প্রতারকচক্র সারাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেবে এমনটি হতে পারে না। মানুষের ভেজালমুক্ত যাবতীয় খাবার, ব্যবহার্য জিনিসপত্রের নিশ্চয়তা দেয়া সরকারেরই অন্যতম দায়িত্ব।
বাংলাদেশের মানুষের একটি প্রধান সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে খাদ্যে ভেজালসহ নানা রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। ভেজালকারীদের হাতে বন্দি দেশের মানুষ এবং নিরুপায়। খাদ্য, খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্রতে যেমন ভেজালের আধিক্য প্রকট, তেমনি মৌসুমি ফল ও নানারকম খাদ্যে ফরমালিনসহ রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণের ফলে মানুষের সুস্থতার সঙ্গে জীবন ধারণের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেননা ভেজাল বা ফরমালিনযুক্ত খাদ্য শরীরের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব নিয়ে বিস্তর লেখালেখিও হয়েছে পত্রপত্রিকায়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও এর সরেজমিন প্রতিবেদন হয়েছে, এখনো হচ্ছে। পত্রিকার কাজ পত্রিকা করে যাচ্ছে, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কাজও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া করে যাচ্ছে যথার্থই। কিন্তু যাদের কাজ এসবের ওপর নজরদারি রাখা, প্রতিরোধ করা, তারা কতটুকু কী করছেন সেটা বাজারের ভুক্তভোগী সবাই কমবেশি জানেন। এ অবস্থা মানুষের মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তায় যে কত নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
সম্প্রতি জানা গেল, ভেজাল লবণে সয়লাব হয়ে গেছে সারাদেশ। এসব লবণ আমদানি করে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে প্যাকেটজাত করে লবণ বিক্রি করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর স্বাভাবিকভাবেই এতে হুমকির মুখে পড়েছে ৮০০ কোটি টাকার লবণ শিল্প প্রকল্প। প্রতারকের এরকম দৌরাত্ম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও। যায়যায়দিনের এক প্রতিবেদনের মারফত জানা যায়, কনফিডেন্স সল্টের নামে লবণ বিক্রি করছে এক শ্রেণীর প্রতারক। তারা অল্প দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সাপ্লাই দেয়ায় বিপাকে পড়েছে ব্র্যান্ডিং কোম্পানিগুলো। নিম্নমানের লবণ ব্র্যান্ডিং কোম্পানির নামে বাজার থাকায় সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে তাদের। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে বিনিয়োগ নিয়ে হুমকির মুখে পড়া শুধু নয়, লবণ শিল্পের অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ, ভেজাল লবণ বাজারে সয়লাব হলে তার দামও অনেক কম হয়। সাধারণ ক্রেতারা কম দামের কারণে তাই ক্রয় করে। আর এতে দেশের জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকির মুখে পড়ে; তেমনিভাবে সত্যিকারের উন্নত লবণ প্রস্তুতকারীরা এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে এটাই স্বাভাবিক। সরকার গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপরিশোধিত লবণ আমদানির সুযোগ প্রদান করে। এ সময় প্রায় সাড়ে সাত লাখ টন লবণ আমদানি করা হয়। লবণের প্রতি কেজির দাম পড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা। আমদানিকারকরা লবণ আমদানি করে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। মূলত সেই সময় যেসব প্রতিষ্ঠান লবণ কিনে নিয়েছে তারাই এখন দেশীয় ব্র্যান্ডের মোড়ক নকল করে নিম্নমানের লবণ বাজারজাত করছে। এ ধরনের খবরে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। কারণ সরকার আমদানির সুযোগ দিল আর তাই সম্বল করে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী প্রতারকচক্র তাকে ব্যবহার করে ভেজাল লবণ বাজারে সয়লাব করে দিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কি করছিল? বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখন উদ্বেগ প্রকাশ করছে অথচ আমদানির সুযোগ দেয়ার সময় পর্যবেক্ষণ করতে হতো কারা আমদানি করছে এবং এর পরে এসব লবণ কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এখন সার্বিক পরিস্থিতি সাপেক্ষে আমরা মনে করি, সরকারের এসব বিষয়ে আরো বেশি কঠোর হতে হবে। কেননা প্রতারকচক্র সারাদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেবে এমনটি হতে পারে না। মানুষের ভেজালমুক্ত যাবতীয় খাবার, ব্যবহার্য জিনিসপত্রের নিশ্চয়তা দেয়া সরকারেরই অন্যতম দায়িত্ব।
No comments:
Write comments