এর নির্যাস হলো যে বা যারাই খসড়া নীতিমালাটি উপহার দিয়েছেন, তারা আর যাই হোন, অন্তত সোশ্যালমিডিয়ার সাম্রাজ্যের কিছুই জানেন না বা বুঝেন না, এটা প্রমাণিত সত্য। অনলাইন গণমাধ্যম ‘‘সম্প্রচার, প্রকাশনা, প্রদর্শন ও পরিচালনা সম্পর্কিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। এ লক্ষ্যে সরকার সম্প্রতি যে খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, তার অধিকাংশই বিরক্তি সৃষ্টিকারক ও একই সাথে ব্যাপক হাস্যরসের ব্যবস্থা রয়েছে নীতিমালাটিতে। কারণ, সরকার একদিকে বলছে ডিজিটাল বাংলার কথা অন্যদিকে স্ববিরোধী কর্মসূচি প্রণয়ন। নীতিমালার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হলো এর লাইসেন্স ফি, নবায়ন ফি ইত্যাদি। যেমন লাইসেন্স নিতে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে, ২ লাখ দিতে হবে জামানত, ৫ লাখ টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট রাখতে হবে, ৫ হাজার টাকা দিয়ে আবেদন ফরম নিতে হবে! যেখানে প্রিন্ট পত্রিকা বের করতে লাইসেন্স ফি দিতে হয় না সেখানে অনলাইন পত্রিকার জন্য ৫ লাখ টাকা লাইসেন্স ফি, সম্ভবত নীতিমালা লেখকরা এটাকে টিভি বা তার চেয়ে ব্যয়বহুল বা আরও জটিল কোনো গণমাধ্যম মনে করেছেন। খসড়া নীতিমালা যারা তৈরি করেছেন অনলাইন গণমাধ্যম সম্পর্কে তাদের ধারণা কতটুকু এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এই খাতে সরকারের কোনো আর্থিক প্রণোদনা নেই। তার পরও কেন এতো কড়াকড়ি তা বোধগম্য নয়। শুধু বর্গীর মতো খাজনা আদায়ে মত্ত না হয়ে এই শিশু শিল্পের বিকাশে সরকারি সহায়তা-পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। আর যদি পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্যই ৫ লাখ আর ২ লাখ করে নেয়ার পরিকল্পনা হয়ে থাকে তাহলে মন্ত্রী-এমপিদের অন্তত এক বছরের বেতন ভাতা কর্তন করা হোক, সচিবগণ সপ্তাহের একদিনের বেতন-ভাতা রাষ্ট্রিয় কোষাগারে জমা দিন। আর এটাই হবে দেশপ্রেমের উজ্বল দৃষ্টান্ত!
দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এখনো অনলাইনের সাথে পরিচিত নয়। তাই অনলাইন পত্রিকাগুলো জন্মকাল থেকে বিজ্ঞাপনের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। যা পাওয়া যায় তা দিয়ে ডোমেইন হোস্টিংয়ের দামও উঠে না। ইন্টারনেট হল অনলাইনের প্রধান কাঁচামাল। এতো বছরেও এটা সরকার সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে এনে দিতে পারলো না। হোস্টিং ও ডোমেইনের দাম পরিশোধ করার জন্য বিদেশে থাকা বন্ধুদের সহায়তা নিতে হয়। অনলাইনে সরকার এখনো বিজ্ঞাপন দেয় না, উপরন্তু সরকার বিজ্ঞাপন ফ্রি দেবার আবদার করেছে। অনলাইন গণমাধ্যম এখনো টাকা কামানোর উৎস হয়ে উঠতে পারেনি, কোন সুদূর ভবিষ্যতে পারবে তা অনিশ্চিৎ। বাংলাদেশের কোনো অনলাইন গণমাধ্যম এখনো লাভের মুখ দেখেনি। দুই/চারটা অনলাইন পত্রিকা বড় কোনো বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানের প্রচার ও প্রভাব সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে চালু হয়েছে, সেগুলোর লাভের মুখ দেখা খুব প্রয়োজনীয় নয়। বাকিগুলোও অলাভজনকভাবে কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে, বেশিরভাগ স্থানীয়ভাবে চলছে, নিজের জেলা বা উপজেলাকে তুলে ধরার জন্য, যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশীরা উপকৃত হচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ' গঠনের ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখছে এসব অনলাইন গণমাধ্যমগুলো। অনলাইন মাধ্যমগুলোর লাভ তো দূরে থাক খরচের ১০%ও উঠে না, এরা কিভাবে ৭,০০,০০০ টাকা সরকার কে দিবে, কেন দিবে?
অনলাইন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী যেমন (অফিস অবকাঠামো, মোট জনবল ও নির্ধারিত ব্যাংক ব্যালেন্স, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতার সনদপত্র এসব বিষয় চাওয়ার কিছুটা যুক্তি থাকলেও নীতিমালায় এমন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে, যা অযৌক্তিক এবং অস্বাভাবিক। সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ‘সকল অনলাইন গণমাধ্যম বাংলাদেশে স্থাপিত সার্ভারে হোস্টিং করতে হবে। ডিএনএসআই (ডোমেইন নেইম সার্ভার ইন্টারনেট প্রটোকল) সম্পর্কে তথ্য মন্ত্রণালয় অবহিত থাকতে হবে।' এমন নীতি মেনে চলতে অসুবিধা নেই। তবে বাংলাদেশে হোস্টিং খরচ তাছাড়া দেশের হোস্টিংগুলোর মান উন্নয়নে যত্নশীল হতে হবে। ‘অনলাইন গণমাধ্যমের অন্য কোন দেশী বা বিদেশী গণমাধ্যম লিংক করা যাবে না।' এমন নীতিও সঠিক নয়। এই খসড়া নীতিমালা বাস্তবায়িত হলেই তো ৩/৪ অনলাইন সংবাদপত্র টিকে থাকবে, ফলে জাতি আরেকটি... দেখতে পারবে।
অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আর দৈনিক পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণের বিষয়ে পৃথক আইন কেন? এটাও বোধগম্য হচ্ছে না। ‘‘অনলাইন সংবাদপত্র যদি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা পালন করে, তাহলে বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। সকল অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে সে সকল পত্রিকা প্রচলিত প্রিন্ট মিডিয়ার ডিক্লারেশন নীতিমালার আলোকে আরো সহজ শর্তে অনুমোদন দেয়া দরকার। এছাড়া অনলাইন পত্রিকা অনুমোদনের জন্য কোন জামানত কিংবা ফি গ্রহণ করা যুক্তিযুক্ত হবে না।
 ‘‘তথ্য মন্ত্রণালয় শুধু একটা কাজ করতে পারে। সংবাদপত্র প্রকাশের নীতিমালা অনুসরণ করে আবেদনকারীকে অনলাইন পত্রিকা প্রকাশনার জন্য একটা ‘ডিক্লারেশন' দিতে পারে। প্রকাশক যদি ডিক্লারেশন পাওয়ার যোগ্য হন, তাহলে ছাড়পত্র দিয়েই তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব শেষ'' হতে পারে। আমাদের ধারণা ছিল ডিজিটাল বাংলা গড়তে সরকার অনলাইন মিডিয়ার বিকাশ সাধনে একে প্রণোদনা দিয়ে সহায়তা করা। কিন্তু আমরা একি দেখছি!  জানি না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই নীতিমালাটি পড়েছেন কি না? ভালো করে অধ্যয়ন করলে তিনি নিশ্চয় বুঝতে পারবেন তার সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলার' স্বপ্ন বাস্তবায়ন আর এই নীতিমালা স্ববিরোধী।  আপনার সরকারের আমলে অবাধ তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ দিয়ে দেশকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার এক যুগান্তকারী ইতিহাস সষ্টি করলেও অনলাইন মিডিয়ার নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে চরম অজ্ঞতার পরিচয় দেয়া হয়েছে। এজন্য অভিজ্ঞ লোকের প্রয়োজন। চূড়ান্ত নীতিমালা প্রস্তুতের জন্য মোস্তফা জববার, জাফর ইকবাল প্রমুখের নেতৃত্বে দক্ষ লোক নিয়োজিত করা হোক।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আইপিআইয়ের একটি প্রতিনিধিদল দেখা করতে এলে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়নি।’’ গণমাধ্যমগুলোর বিকাশে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। সংবাদটির শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রীর নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিটি ছিল, ‘‘বর্তমান সরকার সাংবাদিকদের হয়রানিতে বিশ্বাস করে না। গত তিন বছরে সরকার কোনো সাংবাদিক বা সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটিও মামলা করেনি।’’ (সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১২)
বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার' চিত্রটা কেমন? বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতা নেয়ার ৩ বছর শাসনকালে ১৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং আলোচিত ঘটনাটি হলো মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন নিউজ' এর সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি'র হত্যাকান্ড। সাগর-রুনির হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে অনেক আন্দোলন হয়েছে। যা এখনো চলছে। কিন্তু ফলাফল কিছুই নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাওয়া হয়েছিল, এর জবাবে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ‘‘কারো বেডরুম পাহারা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের নয়।’’ এই মহাসত্য ভাষণ থেকেই বুঝা যায় দেশে সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতা কেমন নিরাপদে! আমাদের দেশে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র ক্ষমতাসীনদের রোষানলে নতুন নয়। শুধু সাংবাদিকরাই ছিলেন তা নয়। সাথে আছেন দেশের প্রখ্যাত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরাও। বিভিন্ন সময়ে তারা সরকারের মদদপুষ্ট মহলের হামলা-হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সরকারের আমলে দু'টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ হয়েছে। সরকার অনিয়মের অভিযোগ এনে ২০১০ সালের ২৭ এপ্রিল চ্যানেল ওয়ান ও যমুনা টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়। এতে প্রায় সহস্রাধিক মিডিয়াকর্মী বেকারত্বের ফলে চরম মানবেতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এছাড়া আরো একাধিক চ্যানেলের উপর যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার খড়গ নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। সরকারি হস্তক্ষেপে জোর করে দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। ২০১০ সালের ১ জুন সরকার আমার দেশের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। ৪৭ দিন পর আদালতের রায় পেয়ে পুনঃপ্রকাশিত হয় পত্রিকাটি।
২০১১ সালে ৩১ জুলাই গ্রেফতার করা হয় জনপ্রিয় অনলাইন দৈনিক শীর্ষনিউজডটকম ও সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজ সম্পাদক একরামুল হককে। তার গ্রেফতারের কয়েকদিনের মাথায় সরকারের চাপে কর্তৃপক্ষ শীর্ষনিউজডটকম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তখনই বাতিল করা হয় সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজ-এর ডিক্লারেশনও। এছাড়া সাংবাদিক সমাজের বারবার অনুরোধের পরও সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় প্রকাশনার ৬১ বছরের মাথায় এ সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে গেছে দেশের প্রাচীনতম জাতীয় ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার। গত ১২ মার্চ ২০১২ তে বিরোধী দলগুলো মিলে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার বিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজন করে। ঐ সমাবেশ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি সমাবেশের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিলে প্রায় সব বেসরকারি টিভি তা সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আগের দিন রাতে সব টিভিকেই সরাসরি প্রচার না করার জন্য বলে দেয় সরকার। অন্যরা তা মেনে নিলেও একুশে টিভি, বাংলা ভিশন ও আরটিভি সরকারের সতর্কতা না মানার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে সরকারি কর্তৃপক্ষ সমাবেশ চলাকালিন কয়েকঘণ্টা এই তিন টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বন্ধ করে দেয়। সাধারণ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাতেই বর্তমান সরকারের ‘মিডিয়া দমন' সীমাবন্ধ নেই। বিকল্প গণমাধ্যমও বাদ যায়নি এই দমন-পীড়ন থেকে। সরকারের সমালোচনা ও শেখ হাসিনাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে ২০১০ সালের ২৯ মে বাংলাদেশে সরকার বন্ধ করে দেয়া হয় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক। অবশ্য পরে খুলে দিতে বাধ্য হয়। শেষতক কঠোরতার মোড়কে চলছে, অনলাইন গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। জানি না কতটুকু সফল হবে সরকার।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter