Flickr

Tuesday, 3 September 2013

বিএনপি-জামাত মানুষের ভালবাসা ও সমর্থন পায়না

Posted by   on

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জনগণের মনের অন্ত:স্থলে কোন দল ঢুকতে পারছেনা। তার মূল কারন হচ্ছে, দলের মানূষগুলো অবৈধ লুটপাটে ব্যস্ত এবং জনগণের সেবা করা তাঁদের মূল লক্ষ্য হলেও তাঁদের অধিকাংশই তা মোটেই করেননা। আর জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে যারা কাজ করেন, যেমন বিভিন্ন শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীসহ আরো এধরনের ব্যক্তিবর্গ, এদের শাস্তির কোন ব্যবস্থা গ্রহনের কোন পদক্ষেপ গ্রহন তো অনেক দুরের বিষয়, এসমস্ত লোকের বিপক্ষে একটি কথাও বলেননা কোন রাজনীতিবিদ। আর এজন্যই মূলত: রাজনীতিবিদরা জনগণের আন্তরিক কোন ভালবাসা পাননা।
বিএনপি-জামাত মানুষের ভালবাসা ও সমর্থন পায়না আরো দু’একটি ভিন্ন কারনে। যেমন, জামাতের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীর অবস্থান এবং তাদের বিচারে সরাসরি বাধাপ্রদান, বিচার-কাযর্ক্রমের বিরুদ্ধে দেশব্যপি জঘন্যতম সন্ত্রাসী কাযর্ক্রম পরিচালনা করা। আর বিএনপি থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে আসলে জামাতের এসমস্ত জঘন্যতম কাযর্ক্রমগুলো বিএনপি কর্তৃক সথমর্নদানের কারনে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য যেসমস্ত আসামীর বিচারকাজ চলমান, তারা আসলেই একাত্তরে এসমস্ত অপরাধ করেছিলেন এবং মানুষ তাদের এসমস্ত অপরাধ সংঘটনের জন্য আজো ঘৃণা করে, তাদের বিচার চায়। এদের অপরাধের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তো বটেই, অধিকাংশ মানুষই চান, এদের চরমতম শাস্তি ফাঁসি হোক। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীতে ২০১৩-র ৫-ই ফেব্রুয়ারী গুটিকয়েক তরুনের শাহবাগে অবস্থান যেমনভাবে বিস্ফোরিত হয়ে গণমানুষের একান্ত প্রানের দাবীতে পরিণত হলো, সেটাই গণমানুষের এবিষয়ক অবস্থান স্পষ্ট করে।
আজকাল অনেকে বলেন, বিএনপিকে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে জামাতের সাথে তাদেরকে সম্পকর্চ্ছেদ করতে হবে। কথাটা অবশ্যই ঠিক, তবে এই সম্পকর্চ্ছেদটা এমনভাবে করতে হবে যাতে মানুষ তা বিশ্বাস করতে শুরু করে এমনভাবে যে, হাঁ, আসলেই বিএনপি জামাতের সাথে সম্পকর্চ্ছেদ করেছে। এটা বিশ্বাসযোগ্য না হলে তাতে বিএনপি-রাজনীতির কোন লাভ হবেনা।
আবার শুধুমাত্র জামাতের সাথে সম্পকর্চ্ছেদ করলেই যে বিএনপির রাজনীতির লাভ হবে, তা নয়। মানুষের মনে এই বিশ্বাস তাদের সম্পর্কে আসতে হবে যে, তারা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া তারা অব্যহত রাখবে, যাদের যে শাস্তি হয়েছে, তা প্রদান করবে।
এছাড়া ক্ষমতায় গেলে তারা আর দু:শাসন-অনিয়ম-অবিচার করবেনা, এসমস্ত সংস্কৃতি থেকে তারা বের হয়ে আসবে এবং এসমস্ত যারা করবে, তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবে। মোট কথা ক্ষমতায় গেলে দেশ পরিচালনায় সকল মানুষের মধ্যে স্বস্তির একটা পরিবেশ বিরাজ করবে, সেবিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করবেন তারা।
এই উভয়বিদ বিশ্বাস বিএনপি যদি মানুষের মনের মধ্যে জন্মাতে পারে, তবে সরকারী দল অথবা সরকার যতই দমন-পীড়ন করুক না কেন, তাদের আন্দোলন জমে উঠবে। কারন যতই যুদ্ধাপরাধীর বিচার করুক না কেন, সরকারের দু:শাসন-অনিয়ম-অবিচার দেখতে দেখতে মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। মানুষ সবর্ক্ষেত্রে সুশাসনের, ন্যায়বিচারের পরিবেশ বিরাজমান, এরকম একটি দেশ চায়। ব্যাপক মানুষের মনে উন্নয়ন ততোটা দাগ কাটেনা, যতোটা কাটে অবিচার-অনাচার। অন্যায়-অবিচারের একটি ঘটনাই স্থায়ীভাবে মানুষের মনে গেঁথে যেতে পারে। অথচ এরকম ঘটনা ছাড়া সুশাসনের কোন ঘটনাই দেশে ঘটছেনা। মানুষ আসলে বিরক্ত। তবে বিরক্ত হলেও মানুষ বিএনপি’র উপর আরো বিরক্ত তাদের জামাত-নির্ভরতা, জঙ্গী-লালন, সরকারের কোন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করার কারনে।
পত্রিকা মারফৎ আরো জানা গেল, জামাত ক্রমেই একা হয়ে পড়ছে। আসলে জামাতের প্রতি সহানুভূতিশীল লোকের সংখ্যা একান্তই অপ্রতুল। এর একমাত্র কারন এদলের সদস্যরা সহনশীল নন। জামাত একটা ক্যাডারভিত্তিক দল এবং এদলে বিরুদ্ধবাদীদের প্রতি এরা নির্মম। ইসলামী দলগুলির রাজনীতি কেমন হওয়া উচিৎ, সেবিষয়ে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে আমি মনে করি, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ্’র ভিত্তিতে যাতে দেশ চলে, সেটাই হওয়া উচিৎ তাদের লক্ষ্য ও কাযর্ক্রম। কিন্তু এটা করতে হলে তো তাঁদেরকে হতে হবে সহনশীল। দেশে দুর্নীতির সাথে এদের কোন সম্পর্ক নাই, এরা দুর্নীতি করেননা। শুধু যদি তারা সহনশীলতা অজর্ন করতেন, তবে রাজনীতিতে অনেক কিছু অজর্ন করা তাদের পক্ষে সম্ভব হত্।
বিদেশী বন্ধুদের সহায়তা এবং বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে এদের অনেক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু সম্পদগুলি যদি দরিদ্র মাদ্রাসা-ছাত্রদের আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিক্ষার পেছনে ব্যয় হতো এবং তাদের মধ্যে সহনশীলতার চর্চা হতো, তবে অনেক বড় আর বিশাল সহনশীল এক শক্তি তারা অজর্ন করতে পারতেন। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা তখন ডাক্তার হতো, হতো ইঞ্জিনিয়ার-গবেষক-শিক্ষক। দেশের মানুষ এই শক্তিকে তখন শ্রদ্ধা-ভালবাসা আর ভক্তিতে ক্ষমতায় বসাতেন। কিন্তু কোথায় সংগঠনটির সেরকম পরিকল্পনা! বিশেষত: ২০১৩-র পর যে কাযর্ক্রম তারা চালিয়েছে, তাতে মানুষের অবজ্ঞা-ই শুধু পেয়েছে তারা, আর কিছু নয়। এখন তো আবার বিএনপিও তাদেরকে পরিত্যাগ করার কথা চিন্তাভাবনা করছে। আসলে বিএনপি তাদের পরিত্যাগ করুক বা না করুক, এরকম জামাতের দেশের কোন প্রয়োজনীয়তা কোনকালেই ছিলনা, আজো নেই, থাকবেওনা কোনদিন।
জামাতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে সহনশীল হয়ে মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষিত করে দেশের মানুষের মনে ভালবাসার স্থায়ী জায়গা করে নেবে, না-কি গণমানুষের হৃদয় থেকে স্থায়ীভাবে ছিটকে সরে যাবে যোজন যোজন দুরে। আর বিএনপিরও আসলে কোন উপায় নাই রাজনীতিতে টিকে থাকার যদি তারা মানুষের মনে এরকম বিশ্বাস অজর্ন করাতে ব্যর্থ হয় যে, তারা জামাতের সাথে সম্পকর্চ্ছেদ করেছে এবং ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে তারা দেশে আক্ষরিক অর্থেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে এবং এদেশকে একটা সুশাসিত দেশ হিসেবে মানুষকে তারা উপহার দেবে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter