Flickr

Saturday, 20 October 2012

রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাস, বাঙালি হত্যা, আদিবাসী সমাচার

রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাস, বাঙালি হত্যা, আদিবাসী সমাচার
পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষার উপায় কি?
 
৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল এই বাংলাদেশের এক- দশমাংশ অঞ্চল ৫ হাজার ৯৩ বর্গমাইল ঘিরে অবস্থান করছে চেঙ্গী, মাইনী, কাছালং বিধৌত প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের সুদর্শন ক্ষেত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের অনতিদূরে পাহাড়ঘেরা তিনটি জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। বিগত তিন যুগ ধরেই পাহাড়ে বিস্তার করছে দারুণ অস্থিরতা। জনসংখ্যার ৪৮% বাঙালি ও ৫২% উপজাতীয় সম্প্রদায়। তারা সবাই কতিপয় উপজাতীয় নেতার একগুঁয়েমি, হামবড়া মনোভাব, উচ্চাভিলাষ ও রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটির শিকার। কিন্তু সাধারণ উপজাতি ও বাঙালি জনগোষ্ঠী ক্রমশই ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ঐসব মতলববাজ নেতাদের কাছ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা চায় দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ় করতে, বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব পাহাড়ে চালুর মাধ্যমে মানবাধিকার ও নাগরিক সমঅধিকারই তাদের একমাত্র প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাস : পাহাড়ে ভিন্নমাত্রায় ছড়িয়ে আছে রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাস। এতে তারা একঢিলে দুইটি করে পাখী মারছে। একদিকে খুন, ডাকাতি, সন্ত্রাস, মুক্তিপণ, বন্দুকযুদ্ধ, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে জনমনে ত্রাস ও আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। বাঙ্গালীরা ভীত ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। পার্বত্যবাসী বাঙালি ও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে আতঙ্কগ্রস্ত রাখা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের পেশীশক্তি ও অর্থভান্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি বাঙালি জনগোষ্ঠীকে তারা বরাবরই বলে আসছে বহিরাগত, মুসলিম অনুপ্রবেশকারী, রিফুজী, সেটেলার, দখলদার বাংলাদেশী সামরিক জান্তা ইত্যাদি নামে। বিভিন্ন সমাজবিরোধী তৎপরতার মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিজেদের অর্থবল ও জনবলকে সমৃদ্ধ করছে। অন্যদিকে চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ সন্ত্রাস ইত্যাদি আতঙ্কে থেকে বাঙালি জনগোষ্ঠী পাহাড়ে বসবাসের ঝুঁকিমুক্ত হতে সমতলে ফেরত যাবার মানসিকতা তৈরিও এর আরেকটি উদ্দেশ্য। পাহাড়ে বরাবরই জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফ-এর অস্ত্রধারী ক্যাডাররা ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। এর মূল কারণ হলো আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজির স্পট দখলে নেয়া এবং নিজেদের দল ভারী করা। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হলেও এসব সন্ত্রাসী তথাকথিত জুমল্যান্ড নামে পৃথক রাষ্ট্র কায়েম ও বাঙালি বিদ্বেষী রোডম্যাপ বাস্তবায়নে দারুণভাবে ঐক্যবদ্ধ। নীতিগত কোন বিরোধ তাদের নাই, তাদের বিরোধ হল অর্থের লালসা ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য।
বাঙালি হত্যা : পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসীদের হাতে (শান্তিবাহিনী) এ যাবত প্রায় ৩৫  হাজার বাংলাদেশীকে জীবন দিতে হয়েছে। পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা রাতের অাঁধারে বাঙালিদের ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। ‘তোরা সমতলে চলে যা, বাঙালি আর আর্মি হিলটেকে নো-থাকিব'। বাঘাইছড়ির শতাধিক বাঙালি কাঠুরিয়া হত্যাকান্ড (১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর) তাদের বৃহত্তম হামলার অন্যতম। শুধুমাত্র সেদিনকার শেখ হাসিনার সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়টি রাজনৈতিক এজেন্ডায় অগ্রাধিকার প্রদান কর্মসূচিতে না নেয়াতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে লংগদু থানায় বসবাসরত শতাধিক বাঙালি শ্রমিককে চাঁদা নির্ধারণের জন্য আলোচনার ফাঁদে ফেলে সেদিন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তাদেরকে চোখ বেঁধে, দুইহাত পিছমোড়া করে পাকুয়াখালীর গহীন জঙ্গলে ৫ জন করে এনে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছিল সন্তু লারমা বাহিনী। পাহাড়ের নিচে বিশাল খাদে ফেলে দেয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত হাত-পা, চোখ কান, ছেঁড়া মরদেহ সেলাই করে লংগদু থানা পরিষদ মাঠে জানাযা করা হয়েছিল। তন্মধ্যে ৩৪টি লাশ ৩৪টি কবরে শায়িত করে লংগদু মাঠে গণকবর দেয়া হয়, যার জীবন্ত আলামত আজো সেখানে রক্ষিত আছে। এছাড়া আরো বহু বাঙালি হত্যাকান্ড ঘটেছে যার লোমহর্ষক বর্ণনা আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাসকে রিষ্ট-পুষ্ট করে।
আদিবাসী সমাচার : পাহাড়ে উচ্চমানের চক্রান্ত শুরু হয়েছে আদিবাসী নামকরণটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এজন্য সন্তু লারমা, দেবাশীষ রায় গং জাতিসংঘে পর্যন্ত গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই। ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুর বা দক্ষিণ সুদানের মতোই জাতিসংঘকে ব্যবহার করে বিনা রক্তপাতে গণভোটের মাধ্যমে জুমল্যান্ড হাসিল করা। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কোথাও সন্তু লারমারা নিজেদের আদিবাসী বলে উল্লেখ করে নাই, বলেছে- উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকা বলে। যদিওবা সেটাও বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। সরকারের সাথে শান্তিচুক্তি করে এখনো যাবতীয় বে-আইনী অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, সশস্ত্র ক্যাডাররা আত্মসমর্পণ না করেই তারা সরকারি ১০০% সুযোগ সুবিধা লুটে নিচ্ছে। অথচ সরকারকে না জানিয়ে গোপনে তথাকথিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্যকে জাতিসংঘ আদিবাসী ফোরামের প্রতিনিধি বানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করানো হয়েছিল। তাদের মনগড়া একপেশে ফরমায়েশী রিপোর্ট জাতিসংঘে জমা দিয়ে কাকতালীয়ভাবে পাহাড়ের বাঙালি জনগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীকে অভিযোগের কাঠগড়ায় এনে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক বাহিনী পাঠানোর আবদার করা হয়েছে ঐ রিপোর্টে। আজ আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবির পেছনে সন্তু লারমাদের মূল উদ্দেশ্য যে কত জঘন্য ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আলামতের বিষয়, তা সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশী প্রতিনিধি ও আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি অাঁচ করে ইতোমধ্যেই যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা দেশবাসী ঈগল দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছে ও সাধুবাদ জানিয়েছে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইকোনোমিক কমিশন (EEC), ইউএনডিপি, ডানিডা, একশন এইড, কতিপয় দূতাবাস ও এনজিও তথাকথিত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের একতরফা দাবি তুললেও তারা কখনো জেএসএস বনাম ইউপিডিএফ রক্তক্ষয়ী বন্দুকযুদ্ধ ও শান্তিচুক্তির বহুশর্ত লঙ্ঘনের জন্য সন্তু বাবুদের মোটেও জিজ্ঞাসাবাদ করে না। পার্বত্যাঞ্চলে শতাধিক খৃস্টান প্যাগোডা তৈরি হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের চেয়ে খৃস্টধর্মে দীক্ষিতকরণ প্রবণতা বেশি হলেও তা নিয়ে সন্তু লারমাদের কোন প্রতিবাদ নাই। বরং তারা মাঝে মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামাইজেশন করা হচ্ছে, জোর করে উপজাতীয়দের মুসলিম বানানো হচ্ছে ইত্যাদি ভুয়া ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে মিসগাইড করে আসছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় খৃস্টানে দীক্ষিতকরণ প্রক্রিয়াকে ইউএনডিপি অধিকাংশ ইউরোপিয়ান দেশ ও এনজিও উৎসাহ দিয়ে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইতোমধ্যেই স্বশাসনের আড়ালে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে স্থানীয় প্রশাসন ক্রমশ সরে যাচ্ছে। তথাকথিত শান্তিচুক্তির কারণে অনেকগুলো সরকারি বিভাগ পাহাড়ের আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে। সন্তু লারমা এখনো সেই পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের পদে থেকে, প্রজাতন্ত্রের লাভজনক যাবতীয় সুবিধাদি ভোগ করছেন এবং সকল অত্যাধুনিক তথ্য প্রযুক্তি, অর্থবল, জনবল ও সামগ্রিক শক্তি ব্যয় করছেন হীন স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। সর্বশেষ জাতিসংঘে আদিবাসী ফোরামের মাধ্যমে, আইএলওকে ব্যবহার করে জাতি ও সরকারকে ঘুমন্ত রেখেই তারা লক্ষ্য পূরণের অপচেষ্টা করেছে। বর্তমানে পার্বত্যাঞ্চলে মূলত সরকারি প্রশাসন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সন্তু লারমা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সেখানকার সরকার বাংলাদেশ সরকার না হয়ে (Govt. of Santu Larma, By the Santu Larma, for the Santu Larma) বলেই কাজ চালাচ্ছে। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর প্রশাসনই তাদের সীমিত শক্তি নিয়ে ও পাহাড়ে ঝুঁকির মধ্যে সিভিল প্রশাসনের অনুরোধে জনগণের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এমতাবস্থায় যদি সমস্ত সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়, তবে ছলেবলে কৌশলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে হয়তো বা জুমল্যান্ডের ভাগ্যই বরণ করতে হতে পারে। তাই দেশের এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কবল থেকে রক্ষার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়াবলী বাস্তবায়নের আহবান জানাচ্ছি:
১। অবিলম্বে বৃটিশ হিলট্র্যাক্টস মেনুয়েল এক্ট ১৯০০ বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
২। প্রথাগত ভূমি অধিকারের নীতি রহিত করে পাহাড়ে ভূমি জরিপ (Cadastral Survey) শুরু করতে হবে।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যেসব ধারা পবিত্র সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সেগুলোকে সংশোধন/পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
৪। পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে নতুনভাবে নির্বাচন দিয়ে নবতর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিতে হবে।
৫। পাহাড়ের সাজেক, পানছড়ি, নানিয়ারচর, দীঘিনালা, রাজস্থলী, কুতুবছড়ি, মানিকছড়ি, রামগড়, বরকল, থানছি, লামা, রুমা, কাউখালী, ঘাগড়া, জুরাছড়ি ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের স্থল থেকে চিহ্নিত পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের আটক ও সকল বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
৬। সকল বিদেশী দূতাবাস, রাষ্ট্রদূত, বিদেশী সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন ইত্যাদির কাছে মাঝে মাঝে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বাস্তব চিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে হবে এবং যারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে ভূ-সন্ত্রাসীদের বাঁচাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে জোরদার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
মনিরুজ্জামান মনির : লেখক : পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Tuesday, 9 October 2012

নারী ও ধর্মব্যবসায়ী পশ্চাৎগামী চিন্তা চেতনা

ঐতিহাসিক ভাবেই পুরুষরা নারীদের সকল অধিকার খর্ব করে গৃহ অভ্যন্তরে নিরাপদ উৎপাদন যন্ত্র হিসাবে নারীর ভূমিকা সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছে চিরকাল। সে কূট উদ্দেশ্য অবশ্য সফল হয় নি। এসব কথা এখন ফেলে আসা নারী ইতিহাসের লোনা জলের নীরব স্বাক্ষি। মানুষের মনোজাগতিক চিন্তা চেতনা ক্রম বিবর্তনের হাত ধরে পশ্চিমা দেশগুলোতে নারী ইতিমধ্যে লাভ করেছে সমঅধিকার।উন্নত দেশগুলোতে নারীরা আস্বাদন করেছে সম অধিকারের পূর্ণ স্বাদ। ১৯২৩ সালে আমেরিকা এক আইন বলে নারী পুরুষ সমঅধিকার ধারনাটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। এর পরে পশ্চিমা দেশ গুলোতে নারীর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়ে যায় দ্রুত। কর্মক্ষেত্রেগুলোতে নারীরা পেয়ে যায় স্থান, দক্ষকর্মী হিসাবে নারী অবস্থান নিয়েছে দ্রুত, পেয়েছে সুখ্যাতি। বাস, ট্রাম রাস্তা ঘাট, সাগর পাড়, পার্ক সর্বত্রই দিনে রাতে নারীরা মুক্ত চলাফেরার স্বাধীনতা লাভ করে। সেসব দেশগুলোতে নারীরা আজ বিমান নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে সুনীল আকাশে, ডুবুরির পোষাক চেপে চষে বেড়াচ্ছে সাগর গর্ভে, বিজ্ঞানী হয়ে বুদ হয়েছে আবিষ্কারের নেশায়, ডাক্তার হয়ে সেবা দিচ্ছে, আইনজ্ঞ হয়ে করছে বিচার, তুলির আঁচড়ে আঁকছে ছবি, কাদামাটি দিয়ে তৈরী করছে ভাষ্কর্য, প্যরাসুট নিয়ে শূণ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছে হাজার ফুট উপর থেকে, রাস্ট্র নায়ক হয়ে শাসন করছে দেশ। আর কি চাই!

এতো গেল পশ্চিমা নারীদের কথা। এবার আমাদের দেশের নারীদের ভূমিকা একটু খতিয়ে দেখি।
দুই দুইবার নির্বাচিত সরকার প্রধান শেখকন্যা একজন চটুল কথার বলিস্ট নারী, বিরোধী দলের অনমনীয় কান্ডারী যার ভান্ডারে সঞ্চিত আছে দুইবার ক্ষমতারোহনের টাটকা স্বাদ ভক্তকুলের নিকট তিনিও একজন আর্দশনারী, জৌলুসহীন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন নারী, আবার বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী একজন উচ্চশিক্ষিত নারী, সফল কৃষিমন্ত্রী রাজপথের অগ্নিশিখা যার আছে স্বাধীনতাত্তর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা তিনিও একজন ইস্পাত কঠিন নারী। একি সময়ে ক্ষমতার শীর্ষে এতগুলো নারীর উপস্থিতি বিশ্বের আর ২য় কোন দেশে আছে কিনা এই অধমের স্বল্প জ্ঞান পরিসীমায় সেই তথ্য এখনো অধরা। তাছাড়া বিরোধী দলের ডাকা হরতাল পালনের উছিলায় প্রায় রাজপথ দাপিয়ে বেড়াতে দেখি বেশ কিছু সাহসী নারীকে।


আমাদের নিতান্তই দূর্ভাগ্য সুজলা বঙ্গভূমির কলুষিত রাজনৈতিক অঙ্গনে একসঙ্গে এত ক্ষমতাধর নারী প্রতিনিধির অবস্থান থাকার পরেও অবাধ মুক্ত রাজনীতি চর্চার সুযোগ নিয়ে হু হু করে বাড়ছে পশ্চাৎমুখি ভাবধারার লোকজনের সংখ্যা যারা নারীদের ঘরের ত্রিসীমায় আটকে রাখতে বিশেষ পছন্দ করে। নিজেদেরকে দাবি করে ধর্ম রক্ষার সোল এজেন্ট। ধর্ম রক্ষার খাতিরে স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারের কাছে পেশ করেছে অত্যাধুনিক চিন্তাচেতনা সম্বলিত ১৩ দফা। যার মধ্যে অন্যতম- ‘ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা’।
বহু ঘাত প্রতিঘাত, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য, অপমানের জ্বালা সহ্য করে যুগ যুগ ধরে নিরন্তর সংগ্রামের প্রতীক হয়ে আমাদের দেশের অবদমিত, অবহেলিত নারী সমাজ যখন সবে ঘোমটার আড়াল থেকে উঁকি মারতে শিখছে, নারী পুরুষ সমঅধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠার কন্ঠস্বর যে সময়ে ক্ষীণ থেকে জোড়ালো হচ্ছে ঠিক সেই মূহুর্তে ধর্ম রক্ষার আড়ালে- প্রকাশ্যে নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধ করা- এই অদ্ভুত দাবী চোখ কপালে ঠেকেছে প্রগতিশীল নারী সমাজের। মানসিক নির্যাতনের নতুন ধারালো খড়্গ তারা ঝুলতে দেখছে চোখের সামনেই। বিপরীত চিত্রও একেবারে প্রতিবিম্বিত হচ্ছে না তা নয়, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা ও তাঁর অনুসারীরা এই দাবীর বিপক্ষে টুশব্দ করতে হুঁশ যেন হারিয়ে ফেলেছেন। বেহুঁশ হয়ে ভাবছেন দানাই পানাই করে আগে ক্ষমতার মসনদে উঠি তারপর এই সব পশ্চাৎগামী স্বপ্নদ্রষ্টাদের রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ভাবা যাবে! তাঁর বোধ উপলব্ধিতে জাগ্রত হচ্ছে না ক্ষমতার লোভে এই সব গোষ্ঠিকে ব্যবহার করতে গিয়ে তিনি নিজেই ব্যবহৃত হচ্ছেন পুনঃপুনঃ এই চক্রের কাছে।
বি এন পির এই নীরব সমর্থনের অনুকূল্য পেয়ে অতীতে আমরা দেখেছি জঙ্গি আর্দশে উজ্জীবিত মধ্যযুগীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নেপথ্য নায়ক শায়ক আব্দুররহমান ও বাংলাভাইয়ের উত্থান পর্ব, রাজাকারদের দেশ শাসন, গো আজমের নাগরিকতা প্রাপ্তি।
ঋদ্ধ নিকট অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের এই শিক্ষা দেয় এখনি যদি এই সব ধর্মব্যবসায়ী পশ্চাৎগামী চিন্তা চেতনা স্বপ্ন দ্রষ্টাদের রাস টেনে ধরতে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয় তাহলে নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট, অনুশোচনার সাথে সাথে অগুনিত প্রাণ যাবে মুক্তচিন্তা চর্চাকারী নারী-পুরুষ উভয় সম্প্রদায়ের। যার চিত্র আমরা দেখি পশ্চাৎমুখি ভাবনা সমৃদ্ধ পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, মিশর প্রভৃতি জাতি গোষ্ঠী ইতিহাস পর্যালোচনায়।
আমাদের দেশে নারী পুরুষের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা এখনো কল্প কথায় সীমাবদ্ধ হলেও থেমে থাকেনি নারী অগ্রগতি। কিছু পরিসংখানে তার স্পষ্ট প্রমাণ মেলে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম উৎস পোশাকশিল্প। যেখানে শ্রম দেয় প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। এসব শ্রমিকের প্রায় ৮০ শতাংশই নারী। যারা রক্ত ঝরিয়ে বাংলাদেশকে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি। যাদের কল্যাণে বাংলাদেশ অর্জন করেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে স্বীকৃতি। দেশ আয় করছে কোটি কোটি বৈদেশিক মূদ্রা।
তাঞ্জিন, সাভারের মত নিয়ত মৃত্যুঝুকি উপেক্ষা করে এসব নারী যদি পুরুষের সাথে অবাধে কাজ করার যুযোগ না পায় তাহলে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে থমকে দাঁড়াবে? কে ঠেকাবে রপ্তানী আয়ের বিপর্যয়? কে দেবে এই সব হতদরিদ্র নারীদের ভাত, কাপড়, চিকিৎসার নিশ্চয়তা? কি ভাবে ঘুরবে তাদের সংসারের ভগ্ন চাকা?
জনশক্তি খাতে নারীর অবদান বিবেচনা করা যাক, এক হিসাব মতে বর্তমানে ৭৬ লাখ বাংলাদেশি বিশ্বের ১৪৩টি দেশে বৈধভাবে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৮ জন নারী। লেবাননে সবচেয়ে বেশি নারী প্রবাসী রয়েছেন। দেশটিতে বাংলাদেশি ৫৬ হাজার ৯৭ জন নারী বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। তারপরই সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫০ হাজার ১৩৫ ও সৌদি আরবে ৩১ হাজার ৪৩৭ জন নারী কাজ করছেন। প্রয়োজনে তারা কিছু টাকা খরচ করলেও সিংহভাগ টাকা কিন্তু তারা দেশে পাঠিয়ে অবদান রাখছে বৈদেশিক মূদ্রার রির্জাভ বৃদ্ধিতে।
কৃষি ক্ষেত্র বিবেচনায় বিচার করি। কৃষিকাজও বলতে গেলে নারীর ভূমিকা ছাড়া প্রায় অচল। শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রায় সকল ধাপে রয়েছে নারীর কমবেশি স্পর্শ। শাখ সবজি ও ফলমূল উৎপাদন এবং গবাদিপশু যেমন- হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল প্রভৃতি লালন পালন ও দেখভালের নারীর ভূমিকা থাকে প্রায় ৪৫ থেকে ৮৫ শতাংশ। এর সুফল ভোগ করছে কাঠ মোল্লা থেকে মৌলবাদী নাস্তিক সকলেই।
বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প। যা গ্রামীন অর্থনীতিতে এনে দিয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ছোঁয়া। বিস্মকর হলেও সত্য ক্ষুদ্রঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই গ্রাহক নারী। কারণ, ঋণদাতা সংস্থা গুলো নাকি নারী ছাড়া পুরুষকে ঋণ দিতে ঠিক ভরসা পায় না।
এসব ছাড়াও সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য নারী উদ্যেক্তা, রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইন, চলচিত্র, মডেলিং, নাচ গান পেশার কর্ম জীবি মহিলারা যারা অনেকেই সংসারের হাল ধরেছেন, দূর করেছেন দারিদ্রের কালো থাবা, এনেছেন পারিবারিক স্বচ্ছলতা ও গৌরব।
এবার বলুন এত দূর দারিদ্র দূরীকরণের ডিঙ্গি ভাসিয়ে হঠাৎ যদি কেউ আবদার করে বসে নারী পুরুষের অবাধ কাজ করার সুযোগ রহিত করতে হবে। লোকালয় ছেড়ে নারীকে ফিরে যেতে হবে ঘরে। নইলে ক্ষমতায় থাকা যাবে না।
বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এমন উদ্ভট দাবী নিয়ে কেউ যদি গো ধরে বসে তাহলে দেশ ও জাতীয় স্বার্থে নারী অগ্রগতির ধারক বাহকদের জোড়ালো প্রতিবাদ করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ কী খোলা আছে সামনে?

Friday, 5 October 2012

চাচা-ভাতিজির নির্বাচন কি প্রমাণ করলো ?

সাজানো, পাতানো, প্রহসন কিংবা সুষ্ঠুই হোক গাজীপুর-৪ আসন তথা কাপাসিয়া আসনের উপ-নির্বাচন সমাপ্ত হয়ে গেল। এদেশের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি মরহুম তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা হিসেবে সিমিন হোসেন রিমি নির্বাচিত হয়েছেন এতে আমাদের কোন ব্যথা-বেদনা নেই বরং কাপাসিয়াবাসীকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। ধন্যবাদ এ অঞ্চলের লোকেরা ইতোপূর্বেও মরহুম তাজউদ্দিন সাহেবের ছেলেকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে পেয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ যে গুণীজনকে সম্মান কাতে জানে তা আমরা দেখতে পাই বিগত দিনের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে। যেমন গোপালগঞ্জের মানুষ সে অঞ্চলের গুণী ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়েকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন। বগুড়া থেকে জিয়াউর রহমানের দলকে বিপুল ভোটে, রংপুর থেকে এরশাদ সাহেবকে বিজয়ী করে থাকেন। মজার ব্যাপার হলো মরহুম এম এ জি ওসমানী যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বনিদ্বতা করেন, তখন তিনি দেশের আর কোন জেলায় তেমন ভোট না পেলেও তার নিজ জেলা সিলেটে বিজয়ী হয়েছেন। সিলেটবাসীর প্রতি তিনি অত্যন্ত নম্র ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তখন বিভিন্ন মিডিয়া ফলাও করে প্রকাশ করেছিলো ওসমানীর নিজ জেলা সিলেটে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। অতএব বাংলাদেশের মানুষ গুণীজনকে সম্মান করতে জানে। সঙ্গত কারণেই তাজউদ্দিন কন্যা নির্বাচিত হতেই পারেন এবং হওয়াটা উচিতও বটে। যদিও অনেকে মনে করেন রিমি এখনও আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি, চিনতে পেরেছেন তার ভাই সোহেল।
বর্তমান সরকার যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেন, গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচন সে বিষয়ে শত প্রশ্নের জন্ম দিল। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের কথা এখানে প্রাধান্য দিব না কারণ তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি এবং কারচুপির অভিযোগও তাদের করার কথা নয়। তবে স্বয়ং রিমির চাচা আফসার উদ্দিন সাহেব এটাকে বললেন প্রহসনের নির্বাচন। কারণ কি- এটাই আজ বিশ্লেষণের দাবি রাখে যদি। আমরা সঠিকভাবে এর কারণ অনুধাবন করি তবেই আগামী নির্বাচনে তা কাজে আসবে। বিশ্লেষকগণ মনে করেছেন এখানে ভোট সীল মেরে বাক্সে ভরা হয়ে থাকলে তারও একটা কারণ রয়েছে। যেমন '৭০-এর নির্বাচনে যারা নির্বাচনী কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা দেখলেন কোন প্রতিপক্ষ নেই তবে ভোটারদের জন্য কেন অপেক্ষা করব। আর ভোটারগণ মনে করেছেন প্রতিপক্ষ দুর্বল ভোট দিলেও যা হবে না দিলেও তা হবে। অতএব কি দরকার কষ্ট করার। গাজীপুর-৪ এ এমনটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে এখানে বিএনপি এ নির্বাচন নিয়ে কোন মাথাই খামায়নি। তারাও ধরে নিয়েছে একেবারে প্রার্থীবিহীন নির্বাচন হলে কেমন হয় তাই চাচাকে তার ভাতিজির বিরুদ্ধে দাঁড় করানো আর কি। এদিকে আফসার উদ্দিন সাহেব বলেছেন, ‘ওরা বলেছে ৫০% ভোট কাস্ট দেখাতে হবে তাই ওই পরিমাণ ভোট সীল মারার পর কেন্দ্র থেকে সবাইকে বের করে দিয়েছে। আমরা সব কথা বিশ্বাস নাই বা করলাম। যিনি হেরে যান তার কত কথাই থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এ নির্বাচন প্রকৃত পক্ষেই গ্রহণযোগ্য হয়েছে কিনা? যদি তা হয় তবে এমন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নমুনা দেখেও বিরোধীদল নির্বাচনে যাবে কিনা? আবার তারা নির্বাচনে না গেলেও এরশাদ সাহেবকে নিয়ে ওই যে, এরশাদ সাহেবের নিরপেক্ষ নির্বাচন যা জাতি দেখেছে ৯ বছর এমন হবে কিনা। জনাব এরশাদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ ছিলেন সুক্কু মিয়া। যার নাম নির্বাচনের আগেও না আবার পরেও না আমরা আর শুনাতে পাইনি। এরশাদ সাহেব অত্যন্ত অভিজ্ঞ লোক যদি সুক্কু মিয়ার নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় তবে আওয়ামী লীগ বনাম এরশাদ নির্বাচন কেন গ্রহণযোগ্য হবে না? আমরা বড়ই শংকিত দেশটাকে কোন অশুভ ইঙ্গিতের কারণে আমরা ধ্বংস করতে যাচ্ছি কিনা। গাজীপুর-৪ এর উপ-নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলো কারণ প্রতিপক্ষ তা গ্রহণযোগ্য বলেননি। আবার যদি পাতানো নির্বাচন হয় তবে আফসার উদ্দিন সাহেব তো তাদেরই লোক। তবে কেন পূর্বে তাকে বলা হলো না অভিযোগটা হালকাভাবে যেন করেন। যেমন কোথায় কোথায় সমস্যা হয়েছে বলে আমার কাছে খবর আসছে। অন্যদিকে বৃষ্টির জন্য মানুষ আসতে পারেনি এর পরেও ফলাফল যাই হয়েছে, আমি মেনে নিচ্ছি। যেহেতু কারচুপির প্রমাণ আমার নিকট নেই। এমন একটি স্টেটমেন্ট দিলে প্রশ্নটা একটু হালকা হতো। কিন্তু তিনি যে বলিষ্ঠভাবে বলেছেন, এটি প্রহসনের নির্বাচন- এটা মানার প্রশ্নই আসে না। এতে কি বোঝা গেল। অন্যদিকে রিমি বলেছেন, এটা আগেই জানতাম আমি নির্বাচিত হবো। সে কারণে খুব বেশি আশ্চর্য কিছু মনে হচ্ছে না।
অতএব, প্রার্থীর এ আত্মবিশ্বাস থাকারই কথা তিনি নির্বাচিত হবেনই। কিন্তু যেভাবে তিনি বলেছেন, তাতে বোঝা গিয়েছে কি হবে তা তিনি পূর্বেই জানতেন। এ আসনে এক সময় নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আ.স.ম হান্নান শাহ, এত বড় শক্তিশালী নেতারও একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে, যদি আফসার উদ্দিন আহমদ মনে-প্রাণেই সিমিন হোসেন রিমির বিপক্ষে নির্বাচন করে থাকেন তাহলে বিএনপি সমর্থকগণও আফসার সাহেবকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারতেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বিএনপি কর্মীরাও এ নির্বাচনকে কোন আমলেই আনেনি। এত কিছুর পরেও জনগণ আফসার উদ্দিন সাহেবকে প্রায় বিশ হাজার ভোট দিয়েছেন। এর কারণ বলে অনেকই মনে করেন আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের এতটাই বিরক্তি যেন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রার্থী হলেই হয়। সুতরাং আফসার উদ্দিন ভোট যাই পান না কেন, তাও আওয়ামী লীগের জন্য শুভ কোন ইঙ্গিত নয়, কারণ আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এ নির্বাচনকে নমুনা বানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বিহীন নির্বাচনের টোপ গেলানোও যেন আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই দেশের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার জন্য সংলাপ অপরিহার্য।

বিরোধীদলীয় রাজনীতি দমন-দলনের শিকার

বিরোধীদলীয় রাজনীতি দমন-দলনের শিকার
ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে বলেই কি না সেটা একটি বড় প্রশ্ন বটে তবে আওয়ামী লীগ সরকার সম্প্রতি হঠাৎ করেই বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কোনো দলই শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ পর্যন্ত করতে পারছে না। ওদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে ছাত্রলীগের ভয়াবহ সন্ত্রাস। চলছে মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের কর্মকান্ডও। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের সর্বশেষ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে গত ২ অক্টোবর। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা সেদিন রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিলের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে। রামদা দিয়ে কোপানোর পাশাপাশি তারা শিবির কর্মীদের ওপর গুলীও ছুঁড়েছে। এতে গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন অন্তত ৩০ জন শিবির কর্মী। কিন্তু পুলিশ তো বটেই, প্রশাসনও বিপন্ন শিবির কর্মীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ উল্টো আগ্নেয়াস্ত্র হাতে সংঘর্ষে অংশ নেয়া ছাত্রলীগের একজন ক্যাডারের দায়ের করা মামলা গ্রহণ করেছে। এতে ছাত্রশিবিরের শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। শিবিরের ২৮ জনকে এরই মধ্যে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অথচ হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষও দেখেছেন, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে হামলা ছাত্রলীগই করেছিল। টিভিতেও সারাদেশের মানুষ সে হামলার দৃশ্য দেখেছেন, সংবাদপত্রগুলোতেও এ সংক্রান্ত অনেক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেখানে আক্রান্ত হচ্ছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এরকম একটি ঘটনায় জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগের ক্যাডার ও সন্ত্রাসীরা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে পুলিশ মামলা করেছে ছাত্রদলের ২৩ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। অর্থাৎ ছাত্রলীগ মেরেও জিতছে কেঁদেও জিততে চাচ্ছে!
ওদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে সরকার চরম কর্মকান্ড শুরু করেছে। দেশের অন্যতম প্রধান দল জামায়াতে ইসলামীর কথাই ধরা যাক। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিক দিনগুলো থেকেই জামায়াতকে কোথাও কোনো মিছিল-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগে আটক রাখা হয়েছে। অন্য অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলা চাপিয়ে ধাওয়ার মুখে রাখা হয়েছে। নেতাদের মধ্যে যারা ‘মুক্ত' অবস্থায় রয়েছেন তারাও বহুদিন ধরে এমনকি দলের অফিসে যেতে বা বসতে পারছেন না। কোথাও কোনো কর্মিসভা করলেও তাকে এমনভাবেই ‘গোপন বৈঠক' ও ‘ষড়যন্ত্র' হিসেবে প্রচার করিয়ে দেয়া হচ্ছে যেন জামায়াত কোনো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এবং তার নেতা-কর্মীরা অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো বৈঠক করছিলেন! এসব বৈঠক থেকে গ্রেফতারও করা হচ্ছে অনেক নেতা-কর্মীকে। অথচ জামায়াতে ইসলামী এদেশের একটি আইনসম্মত ও নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল। জামায়াতের জনসমর্থনও ব্যাপক। তাছাড়া অতীতের মতো বর্তমান জাতীয় সংসদেও জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। কিন্তু সে দলটিকেই সরকার রাজপথে দাঁড়াতে পর্যন্ত দিচ্ছে না।
খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জামায়াতের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও সম্প্রতি সর্বাত্মক হামলার শিকার হতে শুরু করেছে। বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার হঠাৎ ‘হার্ডলাইনে' এগোতে শুরু করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা এবং দলীয় গুন্ডা-সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলার মধ্যেও বিএনপি এতদিন মাঝেমধ্যে মিছিল-সমাবেশ করতে পারতো। এখন আর সে সুযোগটুকুও পাচ্ছে না দলটি। ২ অক্টোববের কথাই বলা যাক। সেদিন পুলিশ শুধু বিএনপির পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ মিছিলকেই ছত্রভঙ্গ করে দেয়নি, নেতা-কর্মীদেরকেও যথেচ্ছভাবে লাঠিপেটা করেছে। তাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে। টিয়ার গ্যাসের শেল তো ছুঁড়েছেই। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে যারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে পড়েছিলেন তারা আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। পুলিশ তাদের অফিসের ভেতরেই অবরুদ্ধ করে রেখেছে। পরদিন পর্যন্ত কাউকেই বের হতে দেয়নি পুলিশ। ৪৯ জন নেতার সঙ্গে ‘অজ্ঞাতনামা' আড়াই হাজারজনকে আসামী করে মামলাও ঠুকেছে পুলিশ। দ্বিতীয়দিন অবরুদ্ধ অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য তিনি। কিন্তু পুলিশের লোকজন তাকে এমন জাপটে ধরে নিয়ে গেছে যা দেখে মনে হয়েছে যেন জনাব আলাল একজন খুনী বা সন্ত্রাসী! উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ের একজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে পুলিশের এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ দেখে জনগণের অন্য একটি ঘটনা মনে পড়ে গেছে। সেবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে প্রায় প্রাণেই মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। অসংখ্য টিভি ক্যামেরা ও সাংবাদিকের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনেই হত্যার চেষ্টা করেছিল দু'জন পুলিশ অফিসার। কিন্তু এত প্রকাশ্যে দৌড়ঝাঁপ করা সত্ত্বেও সে দু'জনকে কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি। সরকার উল্টো পদোন্নতি দিয়ে তাদের পুরষ্কৃত করেছে।
সরকারের এই রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিরোধী নীতির কারণে বিরোধী দলের ওপর দমন-নির্যাতন চালানোর ব্যাপারে পুলিশও এতদিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ২ অক্টোবরের সর্বশেষ ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মারমুখী অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে পুলিশ আইনের তোয়াক্কা করেনি। অথচ মিছিল-সমাবেশ, পিকেটিং, মানব বন্ধন, হরতাল প্রভৃতি মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতেরও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পুলিশকে দিয়ে গণতন্ত্র ও সংবিধানসম্মত সব কর্মসূচীকেও পন্ড করাচ্ছে সরকার। পুলিশ এমনকি আগে থেকে ঘোষিত শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশও করতে দিচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয় ও ইঙ্গিতে পুলিশ জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও অবমাননাকর আচরণ করছে। ২ অক্টোবর বিএনপির নেতা-কর্মীদের যেভাবে লাঠিপেটা করানো হয়েছে তা দেখে মনে হবে, পুলিশ সরকারের রাজনৈতিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। রাজধানীতে শুধু নয়, দেশের অন্য সব স্থানেও বিএনপির বিরুদ্ধে দমনমূলক কঠোর ব্যবস্থাই নিচ্ছে সরকার। এজন্যই বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা আসলে হার্ডলাইনে হাঁটছেন। দমন-নির্যাতন চালানোর জন্য তারা উপলক্ষও নিজেরাই তৈরি করছেন। যেমন রামুর সহিংসতার পেছনে আওয়ামী লীগের হাত থাকার বিষয়ে এরই মধ্যে সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ সেখানেও আসামী করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের। জামায়াতের নেতা-কর্মীদেরও বাদ দেয়া হচ্ছে না। প্রচারণাও এমনভাবেই চালানো হচ্ছে যেন বিএনপি ও জামায়াত কোনো রাজনৈতিক দল নয়, দল দুটি আসলে জঙ্গি সংগঠন!
আমরা  মনে করি, সরকারের এই নীতি-মনোভাব এবং পুলিশকে দিয়ে দমন-নির্যাতন চালানোর ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করানোর ঘটনা অবশ্যই নিন্দাযোগ্য। আমরা আগেও বলেছি, প্রজাতন্ত্রের পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রসম্মত কর্মসূচী ভন্ডুল করা এবং নেতা-কর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। শিক্ষাঙ্গনে চলমান ছাত্রলীগের সন্ত্রাস সম্পর্কেও একই কথা বলা দরকার। সরকারের উচিত, হত্যা-সন্ত্রাস ও ফ্যাসিস্ট কর্মকান্ড পরিত্যাগ করে সময় থাকতে গণতন্ত্রসম্মত অবস্থানে ফিরে আসা।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter