Flickr

Friday, 5 October 2012

বিরোধীদলীয় রাজনীতি দমন-দলনের শিকার

Posted by   on

বিরোধীদলীয় রাজনীতি দমন-দলনের শিকার
ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে বলেই কি না সেটা একটি বড় প্রশ্ন বটে তবে আওয়ামী লীগ সরকার সম্প্রতি হঠাৎ করেই বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ কোনো দলই শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ পর্যন্ত করতে পারছে না। ওদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে ছাত্রলীগের ভয়াবহ সন্ত্রাস। চলছে মিথ্যা মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের কর্মকান্ডও। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের সর্বশেষ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে গত ২ অক্টোবর। ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা সেদিন রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিলের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে। রামদা দিয়ে কোপানোর পাশাপাশি তারা শিবির কর্মীদের ওপর গুলীও ছুঁড়েছে। এতে গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন অন্তত ৩০ জন শিবির কর্মী। কিন্তু পুলিশ তো বটেই, প্রশাসনও বিপন্ন শিবির কর্মীদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। শুধু তা-ই নয়, পুলিশ উল্টো আগ্নেয়াস্ত্র হাতে সংঘর্ষে অংশ নেয়া ছাত্রলীগের একজন ক্যাডারের দায়ের করা মামলা গ্রহণ করেছে। এতে ছাত্রশিবিরের শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। শিবিরের ২৮ জনকে এরই মধ্যে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। অথচ হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষও দেখেছেন, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে হামলা ছাত্রলীগই করেছিল। টিভিতেও সারাদেশের মানুষ সে হামলার দৃশ্য দেখেছেন, সংবাদপত্রগুলোতেও এ সংক্রান্ত অনেক ছবি প্রকাশিত হয়েছে। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেখানে আক্রান্ত হচ্ছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এরকম একটি ঘটনায় জানা গেছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগের ক্যাডার ও সন্ত্রাসীরা। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে পুলিশ মামলা করেছে ছাত্রদলের ২৩ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। অর্থাৎ ছাত্রলীগ মেরেও জিতছে কেঁদেও জিততে চাচ্ছে!
ওদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে সরকার চরম কর্মকান্ড শুরু করেছে। দেশের অন্যতম প্রধান দল জামায়াতে ইসলামীর কথাই ধরা যাক। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিক দিনগুলো থেকেই জামায়াতকে কোথাও কোনো মিছিল-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের কথিত যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগে আটক রাখা হয়েছে। অন্য অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলা চাপিয়ে ধাওয়ার মুখে রাখা হয়েছে। নেতাদের মধ্যে যারা ‘মুক্ত' অবস্থায় রয়েছেন তারাও বহুদিন ধরে এমনকি দলের অফিসে যেতে বা বসতে পারছেন না। কোথাও কোনো কর্মিসভা করলেও তাকে এমনভাবেই ‘গোপন বৈঠক' ও ‘ষড়যন্ত্র' হিসেবে প্রচার করিয়ে দেয়া হচ্ছে যেন জামায়াত কোনো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এবং তার নেতা-কর্মীরা অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো বৈঠক করছিলেন! এসব বৈঠক থেকে গ্রেফতারও করা হচ্ছে অনেক নেতা-কর্মীকে। অথচ জামায়াতে ইসলামী এদেশের একটি আইনসম্মত ও নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দল। জামায়াতের জনসমর্থনও ব্যাপক। তাছাড়া অতীতের মতো বর্তমান জাতীয় সংসদেও জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। কিন্তু সে দলটিকেই সরকার রাজপথে দাঁড়াতে পর্যন্ত দিচ্ছে না।
খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জামায়াতের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও সম্প্রতি সর্বাত্মক হামলার শিকার হতে শুরু করেছে। বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার হঠাৎ ‘হার্ডলাইনে' এগোতে শুরু করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞা এবং দলীয় গুন্ডা-সন্ত্রাসী ও পুলিশের হামলার মধ্যেও বিএনপি এতদিন মাঝেমধ্যে মিছিল-সমাবেশ করতে পারতো। এখন আর সে সুযোগটুকুও পাচ্ছে না দলটি। ২ অক্টোববের কথাই বলা যাক। সেদিন পুলিশ শুধু বিএনপির পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ মিছিলকেই ছত্রভঙ্গ করে দেয়নি, নেতা-কর্মীদেরকেও যথেচ্ছভাবে লাঠিপেটা করেছে। তাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে। টিয়ার গ্যাসের শেল তো ছুঁড়েছেই। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে যারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে পড়েছিলেন তারা আর বেরিয়ে আসতে পারেননি। পুলিশ তাদের অফিসের ভেতরেই অবরুদ্ধ করে রেখেছে। পরদিন পর্যন্ত কাউকেই বের হতে দেয়নি পুলিশ। ৪৯ জন নেতার সঙ্গে ‘অজ্ঞাতনামা' আড়াই হাজারজনকে আসামী করে মামলাও ঠুকেছে পুলিশ। দ্বিতীয়দিন অবরুদ্ধ অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য তিনি। কিন্তু পুলিশের লোকজন তাকে এমন জাপটে ধরে নিয়ে গেছে যা দেখে মনে হয়েছে যেন জনাব আলাল একজন খুনী বা সন্ত্রাসী! উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ের একজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে পুলিশের এ ধরনের অসৌজন্যমূলক আচরণ দেখে জনগণের অন্য একটি ঘটনা মনে পড়ে গেছে। সেবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের চীফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে প্রায় প্রাণেই মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। অসংখ্য টিভি ক্যামেরা ও সাংবাদিকের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনেই হত্যার চেষ্টা করেছিল দু'জন পুলিশ অফিসার। কিন্তু এত প্রকাশ্যে দৌড়ঝাঁপ করা সত্ত্বেও সে দু'জনকে কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি। সরকার উল্টো পদোন্নতি দিয়ে তাদের পুরষ্কৃত করেছে।
সরকারের এই রাজনৈতিক ও মানবাধিকার বিরোধী নীতির কারণে বিরোধী দলের ওপর দমন-নির্যাতন চালানোর ব্যাপারে পুলিশও এতদিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ২ অক্টোবরের সর্বশেষ ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মারমুখী অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে পুলিশ আইনের তোয়াক্কা করেনি। অথচ মিছিল-সমাবেশ, পিকেটিং, মানব বন্ধন, হরতাল প্রভৃতি মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতেরও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু পুলিশকে দিয়ে গণতন্ত্র ও সংবিধানসম্মত সব কর্মসূচীকেও পন্ড করাচ্ছে সরকার। পুলিশ এমনকি আগে থেকে ঘোষিত শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশও করতে দিচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয় ও ইঙ্গিতে পুলিশ জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও অবমাননাকর আচরণ করছে। ২ অক্টোবর বিএনপির নেতা-কর্মীদের যেভাবে লাঠিপেটা করানো হয়েছে তা দেখে মনে হবে, পুলিশ সরকারের রাজনৈতিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। রাজধানীতে শুধু নয়, দেশের অন্য সব স্থানেও বিএনপির বিরুদ্ধে দমনমূলক কঠোর ব্যবস্থাই নিচ্ছে সরকার। এজন্যই বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা আসলে হার্ডলাইনে হাঁটছেন। দমন-নির্যাতন চালানোর জন্য তারা উপলক্ষও নিজেরাই তৈরি করছেন। যেমন রামুর সহিংসতার পেছনে আওয়ামী লীগের হাত থাকার বিষয়ে এরই মধ্যে সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ সেখানেও আসামী করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের। জামায়াতের নেতা-কর্মীদেরও বাদ দেয়া হচ্ছে না। প্রচারণাও এমনভাবেই চালানো হচ্ছে যেন বিএনপি ও জামায়াত কোনো রাজনৈতিক দল নয়, দল দুটি আসলে জঙ্গি সংগঠন!
আমরা  মনে করি, সরকারের এই নীতি-মনোভাব এবং পুলিশকে দিয়ে দমন-নির্যাতন চালানোর ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করানোর ঘটনা অবশ্যই নিন্দাযোগ্য। আমরা আগেও বলেছি, প্রজাতন্ত্রের পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রসম্মত কর্মসূচী ভন্ডুল করা এবং নেতা-কর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। শিক্ষাঙ্গনে চলমান ছাত্রলীগের সন্ত্রাস সম্পর্কেও একই কথা বলা দরকার। সরকারের উচিত, হত্যা-সন্ত্রাস ও ফ্যাসিস্ট কর্মকান্ড পরিত্যাগ করে সময় থাকতে গণতন্ত্রসম্মত অবস্থানে ফিরে আসা।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter