Flickr

Tuesday, 30 November 2010

মুজিব সরকারের অভিজ্ঞতাকে কেন উপেক্ষা?

Posted by   on

মুজিব সরকারের অভিজ্ঞতাকে কেন উপেক্ষা?
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে গতি আনতে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা গত শনিবার নয়াদিল্লীতে দু'টি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এক চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের শূন্যরেখা বরাবর দু'টি সীমান্ত হাট বসবে। অন্য চুক্তি অনুযায়ী এক দেশের পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি অন্যদেশের সীমান্ত পেরিয়ে মূল ভূ-খন্ডের ২০০ মিটার পর্যন্ত ভেতরে আসতে পারবে। ‘সীমান্তহাট' চালুর বিষয়ে সম্পাদিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, সপ্তাহে একদিন করে হাট বসবে। বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি ও আইন মেনেই সীমান্তরেখার দুইপাশে বসবে এই হাট। এখানে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনো কর আদায় করা হবে না। একজন ব্যবসায়ী দিনে ৫০ মার্কিন ডলারের বেশি পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন না। বাংলাদেশী ও ভারতীয় মুদ্রায় পণ্য বেচাকেনা করা যাবে। সীমান্ত হাটে বেচার জন্য ১৩টি স্থানীয় স্তরে উৎপাদিত ও তৈরি কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, ফুল, শুকনো মাছ, গামছা, লুঙ্গি, কাঠের জিনিস, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রভৃতি চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরো হাটের নিরাপত্তা ও তত্ত্বাবধানে যৌথভাবে থাকবে বিডিআর ও বিএসএফ। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসেই সীমান্ত হাট দু'টি চালু হয়ে যাবে বলে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দশর্মা সংবাদ সম্মেলনে জানান।
বর্তমানে দু'টি হাটের ব্যাপারে চুক্তি হলেও হাটের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮টি করা হবে বলে জানা গেছে। আমরা জানি, কোন চুক্তি করার সময় সাধারণত অনেক ভাল কথা বলা হয়ে থাকে। যেমন এবারও বলা হয়েছে, চুক্তির ফলে দু'দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে গতি আসবে এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিও কমতে পারে। তবে পর্যবেক্ষকমহল চুক্তিকালীন চমৎকার সব কথামালায় উৎসাহিত হতে তেমন আগ্রহী নন। এর কারণ অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা। স্বাধীনতা লাভের পর এ পর্যন্ত ভারতের সাথে যতগুলো চুক্তি হয়েছে তার কোনটাতেই লাভবান হতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত: ১৯৭৪ সালের সীমান্ত চুক্তি, ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, ১৯৮৩ সালের তিস্তার পানি বণ্টন এডহক চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। এছাড়া দু'দেশের মধ্যে আরো অনেক পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, কিন্তু এর কোনটার মাধ্যমেই বাংলাদেশ লাভবান হতে পারেনি, বরং ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। এ কারণে এবারের চুক্তির ব্যাপারেও আশাবাদী হতে পারছেন না পর্যবেক্ষক মহল।
প্রসঙ্গত: এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বর্ডার-হাট বা বর্ডার-ট্রেড আমাদের জন্য নতুন কোন বিষয় নয়। ১৯৭২ সালে সীমান্ত বাণিজ্যের লক্ষ্যে বর্ডার-ট্রেড চুক্তি হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ২৮ মার্চ জাতির স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেই ভারতের সাথে বর্ডার-ট্রেড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি অনুসারে উভয় দেশের ১৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট পণ্য অবাধে আনা-নেওয়া ও ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা ছিল। আর বর্ডারহাটই এইসব পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের প্রধান কেন্দ্র ছিল। তবে এই চুক্তির ক্ষতিকর ফল ফলতে দেরি হয়নি। ফলে শেখ মুজিব সরকার এই চুক্তি বাতিল করতে বিলম্ব করেনি। যদিও ভারত সরকার ঐ চুক্তি অব্যাহত রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিবের মতামত উপেক্ষা করার মত সাহস তখন ভারতের ছিল না। কিন্তু ক্ষতিকর সেই চুক্তির ফাঁদে বাংলাদেশের বর্তমান দুর্বল সরকার কেন পড়তে গেল সেই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠেছে। শেখ মুজিব সরকার যেই চুক্তি বাতিল করেছিল, সেই চুক্তিতে শেখ হাসিনার সরকার আবার আবদ্ধ হওয়ার আগে দশবার ভাবা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো, ভাবনা-চিন্তার জন্য সময় নেওয়ার পরিবর্তে হাসিনা সরকার এখন ভারতের সাথে দ্রুতগতিতে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করার জন্য উৎসাহী। কিন্তু এমন উৎসাহের কারণ কী? দেশপ্রেমিক অন্যান্য সচেতন নাগরিকের মত বিডিআর-এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমানও ভারতের সাথে ‘সীমান্ত হাট' চুক্তিতে খুশি নন। তিনি মনে করেন, এই হাটকে কেন্দ্র করে ভারতীয় নিম্নমানের বিষাক্ত পণ্যের বিস্তার ঘটবে বাংলাদেশে, হাটকে ইস্যু করে ভারতীয় পণ্য অবাধে প্রবেশ করবে বাংলাদেশে, শুধু কি তাই-- ভারতীয় চররাও ছাড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়বে এদেশে, আর ব্যবসার নামে তারা অনাকাঙ্ক্ষিত অন্য ব্যবসাও করতে পারে-- যা হবে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকারক। আর এই বিষয়টি আমরা কী করে ভুলবো যে, বর্ডার-ট্রেড চুক্তি করার পরও শেখ মুজিব ক্ষতির কারণে তা বাতিল করেছিলেন। তাই প্রশ্ন জাগে, কীসের তাড়নায় পিতার পদাঙ্ক অনুসরণে ব্যর্থ হলেন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী?

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter