Flickr

Friday, 5 October 2012

চাচা-ভাতিজির নির্বাচন কি প্রমাণ করলো ?

Posted by   on

সাজানো, পাতানো, প্রহসন কিংবা সুষ্ঠুই হোক গাজীপুর-৪ আসন তথা কাপাসিয়া আসনের উপ-নির্বাচন সমাপ্ত হয়ে গেল। এদেশের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি মরহুম তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা হিসেবে সিমিন হোসেন রিমি নির্বাচিত হয়েছেন এতে আমাদের কোন ব্যথা-বেদনা নেই বরং কাপাসিয়াবাসীকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। ধন্যবাদ এ অঞ্চলের লোকেরা ইতোপূর্বেও মরহুম তাজউদ্দিন সাহেবের ছেলেকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে পেয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ যে গুণীজনকে সম্মান কাতে জানে তা আমরা দেখতে পাই বিগত দিনের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে। যেমন গোপালগঞ্জের মানুষ সে অঞ্চলের গুণী ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়েকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন। বগুড়া থেকে জিয়াউর রহমানের দলকে বিপুল ভোটে, রংপুর থেকে এরশাদ সাহেবকে বিজয়ী করে থাকেন। মজার ব্যাপার হলো মরহুম এম এ জি ওসমানী যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বনিদ্বতা করেন, তখন তিনি দেশের আর কোন জেলায় তেমন ভোট না পেলেও তার নিজ জেলা সিলেটে বিজয়ী হয়েছেন। সিলেটবাসীর প্রতি তিনি অত্যন্ত নম্র ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তখন বিভিন্ন মিডিয়া ফলাও করে প্রকাশ করেছিলো ওসমানীর নিজ জেলা সিলেটে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। অতএব বাংলাদেশের মানুষ গুণীজনকে সম্মান করতে জানে। সঙ্গত কারণেই তাজউদ্দিন কন্যা নির্বাচিত হতেই পারেন এবং হওয়াটা উচিতও বটে। যদিও অনেকে মনে করেন রিমি এখনও আওয়ামী লীগকে চিনতে পারেননি, চিনতে পেরেছেন তার ভাই সোহেল।
বর্তমান সরকার যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেন, গাজীপুর-৪ আসনের উপ-নির্বাচন সে বিষয়ে শত প্রশ্নের জন্ম দিল। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের কথা এখানে প্রাধান্য দিব না কারণ তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি এবং কারচুপির অভিযোগও তাদের করার কথা নয়। তবে স্বয়ং রিমির চাচা আফসার উদ্দিন সাহেব এটাকে বললেন প্রহসনের নির্বাচন। কারণ কি- এটাই আজ বিশ্লেষণের দাবি রাখে যদি। আমরা সঠিকভাবে এর কারণ অনুধাবন করি তবেই আগামী নির্বাচনে তা কাজে আসবে। বিশ্লেষকগণ মনে করেছেন এখানে ভোট সীল মেরে বাক্সে ভরা হয়ে থাকলে তারও একটা কারণ রয়েছে। যেমন '৭০-এর নির্বাচনে যারা নির্বাচনী কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা দেখলেন কোন প্রতিপক্ষ নেই তবে ভোটারদের জন্য কেন অপেক্ষা করব। আর ভোটারগণ মনে করেছেন প্রতিপক্ষ দুর্বল ভোট দিলেও যা হবে না দিলেও তা হবে। অতএব কি দরকার কষ্ট করার। গাজীপুর-৪ এ এমনটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে এখানে বিএনপি এ নির্বাচন নিয়ে কোন মাথাই খামায়নি। তারাও ধরে নিয়েছে একেবারে প্রার্থীবিহীন নির্বাচন হলে কেমন হয় তাই চাচাকে তার ভাতিজির বিরুদ্ধে দাঁড় করানো আর কি। এদিকে আফসার উদ্দিন সাহেব বলেছেন, ‘ওরা বলেছে ৫০% ভোট কাস্ট দেখাতে হবে তাই ওই পরিমাণ ভোট সীল মারার পর কেন্দ্র থেকে সবাইকে বের করে দিয়েছে। আমরা সব কথা বিশ্বাস নাই বা করলাম। যিনি হেরে যান তার কত কথাই থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এ নির্বাচন প্রকৃত পক্ষেই গ্রহণযোগ্য হয়েছে কিনা? যদি তা হয় তবে এমন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নমুনা দেখেও বিরোধীদল নির্বাচনে যাবে কিনা? আবার তারা নির্বাচনে না গেলেও এরশাদ সাহেবকে নিয়ে ওই যে, এরশাদ সাহেবের নিরপেক্ষ নির্বাচন যা জাতি দেখেছে ৯ বছর এমন হবে কিনা। জনাব এরশাদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ ছিলেন সুক্কু মিয়া। যার নাম নির্বাচনের আগেও না আবার পরেও না আমরা আর শুনাতে পাইনি। এরশাদ সাহেব অত্যন্ত অভিজ্ঞ লোক যদি সুক্কু মিয়ার নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় তবে আওয়ামী লীগ বনাম এরশাদ নির্বাচন কেন গ্রহণযোগ্য হবে না? আমরা বড়ই শংকিত দেশটাকে কোন অশুভ ইঙ্গিতের কারণে আমরা ধ্বংস করতে যাচ্ছি কিনা। গাজীপুর-৪ এর উপ-নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলো কারণ প্রতিপক্ষ তা গ্রহণযোগ্য বলেননি। আবার যদি পাতানো নির্বাচন হয় তবে আফসার উদ্দিন সাহেব তো তাদেরই লোক। তবে কেন পূর্বে তাকে বলা হলো না অভিযোগটা হালকাভাবে যেন করেন। যেমন কোথায় কোথায় সমস্যা হয়েছে বলে আমার কাছে খবর আসছে। অন্যদিকে বৃষ্টির জন্য মানুষ আসতে পারেনি এর পরেও ফলাফল যাই হয়েছে, আমি মেনে নিচ্ছি। যেহেতু কারচুপির প্রমাণ আমার নিকট নেই। এমন একটি স্টেটমেন্ট দিলে প্রশ্নটা একটু হালকা হতো। কিন্তু তিনি যে বলিষ্ঠভাবে বলেছেন, এটি প্রহসনের নির্বাচন- এটা মানার প্রশ্নই আসে না। এতে কি বোঝা গেল। অন্যদিকে রিমি বলেছেন, এটা আগেই জানতাম আমি নির্বাচিত হবো। সে কারণে খুব বেশি আশ্চর্য কিছু মনে হচ্ছে না।
অতএব, প্রার্থীর এ আত্মবিশ্বাস থাকারই কথা তিনি নির্বাচিত হবেনই। কিন্তু যেভাবে তিনি বলেছেন, তাতে বোঝা গিয়েছে কি হবে তা তিনি পূর্বেই জানতেন। এ আসনে এক সময় নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আ.স.ম হান্নান শাহ, এত বড় শক্তিশালী নেতারও একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থান রয়েছে, যদি আফসার উদ্দিন আহমদ মনে-প্রাণেই সিমিন হোসেন রিমির বিপক্ষে নির্বাচন করে থাকেন তাহলে বিএনপি সমর্থকগণও আফসার সাহেবকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারতেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বিএনপি কর্মীরাও এ নির্বাচনকে কোন আমলেই আনেনি। এত কিছুর পরেও জনগণ আফসার উদ্দিন সাহেবকে প্রায় বিশ হাজার ভোট দিয়েছেন। এর কারণ বলে অনেকই মনে করেন আওয়ামী লীগের ওপর মানুষের এতটাই বিরক্তি যেন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রার্থী হলেই হয়। সুতরাং আফসার উদ্দিন ভোট যাই পান না কেন, তাও আওয়ামী লীগের জন্য শুভ কোন ইঙ্গিত নয়, কারণ আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এ নির্বাচনকে নমুনা বানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক বিহীন নির্বাচনের টোপ গেলানোও যেন আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই দেশের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার জন্য সংলাপ অপরিহার্য।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter