Flickr

Wednesday, 29 February 2012

পুঁজিবাজারে চক্রান্তের আশ্রয়

গত বছরের শেষদিকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে একের পর এক দরপতন ও নানা অঘটনে দেশের আপামর জনগণ সরকারের প্রতি প্রচ- রকম হতাশ ও একই সঙ্গে বিক্ষুব্ধ। সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীন উদ্যোগের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের চক্রান্তের শিকার হয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পথে বসেছে। এর পেছনে যারা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী সরকার জেনে-শুনেও তাদের কোনো আইনি বিচারের সম্মুখীন করেনি। বরং তাদের নাম পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ না করে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়ে সরকার নিজের অবস্থানকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে যারা পুঁজিবাজার ধসের জন্য দায়ী ছিল, তারাই আবার সুযোগ পেয়ে ক্ষুদ্র ও স্বল্প বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য নিয়ে এবারো একই রকম ন্যক্কারজনক খেলা খেলেছে। দলীয়করণ, আত্মীয়করণ ও অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে বলে নির্বাচনী প্রচারণায় নানা বক্তব্য দিলেও বাস্তবে তা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। পুঁজিবাজারে সর্বস্ব হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের কয়েকজন চরম হতাশায় আত্মহননের মতো নির্মম পথ বেছে নিয়েছে। যা কোনো সভ্য সমাজ ও গণতান্ত্রিক দেশের জন্য মঙ্গলকর ও সম্মানজনক বিষয় নয়। এদিকে টাইম সাময়িকী বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বাজার বলে মন্তব্য করেছে, যা একটি দেশের জন্য চরম অবমাননাকর ও ভাবমূর্তির ওপর কঠোর আঘাত। এ নেতিবাচক মন্তব্যকে ভুল প্রমাণ করতে হলে সরকারকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ এ দায় শুধু সরকারের।

 টাইম সাময়িকী তাদের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পুঁজিবাজারের এ দৈন্যদশার যৌক্তিক কারণগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনাময় বিভিন্ন দিকগুলোকেও তারা একই প্রতিবেদনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। চড়া মূল্যস্ফীতির জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি সাধারণ জনগণের নেতিবাচক মনোভাব তুলে ধরে সাময়িকীটি পুঁজিবাজারে কারসাজি আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের কেউই বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। যে কোনো মন্তব্য কিংবা গঠনমূলক সমালোচনা ও প্রতিবাদকে তারা বিরোধী দলের অপপ্রচার বলে সব সময় দায় এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু চোখ বন্ধ রাখলেই প্রলয় বন্ধ হয় না। টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন বর্তমান সরকারের জন্য একটি সতর্ক বার্তা। সরকার চাইলে বর্তমান মেয়াদের বাকি সময়ে এখনো দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।

পুঁজিবাজারে ধসের নেপথ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাও সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল বলে মনে করার কোনো যুক্তি নেই। কারণ, পোশাকশিল্পের আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের রিজার্ভের ওপর ভিত্তি করে অধিকাংশ সদ্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও অনভিজ্ঞ বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে দেয়ার অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রাহকদের আমানত বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো লাভবান হলেও দেশীয় অর্থনীতিতে তারল্য সঙ্কট শুরু হয় এবং মুদ্রাস্ফীতি আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হঠাৎ বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরলে পুঁজিবাজার থমকে দাঁড়ায় এবং পরে ধারাবাহিক পতনের কবলে পতিত হয়। সুতরাং সঙ্কট তৈরিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তও কম দায়ী নয়। তবে, কারণ যাই হোক এর থেকে উত্তরনের পথ বের করে দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ঠ সবাকে সচেষ্ট হতে হবে।

Sunday, 26 February 2012

একুশের চেতনা

একুশের চেতনাকে কেন্দ্র করে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা এখন জরুরি এবং সেটাই আমাদের প্রকৃত মুক্তির পথ। বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করা মানে দেশমাতৃকাকে, নিজের মাকে অবহেলা করা, অমর্যাদার চোখে দেখা। সুতরাং কেবল ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর পালন করলেই হবে না, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। কার্যকর করতে হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনও করতে হবে। পাশাপাশি সর্বত্র বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করাও সমান জরুরি। একুশের চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনা প্রতিটি বাঙালি সত্তায় মিশে আছে। তারই আলোকে এবার পালিত হবে ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর। ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত পথ ধরেই এসেছে মহান মুক্তিযুদ্ধ। মাতৃভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির একটি গৌরবময় অধ্যায়, তেমনি মুক্তিযুদ্ধও বাঙালি জাতিসত্তার স্মারক। একমাত্র বাঙালি জাতি ছাড়া পৃথিবীর কোনো জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি, এত প্রাণ যায়নি অন্য কোনো দেশের স্বাধীনতার জন্যও।

 পৃথিবীতে বেদনা ও গৌরবের আশ্চর্যজনক নানা ঘটনা ঘটেছে দেশে দেশে। আমাদের রয়েছে গৌরবময় দুটো ঘটনা_ যার মধ্যে শোক ও বেদনা নিহিত। একটা ভাষা আন্দোলন, ১৯৫২ সালে যার বিপুল স্ফুরণ ও আত্মত্যাগ হয়েছিল। আর একটা স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, ১৯৭১ সালে। বিপুল আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে পাওয়া। মূলত একাত্তরের সূচনাই হয়েছিল বায়ান্নতে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব মানুষ ভাষা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান রক্ষার জন্য একটি বিশেষ গোষ্ঠী মরিয়া হয়ে উঠেছিল। আর সে কারণে একুশে ভাষার জন্য যুদ্ধ এবং একাত্তরে স্বাধীনতা বা স্বাধিকার অর্জনের জন্য যুদ্ধ প্রকরণগতভাবে ভিন্ন হলেও উদ্দেশ্য ছিল একই।


বাংলা একটি আর্য ভাষা, যার বয়স অন্তত হাজার বছর। বাংলা ভাষা বর্তমানে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা রাজ্য, আসামের শিলচর, করিমগঞ্জ, গোয়ালপাড়া এবং বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খ-ের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রচলিত। এর মধ্যে বাংলাদেশের বাইরে ভারতের যেসব অঞ্চলে বাংলাভাষা প্রচলিত সেসব অঞ্চলে তা হিন্দি বা স্থানীয় অন্যান্য ভাষার চাপে কোণঠাসা।

 কোনো কোনো প-িত বাংলাকে সংস্কৃত ভাষার 'দুহিতা' বলে অভিহিত করেন। কিন্তু একথা সত্য যে, আঞ্চলিক প্রাকৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়। প্রাকৃতজনের তথা সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা প্রাকৃত ভাষা। এই অর্থে গৌড় অঞ্চলের গৌড়ীয় প্রাকৃত বাংলাভাষার 'জননী'। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের আধুনিক ভাষাগুলো অনুরূপভাবে স্থানীয় প্রাকৃত থেকে জন্মলাভ করে, যেমন মাগধী প্রাকৃত থেকে হিন্দি, মহারাষ্ট্রীয় প্রাকৃত থেকে মারাঠি ভাষার উদ্ভব হয়। সংস্কৃত ছিল সর্বভারতীয় লেখ্য বা সাহিত্যিক ভাষা। প্রাকৃত ও আধুনিক ভাষার মাঝখানে 'অবহট্ট' নামে স্বল্পকাল স্থায়ী একটি স্তর ছিল।

 ভাষা আন্দোলনের অভিঘাতে আমরা কিছু সচেতন হলেও বারবার একই বিভ্রান্তির পথেই পা বাড়াচ্ছি। কোনো কোনো শিক্ষিত লোক বলেন বাংলা নয়, আমাদের শিক্ষার মাধ্যম হতে হবে ইংরেজি। তারা যুক্তি দেখান, বিশ্বায়নের এই যুগে ইন্টারনেট, ফেসবুক, ই-মেইল-কম্পিউটার-ফ্যাক্সের যুগে ইংরেজির কোনো বিকল্প নেই। এ কথাগুলো যারা বলেন তারা সমাজের আধিপত্যশীল শ্রেণীর প্রতিনিধি এবং নিয়ন্ত্রক। এদের ছেলেমেয়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে। তাদের বাংলার প্রতি উন্নাসিকতা রয়েছে, রয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে ঘৃণাও।

 মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে কেবল একটি স্বাধীন ভূখ- নয়, নৃতত্ত্ব-জাতিতত্ত্বের মতো ভাষাতত্ত্বের অনেক সম্পদ আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছি। আমাদের আজকের মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা সমগ্র জাতির শত-সহস্র বছরের সাধনার ফসল। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে যখন জাতিসত্তার বিকাশ ঘটতে থাকে তখন থেকেই আমরা একটা বৈরী পরিবেশের মধ্যে পড়ে যাই। যা আজো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। উপরন্তু ভাষা নিয়ে চলছে নানা ষড়যন্ত্র, চলছে বিজাতীয় ভাষার আগ্রাসন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে। লক্ষ্য ছিল ওই রাষ্ট্রকে স্থায়ী করার উদ্দেশ্যে দেশের অভ্যন্তরে একটি সামন্ততান্ত্রিক সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা। এ জন্য তার অধিপতিরা ধর্মকে খুব শক্ত করে অাঁকড়ে ধরেছিল। তারা স্বপ্ন দেখেছিল পাকিস্তান হবে ইসলামী রাষ্ট্র। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষেও তাদের যুক্তি ওই একটাই, উর্দু বাংলার তুলনায় অধিক ইসলামী। নইলে উর্দু পাকিস্তানের অধিকাংশ নাগরিকের ভাষাও ছিল না এবং বাংলার তুলনায় উন্নতও ছিল না। বাংলাকে তারা বলত পৌত্তলিক ভাষা। বাংলা বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা নয়, তাদের মাতৃভাষা উর্দু এ সাংস্কৃতিক প্রচারণা পাকিস্তান হওয়ার আগেই শুরু করা হয়েছিল, পাকিস্তান হওয়ার পর জানা হলো যে বাংলার যোগ্যতা নেই পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হওয়ার। বাংলাকে উর্দুর দ্বিতীয় স্তরে পরিণত করার অপচেষ্টা চলছিল_ যা বাঙালি রুখে দিয়েছে।

 ভাষা আন্দোলন সরাসরি আঘাত করল সামন্ত সংস্কৃতিকে জোরদার করার ওই রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের গোড়াতে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের জায়গায় সে নিয়ে এলো ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদকে। তবে ভাষার ব্যাপারে বাঙালি আগে থেকেই আপসহীন প্রতিবাদী ছিল। সতেরো শতকের কবি আবদুল হাকিম সুউচ্চ কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে যে ব্যক্তি 'হিংসে বঙ্গ বাণী', সে ব্যক্তি যেন এ দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যায়। তিনি তার জাত তুলেও কটু মন্তব্য করেন। উনিশ শতকে মীর মশাররফ হোসেন বলেন, 'মাতৃভাষার প্রতি যাহার ভক্তি নাই, সে মানুষ নহে।' বিশ শতকে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ মানুষ বাংলাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি কতিপয় তরুণ জীবন বিসর্জন দিয়ে প্রতিবাদের চূড়ান্ত প্রমাণ দিয়েছে। মাতৃভাষার জন্য এত বড় ত্যাগ পৃথিবীতে বিরল। সেদিনের শাসকশ্রেণী ও তার তাঁবেদার গোষ্ঠী এই ত্যাগের মূল্য বোঝেনি। কিন্তু পরবর্তীকালে বিশ্ববাসী এর মর্ম বুঝেছে ও সঠিক মূল্যায়ন করেছে।

 বিশ শতকের শেষ প্রান্তে জাতিসংঘের অঙ্গ-সংগঠন ইউনেস্কো বাংলার মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসরূপে উদযাপন করার ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণার ফলে বাংলা ভাষা পৃথিবীর সব ভাষার মধ্যে একটা দুর্লভ মর্যাদার অধিকারী হয়েছে। বলা যায়, সব ভাষার ওপর উঠে এসে একটা ঈর্ষণীয় স্থান দখল করে নিয়েছে। এখন প্রতিবছর ওই দিনটিকে স্মরণ করে বিশ্বের ১৯০টি দেশ বাংলা ভাষার কথা বলে এবং আপন মাতৃভাষার মমত্ব অনুভব করে। কেবল তাই নয়, বাংলা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায়।

 এখন প্রশ্ন হলো, মাতৃভাষার এত বড় গৌরব ও অর্জনকে আমরা কি সঠিক উপলব্ধি করতে পেরেছি? ভাষার ব্যাপারে বাংলাদেশে আজ যা ঘটছে, তা প্রত্যক্ষ করে সহজেই বলা যায়_ না, আমরা পারিনি। আজকাল প্রবীণদের মুখে প্রায়ই শোনা যায়_ স্কুল-কলেজে ছেলেমেয়েরা গোল্লায় গেছে। ইংরেজি বলা তো দূরের কথা, শুদ্ধ করে বানান পর্যন্ত বলতে পারে না। সরকারি-বেসরকারি উপরের মহল থেকে হরহামেশা বলা হচ্ছে_ বিশ্বায়নের যুগে আমাদের টিকে থাকতে হলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিশেষ করে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্যপ্রবাহ, মুক্তবাজার অর্থনীতি ইত্যাদির কারণে ইংরেজি ভাষাজ্ঞান ও লিখন-কথনের দক্ষতা ছাড়া গত্যন্তর নেই। অতএব আমাদের ইংরেজি শিখতেই হবে। পরিস্থিতি এমন যে, ইংরেজি বিদ্যা অর্জন করতে না পারলে কোনো শিক্ষা আর শিক্ষা হয় না, সব বিফলে যায়। এ মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। পাশাপাশি রোধ করতে হবে বাংলা ভাষার বিকৃতিও।

 আমাদের ভাষা আন্দোলন কেবল অতীতের স্মৃতি নয়, ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা ও পথপ্রদর্শক। বাংলাভাষা সর্বস্তরে কতটা প্রচলিত হচ্ছে তার নিরিখে বিচার করলেই বোঝা যাবে গণতন্ত্রের দিকে আমরা কতটা এগিয়েছি, শিক্ষা মোটেই সর্বজনীন হয়নি এবং শিক্ষিতরাও বাংলা ভাষা চর্চায় যে অত্যন্ত অধিক আগ্রহ দেখাচ্ছেন তা নয়। যিনি ইংরেজি ভালো জানেন বাংলাদেশে তারই কদর বেশি।
প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রভাষা থেকে শিক্ষার মাধ্যম এবং জীবনের সর্বস্তরে বাংলাভাষা ব্যবহারের দাবি ছিল সর্বজনীন। যাকে সামনে নিয়ে আমরা এগিয়েছি অবিচল লক্ষ্যে, স্বাধীনতার ও স্বাধিকার অর্জনে।

 বর্তমানে সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহার দারুণভাবে উপেক্ষিত। এর ভবিষ্যৎ ফলাফল খুব খারাপ হতে বাধ্য। জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা ঘোরতর অন্যায়। আসলে মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চাই জাতীয় অগ্রগতির চাবিকাঠি। চীন, জাপান, কোরিয়া ও জার্মান প্রভৃতি রাষ্ট্র মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারলে আমরা কেন ইংরেজিনির্ভর থাকব। ইংরেজি বা অন্য ভাষা শিক্ষার প্রতি আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই। বরং যারা পারবে তারা একাধিক ভাষা শিখে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও দর্শনের ক্ষেত্রে যদি মৌলিক অবদান রাখার মাধ্যমে বিশ্ব সভায় নিজের স্থান করে নিতে পারে।

 কিন্তু দেশের সব ক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তনের জন্য চাই নিজ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা মাতৃভাষার মাধ্যমে নতুন জাতীয় বিজ্ঞানভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক এক শিক্ষাব্যবস্থা। দেশের সাংস্কৃতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ ধরনের শিক্ষার মাধ্যমেই শুধু সংস্কৃতিমনা আধুনিক ও আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করা সম্ভব। জাতীয় অগ্রগতির জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।

 যে করেই হোক দেশজ ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চার দ্বারা বিদেশি অপসংস্কৃতি রোধ করতে হবে। আমাদের দেশপ্রেম, স্বজাতিপ্রীতি এবং সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। এর জন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি ও মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে এসব অর্জন করা যাবে না।

 একুশের চেতনাকে কেন্দ্র করে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা এখন জরুরি এবং সেটাই আমাদের প্রকৃত মুক্তির পথ। বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করা মানে দেশমাতৃকাকে, নিজের মাকে অবহেলা করা, অমর্যাদার চোখে দেখা। সুতরাং কেবল ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর পালন করলেই হবে না, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতিকে প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। কার্যকর করতে হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটকে। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনও করতে হবে। পাশাপাশি সর্বত্র বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করাও সমান জরুরি। একুশের চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।

Tuesday, 21 February 2012

সীমান্ত ও হত্যা অজুহাত

সীমান্তে যে কোনো অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিদ্যমান আইনে বিচার হবে এবং এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। তা না করে সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালানো অব্যাহত রাখা হবে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যখন বিএসএফ অন্যায়ভাবে একের পর এক বাংলাদেশি হত্যা করে যাচ্ছিল, যখন এ হত্যাকা- রোধ করতে একটি স্থায়ী সমাধানের কথা দুই দেশের সাধারণ জনগণ আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যখন সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্ত ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহল থেকে বলা হচ্ছে-সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধ করা যাবে না। তাদের এ ধরনের দায়িত্বহীন মন্তব্যে সীমান্তে বিএসএফ আরো বেশি বেপরোয়া আচরণ করতে সাহস দেখাবে এবং এর ফলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্কে নিঃসন্দেহে ফাটল ধরবে। এমনকি সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 এর আগে বহুবার ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তে সংঘটিত কর্মকা-ের জন্য দুঃখপ্রকাশ এবং আগামীতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও অতীতের সব বক্তব্য থেকে সরে এসে বিএসএফ প্রধান যে বক্তব্য ও মনোভাব প্রকাশ করলেন তা সীমান্ত সমস্যাকে আরো দীর্ঘায়িত ও জটিল করে তুলবে। সম্প্রতি বিএসএফ কর্তৃক একের পর এক বাংলাদেশি নিরীহ নাগরিক হত্যাকা- ও নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার অতি দ্রুত এর একটা স্থায়ী সমাধানে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশের মানুষ সেটাই প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু যৌক্তিক ও সমঝোতার পথে না গিয়ে তাদের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য প্রদান করা হলো তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের মানুষ এ ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত অভিযোগ ও বক্তব্য কখনই মেনে নেবে না। সীমান্ত বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করার পর ভারত বাংলাদেশ প্রশ্নে কতটা বন্ধুত্ব ও প্রতিবেশিসুলভ মনোভাব পোষণ করে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সরকারের উচিত হবে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ভারতের কাছে কঠোর ও দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করা। আমরা চাই, সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় না দিয়ে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে তৎপর হবে।


গত মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএসএফ প্রধান ইউকে বনশল বাংলাদেশ সীমান্তে পুরোপুরি গুলি চালানো বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন। সীমান্তে অপরাধ রোধে গুলি চালাতেই হবে বলে তিনি তার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি পরোক্ষভাবে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে গুলি চালানো এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করার ব্যাপারে বিজিবির ভূমিকাকে দায়ী করার অপচেষ্টা করেছেন। আমরা তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কারণ বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ বরাবরই সীমান্ত শান্তি রক্ষার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে তৎপর। তারা বারবার উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে একটি স্থায়ী সমাধান আশা করে আসছে। কিন্তু একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও ভারত তা রক্ষা করতে পারেনি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সীমান্তে এ পর্যন্ত হত্যাকা-ের শিকার প্রতিটি নাগরিক নিরীহ ও নিরস্ত্র বলে প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি এক যুবককে নির্যাতনের যে ভিডিও চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের কর্মকা- শুধু অমানবিক নয়, ঘৃণিতও। তা সত্ত্বেও ইউকে বনশল যেভাবে বিএসএফের কর্মকা-ের পক্ষে সাফাই গাইলেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক, অনভিপ্রেতও বটে। তার এ বক্তব্য বিএসএফকে আগামীতে আরো বাংলাদেশি নাগরিক হত্যায় উৎসাহিত করবে।

বিএসএফ প্রধান তার বক্তব্যে সীমান্ত চোরাচালান ও অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য একতরফাভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের দায়ী করেছেন। দুই দেশের সীমান্তে চোরাচালান হয়_ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে ভারতের কোনো নাগরিক এর সঙ্গে জড়িত নয় এটা ভাবার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সীমান্তে যে কোনো অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিদ্যমান আইনে বিচার হবে এবং এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। তা না করে সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালানো অব্যাহত রাখা হবে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ইউকে বনশলের এ বক্তব্যের পর সীমান্তে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির দায় ভারত সরকারকেই নিতে হবে।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি? কেবল মুখে উচ্চারণ করে নয়, পাখির বুলির মতন গান গেয়েই নয়, আমাদের প্রমাণ করতে হবে আব্দুল হাকিমের সেই মহতী উচ্চারণ ঘৃণার সাথে। যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন'জানি। আমরা এমন নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হতে চাই না, আমরা বুক উঁচু করে বলতে পারি। মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা।




























ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর এবার। গর্বিত অধ্যায়ের এক গৌরবময় অর্জনের সমুজ্জ্বল এই কাল। কিন্তু প্রত্যাশা কিংবা দাবি অনুযায়ী প্রাপ্তির পরিধান লক্ষ্য করলে কেবল দুঃখ আর লজ্জাই বোধহয় সময়টাকে গ্রাস করবে। '৪৮ কিংবা '৫২ যে সময়ই বলুন না কেন আমাদের দাবি ছিল 'অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই', সব ভাষার সমান মর্যাদা চাই। সেই দাবি বা রক্ত দেয়া অধিকার আদায় করার লড়াইয়ে যে মানুষের সমর্থন ছিল, তা বলা যাবে না। কারণ যারা সেদিন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অন্ধ ভক্ত ছিলেন, মুসলিম লীগকে চোখ বুজে সমর্থন দিয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যেও এমন একটি নাড়া লেগেছিল, যা থেকে মানুষের সংহতি আরো জোরদার হয়েছিল সেদিন। মর্মান্তিক ছাত্র হত্যার রক্তপাতে প্রত্যেকটি মানুষ লীগশাহীর বিরুদ্ধে ঘৃণায় ফেটে পড়ে ছিলেন।

'আমরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' সেস্নাগানটা দিয়ে ছিলাম কারণ পূর্ববাংলায় তখন সাড়ে চার কোটি মানুষের বসবাস। তাদের মাতৃভাষা বাংলা। যথার্থ কারণেই বাংলার দাবি উঠেছিল। আমরা ছিলাম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক। পাকিস্তানের পশ্চিমে পাঞ্জাবি, পশতু, সিন্ধি ও বেলুচ ভাষায় কথা বলার সংখ্যা খুবই সীমিত এবং সারা পাকিস্তানের লোকসংখ্যা তখন সাত কোটি। অন্যদের চেয়ে আমরা পূর্ববঙ্গীয় মানুষ সংখ্যায় অনেক বেশি হওয়া সত্ত্বেও আমরা একই সাথে সব আঞ্চলিক ভাষার সমান মর্যাদা দাবি করেছিলাম। আমরা প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসী ছিলাম, চেতনায় ছিল অসাম্প্রদায়িক ভাবনা_ যা সেদিন কোনো কূপম-ুকতার শিকার হতে পারেনি। আমাদের মানসিকতায় কোনো বৈরী মনোভাব স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা তো বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবেই দাবি করলাম। ইংরেজি বা উর্দুর প্রতি কোনো অনীহা ছিল না। আমাদের দাবি ছিল গণতান্ত্রিক। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবি। কিন্তু সেদিন যে অনৈক্যের বীজ বপন করেছিল মুসলিম লীগ, সেই নীতিই তাদের কাল হলো। অথচ যে উর্দুর জন্য এত ফ্যাসাদ, প্রাণহরণ, মানুষের ওপর অকথ্য নির্যাতন সেই ভাষা কিন্তু পাকিস্তান রাষ্ট্রের কোনো এলাকারই মাতৃভাষা কেন প্রচলিত কোনো ভাষাই ছিল না। তারপরও আমাদের উদারতায় আমরা উর্দুকেও বর্জন করতে বলিনি।


সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, উর্দুর্ভাষী মানুষ যারা প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন, তারা পর্যন্ত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বাংলাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং জুলুম সহ্য করেছেন। উর্দুভাষী শিক্ষাবিদ, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই আমাদের সংগ্রামকে সমর্থন করেছেন। এ প্রসঙ্গে, ভাষাসৈনিক ড. ইউসুফ হাসানের কথা সবার আগে উল্লেখ করতে চাই। তিনি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক চৈতন্যের মানুষ পৃথিবীটাকে শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে সব মানুষের জন্য প্রস্তুত করার একজন সচেতন নিষ্ঠাবান সংগঠক ছিলেন, আজ তিনি নবতীপর বয়সে নূ্যব্জ অথচ পরম পরিতাপের বিষয়, আজ জীবিত সে বয়োজ্যেষ্ঠ ভাষা সংগ্রামী ড. ইউসুফ হাসানকে রাষ্ট্র আজো তাকে কোনো সম্মান প্রদান করেনি। এছাড়া সৈয়দপুরের কবি আদীব সোহেল, ঢাকার নওশাদ নূরী, ফতেহ ফারুক, আরিফ হুসিয়ারপুরী, আহমদ ইলিয়াস, সুরুর বারা বান্ধভী এবং অনেক তরুণ উর্দুর্ভাষী সচেতন নাগরিকবৃন্দ। যাদের উত্তরসূরি হিসেবে বর্তমান প্রজন্মের এবং বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী তরুণরা লড়াই করে তারা এই বাংলার নাগরিক হিসেবে নিজেদের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 শুধু তাই নয়, উর্দুভাষী সাহিত্যিক-প-িতজনদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মাইকেল, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুবাদ করার মতো দক্ষ বরেণ্যজনও রয়েছেন। এদের অবদান সম্পর্কে আমরা তো জানিই না, জানলেও আজো কোথাও বলি না। উর্দুভাষী হলেই যে তারা বাংলার বিরুদ্ধে নন কা ছিলেন না, এটা মনে রাখা উচিত।

 আমরা যেমন অন্যান্য ভাষার বিরোধিতা করিনি কোনোদিনও, তেমনি সব মাতৃভাষাই মর্যাদাপূর্ণ হোক, এটাও আমাদের কাম্য। তাইতো যারা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সমর্থন দিয়ে সেদিন পাকিস্তান আমলে সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের কোনো গাত্রক্রোধ থাকবার কথা নয়, অথচ উর্দুভাষী হলেই আমরা তাদের বাংলাভাষার শত্রু ভেবে তাদের অতীত অবদানের কথা বেমালুম উড়িয়ে দি। এই আচরণ অতীব দুঃখজনক। কারো প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করা তো দূরের কথা আমাদের মধ্যে কোনো মালিন্য ছিল না। কারো বিরুদ্ধে ছিল না কোনো ক্ষোভ। যেমন আমরা নিজ মাতৃভাষার জন্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলাম, তেমনি অন্য ভাষার প্রতিও ছিলাম সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল। এখনো সেই একুশের চেতনা কিংবা অসাম্প্রদায়িক সৌভ্রাতৃত্ব বোধ আমাদের মধ্যে বিরাজ করছে। অথচ একটি চিহ্নিত মহল মৌলবাদী মানসিকতা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিরোধের বিষবাষ্প ছড়াতে অপচেষ্টা করেই চলেছে। আমরা সকলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে বাস করেও কেমন যেন সঙ্কীর্ণ মানসিকতায় ভুগছি অহরহ। এমনকি নিজ মাতৃভাষা যার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা নাই এবং প্রগাঢ় আনুগত্য বিদ্যমান, তার প্রতিও বিরাগ পোষণ করছি, কখনো জেনে কখনো না জেনে। আর সেই বৈরাগ্য দিনকে দিন গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে আমাদের সামাজিক জীবনে। ... যেমন ধরুন পাঠক, আমরা রাজধানী কিংবা জেলা উপজেলা শহরে যদি রাস্তার দুপাশে তাকাই তাহলে দেখবো দোকানের সাইনবোর্ডগুলো ইংরেজিতে লেখা। দুচারটে আরবিও মিলতে পারে। কিন্তু এই বাংলায় মাতৃভাষারই ওই সাইনবোর্ড থাকবার যে কথা ছিল, তা যেন নির্বাসিত হয়েছে। সবখানে না হলেও শতকরা সত্তর-আশি ভাগ বোর্ডে। দেখবেন রাস্তাঘাট, অলিগলিতে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার অগুণতি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যার প্রতি কেবলমাত্র বিত্তবান ও ধনিক শ্রেণীর মানুষেরই আগ্রহ সীমাহীন। বাংলাকে বিসর্জন দেয়ার এই মতলবী অকারণ আগ্রহ শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের পূতপবিত্র আত্মাকে অবমাননা করছে। জননী জন্মভূমি স্বর্গীদপি গরিয়সী এই মাতৃভূমিকে অসম্মান করে চলেছে, তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কেবলই উন্নয়ন ও আধুনিকতা কিংবা ইন্টারনেটের যুগের অজুহাত দেখিয়ে সে অনীহাকে যুক্তি দিয়ে যথার্থ প্রমাণ করতে চাইছেন, তা নিতান্তই গর্হিত, লজ্জাজনক, ঘৃণ্য চক্রান্তেরই নামান্তর। না হলে কেন আমরা নিজ মাতৃভাষাকে অবহেলা করে বিদেশি ভাষার প্রতি অকারণে এবং অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আকৃষ্ট হয়েছি। মাতৃভাষার প্রতি একে অনীহাই বলতে পারি। তাই যারা এই অবমাননাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে আমাদের আবেদন, সনির্বন্ধ অনুরোধ, নিজ মাতৃভাষাকে অস্বীকার করে ভিনদেশি অপরিচিত ভাষার আশ্রয়ে নিজেকে ফলাও করাকে 'কাকের ময়ূর পুচ্ছ'-এর মতনই। সুতরাং আপন ভাষার সুন্দর সুশোভিত ও সুরভিত এবং ঐতিহ্যের অহঙ্কারকে মূল্যায়িত না করে কেবলই শৈবাল দামে কেলি করে নিজেদের মূল্যবান এবং সুশিক্ষিত নাগরিক করা মূর্খতারই শামিল। এই প্রবণতা কিংবা বিদেশি চক্রের সাথে স্বার্থপর উন্নাসিক গোষ্ঠীর অাঁতাতকে প্রতিহত করে নিজ মাতৃভাষা বাংলাকে আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল করে তোলার দায়িত্ব আমাদের। আমরা যদি কালা ও বধির হয়ে থাকি এবং যা ঘটছে চোখের সামনে, তাকে যদি প্রতিরোধ না করি তবে মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য পালনে ব্যর্থতার পরিচয়ই দেব। এ কলঙ্ক মোচনে আমাদের তাই অতীত ইতিহাস, লড়াই সংগ্রাম এবং ঐতিহ্যনির্ভর সম্পদশালী সমৃদ্ধ মাতৃভাষা বাংলাকে সুরক্ষা তো করতেই হবে। সেই সাথে এ দেশের ৫৪টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিকেও সম্মান দেখাতে তাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যে মানুষ বায়ান্নর ভাষা সংগ্রামে নিঃস্বার্থভাবে প্রগতিশীল চিন্তা-ভাবনার অনুসারী হয়ে ভাষার লড়াইয়ে সংগঠক ও সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের ভাষার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী স্বীকৃতি ও শিক্ষা চর্চার সুযোগ করে দিতে হবে। তা না হলে আমাদের ভাষা আন্দোলনকে কলঙ্কিত ও নিজেদের হীনম্মন্যই প্রমাণ করা হবে। আমরা যেহেতু নিজ মাতৃভাষার জন্য পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সব আঞ্চলিক ভাষার সমান মর্যাদা চেয়েছিলাম, সেই আমরা কেন আজ নিজ রাষ্ট্রের সুনাগরিক এবং বৃটিশ ও পাকিস্তানি দুঃশাসন ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন এবং ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সব গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সহযাত্রী ও সহযোদ্ধা ছিলেন তাদের প্রতি অশ্রদ্ধা জানানো হয়। অথচ সেই আমরাই বাঙালি গৌরবকে বিদেশ থেকে আমদানি করা ভাষার কাছে ক্রমশ হীনবল করে তুলছি। ... আমরা আপনার কাছে আপনি হারিলাম। হেরেই চলেছি। কিন্তু কেন? বাংলার মানুষ তো অমিততেজ। তারা অপ্রতিরোধ্য। এ কথা তো বাস্তবে প্রমাণ করেছেন বারংবার। সেই গর্বে উদ্দীপ্ত হয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি তো বটেই, এই রক্তিম বাংলার জাতিত্ববোধ এবং বাংলার মানুষের আপন জাতিসত্তার নিজস্ব ঠিকানা হিসেবে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গৌরব আর কতইবা আছে? আপন মহিমায় আমরা সমুজ্জ্বল হতে চাই।

 তাই বিদেশের দিকে তাকিয়ে নিজ মাতৃভাষাকে অপমানিত হতে দিতে রাজি নই। এখনো যারা নিজ দেশে নিজ গৃহে বাংলাকে কলঙ্কিত, অবহেলা কিংবা উপেক্ষা করে বিদেশি ভাষার প্রতি 'মূর্খতার প্রেম' প্রদর্শন করছি, তারা ফিরে আসুন আপন ভূবনে। গড়ে তুলুন মাতৃভাষার প্রতি অদশ্য প্রেম, অনীহা নয় কারো প্রতি সুস্থ সবল মানসিকতার প্রয়োজনে কলঙ্কিক্ত অতীতকে সংশোধিত করে যেন ভাষায় গরীয়ান হতে পারি, সেই সংগ্রামই বুঝি এখন করতে হবে।

 তাই ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছরে সবার কাছে আমাদের আকুল আবেদন, সনির্বন্ধ অনুরোধ এবং সবিনয় সতর্কবাণী; এখনো যারা বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করছেন, অর্থবিত্তের লোভে নিজেদের মতন নবপ্রজন্মকে বিদেশি ভাষা রপ্ত করে কৃতিত্বের অধিকারী হওয়ার কৌশল করছেন, তারা সাবধান। মাতৃভাষাকে আর অবমাননা করবেন না। মানুষের সহ্যের সীমা আছে। বাংলার মানুষ যখন প্রতিরোধের অঙ্গীকার নিয়ে রুখে দাঁড়ায় তখন কিন্তু কোনো প্রবল শক্তিই সেই গণশক্তির সামনে দাঁড়াতে পাওে না। ফুৎকারে উড়ে যায়। প্রমাণ আমরাই সৃষ্টি করেছি। ১৯৫২ সালের রক্তাক্ত একুশের ইতিহাস কি সেই প্রমাণই বিশ্বের সামনে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকেই দীপ্তিমান করেনি ওই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বসংস্থায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে? সুতরাং এই মহান স্বীকৃতি, মহৎ সংগ্রাম যখন বিশ্বের দেশে দেশে প্রবল প্রাণের গৌরবে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার গৌরব এনে দিয়েছে, তখন আমাদের তো ভুলে গেলে চলবে না যে, মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করেছিল ভাষা বাঁচাবার তরে, তাদের অসম্মান করার অধিকার নেই। তাতে আমরাই আজ হতমান হই।

 আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি? কেবল মুখে উচ্চারণ করে নয়, পাখির বুলির মতন গান গেয়েই নয়, আমাদের প্রমাণ করতে হবে আব্দুল হাকিমের সেই মহতী উচ্চারণ ঘৃণার সাথে। যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন'জানি। আমরা এমন নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হতে চাই না, আমরা বুক উঁচু করে বলতে পারি। মোদের গরব মোদের আশা আ-মরি বাংলা ভাষা।

Thursday, 2 February 2012

মূল্যস্ফীতি এখন দেশের জন্য বড় সমস্যা

কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না মূল্যস্ফীতিকে। মূল্যস্ফীতি এখন দেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও সরকার এর লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। অথচ এটা সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেশ বেড়েছে। ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৬৩%। আর জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি এসে দাঁড়িয়েছে ১১.৫৯%_এ । বিশেষজ্ঞদের মতে গত বছরের ডিসেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম দুই দফা বাড়ানোর ফলে এ প্রভাব পড়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না দেশের সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ। তাদের আয় যত বেড়েছে তার তুলনায় ব্যয় বেড়েছে অনেক বেশি। অথচ সরকার অনেকটা অসহায়ের মতো হাল ছেড়ে বসে আছে। আমাদের প্রশ্ন এ ক্ষেত্রে সরকারের কি কিছুই করণীয় নেই। উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকে আয় বাড়ানোর ব্যাপারে নানা বক্তব্য রাখা হলেও সরকারি পরিসংখ্যানেই পাওয়া যাচ্ছে উল্টো চিত্র। বিগত পাঁচ বছরে মানুষের আয় বেড়েছে ৫৯.৩৮%। আর জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৮২.৫৯%। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। বাজারে ইতোমধ্যে নতুন করে বেশকিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ডিম, মুরগি, পেঁয়াজ ও শাকসবজির দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গরম শুরু হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে অথচ প্রবৃদ্ধি অর্জন সন্তোষজনক হচ্ছে না। এটা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য একটি সতর্ক-সঙ্কেত।

 মূল্যস্ফীতি বাড়ার প্রবণতা খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য যে হারে বাড়ছে তাতে আগামীতে এ মূল্যস্ফীতির হার কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বলা কঠিন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো পদক্ষেপই ফলপ্রসূ হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষ। বিশেষ করে খাদ্যসূচকে মূল্যস্ফীতি ঘটলে সমাজের দরিদ্ররাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের আয় বাড়েনি। ফলে তারা বাধ্য হচ্ছে আগের চেয়ে কম খেয়ে জীবনযাপন করতে। কেউ কেউ অনাহারে-অর্ধাহারেও দিন কাটাচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে দেশের মানুষ আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে।


  
আমরা মনে করি মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল বা কমিয়ে আনার ব্যাপারে এখনই যদি উদ্যোগ না নেয়া হয় তাহলে সীমিত আয়ের মানুষের টিকে থাকা বড় কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের প্রত্যাশা, সরকার স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

 দ্রব্যমূল্য ও কর্মসংস্থান এ দুটিই এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। দুটি বিষয় আবার একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িতও। দ্রব্যমূল্য বাড়ার অনুপাতে যদি মানুষের আয় বাড়ত এবং পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো তাহলে মানুষকে এতটা ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

 মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষকে এখন লড়তে হচ্ছে নিজের ও পরিবারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ায় পরিবার ও সমাজে এক ধরনের ক্ষোভ, হতাশা ও অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্য দিকে বেড়ে যাচ্ছে নানা ধরনের সামাজিক অপরাধ।

 একটি দেশে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ বেকার অবস্থায় থাকলে সমাজ ও পরিবারে অস্থিরতা এবং হতাশা ব্যাপক পরিমাণে দেখা যায়। এর ফলে দেশের উন্নয়নই শুধু বাধাগ্রস্ত হয় না, পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাও বিনষ্ট হয়। এ বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে না পারলে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট কমবে না বরং আরো বাড়বে।
এ মুহূর্তে সরকারের উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে গুরুত্ব সহকারে নজর দেয়া। সরকার যেহেতু দ্রব্যমূল্য কমাতে পারছে না তাই মানুষ যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে খেতে পারে সে ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। আমরা আশা করব, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter