Flickr

Saturday, 28 May 2011

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য

Posted by   on

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য
 
দেশে ক্রমশ প্রশাসনিক নৈরাজ্যের কালোছায়া বিস্তৃত হতে শুরু করেছে। দলীয় সন্ত্রাসীদের প্রতি রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও মমত্ববোধ প্রশাসনিক শৃক্মখলা ও আইনের শাসনকে বিকল করে দিতে শুরু করেছে। দেখা যাচ্ছে, সরকার প্রশাসনিক পর্যায়ে বা রাজনৈতিক দিকনির্দেশনায় সন্ত্রাসের দানবদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিতে পারছে না। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিস্তার শুধু সামাজিক ও প্রশাসনিক শৃক্মখলাকেই বিকল করে দেয়নি। এর কালোথাবা শিক্ষাঙ্গন ও শিক্ষা-প্রশাসনকেও গ্রাস করে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ‘দৈনিক সংগ্রাম' গত মঙ্গলবার ‘শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মুখোমুখি ছাত্রলীগের দু'গ্রুপ যেকোন মুহূর্তে সংঘর্ষের আশঙ্কা' শীর্ষক একটি উদ্বেগজনক খবর প্রকাশ করেছে। এদিকে মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজের শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় ক্ষমতাসীন শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ হস্তক্ষেপ করার ফলে ওই কলেজে তিনদিন ধরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের তান্ডবে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগের তান্ডব এখন আর প্রতিপক্ষের ছাত্র সংগঠনসমূহের ওপর আধিপত্য বিস্তারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ছাত্রলীগ চাঁদাবাজি, হল দখল, মাদক ব্যবসা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং টেকনিক্যাল-মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করেছে। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ, সাধারণ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও ফলাফল ছাত্রলীগের ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এসব ক্যাডার ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কমান্ডে চলছে। অন্যদিকে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়োগে পেশাগত দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতার বদলে দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য দেয়ায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষ-ভিসি কিংবা শিক্ষা-প্রশাসক সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ সদস্যদের বিরুদ্ধে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোন শৃক্মখলাভঙ্গের ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। কেননা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ব্যক্তি যেভাবে তার রাজনৈতিক নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য পোষণ করেন, একইভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ক্যাডাররাও সরকারের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের প্রশ্রয় ও আস্কারা পেয়ে থাকে।

 উল্লেখ্য, ঢাকার মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়ে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপ সংঘর্ষের অবস্থায় উপনীত হয়েছে। যদিও এসব কোন ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের এখতিয়ারে পড়ে না। ছাত্ররা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার জন্য যায়। সেখানে তাদের সুষ্ঠুভাবে একাডেমিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে অধ্যয়নকেই একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান করা উচিত। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী যখন রাজনৈতিক মাস্তানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে পদদলিত করে নিজেরাই বিকল্প প্রশাসক হয়ে ওঠে, তখন সেখানে শিক্ষার কোন পরিবেশ থাকে না। মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজের উপ-অধ্যক্ষের পদে কে বসবেন সেটা নির্ধারণ করবে কলেজের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ। এজন্য চলমান বিধি অনুযায়ী ন্যায়ত ও আইনত যার নিযুক্তি পাওয়া উচিত, সেটাই কার্যকর হওয়া দরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে শুধু ছাত্রলীগ ক্যাডাররা হস্তক্ষেপেই করছে না। একপক্ষ অন্যপক্ষের ওপর তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে সংঘাতময় অবস্থা তৈরি করেছেন বলে প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কোন মেডিকেল কলেজ ছাত্রদের সন্ত্রাস ও গুন্ডামী করার স্থান হতে পারে না। সরকার প্রশ্রয় না দিলে মেডিকেল কলেজের মতো স্পর্শকাতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা তাদের শিক্ষাজীবনের ওপর কলঙ্কিত ঝুঁকি নেবার মতো অরাজকতায় লিপ্ত হতে পারে না। মিটফোর্ড হাসপাতালে উপ-অধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু'গ্রুপের মাঝে সংঘাতের আশঙ্কা আইনের শাসন ও প্রশাসনিক শৃক্মখলার চরম অবনতির ইঙ্গিত।

 উল্লেখ্য, এর আগে সরকারের লালিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সন্ত্রাসের তান্ডবে বহু ছাত্রের জীবনহানি ছাড়াও শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে মূল্যবান শিক্ষাবর্ষ খসে পড়েছে। অনেকে মনে করেন, বড় বড় কলেজ, মেডিকেল, টেকনিক্যাল কলেজসহ পাবলিক ইউনিভার্সিটিসমূহে অশান্তি ও নৈরাজ্য জিইয়ে রাখা সরকারের অশুভ ইচ্ছার পরিণতি। শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য জিইয়ে রেখে সরকার তাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য গণআন্দোলন থেকে ছাত্রদের দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও টেকনিক্যাল শিক্ষাক্ষেত্রে একটা নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি করে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য বিদেশে, বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারতে যেতে বাধ্য করতে চায়। তবে কোনভাবেই এই নৈরাজ্যকর অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শান্তিকামী সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নিজেরাও যেমন পড়াশোনা করে ডাক্তার হতে চায় না, তেমনি মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও অধ্যয়ন করে নিজস্ব যোগ্যতায় ডাক্তার হতে দিতে চায় না। মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েও যারা সরকারি ছাত্রসংগঠনের ক্যাডার-লাঠিয়াল পরিচয়ে পড়াশোনা ছাড়াই ডিগ্রি অর্জন করে ভালো পদ-পদবী পাবার আশা করতে পারে, তবে তারা পড়ালেখা বাদ রেখে কেন হাঙ্গামা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে না? আওয়ামী লীগ সরকারের প্রকট দলবাজি ইতোমধ্যে দেশকে একটা দুঃসহ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব না হলে জাতির আর একটি জেনারেশন ধ্বংস হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সামাজিক শক্তি ও বুদ্ধিজীবীদের সচেতন হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এগিয়ে আসতে হবে।

No comments:
Write comments
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter