সরকার না হয় রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনও কি অন্ধ?
দু’দিন আগে ঢাকার একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা দেশে বিদেশে ব্যাপক চ্যাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে। তা হলো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর জানাজায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি। অরাজনৈতিক এ ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যু ও পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনা জনমনে সৃষ্টি করে বিপুল আগ্রহের। ১৯৮১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজায় অংশগ্রহণকারী বিশাল সংখ্যার অপরিমেয় জনমানুষ বাংলাদেশের ৪৫ বছরের ইতিহাসে এখনও একটি আলোচ্য বিষয়। এরপরে তদীয় পুত্র কোকোর জানাজা আরেকটি বৃহত্তম সমাবেশ। উল্লেখ করা যায়, উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ইন্দিরা গান্ধীর স্নেহের পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুতে কারও টনক নড়েনি।
বিস্ময়করভাবে ঢাকায় জানাজার অনুষ্ঠানে এত বড় সমাবেশ হয়ে গেলো, অথচ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলি তা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারেনি। অনেক ছোটখাট বিষয়কে লাইভ টেলিকাস্ট করার নজীর এখানে বিদ্যমান। জনমনে বিপুল আগ্রহ থাকলেও টিভি চ্যানেলগুলি তা সরাসরি দেখাতে পারেনি।এর কারণ হিসাবে সবাই মনে করেন, টিভি চ্যানেলগুলো সরকারের কঠোর সেন্সরশীপের মধ্যে রয়েছে। কেননা কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়ার আরেক পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্য লাইভ টেলিকাস্ট করার কারণে একুশে টিভির কর্ণধার আবদুস সালামকে রাতের আধারে চোর ছ্যাচ্চোরের মত গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায় রাস্তা থেকে, এরপরে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে রেখেছে। এমনকি ঐ টিভি চ্যানেলটির প্রদর্শনীও সরকার সীমাবদ্ধ করে দেয় কয়েকদিন। অখিল পোদ্দারের নেতৃত্বে সরকার পন্থীরা ক্যু করে টিভি সংবাদ থেকে মালিকপন্থী ৫ জন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে। এরপর থেকে একুশে টিভি সরকারের প্রতি চরম আনুগত্য প্রদর্শন করে চালু আছে। পরবর্তীতে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা অন্যান্য সব টিভির মালিকদেরকে ডেকে একুশে টিভির নজির দেখিয়ে তাদের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক চলার জন্য মোলায়েম সুরে ধমক দেয়। আর তাতেই কাজ হচ্ছে। সরকারের পছন্দমত খবর প্রচার করছে; অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মকা-, এমনকি জনগণের প্রত্যাশিত খবর ও মাঠে ময়দানের বাস্তব চিত্রও টিভিতে প্রদর্শন করা যাচ্ছে না। টক-শোতে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে না আলোচকরা। সরকারের সমালোচনাকারী আলোচকদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ প্রাণ ভয়ে দেশ ছেড়েছেন।
আরাফাত রহমান কোকো, যার জন্মই হয়েছে একজন সেনা কর্মকর্তার সন্তান হিসেবে-সামরিক কবরস্থানে দাফন পাওয়া তার জন্মগত অধিকার। সে জন্মগত অধিকারকে এই প্রথমবারের মতো বাতিল করে তাকে কবরস্থানের মাটি থেকে বঞ্চিত করলেন দেশের বিপুল ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান দিলেন, কেবল জীবিত অবস্থায়ই নয়, তার বিরোধী পক্ষের লোকজনকে মৃত্যুর পরেও শায়েস্তা করতে তিনি পারঙ্গম! কোকো যদি একজন সেনাপ্রধানের পুত্র হওয়ার পরেও বিধি মোতাবেক কবরের মাটি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন, তবে ভবিষ্যতে এ নজির অনুকরণে বহু ঘটনা ঘটতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। দেশের যে সেনাপ্রধান, এ ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডে রাজনৈতিক নির্দেশনাকে সায় দেন, তার বাহিনীর কাছে তিনি কি রকম নপুংশক হিসাবে পরিচিত হয়ে আছেন, সেটা সামাজিক মাধ্যমগুলিতে আলোচনা হচ্ছে। অন্যদিকে, ম্যান্ডেটহীন প্রধানমন্ত্রী ও অত্যানুগ সেনাপ্রধানকে জাতি জবাব দিয়েছে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তির জানাজায় লাখ লাখ হাজির হয়ে! এই সদ্যমৃত কোকোর নামে বিগত ৬ বছর ধরে আওয়ামীলীগ সরকার চালিয়েছে একতরফা প্রোপাগান্ডা, যদিও তার ছিল না কোন রাজনৈতিক প্রোফাইল। কেবল তার মা হলেন বর্তমান সরকারপ্রধানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, এই অযুহাতে চলেছে বিরামহীন চরিত্রহরণ। সরকারের এসব প্রচারণা কি কাজে দিয়েছে? দলমত নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করছে, সরকারের এসব অপতৎপরতাকে জনগণ গ্রহণ করেনি।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে হুকুম দিয়েছেন, বিরোধী দল দমনে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নিতে, এ জন্য সকল দায়িত্ব নিবেন তিনি নিজে (শেখ হাসিনা)। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের মধ্যে স্বৈরাচারের শেষ বেলার গন্ধ পাওয়া যায়। দুনিয়ার সব স্বৈরাচারই পতনের আগে অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিবাদী জনতাকে হত্যা করে গদি টিকাতে গিয়ে শেষে ব্যর্থ হয়। কার্যত, গত একবছর ধরে বাংলাদেশকে পরিণত করা হয়েছে পুলিশী রাষ্ট্রে- যেখানে জনতা রাস্তায় নামলেই পুলিশ রাইফেলের গুলিতে সব পন্ড করে দেয়, রাজধানীতে বিরোধী দলের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে, বিচার বিভাগ সরকারের পদানত, বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কয়েকশ নেতাকর্মী আটকের পরে ফিরে আসে লাশ হয়ে- বলা হয় বন্দুক যুদ্ধ, যৌথ অপারেশন করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে লোকজন বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে সরকারী বাহিনী। এরপরে বিরোধী দল দমনে আর কি কঠোর ব্যবস্থা বাকী রইল? এখন যা করতে পারে, ঘরে ঘরে ঢুকে বিরোধী দলের নেতাকর্মী হত্যা করা, আর এদের অফিস আদালত বাড়িঘর ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া। তেমন কিছু করার জন্য কি প্রস্তুত পুলিশ বা র্যাব?
আমাদের স্বল্পকালীন গণতান্ত্রিক চর্চার ইতিহাসে ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এক কালো দিন। সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে, জাতিসংঘসহ বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের পরামর্শ উপেক্ষা করে, সকল বিরোধী দলের প্রতিবাদ ও বাধার মুখে, বাংলাদেশে সংবিধান রক্ষার নামে আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসনকে কব্জা করে প্রহসনমূলক একদলীয় একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে, যা ছিল ব্যাপক সংঘাতময়। সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ১৫৩টি আসনে অসাংবিধানিকভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে বিনাভোটে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বাকী ১৪৭টি আসনে নগন্য ভোটাধিকারে (শতকরা ৫/১০ ভাগ) সম্পূর্ণ অবৈধ একটি সংসদ গঠিত হয়, যদিও ব্যাপক কারচুপি ও ফল জালিয়াতি করে ৪০ ভাগ ভোট কাষ্টিং দেখানো হয়। এসব ঘটনাবলী দেশের জনগণ ও প্রশাসনের সম্পূর্ণ অবহিত। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ও পরে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে নানাবিধ কূটনৈতিক উদ্যোগ চলতে থাকে, যার সর্বশেষ পরিণতি হয়- খুব দ্রুততার সাথে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্বাসের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সরকার গঠনের পর ক্ষমতাসীন দল ক্রমশ তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরতে থাকে। অন্যদিকে, প্রতিবাদী বিরোধী শক্তিকে কঠোর হাতে দমন করা হয়, রাজনৈতিক সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করার ঘোষণাও দেন। প্রতিশ্রুত নির্বাচনের আশায় ৩ মাস থেকে ৬ মাস, ৬ মাস থেকে এক বছর অপেক্ষার পর অবৈধ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে ৫ জানিুয়ারি ২০১৫ বিরোধীদলীয় জোট রাজধানীতে সমাবেশ করতে চাইলে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বিরোধী দলসমূহের প্রধান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অফিসের মধ্যে অন্তরীণ করে রাখে ২ সপ্তাহ, এমনকি তার বাড়ির চারপাশে ইট বালি সিমেন্টের ট্রাক দিয়ে রাস্তা আটকে দিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে হাসির পাত্রে পরিণত করে। বাধ্য হয়ে বিরোধী দল টানা অবরোধের ডাক দেয়। সেই অবরোধের মধ্যেই অবরোধকারী এবং সরকার উভয় আক্রমণের শিকার হয় মূলত গণপরিবহন, আহত নিহত হয় নিরীহ জনতা।
বিস্ময়করভাবে ঢাকায় জানাজার অনুষ্ঠানে এত বড় সমাবেশ হয়ে গেলো, অথচ বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলি তা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারেনি। অনেক ছোটখাট বিষয়কে লাইভ টেলিকাস্ট করার নজীর এখানে বিদ্যমান। জনমনে বিপুল আগ্রহ থাকলেও টিভি চ্যানেলগুলি তা সরাসরি দেখাতে পারেনি।এর কারণ হিসাবে সবাই মনে করেন, টিভি চ্যানেলগুলো সরকারের কঠোর সেন্সরশীপের মধ্যে রয়েছে। কেননা কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়ার আরেক পুত্র তারেক রহমানের বক্তব্য লাইভ টেলিকাস্ট করার কারণে একুশে টিভির কর্ণধার আবদুস সালামকে রাতের আধারে চোর ছ্যাচ্চোরের মত গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায় রাস্তা থেকে, এরপরে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে রেখেছে। এমনকি ঐ টিভি চ্যানেলটির প্রদর্শনীও সরকার সীমাবদ্ধ করে দেয় কয়েকদিন। অখিল পোদ্দারের নেতৃত্বে সরকার পন্থীরা ক্যু করে টিভি সংবাদ থেকে মালিকপন্থী ৫ জন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করে। এরপর থেকে একুশে টিভি সরকারের প্রতি চরম আনুগত্য প্রদর্শন করে চালু আছে। পরবর্তীতে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা অন্যান্য সব টিভির মালিকদেরকে ডেকে একুশে টিভির নজির দেখিয়ে তাদের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক চলার জন্য মোলায়েম সুরে ধমক দেয়। আর তাতেই কাজ হচ্ছে। সরকারের পছন্দমত খবর প্রচার করছে; অন্যদিকে রাজনৈতিক কর্মকা-, এমনকি জনগণের প্রত্যাশিত খবর ও মাঠে ময়দানের বাস্তব চিত্রও টিভিতে প্রদর্শন করা যাচ্ছে না। টক-শোতে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে না আলোচকরা। সরকারের সমালোচনাকারী আলোচকদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ প্রাণ ভয়ে দেশ ছেড়েছেন।
আরাফাত রহমান কোকো, যার জন্মই হয়েছে একজন সেনা কর্মকর্তার সন্তান হিসেবে-সামরিক কবরস্থানে দাফন পাওয়া তার জন্মগত অধিকার। সে জন্মগত অধিকারকে এই প্রথমবারের মতো বাতিল করে তাকে কবরস্থানের মাটি থেকে বঞ্চিত করলেন দেশের বিপুল ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান দিলেন, কেবল জীবিত অবস্থায়ই নয়, তার বিরোধী পক্ষের লোকজনকে মৃত্যুর পরেও শায়েস্তা করতে তিনি পারঙ্গম! কোকো যদি একজন সেনাপ্রধানের পুত্র হওয়ার পরেও বিধি মোতাবেক কবরের মাটি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন, তবে ভবিষ্যতে এ নজির অনুকরণে বহু ঘটনা ঘটতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। দেশের যে সেনাপ্রধান, এ ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ডে রাজনৈতিক নির্দেশনাকে সায় দেন, তার বাহিনীর কাছে তিনি কি রকম নপুংশক হিসাবে পরিচিত হয়ে আছেন, সেটা সামাজিক মাধ্যমগুলিতে আলোচনা হচ্ছে। অন্যদিকে, ম্যান্ডেটহীন প্রধানমন্ত্রী ও অত্যানুগ সেনাপ্রধানকে জাতি জবাব দিয়েছে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তির জানাজায় লাখ লাখ হাজির হয়ে! এই সদ্যমৃত কোকোর নামে বিগত ৬ বছর ধরে আওয়ামীলীগ সরকার চালিয়েছে একতরফা প্রোপাগান্ডা, যদিও তার ছিল না কোন রাজনৈতিক প্রোফাইল। কেবল তার মা হলেন বর্তমান সরকারপ্রধানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, এই অযুহাতে চলেছে বিরামহীন চরিত্রহরণ। সরকারের এসব প্রচারণা কি কাজে দিয়েছে? দলমত নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করছে, সরকারের এসব অপতৎপরতাকে জনগণ গ্রহণ করেনি।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশকে হুকুম দিয়েছেন, বিরোধী দল দমনে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নিতে, এ জন্য সকল দায়িত্ব নিবেন তিনি নিজে (শেখ হাসিনা)। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের মধ্যে স্বৈরাচারের শেষ বেলার গন্ধ পাওয়া যায়। দুনিয়ার সব স্বৈরাচারই পতনের আগে অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিবাদী জনতাকে হত্যা করে গদি টিকাতে গিয়ে শেষে ব্যর্থ হয়। কার্যত, গত একবছর ধরে বাংলাদেশকে পরিণত করা হয়েছে পুলিশী রাষ্ট্রে- যেখানে জনতা রাস্তায় নামলেই পুলিশ রাইফেলের গুলিতে সব পন্ড করে দেয়, রাজধানীতে বিরোধী দলের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে, বিচার বিভাগ সরকারের পদানত, বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কয়েকশ নেতাকর্মী আটকের পরে ফিরে আসে লাশ হয়ে- বলা হয় বন্দুক যুদ্ধ, যৌথ অপারেশন করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে লোকজন বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে সরকারী বাহিনী। এরপরে বিরোধী দল দমনে আর কি কঠোর ব্যবস্থা বাকী রইল? এখন যা করতে পারে, ঘরে ঘরে ঢুকে বিরোধী দলের নেতাকর্মী হত্যা করা, আর এদের অফিস আদালত বাড়িঘর ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়া। তেমন কিছু করার জন্য কি প্রস্তুত পুলিশ বা র্যাব?
আমাদের স্বল্পকালীন গণতান্ত্রিক চর্চার ইতিহাসে ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এক কালো দিন। সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে, জাতিসংঘসহ বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের পরামর্শ উপেক্ষা করে, সকল বিরোধী দলের প্রতিবাদ ও বাধার মুখে, বাংলাদেশে সংবিধান রক্ষার নামে আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসনকে কব্জা করে প্রহসনমূলক একদলীয় একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করে, যা ছিল ব্যাপক সংঘাতময়। সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ১৫৩টি আসনে অসাংবিধানিকভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে বিনাভোটে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বাকী ১৪৭টি আসনে নগন্য ভোটাধিকারে (শতকরা ৫/১০ ভাগ) সম্পূর্ণ অবৈধ একটি সংসদ গঠিত হয়, যদিও ব্যাপক কারচুপি ও ফল জালিয়াতি করে ৪০ ভাগ ভোট কাষ্টিং দেখানো হয়। এসব ঘটনাবলী দেশের জনগণ ও প্রশাসনের সম্পূর্ণ অবহিত। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে ও পরে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে নানাবিধ কূটনৈতিক উদ্যোগ চলতে থাকে, যার সর্বশেষ পরিণতি হয়- খুব দ্রুততার সাথে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্বাসের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সরকার গঠনের পর ক্ষমতাসীন দল ক্রমশ তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরতে থাকে। অন্যদিকে, প্রতিবাদী বিরোধী শক্তিকে কঠোর হাতে দমন করা হয়, রাজনৈতিক সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করার ঘোষণাও দেন। প্রতিশ্রুত নির্বাচনের আশায় ৩ মাস থেকে ৬ মাস, ৬ মাস থেকে এক বছর অপেক্ষার পর অবৈধ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে ৫ জানিুয়ারি ২০১৫ বিরোধীদলীয় জোট রাজধানীতে সমাবেশ করতে চাইলে সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বিরোধী দলসমূহের প্রধান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অফিসের মধ্যে অন্তরীণ করে রাখে ২ সপ্তাহ, এমনকি তার বাড়ির চারপাশে ইট বালি সিমেন্টের ট্রাক দিয়ে রাস্তা আটকে দিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে হাসির পাত্রে পরিণত করে। বাধ্য হয়ে বিরোধী দল টানা অবরোধের ডাক দেয়। সেই অবরোধের মধ্যেই অবরোধকারী এবং সরকার উভয় আক্রমণের শিকার হয় মূলত গণপরিবহন, আহত নিহত হয় নিরীহ জনতা।
No comments:
Write comments