Flickr

Tuesday, 2 February 2010

দেশে ফেরা হলো না ‘মা' : কারণ দুর্নীতি না অযোগ্যতা?

Posted by   on

দেশে ফেরা হলো না ‘মা' : কারণ দুর্নীতি না অযোগ্যতা?
স্বপ্ন, সাধ, দেশপ্রেম কথাগুলো শুনে আসছি ছেলেবেলায় পাঠ্যবই থেকে। দেশের মাটি থেকে যখনই বিদেশে পাড়ি জমাই তখনই বুঝলাম দেশকে কতটা ভালবাসি আমরা। অনেকেই বলেন, মেধাবীরা বিদেশে পাড়ি জমালে আর দেশে ফিরে আসতে চায় না। কিন্তু এটা কি আসলেই সত্যি? অন্ততপক্ষে আমি আমার দেশে ফেরার ইচ্ছা ও অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি এই কথাটা আসলে সত্যি নয়। দেশ আমাদের মূল্যায়ন করলে অবশ্যই বেশির ভাগ মেধাবীরা দেশে ফিরে আসবে এবং দেশের জন্য কাজ করবে। বিদেশে আমরা সবাই আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের অভাব খুব অনুভব করি। তাই আমার ইচ্ছা ছিল ডিগ্রিটা শেষ করেই দেশে ফিরে আমার শিক্ষাটাকে দেশের জন্য কাজে লাগাবো। যাই হোক, এবার আমি কেন এই লেখাটা লিখলাম?
২০০৬ এর সেপ্টেম্বরে আমার দেশ ত্যাগ পিএইচডি করার উদ্দেশ্যে জার্মানীতে এবং ২০০৯ সালের অক্টোবরে শেষ হয় আমার ডিগ্রি। ইতোমধ্যে আমার প্রাণপ্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য, আমি উক্ত বিভাগ থেকেই বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি পাস করি। খুব আশা ও বিশ্বাস নিয়ে আমি চাকরির আবেদন করি এবং দেশে আসি। যেহেতু আমার ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন হয়েছে তাই আমার পরবর্তী উচ্চশিক্ষা এবং চাকরির জন্য জার্মানী, কানাডা, নেদারল্যান্ড থেকে সুযোগও আছে। অনেক আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, গুরুজন বারবার আমাকে বলেছিল, কেন আমি এই বোকামী করছি? সবাই যখন দেশ ত্যাগ করতে পারলে খুশি, তাই বিদেশে আমার ভালো চাকরির সুযোগ ‘থাকা' সত্ত্বেও কেন আমার এই ইচ্ছা? কিন্তু আমার মনে মা-মাটি, স্বপ্নে বিভোর আমার নিজস্ব বিভাগে শিক্ষক হওয়ার। ৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সকল আবেদনকারীর মধ্যে আমারই একমাত্র ডক্টরেট ডিগ্রি ছিল এবং সেই সাথে আমার পূর্ববর্তী সকল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী ছিল। উল্লেখ্য, আমি বিএসসি (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় এবং এমএসসি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলাম এবং সেই সাথে আমার ২৪টি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাপত্র আছে যার ৮টিতে আমি প্রধান গবেষক। উল্লেখ্য, আমার নতুন উদ্ভাবিত রক্তশূন্যতার ওষুধটি বিবেচনাধীন রয়েছে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড-ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনে (W.I.P.O). যাই হোক আমি সমস্ত প্রস্তুতি ও যোগ্যতা নিয়ে ফিরে আসলাম জার্মানী থেকে। অবশেষে ২২ ডিসেম্বর-০৯ এ মৌখিক পরীক্ষার সাজানো নাটকে উপস্থিত হলাম। হাস্যকর! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ। মাত্র দুই মিনিট সাক্ষাৎকার। অবশেষে ফলাফল প্রকাশিত হয়। আমার নাম নাই ফলাফলে। নিজের সমস্ত আত্মবিশ্বাস, যোগ্যতা দেশপ্রেম, মায়ের আকুতি মাটিতে মিশে গেল। কিসের কাছে আমার পরাজয়? পাঠক আমার অযোগ্যতা না দুর্নীতি? আমার পলিটিক্যাল লবিং নাই, আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সন্তান না, সর্বোপরি আমি বর্তমানে সুবিধাবাদী বিশেষ ধর্মাবলম্বী নয়, এটাই কি আমার অযোগ্যতা? পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগের বিপরিতে নিয়োগ দেয়া হলো ১২ জনকে। দেখলাম কারা সেই শক্তিশালী লবিংধারী লোকেরা। বিশ্ববিদালয় শিক্ষকদের গর্বিত সন্তানেরা, যার মধ্যে একজন বিএসসি সম্মান পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত বিশেষ সুবিধাবাদী ধর্মাবলম্বী লোকেরা, এমনকি ছাত্র অবস্থায় নকলবাজ নামে পরিচিত ছাত্রটিও নিয়োগ পেল। এইতো আমাদের দেশের যোগ্যতার মাপকাঠি। মানুষ কতটা স্বার্থপর, নির্লজ্জ, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হতে পারে, কতটা লেজুড়বৃত্তি করতে পারে দেশে চাকরির চেষ্টা না করলে উপলব্ধি করতে পারতাম না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি এবং সকল নীতি-নির্ধারকদের কাছে আমার প্রশ্ন এবং চাওয়া আমরা সাধারণ মানুষেরা যোগ্যতার বলে চাকরি পেতে চাই, কারো লেজুড়বৃত্তি করে নয়। আমি কেন আমার দেশে যোগ্যতার বলে চাকরি পাব না? কেন আমি আমার মাতৃভূমিতে মায়ের কাছে ফিরতে পারবো না? কেন আমার মা গর্ব করে বলতে পারবে না আমার সন্তান তার অর্জিত যোগ্যতা ও জ্ঞান দিয়ে দেশসেবা করছে? পাঠক এটা কোন পুরোনো ঘটনা নয়। নিয়োগের ফলাফল প্রকাশিত হয় ৩১-১২-২০০৯। আমার এই লেখার মাধ্যমে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িত সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্ন এই চাকরি পাবার আসল যোগ্যতা কি? কেন আমাকে ফিরিয়ে দেয়া হলো? আমার বাবা-মায়ের প্রশ্ন কেন তাদের সন্তানকে বঞ্চিত করা হলো? বাবা-মা এর দুঃখ কি লাভ হলো এত অভাব-অনটন-কষ্ট করে আমাকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে? এত শিক্ষিত না করে যদি তারা ক্ষমতাসীন দলগুলোর ক্যাডার বানাতো তাহলে তাদের এই খারাপ লাগাটা থাকতো না। আমি আমার বাবা-মাকে জীবনানন্দদাশের কবিতার লাইনটির মাধ্যমে বলছি ‘আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়ির তীরে এই বাংলায়' কোনদিন এদেশ যদি আমার যোগ্যতায় দেশ সেবার সুযোগ দেয়। অপেক্ষায় রইলাম সেই সত্যিকারের স্বপ্নের দেশের জন্য। ড. হাসান মাহমুদ রানা
-লেখক বর্তমানে নেদারল্যান্ড প্রবাসী

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter