সীমান্তে যে কোনো অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিদ্যমান আইনে বিচার হবে এবং এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। তা না করে সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালানো অব্যাহত রাখা হবে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যখন বিএসএফ অন্যায়ভাবে একের পর এক বাংলাদেশি হত্যা করে যাচ্ছিল, যখন এ হত্যাকা- রোধ করতে একটি স্থায়ী সমাধানের কথা দুই দেশের সাধারণ জনগণ আশা করছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যখন সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্ত ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহল থেকে বলা হচ্ছে-সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধ করা যাবে না। তাদের এ ধরনের দায়িত্বহীন মন্তব্যে সীমান্তে বিএসএফ আরো বেশি বেপরোয়া আচরণ করতে সাহস দেখাবে এবং এর ফলে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্কে নিঃসন্দেহে ফাটল ধরবে। এমনকি সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এর আগে বহুবার ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তে সংঘটিত কর্মকা-ের জন্য দুঃখপ্রকাশ এবং আগামীতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও অতীতের সব বক্তব্য থেকে সরে এসে বিএসএফ প্রধান যে বক্তব্য ও মনোভাব প্রকাশ করলেন তা সীমান্ত সমস্যাকে আরো দীর্ঘায়িত ও জটিল করে তুলবে। সম্প্রতি বিএসএফ কর্তৃক একের পর এক বাংলাদেশি নিরীহ নাগরিক হত্যাকা- ও নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার অতি দ্রুত এর একটা স্থায়ী সমাধানে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশের মানুষ সেটাই প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু যৌক্তিক ও সমঝোতার পথে না গিয়ে তাদের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য প্রদান করা হলো তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশের মানুষ এ ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত অভিযোগ ও বক্তব্য কখনই মেনে নেবে না। সীমান্ত বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করার পর ভারত বাংলাদেশ প্রশ্নে কতটা বন্ধুত্ব ও প্রতিবেশিসুলভ মনোভাব পোষণ করে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সরকারের উচিত হবে সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ভারতের কাছে কঠোর ও দৃঢ় মনোভাব ব্যক্ত করা। আমরা চাই, সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো ছাড় না দিয়ে নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে তৎপর হবে।
গত মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএসএফ প্রধান ইউকে বনশল বাংলাদেশ সীমান্তে পুরোপুরি গুলি চালানো বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন। সীমান্তে অপরাধ রোধে গুলি চালাতেই হবে বলে তিনি তার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি পরোক্ষভাবে বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে গুলি চালানো এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করার ব্যাপারে বিজিবির ভূমিকাকে দায়ী করার অপচেষ্টা করেছেন। আমরা তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কারণ বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ বরাবরই সীমান্ত শান্তি রক্ষার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে তৎপর। তারা বারবার উভয় দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে একটি স্থায়ী সমাধান আশা করে আসছে। কিন্তু একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও ভারত তা রক্ষা করতে পারেনি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সীমান্তে এ পর্যন্ত হত্যাকা-ের শিকার প্রতিটি নাগরিক নিরীহ ও নিরস্ত্র বলে প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি এক যুবককে নির্যাতনের যে ভিডিও চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের কর্মকা- শুধু অমানবিক নয়, ঘৃণিতও। তা সত্ত্বেও ইউকে বনশল যেভাবে বিএসএফের কর্মকা-ের পক্ষে সাফাই গাইলেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক, অনভিপ্রেতও বটে। তার এ বক্তব্য বিএসএফকে আগামীতে আরো বাংলাদেশি নাগরিক হত্যায় উৎসাহিত করবে।
বিএসএফ প্রধান তার বক্তব্যে সীমান্ত চোরাচালান ও অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য একতরফাভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের দায়ী করেছেন। দুই দেশের সীমান্তে চোরাচালান হয়_ এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তাই বলে ভারতের কোনো নাগরিক এর সঙ্গে জড়িত নয় এটা ভাবার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। সীমান্তে যে কোনো অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিদ্যমান আইনে বিচার হবে এবং এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। তা না করে সীমান্তে বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালানো অব্যাহত রাখা হবে এমন বক্তব্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ইউকে বনশলের এ বক্তব্যের পর সীমান্তে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির দায় ভারত সরকারকেই নিতে হবে।
No comments:
Write comments