মানুষের এখন আর কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। রাস্তা-ঘাটে, গাড়িতে, বাড়িতে, ফ্ল্যাটে, বাজারে, শিক্ষাঙ্গনে প্রতিনিয়ত মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। সমাজ ও রাষ্ট্র যেন অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। কোনো পদক্ষেপেই অস্বাভাবিক মৃত্যুর হার কমছে না। দিন দিন বেড়েই চলেছে। খুন-খারাবি, রাহাজানি, ছিনতাই-এর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অথচ একটি সমাজে শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করে মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ সাধন এবং কল্যাণকামী রাষ্ট্রের জন্য জীবনের নিরাপত্তা একান্ত অপরিহার্য। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুদায়িত্ব পালন শেষ হয়ে যায় না। এসব চাহিদা প্রাপ্তির সাথে সাথে মানুষ যাতে নিরাপত্তার সাথে জীবনযাপন করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করাও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না থাকলে সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। কিন্তু আজকে আমরা যে সমাজ ও রাষ্ট্রে বাস করছি তার সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সমাজের সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি কোথাও নেই। সকালে যে লোকটি বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে সে আবার ফিরে আসতে পারবে কিনা এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। এমনকি যে মেয়েটি কলেজে ক্লাস করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছে সে আবার মান-সম্মান নিয়ে বাসায় আসতে পারবে কি-না সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। একজন শিক্ষক যাকে আমরা মানুষ গড়ার কারিগর বলে মুখে ফেনা তুলি সেই শিক্ষক তার প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে পারবেন কি-না তাও অনিশ্চিত। হতভাগ্য কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন- পথে-ঘাটেও শিক্ষকরা নিরাপদ নন। ফরিদপুরের চাপা রাণী মেয়েকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেই নিহত হয়েছেন। নিহত, আহত কিংবা চরমভাবে অপমানিত হয়ে আত্মহত্যার অসংখ্য উদাহরণ আমাদের চতুর্দিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি, অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা এবং সন্ত্রাসী তান্ডবের ব্যাপকতা এতই বেড়েছে যে, এগুলো এখন আর মানুষকে আগের মতো বিচলিত করে না।
মানুষের যান্ত্রিক ব্যস্ততা, অন্যের প্রতি উদাসীনতা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, আন্তরিকতা, সহানুভূতিশীলতা প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলীর চর্চার অভাবে মানুষের নিকট এখন অতি অস্বাভাবিক ঘটনা স্বাভাবিক ঘটনার মতো মনে হয়। প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কতিপয় সন্ত্রাসী প্রকাশ্য দিবালোকে শ্রেণীকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একজন স্কুলশিক্ষিকাকে কুপিয়ে হত্যা করে। স্কুলশিক্ষিকা আরিফা খাতুন (২৬)কে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা বীরদর্পে এলাকা ত্যাগ করে। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার সাঁথিয়ায়। আরিফা সাঁথিয়া উপজেলার ভায়নাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। অন্যান্য দিনের মত হতভাগ্য আরিফা স্কুলে যান এবং শ্রেণীকক্ষে ক্লাস নিতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন সন্ত্রাসী শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে আরিফাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে চলে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে। কত অমানবিক, কত হৃদয়বিদারক এ দৃশ্য! একটি সভ্য সমাজে এতটা নৃশংসতা কি কল্পনা করা যায়? শ্রেণীকক্ষে পাঠদানকালে একজন শিক্ষিকাকে রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দেয়া হলো! অথচ তার বিরুদ্ধে কতটা প্রতিবাদ হলো! আদৌ কোনো প্রতিবাদ হয়েছে কি?
রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার যারা খেলার মাঠে কারো বিরুদ্ধে কোনো রকমে একটা জয় পেলে মুহূর্তের মধ্যে অভিনন্দনের বার্তা পাঠাতে ভুল করেন না তারা কিন্তু আরিফার জন্য এতটুকু সহানুভূতি প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। শিক্ষামন্ত্রী যিনি শিক্ষা ও শিক্ষকদের কল্যাণে প্রতিনিয়ত বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে চলেছেন তিনি কিন্তু আরিফার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে তার আত্মাকে ও তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার সুযোগ পাননি! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি একজন মহিলা তিনি একথাটিও বলেননি যে, অন্য একজন মহিলা শিক্ষিকাকে তিনি এমনকি শ্রেণীকক্ষেও নিরাপত্তা দিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশে বাহারী নামের যে শিক্ষক সংগঠনগুলো রয়েছে তাদের কোনো নেতাও ছুটে যাননি সাঁথিয়ার ভায়নাপাড়ায়।
নারীদের অধিকার নিয়ে যাদের তৎপরতার (!) শেষ নেই সেই সংগঠনগুলোও কি কোনো জোরালো প্রতিবাদ করেছে? এ হলো আমাদের মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ! খুন, জোড়া খুন, হালিতে (২ জোড়া) খুন- এগুলো আমাদের বিবেককে এখন আর তাড়িত করে না! জহির রায়হানের ভাষায় : ‘প্রথম প্রথম কাউকে মারতে দেখলে ব্যথা পেতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। কখনো চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রুও হয়তো জন্ম নিত। এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি। কী জানি, হয়তো অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে।' সময়ের প্রয়োজনে কিংবা নৃশংসতার ভয়াবহতায় জহির রায়হানের মানবিক অনুভূতি হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য ‘ভোঁতা' হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা, আমাদের সমাজ এবং আমাদের রাষ্ট্র-সবাই কি একসাথে অনুভূতিশূন্য হয়ে যাচ্ছি? আমাদের সকলের ‘অনুভূতিগুলো' কি ‘ভোঁতা' হয়ে যাচ্ছে?
মানুষের যান্ত্রিক ব্যস্ততা, অন্যের প্রতি উদাসীনতা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, আন্তরিকতা, সহানুভূতিশীলতা প্রভৃতি মানবীয় গুণাবলীর চর্চার অভাবে মানুষের নিকট এখন অতি অস্বাভাবিক ঘটনা স্বাভাবিক ঘটনার মতো মনে হয়। প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কতিপয় সন্ত্রাসী প্রকাশ্য দিবালোকে শ্রেণীকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একজন স্কুলশিক্ষিকাকে কুপিয়ে হত্যা করে। স্কুলশিক্ষিকা আরিফা খাতুন (২৬)কে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা বীরদর্পে এলাকা ত্যাগ করে। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার সাঁথিয়ায়। আরিফা সাঁথিয়া উপজেলার ভায়নাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। অন্যান্য দিনের মত হতভাগ্য আরিফা স্কুলে যান এবং শ্রেণীকক্ষে ক্লাস নিতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন সন্ত্রাসী শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে আরিফাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে চলে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে। কত অমানবিক, কত হৃদয়বিদারক এ দৃশ্য! একটি সভ্য সমাজে এতটা নৃশংসতা কি কল্পনা করা যায়? শ্রেণীকক্ষে পাঠদানকালে একজন শিক্ষিকাকে রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দেয়া হলো! অথচ তার বিরুদ্ধে কতটা প্রতিবাদ হলো! আদৌ কোনো প্রতিবাদ হয়েছে কি?
রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার যারা খেলার মাঠে কারো বিরুদ্ধে কোনো রকমে একটা জয় পেলে মুহূর্তের মধ্যে অভিনন্দনের বার্তা পাঠাতে ভুল করেন না তারা কিন্তু আরিফার জন্য এতটুকু সহানুভূতি প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। শিক্ষামন্ত্রী যিনি শিক্ষা ও শিক্ষকদের কল্যাণে প্রতিনিয়ত বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে চলেছেন তিনি কিন্তু আরিফার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে তার আত্মাকে ও তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার সুযোগ পাননি! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি একজন মহিলা তিনি একথাটিও বলেননি যে, অন্য একজন মহিলা শিক্ষিকাকে তিনি এমনকি শ্রেণীকক্ষেও নিরাপত্তা দিতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশে বাহারী নামের যে শিক্ষক সংগঠনগুলো রয়েছে তাদের কোনো নেতাও ছুটে যাননি সাঁথিয়ার ভায়নাপাড়ায়।
নারীদের অধিকার নিয়ে যাদের তৎপরতার (!) শেষ নেই সেই সংগঠনগুলোও কি কোনো জোরালো প্রতিবাদ করেছে? এ হলো আমাদের মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ! খুন, জোড়া খুন, হালিতে (২ জোড়া) খুন- এগুলো আমাদের বিবেককে এখন আর তাড়িত করে না! জহির রায়হানের ভাষায় : ‘প্রথম প্রথম কাউকে মারতে দেখলে ব্যথা পেতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। কখনো চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রুও হয়তো জন্ম নিত। এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি। কী জানি, হয়তো অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে।' সময়ের প্রয়োজনে কিংবা নৃশংসতার ভয়াবহতায় জহির রায়হানের মানবিক অনুভূতি হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য ‘ভোঁতা' হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা, আমাদের সমাজ এবং আমাদের রাষ্ট্র-সবাই কি একসাথে অনুভূতিশূন্য হয়ে যাচ্ছি? আমাদের সকলের ‘অনুভূতিগুলো' কি ‘ভোঁতা' হয়ে যাচ্ছে?
No comments:
Write comments