Flickr

Sunday, 26 December 2010

নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই

Posted by   on

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি আর এই শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষার। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি অনেক উচ্চ শিক্ষিত লোক দুর্নীতির সাথে জড়িত। তারা প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণ করলেও নৈতিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেনি। ফলে আমাদের দেশ ও দেশের মানুষ অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। সমাজ, দেশ ও জাতিকে উন্নত করতে হলে প্রচলিত জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতার বিধানকেও অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
বর্তমান সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত উন্নত পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সংঘর্ষ-সংঘাত, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ যেসব অনাচার লক্ষ্য করছি সেই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি নৈতিক শিক্ষার কথা উল্লেখ করে সময়ের দাবি পূরণ করেছেন। শুধু দ্বনদ্ব-সংঘাত-হানাহানিই নয়, বর্তমান সময়ের ছাত্রদের একাংশকে ইভটিজিং-এর মত ঘৃণিত অপরাধের সাথেও জড়িত থাকতে দেখা যায়। আর বর্তমান সময়ে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা-প্রকৌশলসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতির যে ভয়াবহ চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে আমাদের শিক্ষিত সমাজ এবং শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বিরাট প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। আসলে কিছু গ্রন্থ বা সিলেবাস রপ্ত করে ডিগ্রি অর্জন করা গেলেও তাতে মানুষ কাঙ্ক্ষিত মানুষে পরিণত হয় না। এজন্য প্রয়োজন হয় নৈতিক শিক্ষার এবং মূল্যবোধ বিকাশের। অথচ বর্তমান সময়ে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। যখন আমরা সংকটে পড়ি বা নানা ঘটনায় সমাজ বিপর্যস্ত হয় তখন যেন আমরা ঠেকায় পড়েই নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে থাকি। অথচ পৃথিবীর ইতিহাস এ কথারই সাক্ষ্য দেয় যে, মানুষের সমাজে যখন ধর্মীয় প্রণোদনায় নৈতিক শিক্ষা গুরুত্ব পেয়েছে তখনই কাঙ্ক্ষিত মানুষ গড়ে উঠেছে এবং সমাজে পড়েছে তার ইতিবাচক প্রভাব। বর্তমান সময়ে মানব জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করলেও নৈতিক শিক্ষাকে অবহেলার কারণে আমরা না পাচ্ছি কাঙ্ক্ষিত মানুষ, না পাচ্ছি কাঙ্ক্ষিত সমাজ। এ কারণেই চোখ ধাঁধানো বর্তমান সভ্যতায় এত অশান্তি ও হাহাকার, এত অবিশ্বাস ও এত অনাচার।
শিক্ষার দীর্ঘ পরিক্রমায় মনীষীরা তাদের অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞানের কথা ব্যক্ত করেছেন। যেমন কেউ বলেছেন, ‘পশুপাখি সহজেই পশুপাখি কিন্তু মানুষ সহজে মানুষ নয়।' কেউ বলেছেন, ‘শিক্ষার লক্ষ্য হলো শরীর, মন ও আত্মার সুসামঞ্জস্য বিকাশ'। মন ও আত্মার বিকাশই হলো মানুষের প্রকৃত বিকাশ। আর এই বিকাশের জন্যই প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। বর্তমান সভ্যতার বাস্তবতায় আমরা যদি ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে উন্নত জীবন চাই তাহলে আমাদের আবার ফিরে আসতে হবে নৈতিক শিক্ষার আলোকিত ভুবনে। তাই এখন শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে প্রয়োজন প্রায়োগিক শিক্ষার সাথে নৈতিক শিক্ষার সমন্বয় সাধন। মেধাবী ছাত্রদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ এই বিষয়টি আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু আমাদের সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপলব্ধি করেন কিনা এবং কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter