Flickr

Monday, 8 November 2010

১০ টাকা কেজি'র চাল নিয়ে কথা চালাচালি এবং সরকারের আদমছুরত

Posted by   on

১০ টাকা কেজি'র চাল নিয়ে কথা চালাচালি এবং সরকারের আদমছুরত
সরকারের অহংকার, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জনগণ তাদের পাঁচ বছরের জন্য শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেন। ‘দিনবদলের ডিজিটাল' বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জাদুর চেরাগ তাদের হাতে আছে। পাঁচ বছরে না হলে আরও ৫ বছর তারা জনগণের থেকে ভালবাসার দাবিতেই ছিনিয়ে নিতে পারবেন। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে মৃদুকণ্ঠে কেউ কেউ মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে জনমত যাচাই করার দাবি জানিয়েছেন। এটাকে সরকারের গলাবাজ-স্তাবকরা ‘মামা বাড়ির আব্দার' বলে উপহাস করেছেন। কেউ কেউ সংসদে এসে অনাস্থা প্রস্তাব ‘মুভ' করতে বলেছেন।
মোক্ষম কথা! সংসদীয় রাজনীতিতে সরকার পতনের জন্য ‘নো কনফিডেন্স' বিল মুভ করাই রেওয়াজ। সংসদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন থাকায় সরকারী দল কনফিডেন্টলি নো-কনফিডেন্স বিল আনতে বিরোধী দলকে টুইস্টিং করতেই পারে। তবে জনমতের ওপর সরকারের আস্থা থাকলে এবং গণতন্ত্রের প্রতি কমিটমেন্ট থাকলে বিরোধী দলকে বোল্ড করতে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়াই তাদের উচিত। মধ্যবর্তী নির্বাচনেই উভয় দলের রাজনীতিতে টিকে থাকার একটা ফায়সালা হয়ে যেতে পারে। সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যেসব বায়বীয় অভিযোগ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আনছেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে তারও একটা শান্তিপূর্ণ নিত্তি হতে পারে। প্রতিটি সংসদীয় সরকারের মেয়াদকালেই অবরোধ, ভাংচুর, হরতাল, নৈরাজ্য, সংঘাত, হত্যা, নির্যাতন, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের মতো ঘটনা ঘটে। এগুলো ঔপনিবেশিক আমলের রেওয়াজ। সরকার ও বিরোধী দল সংসদ ও সংসদের বাইরে মিলে-মিশে সমঝোতায় রাষ্ট্র শাসনের গণতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করতে না পারায় রাজনীতি ক্রমশ ধোঁয়াশে ও সংঘাতমুখী হয়ে উঠেছে। এর বিকল্প হচ্ছে মধ্যবর্তী নির্বাচন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার সাংবিধানিক মেয়াদের শেষ মুহূর্তটি পর্যন্ত ক্ষমতার গদি অাঁকড়ে থাকতে অভ্যস্ত। গণতন্ত্রের ক্যারিশমা দেখাতে গিয়ে তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফাঁদে পড়বে না। সুতরাং বিরোধীদল যদি শেখ হাসিনার মতো ‘আঙ্গুল বাঁকা করে', বা ‘ঝাঁকি দিতে' না পারে, তাহলে তাদের কাছে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি না তোলাই ভালো।
তবে মধ্যবর্তী নির্বাচন যদি ‘মামাবাড়ির আব্দার' না হয়, তাহলে ক্ষমতাও কারো চিরস্থায়ী ইজারা বা পৈতৃক সম্পত্তি নয়। ক্ষমতায়নের মূল শক্তি জনগণ। জনগণ ম্যান্ডেট দিয়ে কোন ভুল করেননি এবং জনগণের ম্যান্ডেট পেয়ে সরকার তাদের সেবক না হয়ে দানব হতে পারে না। সত্যি আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিয়ে জনগণ কোন পাপ করে থাকলে তার প্রায়শ্চিত্তের জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচনে মুক্তি চান। জনগণ সরাসরি পার্লামেন্টে গিয়ে সরকারের সমালোচনা করা বা দাবি-দাওয়া জানিয়ে সরকারকে সুপথ দেখাতে পারে না। জনগণের প্রতিবাদ ও দাবি জানানোর দুটি মাধ্যম আছে। একটি সভা-সমাবেশ-প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানানো। অন্যটি সংবাদপত্র। প্রথমটি জনগণের অরহিতকর সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। দ্বিতীয়টির সাথে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জড়িত। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, সাংবাদিকরা গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারেন, তবে অপপ্রচার করা যাবে না। সরকার ও বিরোধী দলের যেমন ভিন্ন ভিন্ন নীতি-অবস্থান রয়েছে, তেমনি গঠনমূলক ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নিয়েও ঐকমত্য আশা করা যায় না। এক দলের কাছে যা ‘অপপ্রচার' অন্যদলের কাছে তা গঠনমূলক সমালোচনাও হতে পারে। গণতন্ত্র হচ্ছে শত ফুল ফোটা ও শত মতের বিকাশের অবারিত সুযোগ। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই গণতন্ত্রের সারবত্তা।
সরকার ও বিরোধী দলের মতের বাইরেও তৃতীয় কোন মতও থাকতে পারে। মতে মতে মতান্তর হয়। কিন্তু মতান্তর নিয়ে সংঘাতের বিপদটাই ভয়ঙ্কর। একের মত যখন অন্যের ওপর জবরদস্তি চাপিয়ে দেয়া হয়, অথবা অন্যের মত প্রকাশ যখন ফ্যাসিবাদী জিঘাংসায় হরণ করা হয়, তখনই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় পড়ে গণতন্ত্র অক্কা পায়।
‘দিনবদলের ডিজিটাল' সরকার গণতন্ত্রের যে ফ্যাসিবাদী রূপান্তর ঘটিয়ে বিগত ১৮/১৯ মাস ধরে দেশবাসীকে নাগরদোলায় ওলট-পালট করছেন, তাতে জনগণের অবস্থা দাঁড়িয়েছে ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি।' সুতরাং মধ্যবর্তী নির্বাচনটা এখন জনগণেরই দাবি।
মার্কিন মুলুকে সিনেট ও কংগ্রেসের [প্রতিনিধি পরিষদ] সাম্প্রতিক মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভরাডুবি ঘটেছে। কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা-সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের কাছে। এই পরাজয়ের পুরো দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন এবং রিপাবলিকানদের সাথে রাষ্ট্র-সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তিনি কম্প্রোমাইজ করে চলার প্রস্তাব তথা নীতিমালা ঘোষণা করেছেন। সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরাজয়ের ক্লান্তি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা ‘বৃহৎ' গণতন্ত্রের দেশ ভারত সফরে এসেছেন। ব্যক্তিগতভাবে প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ডেমোক্র্যাট দলের জনপ্রিয়তায় ধসের দায়বহন করে অনুজ্জ্বল একটা ইমেজ নিয়ে তিনি ভারতে এসেছেন। তবে এটা তাঁর পূর্বনির্ধারিত সফর।
ভারতেও মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজীর রয়েছে। তবে ভারতে গণতন্ত্রের উপরিভাগে যে চকচকে রংয়ের প্রলেপ, তার নিচে রয়েছে কলংক-দাগ এবং কদর্যতার ক্ষত-চিহ্ন। এই নিয়েই ভারত জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদে ‘ভেটো' শক্তির অধিকারী স্থায়ী সদস্য হতে চায়। পত্রিকান্তরের খবর : ভারতের নিরাপত্তা পরিষদ-সদস্যপদ অর্জনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মদদ দেবে। এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব অবশ্যই ওবামা-মনমোহনের আলোচনার বিশেষ জায়গা জুড়ে থাকবে। প্রেসিডেন্ট ওবামার নিরাপত্তার অজুহাতে মার্কিন নৌ-বাহিনীর রণতরী আরব সাগরে মুম্বাই উপকূলে টহল দিতে শুরু করেছে। এটা ভারত-মার্কিন ভবিষ্যৎ সামরিক ‘মর্দামীর' একটা আগাম মহড়া বলেই অনেকে মনে করেন। এতে স্বীয় নিরাপত্তায় চীন এবং চীনের সাথে তলে তলে সামরিক ও স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা পাকিস্তানের জন্য সতর্ক বার্তাও রয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ভারতের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ভারতকে এ অঞ্চলের একক মোড়ল হিসেবে তাকে ইজারাদার বানিয়ে যায়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হবে সুদূরপ্রসারী। ভারত-মার্কিন মদদে নিজেকে যতোই শক্তিশালী ও বেপরোয়া ভাবুকনা কেন, এর প্রতিক্রিয়ায় তার জন্য যে ধরনের মানবিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, তা-ও তাকে সামলাতে হবে। ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণ্য গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত একটি দেশের ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। এটা তাকে করতে হচ্ছে গান্ধীজির ‘অহিংস' নীতি ও পন্ডিত নেহেরুর কিংবদন্তীর জোট নিরপেক্ষ নীতির মসৃণ গালিচা পদদলিত করে। অবশ্য ভয়ংকর গণহত্যার রক্তাক্ত ইতিহাসের খলনায়ক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ সাহেবের উত্তরসূরী প্রেসিডেন্ট ওবামা রাষ্ট্রীয় সকল অপকর্ম ও গণহত্যার কলঙ্ক নিয়ে রাজঘাটে ‘মহাত্মা' গান্ধীর সমাধিতেও শ্রদ্ধা জানাতে যাচ্ছেন। গান্ধীজি তার হত্যাকারী উগ্র জনসংঘ নেতা নাথুরাম গডসে-কে ক্ষমা করতে পারলেও লাখো লাখো নিরপরাধ শিশু-নারী-পুরুষের ঘাতক দেশের প্রেসিডেন্ট ওবামার পদার্পণে হয়তো আত্মায় পীড়ন অনুভব করবেন। তবে ভারতের বিশ্বশক্তি হবার জন্য গান্ধীজিকে এতটুকু ত্যাগ স্বীকার না করলেই বুঝি চলে না! বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নিরাপত্তা পরিষদে সদস্যপদ লাভের জন্য আগাম সমর্থন ব্যক্ত করে এসেছেন। ভারত নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হলে বাংলাদেশ অন্তত : ‘মোর চাচা চৌকিদার' বলে বড়াই করতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যবর্তী নির্বাচনে মার্কিন জনমতের এই ইউ-টার্নকে কীভাবে দেখছেন, আমরা জানি না। তবে ১৮/১৯ মাস আগে বাংলাদেশের জনগণ যে প্রেক্ষাপটে ও প্রত্যাশ্যয় আওয়ামী লীগকে ম্যান্ডেট দিয়েছে, সে অবস্থাটি এখন নেই। জনগণের পক্ষে সে কথাটিই বিরোধীদল বলছে। সংসদে ৩০০ আসনের মধে মাত্র শতকরা ১০ ভাগ অর্থাৎ ৩০টি আসনের অধিকারী হলেও ভোটপ্রাপ্তির অনুপাত বিরোধীদলের ৩০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার যতো দক্ষ ও সফলই হোক না কেন, ক্ষমতার হানিমুনের আমেজ তাদের বেশিদিন স্থায়ী হয় না। স্বভাবগতভাবে বাংলাদেশের মধ্যবিত্তশ্রেণী এন্টি এস্টাবলিশমেন্ট, সরকারের নিন্দুক। সাধারণ মানুষও অল্পসময়ে বেশি পেতে চায়। ফলে সরকারের পক্ষের জনমত উল্টোমুখী হতে সময় লাগে না। উল্টো জনমতের সবটুকু বিরোধীদলের পক্ষে না আসলেও সরকারের পক্ষে আর তারা নেই এবং মধ্যবর্তী নির্বাচন হলে তারা আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয় দফায় যে ভোট দেবে না, এটা ধরে নেয়া যুক্তিযুক্ত। প্রতিদিন দেশের গণমাধ্যমগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের নীতি-অবস্থান ও সফলতা-ব্যর্থতা, দক্ষতা-অদক্ষতার ওপর যেসব অনলাইন জরিপ চালাচ্ছে, তার শতকরা ৮০ ভাগই সরকারের বিপক্ষে থাকে। এটাকে যদি জনমতের প্রতিফলন হিসেবে ধরে নেই, তাহলে সরকার সংখ্যালঘিষ্ট জনমতের ওপর চাপাবাজি-সন্ত্রাসের জোরে দাঁড়িয়ে আছে। সংসদীয় সংখ্যাতাত্তিক অহমিকার শুভঙ্করের ফাঁকি প্রকৃত জনমতকে রিফ্লেক্ট করে না।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের ‘নিঃসঙ্গ শেরপা'র মতো দল ও সরকারের বাড়াবাড়ি ও ব্যর্থতার বিরুদ্ধে বিবেকের প্রহরীর মতো যা কিছু বলছেন, তা ‘হাইব্রীড' আয়ামী লীগারদের দাপটে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গুরুত্বহীন প্রলাপ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এককালের নিষ্ঠাবান আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রবীণ সাংবাদিক ফকির আবদুর রাজ্জাক ওবায়দুল কবীরকে সমর্থন করে লিখেছেন: ‘‘সাধারণ মানুষ, সমর্থক গোষ্ঠী ও কর্মীরা ধৈর্য রাখতে পারছে না। তারা এখনই সুফল হাতে পেতে চায়। এ চাওয়ায় অস্বাভাবিকতা সকলেও অন্যান্য নয়। অতীতে যারা দেশের এজরুরি খাতগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগায়নি, তারা দেশপ্রেমের পরিচয় দেয়নি সত্যি, কিন্তু এ সরকারের বিলম্বেতেও জনগণ খুশি নয়।
ওবায়দুল কাদের এসব অগণিত ধের্যহারা মানুষের মনের কষ্ট হৃদঙ্গম করেই ক্ষমতাসীন সরকার ও দলের অভ্যন্তরে থেকেও বেসুরো বক্তব্য রেখে তার নিজের মনের দুঃখ প্রকাশ করেছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর সার্বিক অবস্থা যে ভালো না, তা সরকার গঠনের পর থেকেই রাজনীতি সচেতন মানুষ লক্ষ্য করেছে। সরকারও দলের মধ্যে ন্যূনতম বিভাজন বা পার্থক্য তৈরি করে দলের স্বাভাবিক সাংগঠনিক গতি সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে নেতারা। এ ব্যাপারে দলের সভানেত্রী মাঝেমধ্যে চেষ্টা করেও এখনো সফল হতে পারেনি। দলের জন্য জরুরি ছিল একজন সার্বক্ষণিক সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু সেখানেও মন্ত্রিত্ব ও সম্পাদক একত্রিত হয়ে কেবল নৈরাজ্যই বাড়িয়ে চলেছে। সময় আসলেই দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এখন দল ও সরকারের ব্যাপারে মূলত শেখ হাসিনাকেই কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, সব ব্যর্থতার দায়ভার অন্য কেউ নয়, তাঁর ওপরই বর্তাবে। [আত্মসংযম, আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির সেই কথা- ফকীর আবদুর রাজ্জাক, সংবাদ, ৬/১১/১০] সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার নেতা বি. চৌধুরী বলেছেন : ‘কিছু এমপি এবং থানার গারোগা এক হয়েছে আপনাকে [প্রধানমন্ত্রী] ডুবাবার জন্য। তারা বিভিন্ন স্থানে হ্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সন্ত্রাস, রাজনৈতিক হয়রানি ও দুর্নীতি সবই তারা করছে। শিক্ষা না নিলে শেখ হাসিনার সরকারের জন্য ওবামার নির্বাচনী ফলাফলের পরিণতি হওয়া বিচিত্র নয়। (ইনকিলাব, ৬.১১.১০]
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের অপপ্রচার মোকাবিলা তথা সরকারের সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় নেতাদের ব্রীফ করেছেন। তাদের জন্য রাজনৈতিক ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছেন। তবে আমরা মনে করছি, বিরোধীদলকে মোকাবিলার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী একাই একশ। তাঁর সাথে আছেন সৈয়দ আশরাফ, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, শামসুল হক টুকু, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, মাহবুবুল আলম হানিফ প্রমুখের মতো চ্যাম্পিয়ন শব্দ সন্ত্রাসীরা। এরা শতকণ্ঠে কোরাসে অশ্রাব্য শব্দ চয়নে বিরোধী দলকে হাইকোর্ট দেখিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলকে গাল-মন্দ দেবার জন্য দলীয় নেতাদের জিহবাকে ধারালো করার জন্য প্রশিক্ষণ শিবির খুলেছেন। তাও ভালো। তাহলে এবার পুলিশী সন্ত্রাস ও দলীয় ‘সোনার ছেলেদের' তান্ডব থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রেহাই দিন! যা করার শব্দ-সন্ত্রাসেই করুন। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আর চালাবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল ও বিনামূল্যে সার দেবার কথা তিনি বা তাঁর দল-বলেননি। এটা বিরোধী দলের অপপ্রচার। নির্বাচনের সময় তাঁরা কে কী বলেছেন, বিরোধী দল বা মিডিয়া তা স্মরণ রাখলেও সাধারণ মানুষ কী তা মনে রাখে? ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেবার প্রসঙ্গ টেনে এনে প্রধানমন্ত্রী একটি বিস্মৃত রাজনৈতিক বকাওয়াজকে চাঙ্গা করলেন। রবীন্দ্রনাথের গল্পের নায়িকা কাদম্বিনী যেমন মরিয়া প্রমাণ করেছিল যে, এর আগে তার মৃত্যুর খবরটি ছিল ভুয়া, তেমনি প্রধানমন্ত্রী ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াবার কথা অস্বীকার করে প্রমাণ করলেন যে, তিনি কথাটি আসলেই বলেছিলেন। আর বলেছিলেন বলেই অপরাধপ্রবণ উপলব্ধি থেকে তিনি তাঁর ঐ বেফাঁস উক্তিটির কবর দিতে চান। কিন্তু কোথায়, কখন শেখ হাসিনা ১০ টাকা কেজি চাল ও বিনামূল্যে সার দেবার কথা বলেছেন, তা উদ্ধৃত করে রিপোর্ট করলে প্রধানমন্ত্রীর দুর্বল স্মৃতিশক্তি ফিরে আসতেও পারে। প্রধানমন্ত্রীর মুখে এতটা স্থুল কথা শোভা পায় না। বরং এ কথা না তুললেই তিনি ভালো করতেন। ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ার কথা শেখ হাসিনা যখন বলেছিলেন, তখন সাধারণ মানুষও তাঁর কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। তারা ভেবেছিল, সরকার অন্ততঃ ১৫/২০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াতে পারবে। কিন্তু খোলা বাজারে সরকার যে নিম্নমানের চাল বিক্রি করছে তার কেজিও ২৪ টাকা। এ চাল সংগ্রহ করতে সময় ও ভোগান্তি ছাড়াও ওজনে সঠিক হয় না। ফলে কার্যত এর দামও কেজি প্রতি প্রায় ৩০ টাকাই পড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী এর আগে বলেছেন, চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকলে চালের কেজি ৮০ টাকা হতো। জনগণের প্রশ্ন, সেটা কীভাবে? অনেকে মনে করেন, তখন আওয়ামী লীগই বাজার ম্যানপুলেট করে এটা করতো। তবে এবারে সরকারের চেয়ে সিন্ডিকেট শক্তিশালী হওয়ায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন হাত নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান সিন্ডিকেট অস্বীকার করলেও অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সরকারের মধ্যে সিন্ডিকেট ঢুকে গেছে। সিন্ডিকেট সরকারের লেজ না মাথায় উঠে বসেছে তা তিনি বলেননি। চাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে কথা উল্টে ফেললেন, তাতে হয়তো আর কিছুদিন পর বলবেন, তিনি ‘দিনবদলের' কথাও তিনি বলেননি। আদালত প্রধানমন্ত্রীকে ‘হট হেটেড' বললেও জনগণ তাঁর কাছে ওজনদার কথাই আশা করেন।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সতীশচন্দ্র রায় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সম্প্রতি রিপোর্টার্স ইউনিটের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন : প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের ব্যক্তিদের নিয়ে আমি ভীত । ...বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কিছু হয়ে গেলে দল থাকবে, তবে আওয়ামী লীগ যে কোথায় যাবে বলা মুসকিল। বঙ্গবন্ধু ও ৪ নেতার আশপাশের লোকদের সহায়তায় তাদের হত্যা করা হয়েছিল। (আমাদের সময়, ৬-১১-১০)
বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী এমকে আনোয়ার প্রশ্ন করেছেন, শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ১৩ দিনের মাথায় কেন নিহত হন জিয়া? তদন্ত করলে বোঝা যাবে, শহীদ জিয়ার হত্যাকান্ডের জন্য কে দায়ী। তবে জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে ছদ্মবেশে শেখ হাসিনা আখাউড়া সীমান্ত পথে আবারও কেন ভারত যেতে চেয়েছিলেন, সে রহস্য আজও উদঘাটিত হয়নি এবং ১৯৮২ সালে নির্বাচিত বিএনপি সরকার উৎখাত করে সেনাপ্রধান এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে শেখ হাসিনা বলেছিলেন : ‘আই এ্যাম নট আনহ্যাপী।'
বিএনপি এককভাবে ও জোটগতভাবে এক দশক ক্ষমতায় থেকেও জিয়া হত্যায় আন্তর্জাতিক কানেকশন ও সিভিলিয়ান ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা। ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই কেন বলেছিলেন, মুজিব হত্যার বদলা নিতে জিয়া হত্যার গোপন মিশনে অনুমোদন চেয়ে ‘র' তাঁর কাছে ফাইল উপস্থাপন করলে তিনি তাতে অনুমোদন দেননি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কিংবা বেসরকারি আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত দল নিয়োগ করে বিএনপি কেন জিয়া হত্যায় ভারত ও তাদের দেশীয় এজেন্টদের ভূমিকা নির্ধারণ করতে পারেনি।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন : স্বামীর হত্যাকারীর দেয়া বাড়ি বেগম খালেদা জিয়া নিলেন কিভাবে? তাহলে এরশাদ জিয়া হত্যাকারি বলেই কি প্রধানমন্ত্রী তাকে অাঁচলের আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করছেন? এ প্রশ্ন কেউ করলে তাকে কি দোষ দেয়া যাবে? এরশাদ তার নিজের সম্পত্তি জিয়া পরিবারকে দেননি। সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্ত তিনি কার্যকর করেছেন মাত্র। জিয়া হত্যার খুনিকে গলার মালা করে রাখবেন, আর শহীদ জিয়াকে দেয়া সেনাবাহিনীর বাড়িটি কেড়ে নিয়ে বর্তমান সরকার সেনাবাহিনী ও জনগণের আবেগকে পদপিষ্ট করতে চাইছে। এ বাড়ি ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা দেখানোর চেয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা কি আরও মহৎকর্ম নয়?
মুদ্রাযুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শংকাগ্রস্ত করে তুলছে

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter