ডিজিটাল আওয়ামীলীগ, বামপন্থী রাজনীতি এবং আমাদের মিডিয়া
এক :
৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশ বাংলাদেশ। ১৫ কোটি মানুষের বসবাস এ বদ্বীপে। সামগ্রিক বিচারে বাংলাদেশের আম জনতা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নিরন্তর সংগ্রামরত এক কর্মবীর সাহসী জনগোষ্ঠী। নিয়তিতে প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করে সাধারণ জনগণ। প্রতিটি দুর্যোগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমাদের জাতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিপরীতে দেশের আপামর জনগণ সর্বদাই ছিলো সজাগ এবং প্রতিরোধ মুখর। নৃতাত্বিক জাতীয়তা বলুন আর অন্যের চাপিয়ে দেয়া মতবাদ এ সবই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর কাছে। দেশের বৃহৎ অংশ সর্বদাই লড়াই করতে হয়েছে আপন বোধ বিশ্বাস আর স্বাধীন স্বক্রিয়তার জন্য। আজও তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। জাতি হিসাবে আমরা যেমন উদার তেমন হাজার বছরের সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করা এক বন্ধুবৎসল জাতি। কিন্ত তার পর...শুরুটা ডিজিটাল দিয়ে।
বর্তমান ডিজিটাল সরকার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে শেখ মুজিবের দ্বিতীয় বিপ্লব নামের জগদ্বল পাথর ‘‘বাকশাল’’ কায়েম করতে। হাসিনা সরকার প্রায় ৭০ ভাগ সফল হয়েছেন আমার মতে। বাকি ৩০ ভাগের জন্য আন্তরিক চেষ্টা করছে গত ‘‘এনালগ উদ্দিন সরকারের এই প্রলম্বিত ডিজিটাল সরকার’’।
পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের বাই প্রোডাক্ট আওয়ামী মুসলিম লীগ। জন্ম দাতারা হলেন পাকিস্তান আন্দোলনের তরুণ ও আধুনিক মনষ্ক নেতৃবৃন্দ। শেখ মুজিব, হোসেন সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছাত্র নেতা ছিলেন মাওলানা ভাসানীর একান্ত শাগরীদ ছিলেন শেখ মুজিব। যদিও পরবর্তীতে গুরু-শিষ্য সম্পর্ক সাপে নেউলে পর্যায়ের হয়েছিলো। সে ইতিহাস যেমন করুণ তেমন আওয়ামীলীগের জন্য চরম গ্লানিকরও বটে।
আওয়ামী মুসলিম লীগ ক্ষমতার নেশায় আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত হয় ৫০ এর দশকে। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ও বাংগালী জাতীয়তাবাদ দলীয় আদর্শ হিসাবে স্থান পায় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে। ৭০ পূর্ব নির্বাচন বা তার পূর্বের গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ কখনো মুসলিম সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে যায় এমন বক্তব্য বা দলীয় নীতি ঘোষণা করে নাই। এটাই ইতিহাস এবং এটাই তখকার বাস্তবতা। যদিও দলটি তার ৭০ পূর্ব দলীয় ঐতিহ্যকে খন্ডিত করে পেশ করে জাতির সামনে। নিজ দলের ইতিহাসকে বলাৎকার করার কারণ হলো, প্রতিষ্ঠাকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের লক্ষ্য আদর্শ থেকে অনেকটা বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে বর্তমান ডিজিটাল হাসিনা আওয়ামীলীগ।
কিন্ত হঠাৎ করে স্বাধীনতার পর গোটা জাতির বোধ বিশ্বাসের বিপরীত আদর্শ আওয়ামী লীগ কেন গ্রহণ করলো? কেনই বা সমকালীন ইতিহাসের সবচেয়ে জন নন্দিত নেতা শেখ মুজিব নিজ জাতির ও বিশ্ববাসীর কাছে চরম নিন্দিত হলেন? বাকশালী ভূত জাতির ঘাড়ে চাপাতে গিয়ে শেখ মুজিবকে বিয়োগান্তুক ঘটনার শিকার হতে হল কেন? কারা তাকে গণতন্ত্রী মুজিব থেকে স্বৈরাচার মুজিবে পরিণত করলো? কেনইবা তার দলের প্রথম সারির নেতারা ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর মন্ত্রী মিনিস্টার হলেন? এবং আরো অনেক কিছু.... অনেক প্রশ্ন? সত্যি হলো আজকের বাংলাদেশে যারাই রাজনীতির নিয়ামক তারা প্রত্যেকেই এর জন্য কম বেশি দায়ী।
তবে অতি বামপন্থিরা শেখ মুজিবকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্কিত করেছে সবচেয়ে বেশি। আজকের সুরঞ্জিত সেন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু সহ অতি ধর্মনিরপেক্ষ আর তথাকথিত কমিউনিস্ট নাস্তিকেরা শেখ মুজিবকে শান্তিতে দেশ শাসন করতে পদে পদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। যদিও তারা সময়ের পরিবর্তনে আজ শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সেনাপতির ভূমিকা পালন করছেন। এটাও হলো এই রাজনৈতিক এতিমদের পূর্ব পাপের প্রায়শ্চিত্ব এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব।
স্বাধীনতার পর তিনটি বছর বাংলাদেশের জনগণ অতিষ্ঠ ছিলো বামপন্থি তথা কমিউনিস্ট আদর্শ গলধকরণ করতে। ইনু মেনু খান সাহেবেরা শ্রেণী সংগ্রামের নামে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে নির্বিবাদে। যা তাদের ভাষায় বুর্জোয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আন্দোলন। এদের বিপরীতে উদ্ভট সে আন্দোলনের টুটি চেপে ধরার জন্যে মুজিব সরকারকে ২৭ হাজার জাসদ কর্মীকে হত্যা করতে হয়েছিলো। তখনকার বিদেশি পত্রিকাগুলোতে যে রিপোর্ট ছাপে তাতে লেখা হয় ‘‘বাংলাদেশের চিরায়ত বোধ বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত রাষ্ট্রীয় আদর্শ গ্রহণ, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মীয়করণ, উৎকট দলীয়করণ, সীমাহীন দুর্নীতি তথা লুটপাটের রাজনীতি বাংলাদেশের ভাগ্যে তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা জোটে।
ভারতপন্থী এবং মস্কোপন্থী অতি বামরা শেখ মুজিবকে যেমন প্রতারিত শাসন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত করেছিলো তেমনই নেতিবাচক রাজনীতিরও প্রচলন করেছিলেন নব্য রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। জ্বালাও, পোড়াও, ভাংচুর, হত্যা, সন্ত্রাস এবং হরতালই ছিলো তাদের রাজনীতি। জাতিকে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত করেছিলেন আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহান বাম নেতারা। শেখ মুজিব সরকারকে যারা ব্যর্থ, অথর্ব, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্ভর শাসন হিসাবে চিত্রিত করেছিলেন, তারাই আজ মুজিব তনয়া শেখ হাসিনার মহাজোটের অংশীদার হয়ে সরকারের ভিতর আরেকটি সরকার কায়েম করেছেন। সত্যিকার দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিলো বাংলাদেশের বাম অংগনের রাজনীতিবিদগণ। আজও তারা তাদের নেতিবাচক রাজনীতির ধারাবাহিকতার সাথে জাতিকে বিভক্ত করার রাজনীতিতে ব্যস্ত।
দেশ মাতৃকার প্রতি দায়বদ্ধ রাজনীতি বামপন্থী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কখনো দেখাতে পারেননি। জন বিচ্ছিন্ন হওয়াই যেন তাদের রাজনীতির ভাগ্য। মিডিয়ার আনুকুল্যে বিবৃতিবাজ হিসাবে মোটামুটি প্রেস্টিজ রক্ষা করে চলেছেন এদের কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ কলামিস্ট হয়ে রুজি রুটির ব্যবস্থা সংকুলান করছেন। বাম ঘরানার রাজনীতিবিদদের বর্তমান আদর্শ হল সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রিড়নক, করপোরেট এনজিও সংস্থাগুলোর স্বার্থ রক্ষা ও চরম বুর্জোয়া সুবিধাবাদী রাজনীতির তল্পিবাহক এবং বিভাজনের রাজনীতি করা। তবে বর্তমানে মিষ্টার বুশ ও টনিব্লেয়ারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন তথা মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিবৃতি, হুংকার দেয়া সবচেয়ে বড় কর্মসূচি বামপন্থী রাজনীতির পেটুয়া নেতাদের।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতি বাম ভারতপন্থী কমিউনিস্ট আর ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা মূল ধারার রাজনীতি থেকে ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগকে বরাবরই দূরে রাখতে চেয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক আদর্শ বলতে যা বুঝে অর্থাৎ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ঈমান আকিদা তথা মৌলিক বোধ বিশ্বাসের বিপরীত ধারার রাজনীতি হল আওয়ামী রাজনীতি। এজন্য দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে হাতে তসবিহ মাথায় পট্টি বেঁধে জাতির কাছে অভিনয় করতে হয়েছিলো।
বাংলাদেশের বাস্তবতাকে শেখ হাসিনা যেভাবেই মূল্যায়ন করতে পেরেছিলেন অতীতে বর্তমান ডিজিটাল চুক্তিভিত্তিক ক্ষমতা গ্রহণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অন্য কারোর হাতে বন্দী। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রকৃত আওয়ামীলীগ কয়জন আর কমিউনিস্ট কয়জন তা হিসাব নিলেই পরিষ্কার হয় সরকার কারা চালাচ্ছে। মতিয়া আপার শাগরেদরা সরকারের পলিসি মেকার এবং মেনন সাহেবদের সচিব উপসচিবরা প্রশাসনে। সরকারের উদ্ভট সব সিদ্ধান্তগুলোর সাথে এরাই জড়িত। এজন্য শেখ হাসিনার সকল হম্বিতম্বি অরণ্যের রোদন।
তবে আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনা এটা জানেন বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে হলে দেশের মৌলিক বোধ বিশ্বাসের বিপরীত কোন কাজ করা যাবেনা। বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলিম সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যত আপোষের রাজনীতি করতে পারবে ততই দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের সাথে চুক্তি, মাথায় পট্টি, নির্বাচন মুখি ধর্মীয় আচার আচরণে অভ্যস্ত হওয়া যতই মৌলবাদী আচরণ হোক না কেন বাংলাদেশের কমিউনিস্টদেরকে তা মেনে নিয়েই মহাজোটে থাকতে হবে। নতুবা ক্ষমতার যা উচ্ছিষ্ট পাওয়া যাচ্ছে তা ও হারাতে হবে। ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কাজে লাগানো যতই রাজনৈতিক ভনিতা বলুন আর দ্বৈতনীতি বলুন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে তা করবে এটা আমার বিশ্বাস। শেখ হাসিনা এই কাজে সকলের চাইতে দক্ষ হিসাবে প্রমাণিত।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি তার জন্মলগ্ন থেকেই ক্ষমতামুখী আর কমিউনিস্টদের রাজনীতি হলো জনবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ও বিবৃতিমুখী। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ইত্যাদি বিবৃতি আর টেলিভিশনের টকশোতে অবশ্যই রুচিদায়ক এবং ফলদায়ক। বর্তমান ডিজিটাল সরকারের আমলে তা আরো বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে সরকারের অতি উৎসাহী বামদের সকল দায়দায়িত্ব নিতে হবে দলীয়ভাবে আওয়ামীলীগকে এবং ব্যক্তি হাসিনা ওয়াজেদকেই। আজ যারা প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে শেখ হাসিনার চাটুকারিতায় লিপ্ত সেই তারাই বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে সামনের দিনগুলোতে।
দুই :
মিডিয়াকে একটা সীমানার মধ্যে রাখতে পারা ছিলো ফখরুদ্দীন সরকারের বড় একটা সফলতা। বর্তমান সরকার সেই ধারাবাহিকতায় আরো বেশি সফলতা দেখিয়েছে। ডিজিটাল সরকার এখনো পর্যন্ত বিদেশী মুরুববীদের মেজাজ বুঝে কাজ করতে পারছে। বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান যুদ্ধাপরাধীকে লাল গালিচার আতিথেয়তা দিয়ে সরকার সকল জুলুম আর নির্যাতনের লাইসেন্স গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘে শেখ হাসিনার মৌলবাদ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আবার সেই হাতিয়ারকে শাণিত করেছেন। তাই মিডিয়াকে স্পষ্ট একটি সীমানাতে ধরে রাখতে পারলে সরকারের আকাম কুকামগুলো নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। জনগণ নতুন করে শেখ মুজিবের এনালগ বাকশাল আর শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাকশালের মধ্যে তফাৎ করতে পারবে। তথ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে মিডিয়ার জন্য আরো এক ডিজিটাল হাত বের করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়া ও স্যাটেলাইট মিডিয়াতে যারা কাজ করেন তারা অবশ্যই সম্মানের। তারা জাতির জাগ্রতবিবেক। সমাজের অনেক কিছুই যা তাদের বদান্যতায় আমরা জানতে পারি। সমাজকে সচেতন করা, সামজের অসংগতিগুলো তুলে ধরার সফলতায় বাংলাদেশের সাংবাদিক জগত সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকার ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যারা জাতীয় দ্বায়বদ্ধতা পূর্ণ করছেন তাদেরকে জাতি স্যলুউট করছে এবং করবে। কিন্তু সেইসব সাংবাদিকদের কী বলবো। তাদের কি পরিচয় হবে এই সরকার ক্ষমতার মসনদ থেকে সরে যাবার পর। দালাল সাংবাদিক না কোলাবোরেট সাংবাদিক? কি উপাধি দিয়ে জাতি তাদেরকে বরণ করবে। যারা সম্পূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্তে সিন্ডিকেট রিপোর্ট করে জাতিকে প্রভাবিত করতে চায় এবং করছে। একই সাথে একই রিপোর্ট শুধু হেডলাইন পরিবর্তন করে স্টাফ রিপোর্ট করা হচ্ছে। আমি গত দুই মাসের পত্রিকাগুলোর প্রধান রিপোর্টগুলোর (ইন্টারনেট এডিশন) প্রধান শিরোনাম থেকে একটার সাথে আরেকটা মিলালাম। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার নেতাদের নিয়ে মোট ৩৩ দিনের সবগুলো রিপোর্ট এক জায়গায় করে পড়লাম। আবার পড়লাম। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি কি সত্যিই ইউরেকা আবিষ্কার করছি না হিম হয়ে যাওয়া বিবেকগুলোর ছবি দেখছি।
আমি মুর্ছা যাবার অবস্থা। কি ভয়ানক ষড়যন্ত্র এবং জঘন্য স্বার্থপরতা। নিজেদের প্রফেশনের প্রতি সামান্য দায়বদ্ধতা থাকলে এভাবে যৌথ অপরাধ করা মোটেই সম্ভব হতো না। পাঠক আমাকে মাফ করবেন আমি পত্রিকাগুলোর সকল সাংবাদিক বন্ধুদেরকে দায়ী করছিনা। এই পত্রিকাগুলোতে অবশ্যই সত্য মিথ্যা বুঝে বিবেকের দ্বারা পরিচালিত এবং সাংবাদিকতার সকল আইন মেনে চলেন এমন সাংবাদিকের সংখ্যাই বেশি। প্রথমআলো, জনকন্ঠ, যুগান্তর এবং নতুনভাবে ইনকিলাব, সমকাল, আমাদের সময়, ভোরের কাগজ সর্বশেষ কালের কন্ঠ এই পত্রিকাগুলোর মূল রিপোর্ট কী হবে তা সিন্ডিকেট করে জামায়াত ও তার নেতৃবৃন্দ নিয়ে স্টোরী রিপোর্ট ছাপে। অন্তত এই ৩৩ দিনের পত্রিকাগুলোর রিপোর্ট তাই প্রমাণ করে।
গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়া, স্যাটেলাইট মিডিয়াতে জামায়াত ও শিবিরের নেতিবাচক খবর পরিবেশনের প্রতিযোগিতা চলছে। কে কত বেশি রং লাগিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতে পেরেছেন। সত্য মিথ্যা বা সাংবাদিকতার ইউনিভার্সাল মিথ এখানে সম্পূর্ণ পরিত্যজ্য। ডিজিটাল সরকারের চেতনা ধারণ করে যে সাংবাদিকতার রূপ বাংলাদেশের জনগণ অবাক হয়ে দেখছে তাতে সবচেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে আমাদের মিডিয়া জগতই এবং তাদের বাসিন্দারা। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কোন গোপন সংগঠন নয় অথবা সরকার এটাকে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নাই। তারপরও কেন এই একপেশে প্রচারণা।
বিএনপির ব্যাপারে একটু আধটু ব্যালেন্স করা হয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনা যা করছেন তা সবই ভালো। তা গণতন্ত্রের জন্য, তা বাংলার ১৫ কোটি মানুষের জন্য। দলীয় বিবেচনায় আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে লেখা হয় পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা পাবার জন্য। অপরদিকে চারদলীয় ঐক্যজোট যা করবে তা ষড়যন্ত্র-তা পাকিস্তান বানানোর-তা গণতন্ত্র হত্যার জন্য এবং তা সুশীল সমাজকে ধ্বংস করার জন্য। অবশ্য এখন মন্ত্রীসহ সকল ডিজিটাল কুলীনদের মুখে সবচেয়ে মুখরোচক বিষয় হলো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চারদলীয় জোটের সকল আয়োজন। কোথায় কোন ক্রাইম করে ধরা পড়লো তাতে সবাই একযোগে হুক্কা হু শুরু করে। বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে আপাতত যে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়েছে এবং সুশীল সমাজের মর্গে স্বাধীন মতপ্রকাশের অপারেশন চলছে তাতে মুজিবের বাকশালের আধুনিক রূপ ডিজিটাল বাকশালই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে জামায়াত বড় ফ্যাক্টর নয় বরং ভারতের তাঁবেদারীতে যে বা যারা বাধা হতে পারে তাদের নির্মূল করাই লক্ষ্য। যুদ্ধাপরাধ, মানবতা বিরোধী অপরাধ ইত্যাদি বাহানা মাত্র। মিডিয়ার একটি অংশ পূজনীয় ভারতের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই জামায়াত এবং শিবিরের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করছে।
তা না হলে জামায়াত শিবিরের ব্যাপারে সকল ভদ্রতা, শালীনতা, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা সবকিছুই লোভ পায় কেন? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন জানতে পারবে আমাদের কিছু সংখ্যক সাংবাদিক নামের দলবাজ কলম মাস্তানদের কুকর্মের ফিরিস্তি তখন কি মূল্যায়ন করবে? সরকারের অত্যাচারের মাত্রা স্বৈরাচার হিটলার মুসোলিনিকে ছাড়িয়ে গেছে। ক্লাস এইটে, নাইনে পড়ে এমন কিশোর ছেলেদেরকে ধরে যেভাবে শিবিরের ক্যাডার বানিয়ে প্রচার প্রপাগান্ডা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসারের বাসায় যেভাবে পুলিশ এবং রামদা (ছাত্রলীগ ও যুবলীগ) বাহিনীর আক্রমণ করা হচ্ছে। জাতির জাগ্রত বিবেক মিডিয়ার একপেশে আচরণ এগুলো কোন সভ্য দেশে কল্পনা করা যায়? মিডিয়া এ কাজগুলো করে জামায়াত শিবিরের ক্ষতির পাশাপাশি আমাদের সামাজিক কি কি ক্ষতি হচ্ছে এবং হতে পারে তা একটু ভাবলে দেশ ও জাতির জন্য উপকার হয়। আজাদ ছোবহান আহমাদ
৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশ বাংলাদেশ। ১৫ কোটি মানুষের বসবাস এ বদ্বীপে। সামগ্রিক বিচারে বাংলাদেশের আম জনতা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নিরন্তর সংগ্রামরত এক কর্মবীর সাহসী জনগোষ্ঠী। নিয়তিতে প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করে সাধারণ জনগণ। প্রতিটি দুর্যোগে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমাদের জাতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিপরীতে দেশের আপামর জনগণ সর্বদাই ছিলো সজাগ এবং প্রতিরোধ মুখর। নৃতাত্বিক জাতীয়তা বলুন আর অন্যের চাপিয়ে দেয়া মতবাদ এ সবই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর কাছে। দেশের বৃহৎ অংশ সর্বদাই লড়াই করতে হয়েছে আপন বোধ বিশ্বাস আর স্বাধীন স্বক্রিয়তার জন্য। আজও তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। জাতি হিসাবে আমরা যেমন উদার তেমন হাজার বছরের সম্প্রীতি নিয়ে বসবাস করা এক বন্ধুবৎসল জাতি। কিন্ত তার পর...শুরুটা ডিজিটাল দিয়ে।
বর্তমান ডিজিটাল সরকার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছে শেখ মুজিবের দ্বিতীয় বিপ্লব নামের জগদ্বল পাথর ‘‘বাকশাল’’ কায়েম করতে। হাসিনা সরকার প্রায় ৭০ ভাগ সফল হয়েছেন আমার মতে। বাকি ৩০ ভাগের জন্য আন্তরিক চেষ্টা করছে গত ‘‘এনালগ উদ্দিন সরকারের এই প্রলম্বিত ডিজিটাল সরকার’’।
পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগের বাই প্রোডাক্ট আওয়ামী মুসলিম লীগ। জন্ম দাতারা হলেন পাকিস্তান আন্দোলনের তরুণ ও আধুনিক মনষ্ক নেতৃবৃন্দ। শেখ মুজিব, হোসেন সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী ছাত্র নেতা ছিলেন মাওলানা ভাসানীর একান্ত শাগরীদ ছিলেন শেখ মুজিব। যদিও পরবর্তীতে গুরু-শিষ্য সম্পর্ক সাপে নেউলে পর্যায়ের হয়েছিলো। সে ইতিহাস যেমন করুণ তেমন আওয়ামীলীগের জন্য চরম গ্লানিকরও বটে।
আওয়ামী মুসলিম লীগ ক্ষমতার নেশায় আওয়ামী লীগে রূপান্তরিত হয় ৫০ এর দশকে। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ও বাংগালী জাতীয়তাবাদ দলীয় আদর্শ হিসাবে স্থান পায় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকে। ৭০ পূর্ব নির্বাচন বা তার পূর্বের গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ কখনো মুসলিম সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে যায় এমন বক্তব্য বা দলীয় নীতি ঘোষণা করে নাই। এটাই ইতিহাস এবং এটাই তখকার বাস্তবতা। যদিও দলটি তার ৭০ পূর্ব দলীয় ঐতিহ্যকে খন্ডিত করে পেশ করে জাতির সামনে। নিজ দলের ইতিহাসকে বলাৎকার করার কারণ হলো, প্রতিষ্ঠাকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের লক্ষ্য আদর্শ থেকে অনেকটা বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে বর্তমান ডিজিটাল হাসিনা আওয়ামীলীগ।
কিন্ত হঠাৎ করে স্বাধীনতার পর গোটা জাতির বোধ বিশ্বাসের বিপরীত আদর্শ আওয়ামী লীগ কেন গ্রহণ করলো? কেনই বা সমকালীন ইতিহাসের সবচেয়ে জন নন্দিত নেতা শেখ মুজিব নিজ জাতির ও বিশ্ববাসীর কাছে চরম নিন্দিত হলেন? বাকশালী ভূত জাতির ঘাড়ে চাপাতে গিয়ে শেখ মুজিবকে বিয়োগান্তুক ঘটনার শিকার হতে হল কেন? কারা তাকে গণতন্ত্রী মুজিব থেকে স্বৈরাচার মুজিবে পরিণত করলো? কেনইবা তার দলের প্রথম সারির নেতারা ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর মন্ত্রী মিনিস্টার হলেন? এবং আরো অনেক কিছু.... অনেক প্রশ্ন? সত্যি হলো আজকের বাংলাদেশে যারাই রাজনীতির নিয়ামক তারা প্রত্যেকেই এর জন্য কম বেশি দায়ী।
তবে অতি বামপন্থিরা শেখ মুজিবকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্কিত করেছে সবচেয়ে বেশি। আজকের সুরঞ্জিত সেন, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু সহ অতি ধর্মনিরপেক্ষ আর তথাকথিত কমিউনিস্ট নাস্তিকেরা শেখ মুজিবকে শান্তিতে দেশ শাসন করতে পদে পদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। যদিও তারা সময়ের পরিবর্তনে আজ শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সেনাপতির ভূমিকা পালন করছেন। এটাও হলো এই রাজনৈতিক এতিমদের পূর্ব পাপের প্রায়শ্চিত্ব এবং রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব।
স্বাধীনতার পর তিনটি বছর বাংলাদেশের জনগণ অতিষ্ঠ ছিলো বামপন্থি তথা কমিউনিস্ট আদর্শ গলধকরণ করতে। ইনু মেনু খান সাহেবেরা শ্রেণী সংগ্রামের নামে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে নির্বিবাদে। যা তাদের ভাষায় বুর্জোয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মহান আন্দোলন। এদের বিপরীতে উদ্ভট সে আন্দোলনের টুটি চেপে ধরার জন্যে মুজিব সরকারকে ২৭ হাজার জাসদ কর্মীকে হত্যা করতে হয়েছিলো। তখনকার বিদেশি পত্রিকাগুলোতে যে রিপোর্ট ছাপে তাতে লেখা হয় ‘‘বাংলাদেশের চিরায়ত বোধ বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত রাষ্ট্রীয় আদর্শ গ্রহণ, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মীয়করণ, উৎকট দলীয়করণ, সীমাহীন দুর্নীতি তথা লুটপাটের রাজনীতি বাংলাদেশের ভাগ্যে তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা জোটে।
ভারতপন্থী এবং মস্কোপন্থী অতি বামরা শেখ মুজিবকে যেমন প্রতারিত শাসন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত করেছিলো তেমনই নেতিবাচক রাজনীতিরও প্রচলন করেছিলেন নব্য রাষ্ট্র ব্যবস্থায়। জ্বালাও, পোড়াও, ভাংচুর, হত্যা, সন্ত্রাস এবং হরতালই ছিলো তাদের রাজনীতি। জাতিকে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত করেছিলেন আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহান বাম নেতারা। শেখ মুজিব সরকারকে যারা ব্যর্থ, অথর্ব, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্ভর শাসন হিসাবে চিত্রিত করেছিলেন, তারাই আজ মুজিব তনয়া শেখ হাসিনার মহাজোটের অংশীদার হয়ে সরকারের ভিতর আরেকটি সরকার কায়েম করেছেন। সত্যিকার দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিলো বাংলাদেশের বাম অংগনের রাজনীতিবিদগণ। আজও তারা তাদের নেতিবাচক রাজনীতির ধারাবাহিকতার সাথে জাতিকে বিভক্ত করার রাজনীতিতে ব্যস্ত।
দেশ মাতৃকার প্রতি দায়বদ্ধ রাজনীতি বামপন্থী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কখনো দেখাতে পারেননি। জন বিচ্ছিন্ন হওয়াই যেন তাদের রাজনীতির ভাগ্য। মিডিয়ার আনুকুল্যে বিবৃতিবাজ হিসাবে মোটামুটি প্রেস্টিজ রক্ষা করে চলেছেন এদের কেউ কেউ। আবার কেউ কেউ কলামিস্ট হয়ে রুজি রুটির ব্যবস্থা সংকুলান করছেন। বাম ঘরানার রাজনীতিবিদদের বর্তমান আদর্শ হল সাম্রাজ্যবাদীদের ক্রিড়নক, করপোরেট এনজিও সংস্থাগুলোর স্বার্থ রক্ষা ও চরম বুর্জোয়া সুবিধাবাদী রাজনীতির তল্পিবাহক এবং বিভাজনের রাজনীতি করা। তবে বর্তমানে মিষ্টার বুশ ও টনিব্লেয়ারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন তথা মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত বিবৃতি, হুংকার দেয়া সবচেয়ে বড় কর্মসূচি বামপন্থী রাজনীতির পেটুয়া নেতাদের।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতি বাম ভারতপন্থী কমিউনিস্ট আর ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা মূল ধারার রাজনীতি থেকে ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগকে বরাবরই দূরে রাখতে চেয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক আদর্শ বলতে যা বুঝে অর্থাৎ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ঈমান আকিদা তথা মৌলিক বোধ বিশ্বাসের বিপরীত ধারার রাজনীতি হল আওয়ামী রাজনীতি। এজন্য দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে হাতে তসবিহ মাথায় পট্টি বেঁধে জাতির কাছে অভিনয় করতে হয়েছিলো।
বাংলাদেশের বাস্তবতাকে শেখ হাসিনা যেভাবেই মূল্যায়ন করতে পেরেছিলেন অতীতে বর্তমান ডিজিটাল চুক্তিভিত্তিক ক্ষমতা গ্রহণে আমাদের প্রধানমন্ত্রী অন্য কারোর হাতে বন্দী। বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রকৃত আওয়ামীলীগ কয়জন আর কমিউনিস্ট কয়জন তা হিসাব নিলেই পরিষ্কার হয় সরকার কারা চালাচ্ছে। মতিয়া আপার শাগরেদরা সরকারের পলিসি মেকার এবং মেনন সাহেবদের সচিব উপসচিবরা প্রশাসনে। সরকারের উদ্ভট সব সিদ্ধান্তগুলোর সাথে এরাই জড়িত। এজন্য শেখ হাসিনার সকল হম্বিতম্বি অরণ্যের রোদন।
তবে আমার বিশ্বাস শেখ হাসিনা এটা জানেন বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে হলে দেশের মৌলিক বোধ বিশ্বাসের বিপরীত কোন কাজ করা যাবেনা। বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলিম সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যত আপোষের রাজনীতি করতে পারবে ততই দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের সাথে চুক্তি, মাথায় পট্টি, নির্বাচন মুখি ধর্মীয় আচার আচরণে অভ্যস্ত হওয়া যতই মৌলবাদী আচরণ হোক না কেন বাংলাদেশের কমিউনিস্টদেরকে তা মেনে নিয়েই মহাজোটে থাকতে হবে। নতুবা ক্ষমতার যা উচ্ছিষ্ট পাওয়া যাচ্ছে তা ও হারাতে হবে। ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট কাজে লাগানো যতই রাজনৈতিক ভনিতা বলুন আর দ্বৈতনীতি বলুন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে তা করবে এটা আমার বিশ্বাস। শেখ হাসিনা এই কাজে সকলের চাইতে দক্ষ হিসাবে প্রমাণিত।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি তার জন্মলগ্ন থেকেই ক্ষমতামুখী আর কমিউনিস্টদের রাজনীতি হলো জনবিচ্ছিন্ন মিডিয়া ও বিবৃতিমুখী। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ইত্যাদি বিবৃতি আর টেলিভিশনের টকশোতে অবশ্যই রুচিদায়ক এবং ফলদায়ক। বর্তমান ডিজিটাল সরকারের আমলে তা আরো বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে সরকারের অতি উৎসাহী বামদের সকল দায়দায়িত্ব নিতে হবে দলীয়ভাবে আওয়ামীলীগকে এবং ব্যক্তি হাসিনা ওয়াজেদকেই। আজ যারা প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে শেখ হাসিনার চাটুকারিতায় লিপ্ত সেই তারাই বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে সামনের দিনগুলোতে।
দুই :
মিডিয়াকে একটা সীমানার মধ্যে রাখতে পারা ছিলো ফখরুদ্দীন সরকারের বড় একটা সফলতা। বর্তমান সরকার সেই ধারাবাহিকতায় আরো বেশি সফলতা দেখিয়েছে। ডিজিটাল সরকার এখনো পর্যন্ত বিদেশী মুরুববীদের মেজাজ বুঝে কাজ করতে পারছে। বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান যুদ্ধাপরাধীকে লাল গালিচার আতিথেয়তা দিয়ে সরকার সকল জুলুম আর নির্যাতনের লাইসেন্স গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘে শেখ হাসিনার মৌলবাদ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আবার সেই হাতিয়ারকে শাণিত করেছেন। তাই মিডিয়াকে স্পষ্ট একটি সীমানাতে ধরে রাখতে পারলে সরকারের আকাম কুকামগুলো নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। জনগণ নতুন করে শেখ মুজিবের এনালগ বাকশাল আর শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাকশালের মধ্যে তফাৎ করতে পারবে। তথ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে মিডিয়ার জন্য আরো এক ডিজিটাল হাত বের করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়া ও স্যাটেলাইট মিডিয়াতে যারা কাজ করেন তারা অবশ্যই সম্মানের। তারা জাতির জাগ্রতবিবেক। সমাজের অনেক কিছুই যা তাদের বদান্যতায় আমরা জানতে পারি। সমাজকে সচেতন করা, সামজের অসংগতিগুলো তুলে ধরার সফলতায় বাংলাদেশের সাংবাদিক জগত সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকার ও কায়েমী স্বার্থবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যারা জাতীয় দ্বায়বদ্ধতা পূর্ণ করছেন তাদেরকে জাতি স্যলুউট করছে এবং করবে। কিন্তু সেইসব সাংবাদিকদের কী বলবো। তাদের কি পরিচয় হবে এই সরকার ক্ষমতার মসনদ থেকে সরে যাবার পর। দালাল সাংবাদিক না কোলাবোরেট সাংবাদিক? কি উপাধি দিয়ে জাতি তাদেরকে বরণ করবে। যারা সম্পূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্তে সিন্ডিকেট রিপোর্ট করে জাতিকে প্রভাবিত করতে চায় এবং করছে। একই সাথে একই রিপোর্ট শুধু হেডলাইন পরিবর্তন করে স্টাফ রিপোর্ট করা হচ্ছে। আমি গত দুই মাসের পত্রিকাগুলোর প্রধান রিপোর্টগুলোর (ইন্টারনেট এডিশন) প্রধান শিরোনাম থেকে একটার সাথে আরেকটা মিলালাম। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার নেতাদের নিয়ে মোট ৩৩ দিনের সবগুলো রিপোর্ট এক জায়গায় করে পড়লাম। আবার পড়লাম। নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি কি সত্যিই ইউরেকা আবিষ্কার করছি না হিম হয়ে যাওয়া বিবেকগুলোর ছবি দেখছি।
আমি মুর্ছা যাবার অবস্থা। কি ভয়ানক ষড়যন্ত্র এবং জঘন্য স্বার্থপরতা। নিজেদের প্রফেশনের প্রতি সামান্য দায়বদ্ধতা থাকলে এভাবে যৌথ অপরাধ করা মোটেই সম্ভব হতো না। পাঠক আমাকে মাফ করবেন আমি পত্রিকাগুলোর সকল সাংবাদিক বন্ধুদেরকে দায়ী করছিনা। এই পত্রিকাগুলোতে অবশ্যই সত্য মিথ্যা বুঝে বিবেকের দ্বারা পরিচালিত এবং সাংবাদিকতার সকল আইন মেনে চলেন এমন সাংবাদিকের সংখ্যাই বেশি। প্রথমআলো, জনকন্ঠ, যুগান্তর এবং নতুনভাবে ইনকিলাব, সমকাল, আমাদের সময়, ভোরের কাগজ সর্বশেষ কালের কন্ঠ এই পত্রিকাগুলোর মূল রিপোর্ট কী হবে তা সিন্ডিকেট করে জামায়াত ও তার নেতৃবৃন্দ নিয়ে স্টোরী রিপোর্ট ছাপে। অন্তত এই ৩৩ দিনের পত্রিকাগুলোর রিপোর্ট তাই প্রমাণ করে।
গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়া, স্যাটেলাইট মিডিয়াতে জামায়াত ও শিবিরের নেতিবাচক খবর পরিবেশনের প্রতিযোগিতা চলছে। কে কত বেশি রং লাগিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখতে পেরেছেন। সত্য মিথ্যা বা সাংবাদিকতার ইউনিভার্সাল মিথ এখানে সম্পূর্ণ পরিত্যজ্য। ডিজিটাল সরকারের চেতনা ধারণ করে যে সাংবাদিকতার রূপ বাংলাদেশের জনগণ অবাক হয়ে দেখছে তাতে সবচেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে আমাদের মিডিয়া জগতই এবং তাদের বাসিন্দারা। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ কোন গোপন সংগঠন নয় অথবা সরকার এটাকে এখনো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নাই। তারপরও কেন এই একপেশে প্রচারণা।
বিএনপির ব্যাপারে একটু আধটু ব্যালেন্স করা হয়। পাশাপাশি শেখ হাসিনা যা করছেন তা সবই ভালো। তা গণতন্ত্রের জন্য, তা বাংলার ১৫ কোটি মানুষের জন্য। দলীয় বিবেচনায় আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে লেখা হয় পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা পাবার জন্য। অপরদিকে চারদলীয় ঐক্যজোট যা করবে তা ষড়যন্ত্র-তা পাকিস্তান বানানোর-তা গণতন্ত্র হত্যার জন্য এবং তা সুশীল সমাজকে ধ্বংস করার জন্য। অবশ্য এখন মন্ত্রীসহ সকল ডিজিটাল কুলীনদের মুখে সবচেয়ে মুখরোচক বিষয় হলো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে চারদলীয় জোটের সকল আয়োজন। কোথায় কোন ক্রাইম করে ধরা পড়লো তাতে সবাই একযোগে হুক্কা হু শুরু করে। বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে আপাতত যে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়েছে এবং সুশীল সমাজের মর্গে স্বাধীন মতপ্রকাশের অপারেশন চলছে তাতে মুজিবের বাকশালের আধুনিক রূপ ডিজিটাল বাকশালই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে জামায়াত বড় ফ্যাক্টর নয় বরং ভারতের তাঁবেদারীতে যে বা যারা বাধা হতে পারে তাদের নির্মূল করাই লক্ষ্য। যুদ্ধাপরাধ, মানবতা বিরোধী অপরাধ ইত্যাদি বাহানা মাত্র। মিডিয়ার একটি অংশ পূজনীয় ভারতের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যই জামায়াত এবং শিবিরের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করছে।
তা না হলে জামায়াত শিবিরের ব্যাপারে সকল ভদ্রতা, শালীনতা, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা সবকিছুই লোভ পায় কেন? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যখন জানতে পারবে আমাদের কিছু সংখ্যক সাংবাদিক নামের দলবাজ কলম মাস্তানদের কুকর্মের ফিরিস্তি তখন কি মূল্যায়ন করবে? সরকারের অত্যাচারের মাত্রা স্বৈরাচার হিটলার মুসোলিনিকে ছাড়িয়ে গেছে। ক্লাস এইটে, নাইনে পড়ে এমন কিশোর ছেলেদেরকে ধরে যেভাবে শিবিরের ক্যাডার বানিয়ে প্রচার প্রপাগান্ডা করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসারের বাসায় যেভাবে পুলিশ এবং রামদা (ছাত্রলীগ ও যুবলীগ) বাহিনীর আক্রমণ করা হচ্ছে। জাতির জাগ্রত বিবেক মিডিয়ার একপেশে আচরণ এগুলো কোন সভ্য দেশে কল্পনা করা যায়? মিডিয়া এ কাজগুলো করে জামায়াত শিবিরের ক্ষতির পাশাপাশি আমাদের সামাজিক কি কি ক্ষতি হচ্ছে এবং হতে পারে তা একটু ভাবলে দেশ ও জাতির জন্য উপকার হয়। আজাদ ছোবহান আহমাদ
No comments:
Write comments