Flickr

Sunday, 10 October 2010

সংসদকে পাশ কাটিয়ে দেশকে সেক্যুলার রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় কিভাবে?

Posted by   on

সংসদকে পাশ কাটিয়ে দেশকে সেক্যুলার রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয় কিভাবে?
পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর রায় নিয়ে আবার বিতর্ক শুরু হয়েছে। এবারের বিতর্কটি একটু ভিন্ন জাতের। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এবারের বিতর্কের উৎপত্তি হয়েছে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের একটি উক্তি থেকে। দেশে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর তিনি একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। একইদিন তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে গমন করেন এবং সেখানে পুস্তবক অর্পণ করেন। একাধিক জাতীয় দৈনিক মন্তব্য করেছে যে, দেশের ৪০ বছরে জীবনে কোনো প্রধান বিচারপতির জাতীয় স্মৃতিসৌধে গমন এবং পুস্তবক অর্পণের ঘটনা এবারই সর্বপ্রথম। ঐ সব জাতীয় দৈনিকে আরো বলা হয়েছে যে, কোন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক সাংবাদিক সম্মেলন করার ঘটনাও এবারই প্রথম। যাই হোক, সাংবাদিক সম্মেলনে আলোচনা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন যে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সম্পর্কে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ যেদিন রায় দিয়েছে, সেদিন থেকেই অর্থাৎ চলতি সালের ২রা ফেব্রুয়ারি থেকেই সেই রায় কার্যকর হয়ে গেছে। একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন যে তাহলে তো বাংলাদেশ গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে গেছে। সেক্ষেত্রে ইসলামী রাজনীতিও কি দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষিদ্ধ হয়ে যায়নি? উত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'You can draw your own conclusion’ অর্থাৎ আপনি নিজেই নিজের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন। প্রধান বিচারপতি আরো বলেন যে, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ার পর সুপ্রীম কোর্ট যে চূড়ান্ত রায় দিয়েছে, সেই রায়ের সংশ্লিষ্ট অংশগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এখন প্রয়োজন প্রতিস্থাপিত অংশগুলো সন্নিবেশ করে জনগণের কাছে সার্কুলেট করা। এজন্য সংবিধান নতুন করে মুদ্রণ করার জন্য তিনি আইন মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেন।
প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যের মাত্র চার দিন পর বিচারপতি শামছুদ্দিন এবং জনাব জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বোরখা পরিধান সম্পর্কে একটি রায় দেয়। ঐ রায়ে বলা হয় যে, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের পর বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই একটি ধর্মনিরপেক্ষ বা সেকুল্যার রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশে কোনো মানুষকে বোরখা বা টুপি পরতে বাধ্য করা যাবে না।
প্রধান বিচারপতির আলোচ্য বক্তব্য এবং হাইকোর্টের ঐ বেঞ্চের আলোচ্য রায়ের পর সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার এবং কর্তৃত্ব নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য সমর্থন করেছেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ। এর আগে অনুরূপ মন্তব্য করেছিলেন ড. কামাল হোসেন। গতকাল একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত নিবন্ধে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ঐ মতের প্রতিধ্বনি করেছেন। জাতীয় সংসদ সদস্য বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রধান বিচারপতির ঐ মন্তব্যের আগে নিয়মিত বলে যাচ্ছিলেন যে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র জাতীয় সংসদের, অন্য কারো নয়। তবে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পর তিনি সুর পাল্টিয়েছেন। এখনও তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেননি যে সুপ্রীম কোর্টের রায় কিভাবে বাস্তবায়িত হবে-সেটি কি পার্লামেন্টে একটি বিল পাসের মাধ্যমে হবে, নাকি সুপ্রীম কোর্টের রায়টি সংবিধানে প্রতিস্থাপিত করলেই হয়ে যাবে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং এলজিআরডি মন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন যে, সংবিধান সংশোধন সম্পর্কে যা কিছুই করা হোক না কেন, সেটি পার্লামেন্টের মাধ্যমে করতে হবে। নৌকার টিকেটে নির্বাচিত ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন বলেছেন যে, সংবিধান সংশোধনের একক ক্ষমতা শুধুমাত্র পার্লামেন্টের রয়েছে। এই প্রশ্নে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝে একটি বিরাট ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে। বিএনপি'র মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত জেনারেল সেক্রেটারি আজহারুল ইসলাম, এরশাদপন্থী জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার রয়েছে কেবলমাত্র পার্লামেন্টের। এখানে আদালতের কোন এখতিয়ার নাই। একই মতের প্রতিধ্বনি করেছেন আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এবং সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রউফ, সুশীল সমাজের ড. মোজাফ্ফর আহমেদ, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, সুপ্রীম কোর্ট বার সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
দুই.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিতর্কে এখন পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত তিনি স্পষ্ট কোন মন্তব্য করেননি। তিনি কোন স্পষ্ট মন্তব্য না করলেও স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি তিনি কেন গঠন করেছেন? বলা হয়েছে যে, সুপ্রীম কোর্টের রায়ের আলোকে সংবিধানের প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের লক্ষ্যেই ঐ কমিটি করা হয়েছে। এখন সুপ্রীম কোর্টের রায় সংবিধানে ছাপার অক্ষরে প্রতিস্থাপিত করলেই যদি সব কাজ হয়ে যায় তাহলে ঐ বিশেষ কমিটির জন্য করণীয় আর কিই বা থাকলো? এর বেশ কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কিনা, সেটি ইলেকশন কমিশনের ব্যাপার। তার সরকার কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদও একই কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বা আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। হাইকোর্ট ও সুপ্রীমকোর্টের রায়ের আলোকে এবং প্রধান বিচারপতির বক্তব্য মোতাবেক ইসলামী রাজনীতি ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। ঐ দিকে প্রধানমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে একমত নন নির্বাচন কমিশন। কমিশন সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন যে, কোন দলকে নিষিদ্ধ করা না করা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। তাদের কাজ হলো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া। তাদের হাতে রয়েছে আরপিও। কোনো দলের গঠনতন্ত্র যদি দেশের সংবিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ না হয় তাহলে তারা সেই দলকে গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে বলবেন এবং দেশের সংবিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে বলবেন। এ ব্যাপারে ইসলামী দল বা অন্য কোন দল বলে তাদের কাছে কোন কথা নেই। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সুপ্রীমকোর্টের রায়, সংবিধান সংশোধন এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশন এবং উচ্চ আদালতের মাঝে রয়েছে বেশ বড় দূরত্ব। অনুরূপভাবে একই প্রশ্নে দেশের পলিটিশিয়ান এবং সুপ্রীমকোর্টের মাঝে রয়েছে বড় ব্যবধান। সম্ভবত এসব বিষয় টের পেয়ে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এবং সাবেক বিচারপতি গোলাম রববানীরা একটি কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারা বলছেন যে, সুপ্রীমকোর্ট আসলে সংবিধান সংশোধন করেন। বরং অতীতের অবৈধ পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছে। এসব কথা বলে তারা সমগ্র বিষয়টিকে শুধুমাত্র তালগোলই পাকিয়ে ফেলছেন না, বরং নিত্যনতুন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন এবং ‘প্যান্ডোরার বাক্স' খুলে দিচ্ছেন। তারা বলতে চাচ্ছেন যে, মার্শাল ল' বলে সংবিধানে কোন আইন নাই। সামরিক শাসকরা নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। তাই সামরিক বিধি বেআইনী। সামরিক শাসনের বলে যারা ক্ষমতায় এসেছেন তারাও বেআইনী। পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ সামরিক বিধি এবং বেআইনী সামরিক শাসকের সৃষ্টি। তাই সেটি বেআইনী। বলা হয়েছিল যে, পঞ্চম সংশোধনী প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অনুমোদন করেছে পার্লামেন্ট। অতঃপর সেটি গণভোটে পাস হয়েছে। এই যুক্তির জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক রায় দিয়েছেন যে, ঐ পার্লামেন্ট সৃষ্টি হয়েছিল অবৈধ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নির্দেশ বলে। জিয়াউর রহমান ছিলেন অবৈধ শাসক। তাই তার যে নির্দেশ বলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং পার্লামেন্ট গঠিত হয় সেটিও ছিল অবৈধ। সুতরাং সেই পার্লামেন্টও ছিল অবৈধ। এছাড়া '৭২-এর সংবিধানে গণভোটের কোন বিধান ছিল না। এটি যুক্ত করা হয় ১৯৭৭ সালে এবং পঞ্চম সংবিধান সংশোধনীতে সেটি অনুমোদন করা হয়।
তিন.
ঠিক এখানে এসেই প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যায়। যে সব যুক্তিতে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে তার একটি হলো এই যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কর্তৃক শাসিত হয়নি, শাসিত হয়েছে ডিকটেটর এবং ক্ষমতা দখলকারীদের দ্বারা। ফলে বাংলাদেশ তার সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রী চরিত্র হারিয়ে ফেলেছিল। একই সময় বাংলাদেশে ছিল না কোন পার্লামেন্ট। ফলে সে তার গণতান্ত্রিক চরিত্র হারিয়ে ছিল। আরো বলা হয়েছে যে, পঞ্চম সংশোধনী সংক্রান্ত ফরমানে সংবিধানের মৌলিক চরিত্র ধ্বংস করা হয়েছিল। এসব মৌলিক চরিত্রের মধ্যে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, আদালতকে বাইরে রাখা ইত্যাদি। ঐ রায়ে আরো বলা হয়েছে যে, পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেটি হতে হবে সংবিধানের সাথে সংগতিপূর্ণ। এভাবে পঞ্চম সংশোধনীর খোল নলিচাকে অবৈধ ঘোষণা করেও ধারাবাহিকতার স্বার্থে এবং বিশৃক্মখলা এড়ানোর উদ্দেশ্যে পঞ্চম সংশোধনীর কতিপয় ব্যবস্থাকে Condone বা মার্জনা করা হয়েছে। এখানে উঠে আসে অনেকগুলো প্রশ্ন।
সেই প্রশ্নের অবতারণা করেছেন সুপ্রীম কোর্ট বার সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। গত ৭ অক্টোবর ‘দৈনিক সংগ্রামকে' প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি একটু পেছনে ফিরে দেখতে চাই। আমাদের সংবিধান সংশোধন নিয়ে সর্বত্রই যে আলোচনার ঝড় উঠেছে তার পেছনের খবর কিন্তু অনেকে জেনেও না জানার ভান করছেন। কারণ, ১৯৭০ সালের নির্বাচন কিন্তু এদেশে হয়েছে সামরিক ফরমানের ভিত্তিতেই। আর তারপরে আমাদের সংবিধানও রচনা হয়েছে সেই সামরিক ফরমানের ভিত্তিতেই। সব সামরিক ফরমান যদি অবৈধ হয়ে যায় তাহলে খোদ আওয়ামী লীগই তো রাজনীতি করার কোন সুযোগ পায় না। তাদেরকে আজো বাকশালেই থাকতে হতো।’’ খন্দকার মাহবুব হোসেন কোন কিছু বাড়িয়ে বলেননি। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল মোহাম্মদ আইয়ুব খান প্রধান সেনাপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা তুলে দেন এবং সারা পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হয়। অথচ তার আগের দিনও পাকিস্তান শাসিত হযেছে ১৯৬২ সালে প্রণীত সংবিধানের অধীনে। ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জাস্টিস হামুদুর রহমান ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরকে অবৈধ ঘোষণা করেন। জাস্টিস হামুদুর রহমান একজন বাঙালি। তিনি ঢাকা হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। তার রায়ে তিনি বলেন, ‘‘যেহেতু তখন পাকিস্তানে ছিল সাংবিধানিক শাসন, তাই সংবিধান মোতাবেক প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের উচিত ছিল পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।’’ এটি অনেকটা বাংলাদেশের ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্টের ঘটনার মত। সেদিনও দেশে সংবিধান চালু ছিল। সংবিধান মোতাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের অবর্তমানে স্পিকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হওয়া উচিত ছিল।
যাই হোক, পাকিস্তানের অবৈধ সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৩১ মার্চ ‘লীগাল ফ্রেম ওয়ার্ক অর্ডার' বা এল এফ ও জারি করেন। এই এল এফ ও'তে ছিল একটি নির্দেশনামূলক আইন। তাতে ছিল ২৭টি অনুচ্ছেদ এবং ৩টি তফসিল। এই এল এফ ও'র অধীনেই ১৯৭০ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ঐ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদই বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণয়ন করে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের ফরমানে গঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ যদি অবৈধ হয় তাহলে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের ফরমান বলে গঠিত জাতীয় সংসদও কি অবৈধ হয়ে যায় না? বলা হয় যে, পঞ্চম সংশোধনীর রায় হয়েছে কঠোরভাবে আইনের দৃষ্টিতে। তাহলে সেই কঠোরভাবে আইনের দৃষ্টিতে বিচার করলে এল এফ ও'র অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বৈধ হয় কিভাবে?
পঞ্চম সংশোধনী বাতিল রায়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো রাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। আরো আছে চতুর্থ সংশোধনী বাতিলকে জায়েজ করা। আরো বলা হয়েছে যে, সংবিধানের মূল চরিত্রের বাইরে হলে পার্লামেন্টও কোন সংশোধন করতে পারবে না। তাহলে চতুর্থ সংশোধনীর ব্যাপারে ঐ রায় বিস্ময়করভাবে নীরব কেন? এসব প্রশ্ন এবং আরো অন্যসব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা রইল বাড়ান্তরে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter