Flickr

Tuesday, 30 November 2010

মুজিব সরকারের অভিজ্ঞতাকে কেন উপেক্ষা?

মুজিব সরকারের অভিজ্ঞতাকে কেন উপেক্ষা?
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে গতি আনতে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা গত শনিবার নয়াদিল্লীতে দু'টি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এক চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের শূন্যরেখা বরাবর দু'টি সীমান্ত হাট বসবে। অন্য চুক্তি অনুযায়ী এক দেশের পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি অন্যদেশের সীমান্ত পেরিয়ে মূল ভূ-খন্ডের ২০০ মিটার পর্যন্ত ভেতরে আসতে পারবে। ‘সীমান্তহাট' চালুর বিষয়ে সম্পাদিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, সপ্তাহে একদিন করে হাট বসবে। বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি ও আইন মেনেই সীমান্তরেখার দুইপাশে বসবে এই হাট। এখানে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো কর আদায় করা হবে না। একজন ব্যবসায়ী দিনে ৫০ মার্কিন ডলারের বেশি পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন না। বাংলাদেশী ও ভারতীয় মুদ্রায় পণ্য বেচাকেনা করা যাবে। সীমান্ত হাটে বেচার জন্য ১৩টি স্থানীয় স্তরে উৎপাদিত ও তৈরি কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, ফুল, শুকনো মাছ, গামছা, লুঙ্গি, কাঠের জিনিস, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রভৃতি চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরো হাটের নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধানে যৌথভাবে থাকবে বিডিআর ও বিএসএফ। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই সীমান্ত হাট দু'টি চালু হয়ে যাবে বলে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দশর্মা সংবাদ সম্মেলনে জানান।
বর্তমানে দু'টি হাটের ব্যাপারে চুক্তি হলেও হাটের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮টি করা হবে বলে জানা গেছে। আমরা জানি, কোন চুক্তি করার সময় সাধারণত অনেক ভাল কথা বলা হয়ে থাকে। যেমন এবারও বলা হয়েছে, চুক্তির ফলে দু'দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে গতি আসবে এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিও কমতে পারে। তবে পর্যবেক্ষকমহল চুক্তিকালীন চমৎকার সব কথামালায় উৎসাহিত হতে তেমন আগ্রহী নন। এর কারণ অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা। স্বাধীনতা লাভের পর এ পর্যন্ত ভারতের সাথে যতগুলো চুক্তি হয়েছে তার কোনটাতেই লাভবান হতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত: ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তি, ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, ১৯৮৩ সালের তিস্তার পানি বণ্টন এডহক চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। এছাড়া দু'দেশের মধ্যে আরো অনেক পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, কিন্তু এর কোনটার মাধ্যমেই বাংলাদেশ লাভবান হতে পারেনি, বরং ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। এ কারণে এবারের চুক্তির ব্যাপারেও আশাবাদী হতে পারছেন না পর্যবেক্ষক মহল।
প্রসঙ্গত: এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বর্ডার-হাট বা বর্ডার-ট্রেড আমাদের জন্য নতুন কোন বিষয় নয়। ১৯৭২ সালে সীমান্ত বাণিজ্যের লক্ষ্যে বর্ডার-ট্রেড চুক্তি হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ জাতির স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেই ভারতের সাথে বর্ডার-ট্রেড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুসারে উভয় দেশের ১৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট পণ্য অবাধে আনা-নেওয়া ও ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা ছিল। আর বর্ডারহাটই এইসব পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের প্রধান কেন্দ্র ছিল। তবে এই চুক্তির ক্ষতিকর ফল ফলতে দেরি হয়নি। ফলে শেখ মুজিব সরকার এই চুক্তি বাতিল করতে বিলম্ব করেনি। যদিও ভারত সরকার ঐ চুক্তি অব্যাহত রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিবের মতামত উপেক্ষা করার মত সাহস তখন ভারতের ছিল না। কিন্তু ক্ষতিকর সেই চুক্তির ফাঁদে বাংলাদেশের বর্তমান দুর্বল সরকার কেন পড়তে গেল সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠেছে। শেখ মুজিব সরকার যেই চুক্তি বাতিল করেছিল, সেই চুক্তিতে শেখ হাসিনার সরকার আবার আবদ্ধ হওয়ার আগে দশবার ভাবা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো, ভাবনা-চিন্তার জন্য সময় নেওয়ার পরিবর্তে হাসিনা সরকার এখন ভারতের সাথে দ্রুতগতিতে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করার জন্য উৎসাহী। কিন্তু এমন উৎসাহের কারণ কী? দেশপ্রেমিক অন্যান্য সচেতন নাগরিকের মত বিডিআর-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমানও ভারতের সাথে ‘সীমান্ত হাট' চুক্তিতে খুশি নন। তিনি মনে করেন, এই হাটকে কেন্দ্র করে ভারতীয় নিম্নমানের বিষাক্ত পণ্যের বিস্তার ঘটবে বাংলাদেশে, হাটকে ইস্যু করে ভারতীয় পণ্য অবাধে প্রবেশ করবে বাংলাদেশে, শুধু কি তাই-- ভারতীয় চররাও ছাড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়বে এদেশে, আর ব্যবসার নামে তারা অনাকাঙ্ক্ষিত অন্য ব্যবসাও করতে পারে-- যা হবে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকারক। আর এই বিষয়টি আমরা কী করে ভুলবো যে, বর্ডার-ট্রেড চুক্তি করার পরও শেখ মুজিব ক্ষতির কারণে তা বাতিল করেছিলেন। তাই প্রশ্ন জাগে, কীসের তাড়নায় পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে ব্যর্থ হলেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী?

হরতাল ও রাজপথের আন্দোলন কি অপরিহার্য?

বিএনপি আহূত আজকের হরতাল নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও তার সহোদরের মধ্যে অভূতপূর্ব এক অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয়। সরকার এই হরতাল প্রতিহত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে এবং ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিএনপি জামায়াতের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। হরতালের ব্যাপারে সরকার ও সরকারি দলকে মাঠে ময়দানে যত সক্রিয় দেখা যাচ্ছে বিরোধী দলকে তত সক্রিয় বলে মনে হচ্ছে না। যতটুকু সক্রিয় তাদের হবার কথা ছিল সরকারের পুলিশ বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা তাতেও বাধার সৃষ্টি করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন যে সরকারের নেতাকর্মীরা যেখানে আজীবনই হরতালের সাথে বসবাস করেছে, হরতালই যাদের জীবনযাত্রার অংশ ছিল তারাই হরতালের বিরোধিতা করছে এবং জোরের সাথে বলছে যে, এই হরতালের পেছনে ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া জাতীয় কোন ইস্যু নেই। বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ সম্প্রতি বলেছিলেন যে, হরতালের বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক অধিকার এই সরকারের নেই। দৈনিক যুগান্তর তার এই মন্তব্যটিকে জনমত জরিপে নিয়ে আসে। এতে দেখা যায় যে, জরিপে অংশগ্রহণকারীগণ ৯৭ শতাংশ লোকই তার সাথে একমত। এটি সরকারের একটি পরাজয় বলেই আমার ধারণা।
সরকারের একজন মন্ত্রী বিএনপিকে হরতাল না করে সংসদে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শটি আমার কাছে ভালই মনে হয়েছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতাকে সামনে রাখতে এর মধ্যে আমি ফলপ্রসূ কিছু দেখতে পাই না। এই সংসদের আমলেই বাংলাদেশের অস্তিত্ববিনাসী একটি বড় ঘটনা ঘটেছে। বিডিআর বিদ্রোহ হয়েছে এবং ৫৭ জন আর্মি অফিসার খুন হয়েছেন, তাদের পরিবারের উপর অমানুষিক নির্যাতন হয়েছে। আমাদের সংসদে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হতে দেখা যায়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী গত জানুয়ারি মাসে দিল্লী গিয়ে অনেকগুলো চুক্তি করেছেন, ভারতকে ট্রানজিট, করিডোর, বন্দর, গ্যাস, কয়লা ব্যবহারের সুবিধা দিয়ে এসেছেন। সংসদে এ সম্পর্কে আলোচনা হয়নি এবং চুক্তির শর্তাবলী সংসদকে অবহিত করা হয়নি। একইভাবে ভারতকে ট্রানজিট ফি মওকুফ করা হচ্ছে তাও সংসদে আসেনি। এই অবস্থায় সংসদের তুলনায় রাজপথই বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রধান ক্ষেত্রে পরিণত হওয়া অস্বাভাবিক নয় বলেই দেশবাসী মনে করেন। তাদের সামনে যে ইস্যুগুলো রয়েছে দেশ ও জাতির অস্তিত্বের জন্য সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রথমটি হচ্ছে আধিপত্যবাদ। সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আধিপত্যবাদের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ধারণা। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই সেনাবাহিনীর উপর হামলা হয়েছে, আমাদের সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় যত সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর হাতেও তত কর্মকর্তা নিহত হয়নি। মেধাবী ও চৌকষ এসব কর্মকর্তাকে খুন করে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীকে পঙ্গু ও অকার্যকর করে দেয়া হয়েছে। পরিকল্পিত এই হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক মন্ত্রী, এমপি গোপন বৈঠক করার তথ্য প্রমাণপত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। একজন এমপি টেলিভিশন চ্যানেলে পিলখানার তিন কিলোমিটার এরিয়ার মধ্যে অবস্থিত সকল বাড়িঘর খালি করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন; বিডিআর হেডকোয়ার্টার এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং এভাবে এলাকায় অন্ধকার ও জনমানবশূন্য করে বিদ্রোহী ও ঘাতকদের পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিল। সরকার এ ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা ছিল ন্যক্কারজনক। সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সরকারি ব্যর্থতার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছিল এবং তারা এই ষড়যন্ত্রের mastermind-দের খুঁজে বের করার জন্য অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করেছিল। একইভাবে সামরিক বাহিনীর তদন্ত রিপোর্টেও Terms of Reference-এর ত্রুটি দেখিয়ে প্রকৃত তথ্য উ ঘাটনের সমস্যা তুলে ধরে আরো তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছিল কিন্তু সরকার অজানা ভয়ে সে পথে আগায়নি এবং সিআইডির অবসরপ্রাপ্ত ও বশংবদ এক কর্মকর্তাকে চাকরিতে ফিরিয়ে এনে তাকে দিয়ে ফরমায়েশী তদন্তের মাধ্যমে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন। এই তদন্তের প্রক্রিয়ায় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রায় ৯০ জন বিডিআর সদস্য প্রাণ হারান। অভিযোগ উঠেছে যে, এদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেননা এই হত্যাকান্ডের সাথে সরকারি দল ও বিদেশী একটি শক্তির সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তাদের কাছে তথ্য প্রমাণ ছিল। আমাদের সীমান্ত এখন অরক্ষিত। বিএসএফএর লোকদের মেহেরবানীর উপর আমাদের নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। তাদের ইচ্ছামত বাংলাদেশী লোকদের তারা হত্যা করছে, প্রতিবাদ করার সাহসও আমাদের নেই। তাদের ছত্রছায়ায় ভারতীয়রা এসে আমাদের জমি দখল করছে, চাষাবাদ করছে, ফসল, গরু, ছাগল নিয়ে যাচ্ছে, মাছ নিচ্ছে আমরা কিছুই করতে পারছি না। খোলা সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছে, চরিত্র বিধ্বংসী ইয়াবা আসছে এবং আমাদের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। চোরাচালান তথা অবৈধ সীমান্ত বাণিজ্য আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, আমাদের তামাশা দেখা ছাড়া আর কোনও করণীয় নেই। বিগত কুরবানীর ঈদের সময় ভারতীয় গরুর অস্বাভাবিক সমাগম সীমান্ত এলাকায় আমাদের চাষীদের জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছে। তারা তাদের মোটাতাজা করা পশুর দাম পায়নি। সীমান্ত খোলা থাকায় ভারতীয় পণ্যের বন্যায় আমাদের জাতীয় অর্থনীতি এখন বিপর্যয়ের মুখে, দেশ কার্যতঃ ভারতের বাজারে পরিণত হচ্ছে। মাদকসামগ্রী ও ভারতীয় সংস্কৃতির অপপ্রভাব আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। মানুষ সেনা কর্মকর্তাদের প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার চায়, সেনাবাহিনীকে তার সার্বভৌম অবস্থানে ফিরে পেতে চায় এবং আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তি চায়। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, প্রভু হিসেবে নয়। বন্ধুত্বের অর্থ যে দাসত্ব নয় তাদেরকে তা বুঝিয়ে দেয়ার দরকার রয়েছে।
মহাজোট সরকারের লীড এজেন্সি আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে অগ্রাধিকার তালিকায় যে বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েছিল তার মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্নীতি দমন, জ্বালানি সংকট নিরসন তথা বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহের উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রভৃতি ছিল মুখ্য। সরকারের অগ্রাধিকার বর্ণিত এই বিষয়গুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার ব্যর্থতা সুস্পষ্ট। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ছাড়াও সরকারের সৃষ্ট মানবাধিকার কমিশনের প্রধান নিজেই বলছেন, বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার বলতে কিছু নেই, মানুষের জীবন ও সম্পদ, সম্মান কোন কিছুরই এখন নিরাপত্তা নেই। এই সরকারের আমলে লাম্পট্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে। বখাটে লম্পটরা শুধু মেয়েদেরই শিকার বানাচ্ছে না, তাদের মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, শিক্ষক প্রতিবেশী যারাই তাদের লালসা পূরণে বাধা দিচ্ছে অথবা প্রতিবাদ করছে তাদেরই নির্মমভাবে প্রহার করছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মেরেই ফেলছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত করেও মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। মেয়েরা শংকিত। দেশব্যাপী এই মহামারির কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, এর সাথে শতকরা নববই ভাগ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জড়িত। সরকার তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত ও সহানুভূতিশীল। ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তার গ্যারান্টি নিয়ে তারা তাদের লাম্পট্য চালিয়ে যাচ্ছে। বস্তুত: যে দলের নেতাকর্মীরা ধর্ষণের ন্যায় জঘন্য অপরাধ করে প্রকাশ্যে শততম ধর্ষণের উৎসব উদযাপন করতে পারে তাদের হাতে দেশের নারী সমাজ নিরাপদ থাকতে পারে না। এই দলেরই ছাত্র সংগঠনের বালিকা শাখার নেত্রীদের বিরুদ্ধে দেহব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। ইডেন ও বদরুন্নেছা কলেজসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় মহিলা কলেজগুলোর ছাত্রীরা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে যে, এই সংগঠনের নেত্রীরা ছাত্রনেতা-রাজনৈতিক নেতাসহ ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের মনোরঞ্জনে জুনিয়র ছাত্রীদের বাধ্য করে। তাদের আদেশ অমান্য করলে হল থেকে বের করে দেয় এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। অনৈতিক কাজে ছাত্রীদের বাধ্য করার এই ঘটনাগুলো নজিরবিহীন এবং আওয়ামী লীগ সরকার অদ্যাবধি এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এর ফলে তাদের দাপট শুধু অপ্রতিরোধ্য হয়নি সারাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনজীবনকে বিধ্বস্ত করে তুলেছে।
জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বত্র নির্লজ্জ দলীয়করণ বর্তমানে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দলীয় আনুগত্য এখন পদোন্নতি-পোস্টিং-এর প্রধান শর্তে পরিণত হয়েছে। দক্ষতা, যোগ্যতা, দেশপ্রেম, চাকরি জীবনের কৃতিত্ব ও নিরপেক্ষ আচরণ অযোগ্যতা হিসেবে এখন চিহ্নিত হচ্ছে। যারা আওয়ামী লীগ করে না, দল নিরপেক্ষভাবে জনগণের খেদমতে বিশ্বাসী তারা চিহ্নিত হচ্ছে পাকিস্তানপন্থী, বিএনপি, জামায়াতপন্থী হিসেবে। প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন উপদেষ্টা এইচটি ইমাম সম্প্রতি কোনও প্রকার রাখঢাক ছাড়াই ঘোষণা করেছেন যে, জনপ্রশাসনে পাকিস্তানপন্থীরা পদোন্নতি পাবে না। আমি বাংলাদেশের নাগরিক জন্মসূত্রে, পূর্বপুরুষ সূত্রে, খাজনা, ট্যাক্স দেই এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সরকারি চাকরিতে এসেছি, খাঁটি বাংলাদেশী হিসেবে সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রণীত আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কোনও দলের নয় এবং এখানে দল করা, দলের আশ্রয় নেয়া, দলকে চাঁদা দেয়া নিষিদ্ধ। সরকার এই নিষিদ্ধ কাজে এখন উৎসাহ শুধু দিচ্ছে না যারা তা করছে তাদের পুরস্কৃতও করছে। বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা পাকিস্তানী হন কি করে? ভারত কর্তৃক স্থল ও নৌ ট্রানজিট ব্যবহারের জন্য ফি আদায়ের সুপারিশ করে নথিতে নোট দেয়ার জন্য, না সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের পাখির ন্যায় গুলী করে হত্যা করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানোর প্রস্তাব করার অপরাধে? জলাতঙ্ক রোগীর ন্যায় সরকার এখন দুটি আতঙ্কের শিকার হয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছেন বলে মনে হয়। এর একটি হচ্ছে পাকিস্তান আতঙ্ক, অন্যটি ধর্মাতঙ্ক। যে কেউ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করবে, আওয়ামী লীগের প্রতি আনুগত্যে নিষ্ক্রিয় থাকবে অথবা নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবে এ সরকারের দৃষ্টিতে এ দেশে থাকার এবং রাজনীতি করার তার কোনও অধিকার নেই। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের আগে প্রতি পরিবারের কমপক্ষে একজনকে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় এসে তারা এখন প্রকাশ্যে ঘোষণা করছেন যে, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মী ছাড়া অন্য কাউকে সরকারি চাকরি দেয়া হবে না এবং কার্যত তাই করছেন। চাকরি এখন সোনার হরিণ। ক্ষমতাসীনরা এই সুবিধাকে উপার্জনের মাধ্যম করে নিয়েছেন। কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা না হলে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকের চাকরি পাওয়া যায় না। পিয়ন দারোয়ানের চাকরিও ঘুষ না দিলে হয় না। পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি পেতে হলে ৮/১০ লাখ টাকা লাগে। সরকারের একজন উপদেষ্টা কোনও প্রকার রাখ ঢাক না করেই ঘোষণা করেছেন, টাকা যদি নিতেই হয় নিজের লোকদের থেকেই টাকা নিয়ে চাকরি দেয়া হবে। জামায়াত বিএনপির লোকের কাছ থেকে টাকা নেয়ার দরকার কি? দেশে কর্মসংস্থানের বাজার এখন আক্রা, বিদেশের দ্বার রুদ্ধ। সরকারের অযোগ্যতা ও কূটনৈতিক অদক্ষতা জনবল রফতানির বাজারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণ তাদের সামনে পরিত্রাণের কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছে না। জনপ্রশাসনকে যে বিশৃক্মখল অবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে তা থেকে আশু উত্তরণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এ হচ্ছে বিদ্যমান প্রশাসনের অবস্থা। পাবলিক সার্ভিস কমিশন নতুন যে জনবল নিয়োগ করছে তাতেও মেধার পরিবর্তে দলীয় আনুগত্যকে প্রধান নিয়ামক হিসেবে দেখা হচ্ছে। চাকরি প্রার্থীর ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতো কি না, তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক ছিল, বিএনপি-জামায়াত কিংবা আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ অন্য কোনো দলের সমর্থক ছিল কি না এসব বিষয়কেও তুলে আনা হচ্ছে। আবার প্রার্থীরা শুধু আওয়ামী লীগ হলে হবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগ হবার পাশাপাশি যদি অমুসলিম বিশেষ একটা সম্প্রদায়ের লোক হয় তাহলে ডাবল বোনাস পাবার যোগ্য হয়। নন-গেজেটেড কর্মচারী নিয়োগের বেলায়ও সাধারণ মানুষের ছেলে-মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা নিয়োগ পরীক্ষা হতে দিচ্ছে না, হল ভাংচুর করছে, সরকারি কর্মকর্তাদের মারধর করে পরীক্ষা ভন্ডুল করে দিচ্ছে। সরকার এ ক্ষেত্রে শুধু নির্বিকার নয়, অপরাধীদের অপরাধ কর্মের উৎসাহদাতার ভূমিকাও পালন করছে। এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।
শিক্ষাঙ্গন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে ছাত্রলীগের অপরাধ তৎপরতা দেশ-বিদেশে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এর নিন্দা করে এই অঙ্গ-সংগঠনটির সাংগঠনিক নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। একাধিক জাতীয় দৈনিক ক্ষমতাসীনদের এই ছাত্র সংস্থাটির অপকর্মের দৃষ্টান্ত ও ফিরিস্তি দিয়ে বিশেষ রিপোর্ট, প্রবন্ধ-নিবন্ধ এমনকি বিশেষ সাপ্লিমেন্টও প্রকাশ করেছে। ‘‘প্রধানমন্ত্রী, এদের সামলান’’ শিরোনাম দিয়ে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীরা ছাত্রলীগের অপকর্ম রোধ এবং মারাত্মক অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু লোক দেখানো দু'একটা এরেস্ট ছাড়া আর কিছু হয়নি। হত্যা, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, ভর্তি বাণিজ্য- অনৈতিক এমন কোনও কর্মকান্ড নেই যার সাথে ক্ষমতাসীন দলের এই ছাত্র সংগঠনটির সম্পৃক্ততা নেই। তাদের কর্মকান্ডে দেশব্যাপী মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত। কিন্তু দেশবাসী কি দেখছে? এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা তাদের সংযত করার পরিবর্তে সরকার অনেক ক্ষেত্রে আইন-শৃক্মখলা বাহিনীকে তাদের বশংবদ বানিয়ে দিচ্ছে। প্রতিপক্ষের ওপর তারা সশস্ত্র হামলা করছে, তাদের পেছনে পুলিশ এসে নির্যাতিতদের এরেস্ট করছে। কোথাও ছাত্রলীগ পুলিশের অগ্রগামী বাহিনী হিসেবে কাজ করছে, আবার কোথাও পুলিশী একশানের পর ছাত্রলীগ প্রতিপক্ষের ওপর আবার হামলা করছে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা ঠুকে দেয়া হচ্ছে। পক্ষান্তরে ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য রাজপথে মহড়া দেয়া সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কিছুই করতে দেখা যায় না। বরং সরকারকে এখানে দুটি মারাত্মক কাজ করতে দেখা যায়। এক. ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের পুলিশ ও আইন-শৃক্মখলা বাহিনীতে absorb করা; দুই. তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। অভিযোগ উঠেছে গত ২২ মাসে পুলিশসহ আইন-শৃক্মখলা বাহিনীতে যত লোক নিয়োগ করা হয়েছে তার ৯০ শতাংশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো থেকে এসেছে। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে তারা গত অক্টোবর মাসে ইউনিয়ন পর্যায়ে কনভেনশন অনুষ্ঠান শুরু করেছে এবং এতে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দও অংশ নিচ্ছে। অপকর্ম দোষে দুষ্ট ও স্বয়ং আওয়ামী লীগ কর্তৃক নিন্দিত ও স্বীকৃতি প্রত্যাহৃত এই সংগঠনটির নেতৃত্ব বাছাইয়ের এক প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত হাস্যাস্পদভাবে এক সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে নেতৃত্ব প্রার্থীদের রক্ত ও পেশাবের বিশুদ্ধতা পরীক্ষার নিয়ম চালু করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। সরকার তাদের অপকর্ম প্রতিহতও করেনি বরং সারাদেশে তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। এর অর্থ কি এ দাঁড়ায় না যে সরকারের নীল-নকশাতেই তারা কাজ করছে এবং প্রতিদ্বনদ্বীদের নির্মূলে এই অপশক্তিকে তারা অস্ত্র সজ্জিত করে ব্যবহার করছে? এখন তো অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যেখানে অপরাধ-অপকর্ম সেখানেই ছাত্রলীগ। তাদের সাথে এখন শিক্ষা, শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষার্থীর কোনও সম্পর্ক নেই। দেশ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।
দেশজুড়ে চলছে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাস। এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস যার সামান্য নমুনা বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে উৎখাতের মধ্যদিয়ে দেশবাসী দেখেছে। গুপ্ত হত্যা, পুলিশ হেফাজতে খুন, আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুম, ছিনতাই, ডাকাতি, হানাহানি, মারামারি দেশব্যাপী এখন ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে এখন এমন সব ভয়ঙ্কর অপরাধ হচ্ছে যা ইতঃপূর্বে মানুষ শোনেনি। ইভটিজিং, নারী নির্যাতন নতুন মাত্রা পেয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী সন্ত্রাসী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র বিদ্রোহীরা এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মামলাবাজি নিত্যনতুন কৌশলে বন্দি নির্যাতন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের সরকারি অপপ্রয়াস ও অঙ্গীকার এর আগে আর কখনো দেখা যায়নি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে পরিচালিত তথাকথিত যুদ্ধাপরাধ এজেন্ডা বাস্তবায়নের বিদেশী পরিকল্পনা। ধর্মকে যারা আফিম তুল্য বলে মনে করেন, স্রষ্টার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে যারা জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য বলে গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্র পরিচালনায় তারাই এখন আওয়ামী লীগের সহযোগী হয়ে এই দেশকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে যুবক-যুবতীর অশ্লীল ব্যালে নৃত্যের দৃশ্য যারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন তাদের কাছে এখন পরিষ্কার যে সরকার কোন্ ধরনের ইসলাম চায়। সরকারের দৃষ্টিতে আমাদের হক্কানী আলেম উলামারা এখন গোমরাহ, ইসলামের ব্যাখ্যা করেন মদ্যপ মন্ত্রী ও সুরঞ্জিতের মত ব্যক্তিরা। তাদের দৃষ্টিতে আলেম উলামা, মাদরাসার ছাত্র, দাড়ি টুপিওয়ালা ধার্মিক ব্যক্তি মাত্রই জঙ্গি এবং এদের উৎখাত করার জন্য প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায় তারা একটি টাস্কফোর্সও গঠন করেছেন। এই অবস্থায় এ দেশের মুসলমানরা কি বসে থাকবেন? ধর্ম, ধর্মীয় বিশ্বাস, নীতি নৈতিকতা কোনটাই আজ এই সরকারের কাছে নিরাপদ নয়। এর নিরাপত্তা বিধানে জাতিকেই এগিয়ে আসতে হবে।
দ্রব্যমূল্য ও মানুষের জীবনযাত্রার অবস্থা তো আরো ভয়াবহ। ১০ টাকা সের চাল আর বিনা পয়সায় সার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় যাবার দু'মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী এই প্রতিশ্রুতি অস্বীকার করে। চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিএনপি জোটের আমলে যে চালের দাম কেজি প্রতি ১৪ টাকা ছিল তা এখন অন্যূন ৩৫ টাকায় উঠেছে। আঠার টাকা কেজি দরের চাল এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল, রসুন, পিঁয়াজ, মসল্লা, তরিতরকারি এমন কোনও পণ্য নেই যার মূল্য তিন থেকে দশ গুণ বৃদ্ধি পায়নি। দুই শয়নকক্ষের যে ঘর ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা তা এখন ১০ হাজার টাকায় উঠেছে। যে দূরত্বে ১০ টাকা ভাড়ায় রিকশা যেতো সে দূরত্বে এখন ত্রিশ টাকা দিতে হয়। বাস ভাড়া, ট্রেন ভাড়া, লঞ্চ ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাসের দামসহ বাড়েনি এমন পণ্য ও সেবা সামগ্রী নেই। অথচ এর তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় ১০ শতাংশও বাড়েনি। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকাকালে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলে ৪ দলীয় জোট সরকার তার মেয়াদকালে ১৮৬০০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। এখন গত ২২ মাসে তার সরকার ও দল কত লক্ষ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন তার হিসাব দেয়ার সময় সম্ভবত এসেছে। তার মন্ত্রীরা সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন তবে তা ভাঙ্গা যাবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে সরকারি দল ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের যাঁতাকল থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দেশবাসীর সামনে আন্দোলন ছাড়া আর কি কোন বিকল্প আছে?
বিদ্যুৎ গ্যাসের সংকট সরকার নিরসন করতে পারেনি। নিজের অযোগ্যতা ও দুর্নীতি ঢাকার জন্য এখনো তারা জোট সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন। এই খাতগুলো এখন প্রতিবেশী দেশের কব্জায় আবদ্ধ। ক্ষমতার বিনিময়ে ক্ষমতাসীনরা এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছেন যে বাংলাদেশের গ্যাস ও কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ভারত আমাদের দেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রস্তুতির আমরাও অংশীদার। জনগণ কি এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকতে পারে? বিদ্যুতের অভাবজনিত লোডশেডিং এ তাদের জীবন এখন বিপন্ন, কলকারখানার উৎপাদন বিঘ্নিত, নতুন কারখানা তৈরি বা সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া বন্ধ, ফলে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হার মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে এবং বেকার সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। সরকার এ ক্ষেত্রে নির্লিপ্ত। কাজেই পরিত্রাণের উপায় দেশবাসীকেই বের করতে হবে।
এই সরকারের দুর্নীতি দমন তৎপরতা সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল। সরকারের এমন কোনও খাত নেই যেখানে এখন দুর্নীতি নেই। এ ব্যাপারে বদরুদ্দীন ওমরের একটি কথা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, সমাজে আজ যেভাবে সব ধরনের দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি তার শেকড় বিস্তার করেছে এর মূল কারণ ১৯৭২ সাল থেকে সরকারি পর্যায়ে ও সরকারের লোকজনদের দ্বারা ঘটতে থাকা দুর্নীতি, ১৯৭২ সালে সরাসরি লুটপাট দিয়ে শুরু হলেও ক্রমেই তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। লুটপাট এখন বাংলাদেশে এক সুসংগঠিত ব্যাপার। লুটপাটকে দায়মুক্তি দিয়ে এই সরকার পার্লামেন্টে আইনও করেছে। বলাবাহুল্য, ৭২ সালের সরকার আর বর্তমান সরকার একই দলের ও চরিত্রের সরকার। বৃটিশ রাজ পরিবারের রাজা বা রাণী ছাড়া আর কারুর দায়মুক্তি নেই কিন্তু আমাদের দেশে আছে বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির কথা বলা এখানে মহাপাপ। বললে মানহানির মামলা হয়। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হলে তার বিচার হয় না, তা প্রত্যাহার হয়ে যায়। এই অবস্থায় দেশ যদি দুর্নীতির আখড়া না হয়, তাহলে কি হবে? দেশের মানুষ যদি তা না চান তাহলে পথে নামা ছাড়া বিকল্প কিছু আছে বলে মনে হয় না।

Wednesday, 10 November 2010

ঈশ্বরের অস্তিত্ব

বিখ্যাত ব্রিটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মাঝে মাঝে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসছেন। আর এর কারণ অলৌকিক কিছু নয়। তিনি বেশ কয়েকবার তার নতুন ধারণা বা তত্ত্ব দিয়ে মানুষের মাঝে বিস্ময়ের সৃস্টি করেছেন মাত্র। সম্প্রতি স্টিফেন হকিং তার দ্যা গ্রান্ড ডিজাইন বইতে মত প্রকাশ করেন, মহাবিশ্ব ঈশ্বর সৃষ্টি করেননি, নিজে থেকেই এই বিশ্ব তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, হকিং পূর্বে ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন এবং জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানের সঙ্গে ঈশ্বরের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু তার নতুন বই-এ তিনি বলেছেন, বিগ ব্যাং ছিলো পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী অবশ্যাম্ভাবী একটা ঘটনা। তিনি ১৯৮৮ সালে তার বেস্ট সেলিং অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম বইতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেছিলেন এভাবে বিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের ভূমিকা আছে

দ্যা গ্র্যান্ড ডিজাইন বইতে স্টিফেন হকিং বলেন, শূন্যতা থেকেই অবশ্যম্ভাবীরূপে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হতে পারে, কেননা তাতে অভিকর্ষ শক্তির নিয়ম কার্যকর রয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টিই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির কারণ, আর সেকারণেই মহাবিশ্ব টিকে আছে, আমরা টিকে আছি। আর মহাবিশ্ব সৃষ্টির এই প্রক্রিয়ায় ঈশ্বরের আলো জ্বালানোর কোনো প্রয়োজন নেই।

স্টিফেন হকিং এর সাম্প্রতিক এ বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। পূর্বে বিশ্ব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের ভূমিকা আছে বক্তব্যে ঈশ্বরে বিশ্বাসীগণ তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বক্তব্যে নাস্তিকতায় বিশ্বাসীগণ সস্থি প্রকাশ করলেও প্রচন্ড সমালোচনা করছেন ঈশ্বরবাদীগণ। তবে এ ধরনের বক্তব্যকে অনেকেই বাণিজ্যিক কারণ হিসেবে খুজে পেয়েছেন।

Monday, 8 November 2010

১০ টাকা কেজি'র চাল নিয়ে কথা চালাচালি এবং সরকারের আদমছুরত

১০ টাকা কেজি'র চাল নিয়ে কথা চালাচালি এবং সরকারের আদমছুরত
সরকারের অহংকার, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জনগণ তাদের পাঁচ বছরের জন্য শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। ‘দিনবদলের ডিজিটাল' বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জাদুর চেরাগ তাদের হাতে আছে। পাঁচ বছরে না হলে আরও ৫ বছর তারা জনগণের থেকে ভালবাসার দাবিতেই ছিনিয়ে নিতে পারবেন। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে মৃদুকণ্ঠে কেউ কেউ মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে জনমত যাচাই করার দাবি জানিয়েছেন। এটাকে সরকারের গলাবাজ-স্তাবকরা ‘মামা বাড়ির আব্দার' বলে উপহাস করেছেন। কেউ কেউ সংসদে এসে অনাস্থা প্রস্তাব ‘মুভ' করতে বলেছেন।
মোক্ষম কথা! সংসদীয় রাজনীতিতে সরকার পতনের জন্য ‘নো কনফিডেন্স' বিল মুভ করাই রেওয়াজ। সংসদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন থাকায় সরকারী দল কনফিডেন্টলি নো-কনফিডেন্স বিল আনতে বিরোধী দলকে টুইস্টিং করতেই পারে। তবে জনমতের ওপর সরকারের আস্থা থাকলে এবং গণতন্ত্রের প্রতি কমিটমেন্ট থাকলে বিরোধী দলকে বোল্ড করতে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়াই তাদের উচিত। মধ্যবর্তী নির্বাচনেই উভয় দলের রাজনীতিতে টিকে থাকার একটা ফায়সালা হয়ে যেতে পারে। সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যেসব বায়বীয় অভিযোগ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আনছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে তারও একটা শান্তিপূর্ণ নিত্তি হতে পারে। প্রতিটি সংসদীয় সরকারের মেয়াদকালেই অবরোধ, ভাংচুর, হরতাল, নৈরাজ্য, সংঘাত, হত্যা, নির্যাতন, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটে। এগুলো ঔপনিবেশিক আমলের রেওয়াজ। সরকার ও বিরোধী দল সংসদ ও সংসদের বাইরে মিলে-মিশে সমঝোতায় রাষ্ট্র শাসনের গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করতে না পারায় রাজনীতি ক্রমশ ধোঁয়াশে ও সংঘাতমুখী হয়ে উঠেছে। এর বিকল্প হচ্ছে মধ্যবর্তী নির্বাচন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার সাংবিধানিক মেয়াদের শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত ক্ষমতার গদি অাঁকড়ে থাকতে অভ্যস্ত। গণতন্ত্রের ক্যারিশমা দেখাতে গিয়ে তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফাঁদে পড়বে না। সুতরাং বিরোধীদল যদি শেখ হাসিনার মতো ‘আঙ্গুল বাঁকা করে', বা ‘ঝাঁকি দিতে' না পারে, তাহলে তাদের কাছে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি না তোলাই ভালো।
তবে মধ্যবর্তী নির্বাচন যদি ‘মামাবাড়ির আব্দার' না হয়, তাহলে ক্ষমতাও কারো চিরস্থায়ী ইজারা বা পৈতৃক সম্পত্তি নয়। ক্ষমতায়নের মূল শক্তি জনগণ। জনগণ ম্যান্ডেট দিয়ে কোন ভুল করেননি এবং জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে সরকার তাদের সেবক না হয়ে দানব হতে পারে না। সত্যি আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিয়ে জনগণ কোন পাপ করে থাকলে তার প্রায়শ্চিত্তের জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচনে মুক্তি চান। জনগণ সরাসরি পার্লামেন্টে গিয়ে সরকারের সমালোচনা করা বা দাবি-দাওয়া জানিয়ে সরকারকে সুপথ দেখাতে পারে না। জনগণের প্রতিবাদ ও দাবি জানানোর দুটি মাধ্যম আছে। একটি সভা-সমাবেশ-প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানানো। অন্যটি সংবাদপত্র। প্রথমটি জনগণের অরহিতকর সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। দ্বিতীয়টির সাথে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জড়িত। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, সাংবাদিকরা গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন, তবে অপপ্রচার করা যাবে না। সরকার ও বিরোধী দলের যেমন ভিন্ন ভিন্ন নীতি-অবস্থান রয়েছে, তেমনি গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নিয়েও ঐকমত্য আশা করা যায় না। এক দলের কাছে যা ‘অপপ্রচার' অন্যদলের কাছে তা গঠনমূলক সমালোচনাও হতে পারে। গণতন্ত্র হচ্ছে শত ফুল ফোটা ও শত মতের বিকাশের অবারিত সুযোগ। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই গণতন্ত্রের সারবত্তা।
সরকার ও বিরোধী দলের মতের বাইরেও তৃতীয় কোন মতও থাকতে পারে। মতে মতে মতান্তর হয়। কিন্তু মতান্তর নিয়ে সংঘাতের বিপদটাই ভয়ঙ্কর। একের মত যখন অন্যের ওপর জবরদস্তি চাপিয়ে দেয়া হয়, অথবা অন্যের মত প্রকাশ যখন ফ্যাসিবাদী জিঘাংসায় হরণ করা হয়, তখনই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় পড়ে গণতন্ত্র অক্কা পায়।
‘দিনবদলের ডিজিটাল' সরকার গণতন্ত্রের যে ফ্যাসিবাদী রূপান্তর ঘটিয়ে বিগত ১৮/১৯ মাস ধরে দেশবাসীকে নাগরদোলায় ওলট-পালট করছেন, তাতে জনগণের অবস্থা দাঁড়িয়েছে ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।' সুতরাং মধ্যবর্তী নির্বাচনটা এখন জনগণেরই দাবি।
মার্কিন মুলুকে সিনেট ও কংগ্রেসের [প্রতিনিধি পরিষদ] সাম্প্রতিক মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভরাডুবি ঘটেছে। কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা-সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের কাছে। এই পরাজয়ের পুরো দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন এবং রিপাবলিকানদের সাথে রাষ্ট্র-সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তিনি কম্প্রোমাইজ করে চলার প্রস্তাব তথা নীতিমালা ঘোষণা করেছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরাজয়ের ক্লান্তি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা ‘বৃহৎ' গণতন্ত্রের দেশ ভারত সফরে এসেছেন। ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ডেমোক্র্যাট দলের জনপ্রিয়তায় ধসের দায়বহন করে অনুজ্জ্বল একটা ইমেজ নিয়ে তিনি ভারতে এসেছেন। তবে এটা তাঁর পূর্বনির্ধারিত সফর।
ভারতেও মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজীর রয়েছে। তবে ভারতে গণতন্ত্রের উপরিভাগে যে চকচকে রংয়ের প্রলেপ, তার নিচে রয়েছে কলংক-দাগ এবং কদর্যতার ক্ষত-চিহ্ন। এই নিয়েই ভারত জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদে ‘ভেটো' শক্তির অধিকারী স্থায়ী সদস্য হতে চায়। পত্রিকান্তরের খবর : ভারতের নিরাপত্তা পরিষদ-সদস্যপদ অর্জনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মদদ দেবে। এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব অবশ্যই ওবামা-মনমোহনের আলোচনার বিশেষ জায়গা জুড়ে থাকবে। প্রেসিডেন্ট ওবামার নিরাপত্তার অজুহাতে মার্কিন নৌ-বাহিনীর রণতরী আরব সাগরে মুম্বাই উপকূলে টহল দিতে শুরু করেছে। এটা ভারত-মার্কিন ভবিষ্যৎ সামরিক ‘মর্দামীর' একটা আগাম মহড়া বলেই অনেকে মনে করেন। এতে স্বীয় নিরাপত্তায় চীন এবং চীনের সাথে তলে তলে সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা পাকিস্তানের জন্য সতর্ক বার্তাও রয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ভারতকে এ অঞ্চলের একক মোড়ল হিসেবে তাকে ইজারাদার বানিয়ে যায়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। ভারত-মার্কিন মদদে নিজেকে যতোই শক্তিশালী ও বেপরোয়া ভাবুকনা কেন, এর প্রতিক্রিয়ায় তার জন্য যে ধরনের মানবিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, তা-ও তাকে সামলাতে হবে। ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণ্য গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত একটি দেশের ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। এটা তাকে করতে হচ্ছে গান্ধীজির ‘অহিংস' নীতি ও পন্ডিত নেহেরুর কিংবদন্তীর জোট নিরপেক্ষ নীতির মসৃণ গালিচা পদদলিত করে। অবশ্য ভয়ংকর গণহত্যার রক্তাক্ত ইতিহাসের খলনায়ক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ সাহেবের উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট ওবামা রাষ্ট্রীয় সকল অপকর্ম ও গণহত্যার কলঙ্ক নিয়ে রাজঘাটে ‘মহাত্মা' গান্ধীর সমাধিতেও শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছেন। গান্ধীজি তার হত্যাকারী উগ্র জনসংঘ নেতা নাথুরাম গডসে-কে ক্ষমা করতে পারলেও লাখো লাখো নিরপরাধ শিশু-নারী-পুরুষের ঘাতক দেশের প্রেসিডেন্ট ওবামার পদার্পণে হয়তো আত্মায় পীড়ন অনুভব করবেন। তবে ভারতের বিশ্বশক্তি হবার জন্য গান্ধীজিকে এতটুকু ত্যাগ স্বীকার না করলেই বুঝি চলে না! বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নিরাপত্তা পরিষদে সদস্যপদ লাভের জন্য আগাম সমর্থন ব্যক্ত করে এসেছেন। ভারত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হলে বাংলাদেশ অন্তত : ‘মোর চাচা চৌকিদার' বলে বড়াই করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন জনমতের এই ইউ-টার্নকে কীভাবে দেখছেন, আমরা জানি না। তবে ১৮/১৯ মাস আগে বাংলাদেশের জনগণ যে প্রেক্ষাপটে ও প্রত্যাশ্যয় আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিয়েছে, সে অবস্থাটি এখন নেই। জনগণের পক্ষে সে কথাটিই বিরোধীদল বলছে। সংসদে ৩০০ আসনের মধে মাত্র শতকরা ১০ ভাগ অর্থাৎ ৩০টি আসনের অধিকারী হলেও ভোটপ্রাপ্তির অনুপাত বিরোধীদলের ৩০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার যতো দক্ষ ও সফলই হোক না কেন, ক্ষমতার হানিমুনের আমেজ তাদের বেশিদিন স্থায়ী হয় না। স্বভাবগতভাবে বাংলাদেশের মধ্যবিত্তশ্রেণী এন্টি এস্টাবলিশমেন্ট, সরকারের নিন্দুক। সাধারণ মানুষও অল্পসময়ে বেশি পেতে চায়। ফলে সরকারের পক্ষের জনমত উল্টোমুখী হতে সময় লাগে না। উল্টো জনমতের সবটুকু বিরোধীদলের পক্ষে না আসলেও সরকারের পক্ষে আর তারা নেই এবং মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে তারা আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয় দফায় যে ভোট দেবে না, এটা ধরে নেয়া যুক্তিযুক্ত। প্রতিদিন দেশের গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের নীতি-অবস্থান ও সফলতা-ব্যর্থতা, দক্ষতা-অদক্ষতার ওপর যেসব অনলাইন জরিপ চালাচ্ছে, তার শতকরা ৮০ ভাগই সরকারের বিপক্ষে থাকে। এটাকে যদি জনমতের প্রতিফলন হিসেবে ধরে নেই, তাহলে সরকার সংখ্যালঘিষ্ট জনমতের ওপর চাপাবাজি-সন্ত্রাসের জোরে দাঁড়িয়ে আছে। সংসদীয় সংখ্যাতাত্তিক অহমিকার শুভঙ্করের ফাঁকি প্রকৃত জনমতকে রিফ্লেক্ট করে না।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের ‘নিঃসঙ্গ শেরপা'র মতো দল ও সরকারের বাড়াবাড়ি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিবেকের প্রহরীর মতো যা কিছু বলছেন, তা ‘হাইব্রীড' আয়ামী লীগারদের দাপটে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গুরুত্বহীন প্রলাপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এককালের নিষ্ঠাবান আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রবীণ সাংবাদিক ফকির আবদুর রাজ্জাক ওবায়দুল কবীরকে সমর্থন করে লিখেছেন: ‘‘সাধারণ মানুষ, সমর্থক গোষ্ঠী ও কর্মীরা ধৈর্য রাখতে পারছে না। তারা এখনই সুফল হাতে পেতে চায়। এ চাওয়ায় অস্বাভাবিকতা সকলেও অন্যান্য নয়। অতীতে যারা দেশের এজরুরি খাতগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায়নি, তারা দেশপ্রেমের পরিচয় দেয়নি সত্যি, কিন্তু এ সরকারের বিলম্বেতেও জনগণ খুশি নয়।
ওবায়দুল কাদের এসব অগণিত ধের্যহারা মানুষের মনের কষ্ট হৃদঙ্গম করেই ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের অভ্যন্তরে থেকেও বেসুরো বক্তব্য রেখে তার নিজের মনের দুঃখ প্রকাশ করেছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সার্বিক অবস্থা যে ভালো না, তা সরকার গঠনের পর থেকেই রাজনীতি সচেতন মানুষ লক্ষ্য করেছে। সরকারও দলের মধ্যে ন্যূনতম বিভাজন বা পার্থক্য তৈরি করে দলের স্বাভাবিক সাংগঠনিক গতি সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে নেতারা। এ ব্যাপারে দলের সভানেত্রী মাঝেমধ্যে চেষ্টা করেও এখনো সফল হতে পারেনি। দলের জন্য জরুরি ছিল একজন সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু সেখানেও মন্ত্রিত্ব ও সম্পাদক একত্রিত হয়ে কেবল নৈরাজ্যই বাড়িয়ে চলেছে। সময় আসলেই দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এখন দল ও সরকারের ব্যাপারে মূলত শেখ হাসিনাকেই কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, সব ব্যর্থতার দায়ভার অন্য কেউ নয়, তাঁর ওপরই বর্তাবে। [আত্মসংযম, আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির সেই কথা- ফকীর আবদুর রাজ্জাক, সংবাদ, ৬/১১/১০] সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার নেতা বি. চৌধুরী বলেছেন : ‘কিছু এমপি এবং থানার গারোগা এক হয়েছে আপনাকে [প্রধানমন্ত্রী] ডুবাবার জন্য। তারা বিভিন্ন স্থানে হ্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সন্ত্রাস, রাজনৈতিক হয়রানি ও দুর্নীতি সবই তারা করছে। শিক্ষা না নিলে শেখ হাসিনার সরকারের জন্য ওবামার নির্বাচনী ফলাফলের পরিণতি হওয়া বিচিত্র নয়। (ইনকিলাব, ৬.১১.১০]
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের অপপ্রচার মোকাবিলা তথা সরকারের সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় নেতাদের ব্রীফ করেছেন। তাদের জন্য রাজনৈতিক ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছেন। তবে আমরা মনে করছি, বিরোধীদলকে মোকাবিলার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী একাই একশ। তাঁর সাথে আছেন সৈয়দ আশরাফ, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, শামসুল হক টুকু, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, মাহবুবুল আলম হানিফ প্রমুখের মতো চ্যাম্পিয়ন শব্দ সন্ত্রাসীরা। এরা শতকণ্ঠে কোরাসে অশ্রাব্য শব্দ চয়নে বিরোধী দলকে হাইকোর্ট দেখিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলকে গাল-মন্দ দেবার জন্য দলীয় নেতাদের জিহবাকে ধারালো করার জন্য প্রশিক্ষণ শিবির খুলেছেন। তাও ভালো। তাহলে এবার পুলিশী সন্ত্রাস ও দলীয় ‘সোনার ছেলেদের' তান্ডব থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রেহাই দিন! যা করার শব্দ-সন্ত্রাসেই করুন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর চালাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল ও বিনামূল্যে সার দেবার কথা তিনি বা তাঁর দল-বলেননি। এটা বিরোধী দলের অপপ্রচার। নির্বাচনের সময় তাঁরা কে কী বলেছেন, বিরোধী দল বা মিডিয়া তা স্মরণ রাখলেও সাধারণ মানুষ কী তা মনে রাখে? ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেবার প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রধানমন্ত্রী একটি বিস্মৃত রাজনৈতিক বকাওয়াজকে চাঙ্গা করলেন। রবীন্দ্রনাথের গল্পের নায়িকা কাদম্বিনী যেমন মরিয়া প্রমাণ করেছিল যে, এর আগে তার মৃত্যুর খবরটি ছিল ভুয়া, তেমনি প্রধানমন্ত্রী ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবার কথা অস্বীকার করে প্রমাণ করলেন যে, তিনি কথাটি আসলেই বলেছিলেন। আর বলেছিলেন বলেই অপরাধপ্রবণ উপলব্ধি থেকে তিনি তাঁর ঐ বেফাঁস উক্তিটির কবর দিতে চান। কিন্তু কোথায়, কখন শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজি চাল ও বিনামূল্যে সার দেবার কথা বলেছেন, তা উদ্ধৃত করে রিপোর্ট করলে প্রধানমন্ত্রীর দুর্বল স্মৃতিশক্তি ফিরে আসতেও পারে। প্রধানমন্ত্রীর মুখে এতটা স্থুল কথা শোভা পায় না। বরং এ কথা না তুললেই তিনি ভালো করতেন। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ার কথা শেখ হাসিনা যখন বলেছিলেন, তখন সাধারণ মানুষও তাঁর কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। তারা ভেবেছিল, সরকার অন্ততঃ ১৫/২০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াতে পারবে। কিন্তু খোলা বাজারে সরকার যে নিম্নমানের চাল বিক্রি করছে তার কেজিও ২৪ টাকা। এ চাল সংগ্রহ করতে সময় ও ভোগান্তি ছাড়াও ওজনে সঠিক হয় না। ফলে কার্যত এর দামও কেজি প্রতি প্রায় ৩০ টাকাই পড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছেন, চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকলে চালের কেজি ৮০ টাকা হতো। জনগণের প্রশ্ন, সেটা কীভাবে? অনেকে মনে করেন, তখন আওয়ামী লীগই বাজার ম্যানপুলেট করে এটা করতো। তবে এবারে সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেট শক্তিশালী হওয়ায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন হাত নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান সিন্ডিকেট অস্বীকার করলেও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকারের মধ্যে সিন্ডিকেট ঢুকে গেছে। সিন্ডিকেট সরকারের লেজ না মাথায় উঠে বসেছে তা তিনি বলেননি। চাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কথা উল্টে ফেললেন, তাতে হয়তো আর কিছুদিন পর বলবেন, তিনি ‘দিনবদলের' কথাও তিনি বলেননি। আদালত প্রধানমন্ত্রীকে ‘হট হেটেড' বললেও জনগণ তাঁর কাছে ওজনদার কথাই আশা করেন।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সতীশচন্দ্র রায় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সম্প্রতি রিপোর্টার্স ইউনিটের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন : প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের ব্যক্তিদের নিয়ে আমি ভীত । ...বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কিছু হয়ে গেলে দল থাকবে, তবে আওয়ামী লীগ যে কোথায় যাবে বলা মুসকিল। বঙ্গবন্ধু ও ৪ নেতার আশপাশের লোকদের সহায়তায় তাদের হত্যা করা হয়েছিল। (আমাদের সময়, ৬-১১-১০)
বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার প্রশ্ন করেছেন, শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৩ দিনের মাথায় কেন নিহত হন জিয়া? তদন্ত করলে বোঝা যাবে, শহীদ জিয়ার হত্যাকান্ডের জন্য কে দায়ী। তবে জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে ছদ্মবেশে শেখ হাসিনা আখাউড়া সীমান্ত পথে আবারও কেন ভারত যেতে চেয়েছিলেন, সে রহস্য আজও উদঘাটিত হয়নি এবং ১৯৮২ সালে নির্বাচিত বিএনপি সরকার উৎখাত করে সেনাপ্রধান এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে শেখ হাসিনা বলেছিলেন : ‘আই এ্যাম নট আনহ্যাপী।'
বিএনপি এককভাবে ও জোটগতভাবে এক দশক ক্ষমতায় থেকেও জিয়া হত্যায় আন্তর্জাতিক কানেকশন ও সিভিলিয়ান ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা। ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই কেন বলেছিলেন, মুজিব হত্যার বদলা নিতে জিয়া হত্যার গোপন মিশনে অনুমোদন চেয়ে ‘র' তাঁর কাছে ফাইল উপস্থাপন করলে তিনি তাতে অনুমোদন দেননি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিংবা বেসরকারি আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত দল নিয়োগ করে বিএনপি কেন জিয়া হত্যায় ভারত ও তাদের দেশীয় এজেন্টদের ভূমিকা নির্ধারণ করতে পারেনি।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন : স্বামীর হত্যাকারীর দেয়া বাড়ি বেগম খালেদা জিয়া নিলেন কিভাবে? তাহলে এরশাদ জিয়া হত্যাকারি বলেই কি প্রধানমন্ত্রী তাকে অাঁচলের আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করছেন? এ প্রশ্ন কেউ করলে তাকে কি দোষ দেয়া যাবে? এরশাদ তার নিজের সম্পত্তি জিয়া পরিবারকে দেননি। সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত তিনি কার্যকর করেছেন মাত্র। জিয়া হত্যার খুনিকে গলার মালা করে রাখবেন, আর শহীদ জিয়াকে দেয়া সেনাবাহিনীর বাড়িটি কেড়ে নিয়ে বর্তমান সরকার সেনাবাহিনী ও জনগণের আবেগকে পদপিষ্ট করতে চাইছে। এ বাড়ি ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা দেখানোর চেয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা কি আরও মহৎকর্ম নয়?
মুদ্রাযুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শংকাগ্রস্ত করে তুলছে
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter