Flickr

Saturday, 13 March 2010

নাটক সাজানো হচ্ছে

Posted by   on

নাটক সাজানো হচ্ছে 
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারে সপ্তাহের মধ্যেই বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে। বিচার শুরুর সব কাজ শেষ হয়েছে। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেছেন ঃ ‘জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচারের মাধ্যমে একটি কলঙ্ক দূর হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাকি কলঙ্ক দূর করা হবে'।
উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধের বিচারের হম্বি-তম্বি সরকারের দায়িত্বশীল মহলের মুখে হর-হামেশাই শোনা যায়। তবে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে নিজেদের হাতে মীমাংসিত রাজনৈতিক অশান্তি, সংঘাত ও সহিংসতার দাবানল জ্বালানোর পরিণতি নিয়েও শঙ্কিত। কেননা স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার না করার সিদ্ধান্ত নেন, যা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত একটি দলিল হয়ে আছে। দালাল আইনের প্রণেতা তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ মুজিব নিজেই রাজনৈতিক সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক বিরোধী মহলের সাথে তিক্ততার আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটে। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ন' মাসে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কাজ করেছে। দেশের ফৌজদারী আইনে তাদের বিচার বাতিল করা হয়নি।
১৯৭১ সালে যারা ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও সম্ভাব্য গোলামির শৃক্মখল এড়াতে ভারত নিয়ন্ত্রিত মুক্তিযুদ্ধের সাথে মিলতে পারেননি, তারা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সাথে সাথে দেশের আইনানুগ নাগরিক হিসেবে প্রচলিত আইন ও সংবিধানের আওতায় দেশ গঠনের ইতিবাচক রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেদের শ্রম ও মেধার সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশের প্রথম পর্বের সাড়ে তিন বছর এ দেশের ইসলামী দলগুলোর আনুষ্ঠানিক রাজনীতি চর্চার অধিকার না থাকায় তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তারা কোনো গোপন রাজনৈতিক কার্যক্রম বা অন্তর্ঘাতেও জড়িত হননি। বরং সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও সংহতি কামনা করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-এর আগস্ট পর্যন্ত তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার যেসব নিয়মতান্ত্রিক ও সশস্ত্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, তাতেও জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ বা অন্যান্য ইসলামপন্থী দলের কোনো অংশীদারিত্ব ছিল না। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির অংশীদার ছিলেন না, তেমন বামপন্থীরাও জবরদস্তি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের প্রশ্রয় ও স্বীকৃতি দেয়নি। রাজনীতির এই বিভাজনের ধারায় কোনো ইসলামপন্থী দল মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হতে চাইলেও দেশে কিংবা ভারতে তাদেরকে কোনো পক্ষই মেনে নিত না। মজলুম ভাসানীর মতো শীর্ষ স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ভারতে গেলে ভারত সরকার তাকে ‘নজরবন্দী' করে রাখে। ১৯৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে শেখ মুজিব যদি সশস্ত্র যুদ্ধকে অনিবার্য জাতীয় কর্তব্য বলে মনে করে থাকেন, তাহলে তার দায়িত্ব ছিল ডান-বাম-উগ্র-ইসলামী সকল পক্ষের প্রতি জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে একটি একক মঞ্চে একত্রিত করা। এ ধরনের কোনো উদ্যোগ তিনি নেননি। ফলে পুরনো বিভাজনের ধারায়ই রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে। যার প্রতিফলন ঘটেছে মুক্তিযুদ্ধে। এই রাজনৈতিক বাস্তবতা শেখ মুজিব জানতেন বলেই স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি যতদ্রুত সম্ভব ‘সাধারণ ক্ষমা' ঘোষণার মাধ্যমে বিভাজন ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
তবে সেদিনও আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চড়ে বর্ণচোরা ইন্ডিয়ান পঞ্চম বাহিনী এবং ইসলামী বিদ্বেষী নাস্তিক বাম ভেকধারী সাম্রাজ্যবাদের চররা মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শক্তিকে ‘স্বাধীনতা বিরোধী' আখ্যা দিয়ে উস্কানি দিয়ে নির্মূল অভিযানে নামায়। সংসদীয় বহুদলীয় রাজনীতির ধারা থেকে আওয়ামী লীগকে যে সব বামপন্থী কি ভীষণ বিপথগামী করে একদলীয় বাকশাল-ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছিল, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশীদাররা সেই একই পথে আওয়ামী লীগকে বিপথগামী করে গণতান্ত্রিক সুশাসন ও জাতীয় ঐক্যের বদলে সংঘাত-প্রতিহিংসার রাজনীতির আবর্তে ঠেলে দিতে সফল হতে চলেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের অজুহাতে জামায়াতে ইসলামীকে এবং সাংবিধানিক পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের অজুহাতে ইসলামী দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে পাঁয়তারা চলছে তা আওয়ামী লীগের মূল এজেন্ডা না হলেও আওয়ামী লীগ তাদের চাণক্যমার্কা সহচরদের চাপে তা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারের জিগির প্রথমে তুলেছে জাহানারা-ইমাম-শাহরিয়ার কবীরদের ‘ঘাদানিক'। তারা তদানীন্তন বিএনপি সরকারের কিছু নীতিনির্ধারকের দ্বৈত ভূমিকার সুযোগ নিয়ে ‘গণআদালত' প্রতিষ্ঠা করে তথাকথিত বিচারিক রায় পর্যন্ত ঘোষণা করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। এবারে তারা তাদের ষড়যন্ত্রের ক্যানভাস আরও বিস্তৃত করে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠন করে তাদের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রমে সরকারকে সম্পৃক্ত করতে বাধ্য করে। এই প্রতিহিংসামূলক বিচারিক প্রহসনের নেপথ্যে কয়েকটি বিদেশী শক্তি তাদের স্বার্থে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে ইসলামী শক্তিকে উৎখাত করতে পারলে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ এবং আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদের লুণ্ঠন এবং তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠার পথে কোন কার্যকর প্রতিরোধ থাকবে না বলে তারা মনে করেন। বাংলাদেশকে সেক্যুলার রাষ্ট্র বানানো এবং ইসলামী শক্তি নির্মূল অভিযানে বৈদেশিক শক্তিসমূহকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কৌশলগত নিবিড় সহায়তা দিচ্ছে যায়নবাদী অপশক্তি এবং তাদের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা-মোসাদ। অনেকের ধারণা, যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালাতে যায়নবাদী চক্র কয়েকটি সংস্থা ও কতিপয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কিছু কর্মীর পেছনে কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢেলে যাচ্ছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা ‘শান্তি কমিটির' সদস্য ছিলেন এবং যারা রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন, ঐসব পরিবারের উত্তরাধিকাররা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদেও রয়েছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যার শ্বশুর কূলেও ‘শান্তি কমিটির' লোক ছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এক মন্ত্রীর পিতার নামও যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা হয়েছে। সুতরাং যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে হলে ‘ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়' করতে হবে। যেখানে রাষ্ট্রের স্থপতি নিজেই দেশে থেকে বা ভারত না গিয়ে ন'মাস পাকিস্তানীদের মেহমান হিসেবে দিন কাটিয়েছেন, সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাপরাধীর সংজ্ঞা নিরূপণ করা দুরূহ বটে। বর্তমান সরকার তাদের মতলববাজ দেশী-বিদেশী বান্ধবদের উস্কানিতে পড়ে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের প্রহসনে অপদস্থ করার ফাঁদ পেতেছে। দেশের প্রচলিত আইন, সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের কোন ধারায়ই সরকারের রোষানলের শিকার এসব জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হতে পারেন না। তাদের বিরুদ্ধে গত প্রায় চার দশকে কোন অভিযোগ হয়নি। আওয়ামী লীগের প্রথম সাড়ে তিন বছর, পরবর্তী আওয়ামী ৫ বছরেও হয়নি। বানানো ছাড়া কোন অভিযোগ আনয়নই তাদের বিরুদ্ধে সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত: যুদ্ধাপরাধ ইস্যু একটি মীমাংসিত বিষয়। ৩৮ বছর পর মীমাংসিত বিষয়কে সামনে আনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তৃতীয়ত: পাকিস্তানী ১৯৫ জন সৈনিকের বিরুদ্ধে তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার চূড়ান্তভাবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা তাদের আনুষ্ঠানিক নিঃশর্ত মুক্তি দিয়েছে এবং এ মর্মে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তিও করেছেন। যে সব রাজনৈতিক নেতাকে প্রহসনের বিচারে ভিক্টিম করার জন্য মঞ্চ সাজানো হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন কেস সাজিয়েও লাভ হবে না। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের কোন অভিযোগ আনারও কোন সুযোগ নেই। সুযোগ নেই বলেই নাট্যকার দিয়ে নাটক সাজানোর হাস্যকার উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে। এদিকে সরকারের ফ্যাসিবাদী ভূমিকার বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে : বিরোধীদল নির্মূলের লক্ষ্যে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter