Flickr

Friday, 29 June 2012

আদালত-সংসদ মুখোমুখি

Posted by   on

আদালত-সংসদ মুখোমুখি
জাতীয় কিছু পত্রিকা সংসদ এবং বিচার বিভাগ মুখোমুখি বলে মন্তব্য করেছে। সংসদ ও হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে গত কয়েকদিনে এমন কিছু কথা উঠে এসেছে, যার কারণে সংসদ এবং বিচার বিভাগ মুখোমুখি বলে মন্তব্য করার অনভিপ্রেত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করা হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় সংসদে কতিপয় সদস্য বেঞ্চটির বিচারকদের উদ্দেশ করে তীব্র প্রতিক্রিয়ামূলক কিছু মন্তব্য করে। এইভাবেই রাষ্ট্রের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই পাল্টাপাল্টি অবস্থার সূত্রপাত ঘটেছে স্পিকারের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। স্পিকার সে বক্তব্যে হাইকোর্টের একটি রায় প্রসঙ্গে সংসদের একটি আলোচনায় কিছু কথা বলেছিলেন। আমাদের মতে, স্পিকারের সে বক্তব্যটি নীতিকথা ধরনের ছিল। যদিও পরোক্ষে বিচার সম্পর্কে কিছু কথা বলা হয়েছে। পরোক্ষ এই বক্তব্যকে নীতিকথা ধরে নিলে কোনও সমস্যা সৃষ্টি হতো না। কিন্তু হাইকোর্টের বেঞ্চ স্পিকারের বক্তব্যকে আমলে নেন এবং স্পিকারের বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বলাসহ স্পিকার সম্পর্কে আরো কিছু মন্তব্য করা হয়। সন্দেহ নেই হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে বলা এই বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টের সম্মান রক্ষার জন্যেই এবং বেঞ্চের সর্বশেষ বক্তব্যে স্পিকারের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের সম্মান সংরক্ষণের আহবান জানানো হয়। এতদসত্ত্বেও বলা যায়, বেঞ্চের বক্তব্যে স্পিকারের কিছু পার্সনাল বিষয়ও ছিল। কিন্তু এই বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া হিসেবে সংসদের কিছু সদস্য সংশ্লিষ্ট বিচারপতি সম্পর্কে যে বিস্ফোরক ধরনের মন্তব্য করেছেন তা সংযমের সীমা অতিক্রম করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। এই বক্তব্যে কতিপয় সদস্য সংশ্লিষ্ট বিচারপতি সম্পর্কে অত্যন্ত কঠোর ও নগ্ন ব্যক্তিগত মন্তব্য করেছেন, যা কোন দিক দিয়েই অভিপ্রেত নয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্যে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের বিশ্বাস এই ধরনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং ব্যক্তি পর্যায়ের আক্রমণ আমাদের উচ্চতর আদালত এবং মহান সংসদের জন্যেই মর্যাদাহানিকর। জাতি হিসেবে আমরা বাইরের দুনিয়ার কাছে খুব অসহনশীল হিসেবে গণ্য হবো।
সুতরাং, গোটা ঘটনা জাতির জন্য দুঃখজনক ও লজ্জাকর। এই বেদনাদায়ক ঘটনা আমাদের উচ্চ পর্যায়ের সংযমের লেবেলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমাদের পারস্পরিক সহনশীলতার মাত্রা অভিপ্রেত যৌক্তিক পর্যায়ে থাকলে জাতিকে লজ্জার মধ্যে পড়তে হতো না। আমাদের মনে হচ্ছে প্রশাসনের ক্ষেত্রে আমরা যে অসহনশীলতার প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি, যেভাবে শীর্ষ রাজনীতিকরা অন্যায়ভাবে অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন, যেভাবে সর্বজনমান্যদের মানহানি ঘটবার প্রবণতা বাড়ছে তারই প্রকাশ ঘটেছে সম্মানিত বেঞ্চ এবং মহান সংসদে। আসলে সংসদ এবং বিচারালয় কোনটি বিচ্ছিন্ন কোনও দ্বীপ নয়। রাষ্ট্রে যা ঘটে, প্রশাসনে যা ঘটে চলে, জনগণ ও সরকারের প্রতিপক্ষের সাথে যা ঘটানো হয় তা যে নীতিহীন, অস্থির ও অসহনশীল পরিবেশের সৃষ্টি করে তা বিচারালয় ও সংসদকেও পীড়িত ও প্রভাবিত করে। প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা যদি পীড়িত হয় তাহলে সংসদ ও বিচারালয় সুস্থ থাকতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন সার্বিক সুস্থতা। এর জন্যে প্রয়োজন আইনের শাসন এবং শাসন ব্যবস্থায় জনমতের প্রতিফলন, কোনও স্বৈরাচারিতা নয়। তাহলেই শুধু রাষ্ট্রের সব অঙ্গ সুস্থভাবে কাজ করতে পারবে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter