Flickr

Friday, 29 June 2012

আদালত-সংসদ মুখোমুখি

আদালত-সংসদ মুখোমুখি
জাতীয় কিছু পত্রিকা সংসদ এবং বিচার বিভাগ মুখোমুখি বলে মন্তব্য করেছে। সংসদ ও হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে গত কয়েকদিনে এমন কিছু কথা উঠে এসেছে, যার কারণে সংসদ এবং বিচার বিভাগ মুখোমুখি বলে মন্তব্য করার অনভিপ্রেত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করা হয়। এরই প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় সংসদে কতিপয় সদস্য বেঞ্চটির বিচারকদের উদ্দেশ করে তীব্র প্রতিক্রিয়ামূলক কিছু মন্তব্য করে। এইভাবেই রাষ্ট্রের দু'টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই পাল্টাপাল্টি অবস্থার সূত্রপাত ঘটেছে স্পিকারের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। স্পিকার সে বক্তব্যে হাইকোর্টের একটি রায় প্রসঙ্গে সংসদের একটি আলোচনায় কিছু কথা বলেছিলেন। আমাদের মতে, স্পিকারের সে বক্তব্যটি নীতিকথা ধরনের ছিল। যদিও পরোক্ষে বিচার সম্পর্কে কিছু কথা বলা হয়েছে। পরোক্ষ এই বক্তব্যকে নীতিকথা ধরে নিলে কোনও সমস্যা সৃষ্টি হতো না। কিন্তু হাইকোর্টের বেঞ্চ স্পিকারের বক্তব্যকে আমলে নেন এবং স্পিকারের বক্তব্যকে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বলাসহ স্পিকার সম্পর্কে আরো কিছু মন্তব্য করা হয়। সন্দেহ নেই হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে বলা এই বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টের সম্মান রক্ষার জন্যেই এবং বেঞ্চের সর্বশেষ বক্তব্যে স্পিকারের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের সম্মান সংরক্ষণের আহবান জানানো হয়। এতদসত্ত্বেও বলা যায়, বেঞ্চের বক্তব্যে স্পিকারের কিছু পার্সনাল বিষয়ও ছিল। কিন্তু এই বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া হিসেবে সংসদের কিছু সদস্য সংশ্লিষ্ট বিচারপতি সম্পর্কে যে বিস্ফোরক ধরনের মন্তব্য করেছেন তা সংযমের সীমা অতিক্রম করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। এই বক্তব্যে কতিপয় সদস্য সংশ্লিষ্ট বিচারপতি সম্পর্কে অত্যন্ত কঠোর ও নগ্ন ব্যক্তিগত মন্তব্য করেছেন, যা কোন দিক দিয়েই অভিপ্রেত নয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্যে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আমাদের বিশ্বাস এই ধরনের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং ব্যক্তি পর্যায়ের আক্রমণ আমাদের উচ্চতর আদালত এবং মহান সংসদের জন্যেই মর্যাদাহানিকর। জাতি হিসেবে আমরা বাইরের দুনিয়ার কাছে খুব অসহনশীল হিসেবে গণ্য হবো।
সুতরাং, গোটা ঘটনা জাতির জন্য দুঃখজনক ও লজ্জাকর। এই বেদনাদায়ক ঘটনা আমাদের উচ্চ পর্যায়ের সংযমের লেবেলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমাদের পারস্পরিক সহনশীলতার মাত্রা অভিপ্রেত যৌক্তিক পর্যায়ে থাকলে জাতিকে লজ্জার মধ্যে পড়তে হতো না। আমাদের মনে হচ্ছে প্রশাসনের ক্ষেত্রে আমরা যে অসহনশীলতার প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি, যেভাবে শীর্ষ রাজনীতিকরা অন্যায়ভাবে অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন, যেভাবে সর্বজনমান্যদের মানহানি ঘটবার প্রবণতা বাড়ছে তারই প্রকাশ ঘটেছে সম্মানিত বেঞ্চ এবং মহান সংসদে। আসলে সংসদ এবং বিচারালয় কোনটি বিচ্ছিন্ন কোনও দ্বীপ নয়। রাষ্ট্রে যা ঘটে, প্রশাসনে যা ঘটে চলে, জনগণ ও সরকারের প্রতিপক্ষের সাথে যা ঘটানো হয় তা যে নীতিহীন, অস্থির ও অসহনশীল পরিবেশের সৃষ্টি করে তা বিচারালয় ও সংসদকেও পীড়িত ও প্রভাবিত করে। প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা যদি পীড়িত হয় তাহলে সংসদ ও বিচারালয় সুস্থ থাকতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন সার্বিক সুস্থতা। এর জন্যে প্রয়োজন আইনের শাসন এবং শাসন ব্যবস্থায় জনমতের প্রতিফলন, কোনও স্বৈরাচারিতা নয়। তাহলেই শুধু রাষ্ট্রের সব অঙ্গ সুস্থভাবে কাজ করতে পারবে।

Wednesday, 27 June 2012

একটা ঘণ্টার বৈদ্যুতিক সুইচ অফ রাখলেই কি এর পূর্ণ সমাধান আসবে?

বাঙালি জাতি অল্পতে খুশি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা এ চারটি মৌলিক চাহিদা হলেও মানুষের প্রধান চাহিদা হলো খাদ্য। আর ডিজিটাল যুগে বিদ্যুৎ। বর্তমান সরকারের প্রধান প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধান শর্ত যে বিদ্যুৎ তা হয়তো সরকার ভুলেও কখনো ভেবে দেখেনি। দেশের মন্ত্রীরা প্রায়ই বলে থাকে ১৫০০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ তৈরি করেছি অথচ সেই বিদ্যুৎ যায় কোথায়? প্রতিবছর সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকি দিচ্ছে অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের মোটেও উন্নতি নেই। মানুষ এ বিদ্যুৎ নিয়মিত পেলেই হয়তো অন্য কোনো চাহিদার কথা ভুলেও মুখে আনবে না। রাত-দিন নজিরবিহীন লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষ যখন অতিষ্ঠ, হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে, ঠিক সেই মুহূর্তেই চতুর্থবারের মতো বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। এক মাসের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এক মাস পর ঘোষিত সিদ্ধান্ত আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে আগের মাসের জেরসহ। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলেছেন বিদ্যুৎ দিতে না পারলেও সরকার বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়িয়েই যাচ্ছে। এতে জীবনযাপন আরো কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে ইউনিট প্রতি গড়ে ৩০ পয়সা (৬ দশমিক ২৫ শতাংশ) ও পাইকারি পর্যায়ে ২৮ পয়সা (৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ) বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি। এখন আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৫ পয়সা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ৪ টাকা ২৯ পয়সা এবং ৪০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীদের ৭ টাকা ৮৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি সেচ পাম্পের জন্য ২ টাকা ২৬ পয়সা, ক্ষুদ্র শিল্পের ৬ টাকা ২ পয়সা অনাবাসিক ৩ টাকা ৯২ পয়সা, বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট ৭ টাকা ৭৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিইআরসি এ নতুন মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে গড়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ পাইকারি পর্যায়ে ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ বাড়ে। তার ঠিক ২ মাস আগে ১ ডিসেম্বর থেকে খুচরা ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ ও পাইকারি ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুতের দাম। ৪ মাসের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় দাম ৪ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ৯৬ পয়সা ও পাইকারি পর্যায়ের ২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ৪ টাকা ১৭ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতেও বিইআরসি পাইকারি বিদ্যুতের দাম প্রথম দফায় ১১ শতাংশ ও দ্বিতীয় দফায় ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাড়ায়। তখন অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে খুচরা বিদ্যুতের দামও ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। বর্তমান সরকারের সময়ে প্রথমবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পায় ২০১০ সালের মার্চে। গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে গ্রাম অঞ্চলেও তীব্র লোডশেডিং দেখা দিয়েছে। শহরে বিদ্যুতের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও গ্রামে বিদ্যুতের দেখা মেলে মাঝে মধ্যে। রাজধানী ঢাকায় এখন প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৮ বার লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকি গভীর রাতেও লোডশেডিং হচ্ছে অসহনীয়। মফস্বলের কথা ভাবাই যায় না। রাতে সেচ কাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার কথা বলা হলেও গ্রামের মানুষের অভিযোগ ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার বেশি তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। কয়েকদিন পর গরমের তীব্রতা বাড়লে লোডশেডিংয়ের কারণে দেশবাসীকে ভোগ করতে হবে সীমাহীন ভোগান্তি। বিদ্যুতের এ বিপর্যয়ের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা ও চিকিৎসা। শিল্প-কারখানা রাতে ১২ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে।

 শিল্প-কারখানায় বিদ্যুতের অভাবে তাদের পণ্য উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে গৃহস্থালীর বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিকল হয়ে পড়ছে। আইপিএসও এখন কাজ করছে না। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি ও পাওয়া যাচ্ছে না। বন্ধ থাকছে ওয়াসা পাম্পগুলো। গ্যাস সঙ্কট আরো নাজুক পরিস্থিতিতে। গোটা দেশের চিত্র যখন এ রকম ঠিক তখনই বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে পরিস্থিতি আরো জটিল করে তোলা হলো বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।
সরকারি বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মতে, দাম বাড়ানো হলেও সহনীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনা আপাতত নেই। কারণ জ্বালানি সঙ্কট ও সাশ্রয়ের কারণে সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা যেটুকু আছে সেটুকুর পুরোপুরি ব্যবহার হবে না। যদিও দাম বাড়ানো হচ্ছে বেশি দামের তেলচালিত কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ বেশি বলে। গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ৩০ পয়সা করে বাড়ানোর প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন সংগঠন এবং সাধারণ জনতা। তাতে লাভ কি বা হবে? কে ভাববে দেশের সাধারণ জনতার কথা। দেশের সাধারণ জনগণ ভোগান্তি চায় না, চায় বিদ্যুৎ অথচ সরকার অর্থের বৃহৎ অংশ ব্যয় করে অন্য খাতে। সরকারের বোঝা উচিত জনগণের চাওয়া-পাওয়া কি? কোনো ঘাটতি পূরণ করলে পরবর্তীতেও সরকার গঠন করা সহজ ব্যাপার হবে। বিদ্যুতের লোডশেডিং সহনশীল অবস্থায় নেই। এতে সরকারের আগাম দিনগুলো পড়ছে বিপাকে। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেশের সাধারণ জনতাকে। ফলে ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষতির হিসাব গুনতে হচ্ছে কৃষি খাতকে। বর্তমান সময় বোরো মৌসুমের সময় অথচ জরিপে দেখা যায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মফস্বল এলাকাগুলোয় ২-৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়াই স্বপ্ন। এতে বিগড়ে যাচ্ছে দেশের কৃষক শ্রেণীর জনতা। অল্প কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। চলছে এইচএসসি পরীক্ষা অথচ বিদ্যুতের অতি মাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত চর্চা করতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সরকারের সব ভালো কাজ অন্ধকারে হারিয়ে যাবে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মতো। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির হিসাব না করতেই হিসাব করতে হবে আবার জ্বালানির মূল্য বুদ্ধির। এই প্রথম দেশে জ্বালানির মূল্যপ্রতি লিটার ১০০-র কাছাকাছি। হয়তো বা শতককেও ছাড়িয়ে যাবে। আর জ্বালানির মূল্য এরকম আকাশছোঁয়া হলে বিদ্যুতের মূল্য হ্রাস কল্পনাও করা যায় না। এত হতাশার পরও সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের ব্যাপারে কোনো সান্ত্বনার আগাম বাণী নেই। একটা ঘণ্টার বৈদ্যুতিক সুইচ অফ রাখলেই কি এর পূর্ণ সমাধান আসবে?

Saturday, 9 June 2012

সড়কে মৃত্যুর মিছিলে ‘সেবক' এবং ‘ঘাতক' সমাচার

সড়কে মৃত্যুর মিছিলে আবারো সেবক এবং ঘাতক বিষয়ক বিতর্ক টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। জাতি চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনিরের সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যুর বেদনা ভুলতে না ভুলতেই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই জন সাংবাদিকের বেদনাদায়ক প্রয়াণ ঘটেছে। তারা হচ্ছেন দ্যা ইন্ডিপিন্ডেন্ট পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক বিভাস চন্দ্র সাহা এবং বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক মতবাদ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক শহিদুজ্জামান। গত ১১ই মে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে একই দিনে সিলেটে আওয়ামী লীগ নেতাসহ আটজন এবং গাইবান্ধায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরো পাঁচজন নিহত হয়েছেন। সারা দেশের পুলিশের সাধারণ ডায়েরির খাতা দেখলে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। রাজধানীতে এই সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিকদ্বয়ের মৃত্যুর সংবাদে প্রেসক্লাবের সামনে যথারীতি সতীর্থরা মানববন্ধন করেছেন, দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু দুঃখপ্রকাশ নয় দায়ী গাড়িচালকদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন। বেদনাদায়ক হলেও সত্য দেশের নৌপরিবহনমন্ত্রী, পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান নারায়ণগঞ্জে এক পরিবহন শ্রমিক সমাবেশে গাড়ি চালকদের জনগণের সেবক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে সড়ক পরিবহন শ্রমিকদের অবদান আছে, তারা জনগণের সেবক। তাদের হেয় বা তিরষ্কার না করে জনগণের সেবক হয়ে ওঠার সুযোগ দেয়া উচিত। বেশ কিছুদিন যাবত মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় তার বক্তব্যে গাড়ির ড্রাইভারদের পত্র-পত্রিকায় ঘাতক সম্বোধন করায় উষ্মা প্রকাশ করে চলেছেন। একজন পরিবহন শ্রমিক গ্রেফতার হলে তার মুক্তির জন্য তার সহকর্মীরা ধর্মঘট করতে পারেন, দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি করে জনগণের জীবন বিপর্যস্ত করতে পারেন, আন্দোলন করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর অপরাধের শাস্তি কমাতে ও অভিযোগটি জামিনযোগ্য করতে পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের মৃত্যুর পর তার স্বজনেরা কান্নাকাটি ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না।
ক'দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পা হারিয়েছেন খুলনার ছেলে সাংবাদিক নিখিল ভদ্র। নিখিল আমার একান্ত স্নেহভাজন, ছাত্র জীবনে আমি যে ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তছিলাম, নিখিল একসময় সেই ছাত্র ইউনিয়নের খুলনা জেলা শাখার সভাপতি ছিল। নিখিল আহত হওয়ার পর সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেছেন, নিখিল কলম সৈনিক ছিল বলে সরকারের বদান্যতায় বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছে, জীবন বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে নিখিলের মতো ভাগ্যবান কম। তারেক মাসুদ-মিশুক মুনির সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হবার পর গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে বেশকিছু সুপারিশ করেছিল। কিন্তু গত নয় মাসে সেই সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়নি। বুয়েট সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট দুর্ঘটনা রোধে ২০০৯ সালে দেশের ২১৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচন করে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছিল। সে সব সুপারিশ মূলত কাগজেই রয়ে গেছে। দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পালটে যাওয়ার পর এককালীন তুখোড় ছাত্রনেতা এখন এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। সেই দক্ষ ছাত্রনেতা মন্ত্রী হবার পর সড়ক নির্মাণে ছোটাছুটি করছেন, কি‘ দুর্ঘটনা রোধে সাংবাদিকদের কাছে হতাশার সঙ্গে বলেছেন তার একার পক্ষে এটি করা কঠিন, যানবাহনের বেপরোয়া গতিরোধে সড়ক মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তিও ব্যবস্থা করার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। ভুয়া লাইসেন্স বাতিল, ট্রাফিক আইন ও সংকেত সম্পর্কে চালকদের ধারণা আছে কিনা ও প্রয়োগ হয় কি না তা যাচাই করার সুপারিশও হয়েছিল। চালকদের জন্যে আলাদা বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান, ন্যূনতম প্রবেশিকা পরীক্ষা পাসের কথাও বলা হয়েছিল। মাননীয় মন্ত্রী শাজাহান খান এই সুপারিশের বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন এটি অবাস্তব, কেননা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ড্রাইভার শুধুমাত্র ৮ম শ্রেণী পাস। মিরেরসরাইতে ৪০জন শিশু শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গাড়ি চালানোকালে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও চালকরা তা মানছেন বলে মনে হয় না। বিআরটিএ-এর হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৫ লাখ চালক ভুয়া লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন। এসব ভুয়া লাইসেন্স ধরতে গেলে যে বিপত্তি হবে তা অবর্ণনীয় ।
বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক শামছুল হক ও রকিব হাসানের ২০০৭ সালের বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় দশ বছরের সড়ক দুর্ঘটনার উপর তৈরি করা সমীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে- দশ বছরের সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ১০১১টি। যার কারণে মারা গেছেন ২১৫৫ জন এর মধ্যে ১৬ শতাংশ দুঘটনা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাকি সব দুর্ঘটনা চালকের কারণে। অপর এক সমীক্ষায় জানা গেছে মৃত ব্যক্তিদের বয়স ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে যে কারণে ২০০৪ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী বছরে প্রায় ৪২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২২৪১টি দুঘটনা হয়েছে, মারা গেছে ২১৪০ জন। সার্বিক বিবেচনায় সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশের জন্য মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।
আমাদের দেশের একজন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র শিল্পী ইলিয়াস কাঞ্চন তার স্ত্রীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর ‘নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি প্রশংসনীয়। ইলিয়াস কাঞ্চনকে গালিগালাজ, তার ফাসি দাবি করা, এমনকি কুশপুত্তলিকা দাহের সময় আইনশৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব থাকলেও খুলনায় আবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে গত ১২ই মে'র কর্মসূচি ভন্ডুলের সময় নীরব ছিল না। তারাও আমাদের রাষ্ট্রের জনগণের সেবক হিসেবেই দায়িত্বরত। দেশের দন্ডবিধির ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছর কারাদন্ড এবং জামিনযোগ্য অপরাধ। পরিবহন শ্রমিকরা এরশাদ আমলে আন্দোলন করে এটা অর্জন করতে পেরেছে। একজন লোককে মেরে ফেলার জন্যে ভাড়াটে কিলার নিয়োগ না করে বুদ্ধিমানদের জন্য গাড়ির চালককে দায়িত্ব দেয়া উত্তম। ক'দিন আগে মাননীয় মন্ত্রী শাজাহান খান সড়ক দুর্ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। তিনি সবসময় ঘাতক না বলে গাড়ি চালকদের সেবক অভিহিত করতে চান । আমার বিনম্র প্রশ্ন- ১১ই মে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাংবাদিকদের মেরে ফেলার গাড়িচালকদের তার ভাষায় আমরা সেবক বললাম, কি মাননীয় মন্ত্রী যদি মারা যেতেন তাহলে দোষী ড্রাইভারকে আমরা কি বলে সম্বোধন করতাম? সেবক না ঘাতক?

Thursday, 7 June 2012

শুধু বাঁচার জন্য মানুষ সমাজবদ্ধ হয়নি

শুধু বাঁচার জন্য মানুষ সমাজবদ্ধ হয়নি
ক্ষুব্ধ মানুষ শুধু যে নিজের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ভাবেন তা নয়, সমাজও তাদের নানাভাবে ভাবায়। পশুপাখির সাথে মানুষের একটা মৌলিক পার্থক্য হলো, শুধু জৈবিক চাহিদা মিটলেই মানুষের চলে না- মানুষের আরও গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা আছে, যা মানুষের মন ও আত্মার সাথে জড়িত। তাই মননশীলতা ও পবিত্রতার বিষয়গুলো মানব প্রসঙ্গেই আসে। পশুপাখির কাছে মানুষ ঐসব বিষয় আশা করে না। এই জন্যই হয়তো বলা হয়, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি কিন্তু মানুষ সহজে মানুষ নয়। এই কথার অর্থ আবার এই নয় যে, জৈবিক চাহিদা মানুষের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বিষয়টি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেই তো মানুষ রুটি-রুজির জন্য সংগ্রাম করে এবং বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়। প্রকৃত মানুষ সীমালঙ্ঘন না করেই উদরে ক্ষুধা, যৌন চাহিদা মেটাতে চায় এবং চায় মন ও মেধার বিকাশ ঘটাতে। এই জন্যই তো মানুষ সমাজবদ্ধ হয়েছে। সমাজের কাছে মানুষের চাওয়ার আছে অনেক কিছু, আবার মানুষের কাছেও সমাজের পাওয়ার আছে অনেক কিছু। চাওয়া-পাওয়ার এই অংকটা না মিললে ফলটা ভুল হয়। তখন সমাজ মানুষের কাছে গুরুত্ব হারায়। কিন্তু সমাজ থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ার কারণ যে খোদ মানুষই, তা আমরা কতটা ভেবে দেখি? আবার সব মানুষ দায়ী নয়, কিংবা একই মাত্রায় দায়ী নয় তেমন বিশ্লেষণেই বা আমরা কতটা মনোযোগী?
শুধু বাঁচার জন্য মানুষ সমাজবদ্ধ হয়নি, বরং ভালোভাবে বাঁচার জন্যই সমাজবদ্ধ হয়েছে। লিখিত ও অলিখিতভাবে তারা তাদের দায়-দায়িত্বও ভাগ করে নিয়েছে। কামার-কুমার, জেলে ও কৃষকরা তো তাদের পেশায় ব্যস্ত রয়েছেন। অফিস-আদালত ও কল-কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। পেশাজীবী এইসব মানুষ কে কতটা কাজ করছেন এবং অধিকার পাচ্ছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। তবে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়  আছে। সমাজে মানুষ কোন্ ধরনের বিধি-বিধান ও আইন-কানুনের আওতায় বসবাস করছেন, উৎপাদন-বণ্টন, পরিশ্রম ও ভোগে ন্যায্যতা আছে কী না? সমাজে মানুষ নিজস্ব বোধ-বিশ্বাস ও আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে বিকশিত হতে পারছে কী না? ব্যক্তির স্বাধীনতা ও দেশের স্বাধীনতা অটুট আছে কী না? পার্লামেন্টে কী ধরনের আইন পাস হচ্ছে? বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে কী না? সরকার সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করেছে কী না? গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ আছে কী না? সমাজের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতি সেবী, বুদ্ধিজীবী, আলেম-উলামা ও মিডিয়া সচেতন আছে কী না? এইসব বিষয় অবজ্ঞা ও অবহেলা করে কোনো সমাজ কাঙ্ক্ষিত প্রগতির পথে এগুতে পারে না। বরং অবজ্ঞা ও অবহেলার মাত্রা বেড়ে গেলে, বিশেষ করে সরকার ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বোধোদয় না ঘটলে দুর্ভাগা জাতির রাষ্ট্রটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। এমন বিশ্লেষণের আলোকে আমরাও আমাদের সমাজের দিকে, রাষ্ট্রের দিকে তাকাতে পারি।
আমাদের পার্লামেন্ট যে ঠিকভাবে চলছে না তা আমরা জানি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। আর প্রশাসন যেন একটি দলীয় আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পুলিশের কর্মকান্ড সম্পর্কে কম বলাই ভালো। সরকারের মন্ত্রী বাহাদুররাই এতো ভুল কথা ও ভুল কাজে জড়িয়ে গেছেন যে, সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে বলে আর লাভ কী? সরকার তো অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী হয়ে কাজ না করার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে সেই ওয়াদার চিত্রটা কেমন? দলীয়করণের অনুরাগ ও দাপটে শুধু বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরাই নন, সাধারণ মানুষও এখন অস্থির। এখানে আরও বলে রাখা ভালো যে, মানুষের মতো সরকারও কোনো ক্ষেত্রে ভুল করতে পারে। ভুলের পর অনুশোচনা, আত্মসমালোচনা তথা সংশোধনের চেতনা যেমন মানুষের মুক্তির পথ- সরকারের মুক্তির পথও এর চাইতে আলাদা কিছু নয়। কিন্তু আত্মসমালোচনা ও সংশোধনের বদলে সরকার যদি দলীয় স্বার্থে চাতুর্যের পথে চলেন, তখন ভুলের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এমন সংস্কৃতি সরকার ও দল কারো জন্যই কল্যাণকর হয় না, বরং দ্রুতপতন নিশ্চিত হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ক্ষমতায় থাকাকালে সহজবোধ্য এই বিষয়টি যেন মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। বর্তমান সময়েও আমরা তেমন চিত্রই লক্ষ্য করছি।
দেশে একের পর এক এমন সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যা সরকারের জন্য খুবই বিব্রতকর। বরং বলা যেতে পারে এসব ঘটনা সরকারের সুশাসন ও কার্যকারিতাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ড, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের  এপিএস-এর অর্থ কেলেঙ্কারি, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম, সউদী কূটনীতিক খালাপ আল আলি হত্যা, ১৮ দলীয় জোট নেতাদের জেলে বন্দী, একের পর এক পুলিশী তান্ডবের ঘটনা জনমনে শুধু প্রশ্ন নয়, ক্ষোভেরও সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনা সরকারের সুশাসন ও যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কিন্তু ঘটনাগুলোর ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্য মানুষকে বিস্মিত করেছে। চাতুর্যের পথে পা বাড়ানোর ফলে রহস্য উদঘাটনতো দূরের কথা, সরকার সুষ্ঠু তদন্তের কাজেও সফল হচ্ছে না। একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু সরকার তার কোনো সমাধান দিতে পারছে না। তবে এসব ইস্যু নিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে না পারে সেই জন্য সরকার দমন-পীড়নে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এসব ঘটনা জনসম্মুখে নিয়ে আসেন সাংবাদিকরা। এমন কাজ যে সরকারের খুবই অপছন্দের তা উপলব্ধি করা যায় সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক পুলিশী হামলার ঘটনায়। তবে এসব কাজে ঝাল মেটানো গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয় না। সমস্যা কমার বদলে বরং বাড়ে। জনগণের সমস্যার সমাধান হলেই তো সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ে। কিন্তু সরকারতো সে পথে হাঁটছে না। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত তিন বছরের মধ্যে অর্থনীতির অবস্থা এখন সবচেয়ে খারাপ। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে এখন বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। সম্প্রতি উৎপাদন ও রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বিরাজ করছে বেহালদশা। সরকারের আয়-ব্যয়ের ব্যবস্থাপনায়ও বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো বড় ধরনের চাপে পড়েছে। এসব বিবেচনাকে সামনে রেখে চলতি অর্থবছরকে সরকারের সবচেয়ে দুর্বল বছর হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সরকার সুশাসনে সফল হলো না, ব্যর্থ হচ্ছে অর্থনীতিতেও। অর্থাৎ দিনবদল আর হলো না। সরকার দিনবদলের অঙ্গীকার করেছিল বলেই ব্যর্থ সরকারের সমালোচনা করতে হয়। আগামীতে অন্য কোনো সরকার এভাবে ব্যর্থ হলে তাদেরও সমালোচনা করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না সাংবাদিকদের। কিন্তু আমাদের সরকারগুলো ব্যর্থ হচ্ছে কেন, তা কি তারা একটু ভেবে দেখবেন? মানুষ যে জন্য সমাজবদ্ধ হয়েছে, রাষ্ট্র গঠন করেছে, সে সম্পর্কে উদাসীনতাই সরকারগুলোর ব্যর্থতার মূল কারণ। এই কারণ দূর করা না গেলে কোনো সরকারের পক্ষেই সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। যেমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে বর্তমান সময়েও।

Wednesday, 6 June 2012

ক্ষমতা দখলের নেপথ্য নায়ক

মূলত আমাদের সেনাবাহিনী পৃথিবীর বিভিন্ন বিদেশি মিশনে দায়িত্ব পালন করে যে সুনামের অধিকারী হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। অথচ দেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ বিশ্বের দরবারে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সংসদে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্যিই সময়োপযোগী। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে তা খুবই দুঃখজনক এবং সমগ্র জাতির ওপরই কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দেয়।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সেনা সদস্যদের মধ্যে কিছু বিপদগামী সদস্য আবারো অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সেনা শাসন চালু। হিজবুত তাহরীর মতো একটি ইসলামী জঙ্গি সদস্যদের মদদ নিয়ে আমাদের দেশকে আবার ১/১১-এর মতো বিতর্কিত করা। যেসব সেনা সদস্যদের কথা গোয়েন্দা সংস্থা অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তাদের অনেকেই উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা। ই-মেইলের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে সংবাদ প্রচার হয় মাত্র কয়েক মিনিটের মাধ্যমে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুগে যুগে সেনা বিদ্রোহের ঘটনা বিস্তৃত আছে। আমাদের দেশেও অনেক দুঃখজনক অধ্যায়ের কাহিনী রচিত আছে। কয়েকবার সেনা সদস্যদের কয়েকজন উচ্চপদস্থ অফিসারের কারণে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার-পরিজনসহ অনেকেই প্রাণ হারান। পরবর্তীকালে মেজর জিয়াসহ অনেক অফিসারের জীবন শেষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আবারো চলছে চেষ্টা। খবরটি সেনা সদস্যদের জন্য যেমনি দুঃখজনক, তেমনি জনগণের জন্য অপমানজনকও বটে।

 ইতিহাসের পিছনে গেলে সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনায় ১৮৫৬ সালে লর্ড ডালহৌসির পরিবর্তে ডাইকাউন্ট ক্যাটিং বড় লাট হয়ে আগমন করেন। তখন কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে প্রচ- বিক্ষোভ দেখা দেয়। সে বিক্ষোভ সিপাহি বিদ্রোহ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ সিপাহিরা প্রথম বিদ্রোহ করে কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরে। দক্ষিণ ভারতের এক বলিষ্ঠ ব্রাহ্মণ সিপাহি 'মঙ্গল পান্ডে'কে পদাতিক সিপাহিদের উত্তেজনা করার জন্য ফাঁসি দেন। সিপাহি বিপ্লবের প্রভাব ঢাকার সিপাহিদের ওপর পড়ে এবং বৃটিশ সেনারা ঢাকা কালেক্টরে নিয়োজিত ৫১ সিপাহির অস্ত্র কেড়ে নেয়। লালবাগে সিপাহিদের অস্ত্র কেড়ে নিতে চাইলে সেখানে সংঘর্ষে ৪০ সৈনিক নিহত হন। ১৭৫৭ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত মুসলমানরা সম্পূর্ণভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করেনি। বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের এবারকার এই অন্যায় প্রচেষ্টার মধ্যে অন্যরকম উদ্দেশ্য ছিল বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এর পূর্ণ বিবরণ অবশ্যই সরকারের জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা দরকার। সত্য ঘটনাটি কী তা অবশ্যই পলাতক জিয়ার অনুসারীদের কাছ থেকে বের করে জনগণকে জানাতে সরকার সচেষ্ট থাকবেন এটাই জনগণের দাবি।
দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। এ ক্ষেত্রে হিযবুত তাহরীর র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিটি সংস্থার পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত সামরিক বাহিনীতেও শেকড় গড়তে সক্ষম হয়েছে। মূলত দেশে সেনা অভ্যুত্থানের ব্যর্থ মিশনের আদ্যোপান্ত খুঁজতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে? এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক এ জঙ্গি সংগঠনের বিদেশি ওইংগুলোও এ নীলনকশা বাস্তবায়নে তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে। উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত এ সংগঠনের দেশি-বিদেশি নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দিতে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা এরই মধ্যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রশাসন হিযবুত তাহরীরকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে সন্দেহভাজন এমন কয়েকটি এনজিওর কর্মকা- মনিটর করার জন্য গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছে।

 একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভিন্ন উদ্দেশ্যে বিশৃঙ্খলা এবং অরাজকতা তৈরি করে দেশের মধ্যে ভয়ঙ্কর পরিবেশ করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনী জাতির কাছে তাদের জবাবদিহিতা এবং আনুগত্য স্বীকারের পাশাপাশি তার দায়বদ্ধতার পরিচয়ও তাদের কাছ থেকে জাতি পেল। রাষ্ট্রবিরোধী কুলাঙ্গারদের যেভাবে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিল তা ছিল অভাবনীয় অধ্যায়। সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে সেই বাস্তব চিত্রই দেখতে পাওয়া গেল সেনাবাহিনীর বীর জওয়ানদের কাছ থেকে। লক্ষ্য কোটি ধন্যবাদ। বর্তমান সেনাবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ উক্ত ঘটনায় ১৬ কোটি বাঙালির অন্তর থেকে ধন্যবাদ বের হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।
তবে এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম যে বিবৃতি দিলেন তার বক্তব্য কি সঠিক? সরকার কি নিজেই নিজের গর্তে প্রবেশ করেছে? তার বক্তব্য মনে হচ্ছে সরকার সেনাবাহিনীর একটি অংশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আমার মনে হয় মহাসচিব হওয়ার পথে ফখরুল সাহেব যে সাহস দেখাবার কথা তা তিনি দেখাতে ব্যর্থ হলেন। তার বক্তব্যটি ছোট বাচ্চাদের গল্প বলার মতো হয়ে পড়েছে। এক রাজা তার রাজ্য হারাবার ভয়ে তার নিজের দেহে নিজে আগুন জ্বালিয়ে জনগণের সহানুভূতি তার দিকে ফেরাতে সমর্থ হয়েছেন। বর্তমান সরকার সেই রাজার মতোই করেছে। ফখরুল ইসলাম দলীয় অবস্থানে যে বক্তব্য দিয়েছেন এবং সরকারকে যে দোষারোপ করছেন তার সত্য-মিথ্যা জনগণ জানতে চায়।

 মূলত আমাদের সেনাবাহিনী পৃথিবীর বিভিন্ন বিদেশি মিশনে দায়িত্ব পালন করে যে সুনামের অধিকারী হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। অথচ দেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ বিশ্বের দরবারে তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। সংসদে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্যিই সময়োপযোগী। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করলে তা খুবই দুঃখজনক এবং সমগ্র জাতির ওপরই কলঙ্কের চিহ্ন এঁকে দেয়। সমস্যার গভীরে গিয়ে উক্ত ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

 সরকারকে মনে রাখতে হবে এর অন্দরে বাহিরে যারাই ছিল তারা সবাই দেশের অকল্যাণ কামনাকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এদের সমূলে বিনাশ করা প্রয়োজন। হিযবুত তাহরীর সদস্য সংখ্যা কত? তার সঠিক চিত্র নিয়ে এদেরকে জেএমবির মতো ফাঁসির মঞ্চে আনতে হবে। বাংলা মায়ের বুকে আর আমরা অন্যায়ভাবে রক্ত ঝরা দেখতে চাই না। সামরিক শাসনের নামে কুশাসন আর জাতি দেখতে চায় না। জিয়া, এরশাদের মতো অবৈধ রাষ্ট্রনায়ক গণতান্ত্রিক বিশ্ব আর দেখতে চায় না। আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বর্তমান সেনাবাহিনীর প্রধানসহ সবাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

 ইসলামকে ব্যবহার করে হিযবুত তাহরীর সদস্যদের যেভাবে বিপদগামী পথে পরিচালনা করছে তা আমাদের যুব সমাজের জন্য খুবই খারাপ দিক। ভবিষ্যৎ বংশধরদের সঠিক পথে রাখার দায়িত্ব সরকার এবং বিরোধী দলের। এখানে যে দলই ওদের পক্ষে যাবে সে দলই মারাত্মক ভুল করবে। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থান চাই না। কেমন করে ওরা এত দূরে অবস্থান করল এটাই ভাবনার বিষয়। ওদের শক্তি বৃদ্ধি পেলে তা শেখ হাসিনা বা বেগম জিয়া অথবা ইসলামের কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। ওরা সবার জন্যই ক্ষতিকর। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকবেন। অবশেষে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করলাম।


রুমির নৃশংস হত্যাকান্ড অনেক প্রশ্নই রেখে গেল

রুমির নৃশংস হত্যাকান্ড অনেক প্রশ্নই রেখে গেল
রাজধানীর পরীবাগে নাহার প্লাজায় তরুণী রুমিকে হত্যার নৃশংস বর্ণনা দিতে গিয়ে ঘাতক সাইদুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘রুমিকে গলাটিপে হত্যার পর সারারাত ধরে আমার অফিসে বসেই লাশ টুকরো টুকরো করি। নাড়ি-ভুঁড়িগুলো বাথরুমের কমোডে ফেলে দেই। তবে চর্বি ও রক্তাক্ত মাংসপিন্ড ভেসে ওঠায় বার বার ফ্লাস করতে হয়েছিল। জানালার ফাঁক দিয়ে মাথাটি বাইরে ফেলে দেয়া যাচ্ছিল না। পরে চাপাতি দিয়ে কেটে মাথাটি ছোট করতে বাধ্য হই।' ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে গত রোববার উপস্থিত সাংবাদিকসহ পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই ঘাতকের এমন বর্ণনা শুনে শিউরে ওঠেন।
শুধু সাংবাদিক ও পুলিশই নয়, যে কোনো সুস্থ মানুষই রুমির নৃশংস হত্যার বর্ণনা শুনলে শিউরে উঠবেন। বন্য পশুও মানুষকে এত নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে না। অথচ আলোঝলমলে রাজধানীর ব্যস্ত বাণিজ্য পাড়ায় কী নির্বিকারভাবে হত্যা করা হলো তরুণী রুমিকে। আর হত্যাকারী কোনো পশু নয়, একজন মানুষ! এমন মানুষকেই বোধহয় বলা হয় নরাধম, নরপিশাচ! এমন নরাধমকে নিন্দা করার মত ভাষা আমাদের জানা নেই। রুমির নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্র আরেকবার স্পষ্ট হয়ে উঠলো। সমাজে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার অবনতি না হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারতো না। নৈতিকতার অবনতি হলেও আইন-শৃক্মখলার প্রতি সমীহ থাকলে মানুষ এমন নৃশংস ঘটনা ঘটাতে ভয় পেত। কিন্তু নানা কারণেই আমাদের আইন-শৃক্মখলা বাহিনী তাদের ইমেজ রক্ষা করতে সমর্থ হয়নি। আর অপরাধীদের মনে এমন ধারণা স্থির হয়ে গেছে যে, অর্থ ও রাজনৈতিক মদদের গুণে অপরাধ করেও সহজে পার পাওয়া যায়। এই বিষয়টি অপরাধীদের বেশ বেপরোয়া করে তুলেছে। জানি না আমাদের সরকার ও প্রশাসন আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে সামাজিক বিপর্যয় রোধে বড় বড় বুলির বদলে তাদের যে কার্যকর কিছু করা প্রয়োজন, সেই বিষয়টি আলোচ্য ঘটনার পর আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
রুমি হত্যার ঘটনায় মোবাইল ফোনের অপব্যবহার এবং তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশার মন্দ দিকটি আবারো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমাদের ধর্মে কেন এই বিষয়গুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার যৌক্তিকতা কি আমরা এখনো উপলব্ধি করতে পারবো না? মোবাইলের অনাকাঙ্ক্ষিত আলাপন তাদের কোথায় নিয়ে গেল? রিপুর তাড়নায় পথভ্রষ্ট এক তরুণের আহবানে দায়িত্বহীনভাবে এগিয়ে গেল এক এক তরুণী। ধর্মীয় বিধিনিষেধকে কোনো গুরুত্বই দিল না তারা। যার পরিণামে ঘটলো ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। ঘাতকের জন্যও হয়তো অপেক্ষা করছে কঠিন দন্ড। এমন পরিণাম কি কারো কাম্য হতে পারে? আর এই জন্যই কি মানুষের জন্ম? বিষয়টি নিয়ে যে শুধু সরকার ও সমাজবিজ্ঞানীরাই ভাববেন তা নয়, ভাবতে হবে প্রতিটি পরিবারকে এবং প্রতিটি মানুষকে। তাহলেই হয়তো রোখা যাবে সামাজিক অবক্ষয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত ধারা।

Saturday, 2 June 2012

হরতাল কেন প্রয়োজন?

হরতাল কেন প্রয়োজন?
 
হরতাল শব্দটা বর্তমানে আমাদের নিকট খুব পরিচিত। দেশবাসীর কাছে হরতাল সহনীয় হয়ে গেছে। যদিও হরতাল খুবই শক্ত কর্মসূচি। এটা জন-জীবনকে স্তব্ধ করে দেয়। তবুও হরতাল হচ্ছে। মনে হচ্ছে ভবিষ্যতেও হবে। যদিও আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বর্তমান আছে। তবে আমরা এখনও গণতান্ত্রিক রীতি পদ্ধতি মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারি নাই। আমাদের সরকার বা রিরোধী দল সবাই মুখে গণতান্ত্রিক কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে গণতন্ত্রের চর্চা করে না। এটা দেশ ও জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমান সরকারের বিগত তিন বছরাধিক সময় কাল কোন ক্ষেত্রেই আশাব্যঞ্জক কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যদিও সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ দাবি করছে প্রতিক্ষেত্রে সফলতা। মানুষ অনেক আশা করে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে মানুষ এত হতাশ যে, সরকারের জনপ্রিয়তা খুবই নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের দু্রাপ্যতা, আইন-শৃংখলার অবনতি, জান-মালের নিরাপত্তাহীনতা, পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থতা, ইসলামের প্রতি বৈরিতা, অত্যধিক ভারতপ্রীতি, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির বিস্তারসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতা মানুষকে বর্তমান সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে।
সরকার তাদের জনপ্রিয়তার নিম্নগতি সম্পর্কে সচেতন। তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। জলন্ত উদাহরণ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নিয়ে সরকারের তুঘলকীকান্ড। নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণ দু'ভাগে ভাগ করে। কিন্তু তারপরও জনগণের উপর আস্থা রাখতে পারছে না।  এজন্য নানা কৌশলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেও তা স্থগিত করার ব্যবস্থা নেয়।
সর্বশেষ দেশে হত্যা, গুম, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ এত বৃদ্ধি পাচ্ছে যা অতীতে কখনও হয়নি। এমনকি বিভিন্নভাবে জানা যাচ্ছে যে সরকারি বিভিন্ন বাহিনী অনেক ক্ষেত্রে এসব অপকর্মের সাথে জড়িত। শুধু তাই নয় শোনা যাচ্ছে সরকার তার প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য বা নির্মূল করার জন্য বিভিন্ন বাহিনীকে অবৈধ কর্মে ব্যবহার করছে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।
সর্বশেষ বি.এন.পি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠছে। দেশের মানুষ খুবই বিব্রত এবং হতাশাগ্রস্ত। বি.এন.পি তাদের এমন একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে উদ্ধারের জন্য যে কোন কর্মপন্থা নিতে বাধ্য। এক্ষেত্রে তারা জনমত সৃষ্টি করে তা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক বটে। ইলিয়াস আলীকে যেভাবে অপহরণ করা হয়েছে তাতে সরকারের সংশ্লিষ্টতা একেবারে অস্বীকার করা কঠিন। অপহরণ পরবর্তী সরকারি মন্ত্রীবর্গ এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তায় জনগণ নাখোশ।
যাক সরকার বলছে তারা ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের কথাবার্তায় সে রকম মনে করা কঠিন। বাস্তবেও কাজের অগ্রগতি বলতে কিছু নেই। অবশ্য কর্তৃপক্ষের কথাবার্তায় কিছুটা আশ্বস্ত হওয়ার কারণ রয়েছে যে ইলিয়াস আলী তাদের কাছে রয়েছে।
এমতাবস্থায় বিরোধীদল বিশেষ করে বি.এন.পি'র পক্ষে চুপ করে থাকা সম্ভব নয়। দল, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে তাকে পদক্ষেপ নিতেই হবে। তবে সেক্ষেত্রেও আমরা বিরোধীদল ও জোটের নিকট হতে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি। তাই তারা হরতাল আহবান করেছে। ইতিপূর্বে ৩ দিন হরতাল করেছে। পরে আবার ২ দিন হরতাল আহবান করেছে। আপাতত আর হরতাল না দেয়ার চিন্তা করছে। তবে এক্ষেত্রে সরকার ও সরকারি দলেরও করণীয় আছে।
সন্দেহ নেই হরতাল জনমানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করে। দরিদ্র মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়। দেশের ক্ষতি করে। দেশের অর্থনীতিকে আঘাত করে। বিশেষ করে দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। এমনকি তাদের উপোস পর্যন্ত থাকতে হয়। জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এমন কোন দিন হরতাল যায় না যে কিছু মানুষের প্রাণ না যায়। কিছু যানবাহন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাই প্রশ্ন উঠেছে হরতালের বিকল্প কিছু কর্মসূচি দেয়ার। সরকারপন্থী কিছু বুদ্ধিজীবী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হরতাল না দিয়ে অন্য কর্মসূচি দেয়ার আহবান জানাচ্ছেন। কিন্তু কথা হলো অতীতে তারা কোথায় ছিলেন? বিগত বি.এন.পি সরকারের সময় আওয়ামী লীগ কতদিন হরতাল করেছে তা-কি তাদের জানা আছে? সে সময় তারা কেন এরকম বুদ্ধিজীবী-সুলভ কথা বলেন নাই? তখন তাদের দেশপ্রেম কোথায় ছিল?
শুধু হরতাল নয়, এখন বিরোধীদল লাগাতার হরতাল অবরোধ দিয়ে সরকারকে নাজেহাল করেছে। দেশকে করেছে বিধ্বস্ত। তখন তাদের একটাই কথা ছিল বি.এন.পি'কে হঠাও। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে যে কোন ভাবেই ক্ষমতায় যেতে হবে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে দেশের মানুষ পছন্দ করে কি করে না তার প্রমাণ হবে ভোটে। তাই বলে তারা যা খুশী ইচ্ছা করতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশের স্বাধীনতার পক্ষের দাবিদার শক্তি যা খুশী তাই করতে চায়। করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে খাম-খেয়ালী। তাই বর্তমানে মানুষ এদের নিয়ে হতাশ ও আতংকগ্রস্থ।
দেশের বর্তমান অবস্থায় মানুষ কঠিন কর্মসূচি চায়। শুধু হরতাল নয়, আরও কঠিন কিছু থাকলে তা দিলে দেশ ও জাতির স্বার্থে জনগণ তা মেনে নিতে প্রস্তুত। বি.এন.পিসহ  বিরোধী পার্টিকে জনগণের মনের ভাষা বুঝতে হবে। সঠিক ও সাহসী নেতৃত্ব নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে হবে। জনগণ কখনো নিজেরা সামনে অগ্রসর হয় না তাদেরকে অগ্রসর করতে হয়। পৃথিবীর ইতিহাস তাই বলে। হরতাল ডেকে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। মাঠে-ময়দানে নামতে হবে - থাকতে হবে। নির্যাতন করে আন্দোলন বেশিদিন দাবিয়ে রাখা যায় না। শুধু মুখের কথা আর হাতের জোরে রাজনীতিতে সফল হওয়া যায় না। জনগণের মন জয় করতে হলে দেশপ্রেম থাকতে হয়। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। তা করতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হচ্ছে।
সুধীসমাজ অবশ্য উভয় জোটকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পারলে লাভ হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার ও সরকারপন্থীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু তাতে প্রয়োজন নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক একটা সুশীল সমাজ। সে রকম সমাজ আমাদের দেশে আছে কি? যদি না থাকে তাহলে আন্দোলনের বিকল্প নাই। সেক্ষেত্রে হরতাল চলবেই। দেশবাসী সে জন্য প্রস্তুত।
Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter