অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামও আওয়ামী লীগ সরকারের সশস্ত্র বিভিন্ন বাহিনী এবং সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। গত রোববার ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতার ও শাস্তিসহ ১৩ দফা আদায়ের দাবিতে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি পালন করছিল সংগঠনটি। যে কোনো বিচারে সম্পূর্ণ গণতন্ত্রসম্মত হলেও হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিকে ভ-ুল করে দেয়ার জন্য সরকার নিষ্ঠুর দমন ও হত্যার অভিযান চালিয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও পূর্ণাঙ্গ তথ্য যদিও জানা যায়নি তবু যেটুকু জানা গেছে তার ভিত্তিতেই বলা যায়, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অকল্পনীয় নিষ্ঠুর হৃদয়বিদারক ঘটনা সেখানে ঘটেছে। একে কোনোভাবেই যুক্তিগ্রাহ্য করার উপায় নেই। নানা ব্যাখ্যা দিয়ে প্রচার চালানো হলেও ঘটনাপ্রবাহের কোনো পর্যায়েই হেফাজতে ইসলাম গণতন্ত্রসম্মত অবস্থান ও তৎপরতার বাইরে যায়নি। ঢাকা অবরোধের কর্মসূচিও নতুন ছিল না। অবরোধের এই কর্মসূচি হেফাজত ৬ এপ্রিল একই শাপলা চত্বরের সমাবেশে ঘোষণা করেছিল। সেই থেকে অবরোধের আগের দিন পর্যন্ত হেফাজতের নেতারা সারাদেশ সফর করেছেন, অসংখ্য সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন। প্রতিটি ভাষণে তারা শুধু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথাই বলেননি, ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে জড়িত হওয়ার বিরুদ্ধেও কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন। বড়কথা, অবরোধের কোনো পর্যায়েও হেফাজতের কাউকে কোথাও ধ্বংসাত্মক বা বেআইনি কোনো কর্মকা- চালাতে দেখা যায়নি। সুতরাং এমন অভিযোগ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় যে, হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছিলেন বলেই সরকারকে কথিত অ্যাকশনে যেতে হয়েছে। বাস্তবে প্রথম থেকে উস্কানি এসেছিল ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। শাপলা চত্বরগামী হেফাজতকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছিল। সংঘাত সেখান থেকেই শুরু। সন্ধ্যা থেকে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে, তার সাথে হেফাজতকর্মীরা জড়িত নয় এটা প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত। কারা এর সাথে জড়িত সে বিষয়ে অনেক কথা বলা হলেও আমরা বলতে চাই না। তবে বিষয়টা বিতর্কিত তদন্ত সাপেক্ষ তাতে সন্দেহ নেই। এসব বিচারে রাতের হামলার যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। নিহতদের সংখ্যা নিয়ে জোর গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। প্রকৃত সংখ্যা কম-বেশি যতোই হোক না কেন, সরকারের এই কর্মকা-কে অনেকে এমনকি গণহত্যা হিসেবেও চিহ্নিত করেছে। বলা হচ্ছে, সরকার গণতন্ত্রের সীমা অতিক্রম করেছে।
উল্লেখ করা দরকার, এবারই প্রথম নয়, এর আগে গত ৬ এপ্রিল লংমার্চ কর্মসূচি এবং তার পরপর পালিত হরতাল উপলক্ষেও সরকার হেফাজতের বিরুদ্ধে একই ধরনের বাধা, নীতি ও ভূমিকা নিয়েছিল। লংমার্চকে ভ-ুল করার জন্য সরকার সারা দেশে হরতাল করিয়েছিল। ওদিকে হরতালের দিন দেশের এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী-ক্যাডাররা সশস্ত্র হামলা না চালিয়েছিল। এসব হামলার শিকার হয়েছেন হেফাজতের নিরীহ নেতা-কর্মীরা। তাদের সঙ্গে পুলিশও যথারীতি যোগ দিয়েছিল। গুলীরও ব্যবহার হয়েছিল। সে নীতিরই ধারাবাহিকতায় সরকার এবার হত্যা পর্যন্ত চালিয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত ছিল বিষয়টিকে গণতান্ত্রিক সহনশীলতার দৃষ্টিতে দেখা। হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়, শাহবাগে তৎপর নাস্তিক ব্লগারদের ইসলামবিরোধী প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর প্রধান উদ্দেশ্য নিয়েই হেফাজতে ইসলাম রাজপথে এসেছে। প্রথমে বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নেতারা ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সরকার সে দাবি না মানায় পর্যায়ক্রমে এসেছিল ৬ এপ্রিল লংমার্চের এবং ৫ মে অবরোধের কর্মসূচি। কিন্তু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হলেও সরকার নিয়েছে মারমুখী নীতি।
যাহোক, এই ঘটনা আমাদের রাজনীতি ও জাতীয় জীবনের এক দুঃসহ ঘটনা হয়েই থাকবে এবং তা আমাদেরকে আমাদের আত্মসম্বিত ফিরিয়ে আলোর দিকে নিয়ে যাবে, না আমাদের গণতন্ত্রকে অন্ধকারের পথ দেখাবে তা আমরা জানি না। আমরা ভালোটাই আশা করি।
No comments:
Write comments