Flickr

Thursday, 25 June 2015

আমরা শোকাহত কিন্তু অপরাজিত

ইদানিং অনুভূতি এতই তীক্ষ্ণ হইয়া উঠিয়াছে যে, গাছ নিয়া লিখিতেও ভয় হয়; কখন গাছেরও অনুভূতিতে আঘাত লাগে, লজ্জাবতী লতাও হাতে রামদা’ লইয়া ঘাড়ে কোপ মারিয়া অনুভূতির ব্যথা কমায়।
এক্কেবারে ছোট্টকালে বাড়ি হইতে প্রতিবার বাহির হইবার সময় বড়মা তুলসী গাছ হইতে একটি ইয়া মোটাতাজা তুলসী পাতা তুলিয়া কানের উপরিভাগে গুজিয়া দিতেন। মাঝে মধ্যে হইলেও সহ্য করা যায়; প্রতিদিন কাহাতক সহে। কানের আঘাতের কথা বাদই দিলাম, তুলসী গাছের আঘাতের কথা তুলিতেই বড়মা বলিতেন, ইহা না করিলে ঈশ্বর যে আঘাত পাইবেন। সামলাও ঠ্যালা, দিলেও আঘাত- না দিলেও আঘাত। উভয় সঙ্কট সবদিকেই।
তবুও মনস্থ করিয়াছিলাম একটি নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক ও অনুভূতিতে আঘাতহীন লেখা লিখিব-যাহাতে তেল তেলতেল মসৃণ আঘাতপ্রবন ব্যক্তির আঁতেও যেন ঘা না লাগে।
কী লিখিব? কী লিখিব? চিন্তা করিতে করিতে মনে হইল কিছুদিন আগে মানসিক ব্যাধির জগতে এক নতুন তত্ত্ব পাওয়া গিয়াছে শিলংয়ে। মানসিক রোগীর কিছুই মনে না থাকিলেও স্ত্রীর টেলিফোন নম্বর মনে থাকে।
এই যুগান্তকারী তত্ব পাইতে না পাইতেই আবার আরেকজন স্বগোত্রীয় মানসিক রোগীর চাবুক মারিবার ইচ্ছার কথা জানিলাম। এবারে স্ত্রীকে নয়, আরেকজন বিদ্বান ব্যক্তিকে। ইহার মধ্যে কোন নতুন রোগসূত্রের যোগসূত্র আছে কিনা, তাহা মার্কিণ মুল্লুকে আরেক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করিয়া আরেকটি তত্ব পাইলাম।
সমগ্র জাতি যখন সুক্ষ্ণ সুতার উপর দিয়া হাঁটিয়া চলে, তখন দিনে দুপুরে খুন করিলেও তাহা বিচারহীন স্পর্শ কাতর বিষয় হইয়া পড়ে। সুতা বাবার এই “সুতা তত্ত্ব” খুনীদেরকে আরও অনুপ্রাণিত করিবে নাকি?
উপসংহারে মনে হইতেছে, খুনীরা আজ সমগ্র জাতির ভাসুরে পরিণত হইয়াছে। খুনীদের নাম লইলে জাতির অনুভূতিতে আঘাত লাগিবে, ভোট বাক্স চুরি-চামারী করিয়াও নির্বাচনে জয় লাভ করা যাইবে না। আরও মনে হইতেছে, একটি জাতির অনুভূতির আঘাত যখন কিছু খুনীর অপরাধের সহিত এক করিয়া ভাবা হয়, তখন কিছু না বলিয়া “বুড়ো আঙুল” চোষাই শ্রেয়। বিষ্ময়করভাবে গোটা জাতি আজিকে মুখে “বুড়ো আঙুল” ঢুকাইয়া মৌনব্রত পালন করিতেছে এই ভরসায় যে, নিজে অন্ধ হইলেই প্রলয় বন্ধ হইবে। হইবেক কি?
প্রলয় বন্ধ হইবে কিনা জানি না, তবে আজ “হীরক রাজার দেশে”-র কথা বড্ড মনে পড়িতেছে। তাহার চেয়েও বেশী মনে পড়িতেছে বুয়েটের একটি ঘটনা।
আমরা যখন ছাত্র তখন ইথুওপিয়া হইতে কয়েকজন ছাত্র আসিয়াছিল মেকানিক্যাল বিভাগে। প্রচন্ড দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশটির ছাত্রগুলোর অবস্থা জ্ঞান-গরিমাতেও তেমনি দুর্ভিক্ষপ্রবনই। কিন্তু অনুকরণ করার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল তাহাদের। তাই যাহা দেখিত তাহাই বলিবার এবং করিবার চেষ্টা করিত। প্রতিদিন সকালে নজরুল ইসলাম হলের সামনে সাত্তার মিয়ার দোকানে ছাত্ররা অর্ডার দিত, “ সাত্তার মিয়া একটা চিড়া দই তাড়াতাড়ি দাও”। তাহা শুনিয়া এক ইথুওপিয়ান ছাত্র বলিত, “ একটা সাত্তার মিয়া, একটা চিড়া, একটা দই আর একটা তাড়াতাড়ি দাও”।
তাই অনেকেই ভাবিতেছেন, নিজের কথা আর না বলিয়া অন্য সবার মতো অনুভূতিতে আঘাতহীন কথা নকল করিয়াই বলিবেন, “একটা সাত্তার মিয়া, একটা চিড়া, একটা দই আর একটা তাড়াতাড়ি দাও”। কিন্তু ইহাতেও শেষ রক্ষা হইবে কি?
অভিজিৎ, ওয়াশিকুর বাবু কিংবা অনন্ত বিজয় কারো সাথেই আমাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না কোনদিন। এই বিশাল যুদ্ধ ক্ষেত্রে সহযোদ্ধাদের সাথে পরিচয় থাকে না সবসময়। কিন্তু হুমায়ুন আজাদ-রাজিব-অভিজিৎ-ওয়াশিকুর বাবু-অনন্ত এবং আমরা যাহারা এখনো বাঁচিয়া আছি-সবাই জানি আমাদের আদর্শের শেকড় এক-অদ্বিতীয়-অপরাজিত। একের পর এক মুক্তমনা সহযোদ্ধা বন্ধুদের মৃত্যুতে বুক ভারী হইয়া আসিতেছে। চোখের পাতা ভিজিয়া যাইতেছে। একটি “অনুভূতিহীন লেখা” লিখিবার সময়ও বুকফাঁটা আর্তনাদে অন্তর কাঁদিয়া উঠিতেছে স্বজন হারানোর শোকে। “আমরা শোকাহত কিন্তু অপরাজিত”।

Tuesday, 23 June 2015

লেখাপড়া নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন

আমাদের লেখাপড়া নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো লেখাপড়ার মান কি পড়ে যাচ্ছে? মূল এ প্রশ্ন ঘিরে চলে আসছে আরও নানা কথা। যেমন মান পড়ে যাওয়ার কারণ কী? ব্যর্থতা কিসের বা কার? সমস্যা কি সিলেবাস-কারিকুলামে? ব্যর্থতা কি শিক্ষকের? প্রতিষ্ঠানের? সমাজের? রাষ্ট্রের? যদি লেখাপড়ার মান পড়ে না যাবে, তবে এ প্রশ্ন উঠছে কেন বারবার? তবে কি আস্থার সংকট? যদি আস্থার সংকট হয়ে থাকে, তা-ই বা কেন?
কয়েক বছর ধরে নতুন উপসর্গ যোগ হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস। অনেকেই দাবি করছেন, পরীক্ষার আগেই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে প্রশ্নপত্র। কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করছে না। কিন্তু জনমানসে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিশ্বাস দানা বাঁধছে। পরীক্ষার আগের দিন বা পরীক্ষার পূর্বমুহূর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার প্রমাণ আছে। পরীক্ষার পূর্বমুহূর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার প্রমাণ হাতেনাতে ধরা পড়েছে এ বছর। এক বোর্ডের সঙ্গে আরেক বোর্ডের ফলাফলে দুস্তর ফারাকে দিশা পাচ্ছেন না ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক কেউই। কেউ বলছেন, প্রশ্ন কঠিন বলে ফল খারাপ, কেউ বলছেন, নোট-গাইড থেকে প্রশ্ন না করায় কমন পড়েনি, তাই ফল খারাপ। ওদিকে ভর্তি নিয়ে বিপত্তি দিন দিন বাড়ছেই।
প্রশ্ন উঠছে শিক্ষকের যোগ্যতা নিয়ে। অভিযোগ, অযোগ্য লোকেরা শিক্ষক হচ্ছেন। কারণ, নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি আর দলপোষণ। শিক্ষক অযোগ্য হলে লেখাপড়ার মান কমতে বাধ্য। শিক্ষায় দুর্নীতি এখন সর্বত্র। অভিযোগ, শিক্ষক ট্রেনিং ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। শিক্ষকেরা নতুন সৃজনশীল পদ্ধতি রপ্ত করতে পারেননি। সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়েও ধাঁধা কম নয়। অভিযোগ উঠেছে, সৃজনশীলতার নামে নোট-গাইডের ব্যবসা রমরমা হয়েছে। তাহলে ‘সৃজনশীল সৃজনশীল’ বলে যে চেঁচামেচি, তা আসলে কী বস্তু?
লেখাপড়ার প্রথম শর্ত ভাষা শেখা। মানুষ ভাষা দিয়ে ভাবে। কিন্তু ভাষা শেখানোয় অবহেলা এখন চরমে। মায়ের ভাষা শেখার আগে ইংরেজি শেখানোর কসরতে শিশুর জীবন যায় যায়। শিশুর এখন খেলার সময় নেই, ঘুমানোর সময় নেই। তার সামনে বইয়ের পাহাড়। স্কুল-বাড়ি-কোচিং সেন্টারে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে সে পেরেশান। তার স্বপ্নের দুনিয়া বলে কিছু নেই। মা-বাবা-স্যার মিলে তার জীবন বিষিয়ে তুলছে।
আমরা জীবনের সব ব্যর্থতার দায় চাপাই সন্তানের ঘাড়ে। আমি যা পারিনি, আমার সন্তানকে তা পারতেই হবে। আমি কেন পারিনি, তার জন্য আমি হাজার অজুহাত খাড়া করি, কিন্তু আমার সন্তান কেন পারবে না? এমন দানবীয় দাবি আমরা করি আমাদের সন্তানদের কাছে। এ সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক বৈকল্যের কারণ কী? এ কি ভোগবাদী সমাজের স্বাভাবিক পরিণতি? আমার সন্তান আমার ভোগবাদী স্বপ্নের পুতুল?
ছেলেমেয়েরাও যেতে চায় না ল্যাবে, মা-বাবাও চায় না সন্তান ‘ল্যাবে সময় নষ্ট’ করুক। তাতে তার কোচিংয়ে যাওয়ার সময় নাকি নষ্ট হয়! তবে নম্বর তাকে ‘পঁচিশে পঁচিশ দিতেই হবে’
কোচিং সেন্টারের ব্যবসা এত রমরমা কেন? কোচিং-বাণিজ্যে যারা যুক্ত, তাদের সঙ্গে নাকি যোগাযোগ যেখানে ভর্তির লড়াই, সেখানকার কর্তাদের! তাই ভর্তির নিশ্চয়তা নাকি সেখানেই মেলে! সবাই তাই সন্তানকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে কোচিং সেন্টারে পাঠান। স্কুল কামাই করো, কিন্তু কোচিং কামাই করলে মা-বাবা মাফ করবেন না। শেখা নয়, ভর্তিই লক্ষ্য। কেন? পিছিয়ে পড়ার ভয়? তাহলে কি আমরা একটি ভয়ের নরক বানাচ্ছি?
এখানেই কোচিং চক্রের জন্মরহস্য। বেকার যেসব ছেলেমেয়ে কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বেকারত্বই তার প্রধান কারণ। আমাদের কোচিং-বাণিজ্যের অবসান ঘটাতে হলে হাত দিতে হবে বেকার সমস্যা সমাধানে। কাজের সুযোগ না বাড়ালে এ সমস্যা সমাধানের কোনো সোজা রাস্তা নেই। কিন্তু আমাদের কাছে সার্টিফিকেটের দাম এতই বেশি যে যেকোনো দামে আমরা তা কিনতে রাজি। পরীক্ষায় পাসের অবিশ্বাস্য উচ্চ হারের সঙ্গে এর সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ।
আমাদের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা সার্টিফিকেট-সর্বস্ব। তাই কারিগরি শিক্ষায় আমরা পাঠাই আমাদের স্বপ্নের দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে নির্বোধ, অঘা ছেলেমেয়েকে। সেখানে চলে শিক্ষার নামে আরেক খেলা। সোনালি গ্রেডের সার্টিফিকেট মেলে, শিক্ষা হয় না। অথচ এ কারিগরি শিক্ষাই বদলে দিতে পারত দেশটা। লাখ লাখ বেকার তৈরির কারখানা বন্ধ হতে পারত। তা হচ্ছে না। এ দেশে আটটা সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি বোর্ড মাত্র একটা। উল্টোটাই উচিত ছিল। কারিগরি শিক্ষায় নজরদারি বাড়িয়ে কারিগরি শিক্ষার মান বাড়াতে পারলেই আমরা সঠিক পথে হাঁটতে শুরু করতাম। সেটাই আমাদের উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিতে পারত। কিন্তু আমরা সব সময় উল্টো পথের যাত্রী। আমরা সমাজের কারিগরদের অসম্মানের চোখে দেখি। পিয়ন হোক, ঝাড়ুদার হোক, তা-ও ভালো। কিন্তু কারিগর? তাঁতিদের আমরা কারিগর বলি, জোলা বলি, অবজ্ঞা করি। কারিগরি বিদ্যা তাই সম্মানের হয়নি আমাদের সমাজে।
আমরা বলি, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি ছাড়া কিছুই করতে পারব না। কথাটা সত্য। তবে আমরা শুধু মুখে বলি, বিশ্বাস করি না। এ দেশের ৯৫ ভাগ স্কুল-কলেজে ল্যাবরেটরি নেই, লাইব্রেরি নেই। থাকলেও তা তালাবন্ধ থাকে। একটা ব্যবহারিক ক্লাস হয় এমন স্কুল-কলেজ খুঁজে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। ছেলেমেয়েরাও যেতে চায় না ল্যাবে, মা-বাবাও চায় না সন্তান ‘ল্যাবে সময় নষ্ট’ করুক। তাতে তার কোচিংয়ে যাওয়ার সময় নাকি নষ্ট হয়! তবে নম্বর তাকে ‘পঁচিশে পঁচিশ দিতেই হবে’। সে জন্য টাকা নিয়ে বসে আছেন অভিভাবক। টাকা দিলে যদি পঁচিশে পঁচিশ মেলে, তবে আদরের সন্তান ল্যাবে পেরেশান হবে কেন? বাংলাদেশে খুব কম প্রতিষ্ঠানের প্রধানের ঘাড়ে রাবণের মতো দশ মাথা আছে, যিনি বলবেন, ল্যাবে প্র্যাকটিক্যাল করতেই হবে। কথাগুলো নিষ্ঠুর, অপ্রিয়, কিন্তু সত্য।
সিলেবাস নিয়েও কেউই সন্তুষ্ট নন। সবার অভিযোগ, সিলেবাসের বোঝা বাড়ানো হয়েছে খেয়াল-খুশিমতো। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার প্রশ্নটা তুলেছেন, কমাতে বলেছেন সিলেবাসের বোঝা। কিন্তু কেউ কান দিচ্ছেন না।
কাজেই, শিক্ষা এখন এক গভীর সংকটে। তুকতাক চিকিৎসায় এ কঠিন ব্যামো যাওয়ার নয়।

Thursday, 11 June 2015

মোদির সফর নিয়ে আওয়ামীলীগ খুশিতে গদ-গদ

গত ০৬ জুন ২০১৫ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। সাথে এসেছিলেন পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিদেশী কোন শক্তিধর রাষ্ট্র প্রধানের এটাই প্রথম সফর। গত ০৫ জানুয়ারী ২০১৪ জাতীয় নির্বাচনের পর আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপিয় ইউনিয়ন সহ সারা বিশ্ব যখন এ নির্বাচন নিয়ে নানা রকম আলোচনা ও সমালোচনায় মুখর, ঠিক তখনই বিশ্বের এই শক্তিধর প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর। আশা করা যায় আগামী এক বছরের মধ্যে আরোও বেশ কিছু শক্তিধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধানও শ্রী নরেন্দ্র মোদির পথ ধরে বাংলাদেশ সফর করবেন।

যদিও ইতিমধ্যে চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। এতে এটা পরিষ্কার বিশ্বের কয়েকটি রাষ্ট্র (যেমন: আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) তথাকথিত গণতন্ত্রের কথা বলে জনগণকে ডাইভার্ট করে তাদের স্বার্থে বাংলাদেশে সমালোচনা করলেও আবার অনেকেই এগুলোর যে ধার ধারেন না সেটা পরিষ্কার সম্প্রতি মোদি ও চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর।

যে বিএনপি তাদের জন্ম হতে সব সময় ভারত বিরোধী মনোভব প্রকাশ করে আসছিল, তারাও মোদির একটু দর্শনের আশায় কাঙ্গালের মত পিছু নিয়েছিল। এরপর অনেক দেন-দরবার করে সে সুযোগও মিলে গিয়েছিল। তাই বাংলাদেশের তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একটি দলের প্রধান তথা ২০ দলীয় নির্বাচনী জোটের প্রধান হয়েও শুধু মোদির সাথে সাক্ষাত যেন ফসকে না যায় সে আশায় নির্ধারিত সময়ের ১ ঘন্টা আগেই মোদির দরজায় এসে অপেক্ষার প্রহর গুনতে দেখা গিয়েছে। যা তিনি বিএনপির বা ২০ দলীয় জোটের প্রধান হিসাবে করলেও মেনে নেয়া যেত, কিন্তু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পুরো বাংলাদেশীদের মাথা আরও একবার নত করিয়ে দিলেন। এটা জাতী হিসাবে বাংলাদেশীর জন্যে চরম অপমানেরও।

ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তি একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী দেশ, এতে মোটেও সন্দেহ নেই। সংগত কারনেই তাদের সাথে আমাদের লেন-দেনটাও বেশী ও বিরোধপূর্ন। আর এ বিরোধ মিটানোর জন্যে আমাদেরকে অবশ্যই তাদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতেই হবে। যেমন: মালায়েশিয়ার সাথে সিঙ্গাপুরের এমন ঘনিষ্ট সম্পর্কের কারনেই আজ সিঙ্গাপুর উন্নত দেশগুলির একটি। পার্শ্ববর্তি দেশের সাথে বৈরিতা করে কোনদিনই কোন অঞ্চল বা দেশ উন্নতি করতে পারেনা বা করতে পারেনাই। সেই দিক হতে আমাদেরকে অবশ্যই ভারত, মায়ানমার, নেপাল ও শ্রীলন্কার সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। আর পাকিস্তানের সাথেও সার্ক দেশ হিসাবে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে ঠিকই, কিন্তু সতর্কতার সাথে অবশ্যই। কারন, ইতি মধ্যেই অনেক পকিস্তানী জঙ্গি নাগরিক ও পাকিস্তান সরকারের গুপ্তচর বাংলাদেশে ধরা পড়েছে, যা কোন মতেই সহজভাবে মেনে নেয়া যাবে না।

প্রসঙ্গে ফিরে আসি। মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে সরকার, আওয়ামীলিগ ও বিএনপির মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে এক অভিন্ন রুপ। আর যা হলো তারা মোদিকে যেন একজন প্রভু হিসাবে পেয়েছিল। সরকার হিসাবে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা এবং একটি বৃহৎ দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে উন্নত সম্মান দিতেই পারেন, এতে দোষের কিছু নাই। কিন্তু দল হিসাবে আওয়ামীলিগ ও বিএনপির বাড়াবাড়িটা ছিল চোখে পড়ার মত এবং রীতিমত লজ্জারও।

মোদির সফর নিয়ে এর আগে বহু খবর প্রকাশিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি সফরেও আসলেন। দিন-ক্ষণ ঠিক হবার পরই শুরু হয় আমাদের রাজনীতিবিদদের দেউলিয়াপনার প্রতিযোগীতা। সরকারী দল হিসাবে আওয়ামীলীগ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বা ছিল এটাই ঠিক। কিন্তু সরকার ও সংসদের বাইরের একটি দল হিসাবে বিএনপির অবস্থান ছিল একেবারেই বিপরীত। তার উপড় জন্মগত ভারতবিরোধী শ্লোগানতো গায়ে লাগানো আছেই। বিএনপির এই ভারত বিরোধীতার মুখোশ পাল্টাতে থাকে ভারতে মোদির দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর পরই। যেমন: কোনরকম প্রোটকল না মেনেই তড়িঘরি করে মোদীকে আগাম শুভেচ্ছা বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এবং সম্প্রতি বিজেপি প্রধানের খালেদাকে ফোন নিয়ে একটি মিথ্যা নাটক ইত্যাদি। এগুলো রাজনীতিতে দেউলিয়াপনারই একটি অংশ। বিএনপি ধরে নিয়েছিল, কংগ্রেস ক্ষমতা হারানোর পর আওয়ামীলীগ ও হাসিনার সরকার আর বেশীদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আর এ সুযোগেই তারা বিজেপিকে এমন ভাবেই ব্যবহার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। আর লবিং হিসাবে ড. ইউনুসকেও ব্যবহার করেছিল বিএনপি। আরও আছে ড. কামাল ও ভারতের অনেক ঘনিষ্ট মিত্ররা। কিন্তু ফল যে খুব একটা সুবিধা হয়নি তা সম্প্রতি মোদির বাংলাদেশ সফরই ইঙ্গিত দিয়ে গেল।

বিএনপি যখন, সব দিক হতে হতাশ তখনই মোদির সাক্ষাত পেতে মরিয়া হয়ে উঠল সম্পর্কের জোড়া-তালি লাগানোর জন্যে। গত দু-মাস ধরে লবিং ও দেন-দরবার করে শেষ পর্যন্ত মোদির সাথে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের দিন তারিখও ঠিক হলো। কিন্তু একটি দেশের গত তিন তিনবারের প্রধান মন্ত্রীর যে দেউলিয়াপনা আমরা বাংলাদেশীরা দেখেছি তা কি মেনে নেয়া উচিত ? তিনি মোদির সাক্ষাতের জন্যে কারওয়ান বাজারের প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স অফিসে এসে প্রায় এক-দেড়ঘন্টা আগেই বসে অপেক্ষা করছিলেন। মনে হয়, এ দেখা না হলে জীবন শেষ হয়ে যাবে। অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে ! সত্যিই কি তাই ? এরপর মোদির সাথে সাক্ষাতের সময় ছিল ২০ মিনিট। মোদির সাথে তিনি ওয়ান-টু-ওয়ান ওয়ে একান্ত সময় নিলেন ১৫ মিনিট ! কি এমন গোপন কথা ? যার জন্যে শুধু দু-জন ব্যক্তিই একান্ত গোপন বৈঠক ? বিষয়টি একটু ভাবার বৈকি ! এর আগে এই খালেদা জিয়া আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাথে এমন গোপন বৈঠক করেছিলন বহুবার। যার ফল আমরা দেখেছি গত আন্দোলনে শত শত মানুষকে জীবন্ত পুড়ে মারার পরও কোন মানবাধীকার সংস্থ্যা, আমেরিকা বা ব্রিটেন বা ইউরোপিয় ইউনিয়নের কেউ টু-শব্দটাও করেনি ঐ বিষয়টি নিয়ে। শুধুই নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন বলে চিৎকার করতে দেথেছি। যেন, মানুষ থাকুক বা না থাকুক, দেশ ও দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজুক, কিন্তু যে কোন উপায়ে নির্বাচন চাই, তারপর নির্বাচন ধুয়ে ধুয়ে পানি খাও। দেশকে স্বর্গ বানাও !

সাধারণ মানুষ তো বটেই, বিএনপি নেতাদের একাংশও মনে করছেন— মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুখ পুড়িয়েছেন খালেদা জিয়া, এবং এর জন্য তাঁর একগুঁয়ে মনোভাবই দায়ী। গত সাধারণ নির্বাচনে দলকে অংশগ্রহণ করতে না-দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এখন কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বিএনপি। সংসদে কোনও প্রতিনিধি না-থাকায় সফরে আসা বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বিএনপি ও তাঁর নেত্রী খালেদা জিয়ার কূটনৈতিক গুরুত্ব তলানিতে ঠেকেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সেই অসহায় অবস্থাটিই হাটে হাঁড়ি ভাঙা হয়ে গিয়েছে মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে। প্রোটোকল মেনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদার আগে সময় পেয়েছেন জাতীয় পার্টির নেত্রী রওশন এরশাদ, জাসদ-এর হাসানুল হক ইনু এবং ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন। রওশন সংসদে বিরোধী নেত্রী, ইনু ও মেনন হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সরকারের শরিক হিসেবে সংসদে তাঁদের বেশ কয়েক জন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। তাই খালেদাকে বসিয়ে রেখে তাঁর সামনেই ইনু-মেননদের ডাক পড়ে মোদীর সঙ্গে আলোচনার জন্য। সবার শেষে খালেদার জন্য তখন মিনিট দশেক সময় হাতে ছিল মোদীর।
সময় পাবেন না বুঝেই নিজের বক্তব্য একটি কাগজে নোট করে নিয়ে গিয়েছিলেন খালেদা। কিন্তু সেগুলির সব ক’টি তিনি পড়েও উঠতে পারেননি বলে কূটনৈতিক সূত্রের খবর। কিন্তু যে ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে তিনি বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে নালিশ করেছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই বলে অভিযোগ করেছেন, তাতেও প্রশ্ন উঠেছে।
যে কথা বলছিলাম। বিএনপি বরাদ্ধের ২০ মিনিট হয়ে গেল এখন ৪৫ মিনিট ! আর বিরোধী নেত্রীর বেলায় ২০ মিনিট ! বিষয়টা কি ? ব্যবসায়ীদের জন্যে মাত্র ১৫ মিনিট ! তাহলে খালেদার জন্যে ৪৫ মিনিট কেন ? কি প্রোটোকলে খালেদা ৪৫ মিনিট সময় পেল ? আর ঐ ১৫ মিনিট কি গোপন চুক্তি হলো ? সরকারের মধ্যে এ বিষয়ে কি কোন চিন্তা-ভাবনা আছে বলে তো মনে হয়না। সরকারকে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে দল যত বেশী সুবিধা দিবে ভারত তার সাথেই ঘর বাঁধবে। বিশেষ করে বিএনপির সাথে বিজেপি সরকার বাঁধতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তাই ঐ ১৫ মিনিটের গোপন রহস্য উদঘাটন করাটা জরুরী। জাতীও জানতে চায়, কি আলোচনা ঐ ১৫ মিনিটে হয়েছে, কি দিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি খালেদা মোদিকে দিয়েছেন। সবাই জানি, বিএনপির একটাই লক্ষ্য যে কোন মূল্যে ও উপায়ে তাদের ক্ষমতা চাই। তাই ঐ ১৫ মিনিটে কি আলোচনা হয়েছে সেটাই হয়ত আমরা অদূর ভবিষ্যতে দেখতে পাব।
অবশ্য খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোদির একান্তে কথা ও বিএনপির প্রতিনিধি দলকে দীর্ঘ সময় দেওয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক যাতে না হয়, সে জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে জোর তৎপরতা ছিল। এত কিছুর পর দীর্ঘ সময় বৈঠক হওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন নেতারা। তবে মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার একান্তে কী কথা হয়েছে, তা দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখনো জানেন না। সংকট নিরসনের আড়ালে কোনো কথা চালাচালি হয়েছে কি না, তা-ও বলতে পারছেন না নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোদির সঙ্গে বৈঠক করে হোটেল থেকে বাসায় ফেরা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন এমন একজন নেতা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়াকে খুবই প্রফুল্ল দেখা গেছে। আর বৈঠকে উপস্থিত থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের ভাষায় ‘চমৎকার আলোচনা’। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এ করডিয়াল অ্যাটমসফিয়ার’। প্রথম আলো ০৯.০৬.২০১৫
এদিকে, মোদির সফর নিয়ে আওয়ামীলীগের খুশিতে গদ-গদের শেষ নেই। যেন বিশ্ব জয় করে ফেলেছে ! রাজনীতিতে দেউলিয়াপনা এতটা হওয়া কি মানায় ? তাও আবার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ও সরকারী দল হিসাবে ? অবশ্যই না। তারা একটি বারও কি ভেবে দেখেছে যে কোন প্রোটোকল না মেনেই মোদি খালেদার সাথে গোপন বৈঠক করলেন কেন ? কি ঐ ১৫ মিনিটে হয়েছিল ? রাজনিতীতে মিত্র ও শত্রু চিরস্থায়ী নয়। তাই যে ভরসা ও শান্তনা নিয়ে আওয়ামীলীগ ও সরকার খুশিতে নাচা-নাচি শুরু করেছে, এটা বিপরীতও কিছু ঘটতে পারে অদূর ভবিষ্যৎ-এ এটাও মাথায় রাখতে হবে। কারন বিজেপি এমন একটি দল যারা দলের ও দেশের স্বার্থে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মত দেউলিয়া না।

Tuesday, 2 June 2015

The fatal act of free thinking


The fatal act of free thinking
It is hard to believe that a group of writers are in mortal danger in the country now just for expressing their opinions. But that’s the truth.
It seems that the state cannot ensure safety of these online writers, mostly young, as three of them were slain brutally in the last two and half months.


Failures of law enforcers become more apparent when shadowy groups claimed responsibilities after the killing missions at times specially in social media like Twitter. Militant groups claiming to be Ansar Bangla 8 on its Twitter account posted several times claiming the responsibility for these killings well as that of al-Qaeda in Indian Sub-Continent.
Now the declared targets of assassins, the bloggers and online activists are being extra cautious in their daily lives. The Daily Star Online found them hesitant to talk. They are being cautious while going out. They were interviewed in places of their own choices.
In the latest incident, blogger Ananta Bijoy Das, known for advocating science and secularism, was viciously hacked to death by a group of masked men in Sylhet city on May 12, in a continuation of attacks on free thinkers.
Another blogger and online activist, Oyashiqur Rahman Babu was hacked to death on March 30 by three cleaver-wielding youths in Dhaka’s Tejgaon Industrial area.

Just 10 days before Babu’s killing, prominent writer and blogger Avijit Roy was hacked to death at the Dhaka University campus after he and his wife came out of the Ekushey Boi Mela. The attackers badly wounded his wife Rafida Ahmed Bonya.
Before them, another blogger Rajib was hacked to death in the capital’s Pallabi area on February 15, 2013.
Rajib was attacked only 10 days after the formation of Gonojagoron Mancha, an anti-war criminals platform.
Thousands of protesters across the country joined the Mancha when it was formed on February 5, 2013 protesting the verdict of war criminal and Jamaat leader Abdul Quader Mollah for his crimes against humanity.
To malign the Mancha activities, Hefajat-e-Islam called them atheist bloggers and gave the government a list of names demanding action against them. They threatened country wide agitations if the government did act on it.
Monika Roy, SMA Ronie & Anindya J. Ayan 
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter