Flickr

Friday, 8 October 2010

কিছু ঘটনা ও একটি বিক্ষিপ্ত সংলাপ

Posted by   on

কিছু ঘটনা ও একটি বিক্ষিপ্ত সংলাপ
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সামরিক বেসামরিক গোয়েন্দাদের দক্ষতা ও কার্যকারিতা সাম্প্রতিককালে বিরাট প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার এক মাসের মধ্যে পিলখানায় যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ইতিহাসে তার নজির বিরল। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ রাইফেলস-এর প্রধান ও উপ-প্রধানসহ সেনাবাহিনীর প্রায় পাঁচ ডজন মেধাবী ও চৌকষ কর্মকর্তা মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। এদের অনেকের স্ত্রী সন্তানরাও খুনীদের হত্যা ও পাশবিক লালসা থেকে রেহাই পাননি। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, সুপরিকল্পিত এই হত্যাযজ্ঞ ও বিদ্রোহের কোনও আভাস আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কেউই দিতে পেরেছেন বলে সরকারীভাবে আমরা জানতে পারিনি। আবার দিলেও হয়তো তা কাজে লাগানো হয়নি। আবার এই হত্যাযজ্ঞের তদন্তের জন্য গঠিত কমিটিগুলোর অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত কাজে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তাদের সহযোগিতাও করেনি। আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি এবং আর্মির তরফ থেকে গঠিত কমিটি উভয়েই বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য আরো সম্প্রসারিত তদন্তের সুপারিশ করেছে। সরকার তা না করে দেশব্যাপী বিডিআর জওয়ানদের বিচার শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে আবার অভিযুক্ত জওয়ানদের মধ্যে ৮০ জন জওয়ান রিমান্ডের নির্যাতনে নির্মমভাবে প্রাণ হারানোর অভিযোগও উঠেছে। এই অভিযোগ অনুযায়ী নিহত ব্যক্তিরা প্রকৃত ঘটনা জানতো এবং তারা জীবিত থাকলে বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের কুশীলবদের অনেকেরই নাম পরিচয় বেরিয়ে আসত, যার ফলে ক্ষমতাসীন অনেক রাঘব বোয়ালই ফেঁসে যাবার আশঙ্কা ছিল। বিচার বহির্ভূত এই মর্মান্তিক হত্যার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে বলে দেশবাসী মনে করেন। এখানে যে প্রশ্নটি উঠেছে এবং বার বার আমাদের বিবেককে তাড়া দিচ্ছে তা হচ্ছে আমাদের সামরিক, বেসামরিক ও আধাসামরিক গোয়েন্দারা এই সময় কি করেছেন। বিডিআরকে ধ্বংস করে দেয়া হলো, আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রতীক সেনাবাহিনীকে পঙ্গু করে দেয়া হলো, গোয়েন্দারা টের পেলেন না এটা কেমন করে হয়? আবার তারা থাকতে ভারতীয় গোয়েন্দারা সার্বক্ষণিক ঘটনার অগ্রগতি অবনতি মনিটরিং করলো কিভাবে? জাতির প্রতি তাদের জবাবদিহিতা কি? সরকার তাদের কৈফিয়তও তলব করলেন না; দায়িত্বে অবহেলার জন্য তাদের কারোর চাকরি গেল না, জরিমানাও হলো না, এটা কি গ্রহণযোগ্য? মানুষের মনে দিন দিন এ ধরনের প্রশ্নের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা এই একটি ঘটনা (বা দুর্ঘটনা) শুধু আমাদের সরকারের কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে। আমাদের বর্ডার এখন অরক্ষিত। প্রতিবেশী দেশের হার্মাদ বাহিনীর অত্যাচার, হামলা ও লুটপাট ও খুন, রাহাজানিতে সীমান্তবাসীদের জীবন ওষ্ঠাগত প্রায়। কেউ কেউ আবার মনে করছেন যে, সরকার আধিপত্যবাদী শক্তির আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে আর্মি বিডিআরকে অকার্যকর করে রাখছেন; ক্ষমতার স্বার্থে তাদের যতটুকু ব্যবহার করার করছেন, জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন যখন আসছে তখন তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছেন অথবা জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে অকার্যকর অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আমি জানি না মানুষের এই ধারণা কতটুকু সত্য, তবে এটা বুঝি যে, এর শতভাগও যদি সত্য হয় তাহলে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এই সরকারের কাছে নিরাপদ থাকতে পারে না। নিরাপদ যে নয়, তার লক্ষণও ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন যে, ইদানিংকালে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ভাঙা এবং এসব দলের নেতাকর্মীদের নির্মূলের কাজে সরকার গোয়েন্দাদের এত ব্যস্ত রেখেছেন যে, তারা আসল কাজ ভুলে গেছেন।
রাষ্ট্রের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংরক্ষণের জন্য কয়েকটি অপরিহার্য উপাদান প্রয়োজন। অগ্রাধিকার ক্রম অনুযায়ী এর প্রথমটি হচ্ছে আর্মি ও দেশরক্ষা বাহিনী, দ্বিতীয়টি জাতীয় সংহতি, তৃতীয় জাতীয় আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস এবং চতুর্থ উপাদান হচ্ছে একটি নিরপেক্ষ ও কার্যকর প্রশাসন। এই সরকার আমাদের আর্মি এবং দেশ রক্ষা বাহিনীকে যে অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছেন তাতে বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঠেকানোর মত অবস্থানে তারা আছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিডিআর বিদ্রোহ ও সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাযজ্ঞের পর পেশাগত দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও নিরাপত্তা নিয়ে তারা কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সীমান্তে বৈদেশিক হামলা প্রতিহত করার অধিকার তাদের নেই। বিদেশীরা আমাদের ভূখন্ড দখল করে সেখানে ট্রাক্টর-পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষাবাদ করে, ফসল লুট করে, মাছ ধরে নিয়ে যায়, বেসামরিক সীমান্তরক্ষীরা তাদের প্রতিরোধ করে, এলাকা পাহারা দেয়, আমাদের রক্ষীদের প্রতিরোধের হুকুম নেই। বিডিআর প্রধান অকুস্থলে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এর জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। এর অর্থ কি? আমাদের আর্মী ও সীমান্ত বাহিনীকে কি অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে? বিদেশী আগ্রাসন প্রতিরোধের ক্ষমতাই যদি তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকে তাহলে তাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনই বা কি? হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরি, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত প্রভৃতিসহ অন্যান্য ত্রাণ ও পূর্ত কাজে তাদের সহযোগিতা মূল্যবান বিবেচিত হতে পারে কিন্তু তা তাদের মূল পেশার বিকল্প হতে পারে না। দলীয় রাজনীতির নোংরা ব্যবহার সেনাবাহিনীকে কলংকিত করুক এবং এভাবে তারা ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলুক এটা জাতির কাম্য নয়। তবে দুঃখজনক হচ্ছে, সরকার তাই করছেন এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে নাজুক অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। দ্বিতীয়তঃ এই সরকার দেশব্যাপী হিংসা, বিদ্বেষ, বিভাজন ও সাম্প্রদায়িক চেতনাকে উস্কিয়ে দিয়ে যে হানাহানির পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন তাতে খোদা না করুক দেশ ও জাতির উপর যদি কোনও হামলা আসে তা হলে ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করার সামর্থ্য ও সম্ভাবনা দিন দিন আমরা হারিয়ে ফেলছি। রাজনৈতিক প্রতিদ্বনিদ্বদের নির্মূল ও দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার যে মহোৎসব এখন চলছে আমার দৃষ্টিতে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে বাধ্য। এর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে ‘যুদ্ধাপরাধ' বিচারের ফরমায়েসী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কসরত। সাধারণ মানুষ এতদিন এ ব্যাপারে নির্বিকার ছিল। এখন অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন বিষয়টি কি। যুদ্ধাপরাধ কি, নিজামী, মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী এরা যুদ্ধাপরাধী হয় কি করে? প্রশ্নকর্তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সংখ্যাও কম নয়। তারা আইন পড়েননি। তারা মনে করেন, স্বাধীনতা অর্জন, ভূখন্ডের নিরাপত্তা রক্ষা, বিদেশী হামলা প্রতিরোধ অথবা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা কিংবা এলাকা দখল কিংবা পুনরুদ্ধারের জন্য দু'টি দেশের মধ্যে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয় তার নাম যুদ্ধ। এই যুদ্ধে দু'টি সেনাবাহিনী জড়িত থাকে এবং যুদ্ধরত সেনা বাহিনীর কেউ যদি মানবতা বিরোধী কোনও অপরাধ করে, বেসামরিক লোককে হত্যা করে, তাদের বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেয় অথবা তাদের বাড়ী ছাড়া করে কিংবা কনসেন্ট্রেশান ক্যাম্পে আটকে রাখে, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন করে তাহলে তারা যুদ্ধাপরাধী বলে বিবেচিত হন। বাংলাদেশে যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে তারা যুদ্ধরত কোনও বাহিনীর কখনো কোনও সদস্য ছিলেন না এবং গত ৪০ বছরে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অপপ্রচার ছাড়াও কোনও থানায় সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবেও কোনও মামলা হয়নি। আবার অপরাধী কখনো তার অপরাধী চরিত্রকে ঢেকে রাখতে পারে না। অভিযুক্ত এই নিরপরাধ রাজনীতিকরা যদি প্রকৃত অর্থে অপরাধীই হতেন তাহলে গত চার দশকে অবশ্যই তাদের কাজকর্মে এই অপরাধের অভিব্যক্তি দেখা যেতো। তারা তাদের স্ব স্ব এলাকায় নয় শুধু, সারাদেশে রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কাজকর্ম করেছেন, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, ভোট পেয়েছেন, অনেকে এমপি হয়েছেন, কেউ কেউ মন্ত্রীত্বও করেছেন। তাদের দীর্ঘ ও বিস্তৃত সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কোনও অপরাধের অভিযোগ উঠেনি, প্রমাণিত হয়নি, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি, দুর্নীতির অভিযোগও কেউ আনতে পারেনি, কেয়ারটেকার সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তন্ন তন্ন করেও তার সন্ধান পায়নি। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কেন তারা ৪০ বছর আগের বানোয়াট অপরাধের জন্য তাদের অভিযুক্ত করছে? আমার এক সহকর্মী বন্ধু এককালে ছাত্রলীগের প্রথম সারির লাঠিয়াল ছিলেন। পরে তিনি রক্ষী বাহিনীর মেজর হয়েছিলেন। মেজর সৈয়দ কামালুদ্দিন। তিনি বলতেন আওয়ামী লীগ করলে মাথার বুদ্ধি হাঁটুতে চলে আসে। সম্ভবত যুদ্ধাপরাধের মামলার কারণও তাই। উদ্দেশ্য দু'টি, রাজনৈতিক প্রতিদ্বনিদ্বদের নির্মূল করা এবং ক্রমবিকাশমান ইসলামী আদর্শ এবং ইসলামী রাজনীতিকে নেতৃত্বশূন্য করে এদেশের বুকে ধর্ষক বাজিকরদের ভবিষ্যতকে নিষ্কণ্টক করা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সরকার দেশের ধর্মভীরু সকল হক্কানী আলেম ওলামা, মাদরাসা শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, রাজনীতিবিদ সকলকেই জঙ্গী যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কোনও পুরোহিত পাদ্রী তাদের তালিকায় নেই। কারুর কাছে ইসলামী বইপত্র পেলেই বলা হচ্ছে জেহাদী বই পাওয়া গেছে এবং পুলিশ তা তুলে এনে অবমাননা করছে। বৃটিশরা যখন এদেশ শাসন করতো তখন এদেশে বিধর্মী শাসন প্রচলিত ছিল। তাদের আমলেও কুরআন হাদিস এবং আলেম উলামাদের এই এ ধরনের অবমাননা হতো কিনা সন্দেহ রয়েছে। ধর্ম ও আদর্শ মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে বিকশিত করে। ধর্মছাড়া মূল্যবোধ সৃষ্টি ও চরিত্র গঠনের দ্বিতীয় কোনও পন্থা নেই। আর আদর্শ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা ছাড়া কোনও জাতি টিকে থাকতে পারে না। আমাদের সরকার ও সরকারি দল ধর্ম, ধর্মীয় মূলবোধ এবং নৈতিকতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এর অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। জাতির বিবেক এখানে কন্ঠরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
একইভাবে জন প্রশাসনও আজ তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। নিরপেক্ষ মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা হয়েছে। দলীয় আনুগত্য, নিয়োগ পদোন্নতি ও পদায়ন-পোস্টিং এর মুখ্য নিয়ামকে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনে জুনিয়রকে সিনিয়র এবং সিনিয়রকে জুনিয়র এবং মেধার স্থান দলীয় আনুগত্য দখল করায় সরকারি দফতরগুলো এখন কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দুর পরিবর্তে বিশৃক্মখলা ও চক্রান্তের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। জনপ্রশাসন আর পুলিশ প্রশাসনই বলুন দলীয় ক্যাডারদের কথামতোই তাদের উঠবস করতে হয়। তাদের কথা না শুনলে পুলিশ কর্মকর্তা আর প্রশাসনিক কর্মকর্তা কেউই ক্যাডারদের নির্যাতন মারধর থেকে রক্ষা পান না। এর জন্য বিচারও নেই। ফলে উপজেলা থেকে সচিবালয় পর্যন্ত সর্বত্র হতাশা-অনিশ্চয়তার কালো ছায়া গ্রাস করে নিয়েছে। জনপ্রশাসন তার নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে। অদক্ষতা ও দুর্নীতি দৈনন্দিন জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। ধর্ষণ, খুন, গুম, রাহাজানি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ আইন-শৃক্মখলার সীমাহীন অবনতি মানুষের জীবন, সম্পত্তি ও সম্মানের নিরাপত্তাকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানুষের সামনে এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারাণ্টিও নেই। আমি রাষ্ট্রের কার্যকারিতা এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য চারটি উপাদানের কথা বলেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত: এই চারটি উপাদানই আজ হুমকির মুখে। এই অবস্থায় দেশের ভবিষ্যত নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না। তাদের এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠাকে প্রতিরোধে রূপান্তর করে দেশকে রাহুমুক্ত করার দায়িত্ব বিরোধীদল সরকারিদলের দেশপ্রেমিক অংশের। তারা যাতে তাদের সে দায়িত্ব পালন করতে না পারেন তার জন্য দেশব্যাপী হামলা-মামলা, খুন-নির্যাতন অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনের দলীয় কোন্দলে সংঘটিত একটি হত্যাকান্ডকে অছিলা করে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ক্র্যাক ডাউন, বিএনপি উৎখাতের সরকারি পরিকল্পনা, বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যা, সিরাজগঞ্জের ট্রেন দুর্ঘটনা ও হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং সর্বশেষ রূপগঞ্জের ঘটনাকে আমি একইসূত্রে গাঁথা বলে মনে করি। রূপগঞ্জের ঘটনায় ভূমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সেনা ক্যাম্পে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, হেলিকপ্টারযোগে সেনা কর্মকর্তাদের উদ্ধার রাতারাতি ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার অভিব্যক্তি হতে পারে না। একটা কথা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। সেনাবাহিনীর হাউজিং-এর জন্য জমি কিনতে দালালের দরকার হবে কেন? আবার এজন্য ২৪টি পরগনার জমি বিক্রি ও রেজিস্ট্রি বন্ধই বা করে দেয়া হবে কেন? ইতোপূর্বে ডিফেন্স অফিসার্স হাউজিং সোসাইটির জন্য জমি সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি আমি পুক্মখানুপুক্মখরূপে তলিয়ে দেখেছি। কোথাও এ ধরনের প্রক্রিয়া আমার নজরে পড়েনি। আরেকটি বিষয়ও এখানে আমার কাছে বিস্ময়কর ঠেকেছে। ডিজিডিএফআই ও অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সাথে এ ব্যাপারে মিটিং করতে গেলেন কেন এবং এই মিটিং-এর পরপরই এলাকাবাসীর ক্ষোভ বিক্ষোভে রূপান্তরিত হলো কেন? গোয়েন্দারা এর কোনো আভাস দিতে পারলো না কেন? এটা কি পরিকল্পিত? দৈনিক প্রথম আলোর অনুসন্ধানী রিপোর্ট অনুযায়ী রূপগঞ্জে জমির বর্তমান বাজার মূল্য বিঘাপ্রতি ৩০ থেকে ৭০ লাখ টাকা অথচ সেনাবাহিনী হাউজিং-এর জন্য এই জমি বিঘাপ্রতি ১৪/১৫ লাখ টাকা দরে বিক্রি করতে একটি মহল জমির মালিকদের বাধ্য করছিল। এই মহলটির পরিচয়ও তারা দিয়েছেন এবং বলেছেন যে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জায়েদ আলী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরেক নেতা তারেক হচ্ছে এই দালাল চক্রের হোতা। এ তথ্য থেকে রূপগঞ্জ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে পড়ে। তারা যে দালালী করে অর্থবিত্ত উপার্জনের একটি উৎস খুঁজে পেয়েছিলেন এতে সন্দেহ নেই। তবে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর রুদ্ররোষকে সেনাবাহিনী এবং বিএনপির দিকে ঠেলে দিয়ে তারা যে অপরাধ করেছেন তা অমার্জনীয়। ঘটনার সাথে সাথে আওয়ামী লীগ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফ এর জন্য বেগম জিয়াকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছেন। মামলার পর এখন হয়ত বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলসমূহের নেতাকর্মীদের ধর-পাকড় শুরু হবে। তাদের জেলে পুরে, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে সরকারি দল নিজের কু-কর্ম ও দুঃশাসন ঢাকা দিতে পারায় স্বস্তির ঢেকুর তুলবেন। এই ঢেকুর যে শেষ পর্যন্ত জীবন বিধ্বংসী বিষমে পরিণত হবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়? দেশের মানুষ আর বেশি ঘুমিয়ে থাকবেন বলে আমার মনে হয় না।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter