মন্ত্রণালয় এমন বার্তা কী করে পাঠায়
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি কওমী মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীদের জন্য গ্রান্টবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে জেলা পর্যায়ে মন্ত্রণালয় যে বার্তা পাঠিয়েছে তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ জনমনে। উক্ত বার্তায় বলা হয়েছে, স্থানীয় জনগণের দান-খয়রাতের ওপর নির্ভর করতে হয় বলে লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ছাত্রছাত্রীরা দরিদ্র অবস্থায় থাকে। দারিদ্রে্যর সুযোগ নিয়েই তাদের সন্ত্রাসমূলক বা চরমপন্থী কাজে ব্যবহার করা হয়। তারা সহজেই বিপথগামী হয়ে পড়ে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জেলা পর্যায়ে যে বার্তা পাঠিয়েছে তার মর্মার্থ হলো : কওমী মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা দরিদ্র বলেই তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত। এমন বার্তা খুবই গুরুতর। কিন্তু আসলেই কি দারিদ্রে্যর কারণে কওমী মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত? কোনো দেশের মন্ত্রণালয় যদি তথা প্রমাণ ছাড়াই এ ভাষায় কথা বলে, তাহলে কওমী মাদরাসার জন্য আর কোনো শত্রুর প্রয়োজন হয় না। এ কারণে কওমী মাদরাসা বোর্ড সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওই সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বোর্ডের মহাসচিব এক বিবৃতিতে বলেছেন, কওমী মাদরাসার ছাত্রছাত্রীরা কোনো ধরনের নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত নয়। সুতরাং মাত্র ৫ কোটি টাকা সহায়তার বিনিময়ে কওমী মাদরাসার ছাত্রছাত্রীদের সন্ত্রাসী সাজানো কিংবা সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না।
কওমী মাদরাসার ছাত্রছাত্রীদের ব্যাপারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যে মন্তব্য করেছে তা শুধু অন্যায় ও অযৌক্তিকই নয়, দেশের স্বার্থবিরোধীও বটে। তাই কওমী মাদরাসা বোর্ড তাদের সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সঙ্গত কাজই করেছে। আমরা জানি যে, বাংলাদেশের কওমী মাদরাসার সাম্প্রতিককালের কোনো বিষয় নয়, নাইন-ইলেভেনের আগে-পরের বিষয়ও নয়। এই জনপদে শত শত বছর ধরেই চলে আসছে কওমী মাদরাসার ছিলছিলা। কই কখনোতো কওমী মাদরাসা কিংবা এই ধারার মাদরাসা ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস অথবা চরমপন্থী কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠেনি। বরং কওমী মাদরাসা থেকে পাস করা ছাত্ররা গ্রামেগঞ্জে তথা সারা বাংলাদেশের মানুষের সাথে জড়িয়ে আছে সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ডের নানা সূত্রে। দু'একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া সাধারণভাবে তারা জনগণের চোখে সম্মানের আসনেই অধিষ্ঠিত। আসলে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাভাই বা জেএমবির অনাকাঙ্ক্ষিত তৎপরতার অন্য আরো অনেকের সাথে মাদরাসার দু'একজন ছাত্রের নামও লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তখন একশ্রেণীর মিডিয়া বিশেষ মতলবে ঘটনা সম্পর্কে এমনভাবে প্রচারণা চালিয়েছে, যাতে মনে হতে পারে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ঘটনার কেন্দ্র হলো মাদরাসা, আর মাদরাসার ছাত্ররাই হলো এর মূল হোতা! অথচ সাম্প্রতিক কালের ঐসব অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকান্ডে যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে যেমন সাধারণ নাগরিক রয়েছে, তেমনি রয়েছে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসার কিছু ছাত্র। আর এদের মধ্যে মাদরাসা ছাত্রদের হার সবচাইতে কম। তাহলে কীভাবে বলা হয় যে, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মকান্ডের জন্য মাদরাসা বা মাদরাসা ছাত্ররা প্রধান আসামী। সারা বছরের ঘটনা প্রবাহ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, নানা সন্ত্রাসী ঘটনায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন ছাত্র জড়িত আছে। কিন্তু এজন্য কি সন্ত্রাসের জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ছাত্রসমাজকে দায়ী করা ঠিক হবে? অথচ মাদরাসা এবং মাদরাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে তেমন অযৌক্তিক অভিযোগই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু বিশেষ রাজনৈতিক মহলের অন্যায় প্রপাগান্ডার সাথে যখন কোনো মন্ত্রণালয় তথা সরকারও সুর মিলায় তখন বিষযটি নতুন মাত্রা পায়-- যা আমাদের কাছে অশনি সংকেত বলেই মনে হয়। সরকার আসলে দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? দেশে শান্তি-শৃক্মখলা প্রতিষ্ঠার বদলে অরাজকতা ও অস্থিরতার পথে সরকার কেন হাঁটছে? এতে বিদেশী কোনো শক্তির ইন্ধন নেইতো? --এমন প্রশ্ন এখন জনমনে। সরকার বিষয়টি ভেবে দেখলেই মঙ্গল।
No comments:
Write comments