Flickr

Friday, 23 January 2015

জনসভায় আমজনতার তালি

জনসভায় আমজনতার তালি কুড়াতে অনেক বক্তা ভাষার লাগাম টানতে আগ্রহী থাকেন না। 'মানি না, মানব না' রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অবশ্য এমন প্রবণতা বিরোধীদের মধ্যেই বেশি। কেউ যদি সরকারকে মেঘনায় নিক্ষেপ করে বাহবা পান তো আরেকজন বঙ্গোপসাগরে ফেলে না দিলে স্বস্তিবোধ করেন না। এ ধরনের অসংযমী ভাষা প্রয়োগে জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়ায় বিরূপতার মাত্রা কতটা, তা নিয়ে তাদের মাথা না ঘামালেও চলে। শুধু মাঠে-ময়দানে নয়, ঘরোয়া অনুষ্ঠান এবং টিভির টক শো কিংবা সাংবাদিকদের সামনে কথা বলার সময়েও এমন বাকপটুতা আমরা লক্ষ্য করি। তাতে কেউ কৌতুকবোধ করেন, কেউবা আমোদিত হন। বিরক্তিবোধও ঘটে। তবে সরকারে যারা থাকেন তাদের এমনটি হলে চলে না_ এটিই দস্তুর ছিল। অর্থমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো পদে বসার সঙ্গে সঙ্গে মুখর বলে পরিচিতরাও মুখে কুলুপ এঁটে দিতেন। প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাদের কাছ থেকে কথা বের করতে গলদঘর্ম হতেন, এমনকি সাক্ষাৎ মেলাও ভার ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বিশেষ করে টেলিভিশনের রমরমা অবস্থা এর কারণ হতে পারে। দায়িত্বশীল পদে থেকে কেউ কেউ এখন একটু বেশিই যেন বলছেন এবং এতে জনমনে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা নিয়ে ভাবার সময় হয়তো মেলে না। কোন পদে থেকে কী বলা উচিত এবং কখন পেটে বোমা পড়লেও নির্বাক হয়ে যেতে হয়, তাও হয়তো তারা ভুলে যান। অপ্রিয় সত্যও সর্বদা বলতে নেই_ এ বাক্য প্রবাদসম। শেয়ারবাজারে আকৃষ্ট হয়ে লাখ লাখ মানুষ ম্যানিপুলেটরদের ফাঁদে পড়েছেন। কারা এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এবং কীভাবে তারা কাজ করেছে তা সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি চার মাস আগেই অর্থমন্ত্রীকে তাদের প্রতিবেদনে জানিয়ে দিয়েছে। এ সময়কালে বাজারে কিছু সংশোধন হয়েছে, কিছু ইতিবাচক চিত্রও লক্ষণীয় এবং এর পেছনে অর্থমন্ত্রীর ভূমিকাও অস্বীকার করা যাবে না। বিনিয়োগকারীরা একটু আশার আলো দেখলেই ফের বাজারে ছুটে আসেন এবং অশুভ সংকেত দেখলে মুহূর্তে হয়ে পড়েন শঙ্কিত। তাদের ক্ষোভের প্রকাশও যথার্থ। আবার কি প্রতারিত হতে হবে_ এ প্রশ্ন দ্রুতই দুর্ভাবনায় ফেলে তাদের। রোববার অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের সাবধানতা দরকার। প্রতিদিন লাভের হিসাব কষা এ বাজারের নিয়মের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু তাই বলে সূচকের অব্যাহত পতনে ক্ষুব্ধদের 'ফাটকাবাজ' আখ্যায়িত করা যায়? এটি তো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়া বৈ কিছু নয়। ক্ষুদ্র বিনিয়াগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রাণশক্তি। তাদের তথাকথিত বিনিয়োগকারী বলে দূরে সরে যেতে বলার আদৌ যুক্তি নেই। একইভাবে 'ব্যাগভর্তি অর্থ নিয়ে বাজারে গিয়ে পকেটভর্তি পণ্য' নিয়ে যখন ফিরতে হয় তখন বাণিজ্যমন্ত্রীর 'কম খাওয়া'র পরামর্শ শুধু আগুনে ঘৃতাহুতি দেয় না, সরকারের ভাবমূর্তিতেও চিড় ধরায়। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির ক্ষেত্রে গুরুতর কোনো ঘটনার পরও শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেষ্টাকেও কেউ পছন্দ করে না। এমনকি এ ধরনের কথন-অতিকথন সরকারদলীয় লোকদেরও উদ্বেগে ফেলে। বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রকাশ্যেই বলেছেন, 'অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বিব্রতকর।' আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরও তার ক্ষোভ গোপন রাখেননি। জনগণের প্রতিক্রিয়া কানে না যাক, এসব বার্তা কি বাক-অসংযমীদের সতর্ক করবে না? দেশের মানুষ বলুক আর দলীয় নেতাকর্মী, এমনকি বিরোধী পক্ষ বলুক, সবাই কিন্তু সরকারের কাছে কথা নয়_ কাজের প্রত্যাশাই করে। আর কাজে দক্ষতা দেখাতে পারুন আর না-ই পারুন, দয়া করে মানুষকে নিয়ে পরিহাস যেন না হয়।  

Thursday, 15 January 2015

পরীক্ষিত বন্ধু

চীন এবং আমেরিকা আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু এবং পাকিস্তান আমাদের জানি দোস্ত। কারণ ১৯৭১ সালে ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ হয়েছে বলে সেটা তো আর চিরকাল একইভাবে থাকতে পারে না। তখন চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা-যুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলো। আর আমেরিকা যার বন্ধু তার তো শত্রুর দরকার নেই।

বাঙলাদেশের স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দিতে যুদ্ধজাহাজ সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করেছিল তারা। ভাগ্যিস সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের পক্ষে ছিল, তাই নৌবহরকে ফিরে যেতে হয়েছিল। এই সকল উদ্যোগে ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশাল ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু তাতে কী? তিন দোস্ত থাকতে ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে আমরা বন্ধু ভাববো কেন? যে ভারত পেয়ারা পাকিস্তানকে ভেঙে দুই ভাগ করে দিয়েছে, তাদের বন্ধু ভাবার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। ভাগ্য ভাল, পূর্বের সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমানে রাশিয়া আমাদের থেকে অনেক দূরে, তাই তাকে নিয়ে তেমন বাতচিৎ নেই।

কিন্তু ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী এবং নানা কারণে তাদের সঙ্গে আমাদের ছোটখাটো বিরোধ লেগেই আছে। আর বিএনপি-জামাত জোটের রাজনীতি যেহেতু ভারতের ওপর নির্ভরশীল, তাই সমস্ত দোষ শুধু ভারতের। বিএনপি-জামাত কি আসলেই ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ নাকি নিজেদের চাঙ্গা রাখার জন্য তারা ভারত-বিরোধিতা করে যাচ্ছে! কিন্তু জনগণ তো তাদের এই কারণ-অকারণ বিরোধিতাকে খাচ্ছে না। যদি তাই না হবে তা হলে ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথা বলেও জাতীয় নির্বাচনে তাদের এমন ভরাডুবি হলো কেমন করে?

অবশ্য ভারত-বিরোধিতা ছাড়া তাদের আর করণীয়ই বা কি আছে? রাজনীতি করতে গেলে তো একটা মজবুত ভিত্তি চাই। তারা তাই ভারতকেই টার্গেট করে তাদের রাজনীতি চালিয়ে গেছে, চালিয়ে যাবে। এর আর একটি কারণ আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের নিরঙ্কুশ সহযোগিতাও। বিএনপি-জামাত জোটসহ মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী দলগুলো পাকিস্তানের ভাঙন মেনে নেয়নি, এখনও নিচ্ছে কিনা তাতে সন্দেহ আছে। কারণ তারা মনে করে ভারত সহযোগিতা না করলে তাদের পেয়ারা
পাকিস্তান এভাবে দু’টুকরো হয়ে যেত না। অতএব ভারতকে কোনও অবস্থাতেই ক্ষমা করা যায় না।

তাদের ক্ষোভ ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও ট্রেনিং দিয়ে গেরিলাযুদ্ধের পথকে সুগম করেছিল, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সারা বিশ্ব সফর করে বাঙলাদেশের অনুকূলে জনমত গঠন করেছিলেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে বাঙলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় দশ হাজার সৈন্য জীবন দিয়েছিল। অতএব ভারত আমাদের প্রধানতম শত্রু। তাই শত্রুর সঙ্গে কেউ কোনও রকম আপস করতে চাইলে তাকে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করা ছাড়া তাদের অন্য কোনও উপায় থাকে না। ভারত এখন পরাশক্তি, তাদের সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করে পারবো না। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ভারত-বিরোধিতা বজায় রেখে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, জাতিসংঘে কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া ছাড়া আর কী পথ আছে? অর্থাৎ ভারতকে বাঙলাদেশ কোনওরকমেই ছাড় দেবে না।

পাকিস্তান একাত্তর সালে আমাদের সঙ্গে কী করেছে, আমাদের মা-বোনদের সঙ্গে কী আচরণ করেছে, আমাদের কত লক্ষ মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, এককোটি মানুষকে দেশান্তরী করে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য করেছে, আমাদের প্রাপ্য হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত দেয়নি, দেশে ফিরে যেতে উদগ্রীব কয়েক লক্ষ পাকিস্তানি অবাঙালিকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে যাচ্ছে, তবু সে আমাদের প্রাণের বন্ধু। আর চীন তো গোটা নয় মাস বাঙলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাঙলাদেশ যাতে ভারতের সহযোগিতায় কিছুতেই স্বাধীন হতে না পারে, তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে গেছে। আর আমেরিকা হচ্ছে সারা পৃথিবীর মোড়ল। তারা যা বলবে, তাদের সেই কথা না শুনলেই তাদের বিরুদ্ধে যত ধরনের ষড়যন্ত্র আছে, তা করতে একটুও দ্বিধাবোধ করবে না।

একাত্তরে তারা তাই করে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, আজও তারা গোপনে গোপনে আমাদের মতো অসহায় দেশগুলোর ওপর মোড়লগিরি করে, প্রয়োজনবোধে তাদের সিআইএ-কে কাজে লাগিয়ে আলেন্দে থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত কাউকেই তারা হত্যা করতে একটুও কুণ্ঠিত হয় না। এখন এই পাকিস্তান, চীন এবং আমেরিকা আমাদের জানকা জান, আর ভারত আমাদের চিরকালের শত্রু।

হ্যাঁ, এটা তো সত্যি কথা, কোনও একটা দেশ একদিন শত্রু ছিল বলে চিরকালই তার সঙ্গে শত্রুতা থাকবে, সেটা কোনও কাজের কথা নয়। সেই কবে একাত্তরে কে কি করেছিল সেসব কথা মনে রাখলে চলে? তাই আমরা অনেককিছুকেই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দিচ্ছি। ভুলে যাচ্ছি আল-বদর, রাজাকারের কথা, ভুলে যাচ্ছি ত্রিশ লক্ষ শহীদের কথা, তিন লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষণের কথা। আর যেই হোক, এই কাজ তো কোনও বিধর্মীরা করেনি, করেছে আমাদের ভাইকা ভাই, দোস্তকা দোস্ত।! তাই তাদের ক্ষমা করার মধ্যে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের অনুরাগ আছে, ভালবাসা আছে, আছে প্রাণের ভেতরকার অন্তরঙ্গ টান। বাঙালি কি এতটাই বিস্মৃতিপ্রবণ জাতি? যদি তাই না হয়, তা হলে আমরা এত তাড়াতাড়ি মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া বহু বেদনার কাহিনী এমনভাবে ভুলে যেতে পারি? আজকের প্রজন্মের যারা তরুণ, তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা জানে না, কত রক্ত, কত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাঙলাদেশ পেয়েছি।

এই এতগুলো কথা বললাম, বর্তমানে চীনের ভূমিকা নিয়ে বাঙলাদেশের কোনও রাজনৈতিক দল কোনও কথা বলছে না বলে। বিএনপি-জামাত বলবে না, কারণ চীন তাদের পরানের গহীন ভিতরে অবস্থান করছে। ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে বাঙলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে! অতএব তাদের বিরুদ্ধে মালকোচা মেরে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বিএনপি-জামাত জোট রণমূর্তি ধারণ করে বসে আছে। কিন্তু চীন যে গোটা বাঙলাদেশটাকেই মরুভূমি বানিয়ে ফেলতে চাইছে, তা নিয়ে এদের কণ্ঠে কোনও কথা নেই। চীন এখন ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে তাদের গোবি মরুভূমিকে সবুজায়ন করার জন্য পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাঙলাদেশের যমুনা নদী এবং বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ নদ ব্রহ্মপুত্র সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে উজান থেকে প্রবাহিত ৪৯ শতাংশ পানির প্রবাহ। বেড়ে যাবে বঙ্গোপসাগরে পানির লবণাক্ততা, এমনকি বদলে যাবে দেশের চাষযোগ্য জমির অভ্যন্তরীণ গঠনও। ধ্বংস হয়ে যাবে জীববৈচিত্র্য, পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষে মারা যাবে বাঙলাদেশ ও ভারতের কোটি কোটি মানুষ। এই দুই দেশের ১০০ কোটির মতো মানুষ পড়বে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে।

সাংপো নদীতে বাঁধ দেয়ার পরিকল্পনা চীন বহুদিন আগে থেকেই করে আসছিল। ১৯৮৮ সালে লি পেং যখন চীনের ক্ষমতায়, তখন থেকে শুরু করে ১৯৯৮ সালের মধ্যে নেয়া চীনের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই উদ্যোগ রূপায়িত হচ্ছে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্টের সময়েও। চীনের গৃহীত এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১০টি বৃহৎ নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। তা ছাড়া ওখান থেকে প্রাপ্ত পানি কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা নদী দিয়ে প্রবাহের মাধ্যমে মরুভূমিকে সৃষ্টি করা হবে কৃষিজমিতে। এর মধ্যে সিন্ধু নদীতে বাঁধ দেয়ার কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র, মেকং ও সানঝিসহ ১০টি নদীতে বাঁধ দেয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বাঙলাদেশের পরিবেশবিদদের অনেকেই বলেছেন, চীনের এ কার্যক্রমের ফলে ব্রহ্মপুত্রের পানি একেবারেই নিঃশেষিত হয়ে যাবে এবং জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প ও আবহাওয়ার যে ক্ষতি হবে তাকে মোকাবেলা করার সাধ্য বাঙলাদেশের নেই। চীনের এই বাঁধ দেয়া সম্পন্ন হলে বাঙলাদেশ ও ভারতের নদীভিত্তিক সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

এই বাঁধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত অ্যাসোসিয়েটড প্রেস (এপি)-এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চীন ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাঁধ দেয়ার এমন এক প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে যা বিস্ময়ের দিক থেকে ১ হাজার ৫০০ মাইলের চীনের মহাপ্রাচীরকেও ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের কথা মনে রেখেও তাদেরকে তোয়াক্কা না করেই চীন তার প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রতিজ্ঞা নিয়েই মাঠে নেমেছে। তিব্বতের বার্তা সংস্থা ‘দ্য তিবেতান’-এর রিপোর্ট থেকে জানা যায়, চীন সাংপো নদীতে বাঁধ দিলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তিব্বত, ভারতের আসাম, মিজোরাম, অরুণাচল এবং সম্পূর্ণ বাঙলাদেশ।

চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা অনুপাতে তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা খাদ্য ও পানি। খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে চীনের প্রয়োজন বসতি স্থাপনোপযোগী জায়গা এবং কৃষিজমির আয়তন বাড়ানো। সে-কারণেই তারা অব্যবহৃত জমি ও তাদের মরুঅঞ্চলকে মানুষের বসবাস-উপযোগী করার জন্য কৃষিজমির প্রয়োজন বোধ করছে। এ জন্য তারা শুধু বাঁধ নয়, পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কৃত্রিম খাল তৈরির মাধ্যমে গোবি মরুভূমিতে পানির প্রবাহ তৈরি করে সেখানে ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে চায়। চীন মনে করে এর ফলে তাদের পক্ষে কৃষিজমির পরিমাণ কয়েক লক্ষ হেক্টর বাড়ানো সম্ভব হবে। শুধু ব্রহ্মপুত্রই নয়, হিমালয় থেকে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, নেপাল, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামে নেমে আসা নদীগুলোতেও বাঁধ দিচ্ছে চীন।

তিব্বতের বিভিন্ন হিমবাহ থেকে উৎপন্ন এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত সব নদীকে পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। অথচ ২৯৫৭ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্রের মাত্র ৮৭৭ কিলোমিটারের মালিক চীন। তিব্বতের কৈলাশশৃঙ্গে উৎপন্ন হওয়া নদীর যে জায়গাটিতে চীন বাঁধ দিচ্ছে তার নাম সাংপো হওয়ায় বাঁধটিরও নাম দেয়া হয়েছে সাংপো বাঁধ, চীনে যেটি পরিচিত ইয়ার লং সাংপো নামে। আণবিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে চীন যে কৃত্রিম নদী সৃষ্টি করছে, সেটি খননের নাম দেয়া হয়েছে পিসফুল নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশন।

১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে জার্মান টেলিভিশন চ্যানেল জেডডিএফ-এ প্রচারিত ‘ডাই ওয়েল্ট’ (দি ওয়ার্ল্ড) নামের এক প্রতিবেদনে সাংপো বাঁধের প্রধান পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক চেন চুয়ানয়ুর একটি সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বতে জন্ম নিয়ে ভারতে প্রবেশের আগে যেখানে অশ্বক্ষুরাকৃতিভবে বাঁক নিয়েছে, ঠিক তার আগেই ওই বাঁধ নির্মাণ করে হিমালয়ের মধ্য দিয়ে ১৫ কিলোমিটার কৃত্রিম নদী তৈরির মাধ্যমে পানিকে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত করা হবে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্রের ২০০ কিলোমিটারের মূল গতিপথ বদলে যাবে। আর এখান থেকে পানি পাম্পিংয়ের মাধ্যমে চীন ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে এবং লাখ লাখ হেক্টর মরুভূমি সবুজ ও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে। প্রকৃতপক্ষে এই বাঁধ তৈরি করে চীন সারা পৃথিবীর বিরুদ্ধেই এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ আতংকিত ও শংকাগ্রস্ত। কিন্তু তা নিয়ে চীনের কোনও মাথাব্যথাই নেই। অথচ এমন এক সময় ছিল, যখন চীনের পক্ষ থেকেই সাংপো নদীর ব্যাপারে এমন এক নিষেধাজ্ঞা ছিল, যাতে এই নদীতে কোনওভাবেই হাত দেয়া না হয়। কারণ যুগ যুগ ধরে চীনারা ব্রহ্মপুত্রের এ এলাকাকে সাংগ্রাই বা দেবদেবীর এলাকা বলেই জানতো। তাই এ এলাকাটি সম্পর্কে প্রকৌশলীদেরও তেমন ধারণা ছিল না।

কিন্তু ১৯৯০ সালে বিশ্বায়নের ফলে চীনারাও তাদের কমিউনিস্ট খোলশ থেকে বেরিয়ে আসে। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার জন্য পুঁজিবাদী দেশের মতো তারাও বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। তাই ১৯৪৯ সালে চীনা নেতাদের, বিশেষভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হো ইং চীনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নেয়া মাল্টি বিলিয়নের সাংপো বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে ২০০৯ সালে। ২০০০ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে সে সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপাই এ ব্যাপারে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে ভারতের উদ্বেগের কথা জানান। সেই পর্যন্তই। এরপর ভারতের পক্ষ থেকেও আর তেমন উচ্চবাচ্য করা হয়নি। আর বাঙলাদেশ তো বোবা ও বধির হয়ে গেছে। এই বাঁধের সঙ্গে যেখানে বাঙলাদেশের বাঁচা-মরার প্রশ্ন জড়িত, সেখানে এখানকার অধিকাংশ রাজনৈতিক দল কিংবা পরিবেশবিদ একেবারে নিশ্চুপ। এমনকি যে বিএনপি-জামাত ভারতের টিপাইমুখ নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন, তাদের কণ্ঠেও কোনও আওয়াজ নেই।

আমাদের তথাকথিত মার্কসবাদীরা তো চীনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে জিভ বেরিয়ে যায়। এমনকি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও এ ব্যাপারে তেমন একটা উচ্চবাচ্য করছে না। যদিও মাত্র কয়েকদিন আগে নওগাঁ-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সংসদের চলতি অধিবেশনে ৭১ বিধিতে এক মনোযোগ আকর্ষণী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পররাষ্ট্র, পরিবেশ ও পানিসম্পদমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, সাংপো নদীর ওপরে চীন বাঁধ দিলে ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদী সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাবে। এর ফলে বরিশাল, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ এলাকার পানি অতিরিক্ত মাত্রায় লবণাক্ত হয়ে গিয়ে সুন্দরবনসহ এ এলাকার জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর থেকেই সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী চীন যে একতরফাভাবে সাংপো নদীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীতে বাঁধ দিতে পারে না, তা জোরের সঙ্গেই ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়াও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান জাতীয় সংসদে এক লিখিত উত্তরে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদে চীন কর্তৃক বাঁধ দেবার ফলে বাঙলাদেশের প্রকৃতিতে তো বটেই, এমনকি অর্থনীতিতেও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। বাঙলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর প্রবাহ নষ্ট হয়ে গিয়ে এখানকার অধিকাংশ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে।

এমনিতেই বাঙলাদেশের নদীগুলোতে নাব্যতার সংকট রয়েছে, আস্তে আস্তে তা শুকিয়ে গিয়ে বাঙলাদেশকে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে, সেখানে চীন পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাঙলাদেশ ও ভারতসহ পৃথিবীর বহুদেশকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়ে ইতোমধ্যেই বাঁধ নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে। অথচ বিএনপি-জামাত আর বাম দলগুলোর মুখে কথা নেই। কিন্তু কেন? ভয়? চীনকে আমাদের কিসের ভয়? ভারতকে ডিঙিয়ে এসে তারা কি বাঙলাদেশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে নাকি? ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের ওপর যে মহাবিপর্যয় নেমে আসছে, সেটা কোনও ব্যাপারই নয়। বিএনপি-জামাত এবং বাম দলগুলো ভাশুরের নাম মুখে আনবে না, আর তথাকথিত সমাজতন্ত্রীরা তো এখন রাশিয়াকে বাদ দিয়ে আধা পুঁজিবাদী চীনের দিকে আকুল নয়নে তাকিয়ে আছেন। তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগের পেছনে লেগে থাকা সম্ভব, ভারতের বিরুদ্ধে লাগতে পারলে তো তাদের শরীরে জোশ এসে যায়, কিন্তু চীন তো আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু, তার বিরুদ্ধে তারা কথা বলবেন কি করে? অতএব বাঙলাদেশ গোল্লায় যাক, সমস্ত দেশ মরুভূমি হয়ে যাক, তাতে কোনও ক্ষতি নেই। যা হোক, তবু তো বাঁধটা দিচ্ছে আমাদের পেয়ারা দোস্ত একাত্তরে পাকিস্তানের প্রাণের দোসর এবং বাঙলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের দুর্দান্ত সহচর চীন।

সম্ভবত এই সুযোগটা চীনকে দেয়াই উচিত বলে তারা মনে করে। বাঙলাদেশের বামদের প্রতিদিনের রুটিন ওয়ার্ক হচ্ছে ভারতকে গালি দেয়া। তা না হলে তার পেটের ভাত হজম হয় না। কিন্তু এদিকে চীন যে পুরো দেশটাকেই গ্রাস করতে চলেছে, তাতে সম্ভবত তার শরীরে এক ধরনের আনন্দের অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে। তারা ভাবছে তাদের কাজ একটাই, ভারতকে আক্রমণ করো আর আওয়ামী লীগকে ধসাও। কিন্তু তারা একটিবারও ভাবছে না, পুরো দেশটা মরুভূমিতে পরিণত হলে তারা ক্ষমতা দিয়ে কি করবেন? তখন কোথায় থাকবে বিএনপি-জামাত জোট, আর কোথায় থাকবে আওয়ামী লীগ বা অন্য দলগুলো? দেশ যদি না থাকে তা হলে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, নেতা, পাতিনেতা, এদের কোনও অস্তিত্ব থাকবে? এ নিয়ে কারও ভাববারও যেন সময় নেই। আসলে এরা সব সবকিছুই জানে ও বোঝে। এরা জ্ঞানপাপী। এখন তাদের পরিবেশবিজ্ঞানীরা কোথায় হাওয়া খেতে গেছেন? তারা কোনও কথা বলছেন না কেন? টিপাইমুখ বাঁধ দিলে আমাদের যেখানে ২%পার্সেন্ট ক্ষতি সাধিত হবে, সেখানে চীন সাংপো নদীতে বাঁধ দিয়ে বাঙলাদেশকে প্রায় মরুভূমি বানিয়ে ফেলার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করার পরও চীনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখে আমাদের নেতানেত্রীরা লেজ গুটিয়ে নিয়েছেন। সমস্যাটা আমাদের সবচেয়ে বেশি।

ফলে আমাদের যেখানে খুব বেশি উচ্চকণ্ঠ হওয়ার কথা, সেখানে আমরা মনের আনন্দে নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছি। আমাদের নেতানেত্রীরা বোধহয় ভাবছেন, ঘুমের মধ্যে যদি ঘটনা ঘটে যায়, তা হলে তারা তো তা দেখতে পাবেন না। তাই তাদের আবার ভয় কিসের? এদের মধ্যে তো আবার জাতীয়তাবাদী শক্তিও আছে, তারা নাকি স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পাহারাদার। এখন যখন আমাদের গোটা জাতির সামনে ভয়াবহ বিপদ উপস্থিত এবং আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মরুভূমির আগুনে দগ্ধ হতে চলেছে, তখন সেই তেজ এবং জোশ এখন আর দেখতে পাই না কেন? কারণ বাঁধটা তৈরি করছে চীন। আসলে সত্যিকার দেশপ্রেম থাকলে, দেশটাকে মাতৃভূমি মনে করলে আরও বহু আগেই এ ব্যাপারে শুধু প্রতিবাদ নয়, এটা বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। তারা মুখে যেটা বলে, কাজে যে সেটা করে না, তাদের পুরোটাই যে ভাঁওতাবাজী, জনগণ তা ইতোমধ্যেই বুঝে গেছে। সাংপো নদীতে বাঁধ হলে দেশটা তো মরুভূমিতে পরিণত হবেই, এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে বাকিটা জনগণই ‘জাতীয়তাবাদী’দের ভালো করে বুঝিয়ে দেবে।

এ ব্যাপারে আমাদের পরিবেশবাদীরাও স্পিকটি নট। যারা ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সময় পরিবেশ রক্ষার জন্য ওসমানী উদ্যানে গাছকে জড়িয়ে ধরে গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, যারা জলাশয় রক্ষায় এবং বুড়িগঙ্গা রক্ষার জন্য মানববন্ধন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকাণ্ডেই অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারা এখন কোথায়? এত বড় একটা বিপর্যয়ের সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়ে তারা কিভাবে চুপ করে ঘরে বসে আছেন, সেটাই বিস্ময়ের বিষয়! আসলে এসকল প্রতিবাদ-প্রতিরোধের জন্য তাদের চাই আওয়ামী লীগের মতো একটা দল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গণতন্ত্রের নামে, পরিবেশ রক্ষার নামে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়তে তাদের সুবিধে হয়, তারা এক একজন হয়ে ওঠেন অতিবিপ্লবী। কিন্তু চীন তো আগুন নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছে, তাতে ঝাঁপ দিয়ে রাজনীতিবিদরা, পরিবেশবাদীরা শেষ পর্যন্ত জীবনটা দেবে নাকি? নিজের স্বার্থ পাগলেও বোঝে। আর এরা তো রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবী। নিজের নাড়ি টিপে তারা রাস্তায় বের হয়। কোথাও কোনও সংঘাত-সংঘর্ষ দেখলে তড়িঘড়ি ঘরে ঢুকে বিবৃতি দেয়াই এদের স্বভাব।

আসলে এই সব বুদ্ধিজীবীর পরিবেশ-সংক্রান্ত একটি অনুকূল বিষয় নিয়ে মাঠে নামতে সুবিধে হয়। তা ছাড়া চীন হলো পরাশক্তি। তাদের সঙ্গে বাঙলাদেশ পেরে উঠবে? তাই চুপচাপ থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের এইসব সুবিধাবাদী রাজনীতিক এবং পরিবেশবাদীরা চায়, তাদের রান্নাটা অন্যে রেঁধে দেবে, আর তারা ডাইনিং টেবিলে বসে প্রাণের সুখে হালুয়া-রুটি খেয়ে যাবেন। এ কথাটা আরও বিশেষভাবে মনে হলো এ জন্য যে, এ নিয়ে বাঙলাদেশের কোনও হেলদোল না থাকলেও বিশ্ববাসী কিন্তু চুপ করে বসে নেই। আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক ডেভিড মন্টোগোমারি আশংকা প্রকাশ করেছেন, চীন এই বাঁধ দিলে এতে প্রকৃতির স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট হয়ে যাবে। আবহাওয়া, জীববৈচিত্র্য, কৃষি ও জনজীবনে এর গভীর প্রভাব পড়বে। সুইজারল্যান্ডের আর এক পরিবেশবিদ ও গবেষক আলিভার ক্রোপ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় লেখা তাঁর এক প্রবন্ধে বলেছেন, এটা দক্ষিণ এশিয়ার ১০০ কোটি মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাই তিনি এ ব্যাপারে চীনকে এই বাঁধ দেয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। ভারতও এখনও এ ব্যাপারে চীনের কাছে খুব জোর প্রতিবাদ জানায়নি।

তবে ভারত যে এ ব্যাপারে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবে না, তা জোরের সঙ্গেই বলা যায়। তাদের প্রতিবাদও যে খুব দুর্বল প্রতিবাদ হবে না, সেটা বোঝা যায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাই প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেলদিনের ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্য দিয়ে। তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণীতে বলেছেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি শুরু হয়, তা হলে তা হবে পানি নিয়ে। চীন যেভাবে সাংপো নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত ও বাঙলাদেশসহ বিশ্বকেও একটা বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাতে করে ভারত বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে চীনকে মোকাবেলা করার কাজে পিছপা হবে না। কারণ ভারত নিশ্চয়ই তার পুরো উত্তর-পূর্বাচল মরুভূমি হয়ে যাবে, তা কিছুতেই মেনে নেবে না। তার ফলে ভারতের সঙ্গে চীনের সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। দুটি দেশই এখন পরাশক্তি। তাদের উভয়ের হাতেই রয়েছে পারমাণবিক বোমা। তা ছাড়া ১৯৪৯ সালেই চীনের নেতারা নিজেরাই এই যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। ফলে এটা বুঝতে কোনই অসুবিধা হবার কথা নয়, চীন পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েই মাঠে নেমেছে।

আমরা জানি না, এই সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে। তবে যদি পানির জন্য চীন এবং ভারতের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বেঁধে যায় তা হলে বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর দেশ যে ভারতের পাশে এসেই দাঁড়াবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ একটি ভারসাম্যহীন প্রাকৃতিক অবস্থার ফলে তার প্রতিক্রিয়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এখন সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই। মার্কিনী ষড়যন্ত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে আমেরিকা এবং এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল, তার অবসান ঘটার ফলে মাঝখান থেকে চীন তার ফায়দা লুটে বিশ্ববাজারকে যেমন অর্থনৈতিকভাবে দখল করে নিয়েছে, তেমনি পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার ফলে সে এখন সারা পৃথিবীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেমত যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। সাংপো নদীতে বাঁধ দিয়ে ভাটির দেশগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার প্রয়াস তার একটিমাত্র প্রমাণ।

এও জানি, বাঙলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তা সত্ত্বেও নিজের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা নিয়ে কথা বলার অধিকার তার আছে। ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় কাজ না হওয়ায় সমুদ্রের জলসীমা নির্ধারণের জন্য যদি বাঙলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে, তা হলে ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বাঙলাদেশ এবং ভারত কেন যৌথভাবে চীনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারবে না? আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা আমাদের জন্য একটা জাতীয় বিপর্যয়ের শামিল। এ সময়ে সমস্ত দল ও মতের রাজনৈতিক নেতা, পরিবেশবাদী, পানিবিশেষজ্ঞ, ভূতাত্ত্বিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকদের সঙ্গে আলোচনা করে বাঙলাদেশ কিভাবে এগুবে, তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ভারতের কাছে জানতে চাইতে হবে, এ ব্যাপারে তারা কি ভূমিকা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। যদি ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে এ ব্যাপারটি নিয়ে এগুনো যায়, তা হলে হয়তো কোনও ফলাফল বেরিয়ে আসতেও পারে।

যদিও এটার ওপর ভরসা করা খুব আশাপ্রদ হবে বলে মনে হয় না, কারণ চীন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। সমাজতান্ত্রিক (আসলে আধা পুঁজিবাদী) একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও তারা যে ভয়ংকর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে চলেছে, তাতে করে আমাদের মতো দেশ আতংকিত না হয়ে পারে না। আর পানি নিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি ভারত এবং চীনের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধেই যায়, তা হলে অসহায়ভাবে মৃত্যু বরণ করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায় থাকবে না। আমাদের ভারতবিরোধী দল এবং ভারতের বন্ধুপ্রতিম দল এটা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আমাদের দেশের আর কারোরই এ ব্যাপারে কোনও মাথাব্যথা নেই। সেই সাথে দীর্ঘদিন থেকে গলা ফাঁটানো পেইটভুক্ত বামেরাও চায়না দূতাবাসের বিশেষ সুবিধা নিয়ে অনেকটা মুখে কস্টিপ এঁটে বসে আছে।

রাজনীতির ষড়যন্ত্র


দেশ-সমাজ নিয়ে যারা গভীরভাবে ভাবেন, দিন দিন তারা অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়ছেন। কারন দেশে অন্যায়-অত্যাচার-অবিচার অত্যন্ত বেড়ে গেছে এবং এগুলির বিরুদ্ধে কারো কোন ভুমিকা নাই। নাই কোন আন্দোলন, নাই কোন প্রতিবাদ, কিছুই নাই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, মানুষ ধরেই নিয়েছে এভাবেই চলবে দেশ। এদেশে ক্ষমতার পালাবদল হবে, কিন্তু তাতে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সুশাসন আসবেনা। কোন সময়ই কোন সরকারী দল এদেশে গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা তো দুরের কথা, সে উদ্যোগও গ্রহন করবেনা কখনো। সরকারী দল সবসময় নিজ দলের লোকজনকে পালবে এদেশে, সোনার ছেলে, সোনার সন্তান মনে করে তাদের শত-হাজারো-লাখো অন্যায় নীরবে সহ্য করে যাবে, তাদের অপকর্মের সাজা প্রদানের কোন ব্যবস্থা নেবেনা। কারন এরাই তো তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করবে, বিশেষতঃ বিপদের অর্থাৎ বিরোধী দলের আন্দোলনের সময় এবং নিবার্চনের সময়।

কিন্তু রাজনীতি তো জণসেবা, জনগণের সেবা করাই তো রাজনীতির উদ্দেশ্য। রাজনীতিবিদরা জনগণের সেবা করেই তো সমাজে স্মরনীয়-বরনীয় হয়েছেন যুগে যুগে। আগে আমাদের পূবর্পুরুষরা সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা নিয়ে জনগণের সেবা করে গেছেন। আর আজ ক্ষমতার জন্য অন্ধ হয়ে গেছেন আমাদের রাজনীতিবিদরা। তারা খুন পযর্ন্ত করছেন শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় টিকে থেকে অবৈধভাবে অর্থবিত্ত লুটপাট করার জন্য। আমাদের রাজনীতিবিদরাই রাজনীতিকে এরকম অবস্থায় নিয়ে এসেছেন।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই উভয়কে নিশ্চিহ্ন করার এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে। এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ কেউ কাউকে। জাতির জনকের পঁচাত্তরের পরিবারসহ নৃশংস জঘন্যতম হত্যাকান্ডের সাথে জিয়াউর রহমানের মৌন-সংশ্লিষ্টতা এবং ২০০৪-এর একুশে আগষ্টের আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাসহ পুরো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যাকান্ডের জঘন্যতম চেষ্টা, তারো কিছু আগে-পরে আহসানুল্লাহ মাষ্টার, শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকান্ড ইত্যাদি ঘটনাপ্রবাহ বিএনপি-রাজনীতির জঘন্যতম দিক ইঙ্গিত করে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের, বিশেষতঃ আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মনে স্বাভাবিকভাবেই এসমস্ত ঘটনা গভীরভাবে রেখাপাত করে রয়েছে।

তাহলে! তাহলে কী এজন্যই তিনি ক্ষমতা ছাড়ছেননা অথবা ক্ষমতা ছাড়তে যাতে না হয়, সেই চেষ্টা-ই করে যাচ্ছেন সবর্দা? এজন্যই তিনি খুন-গুমের ভীতিকর একটা পরিবেশ জিইয়ে রেখেছেন কী? এজন্যই নিজ দলের লোকদের তিনি এতো আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তার বিপক্ষে না যায় কেউ কোনদিন, বরং তার লাঠিয়াল হয়ে কাজ করে সবসময়! বিএনপিও একই কাজ করেছিল তাদের বিগত দু’টি পর্বের শাসনামলে। আজ আওয়ামী লীগ যা যা করছে, বিএনপিও তাদের আমলগুলিতে তা তা-ই করেছিল। বরং দেখা যায়, এক দলের শাসনামল শেষ হলে অন্যদলের পরবর্তী আমল আরো অন্যায়-অবিচার-দুর্নীতিতে ভরে যায় কয়েকগুন বেশী হয়ে। কিন্তু দলীয় লোকজন তা স্বীকার করেননা। তারা বলেন, আমাদের আমলে খারাপ কোন কাজই হচ্ছেনা, সব ষড়যন্ত্র।

ফলে নিবার্চনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলেও স্বৈরতন্ত্র-ই বিরাজ করছে দেশে সবসময়। এর ফলে নিজ দলীয় লোক ছাড়া সরকারের উপর কারো কোন আস্থা আর শ্রদ্ধা থাকছেনা। দেশ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে, দুর্নীতিতে, দুঃশাসনে ভরে ওঠছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও ভোগেন আস্থার সংকটে। তারা এদেশে বিনিয়োগ করতে আসেননা, দেশে বিদেশী বিনিয়োগ হয়না এবং বেকারত্বে ভরে ওঠে দেশ।

সমাধান কী? এবিষয়ে কথা বলার আগে আমাদের দেখতে হবে রাজনীতিবিদ বাছাইয়ের দিকটা। জাতীয় সংসদ নিবার্চন এলে প্রার্থী বাছাই হয়ে থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্তৃক। জাতীয় সংসদ নিবার্চনে প্রার্থী বাছাইয়ের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আর তাই দলগুলি মূলতঃ কার প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি, কার অর্থ-সম্পদ বেশি, সবোর্পরি কে নিবার্চনে বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, সে দিকটিই দেখে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির নীতি-নৈতিকতার মান দেখা হয়ে ওঠেনা। এটা বিরাট এক সমস্যা, আর এজন্যই মূলতঃ দেশের অবস্থা আজ এরকম। অথচ এক্ষেত্রে বাছাইটা যদি এরকম হোত যে, তৃণমূল হতে নিবার্চনের মাধ্যমে যে প্রার্থী কেন্দ্রে যাবেন, তিনিই সংসদ নিবার্চনে প্রার্থী হবেন, তবে দেশ অনেক ভাল সাংসদ পেতে পারত। তৃণমূল কর্তৃক ২ থেকে ৩ জনের একটি প্যানেল তৈরীও করে রাখা যায়, যাতে এই প্যানেলের বাইরে থেকে প্রার্থী দেওয়া না হয়।

বিচার-ব্যবস্থা হচ্ছে একটা দেশের আস্থা-ভরসার সবোর্চ্চ জায়গা। অসহায় মানুষ এখানে সুবিচার খোঁজেন। সুবিচার না পেলে মানুষ আরো অসহায় হয়ে পড়েন এবং প্রচন্ড হতাশা ভর করে তার মধ্যে। তাই বিচারিক কাযর্ক্রমে স্বচ্ছতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, বিচারকদের নিকট থেকে রাজনীতিবিদরা, আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে, সরকারী দল যাতে রাজনৈতিকভাবে কোনরকম সুবিধা লাভ করতে না পারে, সেব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের এখানে কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দু’টি বড় দলই এরকম করেছেন এবং তা অব্যাহত আছে। সুশাসন নিশ্চিত করার স্বার্থেই এই অভ্যাস বন্দ্ব করা প্রয়োজন দৃঢ়ভাবে। সাবির্ক ন্যায়বিচারের স্বার্থে নিরপেক্ষ, সৎ, সর্বজন কর্তৃক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগনের সমন্বয়ে বিচারক, বিচারপতি নিয়োগের জন্য একটি প্যানেল গঠন করে উক্ত প্যানেলের মাধ্যমে এঁদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। একইভাবে দেশের অন্যান্য সাংবিধানিক পদসমূহও, যেমন প্রধান নিবার্চন কমিশনার, দুদক-এর চেয়ারম্যান, কমিশনারগন, তথ্য কমিশনার নিবার্চনও এই কমিশনের মাধ্যমে হওয়া উচিত। কারন রাষ্ট্রকে এসমস্ত কমিশনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হয়। রাষ্ট্রের কর্ণধারগন কর্তৃক এঁরা নিয়োগপ্রাপ্ত হলে এঁদের পক্ষে অনেক সময় স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ হয়ে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। গণবিরোধী কাযর্ক্রম বেড়ে যায় তখন দেশে। সাংবিধানিক পদগুলি সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীণ হয়ে পড়লে সরকার প্রচন্ড রকমের স্বৈরাচারে পরিণত হয়ে পড়ে। সংসদ নিবার্চনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তিকরন ঘটিয়ে বিচারিক প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন সরকারের চাহিদা মেটানো এর প্রকৃষ্ট উদাহরন হতে পারে। বড় দু’টি দলের মধ্যে রেশারেশি, দুরত্ব এর ফলে বেড়ে গেছে, যার সমাধান কীভাবে সম্ভব তা আজো কেউ বলতে পারেনা।

দুর্নীতি-দুঃশাসন আমাদের অগ্রগতিকে পিছনে টানছে প্রতিনিয়ত। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষক খাদ্য ঘাটতি ঠেকিয়ে রেখেছেন। দেশের শ্রমিক এবং গার্মেন্টস শ্রমিকরা অমানুষিক পরিশ্রমের মাধ্যমে রপ্তানি আয়ে বিরাট ভুমিকা রেখে চলেছেন আর বিদেশের মাটিতে আমাদের শ্রমিকেরা অমানবিক পরিবেশে বাস করে প্রচন্ড শ্রম করে বৈদেশিক মুদ্রায় সমৃদ্ধ করে রেখেছেন এদেশকে। এঁরাই মূলত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটা ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। আর দুর্নীতি-দুঃশাসন ইঁদুরের মতো সেই অর্থনীতিকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে ছোবড়া করে ফেলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে যে, দেশে দুর্নীতি নেই আর থাকলেও তা অতি সহনীয় পযার্য়ে রয়েছে। নাহলে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে কেন?

প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনা করে নিতে পারি আমরা। তার আগে জিডিপি (গ্রস ডোমেসটিক প্রোডাক্ট) সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। জিডিপি হচ্ছে একটা দেশের মোট দেশজ উৎপাদন অথবা মোট এক্সপেন্ডিচার (ব্যয় করার সামর্থের অর্থে)। মোট বেসরকারী আয়, মোট সরকারী ব্যয়, মোট বিনিয়োগ আর নীট রপ্তানীর পরিমান, এগুলোর যোগফল হচ্ছে জিডিপি। আর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে জিডিপি বৃদ্ধির শতকরা হার। নির্দিষ্ট সময়ের, সেটা ত্রৈমাসিক হোক অথবা বাৎসরিক, জিডিপি বৃদ্ধির শতকরা হারই প্রবৃদ্ধি । প্রবৃদ্ধি হচ্ছে একটা দেশের অর্থনীতির সবলতা অথবা দুবর্লতার নির্দেশক। যে দেশের প্রবৃদ্ধির হার বেশি, সে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য সবল। বিগত বছরের তূলনায় কত পারসেন্ট জিডিপি বাড়লো, তা-ই হচ্ছে প্রবৃদ্ধি। মোট কথা জিডিপি বাড়তে থাকলে প্রবৃদ্ধি বাড়ে।

এখন দেখা যেতে পারে, সরকারের ভাষ্যমতে প্রবৃদ্ধি তো বাড়ছে, তাহলে দুর্নীতি হচ্ছে কোথায়? আসলে আমাদের দেশে জিডিপিও বাড়ছে এবং সাথে দুর্নীতিও। জিডিপি এবং সাথে সাথে প্রবৃদ্ধি বাড়াচ্ছে এদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ আর বিদেশে কষ্টকর শ্রমে নিয়োজিত শ্রমিকগন। এজন্য দুর্নীতি থাকা সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি এক জায়গায় আটকে থাকছেনা অথবা নিম্নগামীও হচ্ছেনা। দুর্নীতি না থাকলে প্রবৃদ্ধি আমাদের অনেক বেড়ে যেত। কীভাবে, সেটা আলোচনা করা যেতে পারে।

১) দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কাযর্ক্রম আছে বলে এদেশে বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে অত্যন্ত কম। বিদেশি একজন ব্যবসায়ী এদেশে বিনিয়োগ করতে এসে আমলাতান্ত্রিকতার জালে জড়িয়ে পড়ে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ফিরে যান। আমলাতান্ত্রিকতার জাল পেরিয়ে ক্ষুদ্র যে অংশটা এদেশে বিনিয়োগ কাযর্ক্রম শুরু করেন তারাও শিকার হন চাঁদাবাজির, শিকার হন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের। ফলে পাততাড়ি গুটিয়ে ফিরে যেতে খুব বেশি আর দেরি করেননা তারাও। দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ না হওয়ার এসবই মূল কারন। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়ে পড়েছে অত্যন্ত সংকুচিত, অতি কষ্টে কোনরকমে জীবন-ধারন করছে মানুষ, ক্রয়ক্ষমতা অতি সীমিত এবং এজন্য এত বিশাল জনসংখ্যার দেশ হওয়া সত্ত্বেও এদেশে প্রবৃদ্ধি এতো কম।

২) দেশে অবকাঠামোর উন্নয়ন না হলে প্রত্যন্ত স্থানের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য কৃষক পাননা, ফলে তারা দরিদ্রই থেকে যান, আয়ের সক্ষমতা বাড়েনা তাঁদের। আমাদের দেশে দুর্নীতির কারনে অবকাঠামোর উন্নয়ন সেভাবে হয়না। যা-ও বা হয়, দুর্নীতি থাকার কারনে সেগুলো টেকসই হয়না, দুদিনেই নষ্ট হতে যায়। ফলে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য না পেয়ে দরিদ্র-ই থেকে যান। পণ্য ক্রয়ের ক্ষমতা বাড়েনা তার। পক্ষান্তরে, দেশের অধিকাংশ মানুষের হাতের পরিবর্তে অল্প কিছু চরিত্রহীন মানুষের হাতে দুর্নীতির মাধ্যমে জমে উঠে অগাধ সম্পদ, যেগুলি দেশে ব্যবহৃত হয়না, বাইরে চলে যায়। এভাবে দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে কমর্সংস্থান আর সম্পদ সৃষ্টি না হয়ে ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। ফলে অধিকাংশ মানুষের হাতে অর্থ-সম্পদ আসেনা। জিডিপি বাড়বে কীভাবে! আর প্রবৃদ্ধি?

(৩) একজন ইঞ্জিনিয়ার ২০/৫০ জন ঠিকাদারের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ দুই লাখ টাকা আয় করতে পারে; কিন্তু তার খরচ হয়না সে টাকা। খরচ হয় অর্ধ্বেকের্ও কম টাকা। বাকী টাকাটা সে সঞ্চয় করে অথবা আনপ্রোডাকটিভ খাতে ব্যয় করে। অথচ এই ঘুষটা না নিলে টাকাটা ঐ ২০/৫০ জন ঠিকাদারের হাতে থাকত, তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ত, অবকাঠামোর মান ভাল হতো, কৃষক তাতে উপকৃত হতো, তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়তো এবং এভাবে জিডিপি বৃদ্ধি পেত। একইভাবে অন্যান্য সার্ভিসেও যে ঘুষগুলি নেয়া হয়, তা না নিলে টাকাগুলি সারাদেশের মানুষের হাতেই থাকত এবং এভাবে জিডিপির সাথে সাথে প্রবৃদ্ধির হারও দিনকে দিন বাড়তেই থাকত।

এভাবেই ঘুষ আমাদের অথর্নীতিকে ইঁদুরের মত কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে, ভঙ্গুঁর করে দিচ্ছে, জিডিপি বাড়তে দিচ্ছেনা, প্রবৃদ্ধির হারকে টেনে ধরে রেখেছে। তাই ”দুর্নীতি নাই, তাই প্রবৃদ্ধি বাড়ছে”, সরকারী তরফের এই বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য।
আমাদের রাজনীতি শুদ্ধ করতে হলে দুর্নীতি-দু:শাসনের বিরুদ্ধে আমাদেরকে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, এসমস্ত অন্যায়কারীকে প্রাপ্য শাস্তি দিতে হবে। এই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে, কোন হস্তক্ষেপ করা যাবেনা। বরং প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে কি-না, সরকারকে দেখভাল করতে হবে সেটা। আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের মাঝে স্থান করে নিতে চায়, তবে সুবিধাভোগী, চামচা-জাতীয় লোকদের পরিবর্তে তৃণমূলের ভাষাকে মূল্য দিতে হবে, দিতেই হবে।

(হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, এজাতির জণক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান; তাঁর উপর শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হয় যে, তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক এদেশ লুন্ঠন এবং এদেশবাসীর প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য তিনি আজীবন লড়াই করে গেছেন এবং অবশেষে একাত্তরের ৭ই মার্চ তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়ে গেছেন। মানুষ যাতে মানবিকতা দিয়ে পরিচালিত হয়, এটি-ই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। এই চেতনা থেকে আমরা বহুদুরে, বরং বলা যায় কোনদিনই এই চেতনার ধারে-কাছেও যেতে পারিনি আমরা। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস মৃত্যুবরনের জন্য মৌন-সম্মতির কারনে অভিযূক্ত জিয়াউর রহমান। এছাড়াও আরো অনেক খুনের আর খুনের চেষ্টার কারনে অভিযূক্ত বিএনপি। সম্প্রতি তারেক জিয়া কর্তৃক কিছু মন্তব্য করা হচ্ছে, যেটাতে কিন্তু বিএনপি মানুষের হৃদয় থেকে বিতাড়িতও হয়ে যাচ্ছে। তবুও এভাবে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়াটা ঠিক হচ্ছেনা, যদিও সর্বান্তকরণে চাই, বিএনপি যেন ক্ষমতায় না আসে। সমাধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে এবং মাটির মানুষ হয়ে যেতে হবে, একেবারে সাদা মনের মানুষ, যাতে তিনি গণমানুষের একেবারে হৃদয়ে স্থায়ীভাবে স্থান করে নেন। ২য় এবং শেষ পর্বে আলোচনা করার ইচ্ছা রইলো।)

Saturday, 10 January 2015

সোলোন

সোলোনের জন্ম খৃষ্টপূর্ব ৬২০ সালের কাছাকাছি কোন এক সময়ে আর মৃত্যু খৃষ্টপূর্ব ৫৬০ সালে। সেই সময়টাতে গ্রীকদের বুদ্ধিবৃত্তিক চমৎকারিত্বের শুরু হয়ে গেছে। আর সে কারণেই হয়ত তিনি ঐতিহ্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পিছপা ছিলেন না এবং আবেগের চেয়ে যুক্তিকে বেশী গুরুত্ব দিতেন। তার নীতি ছিল Meden Agan বা “কোনকিছুরই অতিরিক্ত নয়”। সোলোন সম্ভবত: সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আইন প্রণেতা ছিলেন। [১] তার চিন্তা চেতনা এখনও আধুনিক গণতান্ত্রিক কাঠামোগুলোকে প্রভাবিত করে। আমেরিকান গণতন্ত্র এবং ব্রিটিশ সংসদীয় গণতন্ত্র তাঁরই বৌদ্ধিক চিন্তা-চেতনার ফসল। বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে একটা সফল গণতান্ত্রিক সংবিধান ২৬০০ বছর আগে করা তার সংবিধানের সাথে কতটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি সত্যিকার অর্থেই মানুষের প্রকৃতিকে বুঝতে পেরেছিলেন এবং সেই অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করতে সমর্থ হয়েছিলেন।

ইতিমধ্যেই মহাকবি হোমার এবং হেসোয়েড দেবতাদের ভাঁওতাবাজি সম্পূর্ণরূপে উন্মোচন করে ফেলেছেন। এই দুই মহাকবি তৎকালীন দেবতাদেরকে কামুক, খুনি, চোর, মিথ্যাবাদী, বেইমান, পরশ্রীকাতর, হিংসুক এবং প্রতিশোধ পরায়ণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যা কিনা কোনভাবেই কোন ভালমানুষের গুণাবলী হিসাবে স্বীকৃত নয়। গ্রীক চিন্তাবিদরা তখন জিনোফেনের চিন্তাধারার সাথে একমত হতে শুরু করেছেন। জিনোফেন (খৃষ্টপূর্ব ৫৭০ – ৪৮৪ সাল) বলেছিলেন এ মহাবিশ্বের একজন মাত্র সৃষ্টিকর্তা আছে।

এথেন্সের সবচাইতে সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলির একটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তার বাবা পারিবারিক সম্পত্তির পুরোটাই নষ্ট করে ফেলেন। ফলে বিত্ত বৈভব আগের মত না থাকলেও তিনি ছোটখাটো একজন জাহাজ মালিক হতে পেরেছিলেন। তখনকার গ্রীসের সাতজন জ্ঞানী মানুষের একজন হিসাবে সোলোন পরিচিতি লাভ করেন। অন্য ছয়জন ছিলেন প্রিয়েনের বিয়াস, স্পার্টার শিলন, লিন্ডোসের ক্লিওবুলাস, করিন্থের পেরিয়ান্ডার, মিটিলেনের পিটাকাস, এবং মিলিটাসের থেলেস, যিনি বলেছিলেন এ পৃথিবীর সব কিছুরই উদ্ভব পানি থেকে এবং তাকে গ্রীসের প্রাচীনতম দার্শনিকদের একজন হিসাবে গণ্য করা হয়।

সোলোন তার নিজ বাড়ীতে মানুষের সাথে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করতেন। বিভিন্ন সংস্কৃতি থেকে আহরণ করা তার বিচার বুদ্ধির উপর মানুষের আস্থাও ছিল অনেক। তিনি একজন সাহসী যোদ্ধাও ছিলেন; ছিলেন উদার এবং সহানুভূতিশীল। তার সমসাময়িক মানুষদের মত তিনি কখনই ঋণ শোধ না করার কারণে কাউকে দাস বানান নি এবং দাস হিসাবে বিক্রিও করেননি। এথেন্সের অন্যান্য সম্ভ্রান্ত মানুষেরা যারা এথেন্সের ভালো ভালো জমিগুলোর মালিক ছিল তারা ঋণ শোধ না করার কারণে যে কাউকে দাস বানাত। এরা (দাসেরা) মূলত: ছিল এথেন্সের ধনী ব্যক্তিদের জমি বর্গা নেয়া চাষি। এই দরিদ্র কৃষকেরা পরপর দুবছর খরা কিংবা কম ফসল উৎপাদনের কারণেই ঋণ শোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলত। দাসে পরিণত হওয়া চাষিদের এবং তাদের পরিবারকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা আলাদা ভাবে এথেন্সেই অথবা দূরবর্তী অন্য শহরে বিক্রি করে দিতে পারত।

সপ্তম শতাব্দীর শেষভাগে (৬০০ – ৭০০ খৃষ্টপূর্ব) এথেন্সে বিদ্রোহ দানা বেধে উঠতে শুরু করে। এই বিদ্রোহে শুধু দরিদ্র কৃষকেরা এবং শ্রমিকরাই শামিল ছিল না বরং অনেক ধনী এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ব্যক্তিরাও ছিলও। তখনকার সময়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া কাউকে Eupatridae বা Well born বলে ডাকা হত। প্রকৃত পক্ষে এই সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা অন্য সবাইকে এমনকি ধনী অথচ Eupatridae না এমন সবাইকে রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বিরত রাখত। তারা সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করত। এবং আইন প্রয়োগকারী বিচারকরাও ছিলও তাদের পছন্দের অন্য কোন Eupatridae.

৬২১ খৃষ্টাব্দের গণ অভ্যুত্থান যখন আসন্ন তখন সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা তাদেরই একজন ড্রাকোন (Dracon) কে নিয়োজিত করে একটি লিখিত আইন ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য। ড্রাকোন তার আইন ব্যবস্থায় ছোটখাটো অপরাধের জন্যও শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ব্যবস্থা রাখে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো কেন তার শাস্তি এত কঠোর? ড্রাকোন উত্তর দিয়েছিলো , “যে কোন ছোট অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড হল উপযুক্ত শাস্তি।” কিন্তু আরও বড় অপরাধের শাস্তি কি হতে পারে সেই প্রশ্নের উত্তরে মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোন শাস্তির কথা তার জানা ছিল না। আর এখান থেকেই ইংরেজী ভাষার Draconian শব্দটার উৎপত্তি । Draconian Law শব্দটা ব্যবহার করা হয় ছোট অপরাধের জন্য যখন অতিরিক্ত শাস্তির প্রয়োগ করা হয়। ড্রাকোনের আইন ব্যবস্থা খুব বেশীদিন পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পারেনি। ৫৯৪ খৃষ্টপূর্বে অ-সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা সম্ভ্রান্ত বংশীয়দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। সম্ভ্রান্তদের ঘোড়া এবং দেহ-রক্ষাকারী বর্ম ছিল কিন্তু অসম্ভ্রান্তদের ছিলও তীর ধনুক এবং স্লিংশট। আর সংখ্যায়ও ছিল তারা অনেক বেশী। এরকম পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষ একটা দুর্লভ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়, যা কিনা ইতিহাসে বিরল। সোলোনকে তাদের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে মনোনয়ন দেয়। সোলোনকে তাদের মতানৈক্যর অচলাবস্থা দূর করার জন্য দেয়া হয় পূর্ণ ক্ষমতা। এবং তারা তাকে Archor বা সরকার প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেয়।

সম্ভ্রান্ত বংশীয়রা সোলোনকে তাদের আত্মীয় এবং নিজেদের শ্রেণীর একজন হিসাবে ভাবত। তারা ভেবেছিলো সোলোন তাদের পক্ষেই থাকবে। অসম্ভ্রান্ত উঠতি ধনীরাও সোলোনকে তাদের একজন মনে করত কারণ সে ছিল একজন ব্যবসায়ী। আর দরিদ্ররা তাকে বিশ্বাস করত কারণ সে কখনই তাদের প্রতি কোন বিরূপ আচরণ করেনি। সম্ভ্রান্তরা আশা করেছিলো সোলোন তাদের সুযোগ সুবিধা, ক্ষমতা এবং সম্পদ সবকিছুই বজায় রাখবে। দরিদ্ররা চেয়েছিল সে ধনীদের জমিগুলো বাজেয়াপ্ত করে তা দরিদ্র কৃষকদের মাঝে বণ্টন করে দেবে। তবে কোন পক্ষই যা চেয়েছিল তা পায়নি। সোলোনের যে সমস্ত কবিতা টিকে গেছে তাতে সোলোন স্মৃতিচারণ করেছেন এই বলে যে তার সংবিধান প্রণয়নের আগে তাকে সবাই ভালবাসত কিন্তু পরবর্তীতকালে সবাই তাকে অপছন্দ করতে শুরু করে কারণ কোন পক্ষকেই তারা যা চেয়েছিল তিনি তাদেরকে তা দেননি। তিনি এমন একটি মধ্যবর্তী সমাধান খুঁজে বের করেছিলেন যা একপক্ষকে অন্যপক্ষ থেকে রক্ষা করবে।

সোলোন প্রথমেই ড্রাকোনের সেইসব নির্মম আইন কানুন বাতিল করে দেন যা কিনা মূলত: সম্ভ্রান্ত বংশীয় বিচারকরা অ-সম্ভ্রান্তদের উপর প্রয়োগ করত। সকল প্রকার ধারদেনা বাতিল করে দেন। যে সমস্ত মানুষেরা ঋণ শোধ করতে না পারা জন্য দাসে পরিণত হয়েছিলো তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও মুক্ত করে দেন। দূরবর্তী দেশে কিংবা শহরে যাদের বিক্রি করা হয়েছিলো তাদেরকেও তিনি ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন এবং পুনর্বাসিত করেন। তিনি কোন মানুষকে জিম্মা রেখে ধার দেয়ার ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেন এবং সেটাকে অবৈধ ঘোষণা করেন। এর পরে গ্রীসে ঋণ শোধ না করার অপরাধে আর কাউকে কখনও দাসে পরিণত হতে হয়নি।
১৯১৭ সালে রাশিয়ায় কম্যুনিস্টরা যে ভুল করেছিলো সোলোন সে ধরণের কোন ভুল করেননি। তিনি ধনীদের জমি বেদখল করেননি। তিনি তাদের ধন-সম্পদ রাখতে দেন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তাদের প্রতিভাকে ব্যবহার করে অবদান রাখার সুযোগ রাখেন। কিন্তু তিনি যে কাজটি করেন তা হচ্ছে তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেন ফলে তারা নিজেদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হবে। যা কিনা আধুনিক গণতন্ত্রের একটি মূলমন্ত্র।

সরকারী উচ্চ পদগুলো শুধুমাত্র সম্ভ্রান্তদের জন্য আর রইল না। বস্তুত: পক্ষে সোলোনের রিফর্ম অনুযায়ী জনগণকে আর সম্ভ্রান্ত আর অ-সম্ভ্রান্ত এই ভাবে ভাগ করা বন্ধ হয়ে গেল। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া স্ট্যাটাসের বদলে আয়ের উপর ভর করে জনগণকে চারটি ভাগে ভাগ করলেন।

১) Pentakosiamedimnoi: যাদের আয় ছিলও বছরে ৭৫০ বুশেল শস্য বা তার বেশী। ১ Medimnos ছিলও দেড় বুশেলের সমান পরিমাপের একক আর Pentakosia হল ৫০০। Pentakosiamedimnois ছিল ৭৫০ বুশেলের সমান।
২) Hippies: যাদের আয় ছিলও বছরে ৪৫০ থেকে ৭৪৯ বুশেলের মধ্যে। Hippies শব্দের অর্থ ছিলও ঘোড়সওয়ার।
৩) Zeugitai: যাদের আয় ছিলও বছরে ৩০০ থেকে ৪৪৯ বুশেলের সমান। Zeugitai শব্দের অর্থ হল যাদের হাল টানার জন্য একজোড়া পশু আছে।
৪) Thetes: প্রথম তিনটি শ্রেণীর চয়ে যাদের আয় কম ছিলও। এদের সাধারণত দিনমজুর বলা হত যারা শ্রমের বিনিময়ে মূল্য পেত।
নতুন তৈরী করা এই ভিন্ন শ্রেণীর মানুষদের তাদের আয়ের উপর ভর করে কর দিতে হত। চতুর্থ দলের মানুষদের বা Thetes দের কোন করই দিতে হত না। তৃতীয় দলের মানুষ বা Zeugitai দেরকে বেসিক রেটে কর দিতে হত। দ্বিতীয় দলের মানুষ বা Hippies দেরকে Zeugitai দের বেসিক রেটের দুইগুণ কর দিতে হত। আর সবচাইতে ধনী শ্রেণীর মানুষ বা Pentakossiamedimnoi দের বেসিক রেটের চেয়ে ২.৪ গুণ বেশী কর দিতে হত। সোলোন সরল কর ব্যবস্থার পক্ষপাতী ছিলেন না এবং পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আয়ের সাথে ক্রমান্বয়ে কর বৃদ্ধির ব্যবস্থা চালু করেন। সোলোন Pentakossiamedimnoi দের জন্য সর্বোচ্চ অফিস বরাদ্দ করেন। কিন্তু লক্ষণীয় যে এই দলে শুধু সম্ভ্রান্ত নয় বরং জন্মগত ভাবে অসম্ভ্রান্ত কিন্তু ধনী ব্যবসায়ী এবং শিল্পী মানুষেরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

চার নাম্বার শ্রেণী বা Thetes রা কোন দপ্তর পাবে না তবে তারা নতুন দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সদস্য ছিলও – The Ekklesia এবং Heliaea. Ekklesia ছিল সকল নাগরিকদের সমাবেশ। প্রায় ২৫০০০ ভোটাধিকার সক্ষম মানুষ এথেন্সে বাস করত। গুরুত্বপূর্ণ সরকারী সিদ্ধান্তগুলির জন্য সংবিধান অনুযায়ী কমপক্ষে ৬০০০ ভোটাধিকার সক্ষম নাগরিকের কোরাম উপস্থিতি আবশ্যিক ছিলও। The Heleaea ছিলও ৬০০০ লোক নিয়ে গঠিত জুরী যেখানে জনগণ যে কোন দপ্তর ধারীর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপীল করতে পারত। এখানে সর্বোচ্চ আদালত বা Areopagas এর যে কোন রায়ের বিরুদ্ধেও আপীল করা যেত। সর্বোচ্চ আদালত Areapagos এর সদস্যরা শুধু এক নাম্বার শ্রেণীর সদস্যরা হতে পারত। Haliaea’র সদস্যরা পার্মানেন্ট ছিলও না। ভোট এবং বিচারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান Areopagas এ উপস্থিত নাগরিকদের মধ্য থেকে সিলেক্ট করা হত। পুর ৬০০০ সদস্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একসাথে হত। সাধারণ বিচার কাজে সাধারনতঃ ৫০০ জুরীর প্রয়োজন হত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ছিলও Boule, এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য সংখ্যা ছিলও ৪০০ জন যাদেরকে নির্বাচিত করা হত। Ekklesia’র হাত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা ছিল।

এভাবে চলতে থাকায় কিছুদিন পর দেখা গেল যে মূল ক্ষমতা আসলে Ekklesia’র হাতে যেখানে ধনী গরীব নির্বিশেষে সবার একটি ভোট। সংখ্যার আধিক্যের কারণে দরিদ্ররা খুব সহজেই ধনীদের ভোটে পরাজিত করতে পারত। Heliaea অবধারিত ভাবেই দরিদ্রদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হত জনসম্মুখে। কি ঘটছে তা প্রতিটি নাগরিকই দেখতে এবং শুনতে পেত। Th Boule তাদের সিদ্ধান্ত গোপনে নিতে পারত তবে সেই সিদ্ধান্ত এবং পরামর্শ Ekklesia’ইয় উপস্থিত সবার সামনে প্রকাশ করতে হত। সোলোনের গণতন্ত্রের এটি একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য ছিল। সোলোনের আইন কানুন ড্রাকনের চেয়ে অনেক বেশী নমনীয় ছিল। সোলোন এই সমস্ত নিয়ম কানুন কাঠের কলামে লিখে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন যাতে সবাই সেগুলো পড়তে পারে। তিনি চেয়েছিলেন এথেন্সের নাগরিকদের মধ্যে একটি শক্তিশালী নাগরিক দায়িত্ববোধ গড়ে উঠুক। যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাপারে মত বিভেদ দেখা দিত তখন কেউ যদি যে কোন একপক্ষে সিদ্ধান্ত না দিত তবে তার ভোটাধিকার হরণ (disfrancise) করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি কেউ অন্য কারও প্রতি অন্যায় হয়েছে এমনটি প্রত্যক্ষ করত তবে সে আইনত বাধ্য ছিলও যে অন্যায় করছে তার প্রতি অভিযোগ পেশ করার জন্য। তিনি বলেছিলেন, “সেই শহর হল বসবাসের জন্য শ্রেষ্ঠ যেখানে যাদের প্রতি অন্যায় করা হয়নি তারাও যাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে তাদের মত করে অন্যায় কারীকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেয়ার জন্য নিজেদের নিয়োজিত রাখে।”

সোলোনের আইন প্রণয়নের আগে কেউ যদি উত্তরাধিকার না রেখে মৃত্যুবরণ করত তবে তার গোত্রের কাছে তার সম্পদ চলে যেত। সোলোন প্রত্যেক ব্যক্তিকে এই অধিকার প্রদান করেন যে তার গোত্রের বাইরেও যে কাউকে সে তার সম্পত্তি উইল করে দিয়ে যেতে পারবে। তবে শর্ত হল তাকে কোনরকম চাপের বশ্যতা স্বীকার না করে এবং সুস্থ মনে তা করতে হবে। সোলোন তার আইন ব্যবস্থা পরিবার প্রথা, সন্তান সন্ততির জন্ম এবং তাদের শিক্ষা দানকে উৎসাহিত করা। তিনি নিয়ম করেছিলেন কোন পিতা যদি তার সন্তানকে যে কোন একটি কারিগরি শিক্ষায় বা ব্যবসায় শিক্ষা প্রদান না করে তবে সেই সন্তান বৃদ্ধ বয়সে বাবার দেখাশোনা করতে বাধ্য নয়। যুদ্ধে মৃত ব্যক্তিদের সন্তানদের ভরণ পোষণের শিক্ষার দায়িত্ব সরকার নেবে। সোলোন যৌতুক ব্যবস্থার নিষিদ্ধ করেন। তিনি বলেন, “বিয়ে হতে হবে দুজন মানুষের ভালবাসার পরিণতি এবং তাদের ভালবাসার ফসল হিসাবে জন্ম নেবে তাদের সন্তান। টাকার জন্য বিয়ে হওয়া উচিৎ না।” তিনি আরও বলেন, “বিয়ের পর মেয়েরা শুধু তিন সেট জামা কাপড় এবং তার নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়া স্বামীর বাসায় আর কিছু নেবার প্রয়োজন নেই।” সোলোন বৃদ্ধ পুরুষ আর অল্প বয়সী মেয়েদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করেন। কারণ তাদের মধ্যে নিবিড় ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি নাও হতে পারে। তিনি বয়স্কা মহিলা এবং তরুণ পুরুষদের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ করেন কারণ স্ত্রীর টাকার জন্য বিয়ে হতে পারে।

সোলোন যে শুধু ঋণ মাফ করে দিয়েছিলেন তাই না তিনি কৃষিকাজ ছাড়াও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন। যদি কেউ ব্যবসা শুরু করার উদ্দেশ্যে পুরো পরিবার সহ এথেন্সে অভিবাসন নিত তবে তাদের তিনি নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যবস্থা রেখেছিলেন। শুধুমাত্র জলপাই তেলের রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছিলেন। অন্যান্য অঞ্চলে জলপাই তেলের প্রচুর চাহিদা ছিল। যেহেতু জলপাই গাছ থেকে রিটার্ন আসতে অনেক বেশী সময় লাগত তাই তিনি গণিকালয় রাষ্ট্রীয় কর ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসেন। এতে করে পর্যটন জনিত আয় বেড়ে গিয়েছিলো। সেই আয় থেকে সোলোন জলপাই ব্যবসায়ীদের ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। কম খরচে পণ্য আমদানি সুবিধা দেয়ার জন্য তিনি রুপার মুদ্রার সাথে ৩০ ভাগ শীশা যোগ করে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেন। যারা স্বেচ্ছায় কোন কাজ করবে না বা অনৈতিক জীবন যাপন করবে তারা Ekklesia’র প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা হারাবে এবং পরবর্তীকালে তাদের নাগরিকত্ব হারাবে।

কিছু লোক প্রথম থেকেই সোলোনের প্রণীত আইনের ফাঁক ফোকর বের করে তা থেকে ফায়দা লুটতে সচেষ্ট ছিলও। তিনি যখন তার সংবিধান তৈরি করেছিলেন তখন তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কোনন, ক্লেইনিয়াস এবং হিপোনিকাসকে বলেছিলেন যে ধনীদের জমি অধিগ্রহণ করবেন না এবং সব ধরণের ঋণ মাফ করে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। তার এই তিন বিশ্বস্ত (!) বন্ধু সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণ টাকা ধার নেয়া শুরু করে। যখন ঋণ মাফ করে দেয়ার আইন জারী হয় তখন তারা তাদের ঋণ শোধ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় এথেন্সের সবচাইতে ধনী তিনটি পরিবারের ইতিহাস। চারিদিকে ভয়াবহ গুজব ছড়াতে থাকে যে সোলোন তার বন্ধুদের যোগসাজশে এমনটি করেছেন। কিন্তু খুব শীঘ্রই জানা যায় যে সোলোন নিজেই প্রচুর টাকা পয়সা ধার দিয়েছিলেন যা এই আইন প্রণয়নের ফলে আর সংগ্রহ করতে পারছেন না।

সোলোনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো তিনি কি এথেন্স বাসীদের জন্য সবচাইতে ভাল আইন ব্যবস্থা দিতে পেরেছেন কিনা? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “না – শুধুমাত্র সর্বোত্তম আইন যা তারা গ্রহণ করতে রাজী আছে।” এর সাথে তিনি আরও যোগ করেন এই বলে যে, “এমন কোন আইন সৃষ্টি করা উচিৎ না যা প্রয়োগ করা সম্ভব না।” যা এখনও আমাদের বর্তমান সময়ের গণতন্ত্রের মূল ভাব; আইন প্রণেতারা জানে যে একটা সময়ে এসে জনগণ তাদের বিপরীতে ভোট প্রদান করবে।

সোলোন পরিষ্কার ভাবেই গণতন্ত্রের আরেকটি মূল জিনিষ বুঝতে পেরেছিলেন আর সেটি হল যে কোন একটি বিষয় দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সঠিক হতে পারে। একদলের জন্য যেটা সঠিক অন্য দলের জন্যে সেটাই হয়ত অবিচার। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সমাধান তাই কম্প্রোমাইজ করার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে। সম্ভ্রান্তরা চেয়েছিল গরীবদের যাতে সবসময় দমিয়ে রাখা যায় সেরকম আইন। গরীবরা চেয়েছিল ধনী নির্যাতনকারীদের বিচ্যুত করতে। কিন্তু তিনি কোন পক্ষকেই তারা যা চেয়েছিল তা দেননি। তিনি সংখ্যায় অল্প ধনীদের তাদের সম্পদ রাখতে দিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। আর রাজনৈতিক ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন গরীবদের হাতে। ধনীদেরকে কর আরোপ এবং গরীবদের সুবিধার্থে বিভিন্ন সরকারী সেবার খরচ আদায় করার ক্ষমতা ছিলও গরিবদের হাতে। বর্তমান কালের ভাষায় বলা যে ধনীদের উপর কর আরোপ করে দরিদ্রদের বিনামূল্যে শিক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সোলোনের চিন্তা ভাবনা ছিলও আধুনিক যুগের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থার পূর্বসূরি।

সোলোন ছিলেন প্রথম আইন প্রণেতা যিনি বংশীয় এবং গোত্রীয় রাজনৈতিক ক্ষমতার মূলে আঘাত করেন। এটা করতে যেয়ে তিনি অসম্ভ্রান্তদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিলেন, উত্তরাধিকার আইন বদল করে ব্যবসায়ী এবং দক্ষ কারিগরদের উন্নতির সুযোগ এবং ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তিনি প্রথমবারের মত একটি ধারণার জন্ম দিলেন যে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের গুরুত্ব রাষ্ট্রের কাছে কোন বিশেষ পরিবার বা গোত্রের চেয়ে বেশী। প্রতিটা নাগরিকেরই ক্ষমতা এবং অধিকার সমান আর তাদেরও আছে অন্যায়ের প্রতিকার করার দায়িত্ব। সকল পুরুষ নাগরিককে ভোটাধিকার প্রদানের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক কাঠামোতে শাসন কার্য থেকে চরমপন্থিদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো।

সোলোনের আগেও বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের প্রাথমিক ধারণা দেখতে পাওয়া যায় যেমন, গোত্রীয় কাউন্সিল। কিন্তু সোলোন ছিলেন ব্যতিক্রম কারণ তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পরিচর্যার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ক্ষমতা এবং স্বাধীনতা বজায় রাখার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। সোলোনের প্রণীত আইনের মাহাত্ব্য বোঝা যায় যখন আমরা তার সুদূর প্রসারী প্রভাব লক্ষ্য করি। তার তৈরি প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ম-নীতি পরিষ্কার ভাবেই আজকের দিনের আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় একজন নাগরিকের একটি ভোট বা আইন প্রয়োগের জন্য সরকার কোন ব্যক্তির সুবিধার জন্য নয়।

তার আইন ব্যবস্হার এই সূদুর প্রসারী প্রভাবের কারণ হয়ত এই যে তিনি নিজেও মনে প্রাণে একজন গণতান্ত্রিক মানুষ ছিলেন। তাকে তার খুব কাছের বন্ধুরা সারা জীবনের জন্য একনায়ক হবার পরামর্শ দিয়েছিলো কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। সোলোন তাকে যে কাজের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল সেটি সম্পাদন করে আবার তার পারিবারিক জীবনে ফেরত গিয়েছিলেন। আর এরই সাথে সাথে ক্ষমতায় থাকা কালীন ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেন। তার তৈরি গণতন্ত্রের মূল শক্তিটা ছিল ভোটের মাধ্যমে কাউকে ক্ষমতায় আনা নয় বরং ভোট প্রয়োগ করে সেই ক্ষমতা নিয়ে নেয়ার অধিকার এবং সুযোগ।

যদিও সোলোনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ম-নীতি আজও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর চিন্তা চেতনাকে প্রভাবিত এবং পরিচালিত করে তবে তার সেই সব চিন্তা চেতনাকে তার বিরোধীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দমিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছিল। আর এটা করতে যেয়ে তার বিরোধীরা যার দর্শন এবং চিন্তা ভাবনার সাহায্য নিয়েছিলো তিনিও ছিলেন এথেন্সের আরেক গর্ব… যার বেশির ভাগ অনুসারীর মতেই তিনি হলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ এবং দার্শনিক; যাকে আমরা সবাই চিনি প্লেটো নামে।

[১] লেখক Phillippe Gigantes এর মতে
সূত্রঃ The Secret History of the Rulers of the World By Phillippe Gigantes; Chapter 2: Solon

Wednesday, 7 January 2015

রক্তের দাগ

 
 
 
ভারতীয় সীমানত্দরৰী বিএসএফ আনত্দর্জাতিক রীতি-নীতি বিসর্জন দিয়ে যেভাবে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরম্ন করেছে তা কোনো যুদ্ধ চলাকালীন দেশের সীমানত্দেও এরকম ঘটনা ঘটে না। আমাদের সীমানত্দ হত্যা নিয়ে এখন বিজিবি ঢেলে সাজানো সময় এসেছে। ভারতে প্রতিটি বিওপির পাশাপাশি আমাদের একটি করে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করতে হবে। ফেলানি হত্যাকাণ্ডের পর বহির্বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলে তখন ভারত সীমানত্দে কিছুদিন হত্যাকাণ্ড বন্ধ থাকলেও আবার বিএসএফ সদস্যরা নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড শুরম্ন করেছে। আর তখন মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সোচ্চার হয়ে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে তীব্র প্রতিবাদী হতে দেখার কারণেই সে পরিস্থিতি হয়েছিল। তখন বিভিন্নমুখী চাপে কিছুদিন সীমানত্দে হত্যাকাণ্ড বন্ধ থাকলেও ফের তারা নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। তারা একের পর এক হত্যা করে চলেছে আমাদের সীমানত্দবাসীকে। তাদের বেপরোয়া হত্যাযজ্ঞে সীমানত্দবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আবার আগের মতো ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফেলানি হত্যার রক্তের দাগ শুকাতে না শুকাতেই তাদের এহেন কর্মকাণ্ড আমাদের এখন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেলানি হত্যার পর উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠক হওয়ার পর বিএসএফ আর সীমানত্দে কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটাবে না বলে প্রতিশ্রম্নতি প্রদান করলেও এখন আবার হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠেছে এ বাহিনী। দেশের মানুষ রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা পাওয়া তার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হলেও এ ৰেত্রে রাষ্ট্রকে নির্লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। ফেলানি হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধান তখন কোনো প্রতিবাদ পাঠাননি। পরে দেশ-বিদেশে বিএসএফের নিষ্ঠুর হত্যার ব্যাপারে আনত্দর্জাতিক সমপ্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিলে তখন সরকার দাঁয়সাড়াগোছের একটা প্রতিবাদ ভারত সরকারের কাছে করতে দেখা যায়। এ বছর ভারতীয় সীমানত্দ রৰীদের হাতে ৩৬ জন নিরীহ বাংলাদেশি নিহত হন। গত এক দশকে সীমানত্দরৰী বিএসএফ আমাদের সিট মহলের ৯৯৬ জন নিরীহ লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। ভারতীয় অংশের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাঙ্গামোড়, কাশীপুর এবং ফুলবাড়িয়া সদর ভারতীয় ছিটমহলের ভেতর বাংলাদেশি চন্দ্রখানা ছিটমহল। এখানে ৪০০ লোক মানচিত্রের বলয়ে পড়ে মানবেতন জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ ছিটমহলের আয়তন ১০০ একর। অপরদিকে ভারতীয় সীমানত্দবাহিনী বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি সীমানত্দের ১৩৬০ নাম্বার পিলারের প্রায় ১৫০ গজ দূরে ১৯৮৯ সাল থেকে একটি আনত্দঃরাজ্য মহাসড়কে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ কাঁটাতারের বেড়ার ফলে গজুকাটা, বড়গ্রাম, সুতারকান্দি চাতলপার, জাড়াপাড়, সারপার, লাফাকুনা, নয়াগ্রাম, ভোবারতলা টেকইকোনা, লাঠিটিলা, বারজনি, উজিনপুর, লক্ষ্মীপুর বাজার, জামডহর, উজান জামডহর, গোডাউন, সোনাপুর, লোহার মহল, বেউরসহ ত্রিশটি গ্রামের ৪০ সহস্রাধিক মানুষের চরম দুর্ভোগের শিকার পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া যে সব সীমানত্দ এলাকার মধ্যে বিএসএফের সবচেয়ে বেশি অশুভ তৎপরতা লৰ্য করা যায় সেগুলোর মধ্যে-খাসুরিয়া, বুড়িমারী, ভূরঙ্গামারী, দৌলতপুর, আটোয়ারী, গাংনি কাশিপুর, নবীনগর, ভোমরা, মহেশপুর, জৈনত্দপুর, দেবহাটা, তেঁতুলিয়া, বৌমারীর ভঙ্গুরচর, নওদাপাড়া, ডিবির হাওর, চন্দ্র খানা, সুরমা চা বাগান, গাতিপাড়া, রানী শংকৈর, বালিয়াভাঙ্গা, মকসেদপুর, ঘোনা সীমানত্দ, শ্যামনগর, শ্যামকুড়া ও দাউদপুর সীমানত্দের ছিটমহলবাসীর কৃষকর, জেলে, রাখাল, শ্রমিক এবং গরম্ন ব্যবসায়ীরা বিএসএফের কবলে আক্রানত্দের শিকার হন সবচেয়ে বেশি। এদিকে ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আলোকে বাংলাদেশের অদখলীয় ভূমি এবং অনিষ্পতি সীমানা নির্ধারণে গত নভেম্বরে দিলিস্নতে যৌথ সীমানা নির্ধারণের কার্যকরি গ্রম্নপের (জেবিডাবিস্নউজি) সভায় বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণের আনত্দঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আয়োজন করা হয়। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর দু'দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিডিআর ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠকে ভারতের পৰ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমানার সংঘাত ও মালিকানাবিহীন অপদখলীয় সম্পত্তি হসত্দানত্দরের প্রসত্দাব করে। এ প্রসত্দাবে সীমানা নির্ধারণ করতে হলে ভারত অপতৎপরতার মাধ্যমে বেশি জমি দখল করার একটা আশঙ্কা থেকে যায়। তথ্যমতে, বাংলাদেশের অভ্যনত্দরে ভারতের অপদখলীয় ভূমি রয়েছে ৩ হাজার ২৪ একর । আর ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে ৩ হাজার ৫৬ একর। অপরদিকে বাংলাদেশের ভেতর থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মোট জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ১৬০ একর। আর ভারতের ভেতর থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর। এদিকে দুদেশের মধ্যে অনিষ্পতি সীমানা রয়েছে ছয় কিলোমিটার। তাছাড়া সিলেটের জকিগঞ্জ এলাকার সুরমা নদের ৪০ কিলোমিটার এবং কুশিয়ার নদের ২৬ কিলোমিটার অভিন্ন সীমানত্দ নদী হিসেবে চিহ্নিত। বর্ষার করাল স্রোতে বাংলাদেশ অংশে ব্যাপক নদী ভাঙনের শিকার হয়। আর শুকনো মৌসুমে ভারত প্রানত্দে চর জেগে উঠে ৩ হাজার একর জমি ভারত ভূখণ্ডে চলে যায়। ভারতের সাথে সীমানত্দবর্তী নদীভাঙন রোধ সমঝোতা থাকলেও তা মূলত কোনো কার্যকর ভূমিকায় আসীন হচ্ছে না। আর এককভাবে বাংলাদেশের কিছু করাও সম্ভব নয়। ফলে ভারতের কবল থেকে জমি উদ্ধার করতে হলে শীর্ষ পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যতীত কোনোমতেই সম্ভব নয়। নদীভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী দুটির তীর সংরৰণ করার জন্য কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিলেও মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করেননি। ফলে অভিন্ন নদী সমস্যাটি গোচরেই রয়ে গেছে। ভারতীয় বিএসএফ তাদের নগ্ন থাবা যেভাবে বাংলাদেশের মানুষের ওপর বিসত্দার করে চলেছে তাতে সীমানত্দের এপারে লাশের পরিসংখ্যান দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার মধ্যে ২০০৭ সালে হত্যা করে ১২০ জন এবং তাদের নির্যাতনে আহত হয় ৮২ জন আর তারা ৮৭ জনকে অপহরণ করে। ২০০৮ সালে বিএসএফ ৬২ জনকে হত্যা করে ও ৪৭ জন তাদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন এবং তখন ৮১ জন অপহরণের কবলে পড়েন। ২০০৯ সালে ৯৮ জনকে হত্যা ও ৭৭ জন আহত হন এবং ২৫ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। ২০১০ সালে ৮৪ জন বিএসএফ কর্তৃক নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আর আহত হন ৭৭ জন এবং ২৫ জন লোককে তারা অপহরণ করেন। ২০১১ সালে এ পর্যনত্দ ৩৬ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বিজিবি দেশের উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার কূটনৈতিক চ্যানেলে ভারতের সাথে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে দেন-দরবার করার কথা বললেও সরকার এ ৰেত্রে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা সিটমহলগুলো বিনিময়ের মাধ্যমে সমঝোতার পদৰেপ নেয়ার ব্যাপারে উভয় দেশ একমত হয়েছেন। কিন্তু বাসত্দবমুখী কোনো পদৰেপ গ্রহণ না করার কারণে ভারতের সাথে আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতাই ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরম্ন করেছে। ফেলানি হত্যার পর সে দেশের উচ্চ পর্যায়ে বিএসএফকে রাবার বুলেট দেয়ার ঘোষণা দিলেও তা এখন পর্যনত্দ সে পদ্ধতি প্রয়োগ করতে বিএসএফকে দেখা যায়নি। ভারতীয় সীমানত্দবাহিনী বিএসএফের শীর্ষ কর্মকর্তা হেড কোয়ার্টার্সে বিএসএফের (ইস্ট) স্পেশাল ডিরেক্টর জেনারেল প্রণয় সাহা শিলিগুড়িতে তার এক বক্তব্যে ফেলানি হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশসহ আনত্দর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠলে সে দেশের সীমানত্দরৰীদের রাবার বুলেট দেয়ার কথা বলেন। সে লৰ্যে তাদের 'পাম্প অ্যাকশন বোর গানস' দেয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সে পদৰেপ কার্যকর না করায় বিএসএফের হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হচ্ছে না। তারা আবারো মানুষ হত্যায় মেতে ওঠেছে। ফেলানি হত্যার পরপরই দেশের মানুষ প্রতিবাদ করার পাশাপাশি বিদেশের মাটির নিউইয়র্কে পর্যনত্দ বাঙালি অধিবাসীরা মানবন্ধন করে ভারতের হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে প্রতিবাদ করেন। সেখানে 'আমরা বাংলাদেশে' নামের সংগঠনের পৰ থেকে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের গ্রান্ড সুইটস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। গত ১৮ থেকে ২০ জানুযারি ঢাকায দু'দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায় কিশোরী ফেলানি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্থান পায়। বাংলাদেশ সরকার ফেলানি হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথম পর্যায়ে কোনো প্রতিবাদ না করলেও দেশ এবং বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠলে তখন সরকার স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায় বিষয়টি উত্থাপন করেন। কিন্তু সে বৈঠকে ফেলানিকে নৃশংস হত্যার ব্যাপারে ভারতের পৰ থেকে দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কোনো ৰমা চাওয়ার বিষয়টি সামনে আসেনি। পরে ভারত সরকার দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনের সোচ্চার ভূমিকায় সে দেশের বিএসএফকে তাদের পদ্ধতিগতভাবে মারণাস্ত্র রাখার বিকল্প হিসেবে রাবার বুলেট দেয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু এ ঘোষণাও অন্যবারের মতো তিমিরেই অসত্দমিত হয়ে যায়। ভারত সরকার বাংলাদেশি হত্যায় কয়েক দফা বৈঠক চালালেও তা থেকে বাংলাদেশের মানুষ কোনো প্রকার সুফলভোগী হতে পারেনি। আর আমাদের দেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতায় ভারত এহেন অপরাধ বারবার ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে। ভারতে সাথে পাকিসত্দান এবং অন্যান্য দেশের সাথে সীমানত্দ এলাকা নিয়ে বৈরী ভাব থাকলেও সেখানে কোনো হত্যাযজ্ঞের ঘটনা একটা চোখে পড়েনি। তার কারণ হলো পাকিসত্দানের সাথে ভারতের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে আর তার ফলশ্রম্নতিতেই সে দেশের সীমানত্দবাসীরা সব সময় সতর্কতা অবলম্বন করে চলেন। কিন্তু ভারতের সাথে পাকিসত্দানের মতো আমাদের সে রকম বৈরী সম্পর্ক না থাকার কারণে ভারতের ভূখণ্ডে বাংলাদেশি ভয়ভীতির ঊধের্্ব থেকে ভারতে প্রবেশ করে থাকেন। তাছাড়া মানচিত্রের কাঠামোগত একটির কারণে অনেককে সীমানা পার হয়ে ভারতে কাজ করতে পর্যনত্দ যেতে হয়। আর এ কারণেই আমাদের সীমানত্দের অনেক সাধারণ নিরীহ মানুষের প্রাণ সংহারের ঘটনা ঘটাতে পারছে সীমানত্দরৰী বিএসএফ। ফেলানি হত্যার পর বাংলাদেশ সরকার যেভাবে নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে তা অন্য কোনো সরকার প্রধানদের করতে দেখা যায় না। ভারতের একজন অধিবাসী শ্রীলংকায় অবৈধ প্রবেশের দায়ে শ্রীলংকার কোস্টগার্ড তাকে হত্যা করে। আর এ কারণে শ্রীলংকাকে কূটনৈতিক পর্যায়ে বড় ধরনের জবাবদিহি করতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের সরকার প্রধান যে ধরনের কুষ্মান্ড ভূমিকা গ্রহণ করছেন তাতে করে ভারতের বিএসএফ অসহিষ্ণু হয়ে ওঠছে। এবার কি বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বিএসএফ কর্তৃক হত্যা বন্ধে আমাদের দেশের সরকার প্রধান কোনো ফলপ্রসূ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন? না কি বাংলাদেশের অধিবাসীরা এভাবেই নির্যাতন ও নিগৃহীত হবেন। ভারতের সাথে আমাদের রয়েছে সুসম্পর্ক। আমাদের দেশের করিডোর ব্যবহারে আমাদের সরকার প্রধান ভারতকে ভালো সুযোগ-সুবিধা পর্যনত্দ দিয়েছেন, তাহলে কেন বাংলাদেশি নাগরিককে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড ঘটালেও সরকার কূটনৈতিক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবেন। সিটমহলবাসীরা এ দেশের অধিবাসী হিসেবে তারা কি সরকারের কাছে তাদের রৰা করার এতটুকু দাবি করতে পারে না? ১৪ এপ্রিল বেনাপোল সাদিপুর সীমানত্দে ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশি একজন গরম্ন ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে। সে সাদিপুর সীমানত্দে লেবুতলা পোস্ট দিয়ে ভারত থেকে গরম্ন নিয়ে আসার পথে বিএসএফ এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় এবং তার লাশ টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়। ১৮ এপ্রিল সাতৰীরা সীমানত্দের বিপরীতে ভারতের কলাপোত এলাকায় বিএসএফ বাংলাদেশি দুই গরম্ন রাখালকে গুলি করে হত্যা করেছে। ১০ এপ্রিল ভোরে নওগা পোরশা উপজেলার নিতপুর সীমানত্দের ২২৮/২ সীমানত্দ পিলারের কাছ দিয়ে তিনজন গরম্ন ব্যবসায়ী গরম্ন নিয়ে আসার পথে তাদের ভারতীয় ১৮৩ ব্যাটালিয়নের বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই গরম্ন ব্যবসায়ী সানাউলস্নাহ (৪০) মারা যায় এবং অপর দু'জন নাজমুল (৩৫) এবং হিদুল (৩০) আহত হয়। গত ১৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমানত্দবর্তী শিবগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র বর্গাচাষী শাহজাহান রাশু সীমানত্দের বেড়ার এ পাশ থেকে অপরপাশের বন্ধুর সাথে কথা বলা অবস্থায় তাকে বিএসএফ ধরে নিয়ে তার হাত-পা ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ফেলে রেখে যায়। পরে বর্ডার গার্ড অফ বাংলাদেশ তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করেন। সীমানত্দের মেইন পিলার ৪-এর সাব পিলার ৫ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩৯ বর্ডার গার্ড অধিনায়ক আবুবকর প্রতিবাদ পাটিয়ে চিঠি পাঠালেও বিএসএফ তার কোনো জবাব দেয়নি। গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমানত্দে আবদুল হক (৩০) নামের একজনকে বিএসএফ সদস্যরা হত্যা করে। সে ঘটনায় সীমানত্দবর্তী দুর্গাপুর এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের হস্থৰেপে তা প্রশমিত হয়। ১৭ জানুয়ারি কালা সাদেক সীমানত্দ চৌকির কাছ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকালে শঙ্কর নামে একজন ফটোগ্রাফারকে হাত-পা বেঁধে এবং চোখে কাপড় বেঁধে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনা তখন শঙ্করের মা সেক্টর কমান্ডার এবং ঢাকার মহাপরিচালক দপ্তরে জানালেও তাকে ফেরত পাওয়া যায়নি। ২৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী সীমানত্দে বাংলাদেশি ভূখণ্ডে দাশিয়ারছরা সিটমহল থেকে সাঈদুল (২৫) এবং জাহাঙ্গীর (২৫) নামের দুজন ভারত থেকে কাজ করে ফেরার পথে তাদের বিএসএফ ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে তাদের মারধর করার দৃশ্য শত শত লোক দেখলেও তাদের রৰা করতে কেউ পারেনি। বিষয়টি বিজিবিকে জানালেও আইনি জটিলতার কারণে তাদের রৰার্থে এগিয়ে আসেনি। ৩১ জানুয়ারি বেনাপোল-পুটখালী সীমানত্দে বুলবুল আহমেদ (৩০) নামের বাংলাদেশি যুবককে কুপিয়ে যখম করে বিএসএফ। আত্মীয়ের বাসা থেকে বেড়ানো শেষে বাড়ি ফেরার সময় আরাইল ক্যাম্পের সদস্যরা তাড়া করে তাকে ধরে ফেলে কুপিয়ে মারাত্মক যখম অবস্থায় নোম্যান্স ল্যান্ডে ফেলে যায়। ১২ ফেব্রম্নয়ারি গভীর রাতে দু'জন গরম্ন ব্যবসায়ী জলিল (৩০) এবং অপরজন পরিচয়হীন ব্যক্তিকে বিএসএফ হত্যা করে। তারা ২৪ পরগনার বনগাঁও থানার খলিদপুর গ্রামের অধিবাসী বলে জানায়। ৭ মার্চ চুয়াডাঙ্গার দামুরহুদা উপজেলার দর্শনা নিমতলা সীমানত্দ থেকে আ. মজিদ নামে এক বাংলাদেশি কৃষককে অপহরণ করেছে বিএসএফ। শ্যামপুর এলাকার এ কৃষক নিমতলা সীমানত্দের ৭৪ নাম্বার মেইন পিলারের পাশ থেকে ভারতের নদীয়া জেলার ইস্টগঞ্জ থানার সীমানত্দের ২২ ব্যাটালিয়ান গেদে ক্যাম্পের বিএসএফ অপহরণ করেন। গত ১৪ মার্চ বাংলাদেশ ভূখণ্ডে বিএসএফ সদস্যরা প্রবেশ করে চাতনা পুর স্থলবন্দরের বাংলাদেশের ৩ জন পরিবহন শ্রমিককে নির্যাতন করেন। ৮ এপ্রিল দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় দাউদপুর সীমানত্দে আব্দুর রহিম নামে একজনকে বিএসএফ গুলি করে আহত করেন। ১১ এপ্রিল রাজশাহীর পবা উপজেলার সোনাইকান্দি সীমানত্দে বিএসএফ আলমগীর হোসেন কালু (৩০) নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। ১০ এপ্রিল সাতৰীরা বৈকারী সীমানত্দের কাছে বিএসএফ আনারম্নল ইসলাম এবং খোকন গাজীকে আটক করেন। আটকের পর তাদের রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে গুরম্নতর যখম করেন। এভাবেই আমদের সিট মহলবাসী অত্যাচারের শিকার হয়ে আসলেও দেশ প্রধানরা তাদের রৰায় সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হচ্ছে। সর্বোচ্চ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের রাজনীতিবিদরা তাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসে অকৃপণভাবে বিএসএফর কবল থেকে তাদের রৰা করবে দেশবাসীর সেটাই প্রত্যাশ।

Tuesday, 6 January 2015

Blasphemy and the right to offend

The right to express one’s opinion freely is maybe the most important democratic right, and it is currently under assault in Bangladesh. Hifazat-e-Islam demands the introduction of strict blasphemy laws, and the government, instead of defending freedom, resorts to an ill-advised and imprudent appeasement strategy that hinders the press in its duty to inform the public, threatens the futures of young bloggers who were, and continue to be, arrested, and puts in peril the future of the democracy of the country.
Why is freedom of expression important? John Stuart Mill, the famous and influential 19th-century British philosopher of freedom, to whom many nations have every reason to owe a debt of gratitude, argued that restricting speech hinders the pursuit of truth. First, no human being is infallible. Neither Hifazat-e-Islam, nor members of the Government of Bangladesh, nor I, nor anybody else can claim privileged access to the absolute truth. Of course, part of the problem is that Islamist groups nevertheless often make exactly that claim, especially for their own, often highly subjective interpretations of the writings of earlier teachers and Islamic authorities. But, for all we know for certain, any opinion that is being oppressed might in fact be true. Second, Mill continues, even if a silenced opinion is an error, “it may, and very commonly does, contain a portion of truth; and since the general or prevailing opinion on any subject is rarely or never the whole truth, it is only by the collision of adverse opinions that the remainder of the truth has any chance of being supplied.” Finally, even patently false ideas deserve protection because, only if the truth continues to be challenged, it will remain alive and does not dwindle into mere dogma.
Besides its essential importance for the pursuit of truth, freedom of expression also plays a central role in a good life. Human beings do not fare best when they are forced into a life they did not choose, but when they are sovereigns over their own lives. In order to govern their lives successfully, people must be able to make informed choices, which in turn requires a free exchange of ideas. Human beings hence have a strong interest in being free to express their opinions. Free-speech restrictions frustrate this interest and have a negative impact on human well-being.
A free exchange of ideas is also essential to democracy and human development. Bangladesh should be a country where ideas can be openly disseminated and debated. Political and social progress is possible only if all ideas are considered, from whatever source, and if received convictions are tested against opposing views. Few would challenge the proposition that human civilization has evolved over the millennia, for the most part to the greater comfort and safety of humanity. Such evolution has, throughout history, been often criticized, at best, and very often challenged and punished. One has only to think of the treatment by the Roman Catholic Church of Galileo to appreciate this simple truth. Repression of speech and debate fits authoritarian governments such as those in Saudi Arabia and North Korea, but not a free Bangladesh. In a democracy, every opinion should have equal access to the marketplace of ideas. Denying the right to speak their minds to some people – typically those whose opinions are unpopular – is treating them with less respect than other citizens.
Finally, freedom of expression is a fundamental human right. It is enshrined in Article 19 of the Universal Declaration of Human Rights, which states that “[e]veryone has the right to freedom of opinion and expression; this right includes freedom to hold opinions without interference and to seek, receive and impart information and ideas through any media and regardless of frontiers.”
Given the great value that attaches to freedom of expression, those daring to demand the suppression of a particular type of speech, namely blasphemous speech, better have good reasons for their demand. I believe they don’t.
Blasphemy is the act of mocking, insulting, or defaming things that others hold sacred, such as human prophets or religious scriptures. From an Islamic perspective, for example, insulting Allah violates the right of Allah. That, of course, gives Muslim believers a strong reason not to insult Allah. But it is equally obvious that religious norms do not give a reason to abide by them to those who are not religious, such as atheists (not a dirty word, by the way), who believe that there is no god. Religious beliefs as such also must not serve as a basis for any law in a secular state.
Blasphemous speech should be criminalized, one might object, not because it is the proper role of a state to force religion upon its citizens – it is not –, but because it is offensive to religious folks, and hurts their feelings. This suggestion is worth considering, as it is uncontroversial that psychological pain matters and, all else being equal, should be avoided. We rightly expect the government to protect us from physical assault, so why shouldn’t we also expect the government to protect us from the kind of psychological harm that results from offensive speech? Why not have the government ban offensive speech?
For one thing, almost all kinds of speech are offensive to somebody. Hifazat-e-Islam’s demand to repeal laws asserting the equal rights of women, for example, must offend everybody who wants to see women as equals in society, just as their public proclamations that Ahmadis are “non-Muslims” are an insult to Ahmadiyya Muslims. Christian sermons might be offensive to some Muslims, communist speeches might be offensive to some capitalists, and some people might be offended by literature about homosexuality, or by my inter-racial marriage and the love I express for my Bangladeshi wife. Yet, we would all think that much of this, though offensive to some, must be protected.
For another thing, there is no need to ban an entire category of speech as people can easily defend themselves against speech they find annoying or offensive. Compared to the value of free speech, the cost of avoiding offensive speech is trivial: If you don’t like what you hear, simply walk away. If you don’t like what you read on a blog, relief is just one click away. Interestingly, the Qur’an seems to suggest the same reaction: “[…] when they [the Muslims] hear ill speech, they turn away from it and say, ‘For us are our deeds, and for you are your deeds. Peace will be upon you; we seek not the ignorant.’” (Qur’an 28:55)
If the concern of Hifazat-e-Islam and other Islamists is for their own religious feelings, why do they read blasphemous blogs? If they don’t want that religious feelings are being hurt, why do they draw the attention of other believers to these blogs, or sometimes even reproduce blasphemous material in their publications? Searching for blasphemous writings and then complaining about hurt feelings is much like running into a stretched fist with open eyes and then crying “Assault!” While it is virtually impossible to ban all blasphemous speech, especially on the internet, and attempting to do so is very costly, ignoring blasphemous speech is easy and the costs of doing so are trivial, especially in a predominantly Muslim country where taboo ensures that blasphemous speech is rare.
But isn’t the real issue that blasphemous speech leads to violence, rather than that it offends? Well, does it really? Surely everybody remembers the violence that followed the release of “Innocence of Muslims,” a poorly made 14-minute video clip uploaded to YouTube in July last year. But some will also remember what happened in the first two months after the release: nothing. This is not surprising, as blasphemous speech does not cause violence directly. If there is a causal relationship between blasphemous speech and violence at all, the effect is indirect. The link between the two is people who choose to react with violence after being subjected to blasphemous speech, and typically also hate-mongers who make sure that blasphemous speech reaches those who are willing to resort to violence. One of these hate-mongers in the case of “Innocence of Muslims” was the Egyptian television host Khaled Abdallah. He reported on the video on September 8, and thereby sparked outrage across the globe.
The case of supposedly blasphemous blogs in Bangladesh is similar. For years, most people did not even know that these blogs exist. Until recently, the blasphemous content they are said to contain did not “cause” or “incite” any violence. The problem is not blasphemy. The problem is political groups with an intolerant and bigoted agenda that are using the writings of free-thinking Bangladeshis to bring about violence, and to force their idea of a medieval Bangladesh upon the rest of the nation.
Also, in fact, there is no guarantee that blasphemy laws would reduce violence. One has only to look at Pakistan to see the simple truth of that observation! A more promising response to the kind of violence we saw in the wake of the release of “Innocence of Muslims” or the debate about so-called blasphemous bloggers in Bangladesh is to insist that, whether or not people like what they hear or read, they must not resort to violence. Prohibiting speech promotes intolerance, and will hence likely not result in less violence, but more violence.
Blasphemy laws hinder the pursuit of truth, are bad for people and human development, are undemocratic and violate the fundamental freedom of expression; they have been misused to repress vulnerable minorities and political opponents, and to settle personal disputes (again, for example, in Pakistan); and they are an inadequate means to promote tolerance and protect the religious feelings of believers.
Rainer Ebert is a student of philosophy at Rice University, a founding member of the Bangladesh Liberal Forum, and an Associate Fellow at the Oxford Centre for Animal Ethics.

Saturday, 3 January 2015

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন পরিবর্তন

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন পরিবর্তনের বিলে বলা হয়েছে, বিচারপতি, ম্যাজিস্ট্রেট এবং সরকারি আমলাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দাখিলের আগে 'দুদক'কে অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তবে 'দুদক' মনে করে, আইনের এহেন পরিবর্তনে 'দুদক' অধিকতর দুর্বল এবং অকার্যকর হয়ে পড়বে এবং সেটা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবেবাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে মানবেতর জীবনযাপন করে। তারা মৌলিক চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারে না। অথচ এই দেশে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মানুষ সমাজের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি করে বিত্তশালী হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিশীল চাকাকে পেছন দিক থেকে জোরেশোরে লাগাম টেনে ধরছে। দেশের অর্থনীতি যখন দুর্নীতি দ্বারা ভারাক্রান্ত হচ্ছে, এমন সময়ে যুগোপযোগী তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ জাতীয় সংসদ কর্তৃক গৃহীত হয়। অদ্যাবধি প্রায় দুুই বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশের আপামর জনসাধারণের একটি বিশাল অংশ এখনও তথ্য অধিকার আইন কী, কোথায় কোথায় তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার/প্রয়োগ করা যায়, তথ্য না পেলে কোথায় অভিযোগ ও আপিল করতে হয়_ এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওয়াকিবহাল নয়। তথ্য অধিকার হলো মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। পৃথিবীর প্রায় ৮৮টি দেশ 'তথ্য অধিকার'কে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দুর্নীতি প্রতিরোধ, দায়িত্বশীল সরকার, প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব।অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন অ্যাক্ট (২০০৪)-এর উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতির বেড়াজাল থেকে দেশকে রক্ষা করা। অর্থাৎ বাংলাদেশের যে স্তরেই দুর্নীতি হোক না কেন, এই আইন ব্যবহার করে তদন্ত ও অনুসন্ধান করে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন দুর্নীতি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দুর্নীতি দমন আন্দোলনের ধারাকে আরও গতিশীল ও যুগোপযোগী করতে তথ্য অধিকার আইন মাইলফলক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। যদিও বাংলাদেশ সংবিধানে তথ্য অধিকার আইন বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিন্তু সংবিধানের ৭, ৩২ এবং ৩৯ ধারাকে আমরা তথ্য অধিকার আইনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। তথ্য অধিকার আইন-২০০৯-এর ৮টি অধ্যায়ে ৩৭টি ধারা রয়েছে। এসব ধারার মধ্যে ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২০টি বিষয়ে সরকার তথ্য দিতে বাধ্য নয় এবং ধারা ৩২ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কার্যে নিয়োজিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য নয়। তবে এসব সংস্থা থেকে দুর্নীতি বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য জনগণ পেতে পারে। তথ্য অধিকার আইনানুযায়ী সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য অধিকার আইনের আওতায় তথ্য দিতে বাধ্য এবং এ আইন ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্যপ্রাপ্তি সম্ভব। তথ্য অধিকার আইনে বলা হয়েছে, 'কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।' এই আইনকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিকরা শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন।তথ্য অধিকার আইন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন অ্যাক্ট উভয়কেই সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি দূরীকরণে ব্যবহার করা যায়। দুই আইনেই কমিশনকে নিজস্বভাবে তদন্ত ও অনুসন্ধানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দুটি কমিশনই স্বাধীন কিন্তু সাংবিধানিক নয়। ক্ষমতা এবং কার্যক্রমের দিক থেকে তথ্য কমিশন নিজেই তদন্ত করতে পারে এবং আবেদনকারীর চাহিত তথ্য নির্দিষ্ট কার্যদিবসের মধ্যে না পেলে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করলে তথ্য কমিশন তা নিষ্পত্তি করতে পারে। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনও ক্ষমতা ও কার্যক্রমের দিক থেকে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্ত ও অনুসন্ধান করতে পারে এবং মামলা দায়ের করতে পারে। তথ্য কমিশনের প্রাত্যহিক কাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিভিন্ন ধরনের সেমিনার এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা, আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা দেওয়া, ওয়েব পোর্টালে তথ্য হালনাগাদ করা ইত্যাদি। তথ্য অধিকার আইনে বলা হয়েছে, আপিল এবং অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে 'ঈড়ফব ড়ভ ঈরারষ চৎড়পবফঁৎব-১৯০৮' প্রযোজ্য হবে। যেমন_ সমন জারি, কোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তথ্য কমিশনের সামনে উপস্থিত করতে বাধ্য করা, হলফনামার মাধ্যমে প্রমাণ উপস্থাপন করা ইত্যাদি। অপরদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে আইনানুযায়ী ঞযব ঈড়ফব ড়ভ ঈৎরসরহধষ চৎড়পবফঁৎব-এর মাধ্যমে সাক্ষী তলব করা, অভিযোগ সম্পর্কে অভিযুক্তকে জেরা করা, বেসরকারি দলিলপত্র উপস্থাপন করা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এ বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন অথবা প্রধান দুর্নীতি দমন কমিশনার যে কোনো স্থানে তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবেন এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যে, তার অধস্তন যে কোনো অফিসার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করতে পারবেন অথবা আইন বা নিয়ম লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারবেন। অন্যদিকে তথ্য অধিকার আইনে উল্লেখ আছে, যদি কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নির্দিষ্ট কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য প্রদান না করেন তাহলে অভিযুক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কমিশন ৫০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এ বলা হয়েছে, অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যাবে। লক্ষণীয়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন পরিবর্তনের বিলে বলা হয়েছে, বিচারপতি, ম্যাজিস্ট্রেট এবং সরকারি আমলাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দাখিলের আগে 'দুদক'কে অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তবে 'দুদক' মনে করে, আইনের এহেন পরিবর্তনে 'দুদক' অধিকতর দুর্বল এবং অকার্যকর হয়ে পড়বে এবং সেটা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা সম্ভব। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০০ ব্যক্তিকে তদন্ত কমিটি শনাক্ত করেছে। এই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক বলয় এবং সরকারি উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন, যখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গের নাম বাদ দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। অনেক রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব উপদেশ দিয়েছেন তথ্য অধিকার আইনকে ব্যবহার করে কীভাবে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায় এবং কী কী ধরনের দুর্নীতি পুঁজিবাজারে ঘটেছে সে সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে। কারণ এখানে ৩৩ লাখ মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারীর জীবন জড়িত। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন আংশিক প্রকাশ করা হবে বলে মতপ্রকাশ করায় ধারণা করা হচ্ছে, সরকার শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষার চেষ্টা করছে। দুর্নীতি বিষয়ক তাত্তি্বকদের মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দুর্নীতির অন্যতম কারণ হলো, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার আগে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়, ক্ষমতায় যাওয়ার পর সেগুলো ভুলে যায়। তারা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতিপরায়ণ কাজে লিপ্ত হয়। তথাপি সরকার পুঁজিবাজারের অস্থিরতা দূরীকরণে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সরকারি কর্মকর্তারা প্রশাসনিক, অর্থনীতি বিষয়ক কোনো তথ্য দিতে চান না। সরকারি তথ্য জাতীয় সম্পদ_ এই সত্যটি প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। জনগণকে যত বেশি তথ্য দেওয়া যাবে, সরকারের দায়িত্বশীলতা ততই বৃদ্ধি পাবে। বিপরীত দিকে যত বেশি তথ্যের সীমাবদ্ধতা থাকবে; সরকারের ক্ষমতা, দায়িত্বশীলতা তত বেশি কমতে থাকবে। তথ্য ছাড়া জনগণ তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারে না। যেমন, যখন বাজেট প্রকাশ করা হয় তখন বাজেট প্রণয়ন সংক্রান্ত তথ্যের প্রতি জনগণের অভিগম্যতা থাকা প্রয়োজন। তথ্য অধিকার আইন চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকারের জবাবদিহিতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বিভিন্ন বিভাগে দুর্নীতি হ্রাস পাবে। তথ্য কমিশনের প্রথম অভিযোগ দাখিল করে ইঊখঅ (বেলা)। রাজউকের কাছে হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত রিপোর্ট চাইলে বেলাকে তথ্য দিতে রাজউক অপারগতা প্রকাশ করলে পরে তথ্য কমিশনের হস্তক্ষেপে ইঊখঅ তথ্য পায়। তথ্য কমিশন এ পর্যন্ত চলি্লশটির অধিক অভিযোগ পেয়েছে এবং এর মধ্যে ৩৩টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে। অধিকাংশ অভিযোগকারী দরিদ্র মানুষ, যারা তথ্য পেতে ব্যর্থ হয়েছিল। যেমন, সরকার বিনামূল্যে কী কী ওষুধ বিতরণ করে, কৃষির ওপর ভর্তুকির পরিমাণ, ভিজিএফ, ভিজিডি কার্ড বিতরণ ইত্যাদি বিষয়ে। পরিশেষে বলা যায়, তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি দমন আইন সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রশাসনিক/বেসরকরি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি হ্রাসকরণ সম্ভব।

Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter