গত বছরের শেষদিকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজারে একের পর এক দরপতন ও নানা অঘটনে দেশের আপামর জনগণ সরকারের প্রতি প্রচ- রকম হতাশ ও একই সঙ্গে বিক্ষুব্ধ। সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীন উদ্যোগের কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের চক্রান্তের শিকার হয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পথে বসেছে। এর পেছনে যারা প্রত্যক্ষভাবে দায়ী সরকার জেনে-শুনেও তাদের কোনো আইনি বিচারের সম্মুখীন করেনি। বরং তাদের নাম পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ না করে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়ে সরকার নিজের অবস্থানকে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে যারা পুঁজিবাজার ধসের জন্য দায়ী ছিল, তারাই আবার সুযোগ পেয়ে ক্ষুদ্র ও স্বল্প বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য নিয়ে এবারো একই রকম ন্যক্কারজনক খেলা খেলেছে। দলীয়করণ, আত্মীয়করণ ও অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে বলে নির্বাচনী প্রচারণায় নানা বক্তব্য দিলেও বাস্তবে তা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। পুঁজিবাজারে সর্বস্ব হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের কয়েকজন চরম হতাশায় আত্মহননের মতো নির্মম পথ বেছে নিয়েছে। যা কোনো সভ্য সমাজ ও গণতান্ত্রিক দেশের জন্য মঙ্গলকর ও সম্মানজনক বিষয় নয়। এদিকে টাইম সাময়িকী বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বাজার বলে মন্তব্য করেছে, যা একটি দেশের জন্য চরম অবমাননাকর ও ভাবমূর্তির ওপর কঠোর আঘাত। এ নেতিবাচক মন্তব্যকে ভুল প্রমাণ করতে হলে সরকারকেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ এ দায় শুধু সরকারের।
টাইম সাময়িকী তাদের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পুঁজিবাজারের এ দৈন্যদশার যৌক্তিক কারণগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনাময় বিভিন্ন দিকগুলোকেও তারা একই প্রতিবেদনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। চড়া মূল্যস্ফীতির জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি সাধারণ জনগণের নেতিবাচক মনোভাব তুলে ধরে সাময়িকীটি পুঁজিবাজারে কারসাজি আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের কেউই বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না। যে কোনো মন্তব্য কিংবা গঠনমূলক সমালোচনা ও প্রতিবাদকে তারা বিরোধী দলের অপপ্রচার বলে সব সময় দায় এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু চোখ বন্ধ রাখলেই প্রলয় বন্ধ হয় না। টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদন বর্তমান সরকারের জন্য একটি সতর্ক বার্তা। সরকার চাইলে বর্তমান মেয়াদের বাকি সময়ে এখনো দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।
পুঁজিবাজারে ধসের নেপথ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাও সুবিবেচনাপ্রসূত ছিল বলে মনে করার কোনো যুক্তি নেই। কারণ, পোশাকশিল্পের আয় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের রিজার্ভের ওপর ভিত্তি করে অধিকাংশ সদ্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও অনভিজ্ঞ বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে দেয়ার অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রাহকদের আমানত বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো লাভবান হলেও দেশীয় অর্থনীতিতে তারল্য সঙ্কট শুরু হয় এবং মুদ্রাস্ফীতি আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হঠাৎ বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরলে পুঁজিবাজার থমকে দাঁড়ায় এবং পরে ধারাবাহিক পতনের কবলে পতিত হয়। সুতরাং সঙ্কট তৈরিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অদূরদর্শী সিদ্ধান্তও কম দায়ী নয়। তবে, কারণ যাই হোক এর থেকে উত্তরনের পথ বের করে দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ঠ সবাকে সচেষ্ট হতে হবে।