Flickr

Tuesday, 30 March 2010

গর্জনের মতো বর্ষণ হচ্ছে না

গর্জনের মতো বর্ষণ হচ্ছে না
                       
সরকারের তর্জন গর্জন তেমনই বহাল আছে। সরকার হয়কে নয়, নয়কে হয় করেই যাচ্ছেন। স্বীকার করি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ তথা ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছেন। তারা চাপা পিটিয়ে চলেন না। শ্রমজীবী মানুষ। কেউ কৃষক। কেউ শ্রমিক। কেউ বা দিনমজুর। দিনান্তের পরিশ্রমে তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। তারা বাজার করে খান। ভাগ্য বদলের জন্য জায়গা জমি ভিটেমাটি বিক্রি করে ছেলেদেরকে অধিক উপার্জনের জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য চেষ্টা করেন। দরকার পড়লে আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করেন। ভোটের সময় নৌকায় ভোট দেন।
আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা, টেলিভিশনের ক্যামেরায় যাদের ধারণ করা হয় তারা যখন টিভির পর্দায় কাঁপিয়ে বলেন যে, দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে, জিনিসপত্রের দাম মানুষের নাগালের ভেতরে, গত এক বছরে বিদেশে রফতানি হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ, তখন ঐসব আওয়ামী সমর্থকও বসে কপালে করাঘাত করতে থাকে। যুক্তি হিসেবে বলা যেতে পারে যে, কৃষিপণ্যের মূল্য যদি বেড়ে থাকে তাহলে তো কৃষকই লাভবান হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী নেতাদের এই ধারণা নেই যে, দেশের কৃষির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অল্পসংখ্যক ভূমির মালিক। বাকি সব কৃষির মজুর। দু'চার জনে বিক্রি করে, অন্যরা কিনে খায়। যে কিনে খায় সে বাজারে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পায় কতোটা সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে দ্রব্যমূল্য।

কাহিনীর আবার এখানেই শেষ নয়। পত্র-পত্রিকায় সরেজমিন রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, যে কৃষক লাভবান বলে মনে করা হচ্ছে সে লাভের মুখ দেখতে পারছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা খেয়ে নিচ্ছে লাভের গুড়। ফলে উৎপাদনকারী যে পণ্য দু'টাকায় বিক্রি করছে ভোক্তা পর্যায়ে এসে তার দাম ১০ টাকা থেকে ২০ টাকায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এখানে নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রী সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছেন, দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এক ট্রাক কৃষিপণ্য ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছতে আওয়ামী প্রভাবশালী আওয়ামী চাঁদাবাজ, মাস্তান ও আওয়ামী দলীয়করণকৃত পুলিশ বাহিনীকে কী বিপুল পরিমাণ চাঁদা গুণতে হয়। ঐ চাঁদার অঙ্ক কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবহনকৃত পণ্য মূল্যের তিন-চারগুণ দাঁড়ায়। সরকারের তরফ থেকে এই চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া যায়নি কিংবা ব্যবস্থা নিতে সরকার আগ্রহী নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের সোনার চাঁদাবাজরা সাত বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। হরতাল করেছে। অবরোধ করেছে। রাস্তাঘাট, রেল-নৌপথ, বন্দর অচল করে দিয়েছে। পুলিশের তাড়া খেয়েছে। দু'চারজন জেল খেটেছে। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তারা কিছু টাকা না বানালে ভবিষ্যতের আওয়ামী আন্দোলনে কীভাবে শরিক হবে। সে কারণেই সম্ভবত প্রশাসন চোখ বন্ধ করে আছে। আর এই ফাঁকে জনগণের টুটি চেপে তাদের ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের প্রশংসাই করতে চাই। কারণ, তারা অনাবৃত করে দিয়েছে যে, তাদের কোন রাজনৈতিক দর্শন বা আদর্শ নেই। আর্থিক সুবিধা দিয়ে তারা একটি ভাড়াটে মাস্তান বাহিনী পুষে রাখতে চাইছেন। ফলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি দখলবাজি, সারাদেশে প্রতিদিন যেন বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্র খুললে এরকম খবর একটা না একটা পাওয়াই যাবে। ঢাকায় বিষয়টি অনেকখানি ডালভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেভাবেই সারাদেশে শুরু হয়েছে আওয়ামী নেতাদের দখল উৎসব। সরকারি খাস জমির বস্তি উচ্ছেদ করে আওয়ামী নেতাদের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোথায়ও কোথায়ও বস্তি জ্বালিয়ে দিয়ে আওয়ামী নেতারা রাতারাতি বাজার বসিয়ে দিচ্ছে, পুলিশ বা প্রশাসন নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে সেইসব দৃশ্য অবলোকন করছেন।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোন পূর্বাভিজ্ঞতা ও আর্থিক সঙ্গতি ছাড়াই যে কোন লোক তিন কোটি টাকা পর্যন্ত কাজের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এর মাধ্যমে সরকারের মতলব আর গোপন থাকেনি। দলীয় কর্মীদেরই যে কাজ দেয়ার জন্য এই আয়োজন তাতে সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। এতে ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কী হাল হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়, ধারণা করা যায় এসব টেন্ডারের সকল টাকাই লুট হয়ে যাবে। বিনা টেন্ডারে যদি আওয়ামী রাঘব বোয়ালদের কেউ কেউ নাইকোকে ৩৬০ কোটি টাকার কাজ দিয়ে দিতে পারেন তাহলে চুনোপুটি নেতাদের ৩ কোটি টাকার কাজ দেয়া হবে না কেন? তারা কি আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার জন্য কোনই অবদান রাখেনি। নিশ্চয়ই রেখেছে। সুতরাং লুটের এই সুবিশাল আয়োজনে তারাইবা বঞ্চিত থাকবে কেন?
আর অর্থই সকল অনর্থের মূল। সেই কারণেই এখন দেশব্যাপী টেন্ডার দখলের জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, দিনমজুর লীগ, রিকশাচালক লীগ, ঝাড়ুদার লীগ প্রভৃতির মধ্যে ব্যাপক কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে। স্থানবিশেষে আবার ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রলীগ, যুবলীগ বনাম যুগলীগ, আওয়ামী ঘাট শ্রমিক লীগ বনাম ঘাট শ্রমিক লীগ, আওয়ামী ঘাট শ্রমিক লীগের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত নৈমিত্তিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রেও প্রশাসন ও পুলিশ একেবারেই নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পুলিশের সামনেই নাইন-সূটার, পিস্তল, রিভলবার, রামদা চাপাতি, কিরিচ ও চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশের সামনে। পুলিশের মনোভাব সম্ভবত এই যে দেখা যাক কে জেতে। জয়ী পার্টিকে অভিনন্দন জানাবে শেষে। মাঝখানে কোন সশস্ত্র মাস্তানকে ধরে পুলিশ সম্ভবত কোন বিপদের ঝুঁকি নিতে চায় না। কাকে ধরে কোন প্রভাবশালীকে রুষ্ট করে কোন হয়রানির শিকার হয়, কে বলতে পারে,

এই যে এক অনিয়ন্ত্রিত অস্থির অবস্থা তার বিপদ সম্পর্কে সরকার সম্ভবত কিছুই অাঁচ করতে চাইছে না। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার ফলে সারাদশে যে কি ভয়াবহ, অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে সরকার সেরকম একটি পূর্ব ধারণা যদি করতে পারতেন তাহলে সেটা সকল দিক থেকে ভালে হতো।
এসব নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে সরকার নিজেদের অগোচরেই যা বিষিয়ে তুলছে তা হল জনমত। এমনকি আওয়ামী লীগের যারা সমর্থক তাদের বেশিরভাগই শান্তিপ্রিয় মানুষ। এইসব হানাহানি, লুণ্ঠন অরাজকতা অস্ত্রবাজি এর মধ্যে তাড়ানি। তারা ভোটের সময় আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চায় বাকি সময় নির্বিঘ্নে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করতে চায়। আর বুঝতে চান নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কতটুকু বা বাস্তবায়িত হয়েছে। সন্দেহ নেই শাসকগোষ্ঠী সেই জায়গায় একটি বড় ধরনের ধস সৃষ্টি করেছে। যদিও তারা বলতে পারেন যে, জনমতে কী লাভ। জনমতের তোয়াক্কা না করেই আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের বক্তব্য অনুযায়ী, সামরিক শাসকদের সঙ্গে অাঁতাত করেই তারা ক্ষমতায় এসেছেন। তেমন অাঁতাতের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় আসবেন ও থাকবেন। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা হল জনগণের চূড়ান্ত বিচারে ক্ষমতার নিয়ামক ভোটের মাধ্যমে না হলেও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ এসব অাঁতাতকারী অপশাসকদের হটিয়ে দেয়।
এছাড়া শাসকদের মধ্যে অবিরাম অসত্য বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রবণতা আছে। যেমন শাসকদের কেউ যদি বলেন, চালের মূল্য জোটসরকারের আমল থেকে এখন অনেক কম তাহলে জনগণের কাছে সে কথা প্রতারণামূলক ও হাস্যকর মনে হতে বাধ্য। কারণ তারা অন্তত অবহিত আছেন যে, জোট সরকারের আমলে যে চাল তারা ১৬ টাকায় খেয়েছেন সে চাল এখন ২৮ টাকা। যে ডাল ৪৬ টাকায় খেয়েছেন তার মূল্য ১১৫ টাকা। ফলে এসব বক্তব্য তাদের কাছে ফাসেক মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তারা যে এসব কথা পছন্দ করেন না সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল সেটা অনুভব করলে ভাল হতো। কিছুকাল আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলন। তাতেও এর বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা, যারা অর্থবিত্তের স্বাদ বঞ্চিত ছোটখাট পদেই তৃপ্ত-বিস্তর অভিযোগ করেছে শাসক দলের হোমড়াচোমড়াদের বিরুদ্ধে। সেখানেও দেখা গেল বড় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বিস্তর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যা বলছেন বা করছেন তার সঙ্গে তৃণমূলের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোন সম্পর্ক নেই। সরকার এটাকেও তাদের কর্মকান্ডের একটি মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। কিন্তু সেরকম বিবেচনাবোধ এখন পর্যন্ত সরকারের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

সরকার খুব উচ্চকণ্ঠে তাদের সাফল্যের গাঁথা প্রচার করে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য না হয় বাদই দিলাম। সামান্য আর একটি খাতের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়, আর তা হল জনশক্তি রফতানি। সরকারের উদাসীনতা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ধস নেমেছে জনশক্তি রফতানি খাতে। মাত্র একবছরের ব্যবধানে জনশক্তি রফতানি অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। আর সেই বাজার দখল করে নিয়েছে প্রধানত ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাস ও মিশনগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলা ও প্রতিবেশী ভারতকে ছাড় দেয়ার মনোভাবের কারণে জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০০৭ সালে বিদেশে জনশক্তি রফতানি হয়েছিল ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬০৯ জন। কিন্তু বর্তমান সরকারের শাসনকালের প্রথম এক বছরে ২০০৯ সালে অর্ধেকে নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন। কিন্তু সরকার এই সংখ্যাকেই বড় করে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করছে তাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং উদ্যোগহীনতার ফলে মাত্র এক বছরেই যে জনশক্তি রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে সেই সত্যটি তারা শেষ পর্যন্ত চেপেই গেছেন।
জনশক্তি রফতানিতে এই বিশাল ধসের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোর্শেদ সানাউল্লাহ কায়ানি জানান যে, বর্তমান সরকার ভারতের সাথে যে সখ্য গড়ে তুলেছে সে তুলনায় জনশক্তি নিয়োগকারী মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। বিশ্বমন্দার প্রভাব সব দেশের উপরই পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশের জনশক্তি রফতানি বন্ধ নেই। বাংলাদেশের শ্রমিক রফতানি অর্ধেকে নেমে এলেও ভারত ও পাকিস্তানের শ্রমিক রফতানি এক শতাংশও কমেনি। যদিও বর্তমান সরকারের ১২ মাসের শাসনকালে সুদর্শনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপুমনি ২৬ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছে। সেই সফরের কোনটিই জনশক্তি রফতানির জন্য নিবেদিত ছিল বলে জানা নেই। ফলে তার ঐ সফরগুলো প্রমোদভ্রমণে পরিণত হয়েছে।
হোমবি তোমবি বিচার করেঙ্গা। মামলা দায়ের প্রভৃতি নিয়ে সরকার যতোটা ব্যস্ত থেকে রাষ্ট্রের কল্যাণে তেমন কোন পদক্ষেপই নিতে পারেননি। সেই কারণে সর্বক্ষেত্রে এই ধসগুলো এতটাই প্রকট রূপ ধারণ করেছে। আমাদের পরামর্শ এই পথ পরিহার করে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণের পথ অনুসরণ করুন। ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ।।

Tuesday, 23 March 2010

গার্মেন্টস কারখানা কেন মৃত্যু-ফাঁদ হবে?

গত বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার অদূরে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তার ভোগড়া এলাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২১ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। আগুনে পড়ে এবং আগুনের উত্তাপ ও ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এসব শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন মহিলা রয়েছেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে দমকল হেড কোয়ার্টার, কুর্মিটোলা, মিরপুর, গাজীপুর ও টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা চেষ্টার পর রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ঘটনাস্থলে বা কাছাকাছি পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় পুরো এলাকা ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। আহতদের আর্তচিৎকার এবং নিহত ও আটকেপড়া শ্রমিকদের স্বজন এবং সাধারণ মানুষের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ অসহনীয় বিষণ্ণতায় ছেয়ে যায়। প্রাণহানি ছাড়াও সোয়েটার ফ্যাক্টরির মালামাল ও অবকাঠামোর বিপুল ক্ষতি হয়েছে।

 প্রত্যক্ষদর্শী ও দমকল সূত্রের খবর : গাজীপুর সদরের ভোগড়া এলাকার গরিব এ্যান্ড গরিব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে অবিরাম উৎপাদন কাজ চলছিল। এ সময় সাততলা ভবনের দোতলায় স্যুইং সেকশনে রাত ৮টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুন কারখানার অন্যান্য তলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এতে কারখানার ভেতরে আটকা পড়ে এবং অগ্নিকান্ড-উৎসারিত ধোঁয়ায় বন্ধ হয়ে শ্রমিকরা মৃত্যুবরণ করেন। অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ কেউ মনে করেন, বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটতে পারে। তবে অগ্নিকান্ডের কারণ যাই থাক, এতে বেশ কয়েকটি মূল্যবান জীবনের অবসান ঘটেছে। অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন এবং কারখানার মালিকপক্ষ বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এর পাশাপাশি বিদেশী বায়ারদের কাছে কারখানার মালিক শর্ত অনুযায়ী সোয়েটার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হবেন এবং কারখানাটি আবার কবে উৎপাদনক্ষম হবে, তা-ও বলা যাচ্ছে না।

 গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকান্ড আতংকজনক নিয়মিত দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর আগেও শ্রমঘন গার্মেন্টস কারখানায় একাধিক অগ্নিকান্ডে বিপুল প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটতে দেখা গেছে। অনেক সময় ‘অন্তর্ঘাতী তৎপরতায়ও গার্মেন্টস শিল্পে অগ্নিকান্ড ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর পেছনে বিদেশী শক্তির মদদপুষ্ট দুষ্কৃতকারীদের অন্তর্ঘাত থাকার আশংকাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ ও সমৃদ্ধিতে ঈর্ষাগ্রস্ত একটি বিদেশী শক্তি গার্মেন্টস শিল্পে নৈরাজ্য ও অন্তর্ঘাত চালানোর অপকৌশলের সাথে জড়িত বলে নানা মহল মনে করেন। হরতাল-বিক্ষোভ, ভাংচুর-নৈরাজ্য সংঘটনকারীদের ধরাপড়ার ভয় থাকে। এ কারণেই দুর্বৃত্তরা চুপিসারে অগ্নিকান্ড ঘটানোর মতো অন্তর্ঘাত চালাতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ‘শিল্প পুলিশ' গঠনের যে প্রস্তাব সকল মহল সমর্থন করেছেন, সরকার আজও তা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে গার্মেন্টস শিল্প দুর্বৃত্ত ও অন্তর্ঘাতকদের জন্য এক প্রকার অরক্ষিত হয়ে আছে। শিল্প-মালিকদের পক্ষ থেকেও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দুর্ভেদ্য করে গড়ে তোলা হয়নি। ফলে অগ্নিসংযোগ থেকে গার্মেন্টস-এ হামলা, ভাংচুর ইত্যাদি ঘটনাগুলো একপ্রকার বিনা বাধায়ই ঘটতে পারছে। বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিট থেকে যাতে কারখানায় আগুন লাগতে না পারে এবং লাগলেও যাতে স্থানীয় পর্যায়ে তাৎক্ষণিক আগুন নিভিয়ে ফেলা যায় প্রতিটি কারখানায় সে জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষিত জনশক্তি এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রাযুক্তিক অবকাঠামো থাকা দরকার। কেননা স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত আগুন নেভানোর কোন ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিটি অগ্নিকান্ডেই বিপুল প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটছে। অগ্নিকান্ড ঘটার সাথে সাথে বিকল্প সিঁড়ি দিয়ে যাতে দ্রুত শ্রমিকরা নীচে নেমে আসতে পারেন, তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। গার্মেন্টস শিল্পে একাধিক দুর্ঘটনার পটভূমিতে দুর্ঘটনা এড়াতে এবং ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বিশেষজ্ঞ মহল ও আইন-শৃংখলা রক্ষাবাহিনী গার্মেন্টস মালিকদের যেসব ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, সেটা দেখভাল করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পর্যায়ে দায়িত্ব প্রতিপালিত হয় না বলেই গার্মেন্টস শিল্পে অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটছে। এব্যাপারে সরকার গার্মেন্টস শিল্প-মালিক সমিতির সাথে মিলে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে পারেন। অগ্নিকান্ড ঘটলে শ্রমিকরা কিভাবে তা থেকে আত্মরক্ষা করবেন এবং নীচে নেমে আসবেন, তার প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত। এছাড়া প্রতিটি গার্মেন্টস কারখানায় ফার্স্ট এইড ব্যবস্থা থাকা দরকার। তার চেয়েও বেশি দরকার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির প্রতিতলা ভবনে প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি।

 আমরা লক্ষ্য করছি, গাজীপুরের সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ বা শ্রমিকরা প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে আগুন নেভানোর উদ্যোগ নিতে পারেননি। এটা দুঃখজনক। যদিও গার্মেন্টস শিল্প মালিক সমিতি নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে অনুদান দেবার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এটা প্রাথমিকভাবে অপ্রতুল নয়। তবে এই সাথে সরকারেরও সহযোগিতার হাত নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। একটি দরিদ্র পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তির আয় থেকে পরিবারটি যখন বঞ্চিত হয় তখন তাদের জীবনে নতুন করে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে গার্মেন্টস মালিককে গ্রেফতার করে বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবী করা হয়েছে। আমরা আশা করি, উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিকান্ডের প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। একই সাথে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক পক্ষ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কোন গাফিলতি থাকলে তাও নিরূপণ করে প্রতিকার করা উচিত।

 আমরা আশা করবো, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে আর যাতে অগ্নিকান্ড না ঘটতে পারে, সে জন্য সরকার ও শিল্প মালিকদের পক্ষ থেকে সমন্বিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিহত শ্রমিকদের পরিবারসমূহকে যাতে পথে বসতে না হয়, সে জন্য উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ ছাড়াও তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনে আরও কি করা যায়, মানবিক দিক বিবেচনা করে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। আহত শ্রমিকদের উপযুক্ত চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ২১ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন মর্মান্তিকভাবে। এটাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে কোন পক্ষই এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারেন না। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সহানুভূতি জানাচ্ছি এবং আহত শ্রমিকরা নিরাময় হয়ে উঠুক, আন্তরিকভাবে সে কামনাই করি।

Sunday, 21 March 2010

অশান্ত করে তোলা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম

অশান্ত করে তোলা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী, অখন্ডতা বিরোধী ও সংবিধান বিরোধী যে চুক্তি আওয়ামী লীগ বিচ্ছিন্নতাবাদী ঘাতক দল শান্তি বাহিনীর সঙ্গে ১৯৯৬ সালে যখন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল আমরা তখনই তার বিরোধিতা করেছিলাম এবং বলেছিলাম যে, এই চুক্তির ফলে ঐ অঞ্চলের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাছাড়া শান্তির বদলে অশান্তির আগুন পার্বত্য চট্টগ্রামকে গ্রাস করে ফেলবে। এরপর অনেকদিন পার হয়ে গেছে। এক দফায় আওয়ামী লীগ তার শাসনকালের মেয়াদ শেষ করেছে ২০০১ সালে। আওয়ামী লীগ তার শাসনকালে ঐ চুক্তির ধারাসমূহ পুরোপুরি বাস্তবায়নে সাহসী হয়ে ওঠেনি। বিএনপি তথা চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ও রকম একটি সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তি বাস্তবায়নে নতুন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বটে, তবে আওয়ামী লীগ আমলে ঐ চুক্তির বাস্তবায়নে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল সেগুলোও রদ করা হয়নি। ফলে এরকম একটি দেশ ঘাতক চুক্তি বহালই থেকে যায়।

 এটা কবুল করতে দ্বিধা নেই যে, ২০০১-০৬ সালের শাসনকালে বিএনপি তথা জোট সরকার এমন বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনকালে আওয়ামী লীগ যেসব অপকর্ম প্রকাশ্যে ও নিভৃতে করেছিল, তার অনেক বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার সময় হয়ে ওঠেনি। জোট সরকারের শাসনকার্য পরিচালনার দিক থেকে এটি কোন শুভলক্ষণ না। সে কারণেই আওয়ামী সরকারের পাপ বিএনপি তথা চারদলীয় জোট এড়িয়ে যেতে পারে না। ঐ সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এমন ছিল যে, শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে রচিত স্বাধীনতা যুদ্ধে বিডিআর বাহিনীর কৃতিত্ব লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল একটি গ্রন্থে। গ্রন্থের নাম ‘মুক্তিযুদ্ধ ও রাইফেলস্।' তাতে গবেষকরা লিখেছিলেন যে, ‘১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান নিজেকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট দাবি করে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক আহবান জানান।' শেখ হাসিনার সরকার দেশের সকল গ্রন্থাগার ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে এই বই প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ঐ সরকার ‘মুক্তিযুদ্ধে রাইফেলস ও অন্যান্য বাহিনী' শিরোনামে নুতন একটি বই লিখিয়েছিল এবং যেসব স্থানে মুক্তিযুদ্ধ ও রাইফেলস বইটি সংরক্ষিত ছিল সেসব স্থানে নতুন বইটি প্রতিস্থাপন করেছিল। জিয়াউর রহমান যে নিজেকে প্রেসিডেন্ট দাবি করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন নতুন বই থেকে তা বাদ দেয়া হয়েছিল। পুরাতন বইয়ে জেনারেল ওসমানিকে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বলে উল্লেখ ছিল। নতুন বইয়ে শব্দগুলো পাল্টে তাকে সেনাবাহিনী প্রধান বলে উল্লেখ করা হয়। কেউ কেউ ইতিহাসের এই বিকৃতির বিষয়টি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ২০০১-০৬-এর সরকার যে, ততোটা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি এ থেকে সে কথাও প্রমাণিত হয়। পারলে এই ঘাটতিগুলো অপূর্ণ থাকতো না।

 তবে এ কথাও সত্য যে, জোট সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্যও নতুন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ও জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত জোরদার হয়ে ওঠে। সে চক্রান্তকারীরাও শুধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক শোষণ লুণ্ঠনের লোভী ছিল না। তারা ছিল বাংলাদেশের অখন্ডতা বিরোধী অপশক্তি। সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হয়েছিল জেনারেল মঈনের মত একদল বিশ্বাসঘাতক রাষ্ট্রদ্রোহী চক্র। তারা তাদের সঙ্গেই ‘অাঁতাতের মাধ্যমে' ক্ষমতাসীন হয়েছে বর্তমান মহাজোট সরকার। বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় নিলে সুস্পষ্টভাবে ধারণা জন্মাতে বাধ্য যে বর্তমান সরকার নয়, রাষ্ট্র পরিচালনা করছে ভিন্ন কেউ। যাদের নির্দেশে মঈন উ আহমেদের সরকার পরিচালিত হত বর্তমান সরকারও তাদের নির্দেশ ও কৃপায় পরিচালিত হচ্ছে।

 বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঈন উ আহমেদের সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছে। তাকে ‘অন্যায়ভাবে' জেলে আটক রাখার কথা বলেছেন। তাকে বন্দী অবস্থায় মানসিক নির্যাতনের কথা বলেছেন। তেমনিভাবে তাকে হত্যার জন্য বিষ প্রয়োগের কথা বলেছেন। তারপরেও ঐ নির্যাতনকারী ও হত্যার অপচেষ্টাকারীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারছেন না। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মঈনুদ্দীন আহমদ যাদের হাতের পুতুল ছিলেন বর্তমান সরকারও তাদেরই হাতের পুতুল। এক পুতুল কি করে আরেক পুতুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আর সেই কারণে বাংলাদেশ বিরোধী চক্রের নির্দেশনা মতোই সম্ভবত এবার ক্ষমতাসীন হয়েই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিতে শুরু করেছে। এবং যথারীতি পার্বত্য চট্টগ্রামেরও পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে।

 পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে এখন আর কারো মধ্যেই কোন লুকানো ছাপানোর ব্যাপার নেই। আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা নানা নামে বাংলাদেশে এসে প্রকাশ্যে বলতে সাহস পাচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সকল বাংলাভাষাভাষীকে বহিষ্কার করে সেখানে শুধু উপজাতীয়দের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী প্রায় ১২ লাখ বাসিন্দার অর্ধেক বাংলা ভাষাভাষী। এসব ষড়যন্ত্রকারী এমন কথা বলারও সাহস পাচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষীরা যদি স্থলভাগে এসে বসতি স্থাপন করতে চায় তবে তাদের দেয়া হবে নগদ অর্থ, ঘর এবং গরু। সরকার শুধু তাদের জন্য খাস জমি দিক। কিন্তু কেন সার্বভৌম বাংলাদেশের ভেতরে বাংলাদেশের এক দশমাংশ অঞ্চল বসবাসের জন্য ছেড়ে দিতে হবে মাত্র ৫ লাখ উপজাতীয়দের জন্য। অথচ সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক দেশের যেকোন প্রান্তে বসতি স্থাপনের অধিকার রাখে। যারা উপজাতীয়দের জন্য দরদে গদগদ হয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী এমন কথা বলছেন, সরকারের তো উচিত ছিল তাদের সঙ্গে সঙ্গে গলা ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেয়া। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি বাংলাদেশ বিরোধী স্বঘোষিত বিভিন্ন ভূঁইফোড় সংগঠনের ঐসব অপগন্ড ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী গদগদ হয়ে সাক্ষাতকার দিচ্ছেন। তাদের চক্রান্ত প্রাথমিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাঙালিমুক্ত করে সেখানে একটি খৃস্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এবং তার মাধ্যমে মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল করে ফেলা। আর সে রকম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে ঐ অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া। পার্বত্য চট্টগ্রামে সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ইতিমধ্যে উপজাতীয়দের ব্যাপকভাবে খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার কাজ শুরু করেছে খৃস্টান মিশনারীগুলো ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। এদের সঙ্গে যুক্ত আছে আরও কিছু বাংলাদেশ বিরোধী চক্রান্তকারী রাষ্ট্র। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, মুসলিম নামধারী কোনো এনজিও সেখানে উপজাতীয়দের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করলেও হায় হায় রব ওঠে। কিন্তু শিক্ষা বঞ্চিত দরিদ্র উপজাতীয়দের পাইকারিহারে নানা লোভ দেখিয়ে খৃস্টান করলে তাদের ধর্ম সংস্কৃতিও নষ্ট হয় না, হায় হায় রবও ওঠে না।

 এই সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত সরকারের না বোঝার কোনো কারণ নেই। তারপরও তারা চক্রান্তকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে বসেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পর সেখানে এক অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা সেখানে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি, ডাকাতি, দখল, জখম, ধর্ষণের মতো নৃশংস কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বাঙালিরা জমি চাষ করতে গেলে চাঁদা, জমির ফসল বিক্রি করতে গেলে চাঁদা, গরু পালন করতে চাইলে চাঁদা, পোল্ট্রি ফার্ম দিতে চাইলে চাঁদা, দোকান-পাট বসাতে চাইলে চাঁদা-এমনই এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সেখানে সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে বসবাসরত বাঙ্গালিরা এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়ে কোনো ফল পায়নি।

 ফলে ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিল সেখানে বসবাসরত বাঙালিরা। উপজাতীয়দের আবার কোনো এক গ্রুপকে চাঁদা দিলেই যথেষ্ট নয় তাদেরও আছে ভিন্ন ধরনের প্রতিদ্বনদ্বী গ্রুপ। তারা কেউ কেউ শান্তি চুক্তির সমর্থক, কেউ কেউ শান্তি চুক্তি বিরোধী। বাঙালিদের এই উভয় গ্রুপকে চাঁদা দিয়ে চলতে হবে। এই অবস্থা কেন মেনে নেবে তারা? এর মধ্যে সরকার ভূমি কমিশন গঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের ভূমির অধিকার চিরতরে লুপ্ত করার এক মরণ খেলায় লিপ্ত হয়েছে। এই ভূমি জরিপ নিয়ে বিরোধের কারণে গত ২০শে ফেব্রুয়ারি একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী উপজাতীয় রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১৫টি গ্রামে বাঙালিদের বসতিতে হামলা চালিয়ে একযোগে দুই শতাধিক ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় প্রশাসন সেনাবাহিনী তলব করে। উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর ওপর বৃষ্টির মতো গুলী বর্ষণ শুরু করে। সেনাবাহিনীও এর পাল্টা জবাব দেয়। ফলে সেখানে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এলাকার দিকে অগ্রসর হলে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তাদের তিনঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। সাজেক এলাকা থেকে ফেরার পথে মাচালবং নামক স্থানে কাঠের সেতু জ্বালিয়ে দিয়ে খাগড়াছড়ির ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালেহীনকে আটক করে রাখে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। পরে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি ঘটনার জের ধরে সেখানে বসবাসকারী বাঙালিরাও প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছে। পরদিন বাঘাইছড়ির ইউএনও'র ওপর হামলা করে তার গাড়ি ভাংচুর করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। বেশ কয়েকঘণ্টা সাংবাদিকদের নিয়ে অবরুদ্ধ থাকেন তিনি। ২০ তারিখ থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐ এলাকায় রাতে কারফিউ ও দিনে ১৪৪ ধারা চলছে। এত কিছুর পরও গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে উপজাতীয়রা আগুন লাগিয়ে বাঙালিদের ছয়টি পরিবারের সব কিছু জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দিয়েছে। এখনও সেখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সাময়িকভাবে ঘটনা স্তিমিত হয়ে এলেও সরকারের বর্তমান মনোভাব ও পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে সেখানে স্থায়ী সমাধান অর্জন সম্ভব হবে না।

 পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় বাসিন্দাদের পক্ষে দাঁড়াবার লোকের অভাব নেই। জাতিসংঘের ইউএনডিপি আছে, তথাকথিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন' আছে। আর কিছু ইউরোপীয় ইহুদী ঘরানার রাষ্ট্র আছে। আর দেশের ভেতরে আছে বাঙালি মুসলমান নামধারী কিছু অপগন্ড। পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো ঘটনা ঘটলেই তারা শহীদ মিনারে ছুটে গিয়ে সেখানকার বাঙালি বাসিন্দা ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করেন। তাদের পক্ষে মিছিল নিয়েও নামেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা বাঙালিদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। উন্মুক্ত সীমান্তের ফলে পাওয়া ভারত থেকে আসা অস্ত্র দিয়ে বৃষ্টির মত গুলী ছুঁড়েছে। বাঙালিদের বসতঘরে, দোকান-পাটে আগুন লাগিয়েই যাচ্ছে। তবুও তারা বলতে চাইছেন ঘটনার জন্য বাঙালিরা ও সেনাবাহিনীই দায়ী। অথচ সেনাবাহিনী নিজে থেকে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়নি। বেসামরিক প্রশাসন শান্তি-শৃক্মখলা রক্ষায় তাদের ডেকে এনেছিল বলেই তারা সেখানে এসেছেন।

 আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে বসবাসকারী বাঙালি ও উপজাতীয়রা বাংলাদেশেরই নাগরিক। তাই সকল ক্ষেত্রে তাদের অধিকার সমান। এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। -ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

Saturday, 13 March 2010

নাটক সাজানো হচ্ছে

নাটক সাজানো হচ্ছে 
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে সপ্তাহের মধ্যেই বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে। বিচার শুরুর সব কাজ শেষ হয়েছে। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেছেন ঃ ‘জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচারের মাধ্যমে একটি কলঙ্ক দূর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাকি কলঙ্ক দূর করা হবে'।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter