Flickr

Tuesday, 30 March 2010

গর্জনের মতো বর্ষণ হচ্ছে না

Posted by   on

গর্জনের মতো বর্ষণ হচ্ছে না
                       
সরকারের তর্জন গর্জন তেমনই বহাল আছে। সরকার হয়কে নয়, নয়কে হয় করেই যাচ্ছেন। স্বীকার করি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ তথা ভোটার আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছেন। তারা চাপা পিটিয়ে চলেন না। শ্রমজীবী মানুষ। কেউ কৃষক। কেউ শ্রমিক। কেউ বা দিনমজুর। দিনান্তের পরিশ্রমে তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। তারা বাজার করে খান। ভাগ্য বদলের জন্য জায়গা জমি ভিটেমাটি বিক্রি করে ছেলেদেরকে অধিক উপার্জনের জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য চেষ্টা করেন। দরকার পড়লে আওয়ামী লীগের পক্ষে মিছিল করেন। ভোটের সময় নৌকায় ভোট দেন।
আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা, টেলিভিশনের ক্যামেরায় যাদের ধারণ করা হয় তারা যখন টিভির পর্দায় কাঁপিয়ে বলেন যে, দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে, জিনিসপত্রের দাম মানুষের নাগালের ভেতরে, গত এক বছরে বিদেশে রফতানি হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ, তখন ঐসব আওয়ামী সমর্থকও বসে কপালে করাঘাত করতে থাকে। যুক্তি হিসেবে বলা যেতে পারে যে, কৃষিপণ্যের মূল্য যদি বেড়ে থাকে তাহলে তো কৃষকই লাভবান হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী নেতাদের এই ধারণা নেই যে, দেশের কৃষির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অল্পসংখ্যক ভূমির মালিক। বাকি সব কৃষির মজুর। দু'চার জনে বিক্রি করে, অন্যরা কিনে খায়। যে কিনে খায় সে বাজারে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পায় কতোটা সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে দ্রব্যমূল্য।

কাহিনীর আবার এখানেই শেষ নয়। পত্র-পত্রিকায় সরেজমিন রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, যে কৃষক লাভবান বলে মনে করা হচ্ছে সে লাভের মুখ দেখতে পারছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা খেয়ে নিচ্ছে লাভের গুড়। ফলে উৎপাদনকারী যে পণ্য দু'টাকায় বিক্রি করছে ভোক্তা পর্যায়ে এসে তার দাম ১০ টাকা থেকে ২০ টাকায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এখানে নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা নেই। আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রী সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছেন, দেশের দূর-দূরান্ত থেকে এক ট্রাক কৃষিপণ্য ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছতে আওয়ামী প্রভাবশালী আওয়ামী চাঁদাবাজ, মাস্তান ও আওয়ামী দলীয়করণকৃত পুলিশ বাহিনীকে কী বিপুল পরিমাণ চাঁদা গুণতে হয়। ঐ চাঁদার অঙ্ক কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবহনকৃত পণ্য মূল্যের তিন-চারগুণ দাঁড়ায়। সরকারের তরফ থেকে এই চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া যায়নি কিংবা ব্যবস্থা নিতে সরকার আগ্রহী নয়। কারণ, আওয়ামী লীগের সোনার চাঁদাবাজরা সাত বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। হরতাল করেছে। অবরোধ করেছে। রাস্তাঘাট, রেল-নৌপথ, বন্দর অচল করে দিয়েছে। পুলিশের তাড়া খেয়েছে। দু'চারজন জেল খেটেছে। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তারা কিছু টাকা না বানালে ভবিষ্যতের আওয়ামী আন্দোলনে কীভাবে শরিক হবে। সে কারণেই সম্ভবত প্রশাসন চোখ বন্ধ করে আছে। আর এই ফাঁকে জনগণের টুটি চেপে তাদের ত্রাহি অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের প্রশংসাই করতে চাই। কারণ, তারা অনাবৃত করে দিয়েছে যে, তাদের কোন রাজনৈতিক দর্শন বা আদর্শ নেই। আর্থিক সুবিধা দিয়ে তারা একটি ভাড়াটে মাস্তান বাহিনী পুষে রাখতে চাইছেন। ফলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি দখলবাজি, সারাদেশে প্রতিদিন যেন বেড়েই চলেছে। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্র খুললে এরকম খবর একটা না একটা পাওয়াই যাবে। ঢাকায় বিষয়টি অনেকখানি ডালভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেভাবেই সারাদেশে শুরু হয়েছে আওয়ামী নেতাদের দখল উৎসব। সরকারি খাস জমির বস্তি উচ্ছেদ করে আওয়ামী নেতাদের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোথায়ও কোথায়ও বস্তি জ্বালিয়ে দিয়ে আওয়ামী নেতারা রাতারাতি বাজার বসিয়ে দিচ্ছে, পুলিশ বা প্রশাসন নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে সেইসব দৃশ্য অবলোকন করছেন।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোন পূর্বাভিজ্ঞতা ও আর্থিক সঙ্গতি ছাড়াই যে কোন লোক তিন কোটি টাকা পর্যন্ত কাজের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এর মাধ্যমে সরকারের মতলব আর গোপন থাকেনি। দলীয় কর্মীদেরই যে কাজ দেয়ার জন্য এই আয়োজন তাতে সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। এতে ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কী হাল হবে তা সহজেই অনুমান করা যায়, ধারণা করা যায় এসব টেন্ডারের সকল টাকাই লুট হয়ে যাবে। বিনা টেন্ডারে যদি আওয়ামী রাঘব বোয়ালদের কেউ কেউ নাইকোকে ৩৬০ কোটি টাকার কাজ দিয়ে দিতে পারেন তাহলে চুনোপুটি নেতাদের ৩ কোটি টাকার কাজ দেয়া হবে না কেন? তারা কি আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার জন্য কোনই অবদান রাখেনি। নিশ্চয়ই রেখেছে। সুতরাং লুটের এই সুবিশাল আয়োজনে তারাইবা বঞ্চিত থাকবে কেন?
আর অর্থই সকল অনর্থের মূল। সেই কারণেই এখন দেশব্যাপী টেন্ডার দখলের জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, দিনমজুর লীগ, রিকশাচালক লীগ, ঝাড়ুদার লীগ প্রভৃতির মধ্যে ব্যাপক কামড়াকামড়ি শুরু হয়েছে। স্থানবিশেষে আবার ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রলীগ, যুবলীগ বনাম যুগলীগ, আওয়ামী ঘাট শ্রমিক লীগ বনাম ঘাট শ্রমিক লীগ, আওয়ামী ঘাট শ্রমিক লীগের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত নৈমিত্তিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রেও প্রশাসন ও পুলিশ একেবারেই নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। পুলিশের সামনেই নাইন-সূটার, পিস্তল, রিভলবার, রামদা চাপাতি, কিরিচ ও চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশের সামনে। পুলিশের মনোভাব সম্ভবত এই যে দেখা যাক কে জেতে। জয়ী পার্টিকে অভিনন্দন জানাবে শেষে। মাঝখানে কোন সশস্ত্র মাস্তানকে ধরে পুলিশ সম্ভবত কোন বিপদের ঝুঁকি নিতে চায় না। কাকে ধরে কোন প্রভাবশালীকে রুষ্ট করে কোন হয়রানির শিকার হয়, কে বলতে পারে,

এই যে এক অনিয়ন্ত্রিত অস্থির অবস্থা তার বিপদ সম্পর্কে সরকার সম্ভবত কিছুই অাঁচ করতে চাইছে না। পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার ফলে সারাদশে যে কি ভয়াবহ, অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে সরকার সেরকম একটি পূর্ব ধারণা যদি করতে পারতেন তাহলে সেটা সকল দিক থেকে ভালে হতো।
এসব নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে সরকার নিজেদের অগোচরেই যা বিষিয়ে তুলছে তা হল জনমত। এমনকি আওয়ামী লীগের যারা সমর্থক তাদের বেশিরভাগই শান্তিপ্রিয় মানুষ। এইসব হানাহানি, লুণ্ঠন অরাজকতা অস্ত্রবাজি এর মধ্যে তাড়ানি। তারা ভোটের সময় আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে চায় বাকি সময় নির্বিঘ্নে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করতে চায়। আর বুঝতে চান নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার কতটুকু বা বাস্তবায়িত হয়েছে। সন্দেহ নেই শাসকগোষ্ঠী সেই জায়গায় একটি বড় ধরনের ধস সৃষ্টি করেছে। যদিও তারা বলতে পারেন যে, জনমতে কী লাভ। জনমতের তোয়াক্কা না করেই আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের বক্তব্য অনুযায়ী, সামরিক শাসকদের সঙ্গে অাঁতাত করেই তারা ক্ষমতায় এসেছেন। তেমন অাঁতাতের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় আসবেন ও থাকবেন। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা হল জনগণের চূড়ান্ত বিচারে ক্ষমতার নিয়ামক ভোটের মাধ্যমে না হলেও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ এসব অাঁতাতকারী অপশাসকদের হটিয়ে দেয়।
এছাড়া শাসকদের মধ্যে অবিরাম অসত্য বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রবণতা আছে। যেমন শাসকদের কেউ যদি বলেন, চালের মূল্য জোটসরকারের আমল থেকে এখন অনেক কম তাহলে জনগণের কাছে সে কথা প্রতারণামূলক ও হাস্যকর মনে হতে বাধ্য। কারণ তারা অন্তত অবহিত আছেন যে, জোট সরকারের আমলে যে চাল তারা ১৬ টাকায় খেয়েছেন সে চাল এখন ২৮ টাকা। যে ডাল ৪৬ টাকায় খেয়েছেন তার মূল্য ১১৫ টাকা। ফলে এসব বক্তব্য তাদের কাছে ফাসেক মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তারা যে এসব কথা পছন্দ করেন না সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল সেটা অনুভব করলে ভাল হতো। কিছুকাল আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলন। তাতেও এর বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা, যারা অর্থবিত্তের স্বাদ বঞ্চিত ছোটখাট পদেই তৃপ্ত-বিস্তর অভিযোগ করেছে শাসক দলের হোমড়াচোমড়াদের বিরুদ্ধে। সেখানেও দেখা গেল বড় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বিস্তর দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যা বলছেন বা করছেন তার সঙ্গে তৃণমূলের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোন সম্পর্ক নেই। সরকার এটাকেও তাদের কর্মকান্ডের একটি মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন। কিন্তু সেরকম বিবেচনাবোধ এখন পর্যন্ত সরকারের মধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

সরকার খুব উচ্চকণ্ঠে তাদের সাফল্যের গাঁথা প্রচার করে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য না হয় বাদই দিলাম। সামান্য আর একটি খাতের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়, আর তা হল জনশক্তি রফতানি। সরকারের উদাসীনতা ও কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ধস নেমেছে জনশক্তি রফতানি খাতে। মাত্র একবছরের ব্যবধানে জনশক্তি রফতানি অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। আর সেই বাজার দখল করে নিয়েছে প্রধানত ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাস ও মিশনগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলা ও প্রতিবেশী ভারতকে ছাড় দেয়ার মনোভাবের কারণে জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ২০০৭ সালে বিদেশে জনশক্তি রফতানি হয়েছিল ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬০৯ জন। কিন্তু বর্তমান সরকারের শাসনকালের প্রথম এক বছরে ২০০৯ সালে অর্ধেকে নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন। কিন্তু সরকার এই সংখ্যাকেই বড় করে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করছে তাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং উদ্যোগহীনতার ফলে মাত্র এক বছরেই যে জনশক্তি রফতানি অর্ধেকে নেমে এসেছে সেই সত্যটি তারা শেষ পর্যন্ত চেপেই গেছেন।
জনশক্তি রফতানিতে এই বিশাল ধসের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোর্শেদ সানাউল্লাহ কায়ানি জানান যে, বর্তমান সরকার ভারতের সাথে যে সখ্য গড়ে তুলেছে সে তুলনায় জনশক্তি নিয়োগকারী মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরও যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। বিশ্বমন্দার প্রভাব সব দেশের উপরই পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোন দেশের জনশক্তি রফতানি বন্ধ নেই। বাংলাদেশের শ্রমিক রফতানি অর্ধেকে নেমে এলেও ভারত ও পাকিস্তানের শ্রমিক রফতানি এক শতাংশও কমেনি। যদিও বর্তমান সরকারের ১২ মাসের শাসনকালে সুদর্শনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপুমনি ২৬ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছে। সেই সফরের কোনটিই জনশক্তি রফতানির জন্য নিবেদিত ছিল বলে জানা নেই। ফলে তার ঐ সফরগুলো প্রমোদভ্রমণে পরিণত হয়েছে।
হোমবি তোমবি বিচার করেঙ্গা। মামলা দায়ের প্রভৃতি নিয়ে সরকার যতোটা ব্যস্ত থেকে রাষ্ট্রের কল্যাণে তেমন কোন পদক্ষেপই নিতে পারেননি। সেই কারণে সর্বক্ষেত্রে এই ধসগুলো এতটাই প্রকট রূপ ধারণ করেছে। আমাদের পরামর্শ এই পথ পরিহার করে রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণের পথ অনুসরণ করুন। ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী ।।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter