যে কোনো মূল্যে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। এ বিষয়ে সরকারের তৎপরতাই আমাদের প্রত্যাশিত। আমরা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের শাস্তি এবং নাগরিক নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিগত কয়েক মাস ধরে রাজধানীজুড়ে হঠাৎ করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ও লুটের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে স্বর্ণের দোকানগুলোয় একের পর এক দুর্ধর্ষ চুরি ও দিনে দুপুরে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা সাধারণ মানুষকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিষয়ে আতঙ্কিত করে তুলেছে। পল্টনের মতো জনবহুল ও ব্যবসাবান্ধব এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও অর্থ চুরির ঘটনার পর ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা এসে ভর করেছে। একশ গজ দূরত্বে স্থানীয় থানা থাকা সত্ত্বেও মালিক পক্ষের নিজস্ব সতর্কতা, মার্কেটের অভ্যন্তরে দুই দফায় আলাদা পাহারার ব্যবস্থা রাখা সত্ত্বেও যদি চুরি, ডাকাতি হয়, তবে তা স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। দুঃখজনক হলো, এসব ঘটনা সম্পর্কে দ্রুত কারণ অনুসন্ধান ও জড়িতদের শাস্তি না হওয়ায় এ ধরনের অরাজকতা রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং অপরাধীরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে একের পর এক অঘটন ঘটানোর দুঃসাহস দেখিয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার দিনেদুপুরে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের এনসিসি ব্যাংকের নিচে দুজনকে গুলি করে আটাশ লাখ টাকা ছিনতাই এবং গত রোববার রাতে রামপুরার একটি স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা এ কথারই সত্যতা প্রমাণ করে। খোদ রাজধানীর বুকে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে সারা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সহজেই অনুমান করা যায়।
খবরে প্রকাশ, কিচেন ফিডসের পরিচালক দুজন স্টাফকে সঙ্গে নিয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে কর্মস্থল ধানম-ি থেকে প্রাইভেটকারযোগে এনসিসি ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায় যান। সেখান থেকে টাকা উত্তোলনের পর গাড়িতে ওঠার সময় ৭/৮ জনের একটি সশস্ত্র ছিনতাইকারি দল তাদের দিকে গুলি ছুড়ে দুজনকে আহত করে টাকার ব্যাগটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। অথচ ব্যাংক ও আশপাশের এলাকায় যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। তবে এ ধরনের ছিনতাই সংঘটনের পেছনে অভ্যন্তরীণ কারো না কারো সম্পৃক্ত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কারো পক্ষে কে কখন কোথায় কী পরিমাণ টাকা উত্তোলন করছে তা জানার কথা নয়।
রাজধানীতে একের পর এক চুরি ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইজিপি ব্যাংক, স্বর্ণের দোকান ও পেট্রোল পাম্পগুলোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও গত রোববার রাতে রামপুরার ১৫২ নাম্বার ওয়াপদা রোডের সুমন জুয়েলার্সের সাতটি তালা ভেঙে সংঘবদ্ধ চোররা দোকানের সিন্ধুকসহ ৭০ ভরি স্বর্ণ, আড়াই কেজি রূপা ও নগদ ৮২ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় যে, তাহলে কি আইজিপির নির্দেশ যথাযথ মানা হচ্ছে না অথবা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে। কারণ সংঘবদ্ধ গ্রুপের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার ঘটনা তো অতীতে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। তবে যে কোনো মূল্যে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। এ বিষয়ে সরকারের তৎপরতাই আমাদের প্রত্যাশিত। আমরা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের শাস্তি এবং নাগরিক নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
No comments:
Write comments